বিরহের নাম তুমি পর্ব-৬

0
449

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
১৪.
রাতের অন্ধকার যেমন পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করে নেয়, তেমনই ভয়ও সূচনাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করে নিয়েছে। কোনোভাবেই ঘটনাটি সে ভুলতে পারছে না। বিছানার এক কোণে আড়ষ্ট হয়ে শুয়ে রয়েছে। চোখ বন্ধ করলেই দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এই সময়টাতে মায়ের কথা মনে পড়ছে। মনে পড়ছে ভূমিকার কথাও। ছোটোবেলায় সূচনা যখন কোনো কারণে ভয় পেত তখন মা নয়তো ভূমিকা তাকে আগলে রাখত। আর আজ এত বড়ো ঘটনার পরে রাতে ভয়ের হাত থেকে আগলে রাখার জন্য কেউ নেই। সেই সময়টাতে জারিফকে সামনে পেয়েই একমাত্র আশ্রয়স্থল মনে হয়েছিল। ভরসা করার জন্য তখন শুধুমাত্র সে-ই ছিল। তাই তো সূচনা ধরিত্রীর অন্যকিছু আর ভাবতে পারেনি। আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছিল জারিফকে। জড়িয়ে ধরেছিল তাকে। জারিফ বোধ করি সূচনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিল। হয়তো এজন্যই সে নিরব ছিল।

সকালে সূচনার ঘুম ভাঙে ফোনের এলার্মে। গতকাল রাত করে ঘুমানোর ফলে এখন চোখ মেলে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে। গতকাল রাতের ঘটনা চাচা-চাচি জানে না। জারিফ-ই বলতে বারণ করেছিল। কেন বারণ করেছিল তা সূচনা জানে না। তবে সে জারিফের আদেশ মান্য করেছে। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারল মাথা ভারী হয়ে রয়েছে। চোখ ব্যথা করছে। তবুও সে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে যায়। চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে কোনোরকমে ঘুম দূর করে। চাচির ঘরের দরজায় নক করতে থাকে। বেশ কিছু্ক্ষণ পর হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে দিলেন চাচি। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললেন,’আমার শরীরটা আজ ভালো লাগছে না। তুই নাস্তা বানিয়ে নে। একা বানাতে পারবি না?’
সূচনা উপর-নিচ মাথা ঝাঁকাল। তিনি বললেন,’গুড। পরোটা বানাবি, ডিম ভাজবি আর চা বানাবি।’ কথা শেষ করে তিনি দরজা লাগিয়ে দিলেন। সূচনা রান্নাঘরে চলে যায় নাস্তা বানানোর জন্য। কাজের মাঝে ব্যস্ত থাকার একটি উপকারী দিকও রয়েছে এখন তার জন্য। গতকাল রাতের ঘটনা তাকে ভুলতে হবে। স্ট্রং থাকতে হবে। রুটি বানাতে গিয়ে জয়ের কথা মনে পড়ে যায়। জয় বলেছিল, এই শহরের মানুষগুলো ভীষণ একা। এখানে বাঁচতে হলে লড়াই করতে জানতে হয়, প্রতিবাদ করতে জানতে হয়। আসলেই তাই, সূচনাকে মনোবল শক্ত এবং দৃঢ় রাখতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। সাহস সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু কী করে? এই সময়ে মনে হচ্ছে জয়কে তার ভীষণ প্রয়োজন। একমাত্র জয়-ই পারবে তার মনোবল দৃঢ় করতে। হঠাৎ হঠাৎ জয়কে তো জাদুকরও মনে হয়। হঠাৎ করেই যেন মানুষটা জীবনে চলে এলো। যার সাথে কখনো দেখা হওয়ার কথা ছিল না, পরিচয় হওয়ার কথা ছিল না; আজ সেই মানুষটাই তাকে ভরসা দিচ্ছে। আগলে রাখছে। এমন শুভাকাঙ্ক্ষী ক’জন-ই বা পায়? আগে নিজেকে অভাগী মনে হলেও এখন আর তেমনটা মনে হয় না।
সূচনার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তার কাছে তো জয়ের ফোন নাম্বার নেই। বাড়ির ঠিকানাও জানে না। এমনকি জয়ের কাছেও সূচনার ফোন নাম্বার নেই। তাহলে দুজনের দেখা হবে কীভাবে?

সকালের নাস্তা শেষ করে চাচা আর চাচি একসাথে নিজেদের কর্মস্থানে চলে যান। সূচনা কলেজে যাওয়ার সময়ে জারিফ পিছু ডেকে বলল,’পাঁচ মিনিট ওয়েট কর। আমি রেডি হয়ে আসছি।’
সূচনা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেও জারিফ উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করল না। ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই জারিফ ফিরে আসে। জারিফের বর্ণনা যদি দিতে যাই একটু কনফিউশনে পড়তে হবে। কেননা মানুষটার বাহ্যিক সৌন্দর্যের তুলনা দেওয়া গেলেও ভেতরের বর্ণনা দেওয়া দুর্ভেদ্য প্রায়। গোলগাল চেহারার উজ্জ্বল সৌন্দর্যের অধিকারী জারিফ। চুলগুলো সবসময় পরিপাটি করে আঁচড়ানো থাকে। তার রুম অগোছালো হলেও সে নিজে পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে। ইদানীং আরও বেশি স্টাইল করে চলে। কালো শার্ট পরে হাতা ভাঁজ করতে করতে সূচনার উদ্দেশ্যে বলল,’আমি বাইক বের করছি। তুই দরজা লক করে বের হ।’

সূচনা ভেবেছিল আজও বোধ হয় জারিফ তাকে বাস স্টপেজ পর্যন্ত দিয়ে আসবে। কিন্তু ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। জারিফ তাকে একদম কলেজ অব্দি পৌঁছে দিলো। ফিরে আসার সময়ে বলল,’যখন ছুটি হবে আমায় ফোন দিবি। এসে নিয়ে যাব। আর যদি আসতে না পারি তাহলে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেবো। তবে খবরদার, গতকালের ঐ রাস্তা দিয়ে একদম বাড়ি যাবি না। মেইন রাস্তা দিয়ে যাবি। মনে থাকবে?’
সূচনা মাথা নাড়ল। জারিফ চলে যাওয়ার পরও সে ঠায়ভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় তার চাঞ্চল্যকর চক্ষুদ্বয় জয়কে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। বাস স্টপেজ পার হওয়ার সময়ও চোখ দুটো জয়কে দিশেহারা হয়ে খুঁজেছে। কিন্তু সন্ধান মেলেনি। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সূচনার।

চার তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল ইউসূফ। আচানক তার দৃষ্টি আটকে যায় শুভ্র ড্রেস পরা সামনে আসতে থাকা মেয়েটির দিকে। শিহাবকে খোঁচা মেরে ইউসূফ ফিসফিস করে বলল,’কিরে মেয়েটা চারতলায় কেন? এখানে তো শুধু ফার্স্ট ইয়ারদের ক্লাস হয়। মেয়েটা কি আমাদের ব্যাচের-ই নাকি?’
শিহাব কাঁধ নাচিয়ে, ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,’কী জানি! হতেও পারে।’
‘চল তো যাই।’
‘আগ বাড়িয়ে কথা বলার দরকার কী?’
‘সেদিন এত ভাব নিল কেন সেটাই জিজ্ঞেস করব।’
শিহাবকে হাত ধরে টেনেই নিয়ে যায় ইউসূফ। সূচনার পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,’কেমন আছ?’
সূচনা নিরুত্তর। ইউসূফ ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলে,’ভাইরে ভাই! একটা মানুষের এত ভাব হয় কীভাবে? মানে কী ভাবো তুমি নিজেকে?’
সূচনা ক্লাসে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইউসূফকে জানানোরও প্রয়োজন মনে করল না যে, সে আর সবার মতো কথা বলতে পারে না। সে তো পছন্দই করে না তাকে। আর অপছন্দের মানুষদের কৈফিয়ত দেওয়া কিংবা নিজের সম্পর্কে জানাতে সে একদম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সূচনা চলে যাওয়ার পরে শিহাব মুখ টিপে হেসে বলল,’ভালো লেগেছে যেচে অপমানিত হয়ে? আগেই না করেছিলাম।’
ইউসূফ ক্ষুব্ধ হয়ে তাকায় শিহাবের দিকে। শিহাব ইউসূফের কাঁধে হাত রেখে বলল,’শোন, সুন্দরী মেয়েদের ডিমান্ড-ই থাকে আলাদা। ওরা সবার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না।’
এই কথার কোনো প্রত্যুত্তর ইউসূফ করল না। তবে সূচনার ওপর বেজায় ক্ষিপ্ত সে।
ক্লাসে বসেও সূচনা বারবার জয়ের কথা ভাবতে থাকে। ক্লাস শেষ হওয়ার পর জারিফকে ফোন দেয়। জারিফ ম্যাসেজ করে বলে,’অপেক্ষা কর। আমি আসছি।’ সূচনা পাম্পে গিয়ে বসে থাকে। আশেপাশে তাকিয়ে জয়কে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ করে জয়ের কী হলো? সেও কি তাহলে বাকি সবার মতো? নাকি কোনো বিপদে পড়েছে। তার ভাবনা শেষ হওয়ার পূর্বেই জারিফ আসে। সূচনা একটা কাগজ এগিয়ে দেয়। সেখানে লেখা ছিল,’ভূমি আপুর বাসায় যাব।’
রাসেলের এক্সিডেন্টের খবর জারিফ জানে। ভূমির মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও সে অবগত। তাই বারণ করেনি। সূচনাকে সাথে করে ভূমির বাসায় নিয়ে গেছে। রেশমা বেগম ওদেরকে দেখার পর সেই যে রুমে ঢুকেছে, আর বের হননি। জারিফ নানান রকম হাসির কথা বলে ভূমিকে হাসায়। মন ভালো করে দেয়। এই সবকিছুর মাঝেও যেন সূচনা ছিল অন্য কোনো চিন্তার ঘোরে। জারিফ ভূমিকাকে ওদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে শাশুড়ির কথা ভেবে রাজি হয় না। তাই বেশ কিছুটা সময় গল্পগুজব করে সূচনাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। বাড়ি ফেরার পথেও সূচনার দৃষ্টি হন্যে হয়ে জয়কে খুঁজে বেড়ায়।
.
১৫.
রাসেলকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে। হাঁটাচলা করতে পারলেও অফিসে কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই। তাই সুস্থ না অব্দি অফিসে যেতে বারণ করেছেন বস। টুকটাক যা কাজ করার সেগুলো বাড়িতে বসে ল্যাপটপে করে। রাতে ডিনার করে ভূমির সাথে ভিডিয়ো কলে কথা বলে কিছুক্ষণ। তারপর অফিসের কাজ নিয়ে বসে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ওয়েদার ঠান্ডা। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করে দেয় রাসেল। ফিরে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসার সঙ্গে সঙ্গে বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে। সে আস্তে ধীরে দরজার কাছে যায়। দরজা খুলে দেখতে পায় লিন্ডাকে। ভিজে গেছে সে। কাঁপতে কাঁপতে লিন্ডা বলল,’দুঃখিত এত রাতে তোমায় বিরক্ত করার জন্য।’
রাসেল মৃদু হেসে বলল,’সমস্যা নেই। ভেতরে আসো।’

লিন্ডাকে ড্রয়িংরুমে রেখে রাসেল নিজের ঘরে যায়। একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে এসে লিন্ডাকে বলল,’পাশের ঘরে গিয়ে ভেজা কাপড়গুলো পরিবর্তন করে নাও।’
লিন্ডা থ্যাংকস জানিয়ে অন্যঘরে চলে যায়। ঘরে খাওয়ার মতো ফলমূল, ব্রেড এসব ছাড়া অন্য কোনো খাবার নেই। ভাত যা ছিল সে কিছু্ক্ষণ আগে খেয়ে ফেলেছে। লিন্ডাকে এখন কী খেতে দেওয়া যায় সেটাই ভাবছিল। সেই মুহুর্তে লিন্ডা এসে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,’তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসলে মাঝ রাস্তায় হঠাৎ করে ট্যাক্সি খারাপ হয়ে যায়। আবার বৃষ্টিও হচ্ছিল। তোমার বাড়ি কাছে বিধায় চলে এলাম। রাগ করোনি তো?’
‘রাগ কেন করব? রাগ করিনি। কী খাবে বলো? ঘরে ফল ছাড়া তেমন কোনো খাবার নেই।’
‘উম! কিছু খাবও না। রাতে ভারী খাবার খাই না আমি। কফি আছে?’
‘আছে। তুমি বসো। আমি বানিয়ে আনছি।’
‘না, না। তোমায় কষ্ট করতে হবে না। আমিই বানিয়ে আনছি।’

লিন্ডার সঙ্গে জোরাজুরি করে লাভ নেই বিধায় বৃথা চেষ্টা করল না আর। লিন্ডা দুজনের জন্য দু’মগ কফি বানিয়ে আনে। একটি রাসেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,’এটা তোমার।’
‘থ্যাংকস।’
লিন্ডা পাশে বসে কফির মগে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করল,’এত রাতেও অফিসের কাজ করছ বসে বসে?’
‘হ্যাঁ। ইম্পরট্যান্ট কাজটা। কালকে সকালের মধ্যে কমপ্লিট করতে হবে।’ হাই তুলতে তুলতে বলল রাসেল।
লিন্ডা বলল,’তুমি রেস্ট নাও। আমি করে দিচ্ছি।’
‘আরে না। আমি পারব।’
‘আমি জানি, তুমি পারবে। একটু রেস্ট নাও তুমি। পরে ফিনিশিংটা তুমিই কোরো। তখন আমি ঘুমাব।’
রাসেল রাজি হয়ে গেল। লিন্ডা ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করে। অন্যদিকে ক্লান্ত রাসেলও ঘুমিয়ে পড়ে।

রাত প্রায় দেড়টা। হঠাৎ একটি টপিক বুঝতে না পেরে লিন্ডা রাসেলকে ডাকতে গিয়ে দেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে রাসেল। লিন্ডা হেসে ফেলে। পলকহীনভাবে চেয়ে থাকে রাসেলের ঘুমন্ত মুখটির দিকে। আলতো হাতে তার চুলের মাঝে হাত বুলিয়ে দেয়। মুখে হাত বুলায়। ল্যাপটপ বন্ধ করে টেবিলের ওপর রেখে আধশোয়া হয়ে রাসেলের ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখে লিন্ডা। আস্তে আস্তে নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে যায় রাসেলের মুখের দিকে। ডান হাতে টেবিল ল্যাম্পের সুইচ অফ করে দেয়। লিন্ডার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস রাসেলের সর্বমুখে পড়ছে। গাঢ় চুম্বন করে সে রাসেলের ওষ্ঠদ্বয়ে। ঘুম ভেঙে যায় রাসেলের। তৎক্ষণাৎ কিছু বলতেও পারছে না। একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছে সে। দু’হাতে শক্ত করে আলিঙ্গনবদ্ধ করে রেখেছে লিন্ডা। গালে, গলায় চুমু খেতে থাকে। রাসেলের মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে এটা ঠিক নয়, অন্যায়। তবে সে বাঁধা দিতে পারছে না। হাত-পা অসাড় হয়ে রয়েছে। যেমন পারছে না বাধা দিতে, ঠিক তেমনই পারছে না সায় দিতে। অন্যদিকে উন্মাদের মতো চুমু খাচ্ছে লিন্ডা। রাসেলের চোখের সামনে ভূমির মুখটা ভেসে ওঠে। সে দু’হাতে ঢেলে লিন্ডাকে সরিয়ে দেয়। দেয়ালের সাথে গিয়ে ধাক্কা লাগে লিন্ডার। রাসেল শোয়া থেকে উঠতে গেলে লিন্ডা হাত টেনে শুইয়ে দেয়। পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। নানান রকমভাবে আবেদনময়ী কথা বলছে। রাসেল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলছে,’আমায় ছাড়ো লিন্ডা। এটা ঠিক হচ্ছে না।’
‘আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ রাসেল। প্লিজ ডোন্ট লিভ মি! জাস্ট ওয়ান টাইম প্লিজ।’ ভারী এবং জড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো বলল লিন্ডা। রাসেলের ফিলিংস লিন্ডার আবেদনে সায় দিতে চাইলেও বিবেক দেয় না। সে মনেপ্রাণে নিজেকে কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করে বিবেকের ডাকে সাড়া দিচ্ছে। এক পর্যায়ে সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে লিন্ডার গালে থাপ্পড় বসায়। চেঁচিয়ে বলে, ‘এখন যদি রাত না হতো আর তুমি একটা মেয়ে না হতে তাহলে এই মুহূর্তেই বাড়ি থেকে তোমায় বের করে দিতাম। জাস্ট আজকের রাতটাই আমার বাসায় থাকবে। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবে। তোমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই আমার। তুমি বন্ধু হওয়ার যোগ্য নও।’
আর এক মুহূর্তও সেই রুমে না থেকে অন্য রুমে চলে যায় রাসেল। লিন্ডা পিছু পিছু গিয়ে রুমের দরজা ধাক্কাতে থাকে। চিৎকার করে বলতে থাকে,’দরজা খোলো রাসেল। এভাবে আমায় তুমি প্রত্যাখান করতে পারো না। কে আছে এই বাড়িতে? তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। কেউ কিছু জানতে পারবে না। তোমার বউও নয়। প্লিজ রাসেল! দরজা খোলো।’
রাসেল দরজা খোলেনি এবং কোনো প্রত্যুত্তরও করেনি। অন্যদিকে দরজায় এলোপাথাড়িভাবে ধাক্কা দিতে থাকে লিন্ডা।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

মুন্নি আক্তার প্রিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here