গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৩:
#wont_touch_you
সকাল সকাল ফোন বেজে ওঠার দরুন মেজাজ বিঘড়ে গেল এরোনের। মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ বের করতে না করতেই মনে পরলো মিহির ফোন দেওয়ার কথা ছিল।
মৃদু হেসে চট করে ফোন হাতে নিতেই দেখলো অচেনা নাম্বার। কারণ মিহিরটা ত কাপকেক দিয়ে সেভ করা ছিলো। ভ্রুকুটি করে ফেলল এরোন। তাও অন্য নাম্বার দিয়ে কল করেছে ভেবে ফোন তুলে কানে ধরলো।
“হ্যালো?”
“হ্যালো, স্যার আমি বিকাশ থেকে বলছিলাম।”
গেল এরোনের মেজাজ বিঘড়ে।
“তো?” বিরক্ত হয়ে বলেই ফোন কাটলো এরোন।
তবে সাথে সাথেই আবার ফোন ঢুকলো।
এরোন বিরক্ত হয়ে আবার ফোন তুলে কানে দিল।
সাথে সাথে ওপাশ থেকে আবার সেই লোকটা বলল, “স্যার, বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আমি আপনার একাউন্টের সমস্যা সমাধানের জন্য ফোন করেছি৷ এইমাত্র বিকাশ থেকে আপনার একাউন্টে একটা পিক গিয়েছে। সেটা দয়া করে আমাকে দিলে আপনার একাউন্ট আবার চালু হয়ে যাবে।”
“এমন কেলান কেলাবো যে তুই-ই চালু হয়ে যাবি। রকেটের মত।”
ফোনের ওপাশের ব্যক্তি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে বলল, “আপনি ভুল বুঝছেন স্যার। আমরা বিকাশ থেকেই বলছি।”
“আমি কখন বললাম তুই রকেট থেকে বলছিস?’ ঝাঁঝাঁলো গলায় বলল এরোন।
ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই এরোন আরো বলল,”সকাল সকাল দুধওয়ালা দের মত দুধ বিক্রি কর,তাও তোর মঙ্গল হবে। কারণ আমাকে আরেকবার ফোন দিলে তোকে মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দিব। সালা #****#।”
এরোন ফোন কেটে আবার শুয়ে পরল।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার ফোন ঢুকলো।
এরোন বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে ফোন তুলেই দাতেদাত চিপে বলা শুরু করলো, “শোন তোকে যদি তুলে আনি তাহলে তোর সাথে কি কি হবে তুই স্বপ্নেই ভাবতে পারবি না।”
শুনে মিহি ভয়ে চুপসে গেল।
একটু থেমে ধমকে বলে উঠল এরোন, “বুঝেছিস তুই?”
“হ..হু।” ভয়ে ভয়ে বলল মিহি।
অন্যরকম গলা পেয়ে ভ্রুকুচকে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে চোখের সামনে ধরলো এরোন। দেখলো বড় বড় অক্ষরে ‘CUP CAKE’লেখা।
“ড্যাম ইট।” বিড়বিড় করে বলেই এরোন আবার ফোন কানে দিলো, হ্যালো?
কিন্তু মিহি ভয়ে ততক্ষণে ফোন কেটে দিয়েছে।
“আজব, আমাকে ফোন করতে বলে, আবার আমাকেই উল্টাপাল্টা বলে দিল!” মিহি প্রচন্ড রকমের বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করতে লাগল।
সাথে সাথেই মিহির ফোন বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখলো বড়বড় অক্ষরে ‘বিপদ’ লেখা। মিহি বিপদ লিখেই সেভ করেছে এরোনের নম্বর।
ইচ্ছে না থাকলেও মুখটা কুচকে ফোন তুলল মিহি।
“হ্যালো? সরি আমি আসলে অন্যকেউ মনে করেছি।” হালকা বিচলিত হয়ে একশ্বাসে বলল এরোন।
মিহি কপাল কুচকে ফেলল। মিহির মনে হলো যে এর আগে হয়তো কোনো মেয়েকে ফোন করতে দায়িত্ব দিয়েছিল, তাই হয়তো সেও ফোন করেছে।
তারমানে আগের টার সাথে এখন এমন খিটখিটে ব্যবহার করে? এই ছেলে ত সত্যিই খারাপ।
“চুপ করে আছো কেনো?” এরোনের কথায় মিহির টনক নড়লো।
“হু।” শুধু এটুকুই বলল মিহি।
এরোন ফোস করে একটা নিঃশ্বাস বের করে বলল, “তুমি কি এমনই! মানে এইরকম চুপচাপ?”
“হ্যা, এমনই।” মিনমিনে গলায় বলল মিহি।
মিহি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো এই ছেলে যাতে ওকে জলদিই অপছন্দ করে সেরকমই কিছু করবে। কারণ এভাবে ছেলেটার সাথে জড়ানো ঠিক হচ্ছে না।
কিন্তু কি কি করলে একটা ছেলে জলদিই অপছন্দ করে!
ওদিকে এরোন ফোন কানে দিকে মৃদু হাসির সাথে চুপচাপ সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রেম নামক জিনিস আগে করেনি সে। তাই কিভাবে কি করবে, কি বলবে, বুঝে উঠতে পারছে না। আপাতত এভাবে ফোন ধরে রাখাটাই শ্রেয় মনে হচ্ছে এরোনের।
ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি এসে ভিড়েছে তার। মনে হচ্ছে মিহি খুব কাছেই আছে।
মিহি না পারছে ফোন কাটতে আর না পারছে কিছু বলতে।
প্রায় দশ মিনিট ত হয়েই যাচ্ছে দুইজনই চুপ করে আছে।
তাই মিহি নীরাবতা ভেঙে রিনরিনে গলায় বলল,”আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন!”
“না।” আলতোভাবে বলল এরোন।
মিহি কিছু বলতে চেয়েও বলতে সাহস পেলো না। কারণ ছেলেটাকে ভয় পায় মিহি।
এমনই আরেক ছেলের জন্যই ত ওর দিদিকে কম কষ্ট পোহাতে হয় নি!
বাসা থেকে দিদিকে ত সেদিনই ত্যাজ্যকন্যা বানিয়ে দিয়েছিলো বাবা, যেদিন দিদি কিনা ওই ছেলের সাথে প্রেম করে বিয়ে করার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছিলো। বাবা বারবার মানা করেছিল এই ছেলে ভালো হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
বাবার কথাই সঠিক হলো। এতই নাকি ভালোবাসত ছেলেটা যে বিয়ের বছর ফুরাতে না ফুরাতেই ভালোবাসা শেষ হয়ে গেল! নতুন আরেক মেয়েকে ভালো লাগতে শুরু করল।
অবস্থা বেগতিক হতেই দিদির বাড়ির কথা মাথায় এলো। এর আগে মনেও পরেনি যে বাবা মা এতদিন কেমন ছিলো! এমনকি ছেড়ে চলে যেতেও বাঁধে নি। চলে গিয়ে খবরও নেয় নি।
তারপর আর কি! মিহির বাবা না চাইলেও তার মায়ের জোড়াজুড়িতে বাসায় তোলা হলো ওর দিদিকে। যদিও ওর বাবা নিজেও ফিরিয়ে দিতে পারতো না। পুরুষ মানুষ তাই কঠোর ভাব আছে। কিন্তু মেয়ের জন্য সে এখনো কম কষ্ট পায় না।
এখন মোটামুটি একটা জব নিয়ে খুলনায় একাই থাকে মিহির দিদি। ভাগ্যিস পড়াশুনাটা শেষ করেছিলো নাহলে সারাজীবন একপ্রকার বিতৃষ্ণা নিয়ে থাকতে হত। নিজের প্রতি নিজের বিতৃষ্ণা। বাবা মায়ের বোঝা হয়ে থাকার বিতৃষ্ণা।
তাই মেয়েদের আর যাই হোক নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। দিন শেষে কোন ছেলে কেমন তা কেউই জানে না। কেউই না।
আর এই এক ভুল মিহি করবেই না। মরে গেলেও না।
কিন্তু রিজেক্ট করে দিলে কি কোনো ক্ষতি করে দেবে ছেলেটা!
যদি করে দেয়! সেই ভয়টাই হয়।
একটু আগেই ত কাকে যেন তুলে এনে কি করবে বলছিল। না জানি কত জঘন্য কাজ করে এই ছেলে!
যেমন নিজের দুলাভাইকেও ধোয়া তুলসিপাতাই মনে হত মিহির। তবে শেষ অব্দি গাজাপাতা বের হলো। এই ছেলেটাও তাই-ই হবে। প্রেম করার সময় সব ছেলেরাই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত লাফায়।
“বিকেল পাঁচটায় স্টেডিয়ামে চলে আসবা।”
মিহির মুখ বিবর্ণ হয়ে ওঠলো।
“কেনো?” ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো মিহি।
“একসাথে কাপকেক খাবো।” মৃদু হেসে বলল এরোন।
“মা..মানে!”
এসব কাপকেক খাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই মিহির। এসব ভক্কর চক্কর দিয়েই কিনা খারাপ কিছু করে বসে এই ছেলে।
“আমার শার্টটা নিয়ে যাবা আর ধুয়ে দিবা। এজন্য।”
ধোপাগিরি করাবে চিন্তা করেই মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল মিহির।
“আচ্ছা।” ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল মিহি।
মিহি ঠিকঠাক সময়ে স্টেডিয়ামে এসে হাজির হলো।
মিহির পরনে হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ। আর কাধের একপাশে কালো একটা চাদর। হাতে একটা কালো পার্স। কোনো সাজগোছ নেই। তাও সুন্দর লাগছে। চুলগুলো একটা সরু কাঠির মত জিনিস দিয়ে খোপা করে মাথার উপরে গুজে রাখা। ছোট ছোট চুলগুলো গাল বেয়ে পরে আছে।
তা যেন ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
এক হাতে ছোট পার্সটা চেপে ধরে আছে সে। বুক ধুকপুক করছে। জীবনে কোনোদিনো এভাবে একা কোনো ছেলের সাথে সে দেখা করতে আসেনি। তমাকে আনতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে বাসায় গেছে। আজ সন্ধ্যায় আসবে। আর সেবাকে আনলে ত উলটা ঝামেলা বাড়বে। তাই একাই আসতে হলো মিহিকে। তাছাড়া শার্ট নিয়েই সে চলে যাবে। দাঁড়াবে না।
মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই এরোনকে স্টেডিয়ামের একটা চেয়ারে বসা দেখতে পেলো মিহি। সে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলো। আজ সেই দিনের সেই আকাশি শার্টটা পরেছে সে। সাথে আকাশি জিন্স। আর পায়ে হালকা ছাই রঙের কেডস জুতা।
মিহিকে দেখে মৃদু হাসিসহ তাকিয়ে উঠে ওর কাছে এগিয়ে আসতে লাগল এরোন।
মিহি মেপে মেপে দম নিতে লাগল। আর এরোনের দিকে ফাঁকে ফাঁকে তাকালো। একটানা সে কোনো ছেলের দিকেই তাকাতে পারেনা। সে এমনই। তার উপর এই ছেলেকে ত জমের মত ভয় পায়।
“আমি শার্ট নিয়েই চলে যাব। আমার একটু কাজ আছে।” এরোন সামনে এসে দাঁড়াতেই চোখ এড়িয়ে বলল মিহি।
“তোমার কি আমার কাছে থাকতে সমস্যা হয়?” প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এরোন।
মিহি একটা ঢোক গিলল। কারণ এখন কি বলা উচিত চিন্তা করে পেল না।
“নাকি লজ্জা পাও!” ভ্রু উঁচু করে নামিয়ে বাঁকা হাসির সাথে বলল এরোন।
মিহি এবারো চুপ করে রইল। তার দৃষ্টি এদিক ওদিক সবদিক তবে এরোনের দিকে না।
কয়েক সেকেন্ড উওরের অপেক্ষা করে এরোন মিহির কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। বুঝতে পেরেই মিহি চমকে চোখ রসগোল্লার মত বানিয়ে পিছিয়ে যেতে লাগল। হাতের পার্সটা আরো শক্তপোক্ত করে ধরলো।
কিন্তু এরোন ত এগিয়েই যাচ্ছে, থামাথামির নাম নেই।
এক পর্যায়ে পিছাতে পিছাতে এক পাশের গাছের সাথে পিঠ ঠেকে গেল মিহির। সাথে সাথে ভয়ে চুপসে গেল মিহি। তাও এরোনের চোখের দিকে তাকালো না।
এরোন ওর দুইপাশে হাত রাখতেই ওর পরান বের হয়ে যাবার উপক্রম হলো।
কি করে আটকাবে এখন সেটাই ভেবে অস্থির হয়ে গেল মিহি।
এরোন ওর মুখের দিকে ঝুঁকতেই ও নাকমুখ খিচে বন্ধ করে বলে উঠল, “প্লিজ, বিয়ের আগে না।”
এরোন শব্দ করে হেসে দিয়ে পিছিয়ে গেল। কারণ ওর সন্দেহই ঠিক, মেয়েটা লাজুক টাইপ। এসব প্রেম ট্রেম এই মেয়ের জন্য না। এজন্যই ত চিঠিতে সরাসরি বিয়ের কথা লিখেছে।
এদিকে মিহি বোকার মত কি বলতে কি বলে দিয়েছে সেটা চিন্তা করেই মনে মনে নিজেকে গালি দিতে লাগল। বিয়ে কথাটা কোন আক্কেলে বের হলো সেটা চিন্তা করেই নিজের কপাল ফাটাতে ইচ্ছে করছে মিহির। সাথে প্রচুর রাগও হচ্ছে নিজের উপর।
আপাতত মিহি কপাল কুচকে মাথা নিচু করে গায়ের চাদরে আঙুল প্যাচাচ্ছে। কারণ জঘন্য ভুল করেছে একথা বলে সে।
“ভয় নেই। আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাব না কোনোদিন।” মৃদুস্বরে বলল এরোন।
মিহির কপালের ভাজ সোজা হয়ে গেল। সে হালকা অবাক হয়ে তাকালো এরোনের দিকে।
“I mean, I Won’t touch you.”
(চলবে…)
লেখিকাঃ #Lucky_Nova