প্রেম পিয়াসী পর্ব ২

0
1116

#প্রেম_পিয়াসী 🍁🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
পর্ব_২

দোতলা ভবনের রাজকীয় ভিলা রাদের। রাজকীয় ভিলায় সব রাজকীয় কারবার। আপন বলতে এই দুনিয়াতে রাদের মা ছাড়া আর কেউ নেই। যাকে নিয়েই তার গোটা পৃথিবী। আর সেই পৃথিবীকে আরেকটু দীর্ঘময় করতেই মাস দুয়েক আগে তার জীবনে ঝড়ের ন্যায় পদার্পন ঘটেছিলো ইলহামের।

[ঠিক মাস দুয়েক আগে এমনই এক দিনে,
দু’জনের দেখা হয়েছিলো এক বৃষ্টিমুখর রজনীতে। তখন বোধকরি রাত ৮টা থেকে ৯টার মাঝামাঝি। ইলহাম রোজকারের মতো মামীকে না জানিয়ে চলে আসে তার টিউশনিতে। ঐ বাড়িতে তার এমনই দূর্দশা ছিলো যে সামান্য হাত খরচের জন্যও তাকে অপেক্ষা করতে হতো মাসের পর মাস। তারপরও কপালে কিছু জুটতো না বললেই চলে। অথচ কথা ছিলো রানীর রাজ্যে রাজকন্যা থাকবে রাজার হালে। কিন্তু কপালে সইলোনা সেই সুখ। একে একে সব হারিয়ে হয়ে গেলো নিঃস্ব, ছন্নছাড়া।

অতিরিক্ত বৃষ্টির দরুন রাস্তাঘাট যেন ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছিলো। ইলহাম মাথায় ছাতাটা কোনো রকমে আঁটকে রেখে আন্দাজে পা ফেলে হাঁটছে ফুটপাত ধরে। সামনের দিকে ঠিক এক হাত দূরেও যেন সবটা ছিলো কুয়াশার মতো আবছা। বারবার ভ/য় করছে হাইস্পিডে শা শা করে ধেয়ে যাওয়া গাড়িগুলো দেখে! ফুটওভার ব্রিজ এখনও বেশ খানিকটা দূরে। কিন্তু এখান থেকে রোড ক্রস করতে পারলে তার বাসার পথ সহজ হতো। কিন্তু উপায়ই বা কি? গাড়ি গুলো যে হালে যাচ্ছে তাতে করে সে রাস্তায় পা ফেলার পূর্বেই তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে এরোপ্লেনের ন্যায়। কিন্তু না গেলেও তো ঝামেলা। মামী এখনও নাকে তেল মেখে ঘুমচ্ছে। আর তিন্নি সাড়ে ন’টা নাগাদ কোচিং থেকে বাসায় ফিরবে। কেউ তাকে দেখে ফেলার পূর্বেই যে তাকে বাসায় ফিরতে হবে।

কথাগুলো আপন মনে ভাবছিলো আর হাঁটছিলো। নাহ্। এবার আর হাঁটা যাবেনা। রোড ক্রস করা এবার মোস্ট ইমপরট্যান্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আর না হেঁটে অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রায় পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার ফল এবার সুমিষ্ট হলো। গাড়ি ক্রমশ কমতে কমতে এবার যেন পুরো রোড ফাঁকা হয়ে গেলো। এখন নির্দিধায় নিশ্চিন্তে রোড পার হওয়া যাবে। কথাটা ভাবতে ভাবতে রোডের মাঝে পা বাড়ালো ইলহাম। দু’কদম এগোতেই রোষপূর্ন হয়ে ডেকে উঠলো মেঘরাজ। বিটক শব্দে ইলহাম থমকে গেলো পথের মাঝেই। ভ/য়ে তার গলা শুঁকিয়ে আসার পালা। তার পা জোড়াও আপনাআপনি থেমে গেলো দম ফেলবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যই যেন কাল হলো তার জন্য। দূর থেকে একটা গাড়ির ঝলমলে আলো অক্ষিপটে চাপ ফেলতেই যেন অন্ধ হয়ে গেলো সবকিছু। আঁতকে উঠে নিজের চোখ বাঁচাতে বাঁচাতে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গেলো বেশ খানিকটা দূরে। গাড়ির চালক থতমত খেয়ে গাড়ি থামালো। একই সাথে পেছন থেকে থেমে গেলো আরও দুটো গাড়ি। দূর থেকে হৈ হৈ পড়ে গেলো! গাড়ি চালক ভয়ে এবার গাড়ি ছেড়ে পালাবে নিশ্চিত। কিন্তু গাড়ির মালিকের কথা শুনে ভয়ে ম/রে যেতে পছন্দ হলেও পালানোর কথা ভুলেও ভাবতে পারলোনা।

গাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে এলো গাড়ির মালিক। পেছনের গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসো দু’জন গার্ড। দু’জনের হাতেই দুটো ছাতা। লোকটার পিছুপিছু পিছু দৌড়ে এসে মাথায় ছাতা ধরলো। লোকটা আর কেউ নয় স্বয়ং মিহাদ আবরিশাম রাদ। শহরের নামকরা বিজনেস ম্যান একই সাথে ডার্ক সাইটের কুখ্যাত মাফিয়া কিং। দূর থেকে তাকে দেখতেই অনেকের গলা শুঁকিয়ে কাঠে পরিনত হলো। যে মেয়েটা এ//ক্সি/ডে/ন্ট করলো, এই এক্ষনি তার নামে দয়া উগরে দিতে থাকলেও এখন তাদের নিজেদের প্রানের মায়া বেশি হতে লাগলো। তাই জায়গা ছেড়ে বিনা নোটিশে অনেকেই দৌড়ে পালালো।

পিচ ঢালা রাস্তায় ছিটকে পড়ে ইলহামের হাত আর হাত রইলো না। একই সাথে থুতনি এবং গলার ডান পাশটা। চামড়া ছিলে অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেলো। আর উপর থেকে তো উপরওয়ালার রহমত আছেই। যার পানিতে ভিজে ঘটনা এখন লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অব্দি চলে গেছে।

প্রচন্ড ব্যা*থা আর জ্ব*লা ভাবে ভেতরটা ছটফট করতে লাগলো ইলহামের। দুঃখ আর পিছু ছাড়লো না তার। রাগটা গাড়ি চালকের প্রতি হওয়ার কথা হলেও রাগ হচ্ছে নিজের ভাগ্যের উপর।

—-“এক্সকিউজ মি? আর ইউ ওকে?”

বেশ দাম্ভিক স্বরে কথাটা নিক্ষেপ করলো রাদ। ইলহাম কথাটা শোনা মাত্রই তেতে উঠলো। সামান্য মানবিকতার আচ এই মানুষটার মধ্যে আছে কিনা বোঝা দায়! নিজের গাড়িতে এ-ক্সি-ডে-ন্ট করিয়ে এখন এসে জানতে চাইতে সে ঠিকাছে কিনা? হাউ সিলি!

ইলহামের কোনোরূপ জবাব না পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো রাদ। চোখ থেকে টান দিয়ে সানগ্লাসটা খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার পানে। ইলহাম মুখ টা নীচু করে থাকায় তাকে ভালো করে দেখতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত কিছু চোখে আঁটকে গেলো রাদের। যার পরিপ্রেক্ষিতে গলা খাঁকারি দিয়ে সে ইলহামকে কিছু একটা বোঝাতে চাইলো। কিন্তু ইলহাম তখন এসব বোঝার মতো অবস্থায় নেই।

—-“এক্সকিউজ মি, মিস! আপনি ঠিকাছেন?”

রাদ মাথাটা আরও খানিকটা নীচু করে ইলহামের মুখ দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু ফল শূন্য। তাই সে পাশ ফিরে তার বডিগার্ডের দিলে তাকালো। নিজে মাথার উপরের ছাতাটা সরিয়ে ইলহামের মাথার উপর ধরলো। যেন সে মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।

—-“ আপনি কি চক্ষে দেখেননাই আপা? সামনেই তো ফুট ওভার ব্রীজ! আরেকটু হাইট্টাই না হয় পার হইতেন!”

লোকটা ডাব ওয়ালা। পাশেই ফুটপাতের উপর তার ভ্যান রাখা। এ/ক্সি/ডে/ন্টে/র পুরোটা ঘটনা সে সচক্ষে দর্শন করেছে। তাই এখানে দোষ রাদের হলেও ভ-য়ের দরুন তাকে ইলহামকেই দোষারোপ করতে হলো।

মাথার উপর বৃষ্টির কনাগুলো আর না পড়তেই কুঁচকানো কপালে মুখ উঁচিয়ে তাকালো ইলহাম। তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রাদ। হাতে ধরে রাখা ছাতাটা ইলহামের মাথার উপর ধরে একনজরে তাকিয়ে ছিলো নীচে। কিন্তু ঠিক তখনই যে তার ইলহামের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাবে কাম্য ছিলো না কারোরই। ইলহামের ভিজে চুপচুপে হয়ে থাকা মুখবিবরখানা যেন বক্ষপিঞ্জর দু’ভাগ করে ফেললো রাদের। কতটা স্নিগ্ধ শীতল চাহনি রমনীর। যা ইতিপূর্বে কখনই দেখার সৌভাগ্য কিংবা দু-র্ভাগ্য কোনোটাই হয়নি রাদের। তার ইহজীবনে নারীর দর্শন শতাধিক কিংবা অজস্র বললেও ভুল হবে, তার মাঝে এই মনোহরণীই প্রথম নারী যে কিনা তার বক্ষপিঞ্জরে একচাহনীতেই তোলপাড় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। সে যে প্রথম দর্শনেই নিজেকে হারিয়ে বসেছিলো এই প্রিয়দর্শিনীর প্রেমে। প্রথম দর্শনেই প্রেম। যার দরুন তাকে সে প্রিয়দর্শিনী বলেই সম্মোধন করবে।

ক্ষনিকেই রাদের ভেতর থেকে গম্ভীর ভাবটুকু উধাও হয়ে গেলো। সে ক্রমশই অস্থির হয়ে পড়লো অচেনা,অজানা মেয়েটির জন্য। গলা উঁচিয়ে ড্রাইভারকে ডাকতে লাগলো। ড্রাইভার তার ডাক পেয়ে রকেটের গতিতে গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। ইলহাম স্রেফ কপাল কুঁচকে লোকটার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে। হচ্ছে কি আসলে?

—-“আ’ইম সিনসিয়ারলি সরি ম্যাম। আমি যদি আপনাকে একবার দেখতে পেতাম তাহলে সত্যি এমন এ/ক্সি/ডে/ন্ট হতো না। প্লিজ ফরগিভ মি! আপনি প্লিজ আমার সাথে আসুন! আমি আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।”

এই বলে রাদ ইলহামের দিকে হাত বাড়াতেই তেতে উঠলো ইলহাম। ক্ষি*প্ত স্বরে বলে উঠলো,

—-“ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ মি! আমি একদম ঠিকাছি। আমার কোনো হসপিটালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কি বলুন তো? আপনাদের মতো মানুষদের কাজই এটা!”

রাদ রীতিমতো থমকে গেলো ইলহামের ভয়েস টোনে। এতো মিষ্টি কন্ঠস্বর কোনো মানুষের হতে পারে কি? সে তো রীতিমতো ফিদা হয়ে গেলো।

ইলহাম দু’হাতে ভর দিয়ে একাই উঠে দাঁড়ালো। আর রাদকে বুঝিয়ে দিলো তার কারোর সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই।

—-“আপনার তো বেশ খানিকটা ইনজুরি হয়েছে! প্লিজ আমার সাথে আসুন! আই প্রমিজ, আমি সমস্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবো!”

ইলহামের সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলো রাদও। কথাগুলো বলে আকুল দৃষ্টিতে তাকালো সে। কিন্তু ইলহাম কোনোরূপ কথায় ইমপ্রেস হলোনা। যার দরুন রাদ প্রথম দফাতেই তাকে তুলে নিয়ে গেলো হসপিটালে। উপস্থিত জনগন যেন ভড়কে গেলো রাদের এহেম কান্ডতে। মেয়েটা কি শেষ অব্দি বেঁচে ফিরতে পারবে? এটাই ছিলো তাদের প্রথম প্রশ্ন? এবং প্রথম দুশ্চিন্তা!]

বাসার কলিং বেল চাপতেই দৌড়ে এসে গেট খুললো নিঝুম। নিঝুম রাদের খালাতো বোনের মেয়ে। খুব মিষ্টি আর ভীষণ পাকা। বয়স সবে ১০। এ বাড়িতেই থাকে ওরা। রাদের খালার একমাত্র মেয়ে নিহা। বিয়ের এক বছরের মাথায় তার স্বামী মা/রা যায়। আর তারপর থেকেই স্বামীর মৃ/ত্যু/র শোকে দিশেহারা সে। আপন বলতে রাদ এবং রাদের মা ছাড়া আর কেউ ছিলো না তার। তাই রাদই তাকে নিয়ে আসে তার বাড়িতে। এবং তার সাথে নিয়ে আসে নিহার শাশুড়ী মাকেও। কেননা সেও ছিলেন কেবল এক পুত্রের জননী। ছেলে মা/রা যাওয়ার পর নিহার মতো সেও যে সর্বহারা হয়ে যায়। তাই রাদের ইচ্ছেয় সেও এসে এখানে বাস শুরু করেন।

—-“মামা?(প্রফুল্ল কন্ঠে)সারাদিন তুমি কোথায় ছিলে মামা? আমার জন্য চকলেট আনতে ভুলে যাওনি তো আবার?”

নিঝুম ফোকলা দাঁতে হাসি হেসে ঝাপিয়ে পড়ে রাদের উপর। রাদ স্মিত হেসে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে নিঝুমের সামনে। প্রাণোচ্ছল হাসতে হাসতে আদর করে চুমু আকে নিঝুমের কপালে। ফের পকেট থেকে বড় বড় আকারের দুটো চকলেট বের করে ধরিয়ে দেয় নিঝুমের হাতে। নিঝুম খুশিতে ‘ইয়েএএ’ বলে চেঁচিয়ে উঠে। অতঃপর ছুট্টে যায় ড্রয়িং রুমের দিকে। ততক্ষণে নিহা এসে হাজির হয় দরজার কাছে। দরজার একপার্ট ধরে দাঁড়িয়ে বলে,

—-“খুব আশকারা দিচ্ছিস কিন্তু মেয়েটাকে। পরে মাথায় উঠে নাচবে। আয় ভেতরে আয়। সারাদিন কোথায় ছিলি…”

নিহা এতক্ষণে ইলহামকে খেয়াল না করলেও তাকে আকস্মিক দেখতে পেয়ে তার কথার ঝুলি থেমে গেলো। হঠাৎ চোখে মুখে উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,

—-“ওমা তুমি কে? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না? রাদ? তোর সাথে এলো?”

রাদ কিছু না বলে পাশ ফিরে তাকায় ইলহামের শুঁকনো মুখপানে। অতঃপর নিরবে তার হাত ধরে পা রাখে বাড়ির ভেতর। ইলহাম কিছু বলেনা। নিশ্চুপ থেকে সেও প্রবেশ করে ভেতরে। নিহা তাদের পাশ দিয়ে সরে আসে এপাশটায়। তার মুখে খানিক হাসি তো খানিক চিন্তা। মেয়েটাকে সে চিনেনা। এর আগেও কখনও দেখেনি। তবে রাদ ওকে এখানে কেন নিয়ে এলো? মুখ্য উদ্দেশ্য কি তার?

—-“আপু? মা কই? মাকে ডাকোনা প্লিজ!”

নিহা মুচকি হেসে নিজের অহেতুক চিন্তাগুলো চেপে গেলো। অতঃপর ভেতরের ঘরে গিয়ে ডেকে নিয়ে এলো মান্নাত বেগমকে।

—-“মা? এসো। পরিচয় করিয়ে দেই। এই হলো ইলহাম। তোমার ছেলের হবু বউ। আর প্রিয়দর্শিনী? উনি হলেন আমার মা। তোমার হবু শাশুড়ী মা।”

“মা”। মা নামটাতেই ইলহামের যত আবেগ লুকিয়ে থাকে। পৃথিবীর সমস্ত স্থানে সে কঠোর থাকতে পারলেও এই একটা জায়গাতেই সে কখনও কঠিন হতে পারেনি। এমনকি আজও নয়। রাদের মাকে দেখতেই তার মনে হলো এ যেন তারই মা। তাই মান্নাত বেগমের জবাবের অপেক্ষা ভুলে সে আকস্মিক জড়িয়ে ধরলো তাকে। এমন ঘটনার জন্য অবশ্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। রাদও কিঞ্চিৎ ভড়কালো। তবে সবটাই যেন চেপে রাখলো ভেতরে।

—-“যতদিন ইলহাম নিজ থেকে না বলবে ততদিন আমাদের কোনো প্রকার বিয়ে হবেনা, মা। আর ততদিন তুমি ওকে নিজের মেয়ের মতোই রাখতে পারো।”

কথাটা মায়ের উদ্দেশ্যে বলল রাদ। অতঃপর আর এক দন্ডও দাঁড়ালো না এখানে। চলে গেলো নিজের রুমে। ইলহাম মান্নাত বেগমকে জড়িয়ে থেকে শুনলো রাদের বানী। সেও নিশ্চুপে শুনে গেলো। জবাবে কিছু বললো না।

_____

—-“মন খারাপ?”

রাতের আড়াইটা নাগাদ নিজের রুমে কোনো পুরুষালি কন্ঠ কাঁপিয়ে তুললো ইলহামকে। ভয় এবং জড়তা দুটোই ঝেঁকে বসলো মনে। ইলহামকে রাদের ঠিক পাশের রুমটাই দেওয়া হয়েছে। অবশ্য রাদের বলাতেই। যেন যেকোনো প্রয়োজনে ইলহাম তাকেই জানাতে পারে। ইলহাম ছিটকে পড়লো দু’পা। ওড়নাটা কোথায় রেখেছে চোখে পড়ছেনা হঠাৎ।

রাদ ওর দিকে তাকিয়েই ছিলো। বেডের উপর কেমন অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে সে ভেতরে চলে এলো কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই। আর তার হঠাৎ ভেতরে এসে পড়ায় ইলহামের এমন অস্বস্তির কারন হবে জানলে অবশ্য নক করেই ঢুকতো।

ইলহাম নিজের ওড়নার সন্ধান পেতে তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই আকস্মিক তার হাতটা শক্ত করে ধরে নেয় রাদ। তাকে কোথাও পালাতে না দিয়ে নিজের সম্মুখে এনে দাঁড় করায়। ইলহামের অস্বস্তিকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়ে সে বলতে লাগে,

—-“রাতে খাওনি! কেন?”

—-“এমনি। ক্ষিদে ছিলোনা।”

—-“সত্যি ক্ষিদে পায়নি নাকি অন্য কেইস?”

ইলহাম ভ্রু কুঁচকালো।

—-“অন্য কেইস?”

—-“চেতনের জন্য খারাপ লাগছে?”

কথাটা রাদ ইলহামকে ঠেস মে/রে/ই বলল। ইলহাম ক্ষি/প্ত দৃষ্টিতে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলবে তবে তার পূর্বেই বন্দী হলো রাদের বাহুডোরে। রাদ তাকে দু’হাতে কোমর জড়িয়ে আচমকা কাছে টেনে আনলো। অতঃপর রীতিমতো ও/য়া/র্নিং ছুঁড়ে বলল,

—-“ইলহাম শুধু রাদের হতে পারে প্রিয়দর্শিনী! কেবল রাদের। যদি সে ভুল করেও অন্যকারোর হওয়ার কথা ভাবে না? তবে তুমি নিশ্চিত থেকো.. তোমার ডে/থ সার্টিফিকেট ওখানেই কনফার্ম!”

কথাগুলো বলতে বলতে রাদের গলার স্বর মিলিয়ে আসে। খুব কাছে থাকায় ইলহাম বুঝতে পারে রাদ ড্রিংক করে এসেছে। যার ফলে সে আবোলতাবোল বকে চলেছে।

#চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here