বেড নং ৯
৪র্থ পর্ব
“আচ্ছা মনে করুন আপনি যে গোশটা খাচ্ছেন সেটা মানুষের। তাহলে কেমন বলুন তো স্বাদটা। অবশ্য আপনি তো কখনো মানুষের গোশ খান নি তাই স্বাদটা ঠিক কেমন সেটাও বুঝবেন না। মানুষের গোশ কিন্তু কিছুটা নোনতা লাগে, জানেন বুঝি” বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। পেল্টে তাকিয়ে দেখি তখনে পিছ চারেক গোশ পড়ে আছে। আমার প্রচুর বমি পেলো কেন জানি। এমনটা তো নয় যে আমি সত্যি এই মানুষের গোশ খেয়ে ফেলেছি। হঠাৎ করে প্লেটে চোখ পড়তেই মনে হলো যেন কে যেন বলছে, ” কেমন লাগল মানুষের গোশ?”
আমি আর থাকতে পারলাম না দৌড়ে চলে গেলাম বাথরুমে। গড়গড় করে সব ঢেলে দিলাম এতোক্ষণ যা খেয়েছিলাম। ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই রবিন স্যার বলল,,
– হা হা, আপনিও না। আমি আপনার সাথে মজা করেছি আর তাতেই আপনার চেহারাটা দেখার মতো।
– মানে? খাবার সময় এমন মজা কেউ করে?
– আমি করলাম আর কি। আপনি কি ভেবেছিলেন যে সত্যি আমি আপনাকে মানুষের গোশ খাওয়াবো?? আর খাওয়ালেও সেটা বলব কেন??
বলেই আবার হাসা শুরু করল। মনে হচ্ছে যেন পুরো শহরটা ফেটে পড়বে সেই হাসিতে।
সত্যি আমি এই মানুষটাকে বুঝি না। এর আগে রবিন স্যার আমার সাথে কখনো এমন মজা করে নি। রাতে ঘুমাতে যাবার সময় উনি আমাকে বললেন, ” সাবধান থাকবেন আদ্রিব সাহেব,এখানে কিন্তু অনেক কিছুর শব্দ আসে। ” বলেই আবার হা হা করে হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই লোকটা এতোটা অদ্ভুত আগে জানতাম না। আজ যেন মনে হচ্ছে আমি এই লোকটাকে একদমই চিনি না।
বেশ ভয়ে ভয়ে ঘুমালাম রাতে। হুট করেই আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত দুইটা। বাহির থেকে প্রচুর কুকুরের ঘেউ ঘেউ করার শব্দ আসছে। সেই সাথে কেমন করুণ শুরু কাঁদছে ওরা। যেন কিছু বুঝাতে চাচ্ছে। আমি শুনেছি অশরীরী কিছু দেখলে নাকি ওরা এভাবে ডাকাডাকি করে। পুরো ঘরটাকে আমার কেমন জানি ভৌতিক মনে হচ্ছে। ভাল করে কান পেতে শুনি কোন একটা মেয়ের হাসির আওয়াজ আসছে। আবার নূপুরের আওয়াজ আবার কান্নার আওয়াজ। আবার হাসির আওয়াজ। নিজেকে আমার পাগল পাগল মনে হচ্ছে। আমি আর এক মুহূর্তে ও রুমে না থেকে বের হয়ে এলাম।
ড্রয়িং রুমে এসে দেখি রবিন স্যার টিভিতে বসে হরর মুভি দেখছে। এতোক্ষণ তবে এসব শব্দগুলো এই মুভির জন্যই শুনতে পেয়েছি। আমাকে দেখে রবিন স্যার বলল,
– ঘুম ভেঙে গেলো আপনার?
– হুম
– কেন? কাউকে দেখেছেন না কি?
– আপনার এই হরর মুভিটা দেখার শখ জাগল এই রাতে??
– আপনি ভয় পান না কি?? হি হি
– নাহ,, আমি একটু ঘুমাতে চাই। একটু সাউন্ডটা কম করলে ভাল হয়।
– আপনি একটু কষ্ট করে আমার রুমে গিয়ে ঘুমান ওখানে এসব শব্দ যায় না।
অগ্যতা আমি রবিন স্যারের রুমে চলে গেলাম। কি একটা কাজে যেন রবিন স্যারের বেডের পাশের ড্রয়ার টা খুললাম। দেখলাম সেভানে প্রায় ২০/৩০ টার মতো বই আর মুভির ডিক্স। আশ্চর্যজনক ভাবে সবগুলো সাইকোথ্রিলারের উপর লেখা। কেন জানি আমার সবকিছু একটু গোলমেলে লাগছে। আমি রুমটা ভাল করে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম তার ড্রয়ারের একদম নিচের দিকে একটা মেয়ের ছবি। ছবিটা হাতে নিয়ে তাতে ফোনের টর্চলাইটটা মারতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এটা তো সেই ৪র্থ নম্বর লাশের সেই মেয়েটির ছবি। তবে কি তার সাথে রবিন স্যারের কোন যোগসূত্র আছে?? আচ্ছা এমনটা তো নয় যে এসব কাজ রবিন স্যার করেছেন??
পরের দিন আমি ভোর ভোর বেরিয়ে পড়লাম রবিন স্যারের বাসা থেকে নাস্তা না করেই। আসলে আমার তার বাসায় নাস্তা করতে খুব ঘৃণা লাগছিল।
বাসায় এসে আমি গোসল সেরে নিলাম। আজ আমার ডিউটি পরেছে রাতে তাই সারাদিন আমি ফ্রী আছি। দুপুরের রান্না করতে যাব ফ্রীজ খুলে দেখি ফ্রীজের সব মাছ,গোশ পঁচে গেছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখি ফ্রীজের রেগুলেটারটা শূন্যতে রয়েছে। এরমানে সেদিন রাতে ফ্রীজের মাছ,গোশের বরফ গলেই রক্তের মতো পানি বেয়ে বেয়ে পড়েছে। আমি ফ্রীজ পরিষ্কার করার লোক খবর দিয়ে খাবার খেতে নিচে চলে গেলাম। ফিরে এসে ওদের পেমেন্ট টা দিয়ে আমি চলে গেলাম মাছ,গোশ কিনতে। হুট করে তখন মনে হলো রবিন স্যারের বিষয়টা আশফাক স্যারকে একটু বলা উচিত।
এমনিতেই উনি আমার উপর রেগে আছেন। তারও মনে হচ্ছে আমি একটা খারাপ মস্তিষ্কের লোক। কোথায়ও হয়তো সে এটাও ভাবছে যে আমি এই এসব করেছি। অন্যদিকে আমার পিছনে সব সময় একজন পুলিশ থাকেই। দূর থেকে আমার সব কর্মকান্ড, গতিবিধি লক্ষ্য করে।
আমি বাজারটা না করেই আশফাক স্যারের বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি স্যার বাসায় নেই তার একটা কাজে কোন একটা জায়গায় বের হয়েছে। তার বাসায় থাকা কাজের লোকটা আমাকে এক কাপ চা দিয়ে বলল, ” একটু ওয়েট করুন, স্যার এখনি চলে আসবেন।” আমি স্যারের পুরো ঘরটা ভাল করে ঘুরে দেখছি। খুব সুন্দর করে সাজানো। সেখানে অনেক পেন্টিং আর স্ট্যাচু রয়েছে। বেশ পরিপাটি করে সাজানো। আমি স্ট্যাচুগুলোতে হাত বুলিয়ে দেখছিলাম। প্রায়,সব কয়টা স্টাচু এই মেয়ে আকৃতির। আমি সেগুলো হাত দিয়ে দেখছিলাম, এমন সময় কাজের লোকটা এসে বলল,
– স্যার এসবে হাত দিবেন না। সাহেব এসব পছন্দ করেন না।
বেশ রাগ নিয়েই বলল কথাটা। আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম।
মিনিট পাঁচেক পর কাজের লোকটা এসে বলল, ” সাহেবের আসতে লেট হবে, সে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গেছে। আপনাকে চলে যেতে বলেছে।” কথাটা শেষ করেই চলে গেলো। অগ্যতা আমি বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।
রাতে ডিউটিতে গিয়ে আমার বেশ বিব্রত বোধ হলো। কেন জানি পুরো শরীরটা ভারভার লাগছে। বারবার মনে হচ্ছে একটাবার একটু মেয়েটাকে দেখি। সেই মেয়েটার কাছে যাই, সেই ষোল বছর বয়সের মেয়েটাকে আর একটাবার ছু্য়ে দেখি। নিজের অজান্তেই আমি মর্গের দিকে হাটা দিলাম। মর্গে পা রাখব এমন সময় হারুন কাকা এসে পিছন থেকে ডাক দিলো,” স্যার আপনি ওদিকে কই যান?” আমি বুঝতে পারলাম না আমি ঠিক কি করতে যাচ্ছিলাম। আমার এমন মনে হচ্ছিল আমায় অন্য কেউ কন্ট্রোল করছিল, যেন আমি কারো রিমোটে নিয়ন্ত্রিত হাতের পুতুল।
ডিউটি শেষ হলো ভোর চারটায়। আমি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে হয়ে একটা ডিম ভাজা আর এক কাপ কফি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সবেমাত্র আমার চোখটা লেগে এসেছে। আমার মনে হলো সেই মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে, শরীরটা একদম নগ্ন। তার পুরো চোখ জুঁড়ে কামুকতা। ধীরে ধীরে আমার দিকে এগোচ্ছে। আমার ঠিক মুখের উপর তার মুখটা নিয়ে এসেই তার জিহ্বটা বের করে আমার গলায় ছুঁয়ে দিল। এমন মনে হচ্ছিল যেন আমায় কোন সাপে কামড়িয়েছে। প্রচন্ড জ্বলছিল গলাটা। মনে হচ্ছিল আমি কোন তীব্র বিষ খেয়ে নিয়েছি। আমি যন্ত্রনায় ছটফট করছি আর তা দেখে সে প্রচুর হাসছে। হাসতে হাসতে তার চোখ থেকে অনবরত রক্ত ছড়ে পড়ছে।
আমি জলদি কোনরকমে বিছানা ছেড়ে উঠে দুটি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘুম ভাঙল দরজায় কারো প্রচন্ড রকমের ধাক্কাধাক্কির শব্দে। ঘুমঘুম চোখ নিয়ে দরজা খুলে তাকিয়ে দেখি তৌসিফ স্যার আর তার সাথে আরও ২ জন পুলিশ।
তড়িঘড়ি করে ঘরে এসেই সার্চ শুরু করল। আমার কোন কথার তোয়াক্কা না করে বলল,
-” লাশটা কোথায়? ”
– কিসের লাশ স্যার? এসব কি বলছেন? আর আমার ঘর কেন সার্চ করছেন?
– একটু পরই টের পাবেন।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। আমার পুরো রুমটা খোঁজার পর ফ্রীজের কাছে এলো। ফ্রীজটা খুলতে যাবে ঠিক তখন আমি বললাম, ” স্যার ফ্রীজে কিছুই নেই।” আমার কথার তোয়াক্কা না করে তৌসিফ স্যার ফ্রীজের দরজাটা খুললো।
ফ্রীজটা খোলার পর তারা যতটা না অবাক হলো তার চেয়ে বেশি অবাক আর হতভম্ব হলাম আমি। ফ্রীজের মধ্যে গুটিসুটি করে রাখা রয়েছে একটা মেয়ের লাশ।
চলবে,,,,,,,
Poly Talukder