ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ১৩

0
1756

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৩

কপালে তিন ভাঁজ ফেলে ফোনের স্ক্রিনে ভালোভাবে চোখ বুলালো রুদ্র। হ্যাঁ নাম্বারটা হৈমীরই।

— জান,,, ও জান কথা বলছো না কেনো। পানি খাও জান সব ঠিক হয়ে যাবে।

রুদ্র ফোন কানে দিলো, আবারো হৈমীর কথা গুলো শুনে তাঁর এখন ঠিক কি অবস্থা হচ্ছে বোঝাতে পারবে না কাউকে। সাদমান মিটমিট করে হাসছে। আবির রুদ্রর কাশি থামতে দেখে চেয়ারে বসে ড্রিংক করছে। প্রেমে পড়লে ছেলে, মেয়ে সবার বেলায়ই শরীরের ভিতর এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। রুদ্র স্বীকার না করলেও সে গভীর প্রেমে পড়েছে, হৈমীর প্রেমে পড়েছে সে। আগুনে ঘি ঢেলে দিলে যেমন আগুন ফুঁসে ওঠে , কাঁটা স্থানে মরিচের গুড়ো দিলে যেমন তীব্র ভাবে জ্বলে ওঠে তেমনি রুদ্রর অনুভূতি গুলোও তীব্র ভাবে জেগে ওঠেছে। হৈমীকে দেখলেই তাঁর পেটে, বুকে এক অদ্ভুত ধরনের চাপ অনুভূত হয়। হৈমীর হঠাৎ করে ফোন দিয়ে এমন কথায় সেই চাপ আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তাঁর সব অনুভূতি গুলো বেশীই আবেগী হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতর বয়ে চলেছে অদ্ভুত অস্থিরতা। সহ্য করতে না পেরে ফোন কেটে সুইচ অফ করে দিলো।

এদিকে হৈমী জান জান বলতে বলতে হাসছে আর বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে।
.
নীরাজ খান আর মনিকা বেগম মাহেরের বাবা মা।
দুজনই ছেলের মনের কথা জানতে পেরে ভীষণ খুশি।তাঁদের দুজনেরও হৈমীকে ভীষণ পছন্দ এবং তাঁরা এটাও নিশ্চিত হৈমী তাঁদের নিরাশ করবে না। মনিকা বেগম ছেলেকে বললেন,

— আমি দু দুটো মেয়ের মা, এরপর তিনজন মেয়ের মা হবো। তাই দুজনকে যেভাবে ভালোবেসেছি শাসন করেছি হৈমীর বেলায়ও ঠিক তাই করবো। ভালো মন্দ সব দেখতে হবে। তাই বলছি ইন্টার পরীক্ষা টা দিক তারপর এসব নিয়ে কথা বলবো ওর সাথে। আমার নয়ন যেমন এখনো বাচ্চা হৈমী আরো দ্বিগুণ বাচ্চা রয়ে গেছে। মা হিসেবে সঠিক টাইম বোঝার ক্ষমতা আমার হয়েছে। তুমি মাস্টার্স শেষ করো। আরো ভালো জব নাও সে অবদি কেমন। চিন্তা করো না ঘরের লক্ষী কে তাঁরাতারিই ঘরে তুলবো।

মায়ের সিদ্ধান্তে মাহের সম্মতি জানালো। কিন্তু নয়ন সব শুনে খুশি হওয়ার বদলে ভয় পেলো। কারন নয়নার কাছে সে শুনেছে রুদ্র হৈমীকে ভালোবাসে, হৈমী কে চায়। আর রুদ্র যা চায় তাঁর দিকে হাত দেওয়ার সাহস কেউ করে না। করলে তাঁর পরিণতি খুব খারাপ হয়। এক ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে গিয়ে নয়ন নয়নাকে ফোন করে সবটা জানালো। নয়না বললো মাহেরের সাথে সে কথা বলবে।
.
কলেজ শেষে নয়ন আর হৈমী বেরিয়ে এলো। নয়ন অনেকবার চেষ্টা করেছে মাহেরের বিষয়টা হৈমীকে জানাতে। কিন্তু পারেনি হৈমী বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলেছে তাঁর। রোবট রোবট করে কান ঝালাপালা করে দিয়েছে।কাল রাতে গোমরামুখো রোবট কে এটা বলেছি,সেটা বলেছি তা শুনে সে ভীষম খেয়েছে। এইবার ব্যাটাকে জব্দ করার উপায় পেয়ে গেছি৷এবার দেখি কিভাবে আমাকে জ্বালায়, হৈমীর থেকে কি করে বাঁচে ব্যাটা তাই দেখবো ইত্যাদি ইত্যাদি। নয়নকে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি সে।

কলেজ থেকে খানিক দূরে রুদ্রর গাড়ি ভিতরে রুদ্র বসে আছে দৃষ্টি তাঁর হৈমী আর নয়নের দিকে। দুজন কথা বলছে আর এগুচ্ছে। সাদমান হঠাৎ হৈমী আর নয়নের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো, অন্যপাশে আবির ও পায়ে পা আগাচ্ছে। সাদমান বললো,

— হেই পিচ্চি রা কেমন আছো?
— ভীষণ ভালো কাল রাতে যা হয়েছে না হেব্বি। ধন্যবাদ ভালো ভাইয়া এত্তো কিউট টিপস দেওয়ার জন্য।

আবির ভ্রু কুঁচকে হৈমীর দিকে চেয়ে জিগ্যেস করলো,
— কিসের টিপস।
সাদমাম ভয়ে এক ঢোক গিললো এই বুঝি তাঁর কপালে শনি, রবি, সোম সব নাচে।
হৈমী উৎসুক হয়ে আবিরকে বলতে নিবে সাদমানের বলা সব কথা তাঁর আগেই সাদমান হৈমী কে ইশারা দিয়ে চুপ করালো চোখ টিপ দিলো। হৈমীও চুপ হয়ে গেলো মুখ টিপে হাসছে সে। নয়ন বেশ বুঝতে পারছে সব। কিন্তু তাঁর যেনো কিছু ঠিক লাগছে না৷ সব কেমন কেমন লাগছে তবুও চুপ রইলো সে। রুদ্রর গাড়ির কাছে আসতেই ডোর খুলে গম্ভীর গলায় বললো,
— পিছনে ওঠে বসো দুজনই।
হৈমী নয়ন দুজনই চমকে গেলো। নয়ন সালাম দিলো। হৈমী চেঁচিয়ে ওঠলো,
— আপনি!পরোক্ষনেই টিপসগুলো মনে পড়লো। চোখ মুখে দুষ্টু হাসি টেনে সামনেই রুদ্রর পাশে বসে পড়লো। নয়নকে বললো,
— যা দোস্ত পিছনে বস আমি আমার জানের পাশে বসবো। বলেই রুদ্রর দিকে ঘুরে দুহাতে রুদ্রর গাল টেনে দিলো।

হৈমীর এমন কান্ডে স্তব্ধ রুদ্র। সাদমান,আবির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সাদমান ভেবেছিলো শুধু মুখ চলবে কিন্তু এই মেয়েতো এক ধাপ এগিয়ে।যাক ভালোই হয়েছে এবার এদের লাভ স্টোরি জমে খিড়। নয়ন বসে এক ঢোক গিললো হৈমীকে গালি দিতে লাগলো মনে মনে, ‘শালী নিজে তো মরবি সাথে আমারে নিয়ে মরবি ‘

রুদ্র কিছু বললো না গাড়ি স্টার্ট দিলো। হৈমী রুদ্রর কোন রিসপন্স না পেয়ে সমান তালে জান, টান বলে চলেছে। রুদ্রর কান ঝালাপালা করে দিয়েছে একদম। নয়নের বাড়ির সামনে নয়নকে নামিয়ে দিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। হৈমী আলাপ করেই যাচ্ছে। আলাপের এক পর্যায়ে বললো,

— জান,,, আমার সাইকেল টা কি দেবে না? ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছো নাকি নিজের কাছে?

রুদ্র বেশ জোরেই গাড়ির ব্রেক কষলো। হৈমী চুপ মেরে গেলো একদম। আড় চোখে রুদ্র কে এক নজর দেখে দৃষ্টি সামনে রেখে জোর করে হাসার চেষ্টা করলো আর বললো,

— গাড়ি থামালেন কেনো বাড়ি তো এসে সাড়িনি। গাড়িতে সমস্যা হয়েছে? নষ্ট হয়ে গেছে? আচ্ছা আমি নেমে যাচ্ছি কাছেই তো এসে গেছি বাকিটা হেঁটে যেতে পারবো আপনি গাড়ি ঠিক করুন বরং। বলেই ডোর খুলতে যাবে অমনি রুদ্র তাঁর হাত চেপে ধরলো। এতো শক্ত করে ধরলো যে ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠলো হৈমী। রুদ্রর দিকে ঘুরে তাকাতেই ভয়ংকর চোখ জোরার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। হৈমী আমতা আমতা করে বললো,
— আমার লাগছে এতো শক্ত কারো হাত হয়? আপনি দেখি পুরোটাই শক্ত শরীর মন সব। আমার নরম হাতে এই শক্ত কাঠ দিয়ে চেপে ধরছেন কেনো মনে না হয় দয়া মায়া নাই হাতেও কি নাই?

হৈমীর কথায় কান না দিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলো হৈমীর দিকে। হৈমী বড় বড় চোখ করে পিছিয়ে গেলো। ডোরের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো একদম। রুদ্র আরো অনেক কাছে এগিয়ে গেছে। এতো কাছ থেকে মারাত্মক ভয়ংকর লাগছে রুদ্রকে। রুদ্রর সম্পূর্ণ শ্বাস হৈমীর মুখে পড়ছে। এ অনুভূতির নাম কি দেওয়া যায় জানা নেই হৈমীর। সে শুধু জানে তীব্র গরমের মাঝেও অদ্ভুত শীতলতায় তাঁর শরীরের প্রত্যেকটা লোম দাঁড়িয়ে গেছে। একটা মেয়ের এতোটা কাছে আসায় তাঁর মনের অবস্থা কি হতে পারে সেদিকে কোন খেয়াল নেই রুদ্রর সে গম্ভীর গলায় বলে,
— কাল থেকে কি শুরু করেছো? সমস্যা টা ঠিক কোথায়? নেক্সট আর একবার যদি এসব বিহেভিয়ার দেখি একদম মেরে ফেলবো।

রুদ্রর চোখ দুটো বড়ই অদ্ভুত লাগছে হৈমী কাছে। সিনেমাতে যখন নায়ক রা নেশা করে নায়িকাদের দিকে নেশা নেশা চোখে তাকায় ঠিক তেমন লাগছে রুদ্র কে। কিন্তু রুদ্র তো নেশা করেনি তাহলে এমন লাগছে কেনো তাঁকে? ভাবলো হৈমী। এক ঢোক গিলে নিয়ে নিচু স্বরে জিগ্যেস করলো,
— কেনো? আমার মতো কিউট একটা মেয়ে আপনাকে জান বলছে আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।
— চুপপ না করেছি তো না আর কোন প্রশ্ন নয়। তোমার সময় নেওয়া হয়ে থাকলে বলো আমায়। বিয়ে করে নিচ্ছি তবুও এইসব বন্ধ রাখো। এক সেকেন্ড! কেউ শিখিয়ে দিয়েছে তোমায় এসব?

হৈমী আমতা আমতা করে বললো,
— কে শিখিয়ে দেবে আমি নিজে থেকেই বলছি। আমার অনেক দিনের শখ একটু প্রেমটেম করার তাই আর কি।
— ননসেন্স কোথাকার!
— এই আপনি আমাকে ননসেন্স বললেন কেনো? আপনি একটা ননসেন্স,আপনি একটা হার্টলেস।

কথাটা বলার সাথে সাথে রুদ্র হৈমীর ডানহাত টা নিয়ে নিজের বুকের বা পাশে চেপে ধরলো। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেলো হৈমীর।
স্তব্ধ হয়ে গেলো সে এমন কান্ডে। রুদ্রর চোখ দুটো বন্ধ হৈমীর হাতের ওপর তাঁর হাত চেপে ধরে ভারী আওয়াজে বলল, ‘হার্ট সঠিক জায়গায়ই আছে’।

হৈমী অবাক হয়ে চেয়ে আছে রুদ্রর মুখের দিকে।
দুজনই দুজনের খুব কাছে মাঝে এক ইঞ্চি দূরত্ব আছে কিনা সন্দেহ। হৈমী মন দিয়েছে রুদ্রর বুকে রাখা তাঁর হাতের দিকে। এ কেমন অনুভূতি হচ্ছে ? প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলে বুকের ভিতর যেমন ধড়ফড় ধড়ফড় করে রুদ্রর বুকের ভিতর ঠিক তেমন ধড়ফড় ধড়ফড় অনুভব করছে হৈমী। সেই ধড়ফড় অনুভূতি অনুভব করতেই তাঁর পেটে এবং বুকে অদ্ভুত একটা চাপ দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো শরীরে কেমন অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,’একটু সড়ুন প্লিজ আমার ফাপড় লাগছে ‘

হৈমীর কথায় চমকে ওঠলো রুদ্র। যেনো ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে এক ছিটকানি দিয়ে হৈমীর হাত সড়িয়ে দিলো। লম্বা এক শ্বাস টেনে বেশ তাড়াহুড়োয় গাড়ি স্টার্ট দিলো। হৈমী চুপ,রুদ্র চুপ। যেনো দুজনই চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে।

কিছুক্ষন আগে যা হয়েছে সবটাই অজান্তেই হয়ে গেছে। দুজন মানুষ দুজনের এতোটা কাছাকাছি এসে কতোটা বিব্রত হয়ে পড়েছে তা তাঁরা দুজনই বুঝতে পাচ্ছে খুব।

সুখনীড়ের সামনে গাড়ি থামালো রুদ্র। হৈমী মাথা নিচু করে নেমে যাচ্ছিলো।চোখে, মুখে অদ্ভুত আভা ভেসে ওঠেছে তাঁর। রুদ্র ডাকলো,

— হৈমী!
ডাকটায় কি ছিলো জানা নেই হৈমীর ভিতর থেকে সাড়া দিলো সে।
— হুমহ।( ঘোর লাগা গলায় )
— এদিকে ঘুরো।
— বলুন। ঘুরে বললো হৈমী।
— আর কখনো এসব বলবে না। সব কিছু নিয়ে মজা করবে না। তোমার এই মজা কারো হৃদয়ে ঝড় তুলে দেয়।
— তাহলে তো হেব্বি মজা হবে। থাপ্পড়ের প্রতিশোধ ঝড় তুলেই না হয় নিবো হিহিহি। সিরিয়াস মুড ভেঙে দিতে হৈমীর খুব একটা সময় লাগে না ঠিক তেমনি সকল আবেগ মূহুর্তেই উড়িয়ে দিয়ে দুষ্টুমি চাপালো মাথায়। চোখে, মুখে দুষ্টু হাসি এনে দৌড়ে ভিতের চলে গেলো। (সব ঘোর যেনে সেকেন্ডেই উড়ে গেছে তাঁর) ‘ মানুষের মনে কখন কোন অনুভূতি জাগ্রত হয় বোঝা মষ্কিল ‘

রুদ্র এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
.
নয়নার কাছে রুদ্রর ব্যাপারে সব কথা শুনে মাহের প্রচন্ড রেগে গেলো। আর বললো,

— হৈমীর জীবন নিয়ে কোন রিস্ক নিতো পারবো না আমি।
— রিস্ক না ভাইয়া রুদ্র ভাই হৈমীকে মন থেকে চায়, মন থেকে পছন্দ করে।
— সো হোয়াট! হৈমী করে না। হৈমী তাঁরই হবে যাকে হৈমী চায়।
— হৈমী তোমাকে চায়?
— হৈমী আমার ফিলিং এর বিষয়ে জানে না। জানলে হয়তো চাবে আর যাই হোক রুদ্র কে চাইবে না৷ এটা অসম্ভব।
— ভাইয়া এ পৃথিবীতে যা অসম্ভব তাই কিন্তু ঘটে তাই সম্ভব হয়। আর রুদ্র ভাই কিন্তু খুবই ডেঞ্জারাস হৈমীকে সে নিজের করেই ছাড়বে।
— আমি বেঁচে থাকতে হৈমীকে রুদ্র জোর করে নিজের কাছে নিতে পারবে না। যতোই ক্ষমতা থাকুক হৈমীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে রুদ্র কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি আছি হৈমীর পাশে। দরকার পড়লে আইনের সহায়তা নেবো। রেগে বললো মাহের।

নয়না অনেক বোঝালেও কাজ হলো না৷ মাহের হৈমীকে প্রচন্ড ভালোবাসে তাই রুদ্রর জন্য হৈমীর জীবন থেকে সড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ এদিকে রুদ্র যে কোন মূল্যে হৈমীকে চায়। একদিকে নিজের শান্তশিষ্ট, ভদ্র ভাই অন্যদিকে নিজের একরোঘা দেবর। প্রচন্ড টেনশনে পড়ে গেলো নয়না। ভাবলো রাদিফের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে খুব তারাতারি। যদি কোন সলিউশন পাওয়া যায়। সব থেকে বড় সলিউশন হৈমী কারন হৈমীর সিদ্ধান্তের ওপরই সব নির্ভর করবে। যদি মাহেরকে বেছে নেয় অনেক বড় একটা ঝড় আসবে দুপরিবারে সিওর৷ আর যদি রুদ্র কে বেছে নেয় মাহেরকে সামলাতে পারবে তো সকলে মিলে?মাহের হৈমীর প্রতি বেশ সিরিয়াস তা তাঁর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে।
.
ইদানীং রুদ্রর বেশ জ্বালা হয়েছে। মেয়েটা প্রচন্ড জ্বালাচ্ছে। জান জান করে মাথা খেয়ে ফেলছে। মনে হয় সে ৮০বছরের বুড়ো যাকে ৫ বছরের মেয়েটা নাজেহাল করে ছাড়ছে। মাঝরাতে ফোন করে যখন এসব কথা বলে নিজেকে আটকে রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।হৈমী দুষ্টুমি করে তাঁর ফিলিং হয়তো শুধুই ফান কিন্তু রুদ্রর ফিলিং তো ফান নয়। এই পাগলকে ক্ষেপিয়ে নিজের বিপদ নিজেই কেনো ডেকে আনতে চাইছে বুঝতে পারছে না রুদ্র। রুদ্র কতোটা নির্লজ্জ সেটা জানানোর সময় বুঝি হয়ে এলো। বেশ কিছুদিন যাবৎ হৈমীর সাথে দেখা করে না রুদ্র। আর হৈমী ফোন করে প্রশ্ন করে যায় কেনো সে এলো না? এটা কি শুধুই ফান নাকি হৈমীও চায় তাঁকে দেখতে তার কাছাকাছি থাকতে? উত্তর জানা নেই রুদ্রর শুধু জানে হৈমী চাক বা না চাক তাঁকে তো কাছে আসতেই হবে।
.
ভোর পাঁচ টার দিকে প্রচন্ড ঝড়, বৃষ্টি শুরু হয়। ফোনের ফ্লাশ জালিয়ে ওঠে বসে হৈমী। জৈষ্ঠ্যমাস আম গুলো বেশ বড় হয়েছে। নিশ্চয়ই অনেক পড়ছে এই ঝড়ে৷ পাশের বাড়ির কয়েকটা পিচ্চি ছেলেরা দিনের বেলায়ই আম পাড়তে আসে৷ দাদু ধমকে ধমকে গাছ থেকে নামায়। ‘ এই ঝড়ে নিশ্চয়ই আম পড়ে বিছিয়ে গেছে একদম যাই কুড়িয়ে নিয়ে আসি। নয়তো অন্য কেউ কুড়িয়ে ফেলবে। বৃষ্টি তে ভেজাও হবে আমও কুড়ানো হবে,নিজের হাতে আচার বানিয়ে খাওয়াও হবে,বাচ্চা রাও কাল ভীষণ খুশি হবে ইয়ে ‘

চুপিচুপি এলাকে ডেকে তুললো হৈমী। এলা ছাতা নিয়ে হাতে ফোন নিয়ে হৈমীর পিছন পিছন বের হলো।এলা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে আর হৈমী খুশিতে লাফাচ্ছে আর বৃষ্টি তে ভিজছে। আম গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে এলার দিকে ফিরে তাকালো।

— ছোট প্লাস্টিকের বালতিটা নিয়ে আয় এলা। অনেক আম পড়ে আছে আজকে আচাড় পার্টি করবো আমরা। চিল্লিয়ে বললো হৈমী।

এলা ছুটে ভিতরে চলে গেলো বালতি আনতে।
চারদিকে শো শো শব্দ করে বাতাস বইছে। বৃষ্টির পানিতে গা ভিজে একাকার হয়ে গেছে সেই সাথে বাতাসের তীব্র গতিবেগে নিজেকে ধরে রাখাও মষ্কিল।এই বুঝি উড়িয়ে নিয়ে চলে যায় কোন এক ভীনদেশে। উপরের দিকে চেয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। দুহাত দুদিকে মেলে দিয়ে চিৎকার করে বললো,

— ‘বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দাও আমার শরীর, ছুঁয়ে দাও আমার মন করে তুলো আমায় বৃষ্টি বিলাসী’

টপ করে মাথায় একটা আম পড়তেই চিৎকার দিয়ে ওঠলো হৈমী। এলা বালতি নিয়ে দৌড়ে আসতে আসতে চিল্লিয়ে বললো,

— কি হলো গো তোমার হৈমী আপু?
হৈমী মাথা চেপে ধরে পিছন ঘুরে এগুতেই আম গাছের চিকন এক ডাল পড়লো তাঁর মাথায়। সাথে সাথে এলা হৈমী দুজনই বেশ জোরে চিৎকার দিলো।
হৈমী মাথা ধরে নিচে বসে পড়লো হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে রক্ত ধুয়ে যাচ্ছে, ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠলো হৈমী। চোখের পানিও বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে।

এলা ভয় পেয়ে ফোন ছাতা সব ফেলে দিয়ে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো দাদু কে ডাকতে৷ এদিকে নিজের মাথা চেপে ধরে সেখানেই জ্ঞান হারালো হৈমী।

চলবে।

ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here