বেড নং ৯
৬ষ্ঠ এবং শেষ পর্ব
কেন জানি না আমার মনে হলো আমি এই হাসির শব্দটা খুব ভাল করে চিনি। আমার খুব পরিচিত কেউ। মিনিট পাঁচেক পর আমার চোখের বাঁধনটা খুলে দেওয়া হলো। আমি আমার সামনের সবকিছু ঝাপসা দেখছি। বারবার চোখ টিপে সবটা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেও পারছি না। ঘাড়ের কাছে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে মনে হয় অজ্ঞান হবার ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। আরও কিছুক্ষণ পর আমি সবটা পরিষ্কার দেখতে পেলাম। আমার সামনে হারুন কাকা দাঁড়িয়ে আছে আর হাসছে। আমায় দেখে বলল,
– কেমন লাগছে আদ্রিব স্যার? ভাল আছেন তো?
– হারুন কাকা, তুমি? তুমি এতোসব করেছো? কিন্তু কেন? আমায় বেঁধে রেখেছো কেন?
– একটা কথাও বলবেন না স্যার,, চুপ একদম চুপ। স্যার শুনলে রেগে যাবেন।
– স্যার, তার মানে আপনি একা নন এসবের পিছনে। আপনার স্যার কে? নিশ্চয়ই হাসপাতালের মধ্যের কেউ। রবিন স্যার?
আমার কথা শুনে হারুন কাকা জোরে জোরে হাসল। আমি তাকিয়ে দেখলাম আমি একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে আছি। হাত,পায়ের বাঁধনটা এতোবার খোলার চেষ্টা করেও পারছি না। আমি চিৎকার করে বললাম
– হারুন কাকা, জলিল সাহেব কই? আমার সাথে যে ছিল। কি করেছেন তার সাথে?
– আছে,ঘুমাচ্ছে।
– কি করেছেন তার সাথে? আমার সাথে কেন এমন করছেন? আপনি এই কি লাশটা ফ্রীজে রেখেছেন? আমায় কেন ফাসালেন? আর মেয়েদের চোখ আর ঠোঁট কেন কাটেন? কি পান? ওদের সাথে আপনার কি শত্রুতা?
আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে হারুন কাকা শুধুই হাসছে। একটু পর আমি কারো আসার আওয়াজ পেলাম। ঘরটা অন্ধকার থাকার কারণে আমি তার চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর ঘরে হালকা আলো প্রবেশ করার কারণে আমি লোকটার চেহারা দেখতে পেলাম। আমি পুরো হতবাক এটা আশফাক স্যার। তবে কি হারুন কাকা তাকেই তার স্যার বলে ডেকেছিলেন? সব কিছুর মূলে কি তবে আশফাক স্যার? কিন্তু আশফাক স্যার কি করে এসব করবে? তাকে আমি যতটা জানি একদম শান্তশিষ্ট একটা মানুষ।
আমাকে ফাসিয়ে তার কি লাভ? আর এসব তো কোন মাথা নষ্ট লোকের কাজ যে মানসিক ভাবে অসুস্থ, কিন্তু আশফাক স্যার তো তেমন নয়। আবার হারুন কাকা এসবের সাথে যু্ক্ত থাকলেও তার পক্ষে এতোটা নিখুঁত ভাবে চোখ তুলে নেওয়া আর ঠোঁট কাটা সম্ভব নয়। সব চেয়ে বড় কথা এসব কেন করছে? কি লাভ তাতে?
আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেলাম যখন আশফাক স্যার সবটা বলল,
– আদ্রিব সাহেব, খুব অবাক হচ্ছেন আমাকে এভাবে দেখে তাই না?? আমি জানি আপনার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে তাই না? সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।
প্রথমত আপনার সাথের গুপ্তচরটা পাশের রুমে আরামে ঘুমাচ্ছে কিছুই টের পাবে না। কড়া ডোজ দেওয়া আছে। আপনাকে যে অজ্ঞান করে আনা হয়েছে সেটা বোঝেন এই। আপনি সবটা জেনে নিন আগে। এরপর আরাম করে মরবেন। খুব যত্ন করে আপনার চোখদুটো তুলে নেব এরপর ঠোঁটটা কেটে নেব। ভাবছি আপনার কলিজাটা একটা বের করে দেখব। এতো সাহস কোথা থেকে পেলেন। আপনি কি জানেন আপনার চোখ দুটো নোংরা,বাজে দিকে যায়।
আমি আশফাক স্যারের কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমার গলা শুকিয়ে গেলো। আমি বললাম, ” পানি খাব “। হারুন কাকা আমায় পানি খাইয়ে দিল। আশফাক স্যার আবার বলা বলল,
– বেঁচে ফেরার চেষ্টা করবেন না,চিৎকার করলেও কাজ হবে না, এখানের শব্দ বাইরে যাবে না। এবার আসি আপনার প্রশ্নের জবাবে।
আপনার বাসায় কি করে লাশটা এলো? কেন আপনাকে ফাসালাম তাই না??
আপনি একটু বেশি ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছিলেন লাশগুলোর বিষয়ে, এই লাশটার উপর আরও বেশি। ভাবলাম আপনার এতো আগ্রহটা আরেকটু বাড়াই। আমি এই হারুন কাকাকে দিয়ে আপনার ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আপনার ঘরে গিয়ে লাশটা রেখে এলো। অবশ্য দারোয়ানকে কিছু টাকা দিয়েছিলাম সিসিটিভি ফুটেজটা কিছুটা কেটে দিতে।
আপনি কখন কি করতেন সবটা খেয়াল রাখতাম। বড্ড বেশি আগ্রহ আপনার পুরো ঘটনাটা নিয়ে তাই না? এবার মরে গিয়ে আগ্রহ দেখান। আপনাকে ফাসাতে চাই নি কিন্তু কি করব বলুন? আপনি মর্গে গিয়ে মেয়েটার সাথে এসব না করলে আমি সুযোগ এই পেতাম না আপনাকে ফাসানোর এতো ভাল সু্যোগ।
হারুন কাকাকে আমি অনেক টাকা দিতাম তার সে মর্গ থেকে লাশগুলো এনে দিতো। যদিও বিষয়টা জানার পর একটু কষ্টকর হলেও সিসিটিভি ফুটেজ কিছুটা কেটে গিয়ে নিয়ে আসতাম লাশগুলো। কি করব বলুন তো নেশাটা ছাড়তে পারছি না তো।
– লাশগুলো দিয়ে কি করতেন? চোখ আর ঠোঁট এই কেন কাটতেন? আর বেড নং ৯ এর লাশগুলোই কেন?
– ৯ আমার লাকি নম্বর। আর হাসপাতাল নিয়ে আগেই একটা ভৌতিক গল্প তো আছেই। যদি শুধুমাত্র বেড নম্বর ৯ থেকে লাশ নেই তবে বিষয়টা সবাই ভৌতিক ভাববে। কিন্তু তা হলো না,আপনার জন্য। আপনি আগ বাড়িয়ে পুলিশ কে খবর দেওয়ার কথাটা তুলেই বিপত্তি ঘটালেন। এর আগে ৪ টা লাশ নিলাম কেউ টেরও পেলো না।
– কিন্তু আপনি এসব কেন করেন? আপনি কি মেন্টালি অসুস্থ??
আমার কথা শুনে আশফাক স্যার অট্টহাসি দিলেন। কয়েক পা পিছিয়ে উনি একটা টেবিলের উপর এসে থামলেন। এখান থেকে একটা কাপড় সরিয়ে দিলেন সেখানে পরপর সাজানো ৭ টা মাটির তৈরি স্টাচু। চোখ আর ঠোঁটগুলো যেন একদম জীবন্ত। এসব দেখিয়ে আমায় দিকে তাকিয়ে বলল, ” স্টাচুগুলো সুন্দর না বলুন? চোখ গুলো সব জীবন্ত। ওই যে লাশগুলোর চোখ আর ঠোঁট উপড়ে ফেলতাম এগুলো এখানে ব্যবহার করেছি, সুন্দর না। আমার বেশ ভালই লাগে মেয়েদের এমন মায়াবী চোখগুলো। আর অনবরত কথা বলতে থাকা ঠোঁটগুলো। তাই সেগুলো যত্ন করে কেটে নিতাম। জীবিতদের প্রতি বেশ মায়া হতো।
ভাবছি বাকি ২ টার ব্যবস্থাটা তো হলো, একটা পুরুষের স্টাচু বানাবো। আপনি কিন্তু পারফেক্ট আছেন। বলেই আবার হা হা করে হাসতে শুরু করলেন। আমি বুঝতে পারলাম আশফাক স্যার মানসিকভাবে অসুস্থ।
– আচ্ছা তবে শেষের মেয়েটাকে ধর্ষণ কেন করলেন?
– এটা না করলে আপনাকে পাকা পোক্তভাবে ফাসাতে পারতাম না। এমনিতে ওদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই।
এবার উনি একটা ছুরি নিয়ে আমার দিকে এগোতে লাগলেন। চোখের উপর ছুরিটা ধরে চোখটা উপড়াতে যাবে এমন সময় বাইরে কারা যেন আসার আওয়াজ পেলাম। তৌসিফ স্যার এসে যথাসময়ে আমাকে বাঁচিয়ে নিলেন সেই সাথে আশফাক স্যার আর হারুন কাকাকে হাতে নাতে ধরলেন।
সেলে রিমান্ডে পরে ওরা সব কথা বলে দিলো। আমি তৌসিফ স্যারকে ধন্যবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– আপনি কি করে আমার খোঁজ পেলেন?
– আমার প্রথম থেকেই আশফাক স্যারের উপর সন্দেহ হয়েছিল। আমি যখন ওনার বাসায় যাই সেখানে আমি কিছু মেয়ের পেন্টিং দেখি যেগুলো দেখতে একদম জীবন্ত মনে হয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সে মানুষের শরীরের রক্ত নিয়ে এসব পেন্টিং এ রং করেন। প্রমাণের অভাবে কিছুই করতে পারি নি। আর আপনার সাথে যে গুপ্তচরকে দিয়েছিলা সেটা আমি জেনে বুঝেই করেছি। আমি জানতাম আপনি মুক্তি পেলেই প্রকৃত অপরাধী সামনে আসবে কারণ সে আপনাকে মেরে ফেলে গুম করার চেষ্টা করবে যাতে করে সবাই ভাবে আপনি সব করেছেন। আর গুপ্তচরের সাথে জিপিএস ট্রাক করার যন্ত্র লাগানো ছিল যেটা আপনিও জানেন না। সেটা ট্রাক করেই পেলাম সবটা।
– আর রবিন স্যারের বিষয়টা?
– সে বেচারা নির্দোষ
– আপনি সময় মতো না এলে আমি তো মরেই যেতাম। ধন্যবাদ
– মাই প্লেজার। শুনুন
– হুম স্যার
– এবার বিয়েটা করে নিন, আর ডাক্তারিটা ভাল করে চালিয়ে যান,। তবে হ্যা মর্গ থেকে সাবধান আর স্পেশালি বেড নং ৯ থেকে।
বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো। শেষের কথাটা কেন বলল বুঝলাম না। আসলে কি বেড নম্বর ৯ এ অদ্ভুদ কিছু আছে?? আমি আর কিছু ভাবতে চাই না,, আপন মনে আমার হবু বউ জেনি কে কল করলাম। হ্যাঁ শোনো, ক্যাফে নম্বর ৯ এ চলে আসো। কলটা রেখে আমি মুচকি হাসলাম।
( সমাপ্ত)
Poly Talukder
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/groups/pencilglobal/permalink/3259606417661353/