ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৮

0
1330

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৮
#সুলতানা_সিমা
[কপি করা নিষেধ। শেয়ার করা যাবে।]

লুপার ভয় এখনো কাটেনি। কলিজা এখনো লাফাচ্ছে তাঁর। ওই লোকটার অগ্নি চোখ দুটো বার বার চোখে ভাসছে। এমন ঘটনা লুপা কখনোই ফেস করেনি। বাড়িতে এসে কান্না করতে থাকে সে। জেদ ধরে ঢাকায় চলে যাবে। সবাই তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কান্না থামায়। শাওন লুপার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। তারপর যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো। শায়লা চৌধুরী ফ্রেশ হয়ে এসে জহুরা বেগমকে খুঁজতে লাগলেন। কোথাও জহুরাকে না দেখে দিহানকে গিয়ে বললেন,”দিহান জহুরা ভাবি আসেনি আজ?” দিহান আগে থেকেই জানতো তাঁর ফুপি তাকে এরকম কোনো প্রশ্ন করবেন। তাই সে উত্তরটা রেডি করেই রাখছিলো। শায়লা প্রশ্ন করতেই দিহান চট করে উত্তর দিলো,”উনার মেয়ে এসেছিলেন কী কী করতে হবে আমি বলেছি। সব কাজ করা হলে আমি উনাকে চলে যেতে বলি। তাই উনি চলে গেছেন।” দিহানের কথা শুনে শাওনের চোখের দৃষ্টি পাল্টে যায়। গলায় কিঞ্চিৎ ঝাঁঝ এনে বলে,”কী? অরিন এসেছিলো? ও কেন এসেছিলো?
_আমি কি জানি। আমাকে এসে জিজ্ঞেদ করলো সবাই কই আমি বললাম বাসায় নাই। তারপর কি কি রান্না করতে হবে আমি বললাম। রান্না করা হলে চলে যেতে বললাম।” শায়লা বেগম কিছু না বলে চলে গেলেন। শাওন ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকিয়ে আছে দিহানের দিকে। তার কপালের বাজ জানান দিচ্ছে দিহানের দিকে বিরক্তি ফুটে উঠেছে তাঁর।

শায়লা বেগম নিচে এসে দেখলেন টেবিলের উপর সবকিছু রাখা আছে। শায়লা সবাইকে খেতে ঢাকলেন। একে একে সবাই নেমে আসে। সবারই পেটে ক্ষিধা আছে। শায়লা সব বাটির ঢাকনা সরিয়ে দেখলেন এখানে কয়েকটা রান্না নেই, যেগুলা তিনি বলছিলেন। শায়লা দিহানকে বললেন,”এতো শুধু মাছ মাংসই রান্না করছে। বাকিগুলা রান্না করেনি?
_সরি ফুপি আমি ভুলে গেছিলাম।
_সবকিছু ভুলে গেছিলি? রুম মুছার কথাটাও মনে হয় বলিস নি?
_সরি ফুপি।
_হয়েছে খাওয়া শুরু কর এবার।” সবাই খাওয়া শুরু করলো। শাওন খাবার মুখে নিয়েই চোখ বন্ধ করে স্বাদ অনুভব করলো। তারপর বলল,”আম্মু অরিনের হাতের রান্না এতো মজা। এতো তোমার রান্নাকেও হার মানিয়ে ফেলেছে।” শায়লা বেগমের চেহারায় বিরক্তি ফুটে উঠলো। প্রথম কথাটা ভালো লাগলেও শেষের কথাটা ভালো লাগেনি উনার। শান্তি চৌধুরী শাওনের বিপরীত দিকে একটু দূরে বসেছেন। শাওন দাঁড়িয়ে একহাত টেবিলে ভর দিয়ে এগিয়ে এক লোকমা তাঁর নানুমনির দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,”নানু একবার খেয়ে দেখো পৃথীবির সব থেকে মজার খাবার হচ্ছে এটা।” নীল হাসতে হাসতে বলল,”আরে গাধা নানুমনি তো খাচ্ছেই এতো কষ্ট করে তাকে খাওয়াতে হবেনা। তোরটা তুই খাই।
_তুই কী বুঝবি। খেয়ে দেখ মনে হবে এমন খাবার তুই জীবনেই খাসনি।” শাওনের কথায় দিশা বলল,”
_দেখো শাওন ভাই। তুমি হয়তো জীবনে খাওনি। কিন্তু আমরা অনেক খেয়েছি। আমার ভাইয়ার হাতের রান্না খেলে পৃথীবির সব রান্না তোমার তিঁতা লাগবে।
_মুটকি তোর কাছে তো সবকিছুই খেতে মজা লাগে। পেটুক একটা।”
দিশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,”
_ ফুপি তোমার ছেলেকে বলো আমাকে মুটকি পেটুক বললে আমি ওর মাথা ফাটিয়ে দিবো।
_ইইইইই মুটকি একটা। উনি মুটকি হবে আর উনাকে কেউ মুটকি বলতে পারবেনা।
_দাদুমনি আমি কোন দিকে দিয়ে মুটকি ওকে বলতে বলো?
দিহান হাসতে হাসতে বলল,”
_আরে থাম তোরা পরে ঝগড়া করিস। আগে খা।” দুজন ঝগড়া থামিয়ে খেতে শুরু করলো। দিশা শাওনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে। শাওনও দিশাকে ব্যাঙ্গ করে।

সবার মুখে অরিনের রান্নার কি প্রশংসা। দিহান ভেতরে ভেতরে হাসছে। বিশেষ করে শাওনের কান্ডে তাঁর পেট ফেটে হাসি আসছে। এক লোকমা খাচ্ছে তো প্রশংসা করতে করতে সবার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। খেতে খেতে শায়লা বেগম বললেন,”শাওন শুন মামুনুল ভাই মনে হয় তোর বাবার সাথে গেছে। তুই গিয়ে জহুরা ভাবিকে আসতে বলিস।” শায়লার কথায় সাথে সাথে শাওনের চেহারায় অন্ধকার নেমে আসে। দিহানের বুকটাও ধুক করে উঠে। দিহান ঠিকই আন্দাজ করতে পারছে অরিনের মা অসুস্থ নয়তো উনি না এসে অরিনকে পাঠাতেন না। এখন উনাকে আসতে খবর পাঠালে নিশ্চয়ই অরিন আসবে যা দিহানের মোটেও ভালো লাগবে না। শায়লা আবার বললেন” কী হলো এভাবে মুখ বানিয়ে আছিস কেন?” শাওন ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠে,”আমি যেতে পারবো না। এই রান্নাবান্নার কাজ তো তুমি একাই করতে পারবে আম্মু।” দিহান বলল,”আব,,ফুপি আজকে থাক। আমি ভাবছি একদিন আমি সবাইকে রান্না করে খাওয়াবো।” লুপা খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলো,
_ওয়াও ভাইয়া রান্না করবে। জানো ফুপি ভাইয়া অনেক মজা করে রান্না করে। খেলে তো তুমি একদম ফিদা হয়ে যাবা।” নীল চাপা স্বরে বলল” শুরু হয়ে গেছে যত্তসব ন্যাকামি।” বলেই উঠে চলে গেলো টেবিল ছেড়ে। নীলের খাওয়া শেষ হয়ে গেছিলো তাই বিষয়টা কেউ অন্যভাবে নিলো না। দিহান বলল,”তাহলে আজ আমি রান্না করছি।” দিহানের কথা কেউ শুনেনি মনে হয়। কারো কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। দিহান একটু জোরেই বলল,
_তাহলে আজ আমি রান্না করছি?
শায়লা বেগম ঝাড়ি দিয়ে বললেন,”
_চুপচাপ খা।” দিহান চুপ করে খেতে লাগে। খাওয়া শেষ হলে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। দিহান শুধু দোয়া করছে অরিনকে যেন আসতে না হয়। নয়তো ওর ফুপি কাজ করিয়ে মেরে দিবেন।

___________________________

জহুরা বেগম শুয়ে শুয়ে একটা জিনিস ঠিকই আন্দাজ করতে পারছেন অরিন ডাক্তার বাড়ি থেকে আসার পর থেকে অস্বাভাবিক চলাফেরা করছে। প্রথমে এসে যখন রুমে ঢুকছিলো তখন উনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলেন। আলমারি খুলার শব্দ শুনে যখন তাকিয়েছিলেন দেখলেন অরিন আলমারিতে কি যেন রাখছে। উনি অরিন বলে ডাক দিতেই অরিন ভূমিকম্পে যেমন ভুবন কাঁপায় তেমনি কেঁপে ওঠছিলো। অস্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো। যেন সে আসামি আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একদল পুলিশ। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে অরিন কিছুই বলেনা। তোতলানো শুরু করে দেয়। তারপর থেকে সব কাজে ভুল করছে। এইতো আগে উনি পানি চাইলেন, অরিন ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার আসে এসে বলে কি দিতে বলছিলে মা। আরেকবার বললেন শায়লা কি টাকা দিছে অরিন একবার দিছে বলে আরেকবার না বলল। অরিন এমন মন ভুলা কখনোই ছিলোনা। আজ হঠাৎ কি হলো। উনি অরিনকে ডাক দিলেন,”

_অরিন।” মায়ের ডাক শুনে চমকে ওঠে অরিন। জহুরা হাত দিয়ে কাছে ডাকেন। অরিন পাশে বসে। জহুরা ক্ষীণ স্বরে বললেন,”কি অইছে তর? আইজকা তুই এমন করছ কেন?
_ক্ক ক্ক কই কি কিছু হইনি তো। কি হবে?
_ডাক্তার বাড়ির কেউ তরে কিছু কইছে?
_হ্যাঁ। না না। কিছু বলেনি। আ আ আমি রা রান্না বসাচ্ছি গিয়ে।”
_খাঁড়া। টাহা দেইনাই?
_দি দিবে তো পরে দিবে।” বলেই অরিন ঘর থেকে বাইরে আসলো। দিহান নামক মানুষটা তাঁর মাথায় গেঁথে গেছে। বার বার অরিনের চোখে ভাসছে দিহানের ওই কান্ডগুলা। অরিনের শরীরে যেন দিহানের ছোঁয়া লেগে আছে। দিহানের ছোঁয়া যে শিহরণ জাগিয়েছিলো সেটা এখনো তাঁর শিরায় শিরায় শীতল স্রোত হয়ে বয়ে চলছে। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের এতো কাছে গিয়েছে বলে এমন হচ্ছে নাকি দিহান নামক মানুষটার সাথে তাঁর একটা বন্ধনের সম্পর্ক আছে বলে এমন হচ্ছে, সেটা জানেনা অরিন।

রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করতে লাগে সে। রান্না শেষ হলে ঘরে এসে সেলাই করতে বসে। একজন মহিলা আজ কাপড় দিয়ে গেছেন সেলাইয়ের। মাগরিবের আজান দিয়েছে একটু আগে। নামাজ পরেই সেলাইয়ে বসেছে। বাইরে থেকে কারো ডাক শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে অরিন। মনসুর সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। অরিন ওড়না মাথায় টেনে নিয়ে সালাম দিয়ে এগিয়ে আসলো। মনসুর সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বললেন”ভালো আছো অরিন?
_জ্বি চাচা ভালো। কোনো দরকারে এসেছেন?
_ভাবি কী ঘরে?
_মা অসুস্থ চাচা।” মনসুর সাহেব বিচলিত হয়ে বললেন,” আরে কী বলো। চলো তো দেখি।” মনসুর সাহেব ঘরে গিয়ে জহুরা বেগমকে দেখলেন। উনার সবকিছু সাথে থাকায় জহুরার প্রেশার মেপে নিলেন। সব চেক করে অরিনকে বললেন,” আমার কাছে তো অষুধ নাই। আমি শাওনকে দিয়ে অষুধ পাঠিয়ে দিবো। অসুস্থ জানলে তো আগে সব নিয়ে আসতাম। তোমার চাচি ফোন করে বলল বাড়ি ফিরার সময় ভাবির টাকাটা দিয়ে এসো আমি বাড়িতে ছিলাম না বলে দিতে পারিনি।” বলতে বলতে পকেট থেকে টাকা বের করে এক হাজার টাকার একটা নোট অরিনের দিকে বাড়িয়ে বললেন,”এইটা রাখো।
_কিন্তু চাচা মা তো বলল পাঁচশো।
_আরে রাখো এক সাথে দিলাম। ভাবি সুস্থ হলে তো আবার যাবেই। আজ তাহলে উঠছি।
_জ্বি চাচা।” মনসুর সাহেব চলে গেলেন। শাওন অষুধ নিয়ে আসবে শুনেই অরিনের হার্টবিট বেড়ে গেছে। অরিন জানে শাওনের সাথে দিহান আসবে। দিহান আসলে তাঁর সামনে বের হবে কেমনে? এটা ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

____________________________

মনসুর সাহেব বাড়িতে এসে নিজের রুমে চলে গেলেন। শায়লা বেগম উনার ভাইঝিরা উনার মা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলেন। স্বামী এসেছেন দেখে শায়লা উঠে চলে যান। দিহান রান্না করছে আর শাওন ও নীল বসে বসে ফোনে গেইম করছে। দিহানের একটুও খারাপ লাগছেনা। বরং তাঁর ভালো লাগছে৷ হোক তার কষ্ট কিন্তু অরিন তো কষ্ট করলো না। অরিনের জন্য এতো কিছু কেন করছে তা সঠিন ভাবে জানেনা দিহান। সে শুধু জানে তাঁর শান্তি লাগে। অরিনের কষ্টে তাঁর কষ্ট হয়। কিছুক্ষণ পরে মনসুর সাহেব কিচেনে এসে বললেন,”শাওন এই অষুধ গুলা নিয়ে অরিনদের বাড়ি যা।” উনার কথা কানে আসতে দিহানের হাত থেকে বাটি পড়ে যায়। বাটিতে টক দই ছিলো। বাটিটা পড়ে ভেঙে যায় আর কিছু দই ছিঁটকে এসে তার কুকিং অ্যাপ্রোনে পড়ে। তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। দিহান জোরপূর্বক হেসে সরি বলে বাটি তুলতে লাগলে। শায়লা বেগম দৌড়ে এসে বলেন,”হায় হায় কী হয়েছে দিহান। তুই ঠিক আছিস তো?
_ফুপি তুমিও না। মাত্র বাটি পড়েছে। এতে আমার কি হবে?
_চুপ থাক৷ মানা করলে শুনিছ না। কতবার বলেছি রাঁধতে হবেনা? যদি বাটিটা পায়ে পড়তো কাঁচের বাটি এটা নক ফেটে যেতো। যা ফ্রেশ হ গিয়ে। বাকিটা আমি দেখবো।” দিহান যায়না। গেলে যদি শাওন চলে যায় সেটা ভেবে। অ্যাপ্রোন খুলে বলে,”ফ্রেশ হতে হবেনা। চল শাওন বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
_না না তুই রেস্ট নে।
_ও হ্যালো আমি তোর নানার নাতি। নানা নয়। চল।” দিহানের কথায় শায়লা হেসে উঠেন। কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে উনার কলিজা শুকিয়ে গেছিলো। উনার ভাইঝি ভাইপু গুলা উনার কলিজার টুকরা। কিছু হয়ে গেলে উনার কষ্ট হতো খুব। দিহান শাওনকে রাজি করিয়ে চলে যায় শাওনের সাথে। নীলও দৌড়ে তাদের সাথে যায়। দিহানের খুব খুশি খুশি লাগছে। অরিনকে দেখবে সে। ইশ ভাবতেই কত সুখ সুখ লাগছে।

অরিনের বাড়ির যত কাছে আসছে ততই তার হার্টবিট বাড়ছে। অরিনের উঠুনে পা রাখতেই অজানা শিহরণ তার মনের ঘর কাঁপিয়ে তুললো। অরিনদের দরজার সামনে এসে শাওন ডাক দিবে তখন দেখলো দরজা ফাঁক করে বেজানো। শাওন দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। দিহানের চোখ চলে যায় টেবিলে বসা অরিনের দিকে। খুব মনোযোগ দিয়ে লেখছে সে। জহুরা বেগম শুয়ে ছিলেন। শাওনকে দেখে শীর্ণ গলায় বললেন” আরে শাওন বাজান।” অরিনের বুকটা ধুক দিয়ে উঠে। পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে শাওন ঘরে ঢুকছে। দিহান আর নীল দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। অরিন মাথায় ওড়না টেনে চট করে চেয়ার থেকে উঠে যায়। দিহানকে দেখে তাঁর হার্ট চলার গতি আবারও ভেরে গেলো। শাওন ঘরে ঢুকে দিহান আর শাওনকে ডাক দেয়। তারা ঘরের ভিতর ঢুকে৷ জহুরা বেগম উঠে বসেন। শাওন নীল খাটে বসে। খাটের সামনে টেবিল হওয়ায় দিহান চেয়ারে বসে। অরিন চট করে সরে যায়। দিহান খাটের দিকে মুখ করে চেয়ারে বসে। এখানে বসেছে একটা কারণে, অরিনের লেখা দেখবে সে। অরিন খাটের অন্যপাশে চলে যায়৷ ওইখান থেকে নীল শাওনের পিছে সে কিন্তু দিহানের মুখোমুখি। শাওন অষুধ বের করে কোনটা কখন খেতে হবে সেটা দেখাচ্ছে। নীলের আর জহুরা শাওনের অষুধ দেখানো দেখছে। দিহান অরিনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। অরিন একটু পর পর আড়চোখে তাকাচ্ছে। তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। দিহান অরিনের খাতার দিকে তাকিয়ে অরিনের লেখা দেখলো। তারপর অরিনের তাকিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে নাইচ বলল। অরিন বুঝলো না মনে হয়। চোখ নামিয়ে নিলো সে। দিহান আবার খাতার দিকে তাকালো। আসলেই অরিনের হাতের লেখাটা খুব সুন্দর। দিহান ফোন টেবিলে রেখে কলম হাতে নিয়ে ছোট করে orin লিখে কলম রেখে দিলো। তারপর আবার কলম তুলে একটা প্লাস দিয়ে dihan লিখলো।

শাওন অরিনকে বলল,”এই অরিন এক গ্লাস পানি দাও তো।” অরিনের পড়ার টেবিলের উপর পানির জগ গ্লাস ছিলো। অরিন টেবিলের সামনে আসে। দিহান খাটের দিকে মুখ করে থাকায় দিহান অরিনের পিছনে দাঁড়িয়ে এসে গ্লাসে পানি ঢেলে শাওনের হাতে দিয়ে আগের জায়গায় দাঁড়ায় গিয়ে। শাওন জহুরাকে অষুধ খাওয়াও। তারপর বলে,”অরিন তুমি এতো মজা করে রান্না করো সত্যি আমার জানা ছিলোনা। আজকে তুমি যা যা রান্না করেছো সবকিছুই অনেক মজা হয়েছে।
_আ আমি রান্না করেছি?
_হ্যাঁ আজ যা রান্না করেছিলে না সত্যি খুব ভালো হয়েছে।” অরিন কিছু বলল না। আসলে কী বলবে সে বুঝলই না। সে তো রান্না করেনি। দিহান বলল রান্না করা আছে। তাহলে? সন্দেহের চোখে দিহানের দিকে তাকালো। দিহান অরিনের দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দেয়। চট অরিন চোখ নামিয়ে নেয়। শাওনের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতেছে না অরিন। শাওন বলল,”তাহলে আমরা উঠছি চাচি।”
_চা খাইয়া যাও বাজান।
_না না চাচি আরেকদিন খাবো আজ যাচ্ছি।” শাওন উঠে দাঁড়ায় অরিনকে বলে, “আসছি অরিন।” চাচির খেয়াল রেখো। চাচি যাচ্ছি তাহলে।” দিহান দাঁড়িয়ে গ্লাসে পানি ঢালে। তারপর আবার বসে পানি খেতে লাগে। গ্লাসের অর্ধেক পানি খায় অর্ধেক রয়ে যায়। তারপর দাঁড়িয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। অরিন দিহানের দিকে বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে। কেন জানি এইবার চোখ নামাতে পারেনা। দিহানের ঠোঁট কামড়ে হাসার দৃশ্যটা তাঁর অনেক ভালো লাগে। শাওন অরিন জহুরার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। দিহানের দিকে তাকায়নি বলে তাঁর এ কান্ড চোখে পড়েনি। কিন্তু নীলের চোখে ঠিকই পড়েছে। নীল আপাতত ব্যাপারটা না দেখার ভাণ করে আছে।

দরজার সামনে গিয়ে দিহান অরিনের দিকে তাকালো। তারপর মৃদু হেসে চলে গেলো। গেট পেরিয়ে আসতেই শাওনের ফোনে কল এলো দিহানের মনে পড়লো তাঁর ফোন টেবিলে রেখে আসছে। দিহান বলল,”এই শাওন আমি ফোন ফেলে আসছি রে।” শাওন ফোনে কথা বলার ফাঁকে বলল,”যা নিয়ে আয় আমরা দাঁড়িয়ে আছি।” তারপর আবার ফোনে কথা বলতে লাগলো।

শাওনরা বেড়িয়ে যাওয়ার পরে জহুরা বেগম বাথরুমে যান। অরিন তৎক্ষণাৎ এসে খাতা হাতে নেয়। orin+dihan লেখা দেখে কেন জানি তার মনে অন্যরকম একটা ফিল হয়। এই ছোট দুটো শব্দ দেখতে তাঁর এতো ভালো লাগছে যেন সব ভালো লাগাকে হার মানিয়ে ফেলেছে। খাতা রেখে গ্লাস হাতে নিয়ে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে। গ্লাসেও যেন দিহানের গন্ধ লেগে আছে। দিহান যেখানে ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেয়েছিলো ওখানে ঠোঁট লাগিয়ে এক ঢোক পানি খায় তারপর আবার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। আবার খেতে যাবে তখনই ,”আমার ফোনটা দাও।” হঠাৎ দিহানের গলা শুনে অরিন কেঁপে ওঠে। পুরো শরীর ঝাঁকিয়ে কেঁপে উঠার ফলে কিছু পানি ছিঁটকে তার চোখে মুখে। অরিন ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় না। যদি দিহান তাঁর হাতে গ্লাস দেখে ফেলে সে জন্য। দিহান এগিয়ে এসে অরিনের পিছনে দাঁড়ায়। দিহানের গা অরিনের পিঠের সাথে একটু লাগে। দিহান বারিয়ে ফোন হাতে নেয়। দিহান বুকটা অরিনের পিঠে পুরো পুরি ভাবে লাগে। অরিন কেঁপে ওঠে কিন্তু নড়েনা বুকের সাথে জড়িয়ে গ্লাস লুকিয়ে রাখছে। দিহান দেখে ফেললে লজ্জায় মরে যাবে। দিহান একটু ঝুঁকে অরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”খেয়ে নাও কেউ দেখছে না।” কথাটা শুনেই অরিন চোখ বড় বড় করে তাকায়। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। দিহান কলম হাতে নিয়ে খাতায় ছোট করে লিখে “always miss you” তারপর অরিনকে মৃদু স্বরে বলল,”গুড নাইট।” বলেই দিহান বেরিয়ে গেলো। অরিনের খাতা নিয়ে হাসা পানি খাওয়া সব দেখেছে সে। গেটের সামনে এসে দেখলো শাওন এদিকে আসছে। দিহানকে দেখে কেমন জানি কর্কশ গলায় বলল “এতো দেরি হলো কেন তোর?
_আরে কই দেরি? চলতো ঘুম পাচ্ছে।” দিহান শাওনকে টেনে নিয়ে চলে আসলো। আল্লাহ বাঁচাইছে সে চলে আসছে না আসলে তো শাওন গিয়ে অরিনের পাশে দাঁড়ানো দেখতো। তখন কী হতো?

চলবে,,,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here