#বেড নং ৯
২য় পর্ব,,
৪র্থ মেয়েটার লাশটা চুরি হওয়ার পর পুরো হাসপাতালে একটা থমথমে ভাব চলে এলো। পুরো হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ডে বাড়িয়ে দেওয়া হলো। যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে। সেই সাথে কড়া নজরদারি রাখা হলো মর্গে। ভিতরের কেউ যদি কাজটা করে তবে সেটাও ধরতে পারবে। লাশ চুরির বিষয়টা নিয়ে আমরা সবাই খুব চিন্তিত, তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় পড়ে গেছে আশফাক স্যার কারণ তাকেই তো জবাবদিহি করতে হবে।
দিন দুই কেটে গেলো। আমরা সবাই এখন ভয়ে ভয়ে থাকি যেন আর কোন লাশ চুরি না হয়। সেই সাথে বাকি তিনটা লাশ কবে ফিরে পাবো সেই আশায় বসে আছি। ইতিমধ্যে আশেপাশে শোরগোল পড়ে গেছে হাসপাতালে অশরীরি কিছু আছে। নিজেদের হাসপাতালের ইমেজটা রক্ষা করতে তাই আশফাক স্যার একটা প্রেস কনফারেন্স রাখল। সেখানে বেশ সাজিয়ে গুঁছিয়ে বলা হলো যে লাশগুলো গুম হয়নি। বরং কিছু পরীক্ষা করার জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আমি সহ বাকি সবাই সেই একই বুলি হাতড়ালো।
পরের দিল বেলা বারোটায় ২য় লাশটা পাওয়া গেলো। হাসপাতালের পিছনের অব্যবহৃত গেইটটার কাছে কারা যেন রেখে গেছে লাশটা। সাধারণত ওই দিকটায় কেউ যায় না। আশ্চর্যজনকভাবে এই লাশটার ও চোখ উপড়ে ফেলা আর ঠোঁট কাটা। তবে আগের লাশটার মতোই কোন ধর্ষনের চিহ্ন নেই। তবুও ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হল। ফরেসনসিক বিভাগের প্রধান জনাব রেহান স্যার সন্ধ্যার পর নিশ্চিত করল যে আগের লাশটার মতো এই লাশটার সাথে একই কাজ করা হয়েছে। খুব সম্ভবত এটা একজন লোকের এই কাজ। কাজটা এতোটা নিখুঁতভাবে করা যে মনে হয় যে লোক অনেকবছর ধরে এসব করে আসছে।
বিষয়টা একটু বেশি ভয়াবহ হয়ে গেলো যখন জানতে পারলাম ২য় মেয়েটির সাথে ১ম মেয়েটির একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা প্রথম ভেবেছিলাম এটা হয়তো অঙ্গ ব্যবসায়ী বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পাচারকারী কাজ হবে। কিন্তু এই হাসপাতালে তো এমন কেউ নেই যে ভিতর থেকে এসব কাজে সাহায্য করবে। আর করলেও বা আমরা সেটা কি করে জানব, কেউ তো সেটা স্বীকার করবে না। এর জন্য প্রমাণ দরকার, আর সেটা জোগাড় করার দায়িত্ব পুলিশ নিয়েছে। আমি তাই আর খুব বেশি মাথা ঘামালাম না বিষয়টা নিয়ে।
রাতে বাসায় গিয়ে গোসল সেড়ে খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত তখন আনুমানিক ২ টা হবে,, এমন সময় আমার মনে হলো আমার রুমে কোন মেয়ে হাটছে। বিষয়টা নেহাত আমার স্বপ্ন ভেবে আবার শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পিঠের কাজে প্রচুর ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। এমনটা হবার কথা নয় কারণ এখন প্রচুর গরম পড়েছে। আমি এটাকে আবারও মনের ভুল ভেবে শুয়ে পড়তে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। তাপমাত্রটা আরও কমতে থাকল। আমি মনে হয় বরফের শহরে আছি,,শরীরের সব রক্ত হীম হয়ে আসল।
আমি আর থাকতে না পেরে পিঠ ঘুরিয়ে তাকালাম। আমার বেডের কাছের জানালাটা খোলাই আছে তাতে বাইরের ল্যামপোস্টের আলোতে যতটা দেখতে পেলাম তা হলো আমার বেডে আমার একদম কাছেই একটা মেয়ে শুয়ে আছে। শরীরে একটা সু্তা অবধি নেই। আর তার শরীর থেকে বরফের ধোয়া বের হয়ে আসছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম এটা সেই মেয়েটা যার নাড়ী পরীক্ষা করেছিলাম আমি।
আমি নিজেকে শান্ত করার জন্য অনেকটা জোরেই বলে উঠলাম, ” শান্ত হ আদ্রিব এটা তোর ভ্রম।”
এমন সময় মেয়েটা মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ” শার্টের বোতামটা দিতে এলাম।” বলেই আমার গায়ে তার হাতটা রাখল। হাত তো নয় যেন একটা লোহার তৈরি পঁচিশ কেজির কোন বস্তু। আর এতোটাই ঠান্ডা যেন আমার শরীরের সব রক্ত এখনি জমে যাবে।
আমি এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দেখলাম পুরো রুমে আমি ছাড়া ২য় কোন লোক নেই। আমি বুঝতে পারলাম পুরোটাই আমার ভ্রম,, তবে এমন ভ্রমটা কেন এলো বুঝলাম না। হয়তো লাশ নিয়ে বেশি চিন্তা করেছি তাই। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আজ আর আমার ঘুম হবে না জানি। কিচেনে গিয়ে এক কাফ গরম গরম কফি করে খেয়ে নিলাম। আর ভাবতে লাগলাম,কাল সকালে কি হবে? আমার এই স্বপ্ন বা ভ্রমটা কি এমনি এলো নাকি কোন কারণ আছে এর পিছনে??
সারারাত আমার আর ঘুম হলো না। ভোরে আমার ডিউটি ছিল তাই অনেকটা আগেই যেতে হলো। তখনো তেমন লোকজন আসে নি হাসপাতালে। আমি সোজা মর্গে চলে গেলাম। যদি কোন ক্লু পাওয়া যায় লাশ গায়েব হওয়ার ব্যাপারে। পুরো মর্গে আমি ছাড়া ২য় কোন জীবিত মানুষ নেই। এমনিতে আমি এতোটা ভীতু নই,, কিন্তু কাল রাতের বিষয়টা কিছুতেই মাথা থেকে যাচ্ছে না। মর্গে পা রাখতেই পুরো শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠল। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। একটা বার ভাবছি আমি চলে যায় রুম থেকে। কাউকে একটা নিয়ে আসব,, পরক্ষণেই ভাবলাম এতে হীতে বিপরীত হতে পারে। তাই কিছুটা সাহস নিয়েই রুমের ভিতর থেকে ভিতরে ঢুকতে লাগলাম।
পুরো মর্গের রুমটায় নতুন পুরাতন প্রায় ১৫ টা লাশ। এর মধ্যে ৫ টা লাশ আছে বেওয়ারিশ। বাকি ২ টা এক্সিডেন্টের, মুখটা এতোটা থেতো হয়ে গেছে যে চেহারা চেনাই যায় না। লাশদুটো বরফ দিয়ে বক্সের মধ্যে রাখা হয়েছে। বাকি আটটা লাশের মধ্যে ৪ টা মেয়ের লাশ। সব কয়টাই আত্মহত্যা করেছে। আমি পা গুণতে গুণতে লাশগুলো এক এক করে দেখছি। পুরো রুমে বেড নম্বর অনুসারে লাশগুলো রাখা। হঠাৎ আমার চোখটা আটকে গেলো বেড নম্বর ১০ এর লাশটার দিকে। সিরিয়াল অনুসারে এটা বেড নম্বর ১০ থাকা উচিত। অথচ তাকিয়ে দেখি এটা বেড নম্বর ৯। নিজের গণনার ভুল ভেবে আমি একটু এগিয়ে গেলাম লাশটার দিকে। একটা মেয়ের লাশ, বয়স আনুমানিক ১৬/১৭ হবে।
কি ভেবে যেন লাশের উপর থাকা সাদা কাপড়টা আমি টেনে নিচে ফেলে দিলাম। মেয়েটার শরীরের রং ধবধবে সাদা, গলার কাছে কালো কুচকুচে গোল হওয়া দাগটা সেই সাদা রংটাকে যেন আরও সুন্দর করে তুলেছে। সদ্য বেড়ে ওঠা শরীরটা যেন জানান দিচ্ছে তার যৌবনটাকে। মেয়েটা গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে। কিন্তু কাল তো আমি এই লাশটা দেখিনি? তাহলে হয়তো আমি বাসায় যাবার পর এসেছে লাশটা। অবশ্য আমি তো এদিকে তেমন আসিও না যে জানব এতো সব। জানি না আমার কি এমন হলো, মর্গের রুমে রাখা টেবিল থেকে একটা ছুঁড়ি তুলে নিয়ে এগোতে লাগলাম মেয়েটার দিকে।
আস্তে আস্তে করে মেয়েটার গায়ের জামাটা কাটতে লাগলাম।পরম যত্নে যেন মেয়েটার কোথায়ও এতটুকু আচড় না লাগে। জামার হাতাদুটো কাটার পর যখন গলা থেকে জামাটা কাটতে যাব ঠিক তখনি আমার ফোনে একটা কল এলো।
আমি যেন হুশ ফিরে পেলাম। আমার হাতে ছুড়ি আর সামনে থাকা অর্ধনগ্ন মেয়ের লাশটা দেখে আমি আতকে উঠলাম। পুরো পরিবেশটা যেন একদম আলাদা লাগছে। আমার মনে হচ্ছে পুরো মর্গের লাশগুলো আমায় গিলতে আসছে। আমি জলদি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
সারাটা দিন আমি শুধু এটা ভাবছিলাম আমি কি করতে যাচ্ছিলাম। আমার শুধু এটুকু মনে আছে আনি মর্গে ঢুকলাম,বেড নং ৯ এ থামলাম এরপর নিজের হাতে ছুড়ি আর সামনে অর্ধনগ্ন মেয়ের লাশটা দেখলাম। মাঝে ঠিক কি হয়েছে আমার কিছুই মনে পড়ছে না। আশফাক স্যারকে বলে আমি বাসায় চলে এলাম। বেলা তখন ৩ টা।
কাল সারারাত ঘুম হয়নি। তাই হয়তো হুশ হারিয়ে ফেলেছিলাম। দুপুরে হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে খেয়ে নিলাম। ২ টা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
আমার যখন ঘুম ভাঙলো রাত তখন ৩ টা। প্রচন্ড পানির পিপাসা পেলো। আমি ঘুমঘুম চোখে ফ্রিজটা খুলে পানি নিলাম। পানিটা মুখে ঢালব এমন সময় মনে হলো কে যেন ফ্রীজের মধ্যে বসে আছে। আমি আবার ফ্রীজটা খুললাম। দেখি সেখানে সেই আগের রাতের মেয়েটা বসে আছে। এতোটুকু জায়গায় কি করে ঢুকল বুঝলাম না। দেখলাম মেয়েটার চোখদুটো নেই। ঠোঁট দুটোও কাটা।
সেই কাটা ঠোঁট দুটো দিয়ে আমায় বলল, ” শার্টের বোতামটা নিবেন না?? নিন না?? ” বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো,।ঠোঁট থেকে অনবরত রক্ত পড়েই যাচ্ছে। পুরো ফ্রীজটা রক্তে মেখে আছে । আমি একটা চিৎকার দিলাম। হাত থেকে পানির বোতলটা পড়ে গেলো মেঝেতে। দৌড়ে ড্রয়িং রুমের আলোটা জ্বালিয়ে আমি আবার ফ্রীজের দরজাটা খুললাম। সেখানে মেয়েটা নেই, তবে তখনও ফ্রীজের গা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে
পড়ছে মেঝেতে।
চলবে,,,,,,,
Poly Talukder
৩য় পর্