প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৯

0
266

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৯

হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রয়েছে প্রেম। মুখে কোনো শব্দ আসছে না বলার মতো। মনে হচ্ছে কোনো জালের মধ্যে জড়িয়ে গেছে সে। মাথাটা ভনভন করছে। তবে অপরদিকে উত্তরের জন্য অস্থির হয়ে উঠল ঐশ্বর্য। অধৈর্য হয়ে বলল,
“উফফ… আপনি একটা উত্তর দিতে এতো সময় লাগান? লাভ ইউ টু, হেট ইউ, কিল ইউ কিছু তো একটা বলুন! আমার এতো ধৈর্যশক্তি নেই।”

এটা হয়ত ইতিহাসে প্রথমবার ঘটছে যে একটা ছেলেকে একটা মেয়ে কিডন্যাপ করে প্রপোজ করছে। মেয়েটার দম আছে বলতে হবে। তবে এই মূহুর্তে ভীষণ রাগ লাগছে তার। এটা কেমন সভ্যতা? রাগে গা জ্বলছে তার। রাগে কাঁপতে কাঁপতে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল সে। এমন চেষ্টা দেখে ঐশ্বর্যের মনে হলো প্রেমের হাতে বেশি চাপ পড়ছে। এভাবে সে কি করে উত্তর দেবে? দ্রুত হাত বাড়িয়ে ঝড়ের গতিতে খুলে দিল হাতের বাঁধন সঙ্গে পায়ের বাঁধন। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল প্রেম। এমন অসভ্যতা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। প্রেম এমনি বেশ শান্ত মানুষ হলেও রাগলে ভয়ানক রুপ ধারণ করে তার। এক হাত মুঠো করে ডান হাত তুলে ঐশ্বর্যকে কষিয়ে থাপ্পড় মারতে নেয় প্রেম। সেটা দেখে প্রথমবার মাথা নুইয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ঐশ্বর্য। চোখমুখ কাঁচুমাচু করে থাকতেই বেশকিছুক্ষণ কেটে যাবার পর যখন কোনো আঘাত তার গালে লাগল না তখন পিটপিট করে নিজের বড় ও সুদীর্ঘ আঁখি খুলল সে। প্রেম রাগে অন্যদিক তাকিয়ে ফুঁসছে। ঐশ্বর্য পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইল। আচমকা হেঁসে দিয়ে বলল,
“আরে বাহ, আপনাকে রাগলেও কত কিউট লাগে। গালগুলো লাল লাল স্টবেরি হয়ে গেছে আর তাকানোর স্টাইলটাও…! জাস্ট ফিদা হয়ে যাবে। যাক, আপনার গম্ভীর মুখ ছাড়াও অন্য কোনো রিয়েকশন দিতে পারেন সেটা অন্তত বুঝতে পারলাম।”

কটমট করে তাকালো প্রেম। একে তো রাগে সারা শরীর রি-রি করছে তার ওপর এই রাগের মাঝে মেয়েটার এমন কথাবার্তা কেমন লাগবে? সে রাগবে না হাসবে তা বুঝতে পারছে না। নিজের রাগটাকে বজায় রাখার চেষ্টা করে বলল,
“মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না আমি। তাই তুমিও বেঁচে গেলে। বাট নিজের লিমিট ক্রস করবে না। তুমি হতে পারো বেপরোয়া মেয়ে। নিজের ইচ্ছেমতো চলতেই পারো। বাট তোমার এই ইচ্ছে আমার ওপর খাটাবে না। তোমার আর আমার মিট হয়েছেই বা কয়বার? তুমি এর মধ্যে করে ফেললে আমাকে ভালোবাসো? ভালোবাসা শব্দটার মানে বোঝো তুমি? শুধু লাফিয়ে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা যায় না। যেই নেশা, যেই কৌতুহল শুধু কিছুক্ষণের সেটা ভালোবাসা বলে না। কত বয়স তোমার? এই বয়সে যা হয় মানে ওইসব এট্রাকশন সেসবই হয়েছে। ভালো করে বলছি, এসব বিষয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। নয়ত ঝেড়ে ফেলতে না পারলে আমাকে ডিস্টার্ব করো না প্লিজ!”

“ভালোবাসার সঙ্গে বয়সের কি সম্পর্ক? ভালোবাসতে বয়স লাগে? যদি তাই হতো এতোদিনে এই আগুনে পুড়িয়ে রাখা এই কঠিন হৃদয়ে কতো কেউ আসতো আর যেতো! কিন্তু সেটা তো হয়নি। আপনি এসেছেন আর মরুভূমির মতো হৃদয়ে বৃষ্টির বর্ষণ হয়ে এসেছেন। এটা ভালোবাসা নয়?”

“না নয়। এটা তোমার ভুল ধারণা।”

এবার কিছুটা রাগ লাগে ঐশ্বর্যের। বড় বড় শ্বাস ফেলে যখন রাগটা দমাতে পারলো না তৎক্ষনাৎ প্রেমের শার্টের কলার দিয়ে নিজের সর্বশক্তি দিতে নিজের দিকে টানতেই প্রেম টাল সামলাতে না পেরে ঐশ্বর্যের সাথে ধাক্কা খেল খানিকটা। চক্ষু চড়কগাছ হলো প্রেমের। মেয়েটার সাহস দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। ঐশ্বর্য চিৎকার করে বলে,
“এটা ভালোবাসা কেন নয় বলুন? কেন? হুয়াই?”

প্রেম প্রথমে নিজের শার্টের কলার টান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।
“ইউ ম্যাড গার্ল। তোমার মতো মেয়ের মনে ভালোবাসা জন্মাতে পারে না। তুমি স্বাভাবিক মস্তিষ্কেরই নও। যদি হতে তাহলে আমাকে এভাবে আনতে না আর এতো পাগলামি করতে না। আমাকে রেহাই দাও। প্লিজ! ফারদার যদি তোমাকে আমার সামনে দেখেছি খুব খারাপ হয়ে যাবে। সেদিন নিজেকে কন্ট্রোল রাখব না। ভালো চাইলে আমার সামনে আসবে না।”

প্রেম আশেপাশে তাকিয়ে দরজা খুঁজে নিল। হনহনিয়ে ছুটে গেল সেদিকে। দরজা খোলা পেল। দ্রুত বের হলো সেখান থেকে। ঐশ্বর্য শুধু ঠাঁই দাঁড়িয়ে প্রেমকে দেখে গেল। সে চাইলে আটকাতে পারতো তাকে। কিন্তু কেন যেন মন চাইলো না আটকাতে। কি হবে আটকিয়ে? বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে বললেন,
“কি ভাবছেন মি. আনস্মাইলিং? আপনি চাইলেন আর চলে গেলেন? আমি যেতে দিলাম বলেই যেতে পারলেন নয়ত…! আপনার সাধ্যও নেই আমার জাল থেকে বের হওয়ার। আজকে ছাড় দিলাম। কিন্তু ঘুরেফিরে হয় আমি আপনার কাছে যাব নয়ত আপনি আমার কাছে আসবেন। আমিও দেখব পরের বার আপনি আমাকে সামনে পেলে ঠিক কি কি করেন? জানতে চাই, আপনার হাতের চড় মিষ্টি নাকি ঝাল?”
বলেই জোরেশোরে হেঁসে ওঠে ঐশ্বর্য।

“আমাদের কুইনকে খুঁজে বের করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব। নয়ত এই রাজ্য ছন্নাছারা হয়ে যাবে। রোজি, তুমি এই রাজ্যের বর্তমানে সবথেকে শক্তিশালী ডেভিল। এখন তোমার হাতে। তোমার উপলব্ধি, তোমার জ্ঞান দ্বারা তুমি আমাদের ডেভিল কুইনকে খুঁজে বের করো।”

ডেভিল কিংডমের এরিক কথাটা বলল। রোজি অসহায় চোখে তাকালো। তারপর লাল চোখজোড়াতে পরিণত হলো তার চোখ। ভয়ানক হাসি দিল সে।
“কাজটা আমি কেন করব? এর বদলে আমি কি পাব?”

“এটা আমাদের রাজ্যের ব্যাপার। আমাদের শয়তানি সত্তা বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদের ডেভিল কুইন লাগবে।”

“কিন্তু তার বদলে আমি ডেভিল কুইনের সব থেকে কাছের এবং প্রিয় ডেভিল হতে চাই। ডেভিল কুইনের সবথেকে কাছে একজন ডেভিল লাগে আর সেটা সেই যুগ থেকে তুমি হয়ে আসছো। কিন্তু এবার রোজি হবে। তুমি রাজি?”

এরিক কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। ভাবলো কিছু কথা। ভেবে শেষমেশ বলল,
“আমি রাজি। তবুও আমাদের মাথার ওপর এমন কাউকে চাই যে সবথেকে বেশি হৃদয়হীন হবে। যার হাতে ধ্বংস হবে এই পৃথিবী।”

“আমিও রাজি। কিন্তু তাকে খুঁজে বের করব কি করে?”

“সেদিন অমাবস্যার রাতে আমরা আগুনের মধ্যে আমরা এক প্রতিচ্ছবি দেখেছিলাম। এক অপরূপ সুন্দরী যদিও সেটা ঝাপ্সা ছিল। কিন্তু সেই ঘোলাটের মাঝে যা দেখেছিলাম আমরা সবাই তা সবারই মনে থাকার কথা। অস্পষ্ট হয়েও তার সেই সৌন্দর্য স্পষ্ট ছিল। তবে যা স্পষ্ট ছিল সেটা হচ্ছে তার ঘাড়ের আঁকা ট্যাটু। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস! ডেভিল কুইনের হাতে আমাদের সেই মুকুটের চিহ্ন থাকবে। সে সবার থেকে আলাদা হবে। ব্যাস… এটাই কি যথেষ্ট নয়?”

রোজিও চিন্তায় পড়ে গেল। যতই হক, তাদের আসনে বসানো সেই রানীর মুখচ্ছবি স্পষ্ট ছিল না। তবুও সে রাজি হলো। কাল থেকে সে নামবে নতুন অভিযানে। তার জন্য তাকে থাকতে মানুষের দুনিয়ায় যেতে হবে। সেখানেই দেখা মিলবে ডেভিল কুইনের।

প্রেম বেশ রাতে বাড়ি ফিরতেই দেখা মিলল তার অভিমানী মা মিসেস. পরিণীতার। মুখ ফুলিয়ে সোফায় অন্যদিক তাকিয়ে বসে আছেন উনি। প্রেম জানতো এমনটাই ঘটবে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসতেই মিসেস. পরিণীতা কড়া কন্ঠে বললেন,
“কেন এসেছো এই সময়? না এলেও পারতে?”

প্রেম একগাল হেঁসে মিসেস. পরিণীতাকে হালকা জড়িয়ে বলে,
“সরি মা। আই এম লেট! আই নো দ্যাট। কাজ অনেক আগে শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম বাট…”

“বাট কি? বাহানা দিচ্ছো আমাকে? তোমার জন্য সবাই কত অপেক্ষা করছিলাম!”

আজ মিসেস. পরিণীতা আর শেখ কবির সাহেব অর্থাৎ প্রেমের বাবার বিবাহবার্ষিকী ছিল। যার কারণে প্রেম তাড়াতাড়ি কাজ সেড়ে বাড়ি ফিরছিল কিন্তু ঐশ্বর্যের জন্য সব ভেস্তে গেল! যার কারণে ঐশ্বর্যের প্রতি তখন একটু বেশিই রাগ হয়েছিল। প্রেম গম্ভীর মুখে বলে,
“আরো কাজ পড়ে গেছিল তাই আসতে পারিনি।”

“প্রেম ভাইয়া, তোমার একচুয়াল কাজ কি বলো তো? প্রেম করে গার্লফ্রেন্ডের লিপস্টিক নিজের শার্টে ভরিয়ে নিয়ে আসা?”

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো প্রেম। জুবায়ের আর রামিশা খিলখিল করে হেঁসে এগিয়ে এলো। জুবায়ের আর রামিশা দুজন প্রেমের কাজিন। প্রেমের মা-বাবার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে এসেছিল তারা। তারা মিটমিট করে হাসছে আর তার শার্টের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুই বুঝল না প্রেম! আর তাদের এমন কথা বলার মানে কি? বিষয়টা উদ্ঘাটন করার জন্য নিজের বুকের দিকে তাকালো সে। সে আবিষ্কার করল তার সাদা শার্টে সত্যিই লিপস্টিকের দাগ। বোধহয় ঐশ্বর্য যখন শার্টের কলার ধরে টানছিল তখনই কাজটা হয়েছে। তার ঠোঁট সাদা শার্টে লেগে গিয়েছিল আর বাকিটা ইতিহাস হয়ে গিয়েছে! লজ্জায় মাথা কাটা গেল তার। মুখ তুলে তাকাতে পারল না আর। এতো লজ্জা কখনো লাগেনি। মা কি ভাবছে? ভাবতেই মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সে। এখন কাকে কি বলবে?

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি নিজের কিছু পারসোনাল বিষয় নিয়ে খুবই ডিপ্রেসড যার কারণে গল্পতে মন বসাতে পারছি না। এর জন্য দুঃখিত। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]
লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here