বোনু Part_16

0
661

বোনু
Part_16
#Writer_NOVA

মির্জা বাড়ি থেকে বেরিয়ে সৃজানদের কালো গাড়িটা বাড়ির উদ্দেশ্য না গিয়ে পুরাতন এক গোডাউনে সামনে এসে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে নেমে সৃজান ও সিয়ান গোডাউনের ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই অন্ধকার থেকে সোফায় বসা একজন বলে উঠলো।

—-ওয়েলকাম ওয়ার কান্ট্রি মোঃ সৃজান এন্ড মোঃ সিয়ান আহমেদ।প্লিজ সিট ডাউন।

আবছা আলোতে লোকটার চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। তবে সৃজান ও সিয়ান জানে লোকটা কে।ওদের বেশিরভাগ কালো ধান্দার ব্যবসা একসাথে ডিল করা হয়।এক কথায় কলো বিজনেসের পার্টনার।

সৃজানঃ হঠাৎ করে কানাডা থেকে জরুরি তলব কেন?
—-একটা সুবর্ণ সুযোগ আছে।এই সুযোগে মির্জাদের ওপর তোমার ও আমার প্রতিশোধ নিতে পারবো।
সিয়ানঃ ভাইয়া ঐ মির্জা বংশের কাউকে রাখবে না।ওদের কত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলেছে।আর ওদের বোন উষার তো আমি সর্বনাশ করেই ছারবো।ওরা তো জানে না কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছে।মাফিয়া ওয়াল্ডের লিডার আমি।ইশাত ও ঈশানকে আমি ছারবো না।প্রতিটা আঘাত দ্বিগুন হারে ফেরত দিবো।
সৃজানঃ শান্ত হো ভাই।ওদের সর্বনাশ করতেই আমরা দেশে এসেছি।
—-আগামীকাল মির্জারা জিবরানের পার্টিতে এটেন্ড করবে।আমরাও কাল আমাদের কার্য সিদ্ধ করবো।
অবশ্য প্ল্যানটা আমাদের নয়।
সৃজানঃ তাহলে কার?
—-মাসফি শিকদার।এর আগেও দুইবার উষাকে মারতে চাইছে।আবার উষাকে শেষ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।মাসফির আগে আমরা ওর প্ল্যান বাস্তবায়ন করবো।বাই চান্স ধরা পরে গেলে আমরা বেঁচে যাবো।আর ফেঁসে যাবে মাসফি শিকদার।
সৃজানঃ আমাদের লাভ কি তাতে?
—-এতো বছর ধরে কালো ধান্দার বিজনেস করি একসাথে। অথচ এতটুকু জ্ঞান হলো না তোমার।
সিয়ানঃ যদি বুঝিয়ে বলতেন।
—আমি চিন্তা করছি সিয়ান তোমার মতো এরকম মাথা মোটা কিভাবে মাফিয়ার লিডার হলো?
সিয়ানঃ মুখ সামলে কথা বলুন।আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।(রেগে)

—আরে সিয়ান রাগ করো কেন?এত কিছু বোঝো আর এতটুকু বোঝো না।এখন আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মির্জারা।১.ওদের কোম্পানির জন্য আমাদের বিজনেস মাটিতে মিশে যাচ্ছে। কেউ আমাদের প্রোডাক্টের ওপর এখনো ডিল করতে রাজি হচ্ছে না।২.আদিল একজন আন্ডার ওয়াল্ডের সক্রিয় সদস্য। ও আমাদের হন্যি হয়ে খুঁজছে।আমাদের বেশ কিছু ইনফরমেশন জোগাড় করে ফেলেছে। ৩.ইশাতের কারণে গতবার আমাদের বাস্কেটবল টিম হেরে গেছে।৪.ঈশানের কারণে গত প্ল্যান যখন আমরা ড্রাগ পাচার করেছিলাম তখন পুলিশ আমাদের তথ্য জেনে যায়।বাকি রইলো উষা।উষা কিন্তু তোমাদের দুজনকে কয়েক মাস আগে ব্যাংককে দেখে নিয়েছিলো।উষা, সেদিন শপিং -এ গিয়েছিলো।তোমরা যেদিন ব্যাংককের একজন অন্যতম বিজনেস ম্যানকে গুলি করে মার্ডার করেছিলে।উষা পুরো ঘটনা দেখেছে।কিন্তু চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় তোমাদের মুখটা স্পষ্ট করে দেখতে পায়নি।

সৃজানঃ ওয়েট, সেদিন তাহলে উষা সেখানে ছিলো।ওর চিৎকার মানুষ চলে এসেছিলো।অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম।কিন্তু আমরা সেদিন ওর চেহারা দেখতে পাই নি।চিৎকার শুনে ওর দিকে তাকাতেই দেখেছিলাম একটা মেয়ে ঢলে নিচে পরে গেলো।মানুষ এসে পরায় সেখান থেকে পালাতে হয়েছিল।
—-ইয়েস সেটা উষা ছিলো।
সিয়ানঃ আমরা আগামীকাল কি করবো?
—-মাসফির প্ল্যান কাল উষাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাবে।ওর আগে আমরা উষাকে উঠিয়ে আনবো।চার ভাইয়ের কলিজার টুকরা ওদের বোন।বোনকে তুলে আনলে ভাইরা সুরসুর করে চলে আসবে।কথায় আছে না কান টানলে মাথা আসে।তবে আমি কাল সামনে আসবো না।সবাই একসাথে থাকলে ধরা পরে যেতে পারি।পুলিশে ধরলে কাউকে তো বাইরে থেকে জামিন নিতে হবে।আমি পুরো প্লান তোমাদের বুঝিয়ে দিবো।
সিয়ানঃ আমার শুধু দুই ঘন্টার জন্য উষাকে চাই। ওর চার ভাইয়ের সামনে আমি ওর সর্বনাশ করবো।তখন বুঝবে ইশাত, ঈশান আমার সাথে লাগার মজা।নিজের চোখের সামনে বোনের সর্বনাশ দেখবে কিন্তু কিছু করতে পারবে না।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
—ওকে তোমার সব ইচ্ছার মূল্য দেওয়া হবে।তবে কাজটা নিখুঁতভাবে হওয়া চাই।
সৃজানঃ মির্জারা শেষ হলে আমাদের কোন শত্রু থাকবে না।
—না,আরেকজন আছে। সেটা অবশ্য আমাদেরি শত্রু।
সিয়ানঃ কে সে?
—মাসফি শিকদার।মাসফিকে আমাদের রাস্তা থেকে না হাঁটালে আমরা শান্তি পাবো না। ওকে শেষ করলে আমাদের পথের কাঁটা শেষ হয়ে যাবে।ওর কারণে এত বছরেও কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারলাম না।তাই পুরো প্ল্যানের দোষ মাসফির ওপর দিয়ে দিবো।মির্জারা এমনি মাসফিকে টার্গেটে রেখেছে। এখন আমাদের শুধু সব দোষ মাসফির ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই ওরা মাসফিকে ধরবে।
সৃজানঃ তার মানে এখন প্ল্যানটা হলো সাপও যাতে মরে আর লাঠিও যাতে না ভাঙ্গে।এম আই রাইট?
—-ইয়েস,কানাডা থেকে তো অনেক মার্ডার করেছো।এবার শুধু মির্জাদের পৃথিবী থেকে বিদায় করতে পারলে হলো।
সিয়ানঃ আমি বলে দিলাম ভাইয়া।উষাকে আমার চাই,চাই।
সৃজানঃ ডোন্ট ওয়ারি ভাই। আমার মেয়েদের প্রতি কোন নেশা নেই। কিন্তু তুই তো আবার মেয়েবাজ।তাই তুই অবশ্যই উষাকে পাবি।
—সৃজান তুমি তো আদিলের অনেক ভালো বন্ধু।
সৃজানঃ রাখেন আপনি বন্ধু। আমি শুধু টাকা চিনি।টাকার জন্য নিজের আপন মানুষকেও খুন করতে দ্বিধা করবো না।আর কোন জন্মের কোন বন্ধু।
—তোমার অদিতির কথা মনে আছে। যার কারণে তুমি আদিলের সাথে ভেজাল করেছিলে।
সৃজানঃ ওর কথা ভূলি কি করে?
—ওকে কিন্তু তুমি…..
সৃজানঃ থামুন মিস্টার।ওসব কথা এখন না বললেই ভালো হয়।আপনি তো সেই কাহিনী থেকে ব্লাকমেল করে আমায় এতদূর নিয়ে এসেছেন।
—আমি আবার মানুষের দূর্বল জায়গায় আঘাত করতে পছন্দ করি।
সৃজানঃ ওসব কথা বাদ দিন।দেয়ালেরও কান আছে।
সিয়ানঃ চল ভাইয়া।অনেক রাত হয়েছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে।অনেক দিন ধরে আহমেদ বাড়িতে পারা দেওয়া হয় না।
সৃজানঃ আসছি মিঃ….।কালকের দিনের মধ্যে পুরো প্ল্যান কমপ্লিট চাই।
সিয়ানঃ আউচ।আহ্ ভাইয়া।
সৃজানঃ কি হয়েছে ভাই?(ব্যস্ত হয়ে)
সিয়ানঃ আমার পা।অনেক ব্যাথা করছে।
সৃজানঃ কালকের দিনটা অপেক্ষা কর।মির্জাদের এর থেকে বেশি কষ্ট পেতে হবে।
—আরেকটা কথা সৃজান ও সিয়ান।মির্জাদের খুব কাছের মানুষ আমাদের সাথে হাত মিলিয়েছে।যদিও সে আমাকে দেখেনি।কাল তোমাদের সাথে সেও থাকবে।মির্জারা তাকে দেখে আকাশ থেকে পড়বে।জানো তো আপন জনের দেওয়া ধোঁকাটা বড্ড বেশি কষ্ট দেয়।পেছন থেকে ছুড়িটা আপন জনি মারতে পারে।সেটার থেকে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।
সৃজানঃ কে সে?(ভ্রু কুঁচকে)
—সময় হলে তাকে দেখতে পারবে।
সিয়ানঃ আসছি আমরা।

সৃজান ও সিয়ান বের হয়ে গেলো। অন্ধকার রুমে থাকা ব্যক্তিটা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে অবশেষে সে সফল হতে চলছে। তবে একটা প্রবাদ বাক্য আছে।পিপিলীকার পাখা গজাঁয় মরিবার তরে।সেই ব্যাক্তিটারও বোধহয় সেম অবস্থা। হাসি থামিয়ে লোকটা বললো—
—অবশেষে আমি সফল হতে চলেছি।আমার কাজ শেষ হলে এই সৃজান ও সিয়ানকেও শেষ করে দিবো।আমি হবে মাফিয়া ওয়াল্ডের বাদশাহ।কেউ তো জানে না যে এই গল্পের মেইন ভিলেন আমি।আমিই প্রধান কালপিট।ভালো মানুষের মুখশের পিছনে যে কি আছে সেটা কেউ জানতে পারবে না।হা হা হা হা।

???

চার অক্ষরের একটা শব্দ ভালবাসা।যার মর্মার্থ শুধু চারটা অক্ষরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।আমার কাছে মনে হয় আবেগ,অনূভুতি, ভালো লাগা,মায়া,বিশ্বাস, ভরসা নিয়ে তৈরি ভালবাসা।যার একটা মিসিং থাকলে ভালবাসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।সবচেয়ে বড় যেটা প্রয়োজন সেটা হলো বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের উপর টিকে থাকি আমরা।অথচ কেউ যদি ভালবাসায় বিশ্বাস নিয়েই গেম খেলে তাহলে সেখানে আমরা সবচেয়ে বড় অসহায়।বিশ্বাস নামক বস্তুটা যদি আমাদের মাঝে না থাকতো তাহলে আমরা কখনি বেঁচে থাকতে পারতাম না।আমি বিস্তারিত সব বলতে পারবো না। তাই সরাসরি মেইন পয়েন্ট ভালবাসায় চলে এলাম।ভালবাসা কারো কাছে ধোয়াসা, কারো কাছে নেশা।যাস্ট তিনটা ওয়ার্ড আই লাভ ইউ। এর মাঝে লুকিয়ে আছে অসীম আবেগ,অনুভূতি,ভালো লাগা,মায়া,বিশ্বাস, ভরসা।

আচ্ছা ভালবাসা কি সবসময় একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝেই হয়।আমি বলব না।কারণ আজ যদি ভালবাসা নামক বস্তুটা না থাকতে তাহলে কোন মা তার সন্তানকে এত আদর,স্নেহ দিতো না।বাবা তার স্ত্রী, সন্তানের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতো না।ভাই-বোনের মাঝে এত ভালো সম্পর্ক কখনি হতো না।এখন বলবেন এগুলো তো আমাদের কর্তব্য,দায়িত্ব। হ্যাঁ, এগুলো সেটাই। তবে এই দায়িত্ব, কর্তব্যগুলো ভালবাসা নামক শব্দ থেকেই আসে।একেকজনের ওপর ভালবাসার একেক রকম প্রভাব।তাই তো আমাদের কাছে ভালবাসার ব্যাখাটাও একেক রকম।আমার কাছে যা মনে হয় আমি তাই বললাম।দয়া করে কেউ আবার আমার ভূল খুঁজতে যেও না।তুমি তোমার মতো করে ভাবো আমি আমার মতো।এক্ষেত্রে আমি সঠিক বললাম কি না তার যাচাই করতে হবে না।সবাইকে সবার মতো ভাবার অধিকার আছে।

এতগুলো কথা বলে থামলো অদিতি।বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো।এক ধ্যানে সবাই ওর কথা শুনছিলো।খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে মেয়েটা।কথার মধ্যে কি রকম একটা ভালো লাগা আছে।না চাইতেও যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে।সৃজান,অদিতি,রাফি,নিশি,আদিল পাঁচ জন সবসময় একসাথে থাকে। খুব ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ওদের মাঝে।
সৃজানঃ বাহ্ বাহ্। এতো সুন্দর করে ব্যাখা তুই কি করে দিস? সেজন্য বলি আজকাল কবি কবি ভাব কেন তোর মাঝে?
আদিলঃ তা অদিতি ম্যাডাম এতো সুন্দর করে আপনি নিজের মনের ভাবগুলো কি করে প্রকাশ করেন?আমরা তো আপনার মিষ্টি কথার প্রেমে পরে যাচ্ছি।
নিশিঃ সত্যি অদিতি।তোর কথা বলার ধরণটা ওসাম।এতো সুন্দর করে কি করে কথা বলিস তুই? ইয়ার আমাদেরও কিছু শিখিয়ে দে।
অদিতিঃ হয়েছে হয়েছে।এতো পাম মারিস না।তোদের পামে পামে আমি ফুলে ঢোল হয়ে যাচ্ছি।
রাফিঃ অদিতিরে তোর কথার মুগ্ধতায় আমরা ঘোরে চলে যাচ্ছি। কবে নাকি পাবনার হেমায়েতপুরে আমাদের ভর্তি হতে হয়।সবাই তোকে বোকা পেয়ে পাম-পট্টি মারে।আর তুইও পারিস বটে।
অদিতিঃ রাফির বাচ্চা। তোকে আমি আলু ভর্তা বানাবো।শয়তান একটা।
রাফিঃ আমার বাবার নাম সুমন।যদি তোর বকতেই হয় তাহলে সুমনের বাচ্চা বলিস।দয়া করে রাফির বাচ্চা বলিস না।
অদিতিঃ তোকে তো আমি।
অদিতি হাতে থাকা খাতাটা দিয়ে ইচ্ছে মতো বারি মারতে লাগলো রাফিকে।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং….. ফোনের আওয়াজে ভাবনা ভাঙ্গলো আদিলের।বাগানে দাঁড়িয়ে আছে অনেকখন ধরে।পড়ন্ত বিকালে সূর্যের লাল আভা ওর মুখে পরছে।অনেক দিন পর পুরনো সেই কলেজ জীবনে ফিরে গিয়েছিল। পাঁচ বন্ধু-বান্ধবীর দিনগুলো খুব ভালোই কাটছিলো।কিন্তু একটা দূর্ঘটনায় সব এলোমেলো হয়ে গেলো। এখন কারো খবর কেউ জানে না।পাঁচ জন আজ পাঁচ দিকে।সৃজান নিজ থেকে কাল ওদের বাড়িতে না এলে হয়তো এসব কথা মনেও হতো না।ফোনের স্ক্রিনে জিবরানের নামটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জিবরানের সাথে কথা বলে একটা গিফট বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। একজন এসে গিফটটা হাতে দিয়ে গেল।ভেতরে ঢুকতেই ইশাত ও ঈশানের সাথে দেখা হলো।দুজন সোফায় বসে মোবাইলে গেম খেলছে।

ইশাতঃ ভাইয়া তোমার হাতে কি?
আদিলঃ চোখে কি দেখিস না।
ঈশানঃ কার গিফট?কে পাঠালো?
আদিলঃ জিবরান বোনুর জন্য ড্রেস পাঠিয়েছে। আজ রাতে বোনুকে এই ড্রেস পরতে বলেছে।
ইশাতঃ ওর সাথে বিয়ে হলে আমাদের বোনু নিশ্চয়ই অনেক ভালো থাকবে।অনেক ভালবাসে বোনুকে।
আদিলঃ তোদের কারো কে ইনভাইট করার আছে। জিবরান বললো বিশেষ কেউ থাকলে ইনভাইট করতে পারিস।
ইশাতঃ ভাইয়া তারিনদের ইনভাইট করেছে।
আদিলঃ তারিনের ফুল ফ্যামেলীকে তো জিবরান নিজে গিয়ে ইনভাইট করে এসেছে।
ঈশানঃ কি রে ইশাত তুই আবার তারিনের খবর নিচ্ছিস কেন? (ভ্রু নাঁচিয়ে)
ইশাতঃ আঙ্কেল আমাদের বিজনেস পার্টনার তাই।
ঈশানঃ বিজনেস পার্টনারের খবর নিচ্ছিস নাকি লাইফ পার্টনারের সেটা আমি ভালো করে জানি।
ইশাতঃ চুপ করবি তুই।
ঈশানঃ ভাইয়া নুহা যাবে না আমাদের সাথে।
আদিলঃ ও তো আমাদের বাড়ির সদস্য ও তো যাবেই। তবে একটা কথা আছে।
ঈশানঃ কি কথা?
আদিলঃ ছেলেরা যার যার বিশেষ মানুষকে আজকের পার্টির জন্য ড্রেস গিফট করবে।তোদের কেউ থাকলে গিফট করতে পারিস।তাই তো জিবরান বোনুকে গিফট করেছে।আমি ওপরে গিয়ে বোনুকে বক্সটা দিয়ে আসছি।আমার এক জায়গায় যেতে হবে।

শেষের কথাটা বিরবির করে বলে আদিল ওপরের রুমে চলে গেল। ইশাত, ঈশান দুজন পরে গেলো বিপাকে।গেমস খেলা ছেড়ে দুজন ছুটলো মার্কেটে।আদিল গিফটটা রেখে অথৈইদের বাসার দিকে ছুটলো।সবার বিশেষ মানুষ থাকবে আর তার বিশেষ মানুষটা থাকবে না।সেটা তো আদিল হতে দিতে পারে না।

???

সন্ধ্যায়……

নুহা রুমে এসে পরে গেলো বিপাকে। পার্টিতে যাওয়ার জন্য তার কোন ভালো ড্রেস নেই। কি পরবে সে এখন।অথচ এক ঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে সবার সাথে যেতে হবে। এতো করে সবাইকে বারণ করলো কিন্তু কেউ শুনলো না।অথচ ওর কথা শুনে উষা বললো আজ যদি নুহা না যায় উষাও যাবে না।নুহা রুমে এসে ধপাস করে খাটে বসে পরলো।হঠাৎ চোখ গেলো টেবিলের ওপর।সেখানে পাতা কালারের রেপারে পেঁচানো একটা বিশাল গিফট বক্স।

নুহাঃ কি এটা? এত বড় গিফট বক্স। কে রেখে গেলো?খুলে দেখি তো কি আছে? এ মা এতো সুন্দর গাউন।হালকা গোলাপি কালার। ওয়াও খুব সুন্দর। কে রেখে গেলো এটা? নিশ্চয়ই ভাইয়ুদের কাজ।আমি বরং জলদি করে তৈরি হয়ে নেই।

নুহা তৈরি হতে চলে গেল। দরজার আড়াল থেকে ঈশান মুচকি হেসে সরে গেলো।ঈশান দ্বিধা-দন্দে ছিলো নুহার ড্রেসটা পছন্দ হবে কি না।এখন যেহেতু পছন্দ হয়ে গেছে তাহলে তো খুশি হবারি কথা।ঈশান খুশি মনে তৈরি হতে চলে গেলো।

————————-

কলিং বেলের শব্দে বিরক্ত তারিন।মানুষের কি কোন কোমন সেন্স বলতে কিছু নেই। এভাবে টানা কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে। মেজাজটা গরম হয়ে গেলো।

তারিনঃ কেউ কি বাসায় নেই নাকি? সবাই কোথায় মরছে।কখন থেকে দরজার আড়ালে কোন গাধা কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে। ধূর, ভালো লাগে না।

তারিন বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু দরজার অপর পাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে মহাবিরক্ত।দরজা লাগানোর সময় নিচের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।লাল গিফট পেপারে মোড়ানো একটা বক্স।হাতে তুলে নিয়ে বোকা হয়ে গেলো তারিন।উপরে লেখা “শুধু তোমারি জন্য “। কে পাঠাতে পারে?সেটা নিয়ে গবেষণায় চলে গেল তারিন।বক্সটা খুলতেই আরেক দফা অবাক। ভেতরে পেঁয়াজ কালারের বিশাল বড় গাউন।

তারিনঃ কে পাঠালো এটা? ইশাত বেবি পাঠায়নি তো।আমার মনে হয় না ইশাত পাঠাবে।ও তো আমায় সহ্য করতেই পারে না।যে খুশি সে পাঠাক।আমার কি? আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আজ আমি এই গাউনটাই পরবো।

খুশি মনে গিফট নিয়ে দরজা আটকে দিলো।দেয়ালের আড়াল থেকে ইশাত বের হয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বুকে ফুঁ দিলো।আরেকটু দেরি হলে তারিন দেখেই ফেলতো।তারিন এটা পরবে সেটা শুনেই ইশাত খুশি।আর কিছু চাই না তার।বাইক নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো ইশাত।

———————

খুব সুন্দর করে পার্টির ডেকারেশন করা হয়েছে। জিবরান নিজে তদারকি করছে। কোথাও যাতে বিন্দুমাত্র কমতি না থাকে।চারিদিকে আলোক সজ্জা, রং বেরংয়ের লাইট,পার্টি লাইট,বেলুন, বাহিরী ফুল দিয়ে সাজানো কনসার্টটা।পুরো পার্টি প্ল্যানিংটা একটা আভিজাত্য কনসার্টে করা হয়েছে।জিবরানের পরনে লাল শার্ট ও কোর্ট সাথে কালো প্যান্ট।চুলগুলো এলোমেলো করে সেট করা। পায়ে কালো সু।অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।

কিছু সময় পর একটা মাইক্রো এসে থামলো গেইটের সামনে। মাইক্রো থেকে নামলো চার ভাই। জিবরান তাকিয়ে আছে কখন তার প্রিয়সী নামবে।আদিল ও অর্ণবের হাত ধরে গাড়ি থেকে নামলো লাল পরী।মাথায় রাণীর মুকুট।বিশাল বড় লাল গাউনে অসম্ভব সুন্দর লাগছে উষাকে।জিবরান মুগ্ধ হয়ে উষাকে দেখছে।চোখের পলকও পরছে না।লাল রং টা জিবরানের একটু বেশি পছন্দ। তাই উষাকে লাল কালারের গাউন গিফট করেছে।চার ভাইয়ের মাঝখানে উষা। এখনো উষার দুই হাত ওর দুই ভাই অর্ণব ও আদিল ধরে রেখেছে। পাঁচ ভাই-বোন একসাথে গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।

#চলবে

#Part_15
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2951328708429195/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here