বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২০

0
1414

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২০
#আনিশা_সাবিহা

অফিসের কেবিনে কাঁচের টেবিলে হালকা ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে একমনপ কিছু ভেবে চলেছে অভয়। তার মনে কি চলছে সেটা সবারই অজানা। হয়ত তার নিজেরও। আর আজকে ও যা কান্ড করেছে তারপরে তো আরো ওকে চেনা কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে ঐশানীর কাছে। নিজের দুইভাগে বিভক্ত হওয়া থুঁতনির ওপর হালকা বড় বড় দাঁড়ি বুলাতে বুলাতে আনমনে বলে ওঠে…..
–“ঐশানী কি করছে এখন? ও কি বেশ অবাক হয়েছে? হওয়ারই কথা। একারণেই আমি অনিকে বললাম ঐশানীকে আর আমার মনের অনূভুতিকে সমান সময় দেওয়া উচিত। কিন্তু ও আমার মনে এমনই ভয় দেখালো যে না চাইতেই ঐশানীকে গড়গড় করে সব বলে ফেললাম।”

মুখ দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয় অভয়। রিমোট নিয়ে এসির পাওয়ার টা বাড়িয়ে দিয়ে পায়চারি করতে শুরু করে। নিজের মাথার চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বলে….
–“এখন আমার কি করা উচিত? আমি তো আজ ঐশানীর ওপর হাতও তুলে ফেলেছি। কি হয়েছে আমার? এতো অশান্ত কেন হচ্ছি? অভয়, তুই তো আগে এমন ছিলি না। কারোর প্রতি এতো রুড ভাবে রাগও প্রকাশ করতিস না। তোকে আবারও সেই গম্ভীর আর শান্ত অভয় হতে হবে।”
হাঁটা থামিয়ে আশেপাশে অশান্ত চাহনি নিয়ে আবারও বলে…..
–“এখন আমার কি করা উচিত? অবশ্যই ঐশানীর কাছে ক্ষমা চাওয়া আর ওর রাগ ভাঙানো। কিন্তু কি করে ভাঙাবো? ওর কি পছন্দ না পছন্দ তার ব্যাপারে তো আমি কিছুই জানি না।”

ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে ভাবতে হাতে ফোন তুলে নেয় সে। অনিন্দিতাকে মেসেজ করে বলে ঐশীর নম্বর নিতে। অনিন্দিতা ঐশীর নম্বর পাঠাতেই দ্রুত কল করে ঐশীর নম্বরে। নম্বর ওয়েটিংয়ে পেয়ে কেটে দেয় সে। আবারও কল লাগাতেই সাথে সাথে কল রিসিভড হয়।
–“আপনি কে মশাই? বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঠিকঠাক প্রেমালাপও করতে পারব না নাকি আপনার রং নম্বরের জন্য?”
ঐশীর এমন কথাবার্তা শুনে আগে হালকা কেশে নেয় অভয়। গম্ভীর কন্ঠে বলে…..
–“আমি তোমার অভয় ভাইয়া, ঐশী।”

বেশ কিছুক্ষণ ওপাশটা নিরব থাকে। হয়ত মেয়েটা ভয় পেয়েছে। অভয় নিরবতা দেখে নিজে থেকে বলে….
–“হ্যালো, ঐশী? শুনতে পাচ্ছো?”
–“হ্যাঁ ভাইয়া। সরি। কিছু মনে করবেন না ভাইয়া। আই এম সো সরি হ্যাঁ?”
–“আচ্ছা ওসব বাদ দাও। কেমন আছো?”
–“জ্বি ভালো। আপনি? হঠাৎ আমার নম্বরে কল করলেন। কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি আপুকে নিয়ে? হলেও কি করবেন বলুন। আফটার ওল ও আপনার বউ কিনা। আমি জানি ওর মাথায় একটুআধটু তার ছিঁড়া। মানবতার খাতিরে পাগলাগারদে পাঠানো হয়নি।” (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

অভয় ঐশীর কথায় হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। যেমন মেয়ে তার তেমন বোন। দুজনেরই বাড়তি কথা বলার স্বভাব রয়েছে। নিজেকে সামলে অভয় বলে…..
–“আসলে সেরকম কিছু না। একটা কথা জানার ছিল তোমার থেকে।”
–“হ্যাঁ বলুন না কি কথা?”
অভয় হালকা সঙ্কোচবোধ করে বলে…..
–“তোমার আপু কোন জিনিস সবথেকে বেশি পছন্দ করে? যেটা দেখলে তোমার আপু সব জরুরি কাজ ফেলে আসতে রাজি হবে? খুশিতে লুটিয়ে পড়বে?”
ঐশী ওপাশ থেকে অনেক ভেবে উত্তর পেয়ে লাফিয়ে বলে…..
–“হাওয়াই মিঠাই! ওটা দেখলে আপু যেখানেই থাকুক বা যেই প্রান্তেই থাকুক ছুটে আসবে।”

ঐশানীর পছন্দের কথা শুনে বড্ড হাসি পায় অভয়ের। হালকা করে হেসে বলে…..
–“হোয়াট? হাওয়াই মিঠাই?”
–“হুমম। আমি এটাই জানি। কিন্তু ভাইয়া কি হয়েছে বলুন তো? হঠাৎ আপুর পছন্দের কথা জানতে চাইছেন?”
–“না কিছু না। এখন রাখছি। এখন যত ইচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো। তোমার এই ভাইয়া ডিস্টার্ব করবে না।”
বলে হেসে ফোন কেটে দেয় অভয়। সবে স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠেছে তাতেই প্রেম করা শুরু করেছে। সব ভাবনা বাদ দিয়ে নতুন ভাবনার উদয় হয় অভয়ের।
–“এখন এই হাওয়াই মিঠাই কোথায় পাবো?”

অভয়ের এই অনুভূতি, তার এই পরিবর্তন, তার ঐশানীর প্রতি ভাবভঙ্গি পাল্টে যাওয়া সবটার পেছনে একজন বিশেষ মানুষের হাত আছে। মানুষটা অভয়কে বুঝিয়েছে একরাতেই অভয়ের জীবনে ঐশানীর গুরুত্ব। তার জীবনে ঐশানীর স্থান কোথায় আর সায়রার স্থান কোথায়। সেসব কিছু অভয়কে একরাতেই বুঝিয়ে দিয়েছে অনিন্দিতা। হয়ত ও না থাকলে এসব বুঝতে ওর অনেকটা দেরি হয়ে যেতো। তখন হয়ত কিছু করা বা বলার মতো অবস্থা থাকতও না।

গতকাল রাতে……
ঘুম যেন অভয়ের চোখে ধরা দিতে চাইছে না। একবার এপাশ আর একবার ওপাশ ফিরছে বার বার। আবারও ঐশানীর দিকে ঘুরে স্থির হয়ে শুয়ে থাকল অভয়। ঐশানী ওপাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। ওর পিঠ টা শুধু চোখে পড়ছে অভয়ের। আর মাথার এক গোছা এলোমেলো চুল! মেয়েটা ঘুমের মাঝেও এপাশ ফিরে তাকায় না। এটা ভেবে বেশ রাগ হয় অভয়ের। সে কি এতোই খারাপ দেখতে যে ও এপাশ ফিরেও ঘুমাতে চায় না? মাথায় আরো নানানরকম কথা ভাসতে থাকে অভয়ের। যেমন, বিকেল বেলা ঐশানীর বলা কথা। আবার একটু আগে বলা কথাগুলো। ঐশানী কি সত্যি অন্যকাউকে পেলে বিয়ে করে নেবে?

ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে। মাথার চুল দুহাত দিয়ে পাগলের মতো আউলিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে…..
–“কেন করবে না ও বিয়ে? অবশ্যই করবে। তুই যদি সায়রাকে বিয়ে করতে চাস তাহলে ও কেন করতে পারবে না? কিন্তু তোর কি হবে অভয়? পাশে এই চঞ্চল মেয়েটির বদলে তখন সায়রা ঘুমাবে। তখন?”
অভয় এক মূহুর্তের জন্য ঐশানীর বদলে সায়রাকে নিজের পাশে কল্পনা করতেই অস্বস্তি হতে শুরু করে তার। ঘামতে থাকে দরদর করে। এসব আকাশকুসুম ভাবতে ভাবতে একসময় ঠিকঠাক নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে যায় ওর। খোলা হাওয়ার বড্ড অভাব এখানে। আর এখন ছাঁদ ছাড়া খোলা হাওয়া পাওয়া দুষ্কর। বেড থেকে নেমে একবার ঐশানীর দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছাঁদের দিকে যায় সে।

ছাঁদে সোনালী চাঁদ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে অভয়। চাঁদেও অসংখ্য দাগ দেখতে পায় সে। একেই বোধহয় কলঙ্ক বলে! মাথা ঝাঁকিয়ে বলে…..
–“আমার কি করা উচিত? এমন হচ্ছে কেন? কে বলে দেবে আমায় আমার কি করা উচিত?”
–“তুই কি ঐশানী ভাবির ব্যাপারে ভাবছিস ভাইয়া?”
এই অসময় অনিন্দিতার গলা চিনে চমকে পেছনে তাকায় অভয়। চাঁদের আবছা আলোয় অনিন্দিতার গোলগাল মুখটা চিনতে ভুল হয় না অভয়ের। অনিন্দিতার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে পাল্টা প্রশ্ন করে….
–“তুই এতো রাতে এখানে?”

–“এই একই প্রশ্ন আমি তোকেও করতে পারি ভাইয়া। আমি তো তোর পিছুপিছু এসেছি। আমি এসাইনমেন্ট করছিলাম। করা শেষে পানি খেতে রুমের বাইরে এসে তোকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যেতে দেখি। এতো রাতে ছাঁদে কেন এলি সেটা দেখতেই এলাম।”
অভয় ছোট্ট করে ‘ওহ’ বলে আবারও আকাশ পানে চেয়ে চুপ করে রইল। অভয়ের ভাবভঙ্গি অনিন্দিতার কেমন জানি লাগল। তার ভাই তো এমন নয়। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব দ্বন্দ্বে ভুগছে। অভয় তার থেকে অনেক বছরের বড় হলেও সে যতটুকু বেশি বুঝতে সক্ষম হয় অভয় ততটুকু বুঝতে পারে না। এক কথায় নিজের বোঝার ক্ষমতার থেকে বেশি ইগো আর জেদকে বেশি প্রধান্য দিতে ভালোবাসে অভয়।

অনিন্দিতা এগিয়ে এসে তার ভাইয়ার পাশে বসে। কিছুটা নরম সুরে বলে….
–“কি হয়েছে তোর? কোনো সমস্যা? আমায় বলতে পারিস।”
অভয় মলিন হেসে জবাব দেয়…..
–“সমস্যার কথা বললে কি সমাধান বের করে দিতে পারবি? আমি এমন সমস্যায় ভুগছি যে যেটা শুনলো তোর হাসি পাবে আর তাচ্ছিল্য করবি।”
–“উঁহু! ভুল বুঝিস না আমাকে ভাইয়া। তোর বোন তোকে সমস্যায় দেখে মোটেও হাসে না। আমাকে বল না প্লিজ। তুই ঐশানী ভাবিকে নিয়ে ভাবছিস তাই না?”

অভয় চোখভরা বিস্ময় নিয়ে তাকায় অনিন্দিতার দিকে। অনিন্দিতা মিটমিটিয়ে হাসছে।
–“তুই কি করে জানলি?”
–“আফটার ওল বেহেনা কিসকা হায়?”
অভয় হালকা হেসে নেয়। আবারও মুখটা মলিন হয়ে আসে তার। মাথা নাড়িয়ে বলে…..
–“আমি জানি না আমার কি হচ্ছে। অশান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে গলায় কাটা বিঁধে আছে। কোনো কিছুতে মন শান্ত হচ্ছে না।”
–“বিকেলবেলা ভাবি যখন বলেছিল সে অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারে ভবিষ্যতে তখন থেকেই তোর এমন লাগছে তাই না?”

অনিন্দিতার এই কথায় চোখ বড় করে তাকায় অভয়। সে কি করে জানল ঐশানী এসব বলেছিল? অভিভূত হয়ে বলেই ফেলল….
–“তু…তুই কিভাবে জানলি??”
–“হাহাহাহা। আমি তখন বেলকনিতে বসে ছিলাম। আর বেলকনিটা তো বাগানের সামনেই। সবটা দেখতে পেয়েছি। আর ভাবির ওই কথা বলার পর তোর রিয়েকশনও আমার চোখ এড়ায়নি।”
অভয় নির্বাক হয়ে বসে থাকে। মাথাটা নিচু হয়ে শুধু নিরব শ্রোতা সেজে।
–“জেলাস ফিলিং??”
অনিন্দিতার কথায় শূন্য দৃষ্টিতে তাকায় অভয়। দম ফেলে বলে…..
–“হোয়াট? ওর জন্য জেলাস? নেভার।”

–“উফফ….ইগো আর জেদ কেটে ফেলে বল। খুব খারাপ লেগেছে না?”
অভয় আর লুকাতে পারে না। চোখজোড়া অসহায় নয়নে তাকিয়ে হালকা মাথা দুলায়। তা দেখে অনিন্দিতা আলতো হেসে বলে….
–“এটা তো হওয়ারই ছিল। নিয়তিকে হারাবে কে? আচ্ছা ওই একই কথা যদি এখন সায়রা বলে তোর কি এতোটাই রাগ হবে? খারাপ লাগবে? তোর রিয়েকশন কি হবে?”
–“ও তো মাঝে মাঝেই এমন কথা মজা করে বলতো। আমিও হেসে উড়িয়ে দিতাম।”
–“দ্যাটস দ্যা পয়েন্ট। ভালোবাসার আরেক রুপ জানিস? হিংসা। তুই কারোর সাথে নিজের ভালোবাসা শেয়ার করতে চাইবি না। এটা তোর কাছে বিষের মতো মনে হবে।”

–“তার মানে তুই বলতে চাইছিস আমি ঐশানীকে ভালোবাসি?”
হতভম্ব হয়ে বলে অভয়। অনিন্দিতা কারণ ছাড়াই বলে দিল….
–“অভিয়েসলি। এখনো ডাউট আছে?”
–“এটা হতেই পারে না। আমি ওকে কি করে? আমি তো সায়রাকে….. ”
বলতে বলতে থেমে যায় অভয়। সায়রাকে ভালোবাসি কথাটি আর পরিপূর্ণ হয়ে বের হয় না। কন্ঠস্বর কাঁপতে থাকে তার। অনিন্দিতা তার এই দশা দেখে ভ্রু উঁচিয়ে বলে…..
–“কথা আর বের হচ্ছে না? হবেও না। যাকে ভালোবাসা যায় না তাকে ভালোবাসি বলতেও হৃদয় বারণ করে। কন্ঠস্বর কাঁপে। একবার আমার কথা শোন। তুই ঐশানীকে ভালোবাসিস এই কথা জোরে বল।”

অভয় চোখ খিঁচে ঐশানীকে স্মরণ করে এক নিশ্বাসে বলে ফেলে…..
–“আমি ঐশানীকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।”
বলেই নিজের ওপর চমকে গিয়ে চোখ খোলে অভয়। নিজেকে প্রশ্ন করে….
–“এটা আমি বললাম?”
অনিন্দিতা অট্টহাসি হাসতে শুরু করে। হাসি কোনোমতে থামিয়ে বলে….
–“তুই চোখ বন্ধ কর। ধরে নে ভাবির সঙ্গে তোর বিচ্ছেদ হয়েছে। তুই সায়রাকে বিয়ে করবি। ওদিকে ভাবির ফ্যামিলি বসে থাকবে না। ভাবির বয়স কম। ওকেও তো বিয়ে দেবে তাই না? তোর তখন কেমন লাগবে?”

চোখ বন্ধ করারও প্রয়োজন হয় না অভয়ের। সঙ্গে সঙ্গে আগুনের লাভার মতো জ্বলে ওঠে সে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অতি মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
–“ও এটা কি করে করতে পারে? কখনোই না। আমি ওকে করতে দেব না। ও তো আমার সঙ্গে বিয়ে করেছে না? তাহলে কি করে অন্য কারো সাথে বিয়েতে বসতে পারে?”
অনিন্দিতা নিজেও আশ্চর্য হয়ে যায়। তার ভাইয়া ঐশানীর জন্য এতোটা ডেস্পারেট? তাকে আশ্বস্ত করে বলে….
–“শান্ত হ ভাইয়া। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম। আমি বলাতেই তোর এতো রাগ। যখন সামনা-সামনি এই ঘটনা ঘটবে সেদিন তুই চেয়েও কিন্তু কিছু করতে পারবি না।”

অভয় অনেকটাই বুঝে যায়। এই মাত্র কয়েকদিনে ঐশানী ওর লাইফের জন্য কতটা ইম্পরট্যান্ট হয়ে উঠেছে সে বুঝতে পারছে। হয়ত ওর লাইফটাই এখন ঐশানী হয়ে উঠেছে। ঢক গিলে নেয় সে। অনিন্দিতা আবার বলে…..
–“কিন্তু সায়রা যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবে তোর কেমন লাগবে?”
অভয় কিছুক্ষণ সায়রার জন্য ভাবে। চেয়েও যেন খারাপ লাগা আনতে পারছে না। চেয়েও উত্তেজিত হতে পারছে না।
–“জানি না। আমার মাঝে কোনো খারাপ লাগা সৃষ্টি হচ্ছে না।”

–“এটাই মোহ আর ভালোবাসার পার্থক্য। এখনো সময় আছে ভাইয়া। বিয়ের পরেও স্ত্রী এর সাথে ভালোবাসা হয়। এটাকে আসল ভালোবাসা বলে। মোহের দিকে হাত বাড়াস না। জেদ কে জিততে দিস না। আর যদি ভাবিস তুই আমার চ্যালেঞ্জের জন্য স্বীকার করবি না তাহলে যাহ তুলে নিলাম আমার চ্যালেঞ্জ।”
অভয় হঠাৎ করেই নিরব হয়ে যায়। যেন সে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সামান্য বিকেলের ঘটনা তাকে এতোকিছু বুঝিয়ে দেবে তা তার ভাবনার ঊর্ধ্বে ছিল। মিনিট দশেক চুপচাপ কেটে যায় তাদের। অভয় মুখ খুলে বলে……

–“কিন্তু তোর কি মনে হয় না? আমাদের আরেকটু সময় দেওয়া উচিত? ঐশানী এখনো আমার সাথে অ্যাটাচড হতে চায় না। আরেকটু ভাবা উচিত সেটা কি মনে হয় না?”
–“না হয় না। হয়ত কথায় আছে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। কিন্তু এতোই ভাবোন্মাদ হয়ে পড়িস না যে জীবন থেকে সুযোগ হারিয়ে যায়। জীবন বার বার সুযোগ দেবে না। মনে রাখিস।”
অভয়কে একা থাকতে দিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে আসে অনিন্দিতা। সে ছেড়ে দিয়েছে বাকিটা তার ভাইয়ের হাতে।

বর্তমানে…..
সন্ধ্যায় চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে। অন্ধকার গ্রাস করে নিয়েছে সূর্যকে। উঠেছে স্নিগ্ধ একটি চাঁদ। বেলকনির রেলিংয়ে মাথা লাগিয়ে বসে আছে ঐশানী। মনটা ভীষণ খারাপ। আগের মতো খুশি থাকতে পারছে না। সেই রেস্টুরেন্টের ঘটনার পর সবটা যেন পাল্টে গেছে। আর অভয়ের থাপ্পড়ের কথা মনে পড়লে আরো মন খারাপ হয়ে যায় ঐশানীর। তাদের বেলকনিটা বাড়ির পেছন দিকে। এদিকে নানানরকম বড় বড় গাছ। বাতাসে হালকা ঘুমও পাচ্ছে তার। পেছনে অনিন্দিতার কন্ঠে ঘুম ঘুম চোখে পেছন ফিরে তাকায় সে।
–“ভাবি একটু বাইরে যাবে?”

–“হঠাৎ বাইরে কেন? কোনো কাজ আছে?”
অনিন্দিতা মাথা নাড়িয়ে বলে….
–“না আসলে ভাইয়া তোমায় ডাকতে বলল বাইরে।”
অভয়ের কথা শুনে আবারও ঘটনাগুলো মনে পড়ে তার। বেশ শান্ত সুরে বলে….
–“ঘরে এসে যা বলার বলতে বলো না।”
–“আহা! চলো না। তোমায় নাকি বাইরেই যেতে হবো। ভাইয়া জোর গলায় বলেছে।”
মানা করার পরেও অনিন্দিতার জোরাজুরিতে আর পারল না ঐশানী। কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে যায় বাড়ির বাইরে। কি কারণে লোকটা এমন করছে কে জানে?

বাইরে পা রাখতেই অভয়কে দেখতে পায় ঐশানী। বাড়ির ওপরে লাগানো সোডিয়াম আলোয় অভয়ের ক্লান্তিমাখা মুখ ভেসে ওঠে। গলা শুকিয়ে আসে ঐশানীর। অভয় ক্লান্তি চাহনি আর মলিন হাসি নিয়ে দুটো হাত দিয়ে ধরে আছে হাওয়াই মিঠাই এর লেগে থাকা বড় লাঠির ওপর। ঐশানী অবাক নয়নে তাকায় সেটা দেখে। আশ্চর্য হয়ে বলে….
–“এসব….…!!”
–“প্রায় তিনঘণ্টা ধরে খুঁজে এনেছি। তোমার জন্য।”

চলবে…..

[বি.দ্র. অনেকে প্রশ্ন করেছেন যে অভয় যদি সত্যি জানতো ঐশানী রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেছে তাহলে ও সায়রা ভেবে জড়িয়ে ধরল কেন আর সায়রা ভেবে আরো অনেক কথা বলল কেন? এটার উত্তর হচ্ছে অনেকে গল্পে পড়েছেন অভয় সেই সময় প্রচন্ড রেগে ছিল। সেকারণে বলেছে। সে দেখতে চেয়েছে ঐশানী কি বলে! আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন।
আর হ্যাঁ গল্পটা কি বোরিং লাগছে? দ্রুত শেষ করে দেব? নাকি ধীরেসুস্থেই এগিয়ে যাব যেমনটা ভেবে রেখেছি। আপনাদের মক্তব্যের ওপর বিষয়টা নির্ভর করবে। অনেকে ভেবেছেন অভয় এতো দ্রুত পাল্টি খেয়েছে মানে তাড়াতাড়ি সব ঘটেছে। সেটাও নয়। এসবের মূলে অনিন্দিতা রয়েছে। বুঝতে পেরেছেন আশা করি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here