ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ১৪

0
1788

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৪

দাদু সহ অনেকেই ছুটে এলো বাইরে৷ বৃষ্টি তখনো থামেনি৷ দাদু হৈমীকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে এলা সহ আরো কয়েকজন কে বললো ছাতা ধরতে গিয়ে। রুমে গিয়ে নিজের বাটন ফোন টা হাতে নিলো।এ মূহুর্তে মাহেরকে খুবই প্রয়োজন। তাই মাহেরের নাম্বার ডায়াল করলো।

নামাজ পড়ে মাহের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো। ফোনের রিংটোনে খানিকটা কেঁপে ওঠলো। ফোনের স্ক্রিনে দাদুর নাম্বার দেখেই বুকটা ধক করে ওঠলো তাঁর। নিশ্চয়ই কোন বিপদ ঘটেছে নয়তো এতো সকালে দাদুর ফোন আসতো না। বাচ্চারা ঠিক আছে তো?হৈমীর কিছু হয়নি তো?জ্বর হয়েছে কি আবারো? এর আগেও যখন হৈমীর ১০৪ডিগ্রি জ্বর হয়েছিলো দাদু মাঝরাতে ফোন করে জানিয়েছিলো। মাহেরও ছুটে গিয়েছিলো ডক্টর দেখানো ওষুধ পএ সব ব্যবস্থা করেছে। দাদু টাকা দিতে চাইলেও সে নেয় নি। নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য এটুকু করতে পেরে সে প্রচন্ড তৃপ্তি পেয়েছে টাকা নিয়ে সেই তৃপ্তি কে অতৃপ্তি করতে চায়নি।

নানারকম চিন্তা মাথায় নিয়েই ফোন রিসিভ করলো। হৈমীর খবড় শুনে মাহের লাফ দিয়েই বিছানা ছাড়লো। পড়নে টিশার্ট আর শর্ট প্যান্ট ছিলো। মানিব্যাগ নিয়ে সেভাবেই বেরিয়ে গেলো সে। যেতে যেতে নয়ন কে মেসেজ করে দিলো। নয়না এসেছে গতকাল তাই তাঁরা দুজনই যেনো হসপিটাল চলে যায়। হৈমীকে নিয়ে এখুনি হসপিটাল যাবে জানিয়ে দিলো মেসেজে সবটা।

সিএনজি রিজার্ভ করে সুখনীড়ের সামনে চলে গেলো মাহের। হৈমীকে ধরেই বসে আছে কয়েকজন। এলাসহ সকলেই কান্না করছে হৈমীর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি৷ রক্ত দেখে সে ভীষণ ভয় পায় এলাকে জাবটে ধরে চোখ বন্ধ করে কাঁপছে সে। দাদু ওড়না ছিড়ে মাথা বেঁধে দিয়েছে। মাহের আসতেই বাচ্চা দের কান্নার স্বর আরো বেড়ে গেলো। হৈমীকে দেখে মাহেরের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠলো কেমন। দ্রুত গিয়ে বাচ্চা দের সড়তে বললো দুহাতে হৈমীকে ওঠিয়ে কাঁধ জরিয়ে নিলো। হৈমীর মাথা ঠেকলো তাঁর কাঁধে, পিঠ ঠেকলো বুকে। মৃদু আওয়াজে বললো,

— একটু হাঁটার চেষ্টা করো কিছু হবে না ভয় পেওনা,আমি আছি হসপিটাল যাবো সব ঠিক হয়ে যাবে।

হৈমী প্রচন্ড কাঁপছে ভয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অবিরত। মাহের তাঁর ভয় বুঝতে পেরে একহাতে হৈমীর হাত চেপে ধরে সামনে এগুতে এগুতে বললো,

— দাদু আপনার আসতে হবে না এলাকে সাথে পাঠিয়ে দিন শুধু।

দাদু জোর করলো আসার জন্য বাচ্চা রাও আসতে চাইলো। দাদু বাচ্চা দের ধমকে বললো,

— ভিতরে যাও সবাই পরী ঘুমাচ্ছে ওঠে কাউকে না দেখলে কান্নাকাটি করবে ওর দায়িত্ব তোমাদের।

বাচ্চা রা মাথা নিচু করে চলে গেলো। দাদু আসাতে এলাকেও রেখে এলো।
.
কপালের এক সাইটে কেটে গেছে দুটো সেলাই করতেই হবে। তা শুনে হৈমীর সে কি চিৎকার ডক্টর বিরক্ত হয়ে ধমক দিলো কয়টা। মাহেরের কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে আছে হৈমী।মাহের তাঁকে শান্ত করতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরেই নয়না,নয়ন ছুটে এলো।

এদিকে দাদুর রুদ্রর কথা মনে পড়তেই ফোন করে জানিয়ে দিলো হৈমীর এক্সিডেন্টের কথা। পরে জানলে না জানি কি করে বসবে। যতো যাই হোক হৈমীর সাথে রুদ্রর বিয়ের কথা অর্ধেক হয়ে গেছে বলা চলে। তাই দাদু সব বিবেচনা করে জানিয়েই দিলো। খবড়টা পাওয়ার দশমিনিটের মধ্যে রুদ্র চলে এলো হসপিটালে। পিছনে সাদমান,আবির রয়েছে। দাদুকে হসপিটালের বাইরে বসা দেখতে পেলো।
কোন কেবিন বলতেই রুদ্র সেদিকে চলে গেলো।
.
মাহের দাঁড়িয়ে আছে। নয়নাকে জাবটে ধরে চিৎকার করছে হৈমী সে সেলাই করতে দেবে না। ডক্টর বিরক্ত হয়ে বললো,

— চিকিৎসা করতে যখন দেবেনই না তাহলে এসেছেন কেনো? এসব সিনেমা দেখার জন্য হসপিটাল তৈরী করা হয় নি। পরিবেশ নষ্ট করার হলে বাইরে গিয়ে করুন৷ এটা হসপিটাল মাছের বাজার না।

ডক্টরের কথা শোনা মাএই রুদ্র ভিতরে ঢুকেই ডক্টরের কলার চেপে ধরলো। রক্তচক্ষু তে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধমকে বললো,

— চিৎকার করবে, দরকার পড়লে ব্যান্ড বাজাবে হসপিটালে তুই কি করবি বল কি করবি তুই।

রুদ্র কে দেখে সকলেই অবাক। মাহের রুদ্র কে দেখে হৈমীর বেডের কাছে গিয়ে হৈমীর পাশে বসলো। হৈমী চিৎকার থামিয়ে ভয়ে ভয়ে নয়নাকে আরো জরিয়ে ধরলো। মাহের বললো,

— ভয় পেও না কিছু হবে না আমরা আছি।

নয়ন, নয়না দুজনই হৈমীকে ধরে বসে আছে।
এদিকে ডক্টরের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে নার্স ও বেশ ভয় পেয়ে গেছে। ডক্টর আমতা আমতা করে বললো,

— রুদ্র ভাই! আপনি এখানে?

— চুপপ! পেশেন্ট কে চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্ব তোর কিভাবে দিবি তা তুই বুঝবি। পনেরো মিনিট টাইম দিলাম। চিকিৎসা সম্পন্ন কর নয়তো তোর হসপিটাল আমি জ্বালিয়ে দেবো।

উপস্থিত সকলেই ভয় পেয়ে গেলো৷ হৈমী কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,

— এইটা কে এলো রে আমার আধমরা জীবনটা ফুলমরা করতে এইটারে কে নিয়ে এলিরে। তোরা কি আমাকে জানে প্রানে মেরেই ছাড়বি।

রুদ্র ডক্টরকে ছেড়ে হৈমীর দিকে তাকালো। আবারো ডক্টরের দিকে তাকাতে ডক্টর নার্সকে ইশারা করলো। নার্স গিয়ে মাহেরকে ওঠতে বললো,নয়নকে সড়তে বললো।দুজনই সড়ে গেলো শুধু নয়না ধরে আছে তাকে।

রুদ্র মোড়া টেনে এক পা লম্বা করে আরেক পা ভাজ করে বসলো। সাদমান, আবির কে ইশারা করলো বেরিয়ে যেতে। মাহের রুদ্র কে দেখে জেলাস ফিল করলেও ভদ্রতা বজায় রেখে পাশে গিয়ে বসলো। টুকটাক কথা বার্তা বললো।

ডক্টর সেলাই করতে নিতেই হৈমী এমন চিৎকার করছে যে সুই আগাতেই পারছে না৷ মাহের হৈমীর কান্না সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে গেলো। হৈমী কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— বাবাগো আর জীবনে আম গাছের নীচে যাবো না৷ আমের নাম মুখেও আনবো না। মাফ করে দাও তবুও এই সুই দিও না। বাঁচাও কেউ আমাকে বাঁচাও। ও আপু আপু গো এই কষাই কে সড়তে বলো আমার কাছ থেকে প্লিজ আপু! প্লিজ ডাক্তার সরে যান আপনাকে এক বইয়াম আচাড় খাওয়াবো কথা দিলাম।

নয়না আদরের স্বরে বোঝাতে লাগলো। ডক্টর ভয়ে ভয়ে রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে আবার হৈমীর দিকে তাকাচ্ছে। রুদ্র বেশ বুঝলো এভাবে কাজ হবে না। তাই ওঠে গিয়ে বললো,

— ভাবি সড়ুন।

নয়ন ভয়ে এক ঢোক গিললো।হৈমী আরো শক্ত করে নয়নাকে জাবটে ধরলো। নয়না রুদ্রর দিকে চেয়ে বললো,

— ভাই খুব ভয়ে আছে আমি সামলাচ্ছি তুমি বসো।
— আপনি সড়ুন এভাবে হবে না। আপনি ওখানে গিয়ে বসুন বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।

নয়না সড়তে নিতেই হৈমী আরেক চিৎকার দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। রুদ্র হৈমীর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে নয়নাকে ছাড়িয়ে নিজে বসে পড়লো বেডে। হৈমীর হাত দুটো পিছন দিক নিয়ে এক হাতে চেপে ধরে আরেকহাতে হৈমীর মুখ চেপে ধরলো। নার্সকে বললো পা দুটো চেপে ধরতে ডক্টর কে বললো,

— ফাস্ট।
.
সেলাই শেষে ডক্টর চলে গেলো। নয়না, নয়ন দুজনই বেডের কাছে এলো। মুখ থেকে হাত সড়াতেই হৈমী ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আহত গলায় বলতে লাগলো,

— আপনি খুব খারাপ। খুব খারাপ আপনি। আমাকে পঙ্গু করার জন্যই আপনি দুনিয়াতে এসেছেন। আপনি একটা কষাই,হৃদয়হীন, কোন দয়া মায়া নেই। বলেই আবারো ফুপাতে লাগলো।

রুদ্র এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হৈমীকে ছেড়ে ওঠে গেলো। নয়না হৈমীর পাশে বসে জরিয়ে ধরে বোঝাতে লাগলো। হৈমীর চিকিৎসা সম্পন্ন শুনে খুশি হলো মাহের কিন্তু রুদ্রর কাজটা পছন্দ হলো না।” জোর করে কেনো করাতে হবে বুঝিয়ে করলেই তো হতো ” ভাবলো মাহের।
.
মাহেরের আগেই সাদমান হৈমীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসি তে চলে গেছে। দাদু বেশ নিশ্চিন্ত এখন রুদ্র দাদু কে সুখনীড়ে ফিরে যেতে বললো। দাদু মাহের কে বললো,

— দাদু ভাই আমাকে দিয়ে এসো।
— হৈমীকে নিয়ে একসাথেই যাই দাদু।
— ডক্টরের সাথে কথা বলে ওরা আসবে দাদুভাই। তুমি বরং আমায় দিয়ে আসো। ওদিকে বাচ্চা রাও হয়তো চিন্তায় আছে পরীও আমাকে না দেখে কান্নাকাটি করছে হয়তো।

দাদুর কথা ফেলতে পারলো না মাহের তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাদুকে নিয়ে বের হলো।যাওয়ার আগে হৈমীর সাথে দেখাও করে গেলো।
.
হৈমীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নয়না। নয়ন ফোনে মায়ের সাথে কথা বলছে এদিকের খবড় জানাচ্ছে মা কে। মায়ের সাথে কথা শেষে মাহের ফোন করতেই রিসিভ করলো৷ মাহের প্রচন্ড চিন্তায় আছে সে নয়ন কে বেশ ভালো ভাবে বুঝিয়ে বললো, হৈমীকে নিয়ে সুখনীড়ে চলে আসতে নয়ন বললো,

— সাদমান ভাইয়া ওষুধ গুলো আনলেই বের হবো। তুমি চিন্তা করো না। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
.

রুদ্র কেবিনের ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো হৈমী বিরবির করে তাঁকে বকছে নয়নার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। মাথায় ব্যান্ডেজ কাটা জায়গার ওখানে সাদা ব্যান্ডেজে রক্তের লাল দাগ ভেসে ওঠেছে। কতোটা আঘাত পেয়েছে ভাবতেই বুকের ভিতর চাপ দিলো খুব। ইচ্ছে করছে সবগুলো আম এনে গলা দিয়ে ঢোকাতে এতোই আম খাওয়ার ইচ্ছে ঝড়,বৃষ্টি তে বেরিয়েছে। ভাবলো রুদ্র।
নানারকম চিন্তার মাঝে একটা চিন্তা কে বেশী প্রাধান্য দিলো তা হলো হৈমীর রেষ্ট নিতে হবে। প্রচুর যত্ন নিতে হবে একা ছাড়া যাবে না কোনভাবেই। চোখের আড়াল করতে পারবে না তাঁকে আর। তাই নিজের মতো চুপচাপ বেডের কাছে গিয়ে হৈমীকে সকলের সামনেই কোলে তুলে নিলো। হৈমী চেঁচিয়ে ওঠলো,

— একি কি করছেন আপনি!সাথে সাথে আবার আহ করে ওঠলো কাটা স্থানে টান পড়ায়।

নয়ন, নয়না দুজনেরই চোখ কপালে ওঠে গেলো যেনো। হৈমী ধীর ভাবে চেচাচ্ছে , লজ্জায় মরে যেতে মন চাচ্ছে তাঁর। অস্বস্তি তে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।কেবিনের বাইরে বের হতেই সাদমান, আবির হা হয়ে গেলো। কয়েকজন নার্স ভাবলো হয়তো নিজের বাড়ির লোক অসুস্থ তাই কোলে করে নিচ্ছে। যারা রুদ্র কে চেনে তাঁরা হা করে চেয়ে আছে আর ভাবছে মেয়েটা কে? সকলে একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। হসপিটালের নার্স রা হা করে চেয়ে দেখছে রুদ্রর কাহিনী। হৈমী নিচু স্বরে বকতে লাগলো,
— এই বেহায়া বন মানুষ নামান আমায়। নিজের না হয় লজ্জা নাই আমার লজ্জা কমানোর মিশনে নেমেছেন কেনো? আমাকে কিডন্যাপ করছেন কেনো?চিল্লাতে পারছিনা বলে এভাবে নিয়ে যাবেন৷ আশেপাশের মানুষ গুলা কি পুতুল না রোবট হা করে দেখছে কেউ কিছু বলে না কেনো? নয়না আপু,,,কই তুমি?

হৈমীর কথায় পাত্তা দিলো না রুদ্র। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে ডোর লক করে দিলো। নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

নয়না, নয়ন দুজনই বের হয়ে এলো আবির বললো,
— ভাবি আপনাদের বাড়িই মানে শেখ বাড়িতেই নিয়ে যাচ্ছে। চিন্তা করবেন না চলুন আপনাদের পৌঁছে দেই।

নয়নার চিন্তা যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। কারন ও বাড়িতে সূচনা,আর সরভী বেগম না জানি কি রিয়্যাক্ট করে এসবের জন্য।
.
হৈমী ধীরে ধীরে চেচাচ্ছে যার ফলে রুদ্র বাঁকা হাসলো৷ অসুস্থ থাকায় জোরে কথা বলতে পারছে না। গলার স্বর বেশ আহত। ড্রাইভিং করতে করতেই রুদ্র হালকা কেশে বললো,

— চুপ করে বসে থাকো। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে অথচ চুপ করছো না এতো কথা বলো কেনো?
— আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? আমি অসুস্থ দেখছেন না?
— হুম দেখছি সেজন্যই তো নিয়ে যাচ্ছি।
— কোথায়?
— আমার বাড়ি।
— কিহ!যাবো না আমি, আমার বাড়ি যাবো৷
— চুপ করে বসে থাকো হৈমী। কথা বাড়িও না।
— কেনো নিয়ে যাচ্ছেন এ অবস্থায় কেউ আত্মীয় বাড়ি যায় বলুন? নরম স্বরে বললো হৈমী।
— আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছো না তো, তোমার নিজের বাড়ি যাচ্ছো। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো রুদ্র।

হৈমী অবাক হয়ে তাকালো রুদ্রর দিকে। রুদ্রর মনোযোগ সহকারে ড্রাইভ করছে। হৈমী ভ্রু কুঁচকে বললো,

— আমার বাড়ি মানে কি বলছেন?
— আমার বাড়ি মানেই তোমার বাড়ি। আর একটা প্রশ্ন করলে মাথায় এক ঘুষি দিয়ে চুপ করাবো। মৃদু ধমকে বললো রুদ্র।

হৈমী হকচকিয়ে গেলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকালো রুদ্রর দিকে৷ “লোকটা এমন করে কেনো? অসুস্থ তবুও দয়া মায়া নেই হৃদয়হীন কোথাকার “।ভাবলো হৈমী।
.
বাড়ির সামনে আসতেই রুদ্র নেমে গাড়ির ডোর খুললো।হৈমী নামতে নিতেই রুদ্র কোলে তুলে নিলো।
হৈমী হালকা চিল্লিয়ে বললো,
— ছিঃ আবারো কি করছেন কি? আমি যাচ্ছি তো? নামান বলছি।
— অসুস্থ তুমি চুপচাপ থাকো কথা বললে ফেলে দিবো। বলেই এগুতে লাগলো।
হৈমী আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলো। আর কিছু বলতে পারছে না সে। ব্যাথা মাথায় পেয়েছে,পায়ে তো নয়?লোকটা এমন পাগলামো করছে কেনো?যদি ওনার মা, বাবা থাকে? হায় আল্লাহ রে হৈমী তারাতারি নাম কোল থেকে ভেবেই মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো।
রুদ্র কঠিন চোখে তাকাতেই হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,
— আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে আপনার মা, বাবা কি ভাববে বলুন তো নামান আমায়।
— কিছু ভাববে না আর যদিও ভাবে তাহলে সেটা তাঁদের সমস্যা আমার না। বউ অসুস্থ এসময় লজ্জা নিয়ে বসে থাকা ষ্টুপিড দের কাজ রুদ্রর নয়।
— এহ ন্যাকা বিয়ে না করে বউ বউ করে জিকির শুরু করেছে।
রুদ্র কঠিন চোখে তাকাতেই হৈমী নিচু গলায় চেচিয়ে বললো,
— আর বলবো না, আর বলবো না ফেলে দিবেন না প্লিজ।

কথা বলতে বলতে ড্রয়িং রুমে পা বাড়ালো রুদ্র।
সূচনা সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো, সুরভী বেগম রান্নাঘরে। সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো রেদওয়ান শেখ।
রুদ্র নিজের মতো এগিয়ে যাচ্ছে হৈমী যখন সূচনা আর রেদওয়ান শেখ কে দেখলো লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। ধীর গলায় বলতে লাগলো,
— আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ নামান আমায়।

সূচনা বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। হাত,পা, বুক কাঁপছে তাঁর কাঁপা গলায় ডাকলো,খালামুনি,,,

রেদওয়ান শেখ ভ্রু কুঁচকে নেমে এলো কিছু বলতে নেবে তাঁর আগেই রুদ্র বললো,

— বউ অসুস্থ তাই বাড়ি নিয়ে এসেছি কেউ কোন প্রশ্ন করবেন না। আজি বিয়ে করবো সো আর কোন কৌতুহল থাকবে না আশা করি।

রেদওয়ান শেখ কিছুক্ষণ চুপ রইলো রুদ্র সিড়িতে পা ফেলতে নিতেই তিনি হু হা করে হেসে ওঠলেন । আর বললেন,

— বউ নিয়ে এভাবে কেউ আসে নাকি? ঘটা করে আসতে হয়, শেখ বাড়ির বউ সাধারণ ভাবে আসবে কেনো? যাক এসেই যখন গেছে আপাতত এভাবেই মুখ দেখি বলেই নিজের গলার স্বর্নের চেইন টা খুলে হৈমীর গলায় পড়িয়ে দিলো।

রুদ্র আর কোন কথা না বলে সোজা উপড়ে চলে গেলো।হৈমী বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো একবার রুদ্রর দিকে আবার নিজের গলার মোটা চেইনটার দিকে। কি ঘটে গেলো তাই বোঝার চেষ্টা করছে সে।
.
— এসব কি হচ্ছে আমার বাড়ি?তুমি এটা কি করলে? কিভাবে পারলে তুমি ছেলেকে সাপোর্ট করতে? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে বউ বলবে আর তুমি তাই মেনে নিবে রাদিফের বাবা? চিৎকার করে হাতের খুন্তি সামনে ধরে বললো সুরভী বেগম।

রেদওয়ান শেখ হাহাহা করে হেসে ওঠলো। আর বললো,
— রুদ্ররও তো বাবা আমি সুরভী। আমার ছেলে তাঁর ২৬বছরের জীবনে কোনদিন একটা চকলেট চায় নি আমার কাছে। ছোট থেকে আজ অবদি তাঁর কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি আমাকে, রাস্তা ঘাটে দেখা হলে কোনদিন বাবা হিসেবে পরিচয় করায়নি কারো কাছে। পিতাপুত্রের সম্পর্কে যে দূরত্ব রয়েছে সেই দূরত্ব আরো বাড়িয়ে কেনো দিবো বলতে পারো?
রুদ্র নিজের ইচ্ছায় নিজের মর্জি তে চলেছে সব সময়। কোনদিন যখন বাঁধা দেইনি আজ দিবো কেনো? বাবা, ছেলের যে দূরত্ব রয়েছে সেই দূরত্ব তে আরো দ্বিগুণ বাড়াতে চাইনা বলেই ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমার ছেলে যদি কোন মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায় সেখানে আমার বাঁধা দেওয়ার কোন রাইট নেই।

রেদওয়ান শেখ এর কথা শুনে সূচনা দৌড়ে উপরে চলে গেলো৷ সুরভী বেগম স্বামীর দিকে আগুন চোখে চেয়ে সূচনার পিছু ছুটে গেলো।
.
দুটো ডিম সিদ্ধ,বেশ কিছু ফল নিয়ে রুমে এলো নয়না। রুদ্র সুখনীড় থেকে সাদমান কে দিয়ে হৈমীর কিছু কাপড় নিয়ে এসেছে। হৈমী রুদ্রর রুমেই জামাকাপড় পালটেছে বাঁধ্য হয়ে। রুদ্র যেভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক কথা না শুনলে এনিটাইম বোম ব্রাস্ট হবে। সেই ভয়েই হৈমী চুপচাপ রয়েছে। দাদুর ছুঁতো দিতেও রুদ্র বলেছে দাদুকে জানিয়ে দিয়েছে সে। নয়না কে রুমে আসতে দেখেই চোখ, মুখ কাঁদো কাঁদো করে বললো,

— আপু আমি বাড়ি যাবো। আমার সাথে কি হচ্ছে এসব আপু বলেই গলার বড় চেইন টা খুলে ফেললো।

নয়না কাছে এসে বসতে বসতে বললো,
— হৈমী খাবারটা খেয়ে নে তোর সাথে আমার কথা আছে।
— খাবোনা তুমি বলো।
— বোন খেয়ে নে না খেলে রুদ্র রেগে যাবে।
— হ্যাঁ তোমার দেবর তো দেশের প্রেসিডেন্ট তাঁর রাগের ভয়ে স্বরম, লজ্জাও ত্যাগ করতে হয়।
নয়না কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই রুদ্র রুমে এসে বললো,
— ভাবি এদিকে বসেন।

নয়না ওঠে অন্যপাশে বসলো। রুদ্র হৈমীর পাশে বসলো।গাঢ় চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— খাবার শেষ করো ফাস্ট।
— তাহলে বলুন ঐ সাইকেলটা দিয়ে দেবেন আমায়। রুমের এক কোণায় সাইকেলটা ইশারা করে দেখিয়ে বললো হৈমী৷ যাকে বলে ঝোপ বুঝে কোপ ফেলা।
রুদ্র সাইকেল টা দেখে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
— হুম।

হৈমী প্রচন্ড খুশি হয়ে বললো,
— আচ্ছা তাহলে খাচ্ছি বলেই আঙুর নিলো হাতে।
রুদ্র গম্ভীর গলায় বললো,
— ওয়েট আগে ডিম দুটো শেষ করো।
— ওয়াক থু! ডিম সিদ্ধ,ডিম ভাজি,ডিমের তরকারি এইসব আমি একদম অপছন্দ করি। এক কাজ করুন একটা ডিম আপনি খান আরেকটা আপু তুমি খাও বাকি গুলো আমিই শেষ করি।
রুদ্র চোখ কটমট করে চেয়ে বললো,
— সাইকেলের মায়া ত্যাগ করো তাহলে।
— হৈমী রিয়েলি ডিম লাইক করেনা রুদ্র ভাই, আমি তখনো বললাম তোমায়৷ বললো নয়না।
— দেখেছেন আপুও বললো। আমি খাবোনা আপনিই খান নিশ্চয়ই আপনি রোজ দশটা ডিম খেয়ে খেয়ে এমন বডি বিল্ডার হয়েছেন?বললো হৈমী।
রুদ্র সেদিকে কান না দিয়ে বললো,
— একটা খেতে হবে নাও স্টার্ট।
— খাবো না আমি বলছিতো।
নয়না চুপচাপ এদের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো৷
রুদ্র একটা ডিম অর্ধেক করে সামনে ধরে রাগি গলায় বললো,
— নাও মুখে নাও নয়তো থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবো।
— আপনি আবার থাপড়াতে চাইছেন থাকবো না আমি এখানে।
— খাবে কি না, ইয়েস অর নো? দাঁত চিবিয়ে বললো রুদ্র৷
হৈমী ঠোঁট ফুলিয়ে নয়নার দিকে তাকালো নয়না ইশারা করলো খেয়ে নে নয়তো কপালে দুঃখ আছে। কাঁদো কাঁদো হয়ে নাক মুখ কুঁচকে রুদ্রর হাত থেকে ডিম নিয়ে চোখ মুখ খিচে চিবাতে লাগলো।

রুদ্র লম্বা এক শ্বাস টেনে নয়না কে ওষুধ গুলো খাওয়িয়ে দিতে বলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
.
রেদওয়ান শেখের বেড রুমে সীমিত পরিসরে মিটিং চলছে। রাদিফের হাত চেপে ধরে সুরভী বেগম কেঁদে চলেছে। নয়না মাথা নিচু করে রুমের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রেদওয়ান শেখ চুপচাপ সুরভী বেগমের কান্না দেখছে। রুদ্রর দাদি রাজিয়া বেগম ধীর আওয়াজে বলছে,
— এখন কি করবি তোরা? ছেলে যে মেয়ে তুলে নিয়ে আসলো?
— দাদি রুদ্রর সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে সে বাড়ি ছাড়া হবে। বিয়ে একদিন না একদিন করাতেই হতো তাই আমি এটা নিয়ে বিরাট সমস্যা দেখছি না। বরং সকলেই সহজভাবে মেনে নেই বিষয় টা। বললো রাদিফ।
— না, আমার সূচনার জায়গায় অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবো না আমি। বললো সুরভী বেগম।
— মা তুমি ভুল করছো সূচনার জায়গা কেউ নিতে পারবে না৷ সূচনা এ বাড়ির মেয়ে আমাদের সকলেরই খুব আদরের সে।
— আমি ওকে আমার রুদ্রর বউ হিসেবে দেখতে চাই।
রুদ্রর দাদি খেঁকিয়ে বললো,
— তাহলে ছেলে অবাধ্য হয় কি করে? কই আমার রাদিফ দাদু ভাই তো মায়ের সিদ্ধান্তেই বিয়ে করেছে। তাহলে রুদ্র কেনো মাকে অমান্য করলো? এবার বুঝতে পারছো তো কেনো আমি বলি?

শাশুড়ীর কথা শুনে সুরভী বেগম আরো ভেঙে পড়লেন৷ রেদওয়ান শেখ বললেন,

— আহ মা আপনি চুপ করুন। আর সুরভী এমন মরা কান্না বন্ধ করো৷ তোমার ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছে তাঁর ভালো,মন্দ তাঁকেই বুঝতে দাও। সূচনার জন্য অনেক ভালো পাএ দেখবো আমি।
.
নয়না চুপচাপ বসে আছে তাঁর রুমে৷ হৈমী কে দেখে একবারো মনে হয়নি যে হৈমী রুদ্রর ওপর বিরক্ত বা হৈমী রুদ্র কে চায় না৷ যতোটুকু করেছে তা স্বভাববশতই করেছে। মাহেরকে কি জবাব দিবে নয়না বুঝতে পারছে না। মাহের সমানে ফোন করে যাচ্ছে। নয়ন কেও পাঠিয়ে দিয়েছে। এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নয়না আবারো রুদ্রর রুমের দিকে পা বাড়ালো।
.
নয়ন আর হৈমী বসে গল্প করছে। রুদ্র বাড়ি নেই এখন। এই সুযোগে নয়না রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। হৈমীর কাছে গিয়ে বসে বললো,
— হৈমী ?
— হ্যাঁ আপু।
— তুমি রুদ্র ভাই কে পছন্দ করো ?
— এহ কখনো না।
— তাহলে ওর সব কথা কেনো শুনছো? রুদ্র তোমায় এখানে বসে থাকতে বলেছে তাঁর বাধ্য হয়ে কেনো আছো?
হৈমীর মুখটা চুপসে গেলো৷ সত্যি তো সে কেনো আছে? রুদ্রর শাসন কেনো মানছে? পরোক্ষনেই ভাবলো ”লোকটা তো আমার ভালোর জন্যই সব করছে তাহলে কেনো মানবো না “? ভাবনাটাই বলে দিলো নয়নাকে৷ নয়না বললো,
— তুমি জানো তোমার জন্য এ বাড়িতে সমস্যা হচ্ছে? যদি রুদ্র কে তুমি পছন্দ করো তাহলে তো সমস্যা নেই আর যদি না করো শুধু শুধু এ বাড়িতে কেনো সমস্যা তৈরী হবে বলো তো?
— আমার জন্য সমস্যা হচ্ছে?
— হ্যাঁ রুদ্র তোমাকে আজি বিয়ে করবে বলেছে।
নয়নার কথা শুনে বাড়ির সমস্যার কথা শুনে হৈমী সিদ্ধান্ত নিলো চলে যাবে। কারন রুদ্রর প্রতি তাঁর ফিলিং ঠিক কি তা এখনো নিশ্চিত ভাবে জানে না সে৷ অনিশ্চিত বিষয়ের জন্য কোন পরিবারে ঝামেলা হোক চায় না হৈমী। নয়ন কে নিয়ে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে গেলো হৈমী৷ বাড়ির কারো চোখেই পড়েনি শুধু নয়না আর গেটের দাঁড়োয়ান ছাড়া।
.
হৈমীর চলে যাওয়াতে সুরভী আর সূচনা বেশ খুশি। বাকি সবার কপালে চিন্তার ছাপ রুদ্র এসে কি করবে তাই নিয়ে।

পরিচিত কাজিকে নিয়েই বাড়ি আসে রুদ্র সহ রুদ্রর বন্ধু রা৷ কিন্তু এসে যখন শুনে হৈমী চলে গেছে মেজাজ বিগরে যায় তাঁর। নয়নার দিকে রাগি চোখে তাকায় নয়না মাথা নিচু করে ফেলে। রাদিফ বলে,
— রুদ্র তোর হৈমী কে সময় দেওয়া উচিত। এতো তারাহুরো করার মানে হয় না৷ মেয়েটা এডাল্ট নয় নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার বয়স হয়নি৷ তুই সময় নে ভাই।

— সময় নিবো এবং সময় দিবো কিন্তু বিয়েটা আজি হবে। বলেই সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুদ্র।

সূচনা ওড়না দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো।
.
চারদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে মাগরিবের আজান দিচ্ছে। রুদ্র কাজি কে নিয়ে সাথে আবির, নিরব আর সাদমান কে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো৷ আজ কি হবে সবটাই জানেন দাদু তাই খুব একটা অসুবিধা হলো না রুদ্রর৷

হৈমী যখন দেখলো সত্যি বিয়ের ব্যাবস্থা করা হয়েছে তখন রেগে গেলো। চিৎকার করে বললো,
— আমি কি কাঠের পুতুল যে যেভাবে খুশি সেভাবে নাচাবেন। করবো না বিয়ে কিসের বিয়ে কোন বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না।

উপস্থিত সকলের সামনে বলে ওঠলো হৈমী। বাচ্চা রা দরজা দিয়ে ওকিঝুকি মারছে। দাদু নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। রুদ্র ধমকে বললো,

— জাষ্ট সাট আপ! বিয়ে করতে তুমি বাঁধ্য।
— করবো না বিয়ে জোর করে আর যাই হোক বিয়ে হয় না।
রুদ্র সকলের সামনেই বললো,
— একটা ছেলে দিনের পর দিন কারনে অকারনে তোমার গায়ে হাত দেবে। হসপিটাল থেকে সকলের সামনে তোমার পুরো শরীরের ভার বহন করে নিজ বাড়ি নিয়ে যাবে। সকলকে জোর গলায় বলবে তুমি তাঁর বউ অথচ বিয়েই হবে না৷ আমার ক্যারেক্টার অতোটাও খারাপ না যে বিয়ে বিহীন কোন মেয়ের গায়ে হাত দিবো যতোটা দিয়েছি পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে৷ বাকিটা শরীয়ত মোতাবেকই দিবো।

সবাই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। হৈমী অবাক, লজ্জা দুটোই হলো। “কি বেহায়া মা গো মা ছিঃ” ভেবেই নাক, মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো। রুদ্র ডেভিল হাসি দিয়ে বললো,

— সিট ডাউন।

হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বসলো। দাদু বললেন,

— দিদিভাই তোমার কি সমস্যা বলতে পারো আমাকে।
— বিরাট সমস্যা আমি হিরোর মতো মানুষ চাই ভিলেন নয়। ফটাফট উত্তর হৈমীর।
সাদমান বললো,
— পিচ্চি বিয়ে না করে হিরোর মতো জামাই চাইলে তো চলবে না আগে তো বিয়ে করতে হবে।
হৈমী রুদ্রর দিকে চেয়ে বললো,
— আমার কিছু বলার আছে আপনাকে।
— সব শুনবো জাষ্ট তিন কবুল বলে দাও তারপর।
— না,,,আগে শুনতে হবে।
— চুপপপ। ( ধমকে ওঠলো রুদ্র )
ধমকে সকলেই চুপ হয়ে গেলো। বিয়ের নিয়ম কানুন মেনে কাজি বিয়ে পড়ালো।হৈমী তিনবার কবুল বলেছে রুদ্রর গম্ভীর, রাগি মুখটার দিকে চেয়ে চেয়ে। রুদ্র চোখে চোখে হুমকি দিয়েই তিনবার কবুল বলিয়েছে। ম্যারেজ শুধু লাভ আর এরেন্জই হবে কেনো?একটা ম্যারেজ না হয় ব্ল্যাকমেইল ম্যারেজ হলো। মেয়ের আঠারো হয়নি তাই রেজিস্ট্রি পেপার আঠারো হলেই হাতে পাবে। বিয়ে শেষে সকলেই আমিন ধরলো। হৈমী আমিন ধরার পর থেকে ইনিবিনিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— ইডিয়টের মতো কাঁদছো কেনো?
হৈমী এবার শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো আর বললো,
— কপাল যার পুড়েছে সেই তো কাঁদবে। আমার কপালে শুধু বন মানুষ, রাক্ষস, হৃদয়হীন জুটেনি। আমিষ ভক্ত এই আমি কিনা নিরামিষ জামাই পেলাম বোনাস হিসেবে সেরা কিপ্টাও।
— হোয়াট!

চলবে।

কেউ ভেবো না রুদ্র কিপ্টে বিয়ে কিন্তু ধুমধাম করেই হবে ?।আপাতত সীমিত পরিসরে বিয়ে দিলাম আর কি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here