বোনু Part_17

0
470

বোনু
Part_17
#Writer_NOVA

অথৈই গাড়ি থেকে নেমে কতগুলো বডিগার্ডের সাথে পার্টিতে ভয়ে ভয়ে ঢুকলো।হাত-পা অলরেডি কাঁপছে। জীবনে কখনও এসব বড়লোকদের পার্টিতে আসেনি।ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে।কিরকম অসহ্যকর পরিস্থিতি? বডিগার্ডদের মধ্যে থেকে একজন বললো।
—ম্যাম আপনি ঐ দিকটায় যান।আপনার জন্য স্যার অপেক্ষা করছে।
কথাটা বলা শেষ হতে দেরী কিন্তু বডিগার্ডদের চলে যেতে দেরী হলো না।অথৈ এর মাথায় কিছু ঢুকছে না।অথৈঃকে ওদের স্যার? কেন এখানে নিয়ে এসেছে?আমায় এভাবে কিডন্যাপ করার মানে কি?আমি এই পার্টিতে কি করবো? কিছু মাথায় ঢুকছে না।এসব পার্টি-সার্টি তো ভালো নয়।কেউ কি আমার ক্ষতি করতে এখানে নিয়ে এলো।আমি তো জানি কাউকে কিডন্যাপ করলে অন্ধকার রুমে বেঁধে রাখে।আর আমায় কেউ তুলে এনে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে পার্টিতে নিয়ে এলো।মাথা ঘুরাচ্ছে, কিছু বুঝতে পারছি না। কি হচ্ছে আমার সাথে?

এসব ভাবতে ভাবতে এগুতে লাগলো।কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই একটা ছেলেকে দেখতে পেলো।পেছন দিকে ঘুরে রয়েছে। পরনে পুরো ডার্ক ব্লু কোর্ট- প্যান্ট।হাতে ম্যাচ করা সেম কালারের দামী ব্রান্ডের ঘড়ি,জুতা।এক হাত পকেটে গুজে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অথৈ ইতস্তত হয়ে সামনে গিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করলো।

অথৈঃ আমাকে এখানে তুলে এনেছেন কেন?
(ভয়ে ভয়ে)
আদিল কারো মিষ্টি কন্ঠ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। এত সুন্দর লাগছে কেন অথৈকে? পরনে ডার্ক ব্লু কালার শাড়ি,সেম কালারের ব্লাউজ। সাদা পাথরের জুয়েলারি।ঠোঁটে হালকা গোলাপি কালার লিপস্টিক। মাথায় টাইট করে খোঁপা বাঁধা।আদিলের মনে হচ্ছে ওর নিলাসা নামটা দেওয়া খারাপ হয়নি।প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিন অথৈ কে নিলাসা বলেছিল আদিল।আজ সত্যি ওর নিলাসা ওর কাছে ফিরে এসেছে।
অথৈঃ আ–প–নি।আপনি আমাকে তুলে এনেছেন। আপনার সাহস কি করে হয়? আমাকে তুলে এনে আপনি মোটেও ভালো করেন নি।
(কিছুটা ধমকের সুরে)
আদিলঃ আমার সাহসের প্রমাণ ইতিমধ্যে তুমি পেয়ে গেছো।তাই আমি আর দিতে চাইছি না।
অথৈঃ এখানে জোর করে কেন এনেছেন?
আদিলঃ বিকালে তো সুন্দর করে আসতে বলেছিলাম।তুমি তো আমার কথা মানো নি।তাই আমিও বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি।
অথৈঃ আপনি কাজটা মোটেও ভালো করেন নি।
আদিলঃ ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আমার আছে নিলাসা।তোমার থেকে শিখতে হবে না।
অথৈঃ কে নিলাসা? আমি অথৈ।আমার নাম মোটেও নিলাসা নয়।
আদিলঃ তুমি আমার নিলাসা।মানে আদিলের নিলাসা।আমি আমার পছন্দ কখনো অন্যর হাত লাগাতে দেই না।তাইতো তোমাকে আজ নীল পরী সাজিয়েছি।ইনজয় দ্যা পার্টি মাই সুইটহার্ট নিলাসা।

আদিল মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেল। অথৈ এখনো বোকা হয়ে আদিলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। কি বলে গেল ছেলেটা? মাথা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি মি. আদিল মির্জার?ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো অথৈ। ওর কাছে সব স্বপ্ন মনে আছে।

বিকালে আদিল নিজে গিয়ে অথৈ কে আনতে গিয়েছিলো।অথৈর বাবা-মা কে অনেক কষ্ট করে রাজী করাতে পারলেও অথৈ রাজী হয় নি।তাই আদিলও বিকল্প রাস্তা বেছে নিয়েছে। কথায় বলে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল তো বাঁকা করতে হয়।আমি বলবো কষ্ট করে আঙ্গুল বাঁকা করবেন কেন?চামচ দিয়ে তুলে নিবেন।আদিলো সেম কাজটাই করেছে।কষ্ট করে আঙ্গুল বাঁকা না করে ঘি চামচ দিয়ে ঢেলে নিছে।সন্ধ্যার দিকে অথৈ টিউশনির জন্য বের হলেই আদিলের বডিগার্ডরা ওকে তুলে নিয়ে আসে একটা বিউটি পার্লারে।সেখান থেকে সাজিয়ে সোজা পার্টিতে নিয়ে আসে।

???

কালো রং-য়ের শাড়িটায় বেশ মানিয়েছে জিনিয়াকে।সাথে সেম কালারের হালকা পাতলা জুয়েলারি।কানে ঝুমকো,গলায় ছোট হার।মুখে হালকা পাতলা মেকআপ। চুলগুলো এক সাইডে সিঁথি কেটে খোঁপা করে তার মধ্যে দুইটা সাদা গোলাপ গুঁজেছে। সাদা গোলাপ অর্ণবের খুব পছন্দ। শাড়িটা অবশ্য অর্ণবই গিফট করেছে।তবে নিজে গিয়ে দিয়ে আসে নি।লোক দিয়ে জিনিয়াদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।জিনিয়ার চোখ দুটো অনেকখন ধরে অর্ণবকে খুঁজছে।

জিনিয়াঃ অর্ণব কোথায় আছে?আজকের দিনটা বোধ হয় ও আমাকে মাফ করবে না।ঐ তো অর্ণব।আল্লাহ এই ছেলেটার উপর আমি আবার ক্রাশ খেলাম।পুরো ব্লাক সুট,কোর্ট,প্যান্ট।সাথে ব্লাক সু, ওয়াচ।যাস্ট ওসাম লাগছে দেখতে।মন তো চাইছে এখনি গিয়ে জড়িয়ে ধরি।আমার সাথে ম্যাচিং করে পরে এসেছে।লাভ ইউ অর্ণব।যদিও আমি তোমার যোগ্য নই?।

ক্লাইন্টদের সাথে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছিলো অর্ণব।হঠাৎ চোখ যায় জিনিয়ার দিকে।কালো রং এ বেশ মানিয়েছে। চোখ ফেরানোও দুষ্কর হয়ে গেছে।জিনিয়ার চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো অর্ণব।আবার কথা বলায় মনোযোগ দিলো।

নুহা উষার সাথে চেয়ারে বসে চারিদিকে চোখ বুলচ্ছে।এতো কিছু জীবনে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।অথচ কখন থেকে এক জোড়া চোখ তাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছে। হালকা গোলাপি কালারটায় নুহাকে অপূর্ব লাগছে।নুহার এলোমেলো খোলা চুলে ঈশানের ইচ্ছে করছে হারিয়ে যেতে। ঈশানও নুহার সাথে ম্যাচ করে গোলাপি কোর্ট,সাদা প্যান্ট পড়েছে।পায়ে সাদা সু,কোর্টের বোতামগুলো খোলা। গলায় সাদা মাফলার টাইপের ওড়না ঝুলানো।

তারিনঃ ইশাত বেবি কোথায় তুমি? কখন থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি?এই ব্যাটাকে খুঁজতে কি আমায় হ্যারিকেন নিতে হবে নাকি।আজ আমি এতো সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছি।আর যার জন্য এলাম সে যদি না দেখে তাহলে কি ভালো লাগবে।
ইশাতঃ কি রে কোথায় যাচ্ছিস?
তারিনঃ তোমায় আমি সারা কনসার্ট খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেলাম আর তুমি এখানে।এই ইশাত বেবি আমি তো খেয়াল করি নি।তুমি দেখছি আমার সাথে ম্যাচিং করে সেম কালারের ড্রেস পরেছো।পেঁয়াজ কালারের কোর্ট,সাদা কালার প্যান্ট।সাদা ওয়াচ,সাদা সু।চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করেছো।এক কথায় তোমাকে পুরো হিরো হিরো লাগছে।তুমি তারিনের হিরো।
ইশাতঃ তোর এসব ফালতু পেচাল শোনার যদি আমার হাতে সময় নেই। সর সামনের থেকে।
তারিনঃ আমায় কেমন লাগছে বললে না তো?
ইশাতঃ পেত্নীকে কেমন আবার লাগবে? প্রতি দিন না হয় সাধারণ পেত্নী লাগে।এখন আভিজাত্য পেত্নী লাগছে।ভাগ সামনের থেকে।
তারিনঃ কি বললে তুমি আমায় আমি পেত্নী?
ইশাতঃ কানে শুনতে পাস না তুই।
তারিনঃ কাজটা তুমি ঠিক করলে না।ধূর, ভালো লাগে না। এই ছেলেটা আমায় বোঝেই না।

কপট রাগ দেখিয়ে তারিন ফোঁস ফোঁস করতে করতে সেখান থেকে চলে গেল।ইশাত মুচকি হেসে বললো।
ইশাতঃ আমার পেঁয়াজ সুন্দরী। তোকে যে কি সুন্দর লাগছে আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।সরি রে আমি তোকে সবসময় ইগনোর করি।তুই তো এমনি আমার জন্য পাগল।এখন যদি আমি তোর সাথে পাগলামিতে যোগ দেই তাহলে তোর পাগলামি আরো বেড়ে যাবে।আমি এতো কিছু সামাল দিতে পারবো না।

???

উষা খুব মনোযোগ দিয়ে জিবরানকে খেয়াল করছে।ছেলেটাকে খারাপ লাগে না তার।সবচেয়ে বেশি সুন্দর ওর হাসিটা।হাসলে দুই গালে টোল পরে।চোখের পাপড়িগুলো একটু বেশি বড়।পলক ফেললে মনে হয় ছেলেটা এমনভাবে চোখের পলক ফেলে যাতে চোখের পাপড়িগুলো ব্যাথা না পায়।

উষাঃ আমি কি ছেলেটার প্রেমে পরে গেলাম নাকি? ধূর কি ভাবছি এসব?জেব্রাটাকে দেখলে কেন জানি অনেক ভালো লাগা কাজ করে।আচ্ছা আমি ওকে ভালবেসে ফেলি নি তো।কি যা তা ভাবছি আমি?
আউচ—,আমার গাউনে এই বড় সাদা পাথরটা কোথা থেকে আসলো।হয়তো আগের থেকে ছিলো।আমি খেয়াল করি নি।এই পাথর দিয়ে আমি হাতে হেঁচোড় খেলাম।এতো বড় পাথর।সারা গাউনে একটা পাথরের ছোঁয়া নেই অথচ দেখো পেটের দিকটায় বিশাল বড় একটা পাথর।আরো কত ডিজাইন যে বের হবে।

জিবরান উষার চার ভাই কে ডেকে নিয়ে এলো।
আদিলঃ কি ব্যাপার জিবরান?
অর্ণবঃ কোন সমস্যা হয়েছে?
জিবরানঃ আমি একটা কথা বলতে চাইছি।
ঈশানঃ বলে ফেল।এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?আমরা আমরাই তো।
জিবরানঃ তুই মার খাবি। আমি লজ্জা পাবো কেন?
ইশাতঃ তাহলে বলে ফেল।
জিবরানঃ আমি আসলে আজকে আমাদের এনগেজমেন্ট -টা সেরে ফেলতে চাইছি।আপনারা যদি মত দেন তাহলে আমি করবো নইলে না।

জিবরানের কথা শুনে চার ভাইয়ের মুখে রাগ ফুটে উঠলো।সবাই খুব রেগে গেছে ওর ওপর।জিবরান ঠিক এটার ভয় পাচ্ছিলো।জিবরান মনে মনে ভেবে নিলো উষার ভাইদের মধ্যে কেউ ওকে পছন্দ করে না।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে চার ভাই একসাথে ফিক করে হেসে উঠলো। জিবরান ওদের হাসতে দেখে আরো বেশি অবাক হলো।
ঈশানঃ সিরিয়াসলি জিবরানে মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো।
ইশাতঃ পুরো বাংলা পাঁচের মতো।(হাসতে হাসতে)
জিবরানঃ মানে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
অর্ণবঃ আমাদের কোন আপত্তি নেই। তুমি আজ আংটি পড়াতে পারো।
জিবরানঃ কিন্তু আপনারা রেগে গেলেন কেন?
আদিলঃ আমরা তোমার রিয়েকশন দেখতে চেয়েছিলাম।তুমি সত্যি আমাদের মুখ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?
জিবরানঃ আমি তো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম আমি এমন কি কাজ করলাম যার কারণে ভাইয়ারা আমার ওপর রাগ করলো।
ইশাতঃ আমরা আরো তোকে বলতাম আজকে এনগেজমেন্ট সেরে ফেলতে।
জিবরানঃ সত্যি। তারমানে আপনারা সবাই রাজি।
ঈশানঃ আমরা তো কবের থেকে রাজি।

জিবরান খুশি হয়ে ইশাত ও ঈশান কে জরিয়ে ধরলো। আদিল ও অর্ণবের সাথে কোলাকুলি করে স্টেজের দিকে দৌড় দিলো।স্টেজে উঠে স্পিকার হাতে নিলো।

জিবরানঃ এটেনশন প্লিজ। আজকে সবাইকে আমি একটা খুশির সংবাদ দিতে চলেছি।আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই এর কারণটা জানেন না।আমি বলছি সবাইকে। আমি আজ আমার ভালবাসার মানুকে প্রপোজ করতে চলেছি।এবং তার সাথে এনগেজমেন্ট-টা সেরে ফেলবো।প্লিজ স্টেজে চলে এসো মাই লাভ এন্ড লাইফ মিস.উষা মির্জা।

সবাই একসাথে হাতে তালি দিয়ে উঠলো।উষা নিজের নাম এনাউন্সমেন্টে শুনে বেশ অবাক হলো।
উষাঃ জেব্রা আমার নাম কেন নিলো তারু?
তারিনঃ তোকে এখন স্টেজে যেতে হবে।
উষাঃ কেন আবার?
তারিনঃগেলেই বুঝতে পারবি।চল তারাতাড়ি।

তারিন হাত ধরে উষাকে স্টেজে নিয়ে গেলো।ওকে দাঁড়া করে রেখে তারিন নেমে এলো।উষা স্টেজে উঠতেই পুরো কনসার্ট অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।শুধু উষার মাথার ওপর একটা লাইট জ্বলে উঠলো। সামনে তাকাতে দেখলো জিবরান দুই হাত ভর্তি করে কচুরিফুল নিয়ে এক হাঁটু গেড়ে বসে আছে।

জিবরানঃ শুরুটা কি করে করবো জানি না।শুধু এতটুকু বলতে পারবো ভীষণ ভালবাসি তোমায়। আমার ভালো থাকাটা এখন তোমার ঘিরে অবস্থান করে।একটা দিন তোমায় না দেখলে মনে হয় আমার দিনটা অসম্পূর্ণ যায়।যখন তুমি পাশে থাকো তখন নিজের মাঝে অনেক ভালো লাগা কাজ করে।অনেক আগের থেকে ভালবাসি তোমায়। কখনও ভাবি নি এভাবে বলতে পারবো।তুমি কি আমার আকাশ হবে? যেখানে শুধু তোমার ও আমার অস্তিত্ব থাকবে।তুমি কি আমার ভালো থাকার কারণ হবে?যাতে তুমি পাশে থাকলে কোন বিষন্নতা আমায় ছুঁতে না পারে।তুমি কি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে? যাতে করে আমি তোমার সাথে বাকি জিবনটা কাটাতে পারি।আই লাভ ইউ। আই রিয়েলি রিয়েলি সো লাভ ইউ। প্লিজ একসেপ্ট মি।ডু ইউ লাভ মি?তুমি যদি আমাকে ভালবাসো তাহলে আমার ফুলগুলো গ্রহণ করো।তাতেই বুঝবো তুমি আমায় একসেপ্ট করে নিয়েছো।

উষা কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলগুলো নিলো।চারিদিকে হৈ হৈ করে উঠলো সবাই। সাথে হাতে তালি তো আছেই। উষার ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছে জিবরানের জন্য।

???

অথৈ কে সবার সাথে পরিচয় করে দিলো আদিল।অর্ণব,আদিল,জিনিয়া,অথৈ,তারিন,তারিকুল মাহমুদ আরো বেশ কয়েকজন একসাথে কথা বলছে।অর্ণব আড় চোখে জিনিয়াকে খেয়াল করছে।সেটা জিনিয়া টের পেয়ে মুচকি হাসছে।অথৈ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তারিন এক নাগাড়ে বকবক করেই যাচ্ছে। আর আশেপাশে তাকিয়ে ইশাতকে খুঁজছে।

উষা বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে সাদা ডায়মন্ডের আংটি টা চিলিক মারছে।কিছু সময় আগে উষা ও জিবরানের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। উষার কাছে সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ও ভাবতে পারছে না এখন ও কারো বাগদত্তা। ফুলগুলো নেওয়ার পর জিবরান পকেট থেকে একটা লাল বক্স বের করে উষার দিকে এগিয়ে দিলো।বক্সের ভেতরের আংটিতে খুব সুন্দর করে ডায়মন্ড পাথরগুলোতে “J ” অক্ষরটা দেখা যাচ্ছে। উষা ইতস্ততভাবে হাতটা এগিয়ে দিলো।করতালির মাধ্যমে দুজনের আংটি বদল হয়ে গেলো।উষা চেয়ারে বসে এখনো ঘোরের মাঝে আছে। তখনি ওর সাথের চেয়ারে বসলো ঈশান ও ইশাত।ইশাত উষাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে আরম্ভ করলো।

ইশাতঃ বুঝলি শান আমার মনে হচ্ছে বেচারা জিবরান অনেক বড় একটা ঝামেলা কাঁধে নিলো।
ঈশানঃ আমি চিন্তা করছি জিবরান বোনুকে সামলাবে কি করে? বেচারা জিবরানের জীবন শেষ করতে আমাদের বোনু একাই যথেষ্ট।
উষাঃ কি বললি তুই?(চোখ দুটো ছোট ছোট করে)
ঈশানঃ কেন শুনতে পাস নি? তোকে শুনিয়ে শুনিয়ে তো বললাম।
ইশাতঃ জিবরানের মনে হয় এবার গলায় কলস বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দিতে হবে।
উষাঃ কেন?
ঈশানঃ কেন আবার তোকে আমরা চার ভাই সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাই।আর বেচারা তো একাই।
ইশাতঃ আমি বুঝলাম না জিবরান যেচে এসে বোনুর মতে আপদ ঘাড়ে নিলো কেন? খাল কেটে কুমির ঢুকালো নিজের বাড়িতে।
ঈশানঃ ওকে বিয়ে করে ঘরের বউ করে নিলে জিবরানকে পাগল হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাবনায় আশ্রয় নিতে হবে।
উষাঃ ভাইয়ু তোদের কি আমার সাথে এখানে এসেও লাগতে হবে।তোদের জন্য কোথাও গিয়ে আমার শান্তি হবে বলে দেখছি না।
ইশাতঃ আর যাই বলিস শান।আমাদের বাড়ি থেকে শাঁকচুন্নিটা তো বিদায় হবে।যেদিন ও বিদায় হবে সেদিন রাতে বাড়ির ছাদে বড় করে একটা পার্টি দিবো।কি বলিস তুই?
ঈশানঃ আইডিয়াটা মন্দ নয়।
উষাঃ তোদের যা খুশি তাই করিস।
ঈশানঃ করবোই তো।তোকে বলে করবো নাকি?

ওদের কথার মধ্যে জিবরান সেখানে এলো।চেয়ার টেনে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো।

জিবরানঃ কি কথা হচ্ছে ভাই-বোনের মাঝে?
ইশাতঃ তোকে আমাদের মাঝে নাক না গোলালেও চলবে।
ঈশানঃ সব কিছু তে তুই এখন হবু বউয়ের পক্ষ টেনে কথা বলবি।তোকে হারে হারে চিনি।
ইশাতঃ আগেই ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে আর এখন তো ওর হবু বউ হয়।
জিবরানঃ আমি কি কিছু বলেছি?
ঈশানঃ বলিস নি কিন্তু বলতে কতক্ষণ।
জিবরানঃ এসব কথা বাদ দে।ঈশান চল স্টেজে গান করবি।অনেক দিন হলো তোর গান শোনা হয় না।
উষাঃ গান গাইবে তাও ছোট ভাইয়ু। হাউ ফানি।সেরা জোকস ছিলো।(হাসতে হাসতে)
ঈশানঃ হাসছিস কেন?আমি কি গান গাইতে পারি না।তুই কি ভাবিস আমায়?
উষাঃ তুই গান গাওয়া শুরু করলে কাকেও ভয় পেয়ে যাবে।ভাববে রাতের বেলায় তাদের জাত ভাই কোথা থেকে এলো? ভাইয়ু প্লিজ তোর ঐ বেসুরো গলায় গান করে সবাইকে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বানাস না।তুই গান শুরু করলে দেখা যাবে পুরো কনসার্ট খালি হয়ে গেছে। সবাই পালাবে এখান থেকে। কাক ও অপমানিত হয়ে যাবে তোর গান শুনে।বেচারা কাক তোকে গালি দিয়ে বলবে এর থেকে ওদের নিজেদের কা কা ডাকও অনেক ভালো।
ঈশানঃ ??
উষাঃ ঐ ভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। যা সত্যি তাই বলেছি।তুই গান গাইলে সাউন্ড বক্স ও ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।তুই তো বাথরুম সিংগার।বাথরুমে যেরকম চিৎকার চেঁচামেচি করে গান গাস ঠিক তেমনি এখানেও শুরু করবি।সাউন্ড বক্স নষ্ট হবে সেটা কোন সমস্যা নেই তবে তোর চিৎকার শুনে মানুষ যে অজ্ঞান হয়ে যাবে।তাদের সামাল দিবে কে??
ঈশানঃ কি আমি বাথরুম সিংগার? দাঁড়া তুই তোকে আমি আচার বানাবো।

উষা ও ঈশান দুজনেই ছুট।উষা আগে ওর পেছনে ঈশান।উষা কনসার্টের উল্টো দিকে দৌড় দিলো। দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে পেছনের দিকে এসে পরেছে খেয়াল করে নি।ঈশানকে ওর পেছনে দেখতে পারছে না।কনসার্টের পিছন দিকটা পুরো নির্জন ও শুনশান।কোন মানুষ নেই। হঠাৎ উষা একটা মানুষের ছায়া দেখতে পেলো।ঈশান ভেবে দেয়ালের পেছনে লুকালো।তখনি পেছন থেকে উষার নাকে কেউ রুমাল চেপে ধরলো। উষা অজ্ঞান হয়ে ঢলে পরলো।

#চলবে

#Part_16
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2952907564937976/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here