বাবার ভালোবাসা পর্ব-২১

0
639

#বাবার_ভালোবাসা।

পর্ব:২২

লেখা: #রাইসার_আব্বু।

মৌ এর চোখের পানি আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করে। খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই মৌ বলল তার তাড়া আছে। যেতে হবে। কথাকে বলে চলে গেল। এদিকে বিকেলে শপিং শেষ করে যখন বাসায় আসি। তখন সাথে কথাও আসে। কথা সন্ধা পর্যন্ত বাসায় থেকে চলে যায়। এ দিকে সপ্তাহ খানেক পরেই কথার সাথে বিয়ে। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে । প্রতিটা দিন যাচ্ছে। মনের যন্ত্রণা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। জানি না কি করবো । এদিকে এশায় নামায পড়ে যখন শুয়ে পড়বো। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠলো। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কে যেন বলল’ আপনি কি রাজ? মৌ সুসাইড করতে গিয়েছিল। জানি না বাঁচবে কি না। আপনি একটু আসেন।

– ফোনটা পেয়ে আমি আর একমূহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। মৌ এর কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবো? খুব কষ্ট হচ্ছে। রাতেই চলে গেলাম মৌ এর ওখানে। গিয়ে দেখি মৌ বিছানায় শুয়ে আছে।
– আমি যেতেই মৌ এর পাশে বসে থাকা মেয়েটা বলল’ আপনিই কি সেই রাজ? যার জন্য মৌ আপু মরতে বসেছিল? আর একটু পর যদি আমি আসতাম তাহলে হয়তো মৌকে আর দেখতে পেতেন না এভাবে। ভাইয়া মৌ আপু সত্যি আপনাকে ভালোবাসে বড্ডবেশি ভালোবাসে। আমি আসি আপনারা কথা বলেন।

– মেয়েটা চলে গেলে, মৌকে বললাম’ মরতে গিয়েছিলে কেন?
– মৌ কোন কথা বলছে না শুধু কান্না করছে।

– কি হলো কান্না করছো কেন?
– রাজ যে জীবনে তোমাকে পাবো না সে জীবন দিয়ে কি করবো?
– প্লিজ মৌ পাগলামি করো না।
– আচ্ছা আমায় একটু বুকে নিবে?
– আর কোনদিন নিতে বলবো না। সুসাইড ও করতে চাইবো না।
– আমি কিছু বললাম না।
আমার নীরবতাকে মৌ সম্মতি ভেবে নিল।
– মৌ আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
– আমি মৌকে জড়িয়ে নিতে চেয়েও কেন যেন পারলাম না।

– মৌ কিছুক্ষণ জড়িয়ে রেখে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল’ রাজ তুমি আমার বাসায় আসলে কিছু খেয়ে যাবে না?
– মৌ বাসায় রাইসা একা। ওকে না বলেই আসছি। আমার যেতে হবে।
– আচ্ছা চলেই যাবে। আঁকটানোর কোন ক্ষমতা আমার নেই। যাওয়ার আগে এই অভাগীর হাতে একগ্লাস শরবত খেয়ে যাও।

– আচ্ছা নিয়ে আসো।
– মৌ এক গ্লাস শরবত এনে আমার হাতে দিল। আমি এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিলাম।
– আচ্ছা আসি, আর শোন পাগলামী করো না কেমন?
– আচ্ছা তুমি সুখী হলেই আমি সুখী। আচ্ছা আর ক্ষানিকক্ষণ বসো না?
– না রাইসা একা ভয় পাবে।
– বসো তো দশমিনিট।
– আমি বিছানায় বসতেই শরীরটা কেমন করতে লাগল। মৌ বিছুক্ষণ পর এসে আমার জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। মৌকে সরাতে পারছি না। তারপর আর কিছু মনে নেই। সকাল বেলা সূর্যের আলো ভেদ করে যখন মুখে পড়ল। তখন ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি চোখ খুলে তাকাতেই দেখি, ড্রেসিংটেবিলের সামনে মৌ তার ভেজা চুলগুলো আঁচড়াচ্ছে। আমার উঠা দেখে মৌ তাড়াহুড়া করে আমার কাছে আসল।
– মৌ আমি তোমার কাছে রাত্রে এসেছিলাম না?
– হ্যাঁ,!
– তো আমি সারারাত তোমার এখানে থাকলাম কেমনে?
– আর বলো না রাত্রে শরবত খেয়ে তুমি বললে তোমার শরীর খারাপ লাগছে। বিছানায় বসেই ঘুমিয়ে গেলে। আর সারারাত সজাগ পাওনি। আমি ডাকতে চেয়েও ডাকিনি।
– কেন ডাকনি?
– তোমার কষ্টে হবে ভেবে।
– ধ্যাত তুমি ডেকে দিবে না? আচ্ছা এখন আমি আসি।
– মৌ এর বাসা থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে দেখি, রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
– আমাকে দেখেই রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ বাবাই ও বাবাই তুমি সারারাত কোথায় ছিলে?
– তুমি জানো না তোমাকে না দেখলে আমার কত কষ্ট হয়?
– বাবাই আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেয়ো না।

– হুমম মা কোথাও যাবো না। তুই যে আমার মা। কান্না করো না মা আমায়।
– বলো আর কোথাও আমাকে না বলে যাবে না?
– হ্যাঁ যাবো না মা কথা দিলাম।
– রাজ সারারাত কোথায় ছিলে?
– জানো রাত ১১ টায় রাইসা যখন ফোন দিয়ে কান্না করে করে বলল’ মামনি বাবাই কোথায় যেন চলে গিয়েছে। ‘ জানো এতো রাতে আমার আসতে হইছে। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত আমার বি হতো? এদিকে তুমি তোমার ফোনটাও নেওনি। কোথাও ছিলে সারারাত?
– আর বলো না আমার এক ফ্রেন্ড একসিডেন্ট করেছিল। ব্লাড লাগতো। তাই ব্লাড দিতে গিয়ে আর ওর অবস্থা দেখে আসতে পারিনি।

– কথা আমার কথা শুনে আর কিছু বলল না। আমি ইচ্ছা করেই সত্যটা লোকালাম কথা মৌ এর বাসায় থাকার কথা শুনলে আরো গন্ডগোল লাগবে।

-বাবাই তুমি রাতে খেয়েছো?
– না মামনি তুমি খেয়েছো?
– না, খায়নি। তুমি আমাকে না বলে চলে গিয়েছিলে।
– সরি মামনি।
– মামনি তুমি বাহিরে যাও তো।
– কেন মম?
– তোমার বাবাই এর সাথে কথা আছে।
– আচ্ছা ।
– রাইসা চলে গেলেই, কথা বলল, তুমি আমাকে না বলে কোথাও যাবে না। জানো সারারাত কত কান্না করছি?
– আরে কান্না করার কি আছে?

– যদি তোমার কিছু হয়ে যেত। জানো কত সাধনা করে পেয়েছি তোমায়? তুমি আমার সাত রাজার ধন।

– ধূর আমার কি হবে। আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি?
– হ্যাঁ ছোট্ট বাচ্চায়।
– অ্যা বললেই হলো?
– আচ্ছা সারারাত আমাকে কান্না করিয়াছ। এর শাস্তি ভোগ করো।
– শাস্তি!”
হুম শাস্তি।
– বারে আমার ভয় লাগছে। তোমার শাস্তির কখা শুনে। আচ্ছা বলো কি শাস্তি দিবে?
– কাছে আসো বুঝাচ্ছি কি শাস্তি।
– কাছে যাওয়া বারন আমার ভয় লাগে।
– বলছি কাছে এসো।
– না।
– তবেরে আসতে হবে না বলেই কথা আমাকে বিছানায় ফেলে দিল। বিছানায় ফেলে দিয়েই কথার ওষ্ঠদ্বয় আমার ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে দিল। আমি কিছু বলতে পারছি না। মুখখানা বন্ধ। আর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। এভাবে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পর কথাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
– রাজ তুমি ধাক্কা দিলে কেন?
– কথা তুমি যা করছ এটা বিয়ের আগে ঠিক না।
– আমি ঠিক বেঠিক বুঝি না আমি শুধু জানি তুমি আমার।
– কথা বিয়ের আগে আমি এসব পছন্দ করি না । তুমি ক্ষমা করে দিয়ো আমায়।

– হুম আমার কলিজার টুকরা বিয়ের পর তো আর কিছু বলতে পারবে না। আর তো কয়েকটা দিন।

– হুম ততদিন অপেক্ষায় থাকো। তাও এভাবে হামলা করো না।
– এদিকে দেখতে দেখতে কথা আর আমার বিয়ের দিন এসে পড়ে। অফিসের বন্ধু আর বান্ধবীদের নিয়ে কথাদের বাসায় যাচ্ছি। রাইসা আমার কুলে বসে আছে। রাইসা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে।
– বিয়ে বাড়িতে গিয়েই রাইসা কথার কাছে চলে যায়।

.
মামনি আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই বুঝি মামনি?
– হুম মামনি অনেক অনেক সুন্দর লাগছে।
– আচ্ছা মামনি আমাকে পড়ে ভুলে যাবে না তো?
– কথা রাইসার কপালে চুমু দিয়ে বলে। তুই তো আমাে রাজকন্যা। তোকে ভুলে থাকতে পারবো না রে মা। তুই আমাদের নয়নের মনি।
– আচ্ছা! তুমি থাকো আমি বাবাই এর কাছে যায়।

– রাইসা কথার কাছ থেকে এসে আমার কাছে এসে বসল। কাজি সাহেব এসে বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞেস করছে এমন সময় কথা এসে বলল ‘ দাঁড়ান কাজি সাহেব। এমন চরিত্রহীন ছেলের সাথে আমার বিয়ে হতে পারে না।
– কনের মুখে এমন কথা শুনে বিয়ে বাড়ির সবাই চমকে ওঠে।
– আমি স্টেজ থেকে উঠে এসে বললাম’ কথা কি হয়েছে? অপমান করার জন্য এতো আয়োজন করছ?
– এই কুত্তা আমার নাম ধরে ডাকার যোগ্যতাও তোর নেই।
– কি বলছো এসব? তুমাকে বিয়ে করতে জোর করিনি। আমাকে বিয়ে না করলে এমনেই বলো। প্লিজ মেয়ের সামনে চরিত্রহীন বলো না।
– কথা বিয়ে বাড়ির সবার সামনে, আমার গালে ঠাস-ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়। সবাই ভিডিও করতে ব্যস্ত লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি এমন অপরাধ করছি। যার জন্য, আমাকে এত অপমানিত হতে হচ্ছে । ম্যাডাম প্লিজ বলেন কি হয়েছে। আমি কি অপরাধ করছি বলেন?
– কথা এবার আরো বেশি রেগে গিয়ে বলল, আবারো চড় লাগিয়ে দিল! এই দেখ চরিত্রহীন। তোর আর মৌ এর ন্যুড! কুত্তা তুই যদি কোন দিন আমার সামনে আসিস তকে খুন করে ফেলব। তুই আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিস।আমার স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিস।
– কি বলছ এসব?
– কথা আমার মুখের উপর কয়েকটা ছবি ছুড়ে মারল।

– ম্যাডাম বিশ্বাস করেন আমি এসব কিছু করিনি।
– তাই না, মৌ আপু নিজে বলেছে তুই ওকে ব্ল্যাকমেল করে এমন করছিস। লজ্জা করে না এসব করতে।
– ম্যাডাম প্লিজ বিলিভ মি। আমি কেমন তা তো আপনি জানেন।
– হঠাৎ নিলয় এসে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বলল’দাঁড়া তোর বিয়ের সখ মিটাচ্ছি ।

– রাইসা দৌঁড়ে গিয়ে কথার পা জড়িয়ে ধরে বলল’ মম বাবাইকে ওই লোকটা মেরে ফেলবে। মম তুমি না করো না। তারা যেন না মারে, আমার বাবাইকে। আমার বাবাই ভালো। মম তুমি না বাবাইকে বিয়ে করবে। বলো না বাবাইকে যেন না মারে বাবাই তো মরে যাবে। মম তোমার পায়ে ধরে বলছি বাবাইকে বাঁচাও।

– কি বললি? কুত্তার বাচ্চা আমি তোর মম? কোন দুশ্চরিত্রের মেয়ের মা আমি হতে পারি না। কোন পতিতার মেয়ে, এসে আমাকে মা ডাকছে। যত্তসব। এই বলে কথা রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। রাইসা এসে ঠিক আমার পায়ের কাছে পড়ল।

চলবে???

বি:দ্র:গল্পটা দু’পর্বেই শেষ হবে। সবাই ভালো থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here