ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু শেষ_পর্ব দ্বিতীয় অংশ

0
1371

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
শেষ_পর্ব দ্বিতীয় অংশ
#সুলতানা_সিমা

শান্তি চৌধুরীর অবাধ্য হওয়ার মতো দুঃসাহস শান্তি নীড়ের কারো আছে বলে কারোরই জানা ছিলো না। যেটা উনি নিষেধ বলে দেন সেটা চিরতরে নিষেধ হয়ে যায়। অথচ আজ উনার নিষেধ অমান্য করে উনার অবাধ্য কেউ হলো। নীল আর লুপার বিয়ে হলো। শান্তি চৌধুরী রাগে গিজগিজ করছেন। অবাধ্যতা উনার জানের দুষমন। যা আজ ওরা করেছে। লুপা আর নীল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি ওদের উপরের তাক করা। এতোবড় দুঃসাহস ওরা করতে পারবে এটা কারো কল্পনায় ও ছিলো না। সায়রা চৌধুরীর বুকটা কষ্টের উথাল ঢেউয়ে ভেঙে যাচ্ছে। আজ উপলব্ধি করতে পারছেন যখন সন্তান বাবা মাকে না জানিয়ে বিয়ে করে তখন ঠিক কতটা কষ্ট লাগে। যে কাজটা একদিন উনি নিজে করেছেন আজ সেটা নিজের পেটের সন্তান করেছে। লোকে হয়তো ঠিকই বলে যেমন মা হয় তেমন তাঁর সন্তানও হয়। সায়রা চৌধুরীর চোখের পানিতে গাল ভিজে একাকার। হাসান চৌধুরীও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। নিজেও একই কাজ করেছেন বলে হয়তো আজ সন্তানকে কিছু বলতে পারছেন না। শান্তি চৌধুরী লুপাকে বললেন,

_তোকে বলেছিলাম না পরিবার ছাড়া বিয়ে হবেনা? তবুও কেন বিয়ে করলি?” লুপা মাথা নিচু রেখে ক্ষীণ গলায় বলে,” সরি দাদুমনি।”
_লাত্তি দিয়ে সালাম করছিস?” বলেই শান্তি চৌধুরী লুপাকে মারতে যাবেন তাঁর আগেই মিহান এসে লুপার সামনে দাঁড়ায়। থাপ্পড়টা মিহানের গালে পড়ে। লুপা ভয়ে মিহানের হাত খামচে ধরে। মিহান বলে,”

_দোষ আমার। আমি ওদের বিয়ে দিয়েছি। মারলে আমাকে মারবে,আমার বোনকে না।
_তুই কেন আমার নিষেধের পরেও ওদের বিয়ে দিবি? আমি নিষেধ করেছি পরিবার ছাড়া বিয়ে হবে না। ওর সাহস হয় কি করে তোর কথা শুনার?” বলেই উনি আবার লুপাকে মারতে হাত ওঠান। মিহান উনার হাত ধরে ফেলে। মিহান অগ্নি চোখে তাঁর দাদীর দিকে তাকায়। উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়। মিহানের সাহস দেখে সবাই বাকরুদ্ধ। মিহান চেঁচিয়ে বলে,”
_ বলেছি না দোষ আমার, ওর গায়ে হাত তুলবে না। আর কেউ যদি আমার বোনের গায়ে হাত তুলার কথা চিন্তাও করে, আমি তাঁর হাত ভেঙে দিবো।” মিহানের কথায় সবাই আঁতকে উঠল। শান্তি চৌধুরীর সাথে বড় গলায় কথা বলার ক্ষমতা কারো নেই। আজ মিহান দু দুবার এমন দুঃসাহস দেখিয়েছে। শান্তি চৌধুরী এমনিতেই রেগে ছিলেন, এখন আরো রেগে গেলেন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হাসান চৌধুরীকে বললেন,”ছেলে মেয়েকে যখন নিজের মতোই শিক্ষা দিয়েছিস তাহলে এদের নিয়ে বেরিয়ে যা আমার বাসা থেকে।” হানিফ চৌধুরী বললেন, ”
_এসব কি বলছেন আম্মা? ও কই যাবে বাসা ছেড়ে?
_কাউকে বেরিয়ে যেতে হবে না। আমিই বেরিয়ে যাচ্ছি আমার বোনকে নিয়ে। চল লুপা।”

বলেই মিহান লুপা আর নীলকে নিয়ে সত্যি সত্যি বেরিয়ে যায়। শান্তি নীড়ের কেউ তাঁদের আটকায় না। শান্তি চৌধুরী সোফায় বসে মাথা চেপে ধরলেন। উনার জীবনের সব অপছন্দের মাঝে সব থেকে বড় অপছন্দ হলো উনার অবাধ্য হওয়া৷ যখন কেউ উনার অবাধ্য হয়ে যায় তখন তাকে উনার দুষমন মনে হয়। হোক সে নিজের পেটের সন্তান। তবুও নিজের রাগ ধমাতে পারেন না তিনি। শান্তি চৌধুরীর বুক ফেটে কান্না আসছে। মিহানের অগ্নি চোখ দুটো চোখে ভাসছে। কিভাবে মিহান অগ্নি চোখে উনার দিকে তাকালো? কিভাবে হাত ধরে শক্ত করে মুঠো ধরলো? তাঁর কি খারাপ লাগেনি? শান্তি চৌধুরীর চোখে ভাসছে মিহানের দুষ্টুমি গুলো। উনি একটু মন খারাপ করলে কত কি করতো মন ভালো করার জন্য। রাগ করলে গালে চুমু এঁকে বলতো,”আমার বুড়িবউটা কি রেগে আছে?”অথচ আজ কিনা?,, আর পারছেন না সয্য করতে। উঠে নিজের রুমে চলে যান তিনি। সারাদিন চলে যায় রুম থেকে বের হন না। এমনকি কিছুই খান ও না। সন্ধ্যার পর থেকে মিহান আর লুপার জন্য উনার মনটা ছটফট করতে থাকে। কই আছে কিছু খেয়েছে কিনা এসব ভাবতে ভাবতে উনার কান্না চলে আসে। নিজের রাগের উপর রাগ হয় খুব। কেন তখন রেগে গিয়ে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। যদি রেগে চুপচাপ নিজের রুমে এসে বসে থাকতেন ওরা এখন বাসাতেই থাকতো।

সেদিন রাতে শান্তি নীড়ের সবাই না খেয়েই ঘুমালো। অথচ রান্নাবান্না সবই করা ছিলো, শুধু খাওয়ার মন মানসিকতা কারোই ছিলো না। একদিকে দিশার বিয়ে ভেঙে যাওয়া অন্যদিকে লুপার বিয়ে। সবকিছু তাঁদের মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছে।


মিহান লুপা আর নীলকে নিয়ে একটা বাংলোতে উঠে। কানাডা থেকে দেশে এসে সে এখানেই থাকতো। ওদের এখানে রেখে গিয়ে বাজার করে আনে। তাঁদের সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে বলে,”শোন তোরা এখানেই থাকবি। কখনো কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবি। আর নীল,তুই কখনো লুপাকে একা রেখে যাবিনা৷ বাজার লাগে বা অন্যকিছু লাগে আমাকে ফোন দিবি আমি নিয়ে আসবো। লুপাকে এক মিনিটের জন্যেও একা রেখে কোথাও যাবিনা। ওর খেয়াল রাখবি। আমি এখন আসছি।
_ভাইয়া তুমি বাসায় যাবে?
_যাবো। যেতে তো হবেই। তবে আজ যাব না। আর শোন, নিজের খেয়াল রাখবি। যাচ্ছি।” লুপা মিহানের হাত ধরে বলে,”
_এতো রাতে তুমি কোথায় যাবে ভাইয়া? আমাদের সাথে থাকো না।
_না রে পাগলী এখানে থাকলে হবে না। ভাইয়া তোকে প্রতিদিন দুবার করে দেখে যাবো। হ্যাপি?” লুপা কিছু না বলে মিহানের বুকে মাথা রাখে। তাঁর মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এখনি কেঁদে দিবে। মিহান লুপার কপালে চুমু এঁকে বলে,”

_দাদুমনির জন্য মন খারাপ হচ্ছে?” লুপা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে কেঁদে দেয়। নীল মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকায় তাঁরও কান্না পাচ্ছে। মিহান লুপার চোখের পানি মুছে বলল,”তোর ভাই থাকাকালীন তোর কোনো কষ্ট থাকবে না। তোর জন্য যার পায়ে ধরতে হয় আমি ধরবো। তবুও সবাইকে রাজি করিয়ে এখানে নিয়ে আসবো দেখিস? এবার কান্না থামা আর লক্ষি মেয়ের মতো একটা ঘুম দে। দেখ তো চোখ মুখের অবস্থা কেমন হয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। একদম পেত্নি লাগছে।” মিহান লুপার চোখ মুছে দিয়েছে অথচ লুপার মুখটা এখনো কাঁদো কাঁদো। মিহান বলে,

_এভাবে ভাইকে বিদায় দিবি? একটা হাসি দে?” লুপা কিঞ্চিৎ হাসে। মিহান বলে “শুধু নাক টানছিস কেন? ফেলে দিলেই তো পারিস?” লুপা হেসে উঠে। মিহানও হাসে। সাথে নীলও। তারপর মিহান নীলকে সাথে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে এসে মিহান নীলের হাতে কিছু টাকা দেয় নীল নেয়না। মিহান বলে,”

_তোর মতো বাপের হোটেলে খাওয়া ছেলেকে আমার বোন পছন্দ করেছে, কিছুই তো করার নাই। ওর খুশির জন্য তোর সাথে বিয়ে তো দিতেই হতো। কিছুই তো করিস না। লুপা কিছু চাইলে কেমনে দিবি? নে এটা ধর। ওর মন খারাপ দেখলেই ঘুরতে নিয়ে যাবি। যদি কখনো শুনি তোর জন্য ওর একফোঁটা চোখের পানি ঝরেছে। তাহলে বুঝাবো তোকে।” বলেই মিহান চলে যায়। নীল তাকিয়ে থাকে বোনের জন্য পাগল এক ভাইয়ের যাওয়ার দিকে।

______________

সাত দিন পর
“””””””””””””””””
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন শান্তি চৌধুরী। উনার পাশে রেলিঙে পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে ইশি। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে৷ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টাইপিং করছে। মিহানকে একের পর এক মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। সাতদিন পর আজ সকালে মিহানের ফোন খোলা পেয়েছিলো। কিন্তু একবার মাত্র কল গেছে। আর যাচ্ছে না। সেদিন মিহান চলে যাওয়ার পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শান্তি চৌধুরী সবাইকে বলেছিলেন মিহান আর লুপার খোঁজ লাগাতে। কারোরই ফোন খোলা নয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁদের পাওয়া যায়না না সাতদিন হয়ে যায়। এই সাতদিনের ভেতর একদিন নীলের বাবা এসেছিলেন লুপার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। উনারা ভেবেছেন নীল শান্তি নীড়ে আছে। এসে যখন দেখেন নীল এখানে নেই, তখন প্রশ্ন করেন নীল কোথায়, উনারা বলেন তাঁরা জানেন না। নীলের পরিবারের কানে এখনো যায়নি নীল আর লুপার বিয়ের কথা। এসবের ঝামেলায় পড়ে শাওন ও আর গ্রামে যেতে পারলো না। শান্তি নীড়ের সবাই কেমন যেন হয়ে গেছে। দিশার বিয়ে নিয়েও আশেপাশে অনেক কথা শুনা যায়। লুপা মিহানকে খুঁজতে খুঁজতে সবাই ভুলে গেছিলো দিশার বিয়ে ভেঙে গেছে অন্য কোথাও ছেলে দেখতে হবে। এখন বাইরে বের হলেই মানুষ জিজ্ঞেস করে,” কি ব্যাপার হানিফ সাহেব মেয়ের নাকি বিয়ে ছিলো,তা কবে?” দিশার পরিচিত লোকগুলোও তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে বিয়ে কবে তাঁদের হিসাবে নাকি ডেট পার হয়ে গেছে। ইশির কান্না পাচ্ছে খুব। মিহানকে সাতদিন দেখেনি যেন সাতটা বছর হয়ে গেছে। এতো নিষ্ঠুর কেন মিহান? সে কি বুঝেনা ইশি তাঁর জন্য কত পাগল? ইশির চোখ দুটো ভিজে যায়। কেন যে তাঁর মনটা বুঝেনা মিহান তাঁর নয়। যদি একবার বুঝতো তাহলে এতো কষ্ট হতো না।

পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে কারো ডাক শুনা যাচ্ছে। শান্তি সই শান্তি সই বলে ডাকছে। ইশি পিছনে তাকিয়ে দেখলো তাঁদের পরিচিত এক বুড়ি শান্তি চৌধুরীকে ডেকে যাচ্ছেন। ইশি স্পষ্ট শুনছে অথচ শান্তি চৌধুরী শুনছেন না। তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। ইশি অবাক হলো। তাঁর দাদী তো কানে কম শুনেন না তাহলে উনার ডাক শুনছেন না কেন? ইশি শান্তি চৌধুরীকে বলল,”দাদুমনি ওই বাসার দাদী তোমায় ডাকছে।” শান্তি চৌধুরী পাশের ছাদে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করেন, কি?” ওই বুড়ি বললেন,” কি গো শান্তি সই ডাকি যে শুন না? তোমার নাতনির না বিয়া আছিলো? বিয়ার তো ডেট পার হইয়া যাইতাছে, বিয়া কবে?” শান্তি চৌধুরী বললেন,”

_ কিছু শুনা যাচ্ছে না। রোদে আমার মাথা ধরছে আমি যাচ্ছি।” বলেই ইশিকে নিয়ে নিচে নেমে আসেন। ইশি বুঝতে পারে কেন তাঁর দাদুমনি উনার ডাক শুনেও না শুনার ভান করে ছিলেন। কাল সেও সেইম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলো। শান্তি চৌধুরী নিচে এসে নিজের রুমে চলে যান। সারাদিন চলে যায় বের হন না। ডিনারের টেবিলে যখন সবাই খেতে বসে তখন তিনিও গিয়ে বসেন। উনি বসতেই উনার ছেলেরা ও উনার নাতি নাতনি সবাই অবাক হয়ে তাকায়। গত এক সপ্তাহ উনি সবার সাথে বসে খান না। আজ হঠাৎ টেবিলে দেখে সবাই অবাক হয়। শাওন উনাকে ভাত বেড়ে দেয় দিহান তরকারি। কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়া শুরু করেন। খেতে খেতে ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন,”

_দিশার জন্য ছেলে দেখবা। আগামী তিনদিনের ভেতর বিয়ে করতে পারবে এমন ছেলে খুঁজে বের করো।” উনার কথা শেষ হতেই দিহান বলে,”

_ছেলে আর দেখবো কেন? পরে দেখা যাবে ওই ছেলেও ফোন দিয়ে বলবে বিয়ে করবে না। এখন তো বাইরে বের হতে পারছো তখন তাও পারবে না। তার থেকে ভালো শাওনের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।” কথাটা শুনে শাওন বিষম খায়। তাঁর সাথে দিশার বিয়ে? বড় বড় চোখ করে দিহানের দিকে তাকালো। দিহান তাঁর মতোই খেয়ে যাচ্ছে। শাওন শান্তি চৌধুরীকে কিছু বলার আগেই উনি হানিফ চৌধুরীকে বলেন,” শায়লাকে বল জামাইকে নিয়ে কালই আসতে।” বলেই তিনি টেবিল ছেড়ে চলে যান। দিহানও চলে যায়। একবারও শাওনের দিকে তাকায় না।

পরেরদিন শায়লা চৌধুরী উনার স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। শাওন উনাদের ফোন দিয়ে আসতে নিষেধ করে। কিন্তু উনারা শুনেন না। আসার পরে শান্তি চৌধুরী শাওনের জন্য দিশার বিয়ের প্রস্তাব দেন। শায়লা চৌধুরী বললেন, ”
_এসব বিয়ে শাদীর ব্যাপারে আমি মনে করি যে বিয়ে করবে তাঁর মতামত নেওয়া ভালো। শাওন যদি রাজি থাকে তাহলে আমরাও রাজি আম্মা।” মনসুর সাহেবও একই কথা বলেন। শান্তি চৌধুরী শাওনকে বলেন দিশাকে বিয়ে করার জন্য,শাওন সোজা কথায় বলে দেয়, “আমি এই বিয়ে করতে পারবো না নানুমনি। আমাকে জোর করনা প্লিজ।” শান্তি চৌধুরী ধরা গলায় বলেন,”তোরা কি এইবার সবগুলাই আমার অবাধ্য হবি?” বলতে বলতে কেঁদে দেন উনি৷
_আমাকে ক্ষমা করো নানুমনি। আমি পারবো না।” বলেই শাওন উপরে চলে যায়। শান্তি চৌধুরীর কান্না দেখেও রাজি হলো না। হতাশ হয়ে সবাই অন্য জায়গায় দিশার জন্য ছেলে খুঁজতে লাগে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও দিহানের মনের মতো কোথাও কোনো ছেলে পাওয়া যায়না। সবার পছন্দ হলেও দিহানের পছন্দ হয়না। একদিন দিহান শাওনকে ছাদে নিয়ে বলে,

_আমি জানি শাওন তুই অরিনকে ভালোবাসতি। এটাও জানি তুই কখনো তা প্রকাশ করতে পারতি না। তোর ভালোবাসাটা এক তরফা ছিলো। তুই তো বুঝিস শাওন,এক তরফা ভালোবাসায় কতটা কষ্ট থাকে। তাহলে আমার বোনকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস? জীবনের সাথে তো কাউকে না কাউকে তোর বাঁধতেই হবে। চিরকুমার তো থাকবি না। তাহলে দিশাকে তোর করে নে না। দিশা তোর কাছে ভালো থাকবে শাওন। তুই কি কারো ভালো থাকার কারণ হতে পারবি না?”

শাওন মাথা নিচু করে নেয়। দিহানের মুখে তাঁর ভালোবাসার কথা শুনে একটুও অবাক হয়নি শাওন। সে জানে দিহান সব জেন গেছে। কয়েকদিন আগে দিহান নীলের কাছে জানতে চায় যখন প্রথম দিহান অরিনকে দেখেছিলো তমালপুরে অরিন যখন দোকানে এসেছিলো তখন নীল কেন বলেছিলো,শাওন তুই কি এই মেয়েটার কথা আমায় বলেছিলি?” দিহানের জোরাজোরিতে নীল দিহানকে সব বলে দেয়। দিহান শাওনকে হাত জোর করে রিকুয়েষ্ট করে বলে,”প্লিজ শাওন আমার বোনটাকে নিজের করে নে। কাউকে না কাউকে তো তোর অধিকার দিবি। তাহলে দে না সে অধিকার আমার বোনকে?”

দিহানের কথাগুলো শুনে সেদিন শাওন রাজি হয়ে যায়। কিন্তু দিশা মানেনা। সে চায়না শাওনের সাথে তাঁর বিয়ে হোক। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে ভালো থাকা যায় না। শাওন তাকে ভালোবাসে না। দিহান দিশাকে বুঝায়। খারাপবাসা ভেঙে মানুষ ভালোবাসা বানায়। ভালোবাসা নিজেকে বানিয়ে নিতে। তুমি যেমন বানাবে তোমার ভালোবাসা তেমনই হবে। অনেক বুঝানোর পর দিশা মেনে নেয়। এরই মাঝে একদিন মিহান আসে। এসে শান্তি চৌধুরীর পায়ে ধরে বলে,

_দাদুমনি আমায় মাফ করে দাও। আমি আর কখনো তোমার সাথে এমন করবো না। কখনো তোমার অবাধ্য হবো না। তুমি যা বলবা তাই করবো। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।” শান্তি চৌধুরী কিছুই বলেন না। মিহান বলে,”
_ঠিক আছে। আমাকে মাফ করো না। আমার ভুলের শাস্তিও আমায় দাও। কিন্তু আমার বোনকে মেনে নাও দাদুমনি। ও রোজ রোজ কাঁদে তোমার জন্য। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে তোমাদের ছাড়া। মেনে নাও না প্লিজ। ওর তো ভুল নেই ও আমার কথায় এমন করেছে। ওকে বাসায় তুলে নাও প্লিজ। তুমি চাইলে আমি কোনোদিনও বাসায় আসবো না। লুপাকে মেনে নাওনা দাদুমনি প্লিজ।

শান্তি চৌধুরী নাতি নাতনি ছাড়া থাকতে পারেন না৷ এই কটা দিন ওদের ছাড়া কতটা কষ্টে আছেন সেটা উনি ছাড়া কেউ জানেনা। তাই খুব সহজেই মেনে নিলেন, কিন্তু শর্ত দিলেন কেউ যেন না জানে ওরা বিয়ে করেছে, দিশার আর শাওনের সাথে তাঁদেরও বিয়ে হবে। বড় বোন রেখে ছোট বোনের বিয়ে খারাপ দেখায় তাই ইশির জন্যেও ছেলে খুঁজে কিন্তু ইশি জানিয়ে দেয় সে বিয়ে করবে না। নীলের পরিবারকে শামু আগেই মানিয়ে নিছিলো৷ দু পরিবার মিলে দিশা শাওনের বিয়ের দিন ওদের বিয়েটাও ঠিক করে। ছোট খাটো একটা অনুষ্ঠান করে তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয়।


রাত তিনটা বাসর ঘরে বসে আছে দিশা। এখনো শাওনের আসার কোনো নাম গন্ধই নেই। দিশার খারাপ লাগছে। শাওন কি তাকে মেনে নিবেনা? কেন আসছে না শাওন? অনেকক্ষণ পরে শাওন এসে রুমে ঢুকলো। শাওন রুমে পা রাখতেই আচমকা দিশার লজ্জা লাগতে লাগে। এতো লজ্জা লাগছে যে ইচ্ছে করছে এ রুম থেকে পালিয়ে যেতে। দিশা উঠে এসে শাওনকে সালাম করে। হঠাৎ বোধ করলো তাঁর খুব সুখ লাগছে। এতো সুখ লাগছে যে ইচ্ছে করছে সুখের কান্না কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিক। সালাম শেষে শাওন চুপচাপ সড়ে যায়, একটা কথাও বলেনা। একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। রাগে অভিমানে দিশার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে। কত স্বপ্ন বুনেছিলো সে এতোক্ষণ। শাওন আসবে এসে তাকে বুকে জড়াবে। আদর মাখিয়ে তাকে নতুন এক জীবন উপহার দিবে। আর শাওন কিনা? সারারাত ফ্যাসফ্যাস করে কান্না করে দিশা। শাওন শুনে, তবুও কিছু বলেনা। সে নাকি দিশার কান্না সয্য করতে পারেনা? দিশা কাঁদলে ধমক দিয়ে বলতো, বলেছি না আমার সামনে কাঁদবি না আমার খারাপ লাগে।, অথচ আজ একবারও বলছে না,দিশা কাঁদবি না আমার খারাপ লাগছে। কথাগুলা ভেবে কান্নাগুলো আরো উথলে উথলে পড়ছে দিশার।

এভাবে কোনো কথা আর মিল ছাড়া তাঁদের মাঝে চলে যায় এক সপ্তাহ। এরই মাঝে দিহান আর অরিনের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে। হাতে মাত্র এক সপ্তাহ আছে তাঁদের। এক সপ্তাহ পরে দিহান চলে যাবে তারপর শাওনও দিশাকে নিয়ে গ্রামে চলে যাবে। নীল লুপাকে নিয়ে তাঁদের বাসায় আছে। দিহানকে বিদায় করতে আবার আসবে। নীলের পরিবারের সবাই লুপাকে যথেষ্ট সম্মান দিচ্ছে। জিহান কানাডা চলে গেছে পাঁচদিন হলো। লারাকে নেওয়ার কাজ চলছে। যদি হয়ে যায় তাহলে টাকা পয়সা খরচ করে হলেও দিহানদের সাথে চলে যাবে। বরাবরের মতো এবার যেতে কোনো ঝামেলা যেন না হয় সে জন্য দিহান দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে দোয়া করে। কিন্তু আল্লাহ যে মাঝে মাঝে আমাদের দোয়া কবুল না করে আমাদের ইমানের পরিক্ষা নেন। হ্যাঁ এমনটাই হলো। সবকিছুই ঠিকঠাক যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন দিহান ঘুমে ছিলো। অরিন দিহানকে জাগিয়ে বলল,

_একটু উঠবেন?” দিহান পিটপিট করে চোখ খুলে। অরিন বলে,”উঠেন।” দিহান আড়মোড়া ভেঙে অরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,”
_বউপাখি আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।
_পরে ঘুমাবেন এখন উঠেন।” দিহান উঠে বসে চোখ বন্ধ রেখে বলল,”হুম বলো।”
_আমাকে আচার এনে দিন আচার শেষ। আমার বমি পাচ্ছে।” কথাটা শুনে দিহানের ঘুম সব উড়ে গেলো। অস্থির হয়ে বলল,
_খুব খারাপ লাগছে কি? কষ্ট হচ্ছে তোমার? শেষ হয়েছে এটা আগে বলবে না? তুমি একটু বসো আমি যাচ্ছি আর আসছি।” দিহান তৎক্ষণাৎ উঠে বাইরে চলে যায়। ইদানীং আচার ছাড়া অরিন চলতেই পারে না। আচার না খেলে নাকি তাঁর বমি পায়। আর বমি করতে লাগলে যেন পেটের নাড়ি ভুড়ি সব বের হয়ে যাবে এমন একটা অবস্থা হয়। দিহান যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে দিলারা চৌধুরী আচারের একটা বৈয়াম নিয়ে আসেন। অরিন তাঁর রুমে দিলারা চৌধুরীকে দেখে অবাক হয়। এই প্রথম উনি তাঁর রুমে আসলেন। আজ উনার চেহারায় কোনো বিরক্তির চাপ নেই কপাল কুঁচকানো নেই। মুখটা কতো হাস্যজ্বল। অরিনকে আরেক দফা অবাক করে অরিনের দিকে বৈয়ামটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “বউমা এটা তোমার জন্য। আমি নিজে বানিয়েছি। একটা বড় বউকে দিছি একটা তোমায়। সবার জন্য যেগুলা সেগুলা কিচেনে আছে। ওখান থেকেও খেও।” বলেই তিনি চলে যান৷ অরিন হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। সে এখনো শকডের উপর আছে। এই মাত্র বৈয়াম দেওয়া মানুষটা যেন তাঁর স্বপ্নে এসেছে।সব সময় বিরক্তিকর চাহনি। নাক ছিঁটকে কথা বলা মানুষটা তাকে বউমা ডাকছে? তাও নিজের হাতের বানানো আচার দিলো? উনার ভেতরে কোনো প্যাচ নাই তো? আছে নাকি কে জানে? অরিন কোনো রিক্স নিতে চায়না৷ দিহানের অনুমতি না নিয়ে সে এই আচার খাবেনা৷ আচারটা রেখে বারান্দায় চলে যায় অরিন। দিহানের আসতে দেরি হচ্ছে কেন? নিশ্চয়ই জ্যামে আটকে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে রুমের দরজা খুলে কেউ ঢুকে। অরিন ভাবে দিহান হবে। রুমে এসে দেখে মিহান দাঁড়িয়ে আছে। অরিনের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। ভয়ে বারান্দায় গিয়ে দরজা বন্ধ করার আগেই মিহান দরজায় ধরে ফেলে। হেঁচকা টানে অরিনকে রুমে ঢুকিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। অরিন নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করে বলে,

_আপনি এখানে কি করছেন? ছাড়ুন আমায়।” মিহান আরো শক্ত করে চেপে ধরে। অরিন বলে,” ছাড়ুন। এমন করছেন কেন?” মিহান ধরা গলায় বলল,”
_তাঁর আগে বলো তুমি কেন এমন করছো অরিন? কেন সব সময় রুমেই বন্দি থাকো? আমি তোমায় বলেছি একবার হলেও আমার চোখের সামনে এসো। তারপরেও কেন আমার চোখের আড়াল থাকো? বলেছি না তোমাকে রোজ রোজ দেখা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।”

মিহানের মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। অরিনের এমনিতেই বমি বমি পাচ্ছে। এখন যেন ভেতরের সব বেরিয়ে আসতে চাইছে। অরিন বমির মতো করে ওয়াক করে মিহান তবুও অরিনকে ছাড়ে না। অরিনের এক হাত ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা আচারে বোয়ামের ঢাকনা খুলতে চেষ্টা করে। অরিন এক হাত ছাড়ে পেয়ে মুখ চেপে ধরে। মিহান হাতে করে একটু আচার এনে অরিনের মুখে ঢুকাতে চায় অরিন ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুখ বন্ধ করে রাখে। মিহান জোর করে একটু মুখে ঢুকিয়ে দেয়। অরিন সাথে সাথে থু থু করে সব মিহানের মুখের ফেলে দেয়। মিহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

_আমার হাতের খেতে ঘৃণা লাগে তাইনা?
_আপনি নেশা করেন? ছিঃ!
_নেশা করে ও তো পারছি না অরিন। এটাও পারছে না তোমাকে ভুলাতে। আর কোন নেশা করলে তোমায় ভুলতে পারবো বলো? আর,,,আর তুমি কেন ছিঃ বলছো অরিন? নেশা করতে তো তুমি বাধ্য করো। তুমিই তো আমাকে এই পথ দেখিয়েছো? কি হতো সেদিন আমার হাত ধরে চলে আসলে? কি হতো আমাকে ভালোবাসলে? চলো না আবার আগের মতো হয়ে যাই আমরা। কেউ জানবে না আমাদের কথা। কেউ না।
_ভুলে যাবেন না আমি আপনার ভাইয়ের স্ত্রী। আমার হাত ছাড়ুন।
_ছাড়বো না। তোমার দিহানকে আমি মেরে দিবো। অনেক সয্য করেছি ওকে আর পারছি না আমি।
_আমার স্বামীর গায়ে একটা আছড় লাগলে খুন করে দিবো আপনাকে। ঘৃণা লাগছে আমার। আপনার মতো খারাপ মানুষকে একদিন আমি চাইতাম এটা ভেবে আমার ঘৃণা হচ্ছে। হাত ছাড়ুন।” মিহানের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠে। মেয়েলী পাপড়ি যুক্ত চোখ দুটোতে জলে টইটম্বুর হয়ে যায়৷ কাঁপা কাঁপা ভেজা গলায় অরনিকে বলে,
_তোমাকে পেলে আমি খারাপ হতাম না অরিন। আমি ভালো থাকতাম। সেই বই পোকা, শান্তশিষ্ট,গাম্ভীর্য মিহানই থাকতাম। আমার খারাপ হওয়ার পেছনের কারণটা তুমি।” বলতে বলতে মিহানের চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। অরিন বলল,
_আমি হবো কেন? আমি বলেছিলাম আপনাকে খারাপ হয়ে যান? নাকি আমি আপনাকে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম? আমি কম জাত,ক্ষ্যাত,অযোগ্য আপনার এতো তীক্ষ্ণ কথা শুনার পরেও এক বছর অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য। এক বছর পথ চেয়ে ছিলাম। আপনি একবার সামনে এসে আমায় সরি বলবেন। আমার অসহায় সময়টাতে আপনি আমার সাথে ছিলেন না। বরং বিয়ের রাতে বিধবা বানিয়ে আপনিই আমায় অসহায় বানিয়েছিলেন।
_তুমি আমাকে কসম দিয়ে আটকে রেখেছিলে।
_আপনার ফুপি আমাকে কসম দিতে বাধ্য করেছিলো। বিশ্বাস না হলে উনাকে জিজ্ঞেস করুন। এতোই যখন ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিশ্বাস করে নিজের ফুপিকে জিজ্ঞেস করেন না কেন? আমি সত্যি বলছি নাকি মিথ্যে বলছি। ছাড়েন। নয়তো আমি চিল্লাবো।
_চিল্লাও। চিল্লিয়ে সবাইকে জড়ো করে দাও। সবাই এসে তোমাকে ভুল বুঝে বাসা থেকে বের করে দিক। তোমাকে পাওয়ার একটা সুযোগ করে দাও অরিন। আমি শুধু তোমাকে চাই।” বলতে বলতে কেঁদে দেয় মিহান। অরিন ধাক্কা দিয়ে মিহানকে সরাতে চাইলে মিহান আরো জোরে চেপে ধরে দেয়ালে। অরিন আর্তনাদে কুঁকড়ে উঠে। দিশা মাত্র এসেছিলো অরিনের রুমে। মিহান অরিনকে দেয়ালে চেপে রেখেছে দেখে এসে পিছন থেকে মিহানের কলার চেপে ধরলো। মিহান পিছন ঘুরেই দিশার নাক বরাবর একটা গুষি মারে। দিশা নাকে হাত দিয়ে সাথে সাথে মেঝেতে পড়ে যায়। পিছন তাকিয়ে দিশাকে দেখে মিহানের মাথায় বাজ পড়ে। সে সব সময়ই হুশিয়ারি মস্তিষ্কের মানুষ। এভাবে কলার ধরায় কিছু বুঝার আগে তাঁর অজান্তেই তাঁর হাত চলে এসেছে। দিশাকে এভাবে মেরে ফেলবে কল্পনাই করেনি। দিশাকে ধরতে গেলে দিশা হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দেয়। ততক্ষণে দিহান চলে আসে। রুমে এসে দেখে দিশা নাক চেপে ধরে আছে। দিশাকে ধরে আছে অরিন। পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিহান। মেঝেতে একফোঁটা একফোঁটা করে রক্ত পড়ছে। নাকের ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দিশা সেন্সলেস হয়ে যায়। ইশি এসে এসব দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে। ওর কান্নাকাটিতে সবাই দিহানের রুমে চলে আসে। অরিন আর মিহান ছাড়া কেউ জানেনা দিশার কি হইছে। আপাতত কেউ এটা জানতে চাইছে না সবাই দিশাকে হসপিটাল নিতে ব্যস্ত হয়ে আছে। বোনের অবস্থা দেখে দিহানও আর এটা জিজ্ঞেস করলো না মিহান কেন তাঁর রুমে। সে দিশাকে নিয়ে হসপিটাল চলে যায়। শাওন ও দিহানের সাথে যায়। আর কেউ যায় না।

দিশার কেবিনের বাইরে অস্বাভাবিক ভাবে পায়চারী করছে দিহান আর শাওন। এই প্রথম শাওনের মনে দিশাকে হারানোর ভয় লাগছে। বুকটা চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বার বার দুটো চোখ ভিজে আসছে তাঁর। আজ এতোদিন হয়েছে বিয়ের। এতোদিনে একবারও দিশার সাথে কথা বলেনি সে। নিজেকে দিশার সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। অথচ কতো পাগল দিশা তাঁর জন্য? প্রতি রাতে দিশা শাওনের ঘুমন্ত কপালে চুমু এঁকে দেয়। শাওনের বুকে মাথা রেখে কান্না করে। শাওন সব দেখে, শুধু চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে পরে থাকে। এতোদিনে কোনো ভালোবাসা না পেয়েও কাউকে বলেনি সে শাওনের থেকে অবহেলিত। আর সে কিনা এই মেয়েটাকে কাঁদিয়েই যাচ্ছে৷ মনের মধ্যে কতো অভিযোগ তাঁর। সুযোগ পেলেই শাওনকে প্রশ্ন ছুঁড়ে কেন এমন করো শাওন ভাই। এইতো কাল রাতেই দিশা তাকে বলেছে,”

_তুমি আমার সাথে কথা বলো না কেন শাওন ভাই? আমি বিরক্তিকর তাইনা? যেদিন মরে যাবো সেদিন বুঝবা আমি কি ছিলাম।”

শাওন দুহাতে মাথা চেপে ধরে কেঁদে উঠে। অসয্য ব্যথায় তাঁর বুকের পাজরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। দিহান শাওনকে স্বান্তনা দেয়। বাসা থেকে বার বার কল আসছে দিশার জ্ঞান ফিরেছে কিনা। সবাই টেনশনে আছে। দিহান হঠাৎ দেখলো মিহান দৌড়ে আসছে। তাকে দেখে উদ্বিগ্ন বিচলিত লাগছে। দিহান গিয়ে মিহানের কলার চেপে ধরে। কেন তাঁর রুমে গেছিলো জানতে চাওয়ার আগেই মিহান অপরাধী গলায় বলে,”

_আমাকে মেরে দিস দিহান। আমি কিচ্ছু বলবো না। আগে বল দিশা ভালো আছে তো?” দিহান মিহানের কলার ছেড়ে ধাক্কা দিয়ে মিহানকে সরিয়ে এসে চেয়ারে বসলো। মিহান শাওনকে জিজ্ঞেস করলো,

_শাওন ডক্টর কি বলেছে? দিশার জ্ঞান ফিরেছে কি?” শাওন না সূচক মাথা নাড়ায়। মিহান চাতক পাখির মতো দিশার কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ ডক্টর এসে জানায় রক্ত লাগবে। মিহান রক্ত দেয়। রক্ত দেওয়ার পর মিহান ওয়াসরুমে গিয়ে মুখ চেপে কেঁদে উঠে। এটা কি করলো সে? বোনের গায়ে হাত তুললো? মিহান দেয়ালে ঘুষি মেরে হাতে আঘাত করতে লাগে। কেন হাত এগিয়েছিলো তাঁর? কেন তাঁর মস্তিষ্ককে আগে পিছন তাকাতে দেয়নি? হাত ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। ব্যথায় মিহান হাত চেপে ধরে। বিড়বিড় করে বলে,”আমাকে ক্ষমা করে দে বোন। আমি বুঝিনি রে।” বাইরে থেকে কেউ দরজায় নক করছে। মিহানের কানে এটা আসছে না। সে বিড়বিড় করে একই কথা বার বার বলে যাচ্ছে। সে ছোট থেকেই বোন নামক শব্দের প্রতি দূর্বল। হ্যাঁ সে খারাপ। তাই বলে কি বোনদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা থাকতে পারেনা? বোনেরা তো পবিত্র হয়। বিশাল বুকের অধিকারী আকাশটা হয় ভাই সেই বুকে চুপটি করে শুয়ে থাকা চাঁদটি হয় বোন। যার রূপালি আলোয় আলোকিত হয় হাজারো ভাইয়ের ঘর।

চলবে,,,। এই পার্টে 3,773 word!
বাকিটা রাতে আসবে ইন শা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here