প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৭

0
310

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৭

ভ্যাম্পায়ার কিংডমে আজ শোরগোল বেঁধেছে। সকলে হুড়োহুড়ি করছে। রাজপ্রাসাদ সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। সুন্দর রাজকীয় প্রাসাদে সকলে মিলে সাজিয়ে জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছে। চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে যার তার! তবে প্রাসাদের মূল আর্কষণ হচ্ছে অন্যকিছু। প্রিন্সেসের জন্য রাখা আসন আজ পরিপূর্ণ! আজকে বহুদিন পর ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্যের আগমন ঘটেছে। আজ প্রায় ৬ বছর পর সে এসেছে। সন্ধ্যার পরিবেশে সব সাধারণ ভ্যাম্পায়ারের সমাগম ঘটেছে। আজ ৬ বছর পর সকলে এসেছে তাদের ভবিষ্যতে রানীকে দেখতে!

সিংহাসনে বসে আছে ঐশ্বর্য। চোখেমুখে ছড়িয়ে রয়েছে বিরক্তি। আজ তার সাজপোশাক ভিন্ন। তার যেন অন্য রূপ প্রকাশ পেয়েছে। হলুদ রঙের জামা যা বেশ লম্বা। পা পর্যন্ত ছড়িয়ে রাখা। মাথায় মুকুট ঝলমল করছে। গলায় চিকন একটা মালা। বেশ দামি পাথরের। হাতে চিকন ব্রেসলেট। এই প্রথম ঐশ্বর্যকে অন্যান্য ভ্যাম্পায়ারের মতো পোশাকে সাজানো হয়েছে। এমন রুপে ঐশ্বর্যকে দেখে মাধুর্য নিজেই হতবাক! তার মেয়েকে অতিরিক্ত মাত্রায় সুন্দরী লাগছে। রুপে কোনোদিনই কমতি ছিল না তার। তবে আজ অন্যরকম স্নিগ্ধতা ছুঁয়েছে ঐশ্বর্যকে। খাবার-দাবারের আয়োজন করছিল মাধুর্য। নিজ হাতে খাবারের বড় বড় প্লেটগুলো নিয়ে আসতে নিতেই এলিনা পথ আগলে দাঁড়ালো। এলিনার মুখের দিকে তাকাতেই এলিনা ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কুইন, আপনার কি মনে হয়? যে কারণে এতো আয়োজন সেটা কি সফল হতে পারে?”

“সেটা সম্পূর্ণ ঐশ্বর্যের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু এ কাজে সফল হওয়া টা জরুরি। নয়ত জানি না কি হয়ে যাবে। আমার মেয়ে আর আমার মেয়ে থাকবে কিনা সেটা কেউ জানে না। ওর মনে সেইসব অনুভূতি জাগাতে হবে যা কঠিন হৃদয়কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়।”

ব্যস্ত কন্ঠে জবাব দিল মাধুর্য। তৎক্ষনাৎ এলিনা বলে উঠল,
“একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন? প্রিন্সেস ঐশ্বর্য একদম আপনার মতো দেখতে। হুবুহু অন্য এক মাধুর্য। তবে সেই মাধুর্যের সাথে এই মাধুর্যের আচরণে কোনো মিল নেই। যদি এই মাধুর্য চায় শান্তি তবে ওই মাধুর্য চায় যুদ্ধ! তবে আপনার মতোই দেখতে তাকে। অপরূপা সে। আশা করছি ওর জন্য একটা উপযুক্ত আর সৎ একজনের দেখা মিলবে। যে ওর মন কাঁড়বে।”

মাধুর্য হালকা হাসে।
“শুধু আমার মতো দেখতে নয়। আমার মতো শান্তিপূর্ণ করতে চাই তাকে। সেকারণেই তো এতো আয়োজন।”

মাধুর্য চলে আসে। জায়গা জায়গা থেকে ছুটে এসেছে নানানরকম ভ্যাম্পায়ার। তাদের গুনের শেষ নেই। উদ্দেশ্য একটাই তাদের। প্রিন্সেসের মন জয় করতে হবে। তবে অন্যদিকে তাদের মুখের দিকে তাকানোর আগ্রহও নেই ঐশ্বর্যের। বিরক্তি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তার। অবশেষে অনুভব আর মাধুর্য এসেছে। তারা নিজেদের সিংহাসন গ্রহন করতেই ঐশ্বর্যের আশেপাশে এসে ভীড় করল কিছু মেয়ে ভ্যাম্পায়ার। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঐশ্বর্যের। যদিও ঐশ্বর্য তেমন সম্পর্ক রাখেনা কারোর সাথে। তবুও অনেকে যেচে কথা বলে। ঐশ্বর্যের আশেপাশে আসন গ্রহণ করে তারা। তারপরেই বলে ওঠে,
“কত সুদর্শন যুবক এরা! প্রিন্সেস, তোমার এবার একজন না একজনকে পছন্দ হয়েই যাবে!”

“তোমাদের পছন্দ হলে পছন্দ করো। আই হ্যাভ নো ইন্টারেস্ট!”

“কিন্তু কেন? দেখো সবাই তোমার জন্য এসেছে।”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না। তবে তার মন বলে উঠল, ‘সবাইকে তো আমার চাই না। আমার মন এতোসব গুণী ভ্যাম্পায়ার চায় না। আমি যাকে চাই সে এসব গুণীদের ঊর্ধ্বে। আমার মন যে তাকে চেয়েছে!”

একে একে সকল সুদর্শন এবং গুণী ভ্যাম্পায়ার উপস্থিত হলো ঐশ্বর্যের সামনে। তবে ঐশ্বর্য নির্লিপ্ত। কাউকে দেখে ভ্রু দুটো এবং চোখজোড়া এমন করছে যে সেই যুবক ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অন্য এক যুবক এলো ঐশ্বর্যের সামনে। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে যুবকটি ঐশ্বর্যের সামনে তুলে ধরল নীল গোলাপের গুচ্ছ। ঐশ্বর্য মনোযোগ দিয়ে তাকালো গোলাপের দিকে। তৎক্ষনাৎ যুবকটি বলে উঠল,
“এই মনোমুগ্ধকর গোলাপের মতোই সুন্দর আপনি। গোলাপ লাল রঙের হয়। তবে তা সাধারণ। এই গোলাপ অসাধারণ। আপনার মতো।”

ঐশ্বর্য কিছু না বললেও যুবকটির কথা বলা শেষে সে স্মিত হাসলো। তারপর গোলাপের গুচ্ছ হাতে নিয়ে গোলাপের ঘ্রাণ নিয়ে পাশে তার বান্ধবীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এই ধরো, নীল রঙের গোলাপ তোমার খুব পছন্দ তাই না? এটা তুমি রেখে দাও। এমনিতে তো আমি তোমাদের জন্য স্পেশাল কিছু করি না বা ভবিষ্যতে করারও ইচ্ছে। তবে এই যুবকের দৌলতে এতো সুন্দর ফুল তো পেয়ে গেলে!”

ঐশ্বর্যের সঙ্গিনীরা হেঁসে উঠল। সেই যুবকটা অপমানিত বোধ করল। সেই মূহুর্তে ত্যাগ করল সেই স্থান। এভাবে একে একে নানানরকমকে ঐশ্বর্য কৌশলে তাড়িয়ে দিল সকল যুবককে ঐশ্বর্য। বাকি রইল না কেউ। ঐশ্বর্যের কর্মকান্ডে বাকি যারা ছিল তারাও পালিয়েছে। কারোর ওপর ঠান্ডা পানিও ফেলেছে ঐশ্বর্য। এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঠান্ডা পানি যেন মৃত্যু হয়ে নামছে! সকলে চলে যাবার পর হাফ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ঐশ্বর্য। সকলের বিশেষ করে মাধুর্য আর অনুভবের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“পরের বার এসব ড্রামা করতে কয়েকশো বার ভাববে। এসব ড্রামা আমার ভালো লাগে না। সো প্লিজ! লিভ ইট।”

ঐশ্বর্য চোখের পলকে বেরিয়ে যায়। মাধুর্য আটকাতে চেয়েও পারে না তাকে। শুধু দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। এই মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে? সকলকে যে হারে অপমান করে তাড়িয়ে দিল! এখন কি হবে?

ভোর হতে চলেছে। বেডে গা এলিয়ে শুয়ে আছে ঐশ্বর্য। চোখে ঘুম নেই। এপাশ-ওপাশ করছে। একসময় উঠে বসল সে। নিজের হাতের চিহ্নের দিকে তাকালো। ভালো করে দেখে নিয়ে ভাবতে লাগল এটা কিসের চিহ্ন? কেন এই চিহ্ন? ভাবতে ভাবতে প্রেমের কথা মনে পড়ল তার। বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,
“কি করব আমি? আমার এমন কেন লাগছে দুই-একদিন ধরে? কি হচ্ছে আমার সাথে? কি করা উচিত আমার? কিছু বুঝতে পারছি না।”

“কি বুঝতে পারছো না? আমাকে বলতে পারো। আমি তোমার কোনো কাজেও আসতে পারি!”

কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই দরজার দিকে তাকালো ঐশ্বর্য। এলিনাকে দেখে চোখমুখ খিঁচে এলো তার।
“উফফ… তোমাকে না বলেছি! রাত-বিরেতে এভাবে যখন-তখন আমার রুমে ঢুকবে না। আই হেট ইট!”

এলিনা হালকা হাসলো। ঐশ্বর্যের রুমের দরজা বন্ধ করে তার কাছে এগিয়ে এলো এলিনা। এসে বেডে বসতে বসতে বলল,
“তোমাকে দুয়েক দিন ধরে অনেকটা অন্যরকম লাগছে। কোনোকিছু নিয়ে ভাবছো তুমি! কি নিয়ে ভাবছো?”

“তোমাকে কেন বলব?”

“আহা! বলোই না! এটাও তো হতে পারে? আমি তোমার চিন্তা দূর করে দিলাম?”

বাঁকা চোখে দৃষ্টিপাত করল ঐশ্বর্য। এলিনা কি কিছু বলতে পারবে? কিছুটা সন্দিহান হয়ে তাকাতেই এলিনা ভাইলেন দেখে বলে উঠল,
“ব্যাপারটা কি বলো তো? আজকাল ভাইলেনে সুরও তুলছো কিং এর মতো?”

“তেমন কিছু না জাস্ট….!”

“জাস্ট?”

ঐশ্বর্য এবার আগপাছ না ভেবে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,
“আই হ্যাভ অ্যা বিগ কনফিউশান।”

“কি নিয়ে?”

“আমি একটা মানুষের পাল্লায় পড়েছি। একটা সাধারণ মানুষ। আমাদের মতো এতো শক্তি উনার নেই। তবে এই মানুষের জগতে সমস্ত পাওয়ার থাকার সত্ত্বেও কোথাও যেন উনি অন্যের মতো না। আমার মতো একজনকে গুনে গুনে তিনবার হেল্প করেছেন। উনার এক মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব আমাকে ঘ্রাস করছে। আমি ওই মানুষটার প্রতিটা পদক্ষেপে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে ওই লোকটা আমি কিছুই না। এটা কীসের ইঙ্গিত!”

এলিনা ঐশ্বর্যের এমন কথা শুনে অনেকটা আশ্চর্য হলো। হা হয়ে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। ঐশ্বর্য তা খেয়াল করে এলিনার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“তুমি নাকি হেল্প করবে? এই তার নমুনা? বেরিয়ে যাও তাহলে!”

ধ্যান ভাঙলো এলিনার। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠল,
“ভ্যাম্পায়ার নয়। অবশেষে মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হলে তুমি?”

ঐশ্বর্য চিন্তিত হয়ে বলল,
“জানি না আমি! কি হয়েছে আমার?”

এলিনা কিছু একটা ভাবলো। ভেবে প্রশস্ত হেঁসে ঐশ্বর্যকে চেপে ধরে বলল,
“রোগে বাসা বেঁধেছে প্রিন্সেস! প্রিন্সেস ঐশ্বর্যের মনে প্রেম রোগের বাসা বেঁধেছে। দেরি না করে বলে দাও তাকে যত দ্রুত পারো। হক না সে মানুষ। তবে আমি তাকে দেখতে চাই! আমাদের প্রিন্সেসকে কাবু করেছে বলে কথা!”

ঐশ্বর্য চকিতে তাকালো এবার। এসব কি শুনছে সে! অবশেষে সে প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে? এলিনার এমন কথাবার্তা শুনে কান এবং মাথা গরম হচ্ছে তার। মৃদু কেঁপে উঠল সে। নিজের এমন পরিবর্তন দেখে সে নিজেই চমকে উঠল। সে কি লজ্জা পাচ্ছে? লজ্জা নামক অনুভূতি কবে থেকে তার কাছে হানা দিল? সে কিনা লজ্জা পাচ্ছে?

চলবে…

[বি.দ্র. ভু্ল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। আর আপনাদের রেসপন্স কম বলেই প্রতিদিন গল্প দেওয়ার উৎসাহ পাই না। একে তো ব্যস্ততা! তার ওপর আপনাদের প্রতি আমি হতাশ!]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here