ভালোবাসা এমনও হয় পর্ব-৭

0
834

#ভালোবাসা_এমনও_হয়
#Writer_Nusrat_Jahan
#Part_07

তখনই কেউ একজন এসে সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়।।
সায়ান মুখ উঠিয়ে দেখে

সায়ানঃ আরে নিরব স্যার আপনি
(বলে ও দাড়িয়ে যায়)

(জি গল্পে নতুন কারো এন্ট্রি হইছে।।সবাই খালি ইশান আসছে ভাবছেন।
বাট আমি তো জিলাপি আপু তা কিভাবে ভুলে যাও?তোমরা যা ভাববা তার ধারে কাছেও আমি থাকবো নাহ?
।নিরব খান।।এই কলেজের জুলোজিকালের টিচার।)

সায়ান তাদের এতোটা কেয়ার করে নাহ।।বাট যেহেতু স্যার তাই রেসপেক্ট তো দেখাতেই হবে।

নিরবঃ কি হচ্ছে এখানে?

নেশা এতোক্ষণে লোকটির দিকে তাকালো। লোকটির মুখ তার কাছে অচেনা। হা করে তাকিয়ে আছে।।

সায়ানঃ স্যার র‍্যাগিং হচ্ছে।কেন আপনার কোন সমস্যা ??

নিরবঃ তোমরা র‍্যাগিং করবে ভালো কথা।।কিন্তু আজ একটু বেশি হয়ে গেল নাহ।।কাউকে স্মোক করতে বাধ্য করতে পারো নাহ তোমরা।।

(আসলে সবাই জানে ইশান আর তার বন্ধুরা র‍্যাগিং করে।।।কিন্তু তাতে কোন স্যাররাই মাথা ঘামায় নাহ।।কারন যদি কেউ কিছু বলতে যায় তাহলে তার আর চাকরি থাকবে নাহ।।কিন্তু আজ হঠাৎ নিরব স্যার তাতে বাধা দিলো।।ব্যপারটি তে সায়ান অবাক হলেও ভয় পেল নাহ)

সায়ানঃ সো হোয়াট স্যার।। আপনি আপনার কাজ করুন আমরা আমাদের কাজ।।

নিরবঃ দেখ এইরকম চলতে থাকলে আমি প্রিন্সিপাল এর কাছে কমপ্লেন করতে বাধ্য হবো।

সায়ানঃ আহ স্যার কেন শুধু শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনছেন।।

সায়ান আর কিছু বলতে যাবে তখন তার নজরে পরলো ইশান।।ইশান আর আয়ান একটু পিছনে দাড়িয়ে আছে।।

আসলে আয়ান গেছিলো ইশানকে ডেকে আনতে।।কিন্তু ইশান আসার আগেই নিরব এসে হাজির হয়।

সায়ানঃ আরে ইশান এসেছিস।।দেখ নাহ নিরব স্যার কি সব বলছে।।আমাদের নাকি র‍্যাগিং করতে দিবে নাহ।প্রিন্সিপালের কাছে কমপ্লেন করবে

ইশানের নাম শুনে নেশা পিছনে তাকালো।।দেখলো ইশান তার দিকে বাঘের চোখে তাকিয়ে আছে।।।কিন্তু কেন এইভাবে তাকিয়ে আছে তার মানে নেশা বুঝলো নাহ।।যাও একটু সাহস পেয়েছিলো ইশানের নাম শুনে ইশানকে দেখে সেই সাহস টুকুও ভয়ে পরিনত হলো।

সায়ান ইশানের জবাব না পেয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো।

সায়ানঃ এই ইশান কিছু বলছি তো

ইশানঃ হ্যাঁ!!! (হুস আসে)

সায়ানঃ স্যার নাকি প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিবে আমাদের নামে।

ইশান সামনে এগিয়ে আসলো

ইশানঃ হ্যা স্যার তো ঠিকই করেছে।।তোর নামে বিচার দেয়াই উচিত।।?

সায়ানঃ হ্যা ???(অবাক হয়ে।)

সায়ানঃ তোর কি হলো হঠাৎ আজ।।তুই কি র‍্যাগিং করতে নিষেধ করছিস??

এইদিকে

নিরবঃ এই মেয়ে তুমি ঠিক আছো??

নেশাঃ জজি

নিরবঃ তা তোমার নাম কি

নেশাঃ জি নেশা

নিরবঃ ওহ নাইস নেম।।মনে হয় নতুন তাই আমায় চিনো নাহ।। আমি এই কলেজের টিচার।কোন হেল্প লাগলে আমাকে বলো।।

নেশাঃ জি স্যার

নিরবঃ আচ্ছা ক্লাস করবে তো। চলো তোমায় ক্লাস দেখিয়ে দেই।

নেশা একবার ইশানের দিকে তাকালো।।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই নেশাকে জালিয়ে দিবে।

নেশাঃ মনে মনে- আল্লাহ এই ড্রাগন টা আজ এই ভাবে লুক দিচ্ছে কেন??।।স্যারকে বরং না করে দেই

নিরব এইদিকে নেশার জবাব নাহ পেয়ে তার কাধে হাত দিলো।।

নিরবঃ হেই আর ইউ ওকে

নেশাঃ জজি স্যার। (হাতটা সরিয়ে)

নিরবঃ ওকে দেন চলো।

নেশা নাহ বলতে যাবে তার আগেই

ইশানঃ নেশা তুই গাড়ির কাছে যাহ আমি আসছি

ইশান এমন ভাবে বললো কথাটা যে নেশা ভয়ে মাথা নাড়িয়ে গাড়ির সামনে চলে গেল।।

নিরব পিছে পিছে যেতে নিলো ইশান আটকালো।

নিরবঃ?

ইশানঃ ধন্যবাদ স্যার ওকে আজ প্রটেক্ট করার জন্য

নিরবঃ ইটস ওকে।।এটা আমার ডিউটি।

বলেই আবার যেতে নিলো

ইশানঃ স্যার

নিরবঃ হোয়াট?

ইশানঃ স্যার আপনাকে প্রিন্সিপাল ডাকছে।।

নিরবঃ এখন?!

ইশানঃ জি স্যার

নিরব চলে গেল।।ডাহা মিথ্যা কথা।।নেশার কাছে যাওয়া আটকানোর জন্য ইশান এই কথা বলেছে।

সায়ানঃ এটা কি হলো ইশান। তুই ওই মেয়েকে ছেড়ে দিলি কেন?।।মেয়েটা কিন্তু অনেক বোকা বোকা ছিলো।।আরেকটু হলে হয়তো সিগারেট টা খেয়েই ফলতো।।মাঝখানে স্যার এসে বাধা দি…….

সায়ান মাঝপথে থেমে গেল।।কারন ইশান রাগে ফুফাচ্ছে।।

ইশানঃ আমি চাইনাহ এখন তোর উপর দিয়ে সব রাগ দেখাতে।।সো চুপ থাক।।আর নেশার থেকে দুরে থাক।

বলেই ইশান হনহন করে বেরিয়ে গেল।

সায়ানের মাথায় কিছুই ঢুকলো নাহ।

সায়ানঃ কি হলো ব্যাপারটা ?

আয়ানঃ নেশা সায়ানের খালাতো+চাচাতো বোন

সায়ানঃ হোয়াট ????

এইদিকে ইশান এসে সোজা গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ধপ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।।নেশা ভয়ে কেপে উঠলো।।

এইদিকে নেশা ঢুকবে কিনা বুঝতে পারছে নাহ।।ইশান তাকে ঢুকতেই বলছে নাহ।।অনেক সাহস নিয়ে যেই না বলতে যাবে

ইশানঃ গাড়িতে কি উঠবি নাকি রেখে চলে যাবো

নেশা তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে গেল।।ইশান গাড়ি নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে পরলো।সেই কখন থেকে ইশান চুপচাপ ড্রাইভ করছে।।নেশা এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছে।।ইশান কিছুই বলছে নাহ।।

নেশাঃ আরে আজব তো কথা কেন বলছো নাহ।।কি করেছি আমি।।এই রকম হুতুম পেচার মতো মুখ করে রেখেছো কেন

ইশানঃ….

নেশাঃ জানো আয়জ যদি ওই স্যার টা না আসতো তাহলে হয়তো এতোক্ষণে আমার র‍্যাগিং টা হয়েই যেত।।জানো আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম।।কোথায় ছিলে তুমি

ইশান স্যারের কথা শুনে গাড়ি জোরে ব্রেক মারলো।।

নেশাঃ আরে আরে কেউ এইভাবে ব্রেক মারে।।আর এই ভাবে বাঘের মতো তাকিয়ে আছো কেন??

ইশানঃ আর সময় তো আমি কিছু বললে আমায় থাপ্পড় মেরে দিস।।আর আজ সায়ানকে কিছু বলতে পারলি নাহ।ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিয়েছিলি???

নেশা বুঝতে পারলো ইশান পার্টির কথা বলছে।।

ইশানঃ কি হলো জবাব দে??

নেশা কেপে উঠলো ইশানের ধমক শুনে।।

নেশাঃ আয়াসলে এএককটা মমমেয়য়ে

ইশানঃ তোতলানো বন্ধ কর ইডিয়েট???

নেশাঃ শালা ইদুরের বাচ্চা।।আমার উপর এই ভাবে চিল্লাছে আবার বলে তোতলানো বন্ধ করতে।।আমি কি ইচ্ছা করে তোতলাচ্ছি??

ইশানঃ কি বিরবির করছিস।।জোরে বল?

নেশাঃ আসলে ভাইয়া একটা মেয়ে বলেছিলো উনার কথা না মানলে নাকি কলেজে টিকতে দেবে নাহ তাই

ইশানঃ কেন কলেজ টা কি তার যে সে টিকতে দেবে নাহ

নেশাঃ নাহ তার নাহ।।আসলে তার বন্ধু নাকি ওই কলেজের বিপি তাই সবাই এমনকি টিচাররাও তাদের কিছু বলে নাহ।।

ইশানে ইচ্ছা করছে ঠাস ঠাস করে নেশার গালে দুইটা বসিয়ে দিতে।।মেয়েটা যে ইশানের কথাই বলেছে তা নেশা বুঝতেই পারেনি।।ইডিয়ট একটা।

ইশান কিছু নাহ বলে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো।

নেশাঃ দেখলো তুমিও ওই বিপির কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলে।।আচ্ছা সবাই কি ওই বিপিকে ভয় পায়??।আচ্ছা উনি কি অনেক রাগি

ইশানঃ হুম অনেক রাগি।।আর বেশি কথা বললে মানুষকে ঠাস করে চড় মেরে দেয়

নেশা তো মাথা মোটা।। ইশান যে তাকে বলছে সে তো তা বুঝতেই পারছে নাহ

নেশাঃ কিহ চড় মেরে দেয়।।এতো সাহস।।কেন কলেজ কি তার বাপের কিনা নাকি হ্যা।।এই রকম মানুষকে তো উচিত উল্টো ঝুলিয়ে পিটানো।।

ইশানঃ কিহ বললি???

নেশাঃ আরে আজব তুমি রাগছো কেন। আমি তো ওই কালা হনুমান বিপিকে বলছি

ইশানঃ তুই কিভাবে বুঝলি হনুমানটা কালো

নেশাঃ ওহ কালো নাহ বুঝি।।তাহলে ধলা হনুমান। এখন ঠিকয়াছে।।

ইশানঃ হুম( দাতে দাত চেপে)

নেশাঃ এই রকম মানুষদের এইসব পাওয়ার দেয়াই উচিত নাহ।।

ইশানঃ ওকে পাওয়ার দেয়া হয়নি।।সে নিজের যোগ্যতায় পেয়েছে।।

নেশাঃ আরে এই রকম মানুষকে চিনা আছে।।কোন যোগ্যতা নাহ।।এগুলো ছ্যাচড়ামো,মারামারি করেই দেখো গিয়ে এই পাওয়ার হাতিয়ে নিয়েছে।।শয়তান একটা।।আজ ওই ছেলেটার জন্য আমাকে র‍্যাগিং এর শিকার হতে হয়েছে।।

ইশানঃ এতে যে ওর দোষ আছে তুই কিভাবে বুঝলি।।ওতো এই সম্পর্কে জানতো ও নাহ।

নেশাঃ আহ ভাইয়া তুমি এতো ওই ছেলের হয়ে সাফাই গাইছো কেন।।সব দোষ ওই ছেলেরই।। ওকে সামনে পেলে তো আমি…

ইশান আবার ব্রেক মারলো।

নেশাঃ ??

ইশানঃ তুই??

নেশাঃ কি আমি।। আর গাড়ি থামালে কেন

ইশানঃ আগে বল সামনে পেলে কি করবি

নেশাঃ মেরে হাড্ডি গুড়ো করে দিবো।

ইশানঃ তাই বুঝি?

নেশাঃ হু(ভাব নিয়ে)

ইশানঃ তাহলে তো একদিন তোকে বিপির সাথে দেখা করাতেই হয়।

নেশাঃ তা আর বলতে

ইশান বাঁকা হাসি দিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো।।নেশা বুঝতে পারলো নাহ এই হাসির মানে।সে মাথা ঘামালো ও নাহ

হঠাৎ

নেশাঃ এই ভাইয়া গাড়ি থামাও,গাড়ি থামাও(চিৎকার করে)

ইশানঃ কি হলো চিৎকার করলি কেন

নেশা চুপচাপ আইসক্রিম ব্যানের দিকে তাকালো।।ইশান বুঝতে পারলো ব্যাপার টা।

ইশানঃ নেভার।

নেশাঃ প্লিজ ভাইয়া।। একটু খাবো।

ইশানঃ নাহ এগুলো আন হেলদি ?।তোকে আইসক্রিম পার্লার থেকে খাওয়াবো পরে।। বাট এইখানে নাহ।

নেশাঃ আচ্ছা আইসক্রিম পার্লারে ও খাইও। বাট এখন এই খানে খাই।বলেই নেশা বেরিয়ে গেল।

ইশান ও উপায় না পেয়ে পিছে পিছে গেল।।

নেশাঃ দাদা একটা চকলেট ফ্লেভার দিন।।ভাইয়া তুই কোনটা খাবি

ইশানঃ নাহ তুই খা।

নেশা নিয়ে খেতে লাগলো।।ইশান টাকা দিয়ে দিলো।।নেশা চুপচাপ খাচ্ছে তার মনের সুখে।।

একটুপর নেশার চোখ গেল ইশানের দিকে।।ইশান নাক টাকে আকাশে তুলে রেখেছে।।

নেশাঃ ঢং এমন করার কি আছে।।।?

ইশানঃ এগুলো কেউ খায়?।এর থেকে আইসক্রিম পার্লারে গেলে ভালো হতো নাহ।

নেশাঃ আচ্ছা এখানে খেয়ে নেই তারপর আইসক্রিম পার্লারে যাবো???

ইশানঃ তুই যে দিন দিন মোটি আর রাক্ষসী হয়ে যাচ্ছিস তা কি তুই জানিস?।যার জন্য এই রাস্তায় ওই এইসব খাওয়া শুরু করেছিস।

নেশাঃ হুহ।।নে একটু খেয়ে দেখো কি মজা।

ইশানঃ না আমি খাবো নাহ এইসব রাস্তার আইসক্রিম।

নেশাঃ আরে খাও নাহ অনেক মজা।

নেশা জোর করে ইশানকে এক কামড় খাইয়ে দিলো

নেশাঃ কি মজা নাহ??

ইশানের ওতোটা খারাপ লাগেনি।।তবুও

ইশানঃ ছি কি বাজে।।আমার মুখের টেস্ট টাই নষ্ট করে দিলো।।ইয়াক???

নেশাঃ নে আরেক কামড় খা।

ইশানঃ ছি নাহ তুই খা।

নেশাঃ ????

পরেরদিন

ইশান আজ ও নেশাকে সাথে করে নিয়েই কলেজে এসেছে।।।নেশাকে তার ক্লাসে দিয়ে ইশান চলে গেল।।

নেশা ক্লাসে ওই মেয়েটাকে দেখতে পেল।

নেশাঃ হেই তুমি।।কেমন আছো।

মেয়েটিঃ ভালো। তুমি

নেশাঃ আমিও ভালো।।তোমার নাম কি।

মেয়েটিঃ রোজা।।আর তোমার নাম তো নেশা তাই নাহ

নেশাঃ হ্যা

রোজাঃ আহ কাল যা একটা কান্ড হলো নাহ।।বিপি ভাইয়া সায়ানকে যা ঝাড়ি দিলো

নেশাঃ বিপি ভাইয়া? উনি ওখানে এসেছিলো?

রোজাঃ হ্যা এসেছিলো তো।।তোমাকে না ধমকিয়ে গাড়িতে উঠালো।।আচ্ছা উনি তোমার কে হয়

নেশাঃ হ্যা! আমাকে গাড়িতে উঠিয়েছে?।।কিন্তু আমাকে তো-মনে মনে

নেশাঃ আচ্ছা বিপি ভাইয়ার নাম কি

রোজাঃ ইশান চৌধুরী ?

নেশাঃ কিহহ?????(বলেই চেয়ার থেকে দাড়িয়ে গেল)

চলবে

(আখ খেতে ছাগল বন্দী, জলে বন্দী মাছ ?
নেশা এখন ফাইসা গেছে, বিপি দিবো বাঁশ?

সখী গোওওওও, নেশা শক খাইছে?
নিজেরই কথার জালে ফাইসা গেছে?)

সবাই বলো এখন কি হতে চলেছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here