প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১০

0
248

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১০

“ভাইয়া, তোমার নাম প্রেম ঠিক আছে। কিন্তু সবখানে এভাবে প্রমাণ ফেলে আসা কি ঠিক?”

বলেই শব্দ করে হাসতে চাইতেও পারল না রামিশা। প্রেম রামিশাকে তাড়া করার উদ্দেশ্যে উঠতে চাইতেও মিসেস. পরিণীতা প্রেমের হাত ধরায় সে উঠল না। মায়ের দিকে তাকালো প্রেম। মিসেস. পরিণীতা রামিশা আর জুবায়েরকে ইশারা করল ঘরে যেতে। ওরা আর কিছু না বলে চোখ টিপে চলে গেল। নিজের মায়ের দিকে তাকাতে পারছে না প্রেম। এবার তার ইচ্ছে করছে যে চড়টা সে ঐশ্বর্যকে মারতে বাকি রেখেছিল সেটা এবার মেরেই দিতে।

“প্রেম? আমি যা দেখছি, যা শুনছি সেটা কি সত্যি? তোমার কি কারোর পছন্দ?”

চকিতে তাকালো প্রেম। দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না না মা। তুমি কি ভাবছো ওই ওদের কথায়? তোমরা যা ভাবছো তা নয়। আসলে আমি একটা পাগল মেয়ের পাল্লায় পড়েছিলাম। সি ইজ টোটালি ম্যাড।”

“সেই পাগল মেয়েটা কি আমার ছেলেটাকেও পাগল করে দিচ্ছে?”

“না মা। সেই সুযোগ আমি দেব না।”

মিসেস. পরিণীতা এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন। বড় নিশ্বাস ফেলে এবার প্রেমের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আসলে প্রেম, তোমাকে না বলে আমি আর তোমার বাবা একটা কাজ করে ফেলেছি।”

প্রেমের চোখজোড়া সরু হয়ে এলো। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে এই ব্যাপারে। তবুও সে খুঁটিয়ে জানতে চেয়ে বলল,
“মানে? কি এমন কাজ?”

“আসলে, তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখে ফেলেছি। তোমাকে অনেকবার বলেছি বিয়ের কথা। তুমি শুধু এখানেই আমাকে বার বার আশাহত করেছো। এবার আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না। আমি এবার আমার সঙ্গে একটা গল্প করার সঙ্গী চাইছি। আর ভালো লাগছে না একা একা।”

মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল প্রেমের। সে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য প্রস্তুত না। বিয়ে মানে একটা বড় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তার সময় প্রয়োজন। সবেমাত্র দেড় বছর হলো সে ব্যবসার হাল ধরেছে। এই সময় বিয়ে তার ভালো লাগছে না। সে তিরিক্ষি হয়ে বলল,
“কিন্তু মা! এই সময় বিয়ে? তুমি খুব ভালো করে জানো আমি এসব বিষয়ে প্রস্তুত নই।”

মিসেস. পরিণীতাও বিষয়টাকে আর ছাড়ার পাত্রী নন। তাই তিনি বলে উঠলেন,
“আমি তোমার এবার কোনো বাহানা শুনতে চাইছি না প্রেম। আমরা কথা বলে নিয়েছি। আর মেয়েটাও সব দিক থেকে পারফেক্ট। কাল তুমি মেয়েটার সাথে মিট করবে এবং জেনে নেবে যা যা জানার। যদি তোমার তাকে ভালো না লাগে কোনো কারণে তাহলে আমাকে সেটা বলবে তারপর আমরা আর বিষয়টা নিয়ে আগাবো না। আমাদের বিবাহবার্ষিকীর উপহার হিসেবে এতটুকু তো করতেই পারো। পারবে না?”

এবার আর মায়ের কথা ফেলার কোনোরকম সুযোগ পেল না প্রেম। একপ্রকার বাধ্য হয়ে বলল,
“ঠিক আছে। আমি মিট করব কাল। নাউ হ্যাপি?”
বলেই উঠে আসে প্রেম। তার মন নেই এসবে। তাই কিছুটা রেগেই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো প্রেম।

দুপুরের আগ মুহূর্ত। শীত হালকা কমেছে। চারিদিকে হালকা রোদ। একটা রেস্টুরেন্টে বসে আনমনে ফোনে মনোযোগ দিয়ে আছে প্রেম। ড্রেসআপ পুরোটাই ফর্মাল। সেই কালো কোট, সাদা শার্ট, গলায় ঝুলানো লাল টাই আর হাতে চেইনের ঘড়ি এবং পায়ে সু জুতো। ফর্সা নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। চেহারা হালকা বিরক্তির রেশ ফুটে রয়েছে। মুখে তো তার সহজে এমনিই হাসি থাকে আর এখন আরো নেই।

সকাল সকাল কাজের বাহানা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসেছিল প্রেম। উদ্দেশ্য ছিল তার কোনোভাবেই কোনো মেয়ের সঙ্গে দেখা করবে না। এমনি একটা পাগল মেয়ের চোটে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম তার। এর ওপর অন্য কোনো মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছে নেই তার। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি! কাজের বাহানা দিয়েও পার পেলো না প্রেম। মিসেস. পরিণীতা গিয়ে টেনে নিয়ে এসেছে অফিস থেকেই। এই রেস্টুরেন্টে প্রেমকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছেন। মায়ের কথা, আজ যদি মেয়েটাকে ঘুরে চলে যেতে হয় তাহলে তার মা কথা বলাই বন্ধ করে দেবে। তার থেকে দেখা করা ভালো।

“এক্সকিউজ মি! আপনি মি. শেখ আনন প্রেম?”

ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েলি কন্ঠস্বরের মালিককে দেখার জন্য তাকালো প্রেম। একটা অল্পবয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে। চোখেমুখে কিছুটা অস্বস্তি! প্রেমের চেনা চেনা লাগল। সেই মূহুর্তে মনে পড়ল মিসেস. পরিণীতা আসার সময় ওই মেয়েটার ছবি দেখিয়েছিল। এটা সেই মেয়ে। প্রেম গাম্ভীর্যের সাথে জবাব দিলাম,
“ইয়েস। ইউ আর রাইট।”

মেয়েটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। প্রেম সরু চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরেও যখন মেয়েটার মধ্যে কোনো হেলদোল সে দেখলো না তখন আবার মেয়েটার দিকে তাকালো প্রেম। মেয়েটি উশখুশ করছে আর সিটের দিকে তাকাচ্ছে। তা দেখে প্রেম তাড়াহুড়ো করে বলল,
“প্লিজ সিট!”

এবার মেয়েটা গিয়ে বসল। অতঃপর আবারও নিরব প্রেম। মুখে কোনো কথা নেই। তা দেখে ইতস্তত বোধ করল মেয়েটি। সে কি করে আগে কথা বলতে শুরু করবে? তবুও কিছুরা লজ্জা ভেঙে বলে উঠল,
“আপনার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য আর আলাদা কথা বলার জন্য আপনার আর আমার পরিবার এখানে পাঠিয়েছে। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে করতে পারেন।”

প্রেম এবার ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠল,
“ওহ হ্যাঁ, আপনার নাম কি? একচুয়ালি বার বার মিস বলে সম্মোধন করতে কেমন জানি লাগবে। সো আপনার নামটা যদি বলতেন।”

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকালো মেয়েটি।
“আপনি আমার নামটাও জানেন না?”

“মা বলেছিল। বাট আই ফরগোট।”

“আমার নাম রোজ। আই মিন রোজ জাহ্নবী।”

প্রেম শুঁকনো মুখে বলে,
“ওহ। নাইস নেম। আপনি কি কিছু অর্ডার করবেন? করলে করতে পারেন।”

রোজ মাথা নাড়িয়ে না করল। প্রেমও আর কিছু বলল না। প্রেম আর কিছু জিজ্ঞেস করছে না দেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল রোজ। এভাবে চুপচাপ তার ভালো লাগছে না। শুধু আশেপাশে তাকাচ্ছে। প্রেমকে কিছু বলতে না দেখে সে মলিন মুখে বলল,
“মাইন্ড না করলে একটা প্রশ্ন করি? আপনার কি বিয়ের এই সম্মন্ধে আপত্তি আছে কোনো? মানে এটা কি চাপে পড়ে করছেন? আপনার মনে হচ্ছে কোনো আগ্রহ নেই।”

“যদি সত্যি বলি তাহলে হ্যাঁ। আমি কিছুটা মায়ের চাপে পড়ে এখানে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বিয়ের করার কোনো প্ল্যানিং এতো তাড়াতাড়ি ছিল না আমার।”
রোজ কিছুটা বেজার হলো তবে মুখ ফুটে কিছুই বলল না।

রেস্টুরেন্টের এক প্রান্তে বসে আছে ঐশ্বর্য। গালে হাত দিয়ে মেনুর কার্ডটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে। তার সাথে আরো দুজন মেয়ে।
“প্রিন্সেস, এই রেস্টুরেন্টের খাওয়াদাওয়ার মধ্যে কোনো পাও তুমি? আমাদের আসল খাবারই তো নেই। রক্তই কি পাই না।”

তাদের মধ্যে একজনের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালে ঐশ্বর্য। আর বিরক্ত হয়ে বলল,
“কতবার বলব? এখানে আমি তোমাদের প্রিন্সেস নয়। আমি ঐশ্বর্য। এখানে প্রিন্সেস বলে ডাকলে তোমাদের ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে তোমার রক্ত পান করব এবার।”

দুজনেই ঢোক গিলে চুপ রইল। ঐশ্বর্যের বাকিদের মতো রক্তের তৃষ্ণা কেন যেন আসে না। এর কারণ তার কাছে অজানা। সে এবার ওয়েটারকে ডাক দিতে আশেপাশে তাকালো। তখনই সামনে চোখ গেল তার। ঈগলের মতো সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে আঁটকে গেল প্রেম। সেই সূক্ষ্ম নজর কেঁড়ে নিলো একা মেয়েও। সঙ্গে সঙ্গে তার হাত আঘাত করে বসল কাঁচের টেবিলকে। চির ধরে গেল টেবিলে। মাঝখানে ভেঙে গেল সেটা। সকলে চমকে উঠল। তাকালো ঐশ্বর্যের পানে। এমনকি প্রেম নিজেও পেছন ফিরে তাকালো। চমকে বাকরুদ্ধ হলো সে নিজেও। ঐশ্বর্যের সাথে থাকা দুজন চমকে উঠে দাঁড়ালো। মুখ ফস্কে বলে ফেলল,
“প্রি…”

পুরোটা বলতে পারলো না তারা। ঐশ্বর্যের সেই দৃষ্টির কারণে। যেই দৃষ্টি যে কারো প্রাণপাখি বের করে দিতে পারে। ঐশ্বর্য দুজনের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একপা-দুইপা করে এগিয়ে এলো প্রেমের সম্মুখে। তার একেকটা পায়ের ধাপ যেন নাড়িয়ে দিচ্ছে মাটির ভীত। একবার তার দৃষ্টি রোজের ওপর দিয়ে প্রেমের দিকে ঘুরিয়ে তাকিয়ে বেশ শান্ত তবে গমগমে কন্ঠে বলল,
“এই তাহলে আমার ভালোবাসা স্বীকার না করার কারণ? তাই যদি হয় তাহলে এই কারণ উপড়ে ফেলব আমি।”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটার থিমই এমন যে মেয়ে ছেলের জন্য পাগল। সব গল্প এক হবে এমন তো নয় তাই না? গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here