বিরহের নাম তুমি পর্ব-৫

0
472

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
১১.
সূচনাকে এভাবে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায় জয়। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকায়। অথচ চোখে পড়বে এমন কিছুই সে দেখেনি। তৎক্ষণাৎ সূচনা জয়ের হাত ধরে টেনে দৌঁড়াতে থাকে। হতবিহ্বল হয়ে যায় ফুসকাওয়ালা এবং জয়। ব্যতিব্যস্ত হয়ে জয় বলে,’আরে ফুসকার টাকা তো দেওয়া হয়নি। আর আপনি এভাবে দৌঁড়াচ্ছেন কেন?’
একটা দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে দুজনে। হাঁপাচ্ছিল সূচনা। এদিকে জয় কিছুই বুঝতে পারছে না। সেই মুহূর্তে জয় কোনো প্রশ্নও করল না। শুধু বলল,’কী হয়েছে এসে শুনছি। আপনি এখানে দাঁড়ান। আমি টাকা দিয়ে আসি।’
সূচনা কোনো প্রত্যুত্তর করল না। জয় টাকা দিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,’এবার কী হয়েছে বলুন তো?’

সূচনার ইশারাকৃত কথা জয় বুঝতে পারবে না বলে এই বৃথা চেষ্টা সূচনা আর করল না। ব্যাগ থেকে খাতা-কলম বের করে লিখল,’আমার চাচাতো ভাই চলে এসেছিল ওখানে।’
‘ওহ! তাই বলেন। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। আপনাকে দেখেছে?’
‘কী জানি!’ ভীতিগ্রস্ত দেখাচ্ছিল সূচনাকে। জয় আশ্বস্ত করে বলল,’দেখেনি হয়তো। তার আগেই তো আমরা চলে আসলাম। রিল্যাক্স থাকুন।’
সূচনা জোরপূর্বক একটুখানি হাসল।
জয় বলল,’এবার তাহলে বাড়ি যাই আমরা?’
সূচনা সায় দিল। জয় সূচনাকে ওর বাড়ির একটু দূরে এগিয়ে দিয়ে আসে। বাড়ি এখন পুরো ফাঁকা। চাচা অফিসে, চাচি স্কুলে আর জারিফ তো বাড়ির বাইরে। সে নির্ভয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। নিজেকে কেমন যেন স্বাধীন স্বাধীন লাগছে। নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ রেখে খাটের তলায় উঁকি দেয়। সেখানে একটা বাক্সের মধ্যে মিঠাইকে রেখে গেছিল। বাক্সটি টেনে বের করে দেখে মিঠাই গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে। আদুরে হাতে সূচনা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
.
১২.
হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে রাসেল। হাতে-পায়ে এবং মাথায় ব্যান্ডেজ করা। গুরুতর কিছু না হলেও ক্ষতর পরিমাণ অনেক বেশি। এই বিদেশ-বিভূয়ে তার দেখাশোনা করার মতোও কেউ নেই। অসুস্থ হলেও যেখানে দেখার কেউ নেই সেখানে আজ এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে। কে জানত ভাগ্য যে আজ এত্ত খারাপ হবে! বাড়িতে জানলে কী যে অবস্থা হবে সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না। বিশেষ করে যখন ভূমিকা জানতে পারবে! তার চিন্তাভাবনার মাঝে ভেতরে প্রবেশ করে লিন্ডা। লিন্ডা জাতিতে আমেরিকান এবং সে রাসেলের কলিগ। দেখতে অসম্ভব সুন্দরের অধিকারিণী হয়েও সে মনেপ্রাণে পছন্দ করে কালো বর্ণের রাসেলকে। যেখানে সে প্রতিদিনই কারো না কারো থেকে প্রপোজাল পায় সেখানে সে, শুধুমাত্র রাসেলের মাঝেই মত্ত। রাসেল সব জানে। সে ভূমিকার কথাও লিন্ডাকে জানিয়েছে। কিন্তু লিন্ডার অবুঝ মন সত্যটা জানার পরও রাসেলকেই ভালোবাসে। অন্যদিকে রাসেল লিন্ডাকে ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবে না।
রাসেলকে এভাবে দেখে লিন্ডা তৎক্ষণাৎ কেঁদে ফেলে। তার শ্বেতাঙ্গ মুখটি পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে। আসার পথেও যে কেঁদেছে সেটি তার লাল হওয়া চোখ আর নাকের ডগা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কান্নারতস্বরে লিন্ডা ইংরেজিতে বলল,’তুমি এত কেয়ারলেস কেন? কীভাবে করলে এক্সিডেন্ট?’
রাসেলের কথা বলতেও খারাপ লাগছিল। কিন্তু লিন্ডার এত উৎকণ্ঠার সামনে চুপ করে থাকাটা বেমানান। সে শুধু ছোট্ট করে বলে,’কীভাবে যেন হয়ে গেল।’
‘কথাই বলবে না তুমি। চুপ করে থাকো।’ কান্নার পরিমাণ বেড়ে যায় লিন্ডার। রাসেল দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। লিন্ডারই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভূমিকা জানার পরে ওর কেমন লাগবে? আপাতত সে ভূমিকার কথা ভাবা বাদ দিয়ে লিন্ডাকে শান্ত করতে বলল,’কান্না করছ কেন? কান্না থামাও। আমার এমন কিছু হয়নি। ঠিক হয়ে যাব।’
কান্না থামার বদলে লিন্ডার কান্নার গতি আরও বেড়ে যায়।

বেশ অনেকক্ষণ পর লিন্ডার কান্না থামে। সে এখনও রাসেলের পাশেই বসে রয়েছে। নার্স এসে রাসেলের ওয়ালেট আর ফোন দিয়ে যায়। এই সময়টায় ভূমিকা ফোন করে না। কারণ সে জানে রাসেল এখন অফিসে। লিন্ডা রিসিপশনে গিয়েছিল। সেখান থেকে এসে বলল,’তুমি সুস্থ না হওয়া অব্দি আমার বাসায় থাকবে। আমি কিন্তু তোমার কোনো বারণ শুনব না।’
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় রাসেল। লিন্ডার আবদারের প্রতি ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলে,’না, লিন্ডা।’
‘না মানে কী? আমার বাসায় থাকতে তোমার সমস্যা কোথায়?’
‘সমস্যা কিছুই না।’
‘তবে?’
‘কিছু না। বাদ দাও।’
‘বাদ কেন দেবো? তুমি একা থাকো বাসায়। তোমার দেখাশোনা কে করবে?’
‘আমি নিজেই পারব।’
‘ভালোবাসা প্রত্যাখান করেছ মেনে নিয়েছি। সুস্থ করার জন্য সেবা করতে চাচ্ছি এখানেও প্রত্যাখান?’
‘আমার তেমন কিছু হয়নি লিন্ডা। আমি পারব নিজের কেয়ার নিতে।’
‘হ্যাঁ, তুমি যে কতটা কেয়ারিং তার প্রমাণ তো পেলাম-ই। আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না। তুমি আমার সাথে আমার বাসায় যাবে ব্যস!’
‘দেখো অযাচিত কথা না বলাই ভালো। তোমার বাড়িতে তুমি একা থাকো।’
‘তো?’
‘তুমি তো অবুঝ নও। সব বোঝো। এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলো না প্লিজ!’
লিন্ডা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার ঠোঁট কাঁপছে। চোখ দুটো ছলছল করছে। ঐসময়ে রাসেলের ফোন বেজে ওঠে। রেশমা বেগম ফোন করেছেন। ফোন রিসিভ করবে কি করবে না বুঝতে পারছে না রাসেল। অবশেষে রিং হতে হতে ফোন রিসিভ করে। রেশমা বেগম রাসেলকে এই অবস্থায় দেখেই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকেন। খানিক সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যান। আহতস্বরে বলেন,’তোর কী হইছে বাজান? তোর মাথায় ব্যান্ডেজ ক্যান?’
‘শান্ত হও মা। তেমন কিছু হয়নি।’
‘তেমন কিছু হয় নাই মানে? আমি স্পষ্ট দেখতে পারতাছি তোর মাথায় ব্যান্ডেজ।’
তিনি এবার চিৎকার করে ভূমিকে ডাকেন। ‘ভূমি, এই ভূমি। দেইখা যাও।’
তিনি চিৎকার-চেচামেচি করে কাঁদছেন। ভূমিকা ওয়াশরুমে কাপড় ধুচ্ছিল। শাশুড়ির কান্না শুনে ভূমিকা দৌঁড়ে যায়। জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে মা?’
তিনি কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছেন না। ভূমিকা এগিয়ে গিয়ে শাশুড়ির পাশে বসে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে যায়। উৎকণ্ঠার সহিত জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে তোমার?’
রাসেল ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। এই দুটো মানুষকে সামলানোর জন্যও এখন কেউ নেই। সে ওদেরকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে বলল,’এভাবে কান্না কেন করছ তোমরা? সামান্য এক্সিডেন্ট হয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে তো।’
সান্ত্বনামূলক বাণী মন মানতে নারাজ। রেশমা বেগম এবং ভূমিকা দুজনই কাঁদছে। রেশমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’তোর বাপ আসছে? সে কেন আমারে ফোন দিয়া জানায় নাই?’
রাসেল বলল,’আব্বা অন্য শহরে থাকে। তারে জানানোর দরকার নাই। চিন্তা করবে।’
রেশমা বেগম কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেন না। ভূমিকা নিরবে কান্না করে চলেছে। রাসেলের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও সে ভূমিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। লিন্ডা বুঝতে পেরে ফোনটা নিজে নিয়ে বলল,’চিন্তা ক’রো না। আমি আছি এখানে। আমি রাসেলের খেয়াল রাখব।’
ভূমিকা শিক্ষিত মেয়ে হওয়ায় লিন্ডার চটপটে বলা ইংরেজি কথা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবুও সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কিছু্ক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এই মেয়ে কে সেটাও জিজ্ঞেস করার কথা তার মাথায় আসছিল না। লিন্ডা হাসিমুখে বলল,’নার্স বলেছে রাসেলের এখন বিশ্রাম প্রয়োজন। রাসেল রাতে তোমায় কল দেবে কেমন? এখন রাখছি।’
ভূমিকা কিছুই বলল না। নিরব রইল। রাসেল বলল,’আমি তোমায় পরে ফোন করব ভূমি। তুমি মাকে একটু সামলাও।’
ভূমিকা চোখের পানি মুছে বলল,’তুমি নিজের খেয়াল রেখো।’
ফোন রাখার পর বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয় ভূমিকার।

ঘুমানোর পূর্বে রাসেল রিদি আর জারিফকে ফোন করেছিল। এই সময়ে মায়ের পাশে যেমন রিদিকে দরকার তেমনই ভূমির পাশে ওর একমাত্র আপনজন সূচনাকে দরকার। সূচনার স্মার্ট ফোন না থাকায় জারিফকে ফোন করে বলে দিয়েছে সূচনাকে যেন ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
______________
১৩.
রাত দশটার দিকে ভূমিকার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয় সূচনা। ইচ্ছে ছিল আজ রাতটা বোনের কাছেই থাকবে। কিন্তু চাচি বারবার করে বলে দিয়েছেন বাড়িতে ফেরার জন্য। রিকশা অর্ধেক রাস্তায় এসে পাংচার হয়ে যায় টায়ার। এখান থেকে বাড়ি বেশি দূর নয়। দশ মিনিট হাঁটলেই বাড়ির গলি সামনে। সে রিকশা থেকে নেমে চাচাকে ম্যাসেজ করে এগিয়ে আসার জন্য। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না। উপায় না পেয়ে সে কল করে। হয়তো ফোন থেকে দূরে আছে তাই ম্যাসেজ দেখতে পায়নি। কল দিলে ম্যাসেজ দেখে এগিয়ে আসবে। এই আশায় ফোন দিলেও তাকে নিরাশ হতে হয়। তাই আর দেরি না করে একা একাই হাঁটছে। কিছুদূর যাওয়ার পর দুজন ছেলেকে দেখতে পায়। সূচনা ওদেরকে পাস করে যাওয়ার পরে ছেলে দুটো ফলো করা শুরু করে। রাস্তায় ওদের ছায়া দেখে কলিজার পানি শুকিয়ে যায় সূচনার। সে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। ছেলে দুটো সূচনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,’এই দাঁড়াও। শোনো, কই যাও?’

সূচনার প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত। ভয়ে পা-ও চলতে চাচ্ছে না। ছেলে দুটোও জোরে জোরে হাঁটছিল এবার। সূচনা দৌঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু ওদের সাথে পেরে ওঠে না। ছেলে দুটো সূচনাকে দু’পাশ থেকে ঘিরে ফেলে। হাত ধরে টানতে টানতে নোংরা কথা বলে। সূচনার আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে পারছে না। ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছিল। তার নিরব কান্নায় ছেলে দুটো আনন্দ পাচ্ছিল। একজন বলল,’সুন্দরী রাতে একা বাড়ি যাও ক্যান? চলো তোমারে দিয়া আসমু বাড়িতে। আগে আমগোর সাথে চলো।’
দুজনে মিলে টানাহেঁচড়া করতে থাকে। এদিক থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে সূচনা। একসময়ে ভেবেই নেয় আজই বুঝি জীবনের শেষ দিন তার! আল্লাহ্’র পরিকল্পনা বোধ হয় ছিল অন্যকিছু। বাইকের আলো এসে একদম ওদের দিকেই পড়ে। ছেলে দুটো হাত আলগা করলে সূচনা একজনের হাতে কামড় বসিয়ে দৌঁড় দেয়। কাছে গিয়ে দেখতে পায় জারিফকে। বাইকে থামিয়েই জারিফ আর ওর বন্ধু দৌঁড়ে যায় ছেলে দুটোকে ধরতে। একজন পালালেও আরেকজন পালাতে পারে না। ঐ একজনকে ধরেই ইচ্ছেমতো পেটাতে থাকে জারিফ এবং ওর বন্ধু শিহাব। মারার পরে জারিফ ওর আরও বন্ধুদের ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলে। শিহাবকে এখানে রেখে জারিফ সূচনার কাছে যায়। রাস্তার এক কোণে গুটিসুটি হয়ে বসে কান্না করছে। চুলগুলো উশকোখুশকো হয়ে আছে। ঘামে ভিজে একাকার অবস্থা। জারিফ এক পা মুড়ে সূচনার সামনে বসে। চিৎকার করে বলে,’বুবির বাচ্চা তুই একা একা এদিক দিয়ে কেন যাচ্ছিলি? আমি যে ম্যাসেজ করে বললাম, যেখানে আছিস থাক আমি আসছি। আব্বুও ম্যাসেজ করেছে। ফোনও ধরিসনি। তোর এত সাহস আসে কোত্থেকে?’

সূচনা এতটাই ভয়ের মাঝে ছিল যে জারিফের রাগী রাগী কথাও তার কর্ণকুহর অব্দি পৌঁছাচ্ছিল না। দুনিয়াবি কোনো চিন্তাভাবনাই যেন তার মাঝে অবশিষ্ট নেই। আচমকা সূচনা অবাক করার মতো একটা কাণ্ড করে বসে। জারিফ তখনও রোষানল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইচ্ছেমতো কথা শুনিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে সূচনা ভয়ে কাবু ছিল। সে ঝাঁপিয়ে পড়ে জারিফের বুকে। দু’হাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জারিফকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। পড়তে গিয়েও টাল সামলিয়ে নেয় জারিফ। বকা থামিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

মুন্নি আক্তার প্রিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here