#বাতাসে_তার_সৌরভ–১২
” ম্যাম ওপরের সব ডাস্টবিন পর্যন্ত চেক করা হয়েছে। প্লীজ একটা ঠান্ডা মাথায় ভাবুন ”
“আমি মাথা ঠান্ডাই রাখছি। নয়ত এতক্ষণে গ্যাব্রিয়েল কিচেনে কী হতে পারতো, আপনাদের আইডিয়া থাকার কথা” শ্রেয়ার কন্ঠ শীতল।
নদী সেকেন্ড ফ্লোরের প্রতিটি কোণা ঘেটে দেখছে৷ এদিকে ডিনারের সময় ফ্লোরে গেস্টের সংখ্যাও বেড়ে গেছে অনেক। তাদের সামনে কোন ভাবেই বিষয়টা ঘুণাক্ষরে বুঝতে দেয়া যাবে না। শ্রেয়ার সাথে আগত চিনেমেন দুটোকে আর দেখা গেল না। গ্যাব্রিয়েল কৌশলে তাদের নিজের ক্যাবিনে ইনভাইট করে নিয়েছিল। জেরিন নিজে তাদের এটেন্ট করছে, এদিকে শ্রেয়া বাইরে তান্ডব চালানো বাকি রেখেছে৷থেকে থেকে চাপা ক্রোধে থেকে থেকে গুমড়ে উঠছে,
” এত বড় একটা কন্ট্রাক্ট নিয়ে এলাম আর তার বিনিময়ে এইখানে অবশেষে চুরিচামারি দেখতে হলো ”
” ম্যাম আপনি কি একবার আপনার গাড়িতে দেখবেন? ”
জেরিনের কথায় শ্রেয়া ঘুরে তাকালো। ঠান্ডা একটা দৃষ্টি। জেরিনের শরীর হীম হয়ে এলো, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইফতেখারের বোন পরিচয়টা ফেলনা নয়। ছয়মাস আগে এই মহিলার ফ্ল্যাট থেকে একজন কাজের লোকের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। আত্মহত্যার কথা বললেও সবাই আসল কারণটা জানে। এই মহিলার উগ্র রাগ খোদ শয়তানকে ধারণ করে।
শ্রেয়া থমথমে গলায় বলল,-তুমি কি আমাকে মিথ্যা বাদী প্রমাণ করতে চাও?
-নো ম্যাম মোটেও না আমি শুধু…
-তুমি শুধু তাকে নিয়ে এসো, আমার টেবিলে যে সার্ভিস দিচ্ছিলো।
অচিরেই নদীকে নিয়ে আসা হলো।দোতালায় জেরিনের অফিসরুমে দাঁড় করানো হলো। তার পার্স ব্যাগ দিয়ে দেওয়া হলো রাজিয়াকে। রাজিয়া চোঝ ছোট করে দেখছে গাউসিয়া থেকে কেনা সাধারণ ব্যাগের আনাচেকানাচে, ছোট ছেড়া টাকার ব্যাগ অল্প খুচরো, ছোটো চেইনে কটা পয়সা। মুখে বাঁকা হাসি।শুধু একটা বাহারি চাবির রিং নজর কাড়লো তার।
জেরিন শান্তমুখে চেককরলো নদীর ইউনিফর্মের পকেট। নদী কারো চোখে চোখ রাখতে পারছিলো না।
“কাপড় খোলো”
ঘরে ঢুকেই শ্রেয়া রুক্ষ কন্ঠে বলল।
নদী স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে তার সামনে এক মূর্তিমান সরীসৃপ যেন। জেরিন রাজিয়াও চমকে গেছে।।
” কথা কি বোঝ না? কাপড় খোল।শার্ট খোলো এরপর আন্ডার গার্মেন্টস ”
জেরিন এগিয়ে এলো, আচ্ছা ম্যাম আমি ওকে ওয়াশরুমে নিয়ে..
” না!” শ্রেয়ার বজ্রকন্ঠ,” আমি নিজে দেখব”
নদী মরিয়া হয়ে বলল ” ম্যাম আমি হাতজোড় করছি আমি সত্যিই কিছুই নেইনি জেরিন ম্যাম দেখেছেন আমি নেইনি ম্যাম…, ”
” না নিলে এত টেনশন কেন? তোমার তো কপাল ভালো আমি চেক করতেসি। তবে তোমার মনেহয় ইচ্ছা থানা নিয়ে চেক করাই পুরুষ অফিসারগুলোর সামনে৷ তাই চাচ্ছ ওকে …”
শ্রেয়া প্রচন্ড ক্ষিপ্রতার সাথে হাতের মোবাইল বের করলো। রাজিয়া জেরিন দুজনই চমকে গেল।এখন কিচেনে কোন ধরনের পুলিশি মামলা হলে সর্বনাশ,
” নদী ঘাউড়ামি করো না উনি তো মেয়েই খুলে ফেলো ..”
নদী ধীরেগতিতে তার ইউনিফর্মের কোটির বোতাম আলগা করলো।অথবা তার হাত করলো বুকের মাঝে মন বলতে কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিলো। মুখ রক্তিম চক্ষু ঝাপসা।নদী টের পাচ্ছিলো ঘরের বাইরে রেস্তোরাঁর পুরুষ কলিগরা দাঁড়িয়ে। তুষার মুখ চুন করে উঁকিঝুকি মারছিলো।কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। তারাও নিশ্চয়ই জানে কী হচ্ছে? শ্রেয়ার নদী কোটির পকেট চেক করছে।
” ডোন্ট বি শাই বেইবি, ইউ হ্যাভ টু পে টুবি ওভারস্মার্ট, আমার সাথে ফাজলামোর মূল্য তো দেওয়া দরকার ” শ্রেয়ার নিচু বাক্যবান নদীর কান এড়ায় না,”ঝামেলা যদি আর না চাও তাহলে এখন শার্ট খোল,এরপর স্কার্ট ”
নদীর হাত যন্ত্রের মতো শার্টের বোতামে আঙুল চালাচ্ছে,মুহূর্তে মনে হলো যেন হাজার হাজার চোখ সারাঘরের দেয়াল জুড়ে তাকেই দেখে চলেছে; দেখছে দারিদ্র আর ক্ষুধার এক কদর্য নগ্ন রূপ।
নদীর মনে হলো শ্বাসবন্ধ হলেই যে মানুষের মৃত্যু হয় তা নয় ,কখনও শ্বাস নিয়েও মানুষ মরে। জীবনে আর কতবার এভাবে মরতে হবে জানে না।
– পুরা শার্ট খোল, তোমার কি মনে হয় আমি তামাসা দেখছি আমি…
শ্রেয়া পুরাটা শেষ করতে পারল না তার মোবাইলে কল এসেছে। ” ওয়াট? ইউ গট ইট?কোথায়? ”
শ্রেয়া একঝলক নদীকে দেখে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলো। নদী কতক্ষণ মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিল জানেনা,
জেরিন ম্যাম দ্রুত ঘরে ঢুকে নদীর পোশাক ঠিক করলেন। ” কোটিটা পরে নাও নদী, চল অনেক রাত হয়ে গেছে।তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বলেছেন জি এস স্যার নিচে অপেক্ষা করছেন ”
নদীর সাথে চোখাচোখি হওয়ার মুহূর্তই হয়তো দুর্বল ছিলো। বালু দিয়ে গড়া ভাস্কর্য ঝুরঝুর করে ঝরে পড়লো।
” শক্ত হও মেয়ে, কখনো কখনো কিছু পরিস্থিতি আমাদের পোড়ায় আরো নিখাঁদভাবে গড়ার জন্য৷ ভেঙে ছড়িয়ে যারা পড়ে, তারা কখনো লড়তে জানে না। চল এখন, রাত হয়ে যাচ্ছে। তুষার তোমায় পৌছে দেবে ”
নদী কান্না সামলে এগিয়ে গেল, জেরিনের চোখ আর্দ্র।মানবীয় বিচিত্র অন্তরসায়ন, অপমান, ক্ষোভ অশ্রু ভাগ করে নিলে ওজন কমে যায়।নিচে নেমে গেটের জাছে একটা দীর্ঘ অবয়ব নদীর পায়ের গতি মন্থর করে দিলো। যদিও নদী তার সামনে থেকে পালাতে পারলে বাঁচে,মুখ বন্ধ হয়েও মন চিৎকার করে বলছে ,” আমায় যেতে দিন ”
*******
মেহরোজকে তুষারের সাথে বিদায় জানিয়ে গ্যাব্রিয়েল তার অফিস রুমে ফিরে এসেছে । ঘটনা যা ঘটেছে তাতে শ্রেয়ার সাথে আগত বিদেশি দুজন ভড়কে যাবার কথা।সময়মতো তাদের খুব কায়দা করে নিজের অফিস রুমে বসিয়ে বাকি কথা সেরেছে। এর মাঝে শ্রেয়া তুলকালাম করেছে।
গ্যাব্রিয়েলের ফোন পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে শ্রেয়া এলো, বিদেশি দুজনও অপেক্ষায় ছিল,
” পেয়েছ কোথায় ”
” আছে, এত তাড়া কিসের আগে তোমার বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে দাও। তাদের আমাদের অফার খুব পছন্দ হয়েছে।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এই না হলে বন্ধু?
গ্যাব্রিয়েল অথবা রম্যের কথায় শ্রেয়া একটু চমকে গেলেও দ্রুত সামলে নিলো। অতিথি বিদায় করেও রম্যের শীতল দৃষ্টি তার কাছে জবাবদিহি আশা করছিল,
-রমি আই এম ভেরি সরি৷ তোমাকে হিউমিলেট করার আমার কোন ইচ্ছা ছিলো না ব্যাট আমি কান্ট হেল্প ডুইং ইট। আমার মৃত হাবির দেওয়া রিং, কার্টিয়ের সলিটায়ার। এটা হারাতে পারি না আমি।
-উইথ আউট এভিডেন্স তুমি যাকে তাকে ব্লেইমও করতে পারো না শ্রেয়া।
– ওই মেয়েটা ছাড়া ক্যাবিনে আর কেউ ছিলনা। স্যুপ শেষ করে লিয়ংকে নিয়ে আমি পুল সাইটে গিয়েছিলাম ফিরে এসে দেখি পার্সে রিংটা নেই।
-তোমার আঙুলে থাকার কথা পার্সে কি করছিল?
-লুজ ছিলো..
-পার্সেই ছিলো?
বলতে বলতে রম্য হাতে টিস্যু দিয়ে পেচানো একটা আংটি খুলে দেখালো শ্রেয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
” আমার কেবিনের এটাস্টেট বাথের প্যানে পড়েছিলো। যেটা তুমি শেষবার ইউজ করেছিলে। সমস্যা হলো,তুমি ফ্ল্যাশ করনি এটা ওখানেই পড়েছিল।”
– না না আমি তো ফ্ল্যাশ করেছিলাম এটা…শ্রেয়া বলতে বলতে থেমে গেল, “মানে তখনই ইট স্লেপ্ট আওয়ে এখন বুঝলাম…
”
– আমি এই ব্যাপারে ডিস্কাস করতে আগ্রহী না। শুধু আন্টি ফেরত দেওয়ার রিওয়ার্ড হিসেবে একটা প্রমিজ করবে যে এরপর তুমি আমার রেস্টুরেন্টে পা রাখবে না।ইউ আর নট এট অল এলাওড টু বি হিয়ার এনিমোর।
শ্রেয়া এগিয়ে এসে রম্যের গাল আদুরে ভাবে স্পর্শ করল – রমি, এটা সামান্য একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং।
– সেটাই ধরে নিতাম যদি আমি তোমাকে না চিনতাম। তুমি কতটা রিভেঞ্জ মাইন্ডেড এটা আমার থেকে বেশি ভালো আর কেউ জানে না। অথচ সেদিন মেয়েটা শুধু তার ডিউটিই করছিলো। তুমি তোমার পাওয়ারফুল ভাইয়ের প্ররোচনায় এসে একের পর এক বোকামি করে যাচ্ছ। গ্যাব্রিয়েল কিচেন নিয়ে তার সমস্যা সে আমার সাথে বসুক, তুমি মাঝখানে কেন আসছ? একের পর এক স্টাফদের ভূতের ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দেওয়া, এখানকার খাবারের কোয়ালিটি নিয়ে ব্লগারদের দিয়ে লাইভ করানো, এগুলো বুঝতে পারছি না, আমাকে কি এত স্টুপিড মনে হয়?
– কী সব আবলতাবল বলে যাচ্ছ রমি, আর ইউ ইনসেইন?
– নো আমি এম ইনসাল্টেড!গ্যাব্রিয়েল কিচেনে কর্তব্যরত প্রত্যেকটা স্টাফের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমার। ডিউটিরত অবস্থায় তাদের অপমান মানে আমাকে অপমান।যেটা তুমি পর্যাপ্ত করেছ। এখন প্লিজ লিভ ….
রম্যের কথায় কোন উত্তেজনা নেই কিন্তু ভীষণ শীতলতা আছে।।শ্রেয়া আরো কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। রম্যের ক্রোধের উত্তাপ তাকে বেশি একটা সাহস দিচ্ছে না।
ছদ্মরাগে দ্রুত পার্স তুলে দরজার দিকে যেতে যেতে শেষ চেষ্টা করলো,” তোমাকে ভালোবাসি তাই হয়তো এগ্রেসিভ হয়ে যাই।তোমার ইগিনরেন্স জেনেও প্রটেকটিভ হতে যাই ; আমার ভাই ইফতেখারের একজন মিনিস্টার হওয়া আমার দোষ হতে পারে না। এভাবে সব শেষ না করলেই ভালো করতে।
“হুমকি তোমার দেশের সাধারণ কোন স্ট্রাগলারকে দিলে ভালো করতে। কী জানো তো আমার একটা চুলের ক্ষতি হলেও তোমার ভাইকে জবাবদীহি করতে হবে। তাই এসব আমার জন্য এসব ওয়েস্ট অফ ওয়ার্ডস।”
একরাশ গরম শ্বাস ফেলে শ্রেয়া বেরিয়ে গেল। তবে ঝামেলা এখানেই যে,শেষ হলো তা বলা যাবে না৷শ্রেয়ার তৈরি করা ঝামেলায় রেস্টুরেন্টের স্টাফরা মোটামোটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছিল।জেরিনের নির্দেশনায় দ্রুত তারা কাজে ফেরত গেল। আজ একটু দেরিতেই রেস্তোরা ক্লোজ করা হলো।আগামী সকালে দুটো কর্পোরেট লাঞ্চের প্রস্তুতি আছে।
” কাজের মাঝে এমন ধরনের বিচ্যুতি আসে, সেগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েই এগিয়ে যাওয়াই হলো প্রফেশনালিজম…”
ক্লোজিংয়ের আগে গ্যাব্রিয়েল অধিনস্তদের ছোটখাটো একটা বক্তৃতা দিল। সবাইকে নিজের কাজ আর দায়িত্ব খুব সাবলীলভাবে বুঝিয়ে দিলো, কার ওপর কতটা প্রভাব পড়লো বোঝা গেল না। মুখ সবারই কমবেশি ম্লান।
রম্য ওপরের ক্যাবিন কর্নার গুলোয় আরও কিছু জায়গায় সিসি ক্যাম লাগানোর জন্য সকালে বলে দিলো। জেরিন কাল টেকনিশিয়ানদের খবর দিয়ে লাগিয়ে দেবে। মোক্ষম জায়গায় সিসিক্যাম ছিলো না বলে শ্রেয়া এত সুযোগ নিয়েছে।তবে হতাশা কাটছে না প্রতিরোধের অস্ত্র বাড়িয়েই বা কি করা যখন সরষেতেই ভূত।
ঘরে ফিরে রম্য জোরে জোরে নিজের মুখে হাতে পানির ঝাপটা দিচ্ছে।রাগের বশে শ্রেয়াকে বেশি বলে ফেলল কিনা ভাবা দরকার।এইদেশের মানুষের ভেতর একটা উগ্র জন্তু বসবাস করে ক্ষমতার দম্ভে যে জন্তুটা অন্ধ। তারা কৌশল বা যুক্তি বোঝেনা। রম্যের অবদমিত ক্রোধ হঠাৎ বেরিয়ে এলে বোকামী হয়ে যায়। রম্য এতটাও রেগে যায় না কখনো।তবে সহ্যের একটা সীমা থাকে। এখনো আঠেরো বছরের বাচ্চা মেয়েটার রঙ ওড়ে যাওয়া ফ্যাকাসে মুখটা ভাবছে আর মাথায় আগুণ লেগে যাচ্ছে। আহা কতটা ভয় পেয়েছিল।শ্রেয়ার কথায় শুরুতে ভেবেছিল নিজেই জেরা করবে অনির ফোনটা ছিলো সঠিক সময়ে।
” তোর ক্যাবিনের সিসি ক্যামটা একটু দেখ ভালো ভাবে । একটু ঘাপলা লাগছে ”
” তুই এটার পাসওয়ার্ডও নিয়ে বসে আছিস? ”
” ওভিয়াসলি,তুই যেখানে যাবি আমার চোখ সেখানে থাকবেই। যদিও আমার ধারণা ছিলো না এইদেশেই তোকে অফিসরুমে স্মুচি করার মতো হর্নি পাওয়া যাবে। রিয়েলি শ্রেয়া ইজ সাচ…। ওয়াটেভার, আমি শিওর পুরা ব্যাপারটা ফেব্রিকেটেড। মানে শ্রেয়া তোর রুম থেকে যখন বের হয় তার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনটা একটু ঝামেলার। তুই একটু খেয়াল কর, সে তোর ওয়াশরুমে ছিলো অনেকক্ষণ। একটু সার্ভে করে আয় ”
রম্য বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলেই ওয়াশরুমে চলে গিয়েছিলো। একটু ঘুরতে ফিরতেই যা চোখে পড়লো তাতে ভাইয়ের কথায় অস্বীকার করে পারলো না।শ্রেয়ার সাথে দুইজন কুটনৈতিক আনা হলো সুগার কোটেড ব্যোমের মতো। তাদের সাথে কথা বলে কতদূর আগালো জানা যাবে পরে তবে রম্যজানে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। একটা খচখচানি রয়ে যাচ্ছে মেয়েটার সাথে আরেকটু কথা বললে ভালো লাগতো।
– যা হলো তা খুব ভুল হল!
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাবা সোহরাব সামদানীর জেরা এড়ানো গেল না। রম্য তার কাজের ক্ষেত্রে কারও হস্তক্ষেপ পছন্দ করেনা, তবে আজকের ব্যাপারটা আলাদা। মেহরোজ মেয়েটা বাবার পূর্ব পরিচিত। তবুও রম্য দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল, – আমরা এই বিষয়ে সকালে কথা বলবো ড্যাড।
– কথা বলার কিছু নেই তুমি ওকে হ্যান্ডফুলি কমপোন্সেশন মানি দেবে এরপর…
” কী করব না করব আমি বুঝব লেট মি হ্যান্ডেল দিস”
” এই ক্ষেত্রে না, আমি অন্য একটা এনগেজমেন্টে বাইরে ছিলাম তার মাঝেই এত কান্ড।আমি থাকলে শ্রেয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতাম। সব শোনার পর লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।রাবেয়া যদি শোনে তবে কী জবাব দেব ভাবছি, ওভার অল আমি নদীকে এখানে আর দেখতে চাচ্ছি না”
” তাকে এখানে কেউ টেনে আনেনি, নিজে এসেছিলো
” তাকে সিলেক্ট কেন করলে? ”
” আমার ইচ্ছে ”
” এটা ইচ্ছে নয় পাগলামি। গ্যাব্রিয়েল কিচেন নিয়ে তোমার মরিয়াপনা” সোহরাব প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। রম্য হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে। ছেলেকে দেখে কিছু থেমে আবার শান্ত হয়ে বললেন,
” এই বিষয়টা আমার মতো এক্সিকিউট করতে দাও রমি। নদী এখানে থাকলে ঝুঁকি থাকবেই, একসময় দেখা যাবে দুই কূলই হারিয়েছি ”
রম্য উত্তর দিলো না। সে যথেষ্ট বিরক্ত, বাবা তার ওপর অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করেছেন যেটা আমেরিকান সংস্কারে বড় হওয়া মানুষের জন্য নেওয়া কঠিন। সোহরাব সাহেব কথা আর না আগিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। বাবার সাথে কথোকথনের ফাঁকে রম্য মায়ের পাঠানো ম্যাসেজগুলো খুলে পড়েছে— আই ওয়াজ রাইট।ইউর ফাদার ইজ হ্যাভিং এন এফেয়ার উইথ আ ইয়াং গার্ল, আমাকে নিজেই ফোনে বলেছে অচীরেই তোমাকে বলবে.. তুমি যেন শুনে অস্বস্তি বোধ না কর, এইজন্য আগেই জানিয়ে রাখলাম রমি। এখনও সময় আছে কাম ব্যাক বাবা, তোমার বাবাকে হ্যান্ডেল করতে দাও তার লাইফ … ”
রম্য মাকে উত্তর দেয়নি। তবে মেহরোজ সাজ্জাদ যাকে বাবা নদী ডাকছে তার বিষয়ে এত মারমুখী হয়ে আসার বিষয়টা রম্যের ভালো লাগছে না।পুরোপুরি উইয়ার্ড লাগছে।
এর আগেও খেয়াল করেছে নদী কাজের ফাঁকে সোহরাব সামদানীর সাথে হাসিমুখে গল্প করে। এই বাড়তি সখ্যতার পেছমে কারণটা আন্দাজ করতে পারে না তা নয়।কিন্তু রম্য ভরসা পায় না। সোহরাব সাহেব বুঝেশুনে শান্ত ও সরল পথ ধরেছেন সেটাই রম্যের বোকামো লাগছে।পুরো বিষয়টায় খাল কেটে কুমির আনার মতো মনে হচ্ছে।
এর থেকে ঝুঁকি নেওয়াই ভালো৷ কারণ
ঝুঁকি না নিলে ব্যবসা আগানো সম্ভব না। কিছু গেলে যাচ্ছে রম্যের,উদ্ধারও তাকেই করতে হবে বাবার দায় পড়েনি শুধু বুড়ো বয়সে একটু ভীমরতি ছাড়া।
******
রাতে ঠিক কটায় নদী বাড়ি ফিরেছিলো মনে নেই। বোধগুলো সব যেন মৃতের পর্যায়ে। সেইজন্যেই বোধহয় গ্যাব্রিয়েল স্যার যখন থমথমে মুখে গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন, নদীর তেমন বিকার হয়নি। শান্তপায়ে হেঁটে এসেছিলেন তিনি,
নদীর দৃষ্টি ঝাপসা৷ হবার আগেই, ”
“তুমি কি বিশ্বাস করবে এই মুহূর্তে আমি তাই ফিল করছি যা তুমি করছ ”
দুই হাত নদীর হাত দুটোকে শক্ত করে ধরে ছিলো সে। নদীর কোন উত্তর ছিলো না।
” আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, পারবে? ”
” জানি না,স্যার ”
ইংরেজি বাক্যের অস্পষ্ট বাংলা প্রত্যুত্তর জি এসের কানে কতটা ঢুকলো বোঝা গেল না। তিনি তাকিয়ে রইলো হাত ধরে।
” আমি ফিরতে চাই স্যার”
” হ্যাঁ নিশ্চয়ই, তুমি ক্লান্ত। “গ্যাব্রিয়েল হাত রাখলো নদীর গালে,” শুধু জেনে রাখ তুমি তোমার কাজে অসাধারণ ছিলে,যা আমার খুব পছন্দ ছিলো” নদীর ততক্ষণে অশ্রু ঝরে নামছে নিচে, ” শক্ত হও মেয়ে প্লিজ, আমাদের কাল কথা হবে,অবশ্যই কথা হবে”
গ্যাব্রিয়েল নদীর হাত ছেড়ে বিদায় দিলেন৷ দূরে তুষার দাঁড়িয়ে ছিলো মুখ অন্ধকার করে।রাজিয়া ক্লোজিংয়ের সময় অবাক হয়ে দেখলো খোদ জি এস স্যারের গাড়ি দেয়া হয়েচহে নদীকে পৌঁছে দিতে। একাই কপালে ভ্রুকুটি খেলে গেল।জানালায় ঘটনা দর্শনরত নাফিজের ঠোঁটে ছিল রহস্যময় হাসি,” বাহ বড় স্যারেরও পছন্দের, জি এস স্যারেরও আদরের ,নদীর খেলা তো সবে শুরু”
নদীর কিছুতেই কোন ভ্রুক্ষেপ ছিলো না।
ড্রাইভিংসিটে তুষার সারাপথে একটু সান্ত্বনারবাণী দেবার চেষ্টা করেছিলো,
” হিউমিলেশন হলো পার্ট অফ লাইফ বুঝছ.. সব মানুষের জীবনে আসে।আমি যখন শুনলাম.. ”
” আমার এই মুহূর্তে কোন কথা শোনার বা বলার মানসিকতা নেই তুষার ভাই ”
নদীর শীতলকন্ঠে তুষার আর কথা বাড়ায়নি। গাড়িতে ওঠার আগে হাত ধরে বস কী ফিসফিস করে কী বলল, এই বিষয়টা তুষারকে খোঁচাচ্ছিলো।জি এস স্যার শেষে হাত বাড়িয়ে নদীর গালও স্পর্শ করলো। বিলিতিদের কত রকম নিমচা ফাজলামো। তালে তালে চামড়ার সুখ নেওয়া। ক্ষোভটা দমিয়ে শান্তমুখে ড্রাইভ করে গেলেও গেটে নামানোর সময় হুট করে দু:সাহস এসে ভর করলো তুষারের, পেছন থেকে হঠাৎ ডাক,
” নদী,আই লাভ ইউ ”
নদী ভাবলেশহীন হয়ে ফিরে চেয়েছিলো। তুষারের সাহস জবাব দিয়ে দিলো মুহূর্তে,
” মানে আই লাইক ইউ ভেরি মাচ .. আমি কখনোই বিশ্বাস করি নাই জানো। সালেম ভাইকেও বলসিলাম।…কান্না চলে আসছিল।তুমি প্লিজ হেজিটেট কইরো না,যখন দরকার হবে আমি সবসময় আছি। তোমার তো দোষ ছিলো না,সময় মতো ডিউটিতে এসো প্লিজ, জবটা দরকার তোমার, আর আমার দরকার…
নদীর কোন কথা বলার মতো শক্তি ছিল না। নীরবে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গিয়েছিলো। ভেতর থেকে এতটা ক্লান্ত ছিল যে আর কিছু ভাবার জন্য মস্তিষ্ক প্রস্তুত ছিল না। নিশির সাথে রেশারেশি চললেও নদীর চোখ মুখ দেখে সেও কেমন চমকে গিয়েছিল
– কী হইসে তোর?
– বেঁচে আছি ।
কী মনে করে দূরত্ব ভুলে নিশি সেদিন রাতে তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলো। নদীর গোটা রাত্রীতে জেগে বৃষ্টির কান্নার শ্রোতা হয়েছে। আবেগগুলো আহত, ম্যাজম্যাজে শরীর খোলা চোখে আঁধার দেখেছে৷ চোখে পানি নেই,শরীরের ত্বকে অপমানবোধ নেই, তবে কেমন যেন ভোঁতা একটা অনুভব।স্টাফ সবার চোখে ক্ষুদ্র তারায় কতটা বিদ্রুপ ছিলো, চাপা একটা বিশ্বাস নদীই হয়তো চুরি করেছে। ঠিক কী কারণে এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়া বন্ধ হলো সে জানে না শুধু জানে সে ভেতর থেকে প্রচন্ড ক্লান্ত।
থেকে থেকে তলপেটে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে ; নদী এখন তার ঋতুচক্রে, মহিলা যদি সত্যি তার আন্ডার গার্মেন্টস খুলতেন?আঁধারে চোখ দুটো জ্বালা করে উঠলেও চিৎকার করার ক্ষমতা যেন লোপ পেয়ে গেছে।
সারারাতের ঝুম বৃষ্টির পর ভোরে সব ঝকঝকে হয়ে এলো। বাতাসের মাঝে ভেজা সোঁদা গন্ধটা আবেশিত করছে।
সকালে টিউটোরিয়াল ছিলো সেটা শেষ করে দেড়টা পর্যন্ত ক্যামিস্ট্রি প্রেকটিকাল এরপর ডিউটি…।এরপর ডিউটি?ভাবতেই বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো যেন। বিচিত্র একটা বিতৃষ্ণা।ডিউটিতে ফিরে গিয়ে সবাই তার দিকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে নদী জানে না। এত কিছুর মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার বাগিচার শিউলির সৌরভের তৃষ্ণা দমিয়ে রাখা মুশকিল । ওখানে কাজ করার সময় মনে হতো রেস্তোরাঁর ছদ্মবেশে পুরনো বাড়িটা মমতা নিয়ে তাকে দেখতে থাকে। গ্যাব্রিয়েল স্যার দেখা করতে বলেছিলো, কী বলবে সান্ত্বনার বাণী?এটা কারোর কাছ থেকেই তা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না, কিন্তু না গেলে হয়তো চাকরি যাবে। তবে টেকনিক্যালে লাভ হলো, তুষারের সাথে দেখা না হওয়া। রাতে যা বলেছে সকালের আলোতে গোটা ব্যাপারটা নদীর কেমন তিতকুটে লাগছে। ছেলেটাকে হেল্পফুল ফ্রেন্ডলি লাগতো। টুকটাক সাহায্যও করতো এখন আজব যন্ত্রণা শুরু হবে।
নদী অদ্ভুত দ্বিধা নিয়েই ক্লাস সারলো।বন্ধুদের মধ্যে তৃষার আজ মন বেশ খুশি খুশি। সাথে ময়লা একটা পাঁচশ টাকার নোট। আজ ফেসিয়াল করাবে। আজ ঢাকার কোন আত্মিয়ের বাড়িতে তাকে দেখতে আসবে। আনন্দে ডগমগ অবস্থা যেন বিয়ে করাই তার জীবনের মূল উদ্দেশ্য। সুবর্না দেখা গেল আগে থেকেই জানে। যেটা নদীর কাছে স্বাভাবিক মনে হয় ডিউটি দৌড়াদৌড়িতে সে তার বন্ধুদের ততটা সময় দিতে পারেনা। ক্লাস টাইমে যতোটুকু আলাপ। সুবর্ণা তৃষার জনু তাঁতের শাড়ি এনেছে। তবে আড়ে স্ট্রাইপ শাড়ি খাটো দেখানোর সম্ভবনা আছে,
” ছেলে তো আর্মিতে খুব লম্বা, ইশ নদী তোর মতন লম্বা হলে আমি বর্তেই যেতাম রে”
“আসলেই আমার হলো রাজরানীর কপাল ” নদীর ঠোঁটে বিচিত্র হাসিটা তৃষা আর সুবর্ণা বুঝলো না।
তারা বুঝবেও না, গ্যাব্রিয়েল রেস্টুরেন্টে তার আঁটোসাঁটো ইউনিফর্মের মাঝে তার বুক ,পশ্চাদশের মাপ নিতে থাকে বেশ কিছু পুরুষের চোখ কেমন অপেক্ষা করে। এমন মেয়ের জন্য ঘটা করে বিয়ের পাত্র আসে না। এমন কারো সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাই বিশাল ব্যাপার।নদী প্রেকটিকাল সেরে বাড়ি ফিরে এলো আজ ডিউটিতে টানছিলো না। ইচ্ছে হলো যাবেই না। চাকরি করুক না করুক আজ অন্তত একটা দিন সে রেস্ট নেবে।।
বাড়ি ফিরে ফ্রীজ খুলে সকালের রাখা পাউরুটি গুনে বোঝা গেল ব্রেকফাস্টে নিশি কিছু খায়নি । নদীর বিরক্ত লাগলেও পাউরুটি গুলো তাওয়ায় সেকে টোস্ট বানালো। নিশির জন্য ডিম সেদ্ধ করলো, দেখা গেল সে ঘরে নেই। অন্য ঘরের কয়েকটা মেয়ে আড়ে তাকাচ্ছে তার দিকে। চোখের মাঝে কেমন জুলজুলে নিষিদ্ধ উৎসাহ ।কিছু যেন বলতে চায়।
” এর বোন তো মনে হয় পেট বাধায় ফেলসে”
” হুম বি এস আসছিলো অনেক শান্টিং দিয়ে গেছে”
বোঝা গেল নিশির রাফিনকে নিয়েও কথা হচ্ছে। নিশি কি এখন ঘরে বলে বেড়াচ্ছে তার অবস্থার কথা? নদীর রাগ উঠতে উঠতেই নিজেকে সামলানো। আল্লাহর পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে, যারা সত্যিই জানেনা তারা কী চায়।সারা বাড়ি খুঁজেঘেটে নিশিকে আবিষ্কার করা গেল ছাদে বড় সিমেন্টের টাঙ্কির উপর ঘাপটি মেরে বসে আছে। ঠোঁটে সিগারেট গম্ভির মুখে টান দিচ্ছে।
নদী শান্তমুখে পাশে গিয়ে বসলো,নিশি নিজ থেকে বলল,” বাসাটা ছাড়তে হবে রে”
” খালামণি বাসার একবছরের এডভান্স প্রেমেন্ট করেছেন “নদী হুট করে বোনের হাতের সিগারেট নিয়ে মুখে টান দিলো, ধোঁয়া ছাড়তে গিয়ে ভেতরে নিয়ে কাশতে কাশতে বলল,” এখন ছাড়বো কেন?
” যেটা যার ধাঁতে নাই, ওটা করাও উচিৎ না” নিশি হেসে নদীর মুখ থেকে সিগারেট ফেলে দিলো।
নদী বলল,” তোর এই অবস্থায় সিগারেট গেলা খুব উচিৎ? ”
” সেলিব্রেট করব না? গুড নিউজটা তাদের দুজনকে দেব কীভাবে একটু আইডিয়া দে তো ভিডিও চ্যাট করব না মেইল করে টেস্টিং স্ট্রিপের ছবি পাঠাবো? ”
” রাফিনের সাথে আর বসবি না?”
“শয়তানের সাথে বসার কিছু নাই। আমি বেগার না নদী,পেটে বাচ্চা চলে এলেই কেউ বেগার হয়ে যায় না। আমি মিস্টেক করেছি এটার রেস্পন্সিবিলিটিও আমি নেব। আমার কাউকে প্রয়োজন নাই।নিজে কামাই করব নিজেই এর খেয়াল রাখবো। অন্তত পৃথিবীতে একজন থাকবে যে আমার নিজের হবে “নিশি কন্ঠ কঠিন করে রাখতে চাইলেও তাকে কেঁপে উঠছে।নদীর বুকে অদ্ভুত একটা মায়া ছলকে উঠলো এই বোকা মেয়েটার জন্য।
“আমেরিকায় এগুলো বলা সোজা, বাংলাদেশের না এটা তুই ভালোমতো জানিস। আসলে তুই এগুলো করে খালামণি আর খালুকে শাস্তি দিতে চাচ্ছিস ”
” পানিশমেন্ট তাকে যাওয়া যায় যে অপরাধ করে, তাদের তো কোন অপরাধই নাই। তারা সব মহাজ্ঞানী তারা ঠিক করে, যা করে ” নিশির চোখ আর্দ্র।
” নিশি তুই জানিস তুই কতটা ভাগ্যবান তোর ব্লেইম করার জন্য দুজন মানুষ আছে। তুই এইসব পাগলামিগুলো করতে পারছিস কারণ তুই জানিস দুইজন মানুষ শেষ মুহুর্তে হলেও তোকে উদ্ধার করতে আসবে। আমার কিন্তু এই দুইজন মানুষ নাই । আমি যদি আজ গুড়ো হয়ে যাই তারপরেও আমার জন্য অস্থির হয়ে কেউ খোঁজ করবে না।
নিশি অল্প হাসলো” একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে তোর বাবা-মা অকালে তোকে ছেড়ে চলে গেছে। তারা বেঁচে থাকলে হয়তো তুইও তাদের কুৎসিত সম্পর্কটা দেখতি।নোংরা গালি-গালাজ শুনতি, তারা হয়তো তোর সামনেই ডিভোর্স নিয়ে নিত।তুই তাদের ঘেন্না করা শুরু করতি। ভালো হয়েছে তারা মরে গেছে.. তুই তাদেরকে ভালো তো বাসতে পারিস ”
নদী শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিলো বোনকে। তাকে সান্ত্বনা দেবার শব্দগুলো কোথাও গায়েব হয়ে যাচ্ছিলো।
” রাফিন আমায় ব্ল্যাকমেইল করছে। টাকা না দিলে আমাদের ভিডিও লিক করে দেবে। আমি তবুও এইবাচ্চাটাকে ছাড়ব না রে, নিজের মতো আগলে বড় করব। আমাকে ঘৃণা করিস নারে। আই জাস্ট ওয়ান্ট টু গিভ হিম এ বেটার ওয়ার্ল্ড,
আমাকে হেল্প কর নদী ” নিশি বোনকে জড়িয়ে অকুল হয়ে হঠাৎ মনে হলো এই জমজমাট বিচিত্র শহরে সবাই একা কী ভয়ংকর ভাবে একা।
” আমরা দুজন মিলে বড় করব ” ভবিষ্যৎ না জেনে একাই মমতা কখনো কখনো দায়িত্ব নিয়ে নেয়। ঘন বিষাদে ডুবে থাকা নদীর ফোন বেজে যাচ্ছে
“গ্যাব্রিয়েল স্যার কলিং…. ”
(চলবে)
#শারমিন_আঞ্জুম
প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, ঘরের ভদ্রলোকের কড়া প্রহরা থেকে লুকিয়ে লিখছি। এইজন্য দিতে দেরি হচ্ছে৷ টাইপোও আছে। পরে ঠিক করে দিচ্ছি। আশাকরি কেউ কিছু মনে করবেন না।