বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২৮
#আনিশা_সাবিহা
বাস স্ট্যান্ডে এসেছে সবাই। রোদকে বারবার আড়াল করার চেষ্টা করছে অনিন্দিতা। বিকেল হলেও কড়া রোদ যেন পিছু ছাড়বার নয়। ভ্রুযুগল বিরক্তে কুঁচকে গেছে তার। এমন সময় তার মাথার ওপরে ছাতার নিয়ে দাঁড়াল কেউ। ছাতার মালিক কে দেখতে ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছন বেঁকে তাকায় অনিন্দিতা। ইশানকে দেখে তার চোখমুখের বিরক্তির ছাপ দূর হয়ে যায়। গম্ভীর হয়ে আসে চেহারা। ইশান এসেছে সবাইকে পৌঁছে দিতে। অনিন্দিতা সেটাই জানে। হালকা কেশে সে গম্ভীরতার সাথে বলে……
–“লাগবে না আমার ছাতা। তুমি তোমার কাছে রাখো।”
–“তুই কি মনে করিস নিজেকে? আমি তোর জন্য ছাতা ধরে আছি? মা বলেছে তোরা যতক্ষণ আমাদের গ্রাম ও জেলার মধ্যে আছিস ততক্ষণ যেন তোদের কোনো সমস্যা না হয়। হলে তো আমাদেরই বদনাম হবে না? সেকারণে ছাতাটা ধরে আছি। নয়ত তোর মতো ছাগল ছানার মাথার ওপর ছাতা ধরতে বয়েই গেছে আমার।”
–“হয়েছে তোমার? এখন চুপ করো। মাথাব্যাথা ধরে যাবে তোমার কথাবার্তা শুনলে।”
বলেই অন্যদিকে তাকায় অনিন্দিতা। কয়েকদিন ধরে ইশান বেশ খেয়াল করছে অনিন্দিতা সকলের সাথে ভালো করে কথা বললেও তার সাথে রেগে রেগে কথা বলে! মেয়েটার কোন পাকা ধানে সে মই দিয়েছে কে জানে!
অভয় বড় বড় লাগেজ বাসের ভিতরে রেখে সবাইকে বাসে উঠতে বলে। ঐশানী সহ সকলে বাসে উঠে পড়ে। অনিন্দিতা হনহনিয়ে বাসে উঠে পড়ে সবার আগেই। নিজের সিট দেখে বসে পড়ে। বাস ছাড়বে কিছুক্ষণের মাঝেই। চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে বসে থাকে অনিন্দিতা। অনুভব করে পাশে এসে কেউ একজন বসল। হবে হয়ত কোনো তার মতোই প্যাসেঞ্জার। জানালার দিকে মাথা এলিয়ে দিল সে। বাস ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে। অনিন্দিতা হালকা জানালা দিয়ে মাথা বের করে ইশানকে দেখার চেষ্টা করছে। ও কি আছে? নাকি চলে গেছে? এখন কেন যেন তার মনে হচ্ছে সে নিজের অনুভূতি না জানিয়ে ভুলই করেছে।
–“আমাকে খুঁজছিস নাকি? আমাকে খুঁজতে খুঁজতে তোর মাথা কেটে পড়ে নিচে।”
চমকে কেঁপে উঠে নিজের পাশের সিটে তাকায় অনিন্দিতা। ইশান হাসি ঝুলিয়ে রেখে তারই দিকে তাকিয়ে আছে।
–“তু….তুমি এখানে? তোমার না বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা? আমাদের সাথে যাচ্ছো!”
–“কেন যেতে মানা করছিস?” (ভ্রু কুঁচকে)
–“আসলে তা নয়। তুমি আমাদের সাথে যাবে সেটা তো জানতাম না।”
বিস্ময়ের সঙ্গে বলে ওঠে অনিন্দিতা। এক মূহুর্তের জন্য পাশে থাকা মানুষটাকে স্বপ্নের মতোই মনে হলো তার। ইশান তাকে বিদ্রুপ করে বিদ্রুপাত্মক কন্ঠে বলল…..
–“জানবি কি করে? আমার খোঁজ খবর নেওয়ার তোর সময় আছে? একদিন দেখা যাবে আমি কে তাও চিনতে পারবি না। আমি তো ঢাকায় যাচ্ছি একটা কাজে। ইন্টারভিউ আছে চাকরির। ওখানে চাকরি হয়ে গেলে শিফট হয়ে যাব কোনো ফ্লাটে।”
অনিন্দিতা গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে। একদিকে তার আনন্দই হচ্ছে। মানুষটা তার চোখের সামনে বেশ কয়েকদিন থাকবে। এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে?
বাসে মাস্ক পড়ে বসে রয়েছে এক দম্পতি। দুজন যেন দুজনের চরম শত্রু। দুজন দুজনের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন দুজনে যেকোনো সময় যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। মাঝে মাঝে মেয়েটা মুখ থেকে অদ্ভুত শব্দ বের করে রাগ প্রকাশ করছে। এই অদ্ভুত দম্পতি আর কেউ নয় ঐশানী ও অভয়। ঐশানীর ফোলা নাক আর অভয়ের ফোলা গালের জন্য মাস্ক পড়ে বের হওয়া ছাড়া বিকল্প পদ্ধতি পায়নি দুজন। অভয় একসময় বিড়বিড় করতে করতে হিসহিসিয়ে বলে…..
–“সব তোমার জন্য হয়েছে। এভাবে শোধ নেয় কেউ? হৃদয়হীন মেয়ে।”
ঐশানী তা শুনে ঠাট্টা করে অদ্ভুত কন্ঠস্বরে ব্যঙ্গ করে বলে….
–“ওহ হো! সব আমার দোষ! আমি হৃদয়হীন? আর নিজে? নিজে যে আমার নাক দেখে মিটমিটিয়ে হাসছিলেন তখন? যা হয়েছে বেশ হয়েছে। নিজেই একটা হৃদয়হীন লোক। আপনাকে আরো কয়েকটা মৌমাছি হুঁল ফুটিয়ে দিলে বেশ হতো।”
–“আরো একবার হুঁল ফুটিয়ে দিতে এসেছিল তো মৌমাছি। তুমিই তো মৌমাছিকে কাজটা করতে দিলে না। কেন দিলে না?”
অভয়ের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ঐশানী। একটু ভেবে উত্তর দেয়…..
–“ওই এ…এমনিই। আমি আপনার মতো নিষ্ঠুর তো নই। দয়াময়ী, মায়াময়ী আমি।”
–“মোটেও না। এর উত্তরটা আমি জানি। বলব?”
ঐশানীর কানের কাছে এসে অতি শান্ত ও শীতল কন্ঠে কথাটি বলে অভয়। ঐশানী হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে শুরু করে অভয় কি ভাবছে তার সম্পর্কে? অভয় হাফ ছেড়ে বলে…..
–“কারণ আমার কষ্টে তুমি কষ্ট পাও। আমার আঘাত লাগলে যন্ত্রণা তুমি পাবে। তুমি এতোটাই সেলফিশ যে তোমার যন্ত্রণা লাগবে সেকারণে তুমি আমায় আঘাত পেতে দেখতে পারো না। ইউ আর সো সেলফিশ ঐশানী।”
–“যত্তসব বাজে কথা।”
জানালার ওপর হাত রেখে কনুই বের করে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে ঐশানী।
অভয়ও ঐশানীর সোজাসুজি মুখ রেখে বাইরের দিকে পর্যবেক্ষণ করে বলে…..
–“ইউ মিন টু সে আমার আঘাত লাগলে তোমার কিছুই হবে না।”
–“না।”
ঐশানী যে অতিকষ্টে নিজের কন্ঠস্বর থেকে ‘না’ শব্দটি বের করল তা বুঝতেই পারল অভয়। ফট করে বলল….
–“মরে গেলেও না?”
দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে অভয়ের দিকে তাকায় ঐশানী। সরাসরি ডান হাত অভয়ের শার্টের কলারে হাত রেখে বলে….
–“আপনি….. আপনি একটা বাজে লোক!”
অভয় অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটা কতটা ভয়ানক! কত সহজে তার কলারে হাত দিয়ে ঝাঁকাতে লাগল যেন আস্ত একটা গুন্ডি! ঐশানী কলার থেকে হাত সরিয়ে চোখও সরিয়ে নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যদিকে তাকায়। অভয় ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে….
–“আমি এমন কিছুই করিনি তোমার সাথে যে ‘বাজে লোক’ উপাধি পাবো। এমন কিছু বলিও নি। কি বলেছি বলো?”
–“আপনি কি চুপ করবেন?”
ঐশানী প্রচন্ড রেগে আগুন হয়ে পড়েছে। অভয় ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল….
–“ওকে দেন! চুপ।”
ঐশানী ঠান্ডা মাথায় বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে।
বাসে বমি করতে করতে অনিন্দিতার অবস্থা বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে। এখনো দুই ঘন্টাও হয়নি বাসে ওঠার। তার মাঝেই চার বার বমি করে ফেলেছে সে। অবশেষে দুর্বল হয়ে জানালায় মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে ক্লান্তি নিয়ে বসে থাকে সে। ইশান তার কাঁধে হাত রেখে ডাকতেই সে ক্লান্তির আবেশে বলে….
–“ইশান ভাইয়া, আমি এখন ঝগড়া করার মুডে নেই। একা ছাড়ো।”
–“আরে গাঁধি আমাকে কি নিজের মতো ঝগড়ুটেই মনে করিস? তাকিয়ে দেখবি তো একবার?”
ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই অনিন্দিতার চোখে সামনে আবিষ্কার হয় একটা পানির বোতল। তা অনিন্দিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ইশান বলল….
–“লেবুর পানি খা। ভালো লাগবে।”
–“তোমার তো বমি করার অভ্যেস নেই। তাহলে লেবু পানি আনলে কেন?”
–“আমি জানি আমার পাশে তো একটা মৃগী রোগী বসবে। কারণ আমাকে তো আর কেউ ঠাঁই দেবে না। শেষমেশ তোর পাশেই বসতে হবে। এখন পানিটা খা। নয়ত দেখা যাবে বমি করে আমার জামা মাখিয়ে ফেললি।”
অনিন্দিতা অভিভূত হয়ে কিছুক্ষণ ধরে ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর অন্যদিকে ঘুরে ইশানের অজান্তে মুচকি হাসে সে। তার ভীষণ ভালো লেগেছে। কারণ একটাই। অনিন্দিতা জানে ইশান তাকে কেয়ার করছে। আর মানুষ যারতার প্রতি কেয়ারিং হয় না। কিছু বিশেষ মানুষ থাকে। সেইসবের মানুষের প্রতি আপনা-আপনি যত্নশীল হয়ে ওঠা যায়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সন্ধ্যার আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কালো ঘন মেঘ। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে মাঝে। বর্ষার সময়। ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বাসে অনেকটায় পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে সবাই। কিছুক্ষণ আগেই রেস্ট নিয়ে আবারও বাস চলতে শুরু করল। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল একসময়। পানির ঝাপটা জানালা দিয়ে আসতেই চোখ বুঁজে ঐশানীর হাত নিজের বুকে নিয়ে থাকা অভয় চোখ খুলে সোজা হয়ে বসল। ঐশানীরও ঘুমটা যেন পরিপূর্ণ হলো না। মুখে বৃষ্টির পানি পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠতে উঠতে বলল….
–“বাসের ছাঁদ ফুটো হয়ে গেছে। বাসের ছাঁদ ভেঙে পড়বে!”
চোখ খুলে আশেপাশে তাকাতেই সবটা স্বাভাবিক দেখে জানালার দিকে তাক করে তাকালো ঐশানী। বাইরের পরিবেশটা অসাধারণ! কিন্তু পানির ঝাপটা চোখেমুখে পড়ায় বিরক্তির ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করতে লাগল অভয়। ঐশানী কড়া গলায় বলল….
–“একদম বন্ধ করবেন না জানালা! আমি বৃষ্টি দেখব।”
–“সেটা তো জানালা বন্ধ করেও করা যাবে ঐশানী। এভাবে ভিজলে তো ঠান্ডা লাগবে তোমার। আর শ্বাশুড়ি মায়ের থেকে শুনেছি তোমার অল্পতেই ঠান্ডা লাগে।”
–“আপনিও যদি এখন জ্ঞান দিতে শুরু করেন মায়ের মতো তাহলে আপনাকে মা বলে ডাকব।”
অভয় ক্ষেপে উঠে ক্ষিপ্ত গলায় বলে….
–“হোয়াট রাবিশ!!”
–“আমার মুখ থেকে মা না শুনতে চাইলে চুপ থাকুন।”
অভয়ের কথায় কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে মাথা জানালা দিয়ে বের করে বৃষ্টি ভরা পরিবেশে শ্বাস নেয় ঐশানী। আনমনে বলে….
–“কি সুন্দর গন্ধ বৃষ্টির!”
তা শুনে অভয় হেসে ঠাট্টা করে বলে….
–“অদ্ভুত তোমার কথা! বৃষ্টির গন্ধ আছে?”
–“হু আছে। আপনার মতো নিরামিষ লোকের বোঝার ক্ষমতা নেই। যারা বৃষ্টিপ্রেমী তারাই এই গন্ধ পায়। বৃষ্টির অদ্ভুত মাতাল করা গন্ধ রয়েছে।”
–“যেমন তোমার শরীরে এক মাতাল করা ঘ্রাণ আছে সেরকম?”
ঐশানী লজ্জায় একাকার হয়ে হকচকিয়ে তাকায়। কি বলে এসব লোকটা? অকপট ভাবে লজ্জায় ঢোক গিলতে গিলতে মিইয়ে যায় সে। অভয় বাঁকা হেসে বাইরে তাকায় একবার আর একবার তার স্ত্রীর দিকে। হালকা ভিজে চুল গালে লেপ্টে থাকা দৃশ্যটা তার কাছে বড়ই মোহনীয় লাগল!
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাতটা বেশ গভীর হয়। প্রায় সাড়ে দশটা বেজে যায়। সকলে ক্লান্ত। কারো শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই যেন। সব থেকে ক্লান্ত ঐশানী। তার পায়ের ধাপ ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে। তার এই অবস্থা দেখে মিসেস. তনয়া নিজ হাতে ঐশানীকে খাইয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেন।
সকলেই বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরেছিল। ঐশানীও তাই। বরণ আরো বেশি। একটা শাওয়ার নিলে মন্দ হয় না। একেবারে শাওয়ার নিয়ে শোয়ার জন্য আসে ঐশানী। ভিজে চুল নিয়ে এসে বেডে শুয়ে পড়ে ঐশানী। চুল শুকিয়ে নেওয়ার মতো শক্তি ওর আর নেই। পাশেই উপুড় হয়ে আছে অভয়। হয়ত ঘুমিয়েও পড়েছে।
একদম কিনারায় শুয়ে বালিশ চেপে নিজেও চোখ বন্ধ করে ঐশানী। কিছুক্ষণ পরই নিজের ঘাড়ে এক তপ্ত নিঃশ্বাস পেয়ে শিহরণ বয়ে যায় শরীরে। তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে দুটো হাত। তড়তড় করে ঘামতে শুরু করে সে। তার বুঝতে বিন্দুমাত্র সময় লাগে না যে অভয় ঘুমায়নি। অস্বস্তি নিয়ে বলে….
–“কি হচ্ছেটা কি? সরে ঘুমান। এটা গ্রামের খাটের মতো ছোট না যে চিপকে ঘুমাতে হবে।”
–“তাতে কি? একবার যখন একে ওপরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়েছি তখন সারাজীবন এভাবে ঘুমাতে বাঁধা কীসের?”
–“আ…আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে আমার অস্বস্তি হয়।”
–“তবে অভ্যেস করে নাও।”
ঐশানী চেয়েও পারে না অভয়কে সরাতে। তার মনটা সায়ও দেয় না। থাক না কিছু সুন্দর মূহুর্ত! তৈরি হক কিছুটা কাছাকাছি আসার গল্প।
সকাল সকাল অভয়ের অফিসে যাবার পর কোথাও যাবার জন্য তৈরি হয়ে নেয় ঐশানী। গায়ে ওড়না জড়িয়ে নিচে নেমে আসে সে। নিচে মিসেস. তনয়া বসে বসে রেনুর সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। যত আজগুবি কথা রেনুর সাথে করে উনি স্বস্তি পান। ঐশানীকে দেখে কথা থামিয়ে উনি প্রশ্ন করে উঠলেন….
–“কোথাও যাচ্ছো ঐশানী?”
–“হ্যাঁ আম্মু, আসলে আমার একটা বান্ধবী কল করেছিল। আমাদের কলেজে পরিক্ষা হবে কয়েকদিন পর। অনেকদিন কলেজ এটেন্ড করিনি। আজ আমাদের এডমিট কার্ড দেওয়ার কথা। সেটা নিতেই যাচ্ছি।”
–“অভয় যাওয়ার আগে বলতে পারতে। ও পৌঁছে দিতো।”
–“না না! তার কোনো দরকার নেই। উনার কাজ আছে তো। আমি একাই যেতে পারব। আমার একটু দেরিও হতে পারে। চিন্তা করবেন না।”
মিসেস. তনয়া হাসি মুখে বলেন…..
–“ঠিক আছে। সাবধানে যেও।”
ঐশানীও হেসে বেরিয়ে আসে। অটো ধরে কলেজের দিকে যায় সে।
দুপুর হবার পরেও ঐশানীও কোনো খবর নেই। মিসেস. তনয়া চিন্তায় পড়ে গেলেন। ঐশানী বলেছিল দেরি হতে পারে। কিন্তু এতোটা দেরি হবে ভাবেনি সে। বসে বসে চিন্তা করতে করতে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। অনিন্দিতা তার মায়ের মুখ থেকে কথাটা শুনে বেশ চিন্তিত। খাওয়াদাওয়ার সময় হয়ে এলো। তবুও মেয়েটি আসার নাম নেই। অনিন্দিতা ফোন দিয়ে ঐশানীর নম্বর বন্ধ পেয়েছে। সেকারণে চিন্তা আরো বেড়ে গেল ওর। হটকারিতায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল সকলে। বাড়িতে ইশানও নেই। সে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছে।
–“মা, তুমি একবার আমায় বলবে না? তাহলে আমিও ভাবির সাথে যেতাম।”
উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠে অনিন্দিতা। মিসেস. তনয়া উদাসীনতার সাথে বলেন….
–“গল্প করতে করতে এতো খেয়াল করিনি। আসলেই ভুল হয়েছে। আজকালকার যুগ ভালো নয়। মেয়েটার জন্য মনটা হাসফাস করছে আমার রে অনি!”
–“ভাইয়াকে কি খবর টা জানাবো?”
–“জানি না। শুধু ঐশানীর একটা খবর পেলেই চলবে আমার।”
মিসেস. তনয়ার সাথে কথাবার্তা বলে পারমিশন নিয়ে অনিন্দিতা বেরিয়ে পড়ে ঐশানীর কলেজের উদ্দেশ্যে। সেখানে কোনো খবর পায় কি না সেটা জানতে যায় অনিন্দিতা। তারও ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর বাড়ি ফিরে অনিন্দিতা। মিসেস. তনয়া ড্রয়িংরুমে পায়চারি করছিলেন। অনিন্দিতাকে দেখে উনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন। আশেপাশে ঐশানীকে দেখতে না পেয়ে বলেন…..
–“ঐশানী কোথায়? ওকে আনিস নি সাথে?”
অনিন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকে। কাঁপা কাঁপা সুরে বলে…..
–“ওখানে ভাবি নেই মা। ওখানে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ওখান থেকে বেরিয়েছে প্রায় ৩ ঘন্টা!”
–“কি বলছিস? কোথায় গেল মেয়েটা? এখন কি করব? ওর কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
অতি মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে বলেন মিসেস. তনয়া। অনিন্দিতা এর কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। ওর সন্দেহের তীরটা অভয়ের দিকে যাচ্ছে। তার যথেষ্ট কারণ আছে। এমনটা হয়নি তো? যে অভয় সায়রাকে ভুলতেই পারেনি আর সেখান থেকে কষ্ট পেয়ে ঐশানী কোথাও চলে গিয়েছে? আরো নানান চিন্তায় বিপাকে পড়ে যায় অনিন্দিতা।
চলবে…..
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]