বোনু Part_29

0
607

বোনু
Part_29
#Writer_NOVA

৪ দিন পর……

জিনিয়া ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয় মানুষটার প্রতি অনেক অভিমান জমে আছে। এতো তাড়াতাড়ি সেই অভিমান ভাঙ্গবে না।মনের মধ্যে যে জেঁকে বসে আছে।মির্জারা ছয় ভাই-বোন ও নুহা এসেছে জিনিয়ার সাথে অর্ণবের বিয়ের কথা -বার্তা বলতে।এবার সময় হয়েছে জিনিয়াকে ঘরে তোলার। জিনিয়া একবারের জন্যও ওদের সামনে যায় নি।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে যাবেও না।তাই ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই ঝাড়া মেরে ফেলে দিলো জিনিয়া।সে জানে কাঁধে কে স্পর্শ করেছে। পেছন দিক থেকে না ঘুরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলতে লাগলো।

জিনিয়াঃ দরকার নেই তো আমাকে। চলে যান।আমি আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না।কারো জন্য অপেক্ষা করতে করতে মাথার চুল সাদা করে ফেললাম।কিন্তু তার চোখে আমি কেউ নয়।সে এখন নিজেতে ব্যস্ত।আমি মানলাম আমি একটা ভূল করেছি। তার জন্য কত বার মাফ চেয়েছিলাম কিন্তু আমায় কোন গুরুত্ব দেন নি।তাহলে আজ কেন দয়া দেখাতে এসেছেন?দরকার নেই আমার কারো দয়ার।আমি অনেক ভালো আছি।এভাবেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিবেন।আমি আপনার উপযুক্ত নই।আমি সারা জীবন চিরকুমারী থাকবো।কারণ আপনার জায়গাটা আমি অন্য কাউকে দিতে পারবো না।আপনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন না কিন্তু আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি। যেই ভালবাসার ভাগ অন্য কাউকে দেয়া আমার পক্ষে কখনি সম্ভব নয়।

কথাগুলো কয়েক নিঃশ্বাসে বলে দম নিলো জিনিয়া।অর্ণব আজ চুপ করে ওর সব কথা শুনলো।মেয়েরা খুব চাপা স্বভাবের। কারো কাছে কিছু শেয়ার করে না।কিন্তু প্রিয় মানুষটার কাছে নিজের সব কথা স্বাচ্ছন্দ্যে বলতে পারে।যদি সেই মানুষটার সাথে অভিমান নামক বস্তুটা ঘিরে দাঁড়ায় তাহলে সম্পর্কের মধ্যে অনেক দূরত্ব সৃষ্টি হয়।বুকের মাঝে জমে থাকা পাহার সমান অভিমান গুলো যদি তার সেই ভালবাসার মানুষটাকে বলে বুঝাতে পারে তাহলে নাকি কিছুটা হলেও কমে যায়।আর তখন যদি ছেলেটা মেয়েটাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বলে,”পাগলী চিন্তা করিস না আমি তোর আগেও ছিলাম,এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।আগে নয়তো ভূল করেছি তোর সাথে কথা না বলে।কিন্তু এখন প্রমিস করলাম এমব ভূল কখনও করবো না। এখনো ভীষণ ভালবাসি তোকে।”ওমনি সব অভিমান গলে পানি হয়ে গেছে। অর্ণব এমনটাই শুনেছিলো একবার জিনিয়ার কাছে।আজ তা প্রয়োগ করার সময় এসে পরেছে। অর্ণব, জিনিয়াকে ওর দিকে ঘুরিয়ে আলতো করে জরিয়ে ধরলো।এতেই জিনিয়ার রাগ,অভিমান সব উরে গেলো।তারপরও জিনিয়া কয়েকবার নিজেকে ছারানোর চেষ্টা করলো।তবে ওতটা জরালো ভাবে নয়।এর ফলস্বরূপ অর্ণব জিনিয়াকে খুব শক্ত করে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। জিনিয়া নিজেকে এবার সামলাতে পারলো না। অর্ণবকে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুঁজে শব্দ করে কান্না করে উঠলো।দুজনের চোখে পানি।কত বছর পর তাদের ভালবাসা পূর্ণতা পেলো।

অর্ণবঃ প্রতিটা রাতে আমি তোমায় মনে করতাম।কত যে চোখের পানি ফেলিয়েছি তার হিসেব নেই। জানো জিনিয়া তোমাদের মেয়েদের চোখের পানির ফোটার খবর যেমন বালিশ জানে।তেমনি আমাদের ছেলেদের চোখের পানির ফোঁটার খবর জানে সিগারেট।যখন খুব বেশি তোমাকে মনে পরতো তখন কত প্যাকেট সিগারেট যে শেষ করতাম তার হিসাব নেই। একদিন বোনু দেখে ফেলেছিলো।তারপর বোনু মানা করে।তারপর বেশি খেতাম না।তবে এখনো মাঝে মাঝে যখন তোমার কথা মনে করতাম তখন কান্না করতাম আর লুকিয়ে সিগারেট খেতাম।কিন্তু আমার ভালবাসার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিলো।কারণ আমি তোমাকে রিয়েল লাভ করতাম।আমার বিশ্বাস ছিলো আমি তোমাকে ঠিক পাবো।নামাজে আমি তোমাকে চেয়েছি।আল্লাহ তাই তোমাকে আমার জন্য রেখে দিয়েছে।তুমি হীনা আমার একটা সেকেন্ডও নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত।ভাই-বোনদের জন্য সবসময় মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখতাম।কিন্তু আমার ভেতরটা পুরে যেতো।আমি তোমাকে এখনো অনেক ভালবাসি।তুমি আমায় আবার ছেড়ে যাবে না তো।তুমি যদি আমায় ছেড়ে এবার চলে যাও তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না। প্লিজ আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না। আমি যে আর সহ্য করতে পারবো না।

জিনিয়াঃ কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে। আমায় মাফ করে দিয়েছো তো??
অর্ণবঃ ধূর,পাগলী। আমি কি তোমার সাথে রাগ করে থাকতে পারি।তোমার যেমন আমার প্রতি অভিমান ছিলো তেমনি আমারও।আমি তোমাকে মাফ কবে করে দিয়েছি।
জিনিয়াঃ ভালবাসি অর্ণব।
অর্ণবঃ আমিও।

ওদের পুরো ঘটনা আড়াল থেকে দেখে খুব খুশি হলো ঈশান।যদিও ঈশান জানে এটা ঘোরতর অন্যায়।তারপরও নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি।এত বছর পর ভাইয়ের ভালবাসা পূর্ণতা পেলোও কি না তা দেখার জন্য উৎসুক হয়ে ছিলো।অবশেষে যে ওদের ভালবাসার মাঝে সকল ভূল বুঝাবুঝির অবসান ঘটলো তাতেই ও খুশি।খুশিতে কখন চোখের পানি গাল বেয়ে পরে গেছে সেই খেয়াল নেই ঈশানের।চোখের পানি মুছে পেছন দিকে ঘুরতেই দেখে ইশাত চোখ দুটো ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

ইশাতঃ তুই এখানে কি করিস?এখানে তো বড় ভাইয়া ও ভাবি নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
ঈশানঃ এই রে ঈশান তুই তো গেছিস?এবার কি বলবি?(মনে মনে)
ইশাতঃ কথা বলছিস না কেন?
ঈশানঃ ভাইয়ার কাছ থেকে কেমিস্ট্রি শিখছিলাম।বিয়ের পর নুহা রাগ করলে ওর রাগ কিভাবে ভাঙ্গাবো তাই।আগে থাকতে শিখে রাখা ভালো।
(মেকি হাসি দিয়ে)
ইশাতঃ কি-ই-ই-ই?? ?
ঈশানঃ হুম ?।
ইশাতঃ দাঁত বের করিস না।ফাজিল ছেলে।বলে কি?
ঈশানঃ বেশি করবি তোর বাসর ঘরে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো।তখন কি করবি?আমি তো সব কিছু দেখে নিবো।
ইশাতঃ শয়তান,বান্দর, কুমির। তোর মন মানসিকতা কোথায় চলে গেছে? তুই এসব কি বলিস?তুই কি অবুঝ? কিছু বুঝিস না।ভাব নিচ্ছো মাছ উল্টেও খেতে পারো না।দাঁড়া তুই। তোর পিঠের ছাল উঠিয়ে ফেলবো।দিনকে দিন ফাজিল হচ্ছিস।

ইশাত পায়ের থেকে জুতা খুলতে খুলতে ঈশান ভো দৌড়। ইশাতও ওর পিছনে পিছনে জুতা হাতে ছুটছে।

???

জিবরান কান ধরে উঠা বসা করছে।কারণ এটা তার শাস্তি। সেদিন বাংলোতে ওকে কালুর ও জরিনার মা বলার সাজা এটা।বেচারা জিবরানের মুখটা দেখার মতো হয়েছে। উষা দোলনায় বসে আরাম করে চিপস খাচ্ছে আর জিবরানকে লক্ষ্য রাখছে।আজকে ওকে কালুর মা,জরিনার মা বলার মজা হারে হারে বুঝিয়ে দিবে জিবরানকে।

জিবরানঃ চুয়ান্ন, পঞ্চান্ন,ছাপান্ন,সাতান্ন।উষা এবারের মতো মাফ করে দেও না প্লিজ। কানে ধরছি,নাকে ধরছি এই জীবনে তোমাকে কালুর মা,জরিনার মা বলবো না।অনেকবার তো কান ধরে উঠা বসা করেছি।এবার মাফ করে দিলে কি হয়?আমি তোমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র হবু স্বামী। এই অবলা,মাসুম,কিউট,ভোলা ভালা বাচ্চাটার সাথে তুমি এমনটা করতে পারো না।
উষাঃ চুপচাপ কানে ধরে উঠ-বস করুন।দুই শত বারের আগে থামলে খবর আছে। যদি আবার কথা বলেছেন তো দুইশত থেকে পাঁচ শত তে চলে যাবে।
জিবরানঃ এই না তুমি এই ছোট বাচ্চাটার সাথে এত বলেন অন্যায় করতে পারো না।
উষাঃ বেশি কথা না বলে কাজ করেন।
জিবরানঃ এই বয়সে নাকি কান ধরে উঠা বসা করতে হবে।আল্লাহ তুমি আমাকে ওয়ান পিস একটা মিলিয়ে দিছো।এখনি এই অবস্থা। বিয়ের পর তো আমার মাথার চুল একটাও থাকবে না।টাক হয়ে যাবো।
উষাঃ কি বললেন?আবার বলুন।
জিবরানঃ কি কি কিছু না তো।আমি তো কান ধরে উঠা বসা করছি।আটানব্বই, নিরানব্বই,একশ।একশত হয়ে গেছে।
উষাঃ চিটিংবাজ।আপনি আমার সাথে চিটিং করেছেন।আপনি সাতান্ন পর্যন্ত গুনেছিলেন।সেখান থেকে লাফ দিয়ে আটানব্বইতে চলে গেছেন।ফাজিল বাদড় কোথাকার?
জিবরানঃ এই রে ধরে ফেলেছে। চিটিং করেও শান্তি পেলাম না।
উষাঃ আপনি আবার ১ম থেকে কান ধরে উঠ বস করবেন।এটা আপনার পানিশমেন্ট। নিন শুরু করেন।
জিবরানঃ নাআআআআআ??।একটু দয়া করো এই কিউট,মাসুম বাচ্চাটার ওপর।
উষাঃ জলদী শুরু করুন নয়তো আমি বিয়ে করতে মানা করে দিবো।
জিবরানঃ না না করছি করছি।

জিবরান মুখ ভার করে একের পর এক কান ধরে উঠ বস করছে।পা ব্যাথা করছে।আর উষা দোলনার ওপর দুই পা তুলে বসে মুখ টিপে হাসছে।
জিবরানঃ বের করছি তোমার হাসি।আমাকে দিয়ে কান ধরে উঠা বসা করানো।এখন আমিও জরিনার মা কালুর মা বলে পালাবো।আমাকে ধরতে পারবে না।(মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে)
উষাঃ মিট মিট করে হাসছেন কেন??
জিবরানঃ জরিনার মা, কালুর মা।
উষাঃ কি-ই-ই-ই? আবারো মি.জেব্রা আমাকে কালুর মা,জরিনার মা বললেন।আজকে আপনার একদিন কি আমার যতদিন লাগে।চাটনী বানাবো আপনাকে।বজ্জাত ব্যাটা।

জিবরান তো উষাকে এসব বলেই উঠে পরে দৌড়।ওর পেছনে পেছনে উষাও ছুট।জিবরান আগে উষা ওর পিছনে পিছনে চক্কর কাটছে।

???

বিকালে সবাই মিলে একসাথে অথৈদের বাসায় গেছে। অথৈর মা-বাবা অনেক খুশি। তাদের মেয়ের জন্য এত বড় ঘর থেকে ছেলে দেখতে এসেছে। তারা নিজ থেকে অথৈকে নিতে এসেছে।কিছু সময় পর অথৈ চায়ের ট্রে হাতে ওদের সামনে এলো।আদিল হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে অথৈ হালকা আকাশি কালার একটা শাড়ি পরেছে।সাথে সামান্য কিছু জুয়েলারি।তাতেই আদিলের নিলাসাকে আরো সুন্দর লাগছে।উষার কুনুইয়ের খোঁচা খেয়ে আদিলের হুশ ফিরলো।এত সময় ধরে সবার সামনে এভাবে তাকিয়ে ছিলো ভাবতেই আদিল লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
অর্ণবঃ চাচা,আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে এর মধ্যেই বিয়েটা সেরে নিতে চাই। আমদের ছয় ভাই বোনের বিয়ে একদিনই হবে।
অথৈর বাবাঃ আমাদের কি আপত্তি থাকবে বাবা?তোমরা যেটা ভালো মনে করো তাই করো।আমি আর কি বলবো?বড় মেয়েটাকে বিদায় করে ভালোই ভালোই ছোটটাকে বিদায় করতে পারলে আমাদের শান্তি। দুজন বুড়ো বুড়ি নিশ্চিন্তে হবো।
অর্ণবঃ ওরা দুজন দুজনার সাথে কথা বলতে পারে। ওদের নিজেদের মতও তো আমাদের জানা উচিত। আদিল,অথৈ তোমরা দুজন কথা বলতে পারো।
অথৈর বাবাঃ অথৈ, আদিল বাবাকে তোর রুমে নিয়ে যা।

আদিল ও অথৈ দুজন একসাথে রুমে দাঁড়িয়ে আছে। অথৈর মাথা নিচু করে রেখেছে।
আদিলঃ কিছু বলছো না যে।
অথৈঃ কি বলবো?
আদিলঃ আমার ওপর রাগ করে আছো মনে হচ্ছে।
অথৈঃ আমি কারো ওপর রাগ করি না।
আদিলঃ বাহ্ মহারাণী দেখছি বেশ রাগ করেছে। আমারই ভূল হয়েছে। সেই পার্টির পর থেকে ওর সাথে কথা বলার সময় পাইনি।কত ভেজালে ছিলাম?ওর খবর নেয়া দরকার ছিল।সরি বলতে হবে। (মনে মনে)
অথৈঃ আমি এবার এই লোককে পছন্দ করে ফেলি নি তো।মনে হয় তাকে আমি পছন্দ করেই ফেলেছি।নয়তে তার প্রতি আমার রাগ,অভিমান হচ্ছে কেন?বাবা তো বলেছে ছেলে আন্ডার ওয়াল্ডের সদস্য।নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত ছিলো।আমার রাগ করার তো কোন মানে হয় না।সরি বলে দেই।(মনে মনে)
দুজন একসাথে বলে উঠলো–সরি।

তারপর কিছু সময় দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে ফিক করে হেসে উঠলো।আরো কিছু সময় কথা বলার পর দুজন হাসি মুখে ফিরে এলো।বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার পর সবাই চললো তারিনদের বাসার উদ্দেশ্য। হাতে সময় বেশি নেই তাই একদিনে সব ভাইদের বিয়ে স্যাটেল করে নিচ্ছে।

???

ফুল ভলিউমে বক্সে গান ছেড়ে উরাধুরা ডান্স করছে তারিন।মায়ের মুখ থেকে যখন শুনেছে পুরো মির্জা পরিবার আজ ওর আর ইশাতের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসবে তখন থেকে ডান্স করেই চলছে।অন্য দিকে মিসেস রুশা আহমেদ একা একা সব সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তারিনের খেয়াল নেই। সে তো আজ খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।

রুশাঃ আমি এখন একা একা এত কিছু সামলাতে পারবো।মেয়েটাকে বলেছিলাম একটু হেল্প কর।কিন্তু সে তো খুশিতে পাগল হওয়ার উপক্রম। যেমন বাবা তেমন মেয়ে।

আজ তরিকুল মাহমুদ খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসেছে। তার একমাত্র মেয়ের বিয়ের কথা হবে আর সেখানে সে থাকবে না। তাতো হয় না।কিচেনের সামনে দাঁড়িয়ে রুশা আহমেদের সব কথায় শুনলেন তিনি। মুচকি হেসে সামনে এগিয়ে এসে বললেন।
তরিকুলঃ তারিনের আম্মু কোন হেল্প লাগবে?
রুশাঃ আমার কথা ভাবতে হবে না। যাও গিয়ে মেয়ের সাথে ডান্স করো।আমার খবর কারো নেওয়ার দরকার নেই। আমি তো মেশিন।

গিন্নি সাহেবার ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনেই তরিকুল মাহমুদ বুঝতে পারলেন আসলে তিনি রাগ করেছেন কেন?

তরিকুলঃ দেও আমি তোমায় হেল্প করছি।
রুশাঃ হয়েছে হয়েছে এখন আর দরদ দেখাতে হবে না। এভাবেই আমাকে উদ্ধার করে ফেলেছেন।দুপুরের খাবারের টাইম শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মেয়ে গুলো এসে কখন খাবে বলো তো।এমনি সময়ের জন্য আসতে পারে না।এত দিন পরে আসবে তাও আবার মেয়ের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে।এখন যদি দুপুরে কিছু খাইয়ে দিতে না পারি তাহলে মনটা কি শান্তি হবে আমার?তোমার মেয়েকে বললাম সে তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে নাচতে চলে গেলো। এত কাজ কি আমি একা সামলাতে পারি।
তরিকুলঃ আমায় বলো কি করতে হবে? আমি করে দিচ্ছি। তুমি মাথা ঠান্ডা করো।

রুশা আহমেদের সাথে সাথে তরিকুল মাহমুদও কিচেনে কাজ করতে লেগে পরলেন।

সারা কাবার্ডের জামা-কাপড় উল্টো পাল্টা করে ফেলেছে তারিন।কিন্তু কোনটা পরবে তা ডিসাইড করতে পারে নি।তখনি চোখ পরলো ফিরোজা কালার একটা গোল ড্রেস।স্বপ্নেও তো সেদিন এই কালারের ড্রেস দেখেছিলো।তাই তারিন সেটা হাতে নিয়ে তৈরি হতে চলে গেল।

দুপুরে খাবারের টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।তারিন বেশ সুন্দর করে সেজেছে আজ।কিন্তু ইশাত একবারের জন্যও ওর দিকে তাকাইনি।এত কিছু করেছে তারিন কিন্তু এক পলকও তাকায়নি ইশাত।ডাইনিং টেবিলে ইশাতের বরাবরি বসেছে তারিন।এখন সে লুচির মতো ফুলছে।তাতেও ইশাতের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। উষা তারিনের সাথেই বসেছে।তারিনের কানের কাছে গিয়ে উষা আস্তে করে বলে উঠলো।

উষাঃ তারু বেবি কি পরেছিস এটা?তোর থেকে তো আমার পাপ্পিটাকে খুব সুন্দর লাগছে। ওয়াক ছিঃ। তোর রুচি দেখলে আমার গা ঘিন ঘিন করে।
তারিনঃ আমার সাথে দু দিন ধরে বেশ পিছু লাগছিস।আমি তোর কোন ক্ষতিটা করেছি রে উষানি?আমার সাথে এমন করছিস?
উষাঃ তুই সেদিন আমার সাথে লেগে ছিলি।তাই আজ আমি এর উসুল উঠাবো।
তারিনঃ কোন দিনের কথা বলছিস?
উষাঃ কেন বেবি তুমি আমায় কালুর মা, জরিনার মা বলো নি।আমি এখনি তোর বিয়ে ভেঙে দিবো।
তারিনঃ এমন করিস না।আমার আদুরিনী,ননদিনী।বল তুই কি খেতে চাস? তোকে তাই খাওয়াবো।
উষাঃ এত করে যখন বলছিস তখন মানা করলে তো আমারি লস।
তারিনঃ এতো করে কোথায় বললাম?একবারই তো বললাম।
উষাঃ চুপ কর।আমাকে একদিন ট্রিট দিতে হবে।যদি দেস তাহলে কিছু করবো না।নয়তো সেজু ভাইয়ুর কানে বিষ ঢালবো তোর নামে।
তারিনঃ আচ্ছা বোন তাই হবে।তারপরও তুই এ কাজ করিস না।
উষাঃ ওকে করবো না। তুই কিন্তু ট্রিটের কথা ভুলে যাস না।তাহলে আমার থেকে বেশি খারাপ অন্য কেউ হবে না।
তারিনঃ তোর শোধ তোলা রইলো।এক বার বিয়েটা তো হতে দে।তারপর তোর এই শোধগুলো আমি একে একে ফেরত দিবো ননদিনী।(মনে মনে)

খাওয়ার পর ইশাত একটু পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।হঠাৎ একটা রুমের থেকে একজোড়া হাত এসে ওকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো।

ইশাতঃ তারু তুই!! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তারিনঃ তুমি এই বিয়েতে রাজী তো?
ইশাতঃ তোর মতো মেয়েকে বিয়ে করবো আমি?যা ভাগ।বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে ফ্যাসাদে পরবো নাকি।
ইশাত তারিনকে রাগানোর জন্য ভাব নিয়ে কথাটা বললো।তারিন রেগে ইশাতের কলার চেপে বললো।
তারিনঃ কি বললে আরেক বার বলো?আমাকে বিয়ে করবে না।তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে করবো।আমাকে তো চেনো না।ছাদে নিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবো।আমাকে রাগিয়ো না।চুপচাপ বিয়ে করার জন্য রাজী হয়ে যাও।

তারিন কথাগুলো বলে এক চোখ মেরে চলে গেল। ইশাত হা করে আছে।এ তো রিতীমত থ্রেট দিয়ে গেল ওকে।

???

খাওয়ার পর্ব শেষ করে তারিনের বাবার সাথে কথা বলে সবাই রওবা দিলো রাহীদের বাসার উদ্দেশ্য। রাহীর বাসার ঠিকানা অনেক আগেই খুঁজে নিয়েছিলো অরূপ।গতকাল রাহীর কথাও বলেছে ভাই-বোনের কাছে।ছবিও দেখিয়েছে। সবার পছন্দ হয়েছে রাহীকে।তাই বিয়ের পাকা কথা বলতে চলে এসেছে।

কখন থেকে রাহীর রুমে ওয়েট করছে অরূপ।কিন্তু ওর আসার নাম নেই। বিকালে কোথায় যেনো গিয়েছে? নিচে সবাই সোফায় বসে কথা বলছে।
রাহী ওর এক বান্ধবীর বাসা থেকে ফিরে অবাক হয়ে গেলো। বাসায় এতো মানুষ। যাদের সে কোন দিন দেখেনি।
রাহীর মাঃ এসে পরেছিস মা।যা রুমে শাড়ি রেখে এসেছি। তৈরি হয়ে আয়।
রাহীঃ এগুলো কে মা?
রাহীর মাঃ উনারা তোকে দেখতে এসেছে। তারা বিয়ের কথা বার্তা বলে যাবে।তোকে নাকি আগেও দেখেছে।ছেলের বাড়ির লোক তোকে ভীষণ পছন্দ করেছে।তুই আর অমত করিস না।
রাহীঃ দেখতে এসেছে মানে।আমি এখন বিয়ে করবো না তোমাদের কতবার বলবো।
রাহীর মাঃ বেশি কথা না বলে তৈরি হয়ে আয় তো।

রাহী রাগে উপরে চলে এলো।কান দিয়ে তার ধূয়া ছুটছে।সেদিনের সে বৃষ্টিতে ভেজার ছেলেটাকে তার মনে জায়গা করে নিয়েছে।তার নামও সে জানে না। কত দিন সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো এক পলক তাকে দেখবে বলে।কিন্তু আর দেখা হয়নি।তার কথা ভাবতে ভাবতে রাহীর দিন শুরু হয়।আজ তাকে ছেরে অন্য ছেলের দিকে কি করে তাকাবে সে।এসব ভাবতে গিয়ে রাহীর চোখ ভিজে উঠলো।রুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো সে।
রাহীঃ আ আ আ পনি?
অরূপঃ হুম আমি।
রাহীঃ আপনি এই জায়গায় কি করছেন?
অরূপঃ তোমার হবু বরকে জিজ্ঞেস করছো সে এখানে কি করছে?
রাহীঃ মানে??(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
অরূপঃ মানে তুমি যা বুঝেছো তাই। তোমাকে আমার বউ করে নিয়ে যেতে এসেছি।তোমার কি কোন আপত্তি আছে।

রাহী লজ্জা মাথা নিচু করে ফেললো। মাথা নারিয়ে বুঝালো সে রাজী আছে।অরূপকে তো সে খুব করে চাইতো।বৃষ্টির সেদিন থেকে ভালো লাগা। ভালো লাগা থেকে কখন ভালবাসায় পূর্ণতা পেয়েছে সেটা রাহী নিজেও জানে না।রাহীর গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। সেটা দেখে মুচকি হাসলো অরূপ।

???

বাইরের আবহাওয়া উপভোগ করছে নুহা ও ঈশান।ভেতরে সবাই কথা বলছে অরূপের বিয়ের ব্যাপারে।ওদের বিয়েটাও ফিক্সড হয়ে গেছে। অবশ্য আগে থেকেই সবাই সবকিছু জানতো।

ঈশানঃ কথা বলছো না যে।
নুহাঃ কি বলবো?
ঈশানঃ তোমার যা ইচ্ছা।
নুহাঃ ??।
ঈশানঃ চোখ ট্যারা করো কেন?আচ্ছা তোমার কি কোন পছন্দ আছে। যদি থাকে তো বলতে পারো।তাহলে আমি এই বিয়ে ভেঙে দিবো।তোমার আমাকে পছন্দ না হলে বলতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না।তোমার তো কাউকে পছন্দ থাকতে পারে।

ঈশানের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো নুহা।বলে কি ছেলেটা?ওর জন্য দিন রাত নামাজ পরে দোয়া করে যাতে ঈশানের সাথে ওর বিয়ে হয়।আর সে কি না বলছে নুহার অন্য জায়গায় পছন্দ আছে।মাথায় চিন চিন একটা রাগ উঠে গেল নুহার।ব্যাটার মতলব কি সেটাই বুঝতে চাইছে?ঈশানকে বোঝা দুষ্কর। কখন মনে কি চলে কে জানে?

ঈশানঃ কথা বলছো না যে।
নুহাঃ আপনার কোন পছন্দ আছে। থাকলে বলতে পারেন।আমি মানা করে দিবো সবাইকে।নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়াটা আপনাকে করতে হবে না।একটা অনাথ মেয়েকে ঠাঁই দিয়েছেন সেটাই বেশি। আর কিছু চাই না আমার। (ছলছল চোখে)
ঈশানঃ কি বলছো তুমি এসব??
নুহাঃ যা সত্যি তাই বলছি।
ঈশানঃ সেই ১ম দেখায় তোমাকে ভালোবেসেছি আমি।তোমাকে যাতে চোখে না হারাই সে জন্য নিজেদের বাসায় নিয়ে এসেছি।সেখানে তুমি বলছো আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি।অন্য কাউকে পছন্দ করলে আমি কখনো তোমাকে বিয়ে করতে রাজী হতাম না।
নুহাঃ আমিও তো আপনাকেই ভালবাসি।তাহলে আপনি আমার মনের খবর না জেনে কি করে বলছেন আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি।

ঈশান বুঝতে পারলো নুহা ওর প্রতি রাগ হয়ে এসব কথা বলছে।কিন্তু ও তো নুহার মনের খবর সত্যি জানে না।এসব কথা বলা তো ওর ঠিক হয়নি।ঈশান বাচ্চা ফেস করে কানে ধরে বললো।
ঈশানঃ সরি উডবি মিসেস ঈশান মির্জা।এই কান ধরছি আর কখনও না জেনে কোন কথা বলবো না।

ঈশানের বাচ্চা ফেস দেখে নুহা রাগ করে থাকতে পারলো না।মুখে হাত দিয়ে হেসে উঠলো।

#চলবে

গতকাল গল্প দেয়নি বলে আজ অনেক বড় করে দিয়েছি।চেক করার সময় পাই নি। তাই ভূল -ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আমার জানা মতে সকল রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে। আপনাদের কারো কাছে যদি মনে হয় এখনো কোন রহস্য বাকি আছে তাহলে কষ্ট করে আমাকে কমেন্ট করে একটু জানিয়ে দিবেন প্লিজ।

#Part_28
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2964497627112303/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here