প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৮

0
255

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৮

“আমাদের প্রিন্সেস একটা সাধারণ মানুষের প্রেমে পড়েছে। আজ জীবনে প্রথমবার ওর চোখেমুখে লজ্জার আবরণ দেখেছি আমি। আমি নিজে দেখেছি ও কতটা পরিমাণ একটা সাধারণ মানুষের প্রেমে মত্ত হয়ে পড়েছে।”

বেশ শান্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে মাধুর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করল এলিনা। মাধুর্য উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে রইল এলিনার দিকে। যেন এলিনা ভুলভাল কিছু বলে যাচ্ছে যা কোনোদিনই সম্ভব না। তারপর খানিকটা মেকি হেঁসে বলল,
“আই থিংক অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি করে তোমার মাথায় একেবারে সমস্যা হয়ে গেছে এলিনা। কি বলতে কি বলছো তুমি? ঐশ্বর্য আর প্রেমে পড়া? ইটস নট পসিবল।”

“ইটস পসিবল কুইন। আমি যা বলছি সব সজ্ঞানে বলছি। বিলিভ মি! প্রিন্সেস নিজে আমাকে ওর মনে কি লুকিয়ে ছিল সবটা বলেছে। ওর যেই চোখে হিংস্রতা ছাড়া কিছু ছিল না সেই চোখে এসব বলার সময় আমি আকুলতা দেখেছি। কাউকে পাওয়ার আকুলতা। আমি এতোটা ভুল দেখব না বা শুনব না।”

এবার এলিনার কথাগুলো আর ভুল বলে দূরে ঠেলে দিতে পারছে না মাধুর্য। বাকরুদ্ধ হয়ে একদিকে চেয়ে থাকল সে। তখনই এলিনা আবারও বলল,
“তাছাড়া আমি তো প্রিন্সেসকে বলে দিয়ে এসেছি নিজের মনের কথা বলে দিতে। জানি না ভুল করেছি নাকি ঠিক! এর জন্য দুঃখিত আমি।”

মাথা নত করে ফেলে এলিনা। তৎক্ষনাৎ মাধুর্য বলে ওঠে,
“দুঃখিত কেন বলছো? তুমি যা বলেছো খুব একটা ভুল বলো নি। আমাদের ভ্যাম্পায়ার জগৎ যতটাই শক্তিশালী আর পাওয়ারফুল হক না কেন। আমরা ভুলে যেতে পারি না শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ। ওদের কাছে আমরা তুচ্ছ। তাই ঐশ্বর্য যদি কোনো মানুষকে ভালো বেসেও ফেলে তাহলে এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু সমস্যাটা কি জানো? ঐশ্বর্য যাকে ভালোবাসবে তাকেও ওকে ভালোবাসতে হবে। তাও ঐশ্বর্যের সত্যিটা জেনে ভালোবাসতে হবে। আর ঐশ্বর্য ভ্যাম্পায়ার তার ওপর ওর মাঝে শয়তানি সত্তা বিরাজমান। এসব জেনে কে ওকে আপন করে নিতে চাইবে বলো তো? এমন কেউ আছে কি? মনে তো হয় না।”

এলিনা এবার নিরব। সত্যিই কি এমন কোনো মানুষ আদেও আছে? যে প্রিন্সেসের সত্যিটা জেনে ভালোবাসবে? মাধুর্য আবারও ধীর গলায় বলে,
“যাই হক। সকাল হলো বলে! তুমি রেস্ট নাও।”

এলিনা মাধুর্যের কথার জবাবে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। মাধুর্য ঠাঁই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ঘরে প্রবেশ করে দরজা আঁটকে দেয়। এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেডে বসে পড়ে সে। আনমনে কিছু একটা ভাবতেই ঠান্ডা শিরশিরে অনুভূত হয় তার কোমড়ে। হালকা কেঁপে উঠে পিছু ফিরে তাকায় সে। কড়া কন্ঠে বলে,
“কি সমস্যা? এতো বছর হয়ে গেল। তবুও আপনি বদলাবেন না। অসভ্যতা করেই যাবেন বলে ঠিক করে রেখেন নাকি?”

অনুভব ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকায় মাধুর্যের দিকে। মাধুর্যের চোখেমুখে রেগে গিয়ে রক্তিম আভাটা আস্ত ঝাঁসির রানি লাগে। বেশ ভালো লাগে অনুভবের। আবারও চোখ বুঁজে মাধুর্যের কোমড় জড়িয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

“অভিয়েসলি। বিয়ে করার বেশ কয়েকটা বেনিফিট আছে। তার মধ্যে সব থেকে বড় বেনিফিট এটা। যতই অসভ্যতা করি না কেন! সেটা নিয়ে বউ কারোর কাছে বিচার দিতে পারবে না। ওই আমাকে কয়েকটা গালি দিয়েই চুপ। আমার এমন অত্যাচার সারাজীবন হজম করতে হবে।”

“আপনি…আপনি একটা অসহ্যকর লোক। অত্যাচারী!”

দাঁতে দাঁত চেপে ছটফটিয়ে বলল মাধুর্য। অনুভবের কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।
“এতগুলো বছরে কতবার এই কথা বলেছো বলো তো? এসব কথা কে গায়ে মাখে?”

“বাবা হয়েছে যেমন তার মেয়েটাও তেমন হয়েছে। একরোখা, জেদি আর প্রচন্ডরকম বেয়াদব। দুটোকে ধরে ধোলাই দিতে পারলে খুশি হতাম।”

এবার চোখ মেলে তাকালো অনুভব। আর বলল,
“আমাকে যা বলার বলো। আমার মেয়েকে টানছো কেন? কি এমন করেছে সে?”

“সবসময় ও যাই করুক না কেন। তোমার তো কিছু মনেই হবেনা।”

“হয় না কারণ ও যা করছে সব আমার কারণে করেছে। এতে তো আমার মেয়ের দোষ দিতে পারি না।”

মাধুর্য এবার অনুভবের পানে তাকায়। অনুভবের হাসিটা মিলিয়ে গেছে। মাধুর্য বুঝতে পারে অনুভবের মনে কোথাও একটা অপরাধবোধ কাজ করে। তাই সে অনুভবের হাত ধরে বলে,
“এটা ভাগ্য। কারো দোষ নয়। কিন্তু…!”

“কিন্তু?”
মাধুর্য হাফ ছেড়ে সব কথা অনুভবকে খুলে বলে। অতঃপর চিন্তিত হয়ে পরে। অনুভব সব শুনে হঠাৎ করে শব্দ করে হেঁসে উঠতেই হকচকিয়ে ওঠে মাধুর্য।
“আরে, পাগল হয়ে গেলেন নাকি? এভাবে হাসছেন কেন?”

“তুমি আমাদের মেয়ের জন্য চিন্তা করছো? সিরিয়াসলি? আমার তো ওই ছেলেটার জন্য চিন্তা হচ্ছে। বেচারা যদি ভালোই ভালোই রাজি হয় তাহলে ভালো। নয়ত গেল! আফটার ওল, মেয়েটা তো আমার! সো ইম্প্রেস করার টেকনিক সে খুব ভালো করে জানে। যেভাবে আমি তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়েকে ইম্প্রেস করেছিল। ঠিক সেভাবেই আমার মেয়েও আমার জামাইকে ইম্প্রেস করবে।”
মাধুর্যকে ঝগড়ুটে বলায় চোখ গরম করে তাকায় অনুভবের পানে। অনুভব মুচকি হাসতে থাকে! আজও কমেনি তাদের ভালোবাসা!

‘ব্রেকিং নিউজ, শিল্পপতি আজিম শাহিনের একমাত্র ছেলে কৌশিক শাহিনের ভয়া’বহ মৃ’ত্যু তার নিজ বাংলোতে। বাংলোর ঘরের এক বাথরুমের বাথটাবে পড়ে থাকতে দেখা গেছে তার র’ক্তশূণ্য লা’শ। দুটো চোখ যেন কোনো ধা’রা’লো কিছু দিয়ে আঁচড়ে ফেলা হয়েছে। গলা এবং ঘাড়ে রয়েছে আঁচড়ানোর দাগ। যেন কোনো ভ’য়ংকর কোনো প্রাণী আ’ক্র’মণ করেছিল তাকে। এই মৃ’ত্যুর পেছনে রয়েছে অনেক বড় রহস্য। কিভাবে হলো এতো নৃ’শং’স মৃত্যু? তা এখনো অজানা।’

গাড়ির মধ্যে নিউজে খবরটা শুনতেই গাড়ি ব্রেক করলো প্রেম। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার ঠান্ডার মাঝে। মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে। বিড়বিড় করে আন্দাজে বলে ওঠে,
“কি জানি, কোন মেয়ে তার প্রতিশোধ নিয়েছে! কম মেয়ের সাথে তো অশ্লীলতা করেনি! কোনো মেয়েই হবে।”

এসব বলে নিজ মনকে সায় দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতেই তার গাড়ির জানালায় টোকা পড়ল। জানালার কাঁচ খুলতেই একটা মহিলাকে নজরে পড়ল তার। গায়ে চাদর দিয়ে মুড়ানো। ঠকঠক করে কাঁপছে মহিলাটি। চোখমুখও চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। প্রেম ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ইয়েস?”

“আ…আমাকে একটু সামনের হসপিটালে পৌঁছে দেবেন? আসলে আ…আমার ভাই এক্সিডেন্ট করেছেন আর আমি কো…কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আপনি আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন?”

প্রেম ক্ষীণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। কন্ঠস্বরটা চেনা তবে ভারি। কোথায় যেন শুনেছে! মেলাতে গিয়েও পারছে না। এখন বলতেও পারছে না অন্য গাড়ি দেখে নিতে। কারণ এমন শক্ত মনের মানুষ নয় সে। আবার পৌঁছে দিতেও মন সায় দিচ্ছে না। কি করবে বুঝতে পারছে না। মানা করে দেওয়া আগেই তার মুখে হঠাৎ স্প্রে করে বসে মহিলাটি। সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে আসে তার। চোখ খুলে রাখতে পারে না। চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গভীরভাবে!

হালকা একটু নড়ে ওঠে প্রেম। হাত নাড়াতে চেয়েও পারে না। চোখ বুঁজেই বিরক্তি প্রকাশ করে সে। চোখ খুলতে চায়। অনেক কষ্টে চোখ মেলতে সক্ষমও হয়। চোখ মেলে তাকাতেই আশপাশটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আশেপাশে অন্ধকার! শুধু মাথার ওপরে জ্বলছে একটা লাইট। তাও টিমটিম করছে। মাথাটা ভার হয়ে আছে প্রেমের। মাথায় হাত দিতে চাইতেই যখন অসফল হয় তখন নিজের হাতের দিকে তাকায় সে। বাকরুদ্ধ না হয়ে পারে না প্রেম। তাকে একটা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। চোখমুখ কুঁচকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে সে। মনে পড়ে তার মহিলাটার কথা! সে কে ছিল? আর কেনই বা এমন করল তার সাথে? রেগেমেগে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এটা কি হচ্ছে আমার সাথে? কে করছে আমার সাথে এসব? সামনে এসো। দেখে নেব আমি। জাস্ট আমার সামনে এসো।”

প্রেমের কানে ভেসে আসে কারো এগিয়ে আসার শব্দ। তার সামনে এসে দাঁড়ায় এক চেনা পরিচিত মানুষ। পরনে আধুনিক পোশাক এবং বেশ স্টাইলে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হয় না তার। বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“তুমি? তুমি এসব করেছো?”

ঐশ্বর্য আরো এগিয়ে আসে প্রেমের দিকে। হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রেমের চোখের দিকে তাকিয়ে অসহায় সুরে বলে,
“কি করব বলুন? আমি আপনাকে এতে জ্বালিয়েছি, এতোই জ্বালিয়েছি যে আই এম সিউর আপনি কোনোদিন আমার সামনা-সামনি আসলেও কোনো কথা না শুনে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করবেন। পারলে পালিয়ে যাবেন। তাই আমাকে এই কাজটা করতে হলো! সরি!”

“হাউ ডেয়ার ইউ? আমার সঙ্গে এই কাজটা করার সাহস কোথা থেকে পেলে তুমি?”

“আমি আপনাকে ভালোবাসি মি. আনস্মাইলিং!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here