প্রেম পিয়াসী পর্ব ৩

0
871

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
পর্ব_____৩.

—-“আপনি ড্রিং*ক করে এসেছেন?”

দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ইলহাম। রাদ ঘোলাটে দৃষ্টি মেলে তাকালো ইলহামের পানে। মাতাল হেসে বলল,

—-“ওই একটা জিনিসই আমায় ভালোবাসে, সুইটহার্ট। তাছাড়া তুমি তো আমায় ফিরেও দেখো না!”

ইলহাম আরও ক্ষে;পে গেলো। রাগান্বিত হয়েই ধাক্কা মা/র/লো রাদকে। রাদ ধাক্কা খেয়ে প্রথমে হঠাৎ পিছিয়ে পড়লেও আকস্মিক তেতে উঠলো। পূণরায় গিয়ে তাকে জোরপূর্বক চেপে ধরলো নিজের সাথে। বলল,

—-“এই টুকু একটা পুচকি মেয়ের এতো রা/গ? কোথা হতে এন্ট্রি করে বলো তো?”

—-“এইজ টুয়েন্টি ওয়ান। প্রফেশন স্টুডেন্ট। স্টেজ,বিবিএ সেকেন্ড ইয়ার। সো,কোন এঙ্গেল থেকে আপনি আমায় ছোট বলে দাবী করেন?”

রাদের কথার পৃষ্টেই বি/রক্ত স্বরে আওড়ালো ইলহাম। রাদ ফের মাতাল হাসলো। একহাতে তার কোমর আলিঙ্গন করে রেখে অন্যহাত তুলে ডান গালে রাখলো। ইলহাম কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল রাদের ছোঁয়ায়। চোখ বড় বড় করে রাদের দিকে তাকাতেই রাদ তার গালে স্লাইড করতে করতে বলল,

—-“ইউ’আর এডাল্ট এনাফ, সুইটহার্ট। সো কিপ ডিস্টেন্স উইথ এনি আদার’স। স্পেশিয়ালি,চেতন। ওকে?”

ইলহামের গালে স্লাইড করতে করতে কথা গুলো বলেই আকস্মিক তার মুখটা চেপে ধরলো রাদ। ইলহাম ভড়কে গেলো। ভীত দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকাতেই রাদ বাঁকা হাসলো। বাঁকা হেসে বুঝালো, এটা কোনো কথার কথা নয়। ডিরেক্ট থ্রে’ড।

এক লহমা অতিবাহিত হতেই তাকে ছেড়ে দিলো রাদ। তার কাজ শেষ। এখন যাওয়া যাক। রাদ উল্টো ঘুরে যেতে নিয়েও গেলো না। দাঁড়িয়ে পড়লো। সে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। তাই পূণরায় ইলহামের দিকে ফিরে তাকালো। ইলহাম ক্ষনিকের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও ফের চমকে উঠলো রাদের ঘুরে তাকানোতে। আবার কি চাই লোকটার?

ইলহামের পরনে সাদা টি-শার্ট এবং সাদা প্লাজু। এর সাথের ওড়নাটা ছিলো সাদা এবং লালের কম্বিনেশনের। ঐ যে একটু অদূরেই পড়ে আছে সেটা। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার আগে ওড়নাটা ড্রেসিং টেবিলের ছোট্ট টুলটার উপর রেখে গিয়েছিল। ফিরে এসে ওড়নার কথা আর মাথা আসেনি ইলহামের।

—-“আব.. সুইটহার্ট? নেক্সট টাইম থেকে না আমার সামনে কখনও এভাবে দাঁড়িও না! বুঝোই তো.. এখনও বিয়ে করিনি!”

রাদ কপালের কোন চুলকোতে চুলকোতে বলল কথাটা। ইলহাম আঁতকে উঠলো রাদের ইঙ্গিতে। এই মুহুর্তে বেজায় রাগও হলো নিজের উপর। সে ভুলে গিয়েছিলো এটা তার বাড়ি নয়। তাই যেখানে সেখানে ওড়না ফেলে রাখাটাও উচিৎ নয়।

রাদ ডেভিল হাসলো। ইলহাম যত দ্রুত সম্ভব উল্টো ঘুরে গেলো। ওড়নাটার দিকে বার কয়েক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। এদিকে রাদ যেন মহাআনন্দিত! কেননা,এই প্রথমবার! এই প্রথমবার সে ইলহামের চোখে রাগ ছাড়াও অন্যকিছু দেখতে পেলো সে। যা সচরাচর মেয়েদের দৃষ্টিতে লেগেই থাকে। কিন্তু এই মেয়েটার চোখে আজকের পূর্বে কোনোদিন দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এবং তা হলো লজ্জা। ইলহাম রাদের কথায় লজ্জা পেয়েছে ভীষণ। কিন্তু করণীয় কিছুই নেই। তার ঘাট হয়েছে ওড়নাটা সঙ্গে না রাখা। রাখলে অন্তত এই অসভ্য লোকের অসভ্য টাইপ কথা শুনতে হতো না।

—-“গুড নাই সুইটহার্ট?”

ইলহাম খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। লোকটার সমস্যা কি? তাকে কি আরও লজ্জায় ফেলার বাকি আছে? সাধ মেটেনি এখনও?

—-“হায়রে কপাল! কাকে আমি মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসলাম? যার থেকে কিনা একটা ছোট্ট উইস.. যার নাম গুডনাইট! সেটা অব্দি পাওয়ার ভাগ্য হলোনা! হায় হায় হায়।”

এহেম অভিনয়ে পাকা শিল্পী রাদ। ইলহাম ক্ষে/পা স্বরে বলে উঠলো,

—-“আপনার নাটক শেষ হলে প্লিজ আসুন! আমাকে এমন করে জ্বা/লিয়ে কি মজা পান আপনি বলুন তো?”

রাদ শব্দ করে হেসে উঠলো। যা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই গা জ্ব/লে উঠলো ইলহামের। সে আরও চেতলো। বিরক্তিতে এক পর্যায়ে ঘুরে দাঁড়াল রাদের দিকে। আ/গু/নের লা/ভা জ্ব/লছে তার নেত্রদ্বয়ে। সে সা/পের ন্যায় ফোঁস করে উঠে তেড়ে গেলো রাদের পানে। রাদ হাসি থামানোর চেষ্টা করলো। অনন্তর, ফের ইলহামের আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলালো রাদ। অবশ্য সেদিকে ইলহামের ধ্যান নেই। সে রাদের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। অতঃপর টেনে নিয়ে একদম দরজার বাইরে বের করে দিলো। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল,

—-“নেক্সট টাইম এঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই পারমিশন নিয়ে নিবেন। নয়তো.. নয়তো আপনার পি/স্ত/লে/র গু/লি/তে আপনাকেই মা/র্ডা/’র করবো আমি!”

রাদ মুখখানা তুবড়ে নিলো। নিজেকে সম্পূর্ণ এক ইনোসেন্ট গেটআপে ট্রান্সফার করে দিলো। অতঃপর বলল,

—-“আমার হবু বউয়ের ঘর! আমি আসতে পারবোনা?”

—-“না! পারবেন না। কারন আমি এখনও আপনাকে বিয়ে করবো বলে মত দেয়নি। এবং আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমি কখনো মত দিবোও না।”

ইলহামের শেষোক্ত বানীতে রাদের ইনোসেন্ট ফেসের ইতি ঘটলো। মুহুর্তে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এবং পরক্ষণেই তার মুখের রঙ বদলে হয়ে উঠলো বেশ হিং//স্র। ইলহাম থমকে গেলো। রাদের র/ক্তিম আভায় ঘিরে থাকা ক/ঠিন দৃষ্টি তার উপর আবদ্ধ হতেই তার কথার ঝুলি ফুরিয়ে এলো। রাদ আকস্মিক তাকে ঠেসে ধরলো দরজার সাথে। ইলহাম চমকে উঠলো ঘটনার আকস্মিকতায়। রাদ তাকে ঠেসে ধরেই ক্ষান্ত হলোনা। পরক্ষণেই তার হাত দুটো মুচড়ে নিলো পেছনে। ইলহাম ব্যা/থায় কুকিয়ে উঠলো। রাদ ভ্রুক্ষেপহীন। সে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ ঝাড়তে শুরু করলো,

—-“আমাকে বিয়ে করবে না! তো কাকে করবে? তোমার ঐ চেতনকে? যে কিনা তোমার জন্য জান দিতেও প্রস্তুত? হু? তুমি জানো তো? ওর জান কার হাতে যাবে? আর কিভাবে যাবে? আমার হাতে যাবে। আমার এই হাতে যাবে। ইয়েস, সুইটহার্ট। তোমার চেতনের ম/র/ন কিন্তু আমার হাতেই লেখা আছে!”

—-“আ..আমার লাগছে! প্লিজ ছাড়ুন!”

কাতর কন্ঠে আওড়ালো ইলহাম। রাদ কানে তুললো না সে কথা। সে নিজের মাঝে নেই! ইলহামের কথাটায় তার ভেতরটা এতোটাই আহত হয়েছে যে, এই মুহুর্তে ইলহামের কোনো ক/ষ্টই মনোযোগ কাঁড়তে পারছেনা তার।

—-“লাগছে? ও-ওহ! তোমার তবে অনুভূতিও আছে! কিন্তু স্বার্থপরের ন্যায় কেবল নিজের আ*ঘাত দেখার, এবং ফিল করার অনুভূতি আছে। আর বাকিদের নিয়ে তুমি কোনোদিন ভাবলেই না। ভাবলেই না সুইটহার্ট!”

দরজার হ্যান্ডেলের সাথে সত্যি ভীষণ বাজে ভাবে লাগছে ইলহামের। রাদের সাথে শক্তিতে সে কুলোতে পারছেনা। রাদের ঠেসে ধরায় ক্রমশ দরজার হ্যাডেলের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে তার দুইহাত। তাই পূণরায় আকুতি ভরা কন্ঠে জানালো,

—-“আ..আমার সত্যি লাগছে রাদ! আ..আমি ব্যা-থা পাচ্ছি…”

ইলহাম কথা অসম্পূর্ণ রেখেই হঠাৎ তার ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো রাদ। তার শীতল ওষ্ঠদ্বয়ে করোর উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই ইলহামের সমস্ত ভাবনা থমকে গেলো! সমস্ত পী/ড়া মুছে গেলো। সমস্ত ভ/য়,রা/গ এক লহমায় উধাও হয়ে গেলো। কিন্তু যখন রাদ জেদের বশবর্তী হয়ে ইলহামের ঠোঁট চেপে কামড়ে দিলো তখন সে অস্ফুট স্বরে চেঁচিয়ে উঠতে চাইলো। কিন্তু সেই স্বাধীনতা টুকুও কেঁড়ে নিলো রাদ। চটজলদি তার কোমর পেঁচিয়ে চেপে ধরলো নিজের সাথে। অতঃপর সেকেন্ড গড়াতেই চেপে ধরলো তার মুখ। ইলহামের চোখে জল টলমল করছে তখন। যা দেখে ডেবিল হাসলো রাদ। কানের কাছে মুখ এনে বলল,

—-“ভালোবাসি, প্রিয়দর্শিনী। একটু বেশিই ভালোবাসি তোমায়। সেই খাতিরে আমার ছোট্ট ভুল টুকু ক্ষমা করে দিও। কেমন।”

ইলহাম জোড়াজুড়ি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেই রাদ আরও শক্ত করে চেপে ধরে তাকে। ফের ফিসফিসিয়ে বলল,

—-“যখন আমি নিজেই তোমায় ধরেছি, তখন আমি নিজেই তোমায় ছেড়ে দিবো। কেন এতো ছটফট করো বলো তো? আখেরে শা/স্তিটা কে পায়? আমি নাকি তুমি? সেদিন ভার্সিটির কথা ভুলে গেলে? ঘাড়ের দাগটা এবং ব্যা-থাটা নিশ্চয়ই এখনও আছে?”

এই বলে রাদ হাত বাড়িয়ে ইলহামের ঘাড়ের কাছ থেকে টি-শার্টটা কিঞ্চিৎ নামিয়ে দিলো। আর ওমনি দৃশ্যমান হলো তার রা-গের পরিনাম। বেচারি সেদিন সত্যি খুব বেশি ভ-য় পেয়ে গেছিলো। আর তারউপর তার এই ট-র্চা-র! সব মিলিয়ে সে খুব বেশিই অসন্তোষ তার প্রতি।

রাদ আর কিছু না ভেবেই আকস্মিক ঠোঁট ছোঁয়ালো ইলহামের ঘাড়ে। ইলহাম অসহ্য এক অনুভূতিতে কেঁপে উঠল ভ*য়া*নক ভাবে। রাদ কৌশলে তাকে আঁকড়ে ধরলো নিজের সাথে। ইলহাম অসহ্য, অযাচিত অনুভূতিতে পিষ্ট হয়ে ডুব দিলো অতীতে,

এক মাস পূর্বে_____

আজ ইলহামের প্রেজেন্টেশন। তাদের বিজনেস ক্লাবে খুবই নামকরা কয়েকজন গুনীমান্যি ব্যাক্তিরা আসবেন তাদের বিজনেসের প্রমোশন করাতে। সেখানেই ইলহামকে বিজনেসের ব্যাপারের ছোট খাটো প্রেজেন্টেশনের ভার মিলেছে। তাই সে
খুব ভোর ভোর উঠেই সকল প্রকার প্রিপারেশন নিয়ে নিলো। প্রেজেন্টেশনের জন্য ফাইল রেডি করলো। অতঃপর পালা এলো ফর্মাল ড্রেস পড়ার। যা ইহকালে সে কোনোদিন পড়ার চেষ্টাও করেনি। এবং তা হলো শাড়ী। যা নিয়েই মহা দুশ্চিন্তায় পড়লো বেচারী। কেননা তার শাড়ি পড়ার কোনোরূপ অভ্যাস নেই। বাড়িতে কাউকে বলে পড়বে সে উপায়ও নেই। তাই তার ফ্রেন্ড উপমাকে কল করে বাসায় ডাকলো। উপমাই এসে তাকে বেশ আটকৌশলী ভাবে শাড়ি পড়িয়ে দিলো।

—-“নে। শাড়ি তো পড়িয়ে দিলাম। এবার সামলাতে পারবি তো?”

ইলহামের কনফিডেন্সের লেভেল জিরো। তবুও মনকে শক্ত করে শক্তি জোগালো। মনকে বোঝালো, শাড়ী পড়া নট আ বিগ ডিল। আর শাড়ি সামলানো? ইহাকে ‘ইট’স ওকে টাইপ’ ধরে নিলেই হলো। যে জিনিসে প্রয়োজনের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেই জিনিসে ভবিষ্যতে মাথায় চড়ে নাচে। যেমন মিহাদ আবরিশাম রাদ। গু/ন্ডা একটা।

—-“কি রে কি ভাবছিস?”

শাড়ির কুচি ধরতে ধরতে উপমা ফের বলে উঠলো। ইলহাম ভাবনার ঘোর কাটিয়ে ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

—-“তেমন কিছু না-রে। তোর ড্রামা ক্লাবের প্রেজেন্টেশনের টাইম তিনটায় পড়েছে, তাই না?”

উপমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ছোট্ট করে হাসলো। স্বস্তিময় হাসি। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,

—-“হ্যাঁ। আমার জন্য ভালোই হয়েছে। রিহান ততক্ষণে অফিসে বসে ঝিমোবে। বাসায় থাকলে এটা নিয়েও একটা অশান্তি তৈরি করতো।”

রিহান উপমার স্বামী। বছর খানেক হয়েছে তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই এক বছরেও দু’জনের মাঝে বনিবনা ঠিক জমে ওঠেনি। রিহানের বক্তব্য বিয়ের পর মেয়েদের ঘর থেকে না বেরোনোই মঙ্গল। তাতে সংসারে অশান্তি বৈ কিচ্ছু পাওয়া যায়না।

—-“রিহান ভাইটা আর শুধরোলো না। তোদের বিয়ের অনেক আগে থেকেই আমি চিনতাম রিহান ভাইকে। কি স্মার্ট ছিলো, বাপরেহ্। কখনো কি তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিলো? তার ভেতরটা এমন!”

ইলহাম মন খারাপের সুরে বলে উঠলো। তার কথার রেশ টেনে উপমা মলিন হাসলো। সেও মন খারাপের সুরে বলে উঠলো,

—-“গোটা বছরটাই পার করলাম সয়ে সয়ে। এখন ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে। অন্তত দিন শেষে মাথা গোজার মতো ঠাই আছে। আর যাই হোক, ভালোবাসে ভীষণ!”

—-“আমরা তো ঠিক ওখানেই দুর্বল। ভালোবাসার কাঙাল আমরা। একটু ভালো ব্যাবহার পেলেই ভুলে যাই সমস্ত দুঃখ-কষ্ট। ছাড় ওসব! চল বেরোই। তোকে তোর বাসায় ছেড়ে দিয়ে আমি চলে যাই ভার্সিটিতে।”

•_____•

ভার্সিটির গেটের সামনে রিক্সা থামতেই ইলহাম চটজলদি ভাড়া মিটিয়ে ছুটলো ভেতরের দিকে। মনে হচ্ছে সে আজ লেট করে ফেলেছে। অন্যান্য দিন তো ঠিক সময়েই উপস্থিত হতে পারে ভার্সিটিতে। তাহলে আজ কেন লেট হলো! টাইম ধরেই তো বের হয়েছিলো?

—-“আলভি? এই আলভি?”

দূর থেকে কারোর ডাক পেতেই দাঁড়িয়ে পড়লো আলভি। আলভি ইলহামের ব্যাচমেট। সে ঘুরে দাঁড়ালে ইলহামকে দেখতেই ইয়া বড় করে হা করে ফেললো। ইলহাম হাত নেড়ে কাছে ডাকলেও সে নড়তে পারলো না দু’কদমও। যা দেখে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেললো ইলহাম। কপালের মাঝে বিরক্তির অঢেল পরিমান ছাপ ফেলে নিঃশ্বাস ফেললো। আলভি তার নিকট না আসতে সে নিজেই এগিয়ে গেলো। আলভি তখনও ভ্যাবলাকান্তের ন্যায় তাকিয়ে আছে। যা দেখে ইলহাম হাতের ফাইল গুলো দিয়েই বারি দিলো ওর কাঁধের উপর। মা-র খেয়ে হুঁশ ফিরলো আলভির। হা করা মুখটা হঠাৎ চেপে ধরে আমতা আমতা করতে লাগলো কিছু বলবে বলে। কিন্তু সেই অপেক্ষাটুকুও করলো না ইলহাম। পরক্ষনেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

—-“হাবার মতো তাকিয়ে কি দেখছিস? আমি তোকে ডেকে যাচ্ছি! আর তুই কিনা..”

আলভি অসহায় মুখ করে বোকা হাসলো। গাল চুলকে বলল,

—-“ না মানে, হয়েছে কি বলতো? আজ তোকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। ত-তাই আরকি চোখ ফেঁসে গিয়েছিলো!”

—-“হাঁদার মতো দাঁত কেলাস না,প্লিজ! প্রেজেন্টেশন কি স্টার্ট হয়ে গিয়েছে? রাফি স্যার কি খুঁজছিলেন আমায়?”

—-“হ্যাঁ! না!”

—-“হ্যাঁ, না মানে? বলছিস টা কি তুই?”( হতভম্ব গলায়)

আলভি অসহায় মুখ করে করে তাকালো ফের। নিজেই নিজের মাথায় চাটি মে/রে বলল,

—-“আরে ধুর! না না। মানে, আসলে!”

—-“উফ! বুঝেছি। আর কিছু বলতে হবেনা। তুই আমায় এটা বল, রাফি স্যার কোথায়? টিচার্স রুমে?”

আলভি এবার মুখে কিছু বলল না। কারন সে জানে,মুখে কিছু বলতে নিলেই এমন ওলট পালট করে ফেলবে! তাই ইলহামের প্রশ্নের উত্তরে কেবল উপর নীচ করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। ইলহাম আর দাঁড়াল না। দ্রুত পা চালিয়ে বিজনেস টিচার রাফি রোজারিওর অফিস রুমে চলে গেলো। বাইরে থেকে দরজাটা ভেজিয়ে রাখার দরুন ইলহাম অনুমতি নেওয়ার পূর্বে একবার উঁকি মা/র/লো। স্যার নেই। তবে অন্যকেউ আছে, যিনি তার মুখটা স্যারের চেয়ারের দিকে ফিরিয়ে বসে আছেন। স্যার কোথায় গেলেন? এই ভেবে ইলহাম দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। যিনি বসা, তিনিও হয়তো স্যারের কোনো স্টুডেন্টই হবেন। নো প্রবলেম। এখানে পারমিশন নেওয়ার কিছু নেই।

ইলহাম ভেতরে প্রবেশ করতেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো স্যারের চেয়ারের পেছনে সেট করা বিশাল মিরোরটার দিকে। সে যখনই রাফি স্যারের কেবিনে আসে তখনই সে এই মিরোরটায় নিজেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে ভুলেনা। এবারও তাই। হঠাৎ মনে পড়লো বাইরে আলভির কথাটা। আজ তাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। কৌতুহল বশত মিরোরের মাঝে নিজেকে দেখতে দেখতে এমন ভাবে ডুলে গেলো, যে তার মনেই ছিলোনা মিরোরের সামনে কেউ বসে ছিলো। আর যার দৃষ্টি প্রথম মুহুর্তে থেকেই তার উপর আবদ্ধ।

#চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here