ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_১১

0
1216

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_১১
#সুলতানা_সিমা

দিহান লুকিয়ে গেছিলো। কিছুক্ষণ কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো কেউ নেই। অথচ দিহান স্পষ্ট শুনেছে কেউ সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে হয় উপরে উঠেছে নয় নিচে নেমেচে। কিন্তু কে ছিলো? শব্দটা কি ভুল শুনলো? দুজনের তো ভুল শুনার কথা নয়। দিহান আবার কিচেনে গিলো। অরিন এখনো ভয়ের মধ্যে আছে। সে কাঁপা গলায় বলল”ক্ক কে ছিলো?
_জানিনা কাউকে তো দেখিনি।
_আপনি যান প্লিজ আমার ভয় লাগছে। কেউ আসলে আমায় কথা শুনাবে।” দিহানের ফোনে কল এলো। ফোনের স্ক্রিনে শাওনের নাম ভাসছে। দিহান অরিনকে বলল”শাওন ফোন দিচ্ছে। মনে হয় উপরে যাওয়ার জন্য। আমি যাচ্ছি।” দিহান চলে গেলো। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিপদের। সবাই অরিনকে কথা শুনাবে। যা দিহানের সয্য হবেনা। দিহান যাওয়ার পাঁচ’ছ মিনিট পরে অরিন চা নিয়ে গেলো। অরিন ছাদে উঠতেই চোখ গেলো দিহানের দিকে। দিহান মিটিমিটি হাসছে। অরিন চোখ নামিয়ে নিলো। একটু আগে নির্লজ্জের মতো দিহানের বুকে ঝাপিয়ে পড়ছিলো। এখন ভাবতেই লজ্জা লাগছে।

অরিন ট্রে এনে পাটির উপর রাখলো। শায়লা চৌধুরী অরিনকে বললেন”আরে তুমি তো দেখি সবার জন্য নিয়ে এসেছো।” অরিন মৃদু হাসলো। প্রথমে শান্তি চৌধুরীর হাতে কাপ তুলে দিলো। পরে শায়লাকে। তারপর আস্তে আস্তে সবাইকে। সবার শেষে দিলো দিহানকে। দিহানের হাতে কাপ দেওয়ার সময় একজনের আঙুলের সাথে আরেকজনের আঙুলের স্পষ্ট লাগে। অরিন কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে। দিহান ঠোঁট নাড়িয়ে ইশারায় চুমু খায়। অরিন লজ্জার সাথে মৃদু হাসে। শান্তি চৌধুরী চা খেয়ে অরিনের প্রশংসা করে বলেন”অরিন যদি আমি পুরুষ হতাম তোমাকে বিয়ে করতাম চা খাওয়ার জন্য।” বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগেন। অরিন কিঞ্চিৎ হাসে। শাওন আর দিহানের মনটা আনন্দে নেচে উঠে শান্তি চৌধুরীর কথায়।

শাওন অরিনের দিকে তাকায়। অরিনের চেহারায় লজ্জা ফুটে আছে। লজ্জায় লাল হওয়া চেহারাটা দেখে শাওনের চোখ আটকে যায়। তাঁর কাছে অরিনকে এখন পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী নারী লাগছে। অরিনের দিকে শাওন এভাবে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা দিহানের খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে করছে শাওনের চোখ তুলে ফেলতে। তবে নিজের রাগ হজম করে নিলো দিহান। সে অরিনকে ইশারায় চলে যেতে বলে। অরিন শান্তি চৌধুরীকে বলল”নানুমনি আমার শীত লাগছে আমি নিচে যাচ্ছি।” অরিন উঠে যেতে লাগলে শাওন বলে” তোমার চা আনতে এতো দেরি হলো কেন অরিন?”শাওনের প্রশ্নে অরিন ঘাবড়ে গেলো। তাঁর চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের চাপ ফুটে উঠলো। দিহান অরিনকে ইশারায় চলে যেতে বলে। তারপর কথা ঘুরাতে বলল,”শাওন তুই কিন্তু আমাদের সাথে যাবি। আর নীল তুইও।” দিহান শাওনকে কথায় ঘুরাতে লাগলে অরিন এই ফাঁকে চলে যায়। নীল চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বলল”এখন যেতে পারবো না। সময় নেই।” শান্তি চৌধুরী বললেন,”হ্যাঁ তোর সময় নেই। গত এক বছর ধরে তুই আমাদের বাসায় যাস না।
_নানুমনি যাবো তো। দেখবা একদিন হঠাৎ করে চলে গেছি।” শান্তি চৌধুরী কান্না জড়িত গলায় বললেন”হ্যাঁ যেদিন আমি মরে যাবো ওইদিন যাবি।” বলতে কেঁদে দিলেন শান্তি চৌধুরী। উনার কথায় ইশি দিশা দিহান লুপা এক সাথে দাদুমনি বলে ধমক দিলো। শায়লা নীলকে বললেন,”আমি শিলাকে [নীলের মা] ফোন দিয়ে বলব তুই মাকে কাঁদিয়েছিস।”নীলেও খারাপ লাগছে তাঁর নানুর কান্না দেখে। উঠে গিয়ে শান্তি চৌধুরীর পাশে বসলো। উনাকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী গলায় বলল “আমার বুড়ি রেগে গেছে? বুড়িটার চোখের আকাশে এতো বৃষ্টি হয় কেন?” শান্তি নীলের হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললেন,” তুই আমার সাথে কথা বলবি না।” দিশা ইশি নীলের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে। তাঁরা সব সয্য করলেও তাঁদের দাদুমনির কান্না সয্য করতে পারেনা। ইশি দিশার দিকে তাকিয়ে নীল দেখলো তাকে চোখ দিয়ে খুন করে ফেলছে। নীল শান্তি চৌধুরীকে বলল,

“যাবো নানুমনি, কিন্তু এখন না। দিশার আর ইশির বিয়ে হোক তবেই যাবো। এই দুই আপদ আছে বলেই তো আমি যাইনা।” নীলের কথায় দিশা আর ইশি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। দিশা ইশি এক সাথে নীলকে বকতে লাগলো। এক পর্যায়ে দিশা বলল”আমার দুই ফুপির ঘরে আল্লাহ দুইটা কুত্তা দিছে।” দিশার কথাটা শেষ হতে না হতেই শাওন দিশাকে বলল”আমরা কুত্তা হলে তুই কি? তুই একটা ময়দার বস্তা।” শাওন এটা বলার সাথে সাথেই দিশা শাওনের গায়ে গরম চা ছুঁড়ে মারল। শাওন লাফ দিয়ে উঠে। এভাবে গরম চা গায়ে ফেলে দেওয়াটা খুবই বোকামি। দিহানের রাগ হলো, সে দিশাকে ধমক দিতে যাবে তখনই শাওন তাঁর হাতের চা ছুঁড়ে মারল দিশার উপর। চা দিশার গা ছোঁয়ে গিয়ে পড়লো ইশির উপর। ইশি রাগি লুকে শাওনের দিকে তাকালো। চা ছুঁড়ে মারার আগেই নীলকে টান দিয়ে তার সামনে আনে। ইশি সব চা এসে নিলের উপর পরে। নীল রাগে পুরো কাপ সহ ইশির উপর ছুঁড়ে মারল। ইশি সরে যায় কিন্তু চা ঠিকই তাঁর উপর পরে। এদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছেন শান্তি চৌধুরী। শায়লা রাগে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে ছাদের এককোণে একটা ঝাড়ু দেখতে পেলেন। বেয়াদবের বাচ্চারা দাঁড়া বলে তিনি ঝাড়ু নিয়ে আসলেন। ইশি দিশা শাওন নীল এসে শান্তি চৌধুরীর পিছনে দাঁড়ায়। শান্তি চৌধুরী হো হো করে হেসে উঠেন। হাত সামনে বাড়িয়ে শায়লাকে বাধা দেন। মায়ের হাসি দেখে রাগ সব পানি হয়ে যায় শায়লার। ঝাড়ুটা ফেলে কর্কশ গলায় বলেন”যা যে যার মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। তোরা আড্ডা দেওয়ার যোগ্য না। বেয়াদবের দল। ছোট বড় কাউকে তোরা সম্মান দিস না। তোদের মতো কি আর কাজিন নাই? গিয়ে দেখ সবাই কতো সুন্দর চলাফেরা করে। আর তোরা? সেই ছোটবেলার অভ্যাস তোদের রয়েই গেছে।” বকতে বকতে কাপ গুলা ট্রেতে নিলেন শায়লা। তারপর একে একে সবাই নিচে চলে যায়। নীল এসে বারান্দায় চলে যায়। শাওন অস্বাভাবিক ভাবে রুমে পায়চারি করছে। তাকে কেন জানি এলোমেলো মনে হচ্ছে। দিহান শুয়ে পরল। কিন্তু তাঁর চোখে ঘুম নেই। একটা দিক থেকে সে অনেক সুখী,অরিনের সাথে তাঁর ভালোবাসার পথচলা শুরু হয়েছে আজ। আর একটা দিক থেকে সে অনেক দুঃখী,রাত পোহালেই সে চলে যাবে। আচ্ছা অরিনের তো ফোন নেই যোগাযোগ রাখবে কেমনে? দিহানের বুকটা ধুক করে উঠলো। অরিনের সাথে যোগাযোগ ছাড়া সে কেমনে থাকবে? মনের ছটফটানি বেড়ে গেলো। অরিন ছাড়া থাকা তাঁর সত্যিই অসম্ভব।

______________________________

সকালের সূর্য উঁকি দিলো। তাঁর ঝলমলে চকচক সোনালী আলো ছড়িয়ে পড়লো তমালপুরের বুক জুড়ে। শীতের সকালের রোদ অনেক মিষ্টি লাগে। তাইতো এই মিষ্টি রোদের ছোঁয়া পেতে উঠুনে বসে আছেন জহুরা। উনার খুব প্রিয় রোদ শীতের সকালের রোদ। আজ উনার মন অনেক খুশি। আজ অরিন বাড়ি চলে আসবে। আর ঘরে ঢুকলে ঘর খালি খালি লাগবে না। রান্নাঘরে গিয়ে লাউ নিয়ে আসলেন। বটি নিয়ে বসে এটা কাঁটতে লাগলেন। চিংড়ি মাছ দিয়ে লাউ খেতে অরিন খুব পছন্দ করে। লাউটা উনার গাছের। আর চিংড়ি মাছ কিনে আনছেন কাল। নিজের ফ্রিজ নেই তাই সেলিনার ফ্রিজে রেখেছেন। উনার ফ্রিজে রাখা মানে অর্ধেক উনাকে দিতে হবে। জহুরা দিবেন বলছেন। দিতে হবে জেনে শুনেই বেশি করে কিনছিলেন। আজ বাড়ি ফিরে এসে অরিনের প্রিয় খাবার রান্না হইছে দেখে কতই না খুশি হবে। ভাবতেই জহুরা বেগমের খুশি খুশি লাগছে।

সেলিনা বেগম পান চিবুতে চিবুতে ঘর থেকে বের হলেন। জহুরা বেগম উনাকে দেখে ভিতরে ভিতরে দু’এক গালি দিলেন। এতো সকাল সকাল কেউ এভাবে পান খায়? জহুরা নিজের কাজে মন দিলেন। সেলিনা জহুরার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,”শুনলাম গ্রামের অনেক মানুষজন নাকি এটা বলাবলি করছে, অরিন ঝি গিরি করে?” জহুরা একবার উপরে মুখ তুলে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলেন। কিছুই বললেন না। সেলিনা বললেন,এখন কি আর বিয়ে হবে? এমনিতেই তো এক দাগ লাগানো একটা বিয়ে হইছিলো। এখন আবার ঝিগিরির নাম লাগাইছে। এখন কে তাকে বিয়ে করবে? আশার সময় শুনে আসলাম। বাবুল সাহেবের ছেলের জন্য বিয়ে নিতে পারেনি বলে ভাতিজার জন্য নাকি বিয়ে নিতে চাইছিলো। আরেজন বলল যে, এই মাইয়া পরের বাড়ির বাড়ি কাম করে। এই মাইয়ারে পুতের বউ বানাইবা?” শেষের কথা গুলা মুখটা বাকিয়ে বললেন সেলিনা। জহুরা বেগমের খুব খারাপ লাগলো। কাল একবার করিম মিয়ার বাড়িতে গেছিলেন। ওই এক হাজার টাকা আনতে। তখন অনেকজন রাস্তাঘাটে পেয়ে জিজ্ঞেস করছিলো। কি ব্যাপার জহুরা ভাবি হুনলাম মাইয়া ডাক্তার বাড়ি কামে গেছে? ওগ বাড়ি জুয়ান পোলা একডা ওগ বাড়ি দিলা কেন? জহুরা বেগম বুক ছিঁড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সহজ সরল ভাবে একটি কথা বলে দিয়েছিলেন। কে জানতো এই মহিলা পুরো গ্রাম ছড়িয়ে দিবে। সেলিনা বেগম বললেন” একটা বিয়ের প্রস্তাব আনছি। ছেলে আমাদের ওখানের। গত বছর বিয়ে করছিলো। বউ আরেক জায়গায় পালিয়ে গেছে। ছেলে দেখতে ভালো আছে। সিএনজি চালায়। অরিন আসলে বলে দিবা।” কথাটা বলেই সেলিনা ঘরে চলে গেলেন। জহুরা বেগম তীক্ষ্ম চোখে উনার ঘরের দিকে তাকালেন। বাড়াবাড়ি করতে করতে একেবারে অরিনের বিয়ে নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করে দিছেন তিনি। উনার মেয়েকে উনি কোথায় বিয়ে দিবেন না দিবেন এটা উনার ব্যাপার। তিনি কেন নাক গলাবেন?

__________________________________

অরিন কিচেন থেকে বের হচ্ছিলো। তখনই দিহান তাঁর মুখ চেপে ধরে একটা রুমে ঢুকিয়ে দেয়। ভয়ে অরিনের কলিজা লাফাতে লাগে। কিচেনের সামনে একটা ছোট রুম আছে। এইখানে রুম আছে জানে অরিন, কিন্তু কখনো আসা হয়নি তাঁর। অরিন নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করে। তখন দিহান চাপা গলায় বলে “অরিন আমি।” দিহানের গলা শুনে অরিনের ছটফট বন্ধ হয়ে যায়। দিহান অরিনের মুখ ছেড়ে দেয়। অরিন জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগে। শুকনো এক ঢোক গিলে ভয়ার্ত গলায় বলে” আ আ আপনি এখানে কেন এনেছেন আমায়? “দিহান কিছু না বলে অরিনের দুগালে হাত রাখে। দিহানের ছোঁয়ায় অরিন কেঁপে ওঠে। দিহান অরিনের মুখটা তুলে ধরলো তারপর বলল” তোমাকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না অরিন।” দিহানের গলায় ব্যথিত। অরিন ছলছল চোখে দিহানের চোখের দিকে তাকায়। দিহান বলে,” এক দূর্ঘটনায় আমাদের বিয়ে। কাকতালীয় ভাবে আবার আমাদের দেখা। হুট করে ভালোবেসে ফেলা। হুট করে আবার সেই ভালোবাসার প্রকাশ পাওয়া। সবকিছু যেন খুব সহজে হয়ে গেলো। শুনেছি যেটার শুরু সহজ সেটার শেষ নাকি অনেক কঠিন। তোমাকে হারানোর ভয় হচ্ছে অরিন। এতো কম সময়ে এতো ভালো কেন বাসলাম বলো? জীবনে অনেকজনকেই ভালো লেগেছে অরিন। ভালোও বেসেছি একজন কে। কিন্তু এতো গভীর ভালোবাসা কারো জন্যই মনে জন্ম নেয়নি। তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি অরিন। যেন চোখের পলকেই ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে মনে।” অরিন ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠল। এই অল্প সময়ে গভীর ভাবে সেও তো ভালোবেসে ফেলেছে। সত্যিই তো সব কিছু এতো সহজে হয়ে গেলো। তাহলে কি সত্যিই শেষটা কঠিন হবে। না না কিছু যেন না হয় আল্লাহ। নয়তো আমি মরেই যাবো। এই মানুষটাইকে যে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি আল্লাহ।” মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে করতে দিহানকে জড়িয়ে ধরে অরিন। স্বামীর বুকে মাথা রাখার মতো সুখ উপর ওয়ালা হয়তো অন্য কোথাও দেননি। এটাই মনে হচ্ছে অরিনের। দিহান অরিনের মাথায় চুমু এঁকে দিলো। এই প্রথম সে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো তাঁর বউকে। হাতের বাধনটা শক্ত করে বলল”কখনো ভাবিনি আমাদের আবার দেখা হবে। আর দেখা হওয়ার পরেও ভাবিনি ভালোবেসে ফেলবো তোমায়।
_জানেন,আপনার উপর খুব রাগ হতো আমার। কিন্তু পরে বুঝেছিলাম, আপনি বা আমি দুজনই ছিলাম পরিস্থিতির শিকার।
_উপরওয়ালা আমাদের এভাবেই জোড়া করতে চাইছিলেন। তাই এমন হইছে।” দিহান অরিনকে ছেড়ে দিয়ে অরিনের হাত ধরে বলল, “অরিন কখনো আমাকে ছেড়ে দিবেনা তো?” অরিন বলল” আপনি আমাকে কখনো ছেড়ে দিবেন না তো?
_কখনোই না।
_যদি কখনো আপনার কাছে দুটো অপশনের একটা অপশন আমি থাকি। আপনি কি তখনও আমাকে ধরে রাখবেন?
_এসব উল্টা পাল্টা কি বলো অরিন? এমন কিছুই হবেনা কখনো। আমাদের পরিবার চলে আমার দাদুমনির কথায়। দাদুমনি যদি পৃথিবীর সব থেকে খারাপ জিনিসটাকে ভালো বলে আমাদের পুরো পরিবারও সেটাকে ভালো বলে। কারণ আমাদের দাদুমনির সিদ্ধান্ত মানে শেষ সিদ্ধান্ত। দাদুমনির উপরে কেউ কথা বলেনা। দাদুমনি কিন্তু তোমাকে অনেক পছন্দ করে সো চিন্তার কোনো কারণ নেই।
_যদি উনি কখনো কোনো কারণে আমায় খারাপ বলেন। তখন আপনি আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিবেন?
_উঁহু। বউ তো ছুঁড়ে ফেলার জিনিস নয়।” অরিন চোখে জল নিয়ে হাসলো। তারপর বলল,”আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপনি চলে যাবেন শুনে।
_কষ্ট তো আমারও হচ্ছে অরিন।” দিহান কি যেন ভাবলো তারপর পকেট থেকে ফোন বের করলো। অরিনের হাতে দিয়ে বলল”তুমি এটা রাখো।”অরিন ভাবলো দিহান হাতে রাখতে বলছে। ফোন হাতে নিয়ে দিহানের দিকে তাকালো। দিহান বলল” এটা তুমি চালাবা। এটা তোমার।” অরিন চোখ বড় বড় করে বলল” এ এ এসব কি বলছেন? আমি এটা রাখতে পারবো না।” বলেই দিহানের হাতে আবার দিয়ে দিলো। দিহান আবার অরিনের হাতে দিতে চাইলো। অরিন হাতে নিলোনা। দিহান কিঞ্চিৎ রেগে বলল”
_দেখো অরিন। তোমার ফোন নেই আমার সাথে কন্টাক্ট রাখবা কেমনে?
_আমি ফোন কিনে নিবো আপনি এটা নিন।
_অরিন তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।
_বাড়াবাড়ি আপনি করছেন। আমি আপনার ফোন নিবো কেন?
_কেন আমি কি তোমার কেউ না? অরিন বুঝার চেষ্টা করো। তোমার ফোন কিনতে কম হলেও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এই সময় তোমার সাথে যোগাযোগ ছাড়া কেমনে থাকবো আমি?” অরিন কিছু বলল না।” দিহান অরিনের দুহাত ধরে কোমল গলায় বলল” স্বামী দিয়েছে ভাবো। আমি মনে হচ্ছে একদিন কথা না হলে আমি মরে যাবো। প্লিজ বউ না বলোনা।” অরিনের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো। দিহান সেটা মুছে দিয়ে বলল,”বাসায় গিয়েই বাবার সাথে কথা বলবো। চিন্তা করোনা। খুব শীঘ্রই আমরা আবার এক হবো। আর শুনো এটাতে যে সিম আছে এটা আমার নতুন সিম। এটার নাম্বার কারো কাছে নেই। আমি যে সিমটা সাথে করে নিচ্ছি ওটার নাম্বার সেভ করা আছে। আমি ঢাকায় গিয়েই ফোন কিনবো আগে।” অরিন কিছু বলল না। তাঁর থেকে শুধু পানি পড়ছে। দিহান অরিনকে বলল,”কপালে একটা চুমু দিতে পারি?” অরিন চোখ তুলে তাকায়। তারপর লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। এই হাসির রেখা তাঁর স্বামীকে সম্মতি দিচ্ছে। দিহান অরিনের কপালে চুমু এঁকে দেয়। তারপর বলে,”আমাকে দাওনা।” অরিন অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তখনই শাওনের গর্জানো গলার ডাক শুনা গেলো। বিরতিহীন ভাবে দিহানকে ডাকছে। অরিনকে বায় বলে দিহান বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে কেউ ছিলো না আল্লাহ বাঁচাইছে। দিহান শাওনের রুমে গেলো। নীল রেডি হচ্ছে। দিহানকে দেখে বলল”কি রে কই তুই? যাওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি?
_আরে না,যাবোই তো। শাওন কই?
_কি জানি দেখ।” দিহান শাওনকে সব রুমেই খুঁজলো। পেলোনা। তারপর ছাদে গেলো। ছাদেও নেই। ছাদে না পেয়ে দিহান ছাদ থেকে নেমে আসতে লাগে। দরজার সামনে আসতেই পিছন থেকে তাঁর মাথায় খুব জোরে একটা বারি মারে কেউ। দিহানের মাথা চক্কর দিয়ে সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। দিহান শরীরটা ছাদের মেঝেতে নেতিয়ে পড়তেই দিহানের পা ধরে টেনে তাকে অন্যদিকে নিয়ে যায় চাদরের আড়ালে নিজেকে লুকানো কেউ একজন।

চলবে,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here