বাবার ভালোবাসা পর্ব-২০

0
607

#বাবার_ভালোবাসা।

পর্ব:২০

লেখা: #রাইসার_আব্বু।

– আপু আপনি এখানে?
– আর বলো না তুমি যে বললে সে কথাটা বলতে আসছিলাম।
– কথা মৌ’কে জড়িয়ে ধরে বলল ‘ আপু দোয়া করো রাজ রাজি হয়েছে। সামনে মাসেই আমাদের বিয়ে। তুমি কিন্তু সারাদিন থাকবে। চলো আমরা সবাই বিয়ের কার্ড বানাতে যাবো। কথা মৌ’কে সহ আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। রাইসা আমাে কুলে ঘুমিয়ে গেছে। কথা আমার পাশে বসে আছে। মৌ বার বার আমার দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে। আমি রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ কথা আমার গালে চুমু দিয়ে দেয়।
– মৌ এটা দেখার সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠল রাজ তেলাপোকা!
– মৌ এর মুখে তেলাপোকার কথা শুনে, কথা চিৎকার দিয়ে ওঠল। কথা তেলাপোকাকে ভীষণ ভয় পায়। এদিকে রাইসা ওঠে পড়ল।

– আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা মৌ ইচ্ছে করেই করল। কারণ মৌ এর ছলছল মুখ যে এটাই বলছে।

– আচ্ছা মামনি, তুমি কি বিয়েতে শাড়ি পড়বে?
– হ্যাঁ।
– তাহলে লাল রঙের শাড়ি পড়বে কেমন? আচ্ছা মৌ আন্টি লার রঙের শাড়ি পড়লে মমকে সুন্দর লাগবে না?
– হুম একদম রাজরাণী লাগবে। কথাটা বলতে গিয়ে মৌ এর কন্ঠসুর আকঁটে গেল।

– জানো বাবাই আমি কিন্তু নীল শাড়ি পড়বো।
– তাই বুঝি?
– হুম কারণ, আমি যে বরের মা। তাকে তো শাড়ি পড়তেই হবে।
– ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বলল’ স্যার এসে পড়ছি আমরা। এখানে খুব ভালো কার্ড বানায়।
– আমরা সবাই যখন গাড়ি থেকে নামতে যাবো ঠিক তখনি ড্রাইভার বলল’ কথা ম্যাডাম বেয়াদবি না নিলে আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
– হুম বলেন।
– ম্যাডাম সত্যি বলতে, আমি ভেবেছিলাম আপনার অফিসের একজন কর্মচারীর সাথে আপনার বিয়ে হচ্ছে। সাথে একটা মেয়ে। কোন পাগলেও এ বিয়ে করবে না। কিন্তু না এখন মনে হচ্ছে আপনি সত্যিই বড়ই ভাগ্যবতী। এমন একটা মেয়ে আর এমন একটা স্বামী পেতে যাচ্ছেন। যা সত্যিই যেকোন মেয়ের জন্য গর্বের বিষয়!

– আচ্ছা ধন্যবাদ। মুখলেস ভাই।
– ম্যাডাম আপনি আমাকে ভাই ডাকলেন?
– হ্যাঁ!
– আমার অনেক ভালো লাগছে।
– এদিকে মৌ’ কিছু না বলে হনহনিয়ে মার্কেটে গিয়ে ঢুকল। বিয়ের কার্ডের অনেকগুলো ডিজাইন দেখছি। কোনটাই পছন্দ করতে পারছি না। কথাও কনফিউশনে আছে। কথা দু’টো কার্ড নিয়ে মৌ’কে বলল ‘ দেখোতো বোন কোন কার্ড সুন্দর। তুমি যেটা বলবে সেটাই ছাপা হবে।
– মৌ এ বার কান্না আঁকটাতে পারল না কেঁদেই দিল!
– মৌ এর কান্না দেখে কথা অবাক হয়ে যায়। কি হলো আপু কাঁদছো কেন এভাবে?
– মৌ কিছু না বলে আরো ফুপিয়ে কেঁদে ওঠল।
– আপু কি হয়েছে বলো এভাবে কাঁদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?
– মৌ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল ‘ জানো আপু ছোটবেলায় মা মরে গেছে। জীবনে কেউ আমাকে এতটা ইমপয়টেন্স দেয়নি। কিন্তু আজ সামান্য কর্মচারীকে তোমার বিয়ের মতো এতো বড় একটা বিষয়ে পছন্দ করতে দিয়েছো। এই আনন্দে কান্না আঁকটাতে পারলাম না। নীল কালারটি নাও। সুন্দর লাগবে।
– কথা মৌ’কে জড়িয়ে ধরে বলল ‘সত্যিই তুমি আমার বোন। আর শোন বিয়েতে সব দায়িত্ব তুমি পালন করবে।
– মৌ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

– কার্ড ছাপাতে দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম। কথা তাদের বাসায় চলে গেল। বিয়ের ডেটও ফিক্সড। রাইসাকেও কথা দিয়েছি কথাককে বিয়ে করবো। কিন্তু সত্যিই কি আমি কথাকে ভালোবাসতে পারব? যে মন মৌকে দিয়েছিলাম সে মন কথাকে দিতে পারবো? আমি যে এখনো মৌ কেই ভালোবাসি। আমি জানি মৌকে কখনো আর কাছে নিতে পারবো না। কারণ বিশ্বাস কাছের টুকরোর মতো যা একবার ভাঙলে আর জুরো লাগে না। কিন্তু মৌকে তার সামনে যতটা ঘৃণা করি কিন্তু তার আড়ালে তার চেয়ে শতগুণ বেশি ভালোবাসি। আর কয়েকটা দিন তারপর হয়ে যাবো অন্য কারো। তখন কি করবো। এদিকে চাঁদের আলো ভেদ করে জোছনা রাইসার মুখে এসে পড়ছে। মায়াবি মুখটা যে স্বীয় মহিমায় আলো ছড়াচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল” সত্যিই কথা রাইসার মা হতে পারবে?’ এখন কথা রাইসার মা হয়ে থাকতে চাইলেও ভবিষৎতে কি থাকবে? মাথাটা কেমন করে যেন ঘুরছে। যদি কথা রাইসাকে পড়ে না দেখতে পারে। আমি যে রাইসার কষ্ট সহ্য করতে পারব না । রাইসার যে আমার বেঁচে খাকার অবলম্বন। রাইসার মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর এসব ভাবছি।
– এদিকে কথা এশার নামায শেষ করে যখন তার রুমে আসল। এমন সময় কথার বাবা দরজায় নর্ক করে বলল’ মা আসবো?’
– হ্যাঁ আসো।
– কেমন আছিস মা?
– হুম বাবা অনেক ভালো। আমি সবচেয়ে হ্যাপি। আর হ্যাপি হওয়ার পিছনে মূল সহায়ক তুমি। তুমি আমার সব আবদার মেনে নিয়েছো।
– তাই বুঝি?
-হ্যাঁ বাবা ।
– আচ্ছা মামনি কিছু না মনে করলে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বাবা বলো!
– মা’রে রাজকে তুই বিয়ে করছিস ঠিক আছে। কিন্তু তুই নাকি আর কোন সন্তান নিবি না?
– হুম বাবা। রাইসা তো আছেই।

– মা’রে সৎ মা কখনো আপন মা হতে পারে না। যতই আদর যত্ন করিস একটু শাসন করতে গেলেই বলবে, আজ নিজের মা হলে এমনটি করতো না। যাই হোক দোয়া করি মা তোর জন্য।

– বাবা রাইসা অনেক ভালো। আর পড়ে তো আমরা আরো সন্তান নিবোই। তোমার জামাই ও পরে না করতে পারবে না।
– আচ্ছা মা এখন ঘুমা আমি আসি।

-কথার বাবা চলে গেলেও, কথার বাবার বলা কথাটা বার বার তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এসবব ভাবতে ভাবতেই কখন যে কথা ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় খেয়াল নেই।

– এদিকে মৌ এর ঘুম আসছে না। বারবার রাজের মুখটা ভেসে ওঠছে। রাজের সাথে কাটানো স্মৃতি ভালোবাসা সবকিছু কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। যখনি রাজ আর কথার বিয়ের কথা মনে পড়ে তখন মৌ নিজেকে শান্ত করতেপারে না। কষ্টে তার বুকটা ফেটে যায়। মৌ কি করবে কিছু ভাবতেও পারছে না। বিছানা থেকে উঠে রাজের ছবিটা আলমারি থেকে বের করে দেখতে লাগল। আজ যেন ছবিটাকে জীবন্ত মনো হচ্ছে। মন চাচ্ছে সবকিছু ফেলে রাজের কাছে চলে যাক। কিন্তু না, এ যে সম্বব না। রাজকে সে যে কষ্ট দিয়েছে। তাই রাজের ছবিটাই তার সম্বল। মৌ রাজের ছবিটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বাচ্চা মেয়ের মতো ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। সে পারবে না রাজকে ছাড়া বাঁচতে নিঃশ্বাস নিতেও যে কষ্ট হয়। মৌ এর খুব কষ্ট হচ্ছে। রাজকে ঠকানোর পরিণাম যে এতো ভয়াবহ হবে আগে জানা ছিল না। কথা আর রাজের বিয়ে হলে, তার কি হবে। মৌ এসব ভেবে আর বিছানায় থাকতে পারে না। রাজের বাসা পাশাপাশি হওয়ায়। মৌ এক দৌঁড়ে রাজের বাসায় গিয়ে নর্ক দেয়। বারবার নর্ক দিচ্ছে। এ দিকে রাজ এখনো রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরেক হাতে মৌ এর ছবিটা দেখছে। আর অন্যদিকে মৌ কলিং বেল বাজিয়েই চলছে। রাজ অনেকটা বিরক্তি নিয়েই দরজাটা খুলে দেয়। দরজাটা খুলে দিতেই মৌ রাজকে জড়িয়ে ধরে। রাজ অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। দরজা খুলার সাথে সাথেই এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে। ক্ষানিক পর রাজ বুঝতে পারল এটা মৌ। আর বুঝেই মৌ কে তার কাছ থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। মৌ রাজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।

– কি হলো? আপনি ছাড়ছেন না কেন।
– রাজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না । তুমি যদি কথাকে বিয়ে করো আমি সত্যি সত্যি সুসাইড করবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যা বলবে তাই শুনমো। তুমি সারাদিন বসে থাকতে বললে বসেই থাকবো। দাঁড়িয়ে থাকতে বললে দাঁড়িয়েই থাকবো। তুমি তোমার বাড়ির কাজের মেয়ে করে রেখে দাও না আমাকে। আমাকে আমার মেয়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না। আমি কি রিয়ে বাঁচবো বলো তো?
তোমার বুকটাই যে আমার শেষ ঠিকানা। আমি তোমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইছি। ভিক্ষা দাও আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে। তুমি আমাকে ক্ষমা করে তাও। তবুও এ বিয়েটা করো না।

-মৌ আমাকে ছাড়ো তারপর বলছি।
– না ছাড়বো না । জানো রাজ একটা মেয়ের নিকট সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় কি? জানো না। একটা মেয়ের নিকট মৃত্যুর চেয়ে কষ্টকর হচ্ছে তার সামনে তার প্রিয় মানুষকে অন্য কেউ জড়িয়ে ধরলে। কিস করলে। নিজের বলে দাবি করলে জানো সেদিন গাড়িতে কথা যখন তোমাকে কিস করে তখন আমার কলিজা এফোড় আর ওঁফোড় হয়ে যায়। আমি পারি না সহ্য করতে তারচেয়ে বরং আমাকে মেরে ফেল। তবুও কথাকে বিয়ে করো না।

– মৌকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম’ জানো, মৌ আমি তোমার স্বামী না। হ্যাঁ একসময় ছিলাম। তবে ডির্ভোস হয়ে যাওয়ার পর আমি তোমার কাছে পরপুরুষ। আর হ্যাঁ এখন শুনো একটা ছেলের কাছে মৃত্যুর চেয়ে কষ্টদায়ক কি জানো? জানো না। সেটা হচ্ছে তারই সামনে তার স্ত্রী যখন অন্য ছেলের সাথে পরকীয়া করে। যা তুমি করেছ। বলো কি দোষ ছিল? হ্যাঁ দোষ হয়তো ছিল,আমি পঙ্গু ছিলাম। আচ্ছা আমি কি পঙ্গু ইচ্ছা করে হয়েছি। আমার আল্লাহ খুশি হয়ে আমাকে পঙ্গু বানিয়েছেন। তিনি হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসাটা আমাকে উপলব্ধি করিয়েছেন।
– মৌ আমার মুখে এমন কথা শুনে দু’পা ঝাপটে ধরে বলতে লাগল’ রাজ আমাকে ক্ষমা করো। দাও না তোমার পায়ের নিচে একটু স্থান। আমি যে আর পারছি না। আমার কলিজাটা খাঁ খাঁ করছে। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। বলো কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তাই করব। তবুও আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। একটু বুকে নিবে আমায়?
– মৌ এর চোখের পানিতে পানিতে পা ভিজে যাচ্ছে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আর পারছি না ।
– মৌ বার বার বলছে আমাকে বুকে নাও না একটু। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আর সহ্য করতে পারলাম না। টান দিয়ে মৌকে বুকে টেনে নিলাম। শক্ত করে জড়িযে ধরলাম। মৌ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মৌ এর চোখের পানিতে শার্ট ভিজে যাচ্ছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তবুও কেঁদে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল রাইসার মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করার কথা। সাথে অসুস্থ অবম্থায় মৌ আর সাইফের কথা। পারলাম না বুকে রাখতে মৌকে এক ধাক্কায় বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম’ ক্ষমা করো আমায়। তোমাকে ভালোবাসা যায় বুকে নেওয়া যায় না।’ আর বিয়ে আগামী সপ্তাহে কথাকেই করবো।

চলবে””””

বি:দ্র:ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here