বাবার ভালোবাসা পর্ব-৪০

0
1047

#বাবার_ভালোবাসা

পর্বঃ৪০

লেখাঃ #রাইসার_আব্বু

” ম্যাডাম কি করছেন এসব? ভয় নেই আপনার কিছু হবে না ছাড়েন প্লিজ। রাজ কথাকে ছাড়িয়ে দিতেই কথা বলতে লাগল’ রাজ কেন বাঁচালে আমাকে? আমি ওই নরপশুদের হাতেই শেষ হয়ে যেতাম। কি করবো এ নষ্ট শরীর নিয়ে? আমি তোমার আর রাইসার সাথে খুব বেশি অন্যায় করেছি। যার জন্য নীলয় আমাকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে পতিতার ট্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে। আজ আমরা কোটিপতি থেকে রাস্তার ফকির। আজ ছেলেগুলো ছিল নীলয়ের পোষা কুকুর। জানতাম না নিলয় এতটা খারাপ। তার প্রয়োজন ছিল আমার শরীর আর টাকা। এখন আমার কোন দাম নেই! আমাকে সে বিক্রি করে দিয়েছিল! এদিকে বাবা স্টোক করে হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

” কি বলছেনন এসব ম্যাডাম?
” হুম রাজ সব সত্যি বলছি। আল্লাহ তোমার আর রাইসার প্রতি অবিচার করার শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে আর বাবাকে। বাবা যে অর্থের গৌরর্ব দেখাতো তা আজ মাটির সাথে মিশে গেছে। জানো রাজ বাবার জন্য খুব কষ্ট হয়। ডাক্তার বলেছে বাবা নাকি আর বাঁচবে না যদি উন্নত চিকিৎসা না করানো যায়।

” কান্না করবেন না ম্যাডাম সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আচ্ছা বলেন তো কেন এমন হলো? নীলয় তো আপনাকে ভালোবাসতো। একটু সবকিছু বলবেন কি হয়েছে ঠিক আপনার সাথে?

” তাহলে শোন”

নীলয়বলেছিল আমাকে কখনো কষ্ট দিবে না। বিয়ের আগে আমার দু’পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিল। বলেছিল সে ভালো হয়ে গেছে। সে যা কিছু করেছিল সব আমাকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমাকে পাওয়ার জন্য মস্ত বড় অন্যায় করে ফেলেছে। সেদিন তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভালোবাসতে পারিনি। পরে যখন বাবা বলেছিল তাকে বিয়ে করতে। আমাকে তার মাথা ছুঁয়ে কসম করতে বলেছিল তখন পারিনি বাবার কথা ফেলতে। আর তাছাড়া ভাবছি তুমি আর কোনদিন সুস্থ হবে না। আমার বিয়ের দিন রাইসাকে অনেক কথা শুনিয়েছি। আমি সত্যি নীলয়রের অভিনয় বুঝতে পারিনি। নীলয় বিয়ের পর একটা মুহূর্ত আমাকে তার চোখের আড়াল হতে দেয়নি। বাবাকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসত মনে হতো। আমাকে প্রতিদিন নিজ হাতে খাইয়ে দিতো। বাবা আমার আর তার প্রতি নীলয়ের ভালোবাসা দেখে সব সম্পত্তি নীলয়ের নামে উইল করার পর দিন নীলয় আমাকে ফোন দিয়ে বললো ‘ কথা তুমি বিরিয়ানী রান্না করে রাখো তো। ”

আমি আর কিছু না বলে ওর জন্য বিরিয়ানী রান্না করে রাখি। রাতে যখন দরজা নর্ক করে। তখন দরজা খুলেই ওর মুখ থেকে একটা বিশ্রী গন্ধ পায়। আমি বুঝতে পায় যে ও মদ খেয়েছে। কিন্তু যখন তার পিছনে একটা মেয়েকে দেখতে পায় তখন চমকে যায়।
-নীলয় এ মেয়ে কে?
” সেটা তোমাকে জানতে হবে না। ”

” কি বলছো এসব তুমি? আমি তোমার বউ? তুমি না বলতে আমি তোমার কলিজার টুকরা? তোমার চাঁদ। তোমার ভালোবাসা।

” হাহা সেটা কাল পর্যন্ত ছিলে।” এখন সরো। এই বলে নীলয় মেয়েটাকে নিয়ে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আমার খুব করে কান্না পাচ্ছিল। বারবা দরজা ধাক্কাছিলাম। কিন্তু দরজা খুলছিল না। আমারর ভেতরটা মনে হচ্ছিল পুড়ে যাচ্ছিল। দরজা আবারো ধাক্কা দিতেই, নীলয় দরজা খুলে কষে থাপ্পর দিয়ে বলতে লাগলো, কাল এ বাড়ি থেকে চলে যাবি। আর সময় হলে ডির্ভোস লেটার পেয়ে যাবি। ”

” নীলয় প্লিজ এমন ভাবে বলো না? তোমার পায়ে পড়ি। এই বলে নীলয়ের পা দু’টি ঝাপটে ধরেছিলাম। কিন্তু নীলয়ের মনে একটুও দয়া হয়নি। সে আরো হেসে হেসে বলছিল, ‘ আমার জন্য নাকি তার অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। আর তোমাকে সেই একসিডেন্ট করিয়েছিল। ”

” তোমাকে একসিডেন্ট করানোর কথা শুনে নীলয়ের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগি, ‘ এই ছোটলোকের বাচ্চা তোর অন্তর কাঁপলো না। ওতটুকু একটা মেয়ের কাছ থেকে তার বাবাকে আলাদা করার প্ল্যান করতে?”
তোর তো সাহস কম না আমাকে
থাপ্পর দিস?

” কি করবো তোর মতো ছোটলোককে? যে টাকার জন্য এতোটা নিচে নামতে পারে?

” নীলয় আমাকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেয়। তার পর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি একটা ঘরে বন্ধি। কিছু বুঝতে পারছিলামনা কিছুক্ষণ পর রুমে একটা মধ্য বয়স্ক লোক এসে বললো, পাখির কি জ্ঞান ফিরেছে?
” পাখি কে? আর আমি এখানে কেন?
” কেন তোমার তো এখানেই থাকার কথা। এখন এতো ভনিতা না করে চুপচাপ শুইয়ে পড়ো।

” মানে? আমি বাসায় যাবো। ”

” হুম যাবে তার আগে আমাকে
খুশি করতে হবে।

কি বলছেন এসব?

” আরে ন্যাকা কিচ্ছু বুঝে না। তোমার জন্য এক লক্ষ টাকা দিয়েছি। এই কথা বলে লোকটা যখন আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়তে আসে তখন আমি
খাটের কাছে থাকা গ্লাস দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে পালিয়ে আসি। তারপর বাসায় এসে বাবাকে সবকিছু বলতেই বাবা স্টক করে। বাবাকে বাঁচানোর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন তাই চাকরির কথা শুনে সেদিন ওই হোটেলে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম না হোটেলে অশ্লীল কাজ হয়। সেদিন যদি আপনারা না থাকতেন জানি না কি হতো। এই টুকি বলে কথা থামল।

” আমি বুঝতে পারলাম কথার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কথার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। রাইসাকে ইশারা দিয়ে পানি আনতে বললাম। রাইসা গাড়ি থেকে বোতল বের করে কথার হাতে দিল। কথা ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবারো বলতে লাগলো ‘ আজকে নীলয় লোক পাঠিয়েছিল আমাকে মারার জন্য। ভাগ্যক্রমে আজকেও আপনারা বাঁচালেন।
আচ্ছা রাজ আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?

” ক্ষমা সেটা তো অনেক আগেই করে দিয়েছি। আর হ্যাঁ ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই আমার বিপদে আপনি পাশে ছিলেন। তাই আপনার বাবার চিকিৎসার কোন চিন্তা করতে হবে না। হসপিটালে সব বলে দিবো। আচ্ছা রাজ আমাকে কি আর একবার রাইসার মম হওয়ার সুযোগ দেওয়া যায় না? আমি না হয় বাকিটা জীবন তোমার পায়ের নিচেই কাঁটিয়ে দিবো।

” বাবাই চলো তো। এসব ড্রামা শোনার সময় নেই।

” কথা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। ”

রাইসাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়লাম। বাসায় এসে বসে আছি বিছানায়। তখন রাইসা বললো’ বাবাই তোমাকে একটা কথা বলি?”

” হুমম মা বল। ”

” বাবাই জানো আল্লাহ আমার সব কথা শুনেছি। আল্লাহ সব বিচার করছে। তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে আল্লাহ তাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে। আল্লাহ অনেক অনেক ভালো তাই না বাবা? আমার কথা কেউ যখন শুনেনি তখন তিনি শুনছে। আমার সব আশা পূরণ করে দিয়েছে।

‘ হুমম মা। আল্লাহ সবার কথাই শুনে। ‘ আর মনে রাখবে মানুষের কৃতকর্মের ফল তাকেই ভোগ করতে হবে।

‘ রাতে ডিনার করার আগে হসপিটালে ফোন করে কথার বাবার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে দিলাম। কাজের লোকটা এসে খাবার দিয়ে গেলো। রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছি আর নিজে খাচ্ছি। খেতে খেতে রাইসা বললো,’ বাবাই তোমাকে আরেকটা কথা বলি?”

” হ্যাঁ বলো। ”

” বাবাই ডাক্তার কণা আন্টিকে তোমার কেমন লাগে?”

” হুম ভালোই তো। মানুষের অনেক উপকার করে। ”

” হুম বাবাই অনেক ভালো। তুমি যখন অসুস্থ ছিলে তখন অনেক সাহায্য করছে আমাদের। তোমাকে চিকিৎসার কোন টাকা নেয়নি। শুধু নিয়েছিল আমার পাপ্পি। আচ্ছা বাবাই ডাক্তার আন্টিকে বলবো আমার মম হতে? ”

” রাইসা মা আমার কি সব বলছো? এসব কখনো বলো না তোমার আন্টি কষ্ট পাবে। ”

” অ্যা বললেই হবে কষ্ট পাবে। ‘ আমার বাবাই কী কম? আমার বাবাইকে না করবে? আমি একবারর বলেই দেখি। আমি বলবো যে আন্টি তুমি কি আমার মম হবে?

” কি বলছো এসব মামনি? এসব মানুষ শুনলে কি বলবে?”

” বাবা তুমি রাজি হয়ে যাও। আমি আন্টিকে রাজি করাবো! ”

” রাইসা চুপ করবে তুমি? কি সব বলছো? আর একটা কথাও বলবে না। এখন ঘুমাতে যাবে। আরেকটা কথা বললে একটা থাপ্পর দিবো। ”

” রাইসা কিছু না বলে এক দৌড়ে বিছানায় চলে গেলো। ” আমি আর রাইসাকে কিছু বললাম না। দেয়ালে লাগানো মৌ এর ছবিটা দেখছি আর ভাবছি। যে মা নিজের মেয়েকেই এতো কষ্ট দিয়েছে। আর সৎ মা আনলে কি রাইসাকে মেনে নিতে পারবে? এখন হয়তো রাইসাকে ভালোবাসলেও পরে দেখা যাবে সময়ের পরিক্রমায় রাইসা বুঝতে পারবে সৎ কথাটা সব ক্ষেত্রে ভালো হলেও মা এর আগে বসলে সেটা বেশিরভাগ সময় কষ্টের কারণ হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাইসার কথা ভাবছি। চোখ থেকে নিজের অজান্তেই পানি পড়ছে। রাইসাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। রাইসার পাশে চুপিচুপি এসে বসলাম। রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। বুঝতে পারলাম রাইসা এখনো
ঘুমায়নি। চোখ থেকে মাঝে মাঝে গড়িয়ে পানি পড়ছে। আমি রাইসার কপালে পাপ্পি দিয়ে বললাম। আমার মা’টা কাঁদছে কেনো? এই যে কান ধরছি আর বকা দিবো না। তুমি না আমার মা ক্ষমা করে দাও।
” এই না একদম না আমার বাবাই কানে ধরবে না।”

” কেন কানে ধরবে না? রাইসার বাবাই পঁচা। তার রাজকন্যাকে বকা দিয়েছে। ”

” চুপ আর একটা কথা বলবে না। রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো’ বাবাই আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি বাবা। আমার কোন মম চায় না। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি আর কোনদিন মমের কথা বলবো না। ”

” মা কান্না করে না। এইবার ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। রাইসার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রাইসা ঘুমিয়ে যায়।

” পরের দিন সকালে রাইসা একটা নতুন এ্যালবামের জন্য ঢাকায় যাবে। রাইসাকে নিয়ে যখন ঢাকায় যাবো এমন সময় দেখি ডাক্তার কণা আমাদের বাসায়। রাইসা কণাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছো আন্টি?
” জ্বি মামনি ভালো। ‘ আমার মামনি তো আমার চেয়েও শতগুণ বড় সেলিব্রেটি হয়ে গেছে। মামনির সাথে দেখা করার সময় পাওয়া যায় না । আচ্ছা রাজ আপনি কেমন আছেন?

” এইতো আলহামদুলিল্লাহ!

” আচ্ছা ভালো থাকলেই ভালো। আর হ্যাঁ যে কারণে আসা সামনে ৭ তারিখ আমার বিয়ে আপনারা কিন্তু আসবেন। এই যে আমার বিয়ের কার্ড। আর রাইসা মামনি সে দিন তুমি কিন্তু সারাদিন আমাদের বাসায় থাকবে!

” আমি রাইসার মুখের দিকে তাকালাম। রাইসা কেঁদে দিবে দিবে ভাব। কণা তার বিয়ের কার্ডটা হাতে দিয়েই আসি বলে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

” চলবে”””””

পরবর্তী দু ‘পর্বে সমাপ্ত ইনশা-আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here