বেড নং ৯
৫ম পর্ব
ফ্রীজ থেকে লাশটা বের করা হলো। লাশটার দিকে তাকিয়ে আমি আরও হতভাগ হলাম। লাশটা সেই ১৬ বছর বয়সী মেয়েটার। চোখ দুটো উপড়ানো আর ঠোঁটটাও কাটা। তৌসিফ স্যার আমায় কোন কথা বলার সু্যোগ না দিয়ে আমায় নিয়ে গেলো সেলে। প্রথমে আমাকে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল,
– এবার বলুন, কতদিন ধরে এসবে যুক্ত আছেন? আর কয়টা লাশের সাথে এমন করেছেন? আর এই চোখ আর ঠোঁটের চক্করটা কি বলুন তো আমায়। ভালয় ভালয় বলবেন নতুবা এমন রিমান্ডে পাঠাবো না আপনি ভুলে যাবেন শরীরে হাড্ডি কয়টা থাকে।
– বিশ্বাস করুন স্যার আমি এসবের কিছুই জানি না ট্রাস্ট মি. আমি জানি না লাশটা কি করে আমার ফ্রীজে এলো। আমি তো বাসায় এই ছিলাম না। সারারাত ডিউটি করে ভোর বেলা বাসায় ফিরেছি। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তবে আপনি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখুন। আর আমি তো গত কালই ফ্রিজ পরিষ্কার করালাম। আপনি চাইলে কথা বলে দেখতে পারেন তাদের সাথে।
তৌসিফ স্যার আমায় বিশ্বাস করল কি না জানি না, উনি ওনার সাথে থাকা কনস্টেবল কে কি যেন বলে বের হয়ে গেলেন সেল থেকে। কনস্টেবল আমায় এসে বলল,
– স্যার খুব রাগি,রিমান্ডে দিলে আপনার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে, আপনি সত্যিটা বলে দিন আপনার জন্যই ভাল হবে। ”
– বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানি না। তবে আমার মনে হয় রবিন স্যার এসবের সাথে যুক্ত। আমি জনার বাসায় সাইকো কিলার এর বই দেখেছি সাথে ৪র্থ যে লাশটা ছিল তার ছবি ও। আপনি প্লিজ একটু তদন্ত করে দেখুন না।
কনস্টেবল ও আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে গেলো। বের হতে হতে বলল” বিকেলের মধ্যে সত্যিটা স্বীকার করুন, নতুবা কপালে দুঃখ আছে। ” আমি যেন অতল সাগরে এসে পড়লাম কোন কূল খুঁজে পাচ্ছি না। আমি না তো পারছি সেল থেকে বের হয়ে প্রমাণ জোগাড় করতে যে আমি এসব করিনি আর না তো পারছি তাদেরকে এটা বিশ্বাস করাতে যে এটা অন্য কারো কাজ। জেনে বুঝে আমাকে ফাসাতে চাইছে। কিন্তু আমার তো কারো সাথে কোন শত্রুতা নেই তবে কেন আমায় এসবে ফাসাতে গেলো? কে করতে পারে কাজটা? আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এই প্রথম আমার মনে হচ্ছে আমার মতো গোবর গণেশ একটাও নেই। একদম ইউজলেস আমি।
বিকেলে ফরেনসিক রিপোর্ট এলো সেই মেয়েটার। এবার পুরো বিষয়ে নতুন মোড় নিলো। রিপোর্টে স্পষ্ট করে লেখা আছে, মেয়েটার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। বিষয়টা সবার কাছে বিষ্ময়কর লাগলেও আমার জন্য এটা নতুন করে বিপদ বাড়ালো। সিসিটিভি ফুটেজ অনুসারে আমাকে এই লাশটার সাথে ২ বার অনেকটাই আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গিয়েছে। আমি এখন চিৎকার করে মরে গেলেও ওরা কেউ বিশ্বাস করবে না এটা আমি করেছি। বরং কেসটা আমার জন্য মরণের ফাঁদ তৈরি করল। আমার বের হবার কোন পথ নেই। আমি একেবারে শেষ। কেন যে মর্গে ঢুকতে গিয়েছিলাম কে জানে।
প্রায় মিনিট বিশেক পর তৌসিফ স্যার একটা চেয়ার নিয়ে আমার সামনে বসল। সে বলল,
– রবিন স্যারের ব্যাপারে কি জানেন? সে কিভাবে এর সাথে জড়িত?
আমি তাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। আমি জানি হয়তো সে বিশ্বাস করবে না তবুও এছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।
আমার কথার জবাবে উনি হুম জবাব দিয়ে বললেন,, ” রাজন মিয়া, রবিন স্যার কে ভিতরে নিয়ে আসুন। ” তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর রবিন স্যার কে নিয়ে আসা হলো। তার আগে আমাকে একটা গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো যেখান থেকে আমি সব দেখতে আর শুনতে পাবো কিন্তু বাকিরা আমায়,দেখতে পাবে না।
রবিন স্যার কে জিজ্ঞেসাবাদ করার জন্য তৌসিফ স্যারের সামনের একটা চেয়ারে বসানো হলো,
– আপনি মানুষের গোশ খান?
– খেয়েছিলাম একবার। কেন স্যার?
– নরপিচাশ নাকি আপনি?
– হা হা স্যার,, তেমন নয়। একবার এই খেয়েছিলাম। বেশ সুস্বাদু।
– চোখ খান নাকি শুধু ঠোঁট??
– মানে? আপনি কি বলতে চান?
– আপনি কচি খোকা নন,যা জিজ্ঞেস করছি জবাব দিন।
– বললাম তো একবার এই খেয়েছি। কোন ঠোঁট বা চোখ না। আমি জানতাম না ওটা মানুষের গোশ ছিল। বিদেশে থাকাকালীন একটা উপজাতির কাছে খেয়েছিলাম, কিন্তু এসব কেন টানছেন?
– এই মেয়েটা আপনার কি হয়? ( ৪র্থ লাশের মেয়েটার ছবি দেখিয়ে)
– এটা আপনি কোথায় পেয়েছেন? ঘর সার্চ করেছেন? আপনি জানেন আমার অনুপস্থিতিতে সার্চ করার অপরাধে আমি আপনার নামে কেস করতে পারি,জানেন আপনি?
– আমায় আইন শেখাতে আসবেন না, এমনভাবে থার্ড ডিগ্রি টর্চার করব না, সব আইন বের হয়ে যাবে।
রবিন স্যার কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। চুপ করে নিজের জায়গায় আবার বসে পড়ল শান্ত ছেলের মতো।
– বলুন মেয়েটা কে? আপনার কাছে ছবি এলো কি করে?
– মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।
– কেন?
– মেয়েটা না করে দিয়েছিল। তার অন্য কোথায়ও সম্পর্ক ছিল।
– রাগ হয়নি?
– খুব রাগ হয়েছিল, আমি তো তাকে প্রথম দেখেই ভালবেসে ফেলেছিলাম।
– তাই আপনি তাকে খুন করে পরে নিজের রাগটা মিটিয়েছেন তাই তো? বাকি মেয়েদের উপর এমন কেন করলেন? কি সম্পর্ক তাদের সাথে আপনার?
– মানে? আপনি কি বলছেন এসব যা তা? আমি কেন তাকে খুন করতে যাব?
– ওই যে বললাম অপমানের প্রতিশোধ নিতে।
– আপনি মুখ সামলে কথা বলুন। কি বলছেন এসব যা তা? বিনা প্রমাণে কিছু বললেই হলো?
– প্রমাণ,, প্রমাণ নিয়ে এসেই আপনাকে রিমান্ডে দেব। তার আগে এটা বলুন এসব ডিভিডি আর বই গুলো আপনার রুমে কেন?
– কোন মানুষের শখ থাকতে পারে না? আমারও সাইকো আর ভূতের বই বা সিনেমা দেখতে ভালবাসি। এটা নিশ্চই বেআইনি নয় তাই না?? এটার জন্য তো আপনি আমায় ফাঁসিতে দিতে পারবেন না তাই না??
তৌসিফ স্যার আর কোন কথা বলল না। যেহেতু নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ হাতে নেই তাই রবিন স্যার কে যেতে দেওয়া হলো। যদিও পুরো বিষয়টার জন্য এখনো আমায় দায়ী করা হচ্ছে তবুও রবিন স্যারের বিষয়টায় কেসটা কিছুটা জটিল হয়ে গেলো।
পরের দিন ভোর বেলা আমি যা বলেছি তা সত্যি কিনা সেটা যাচাই করতে থানায় সেই ফ্রিজ পরিষ্কার করার লোকগুলোকে ডাকা হলো। ওরা কি বলল ঠিক বুঝলাম না। এরপর তৌসিফ স্যার হাসপাতাল আর আমার বাসার নিচের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলো।
– সব ফুটেজ ঠিক আছে হাসপাতালের। কিন্তু বাসার রাত ৩-৪ টার সিসিটিভি ফুটেজ টা গায়েব। এবার বলুন এতো জলদি কি করে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আবার হাসপাতালে পৌঁছালেন?
– স্যার আপনি এই বলুন একটা মানুষের পক্ষে এতো দ্রুত কোন কাজ করা সম্ভব? তাও একসাথে দুটো জায়গায়?
– সেটা তো আমিও জানি, এটা বলুন আপনার সাথে সঙ্গী কে কে??
– সত্যি বলছি স্যার আমি এসবের কিছুই জানি না। হ্যাঁ এটা ঠিক আমি ২ বার এই লাশটাকে ছুঁয়েছি কিন্তু এটা কি করে আমার বাসায় গেলো আমি জানি না।
– মানে? আপনার বাসায় গিয়ে অন্য কেউ লাশটা রেখে গেছে? চাবি কোথায় পেলো?
– হতেই পারে। আর স্যার একটা কথা আমি যখন হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলাম তখন আমার চাবিটা আমার ড্রয়ারে রেখেছিলাম। এরপর বাসায় আসার সময় নিলাম। আর আমি যে চাবিটা ওখানে রোজ রাখি এটা সবাই জানে।
– আপনি বলতে চান যে আপনি যখন ডিউটিতে ছিলেন আপনার অগোচরে কেউ চাবিটা নিয়ে আপনার বাসায় গিয়ে চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে লাশটা রেখে আবার লক করে চাবিটা আপনাকে দিয়ে গেছে??
– হুম স্যার। প্লিজ একটু বিশ্বাস করুন।
– আচ্ছা কিছু সময়ের জন্য মেনে নিলাম আপনি ঠিক বলছেন। আপনার কাছে প্রমাণ আছে? প্রমাণ কই?
– আমায় আজকের রাতটা সময় দিন। একটু জামিন দিন। সকালের মধ্যে প্রমাণ এনে দেব নতুবা আমায় যা শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেব।
তৌসিফ স্যার অনেক কিছু ভেবে শেষে রাজি হলেন। তবে একজন গুপ্তচর আমার সাথে দিয়ে দিলেন। আমি সেল থেকে বের হয়ে আমার বাসায় গেলাম।সেখানে কিছু না পেয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। কি ভেবে যেন মর্গের দিকে পা বাড়ালাম,এমন সময় কে যেন আমার মুখে কিছু চেপে ধরল। আমি জ্ঞান হারালাম। আমার যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমার মুখ আর চোখ বাঁধা সাথে পুরো হাত, পা,শরীর একদম শক্ত করে বাঁধা। আমি শুধু হাসির শব্দ শুনছি আর কিছুই বুঝছি না।
চলবে,,,,,,,
Poly Talukder