প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৫

0
283

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫

“তুমি আবার?”
কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে প্রেম। তার কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। ঐশ্বর্যের চোখে পড়ল সেটা। নিজের রাগ দেখানোর চিন্তা মন থেকে ফেলে দিয়ে তৎক্ষনাৎ প্রেমের গাড়ির দরজা খুলল সে। প্রেমের দিকে এগিয়ে গিয়ে উদগ্রীব হয়ে বলল,
“আরে আপনার কপাল ফেটে তো রক্ত বের হচ্ছে। সরি, সরি, সরি। আমি বুঝতে পারিনি যে আপনার লাগবে আর গাড়িতে আপনি ছিলেন।”

প্রেম চোখ ছোট করে তাকায়। শক্ত কন্ঠে বলে,
“আমি জানলে বুঝি এক্সিডেন্ট টা করতে না?”

ঐশ্বর্য বোকা বনে গেল। এই লোকটা এতো পেঁচিয়ে কথা বলে কেন? এতো না ভেবে অস্থির হয়ে সে বলল,
“আগে চলুন তো আপনাকে হসপিটাল যেতে হবে।”

“আমার ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে আজকে। আর এতোটুকুর জন্য হসপিটাল? নো ওয়ে! দোষটা তোমার। তুমি না এলে এতক্ষণ ঠিক অফিসে থাকতাম আর যদি একবার মিটিং না হয় আর প্রজেক্ট রিজেক্ট হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা লস হবে। এমনি কাল থেকে অনেক উপকার করেছো আমায়। সো প্লিজ আর উপকার করতে যেও না। তোমার উপকারের চোটে আমাকে সর্বহারা হয়ে বসতে হবে।”

ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লোকটার সমস্যা কি? ঐশ্বর্য মুখের ওপর বলে বসে,
“আপনার সমস্যা কি? কাল থেকে সমস্ত কথা শুনেছি আপনার। এখন আপনাকে আমার সব কথা শুনতে হবে। তাছাড়া আপনি তো আমার মতো নন যে তাড়াতাড়ি আপনার চোট সেড়ে যাবে।”

“ওয়েট ওয়েট, হোয়াট ডু ইউ মিন? সুপারম্যান শুনেছিলাম! তুমি কি সুপারওম্যান নাকি? তোমার তাড়াতাড়ি চোট সেড়ে যায়?”

ঐশ্বর্য থতমত খায়। গলা খাঁকারি দিতেই লক্ষ্য করে প্রেমের কপাল বেয়ে পড়া রক্ত। থমকে যায় ঐশ্বর্য সেখানেই। রক্ত মানে সেই নেশা। সেই তৃষ্ণা। রক্ত পানের তৃষ্ণা। গলা শুঁকিয়ে আসছে ঐশ্বর্যের। নিজের মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে অন্যদিকে তাকালো ঐশ্বর্য। হঠাৎ আজকে তার সাথে এমন হচ্ছে? তার বিশেষ কারণে রক্তের প্রতি সহজে আগ্রহ আসে না। কিন্তু হঠাৎ করেই তার রক্তের প্রতি আগ্রহ জাগছে। শরীর মৃদু কাঁপছে তার। তৎক্ষনাৎ প্রেমের কন্ঠে ধ্যান ভাঙে তার।
“ও হ্যালো, গাড়ি থেকে সরো। গাড়ি স্টার্ট দেব। পারলে নিজের ড্রেসিং আবার করাও। তোমার আঘাত পাওয়া জায়গায় আবার আঘাত লেগেছে। আমি আজকে তোমার সঙ্গে যেতে পারছি না সরি।”

ঐশ্বর্য ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় প্রেমের দিকে। এই লোকটার নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং? বেশ ইন্টারেস্টিং তো! আশেপাশে তাকায় ঐশ্বর্য। তেমন কোনো মানুষজন নেই। যারা ছিল তারা নিজ গন্তব্যে হাঁটা দিয়েছে। এটা একটা ব্যস্ত শহর। অন্যেকে সাহায্য করার মতো এতো সময় এদের নেই। তবে প্রেমের গাড়ির জন্য রাস্তায় বেঁধেছে ট্র্যাফিক জ্যাম। পেছন থেকে হর্ন দিয়ে যাচ্ছে মানুষজন। আর ঐশ্বর্যও সরছে না প্রেমের গাড়ি থেকে। এতে বিরক্ত প্রেম। এবার বেশ বিরক্তির সুরে বলে,
“এবার কি রেহাই পাওয়া যাবে?”

ঐশ্বর্য মুচকি হাসে। মনে মনে বলে, ‘ঐশ্বর্যের মনে যেটা ধরে সেটা তো ঐশ্বর্য থেকে রেহাই পাওয়া যায় না মি. প্রেম। সো আপনার রেহাই পাওয়ার চিন্তা তো এই জীবনের জন্য ছেড়েই দিতে হবে।’

বড় শ্বাস নিয়ে ঐশ্বর্য বলে,
“ওয়ান সেকেন্ড।”

প্রেম কিছু বলতে নিতেই দেখে ঐশ্বর্য সেখানে নেই। তার পাশ থেকে ঐশ্বর্যের কন্ঠ শুনতে পেয়ে কিছুটা চকিতে তাকায় সে।
“এখানে আমি।”

“এ…এই তুমি আমার গাড়িতে তাও এতো তাড়াতাড়ি? মানে কিভাবে? তুমি কি মানুষ?”

“তো কি মনে হচ্ছে? আমি এলিয়েন? এখন চলুন হসপিটালে।”

প্রেম হতবাক সঙ্গে এমন ঐশ্বর্যের অধিকারবোধের মতো কথা শুনে এক রাশ বিস্ময় নিয়ে বলল,
“মানে? তুমি আমার গাড়িতে আর আমি হসপিটালে যাব? আমি তোমাকে আবারও বলছি আই এম অলরেডি লেট। আর তুমি কি করে ঠিক করতে পারো আমি কোথায় যাব না যাব?”

ঐশ্বর্য জোর গলায় জবাব দিল,
“আমি চাইলে সব ঠিক করে দিতে পারি।”

“তুমি নামো আমার গাড়ি থেকে। এখনি নামো নয়ত আমি রেগে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। নামো রাইট নাউ। আমার ভালো রুপ দেখেছো। খারাপ রুপ দেখাতে বাধ্য করো না।”

ঐশ্বর্য এবার করুন চোখে তাকায়। চোখে পানি আসে তার।
“আপনার নাম না প্রেম? নামের সাথে কাজের মিল না থাকলে কি করে হয় বলুন? প্রেম নামক মানুষের মনে প্রেম প্রেম থাকতে হয়। এভাবে কথা বলে নাকি কেউ। আমারও আঘাত লেগেছে। এই অবস্থায় কার ড্রাইভ করতে থোরিই না পারব! আপনি একটু পৌঁছে দিয়ে আসবেন প্লিজ?”

শেষ কথাটা কাঁদো কাঁদো সুরে বলে ঐশ্বর্য। প্রেম ঢোক গিলে এবার। এভাবে বললে সে কি করে মানা করবে? আমতা আমতা করে প্রেম জবাব দেয়,
“ওকে। বাট তোমার গাড়ি?”

“নো প্রবলেম। আমি আমার ড্রাইভারকে কল করে দিচ্ছি। ও এসে নিয়ে যাবে।”

প্রেম আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেয়েটার সঙ্গে জীবনে আর কোনোদিন দেখা না হলে বাঁচবে সে। গাড়ি স্টার্ট দিতেই নাক টেনে চোখের পানি মুছে নিয়ে ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে বলে,
“যাক বাবা। আমার এক্টিং টা মায়ের কাছে কাজে না এলেও প্রেম নামক লোকটির কাছে ঠিকই কাজে এসেছে। উনার নামটা যে ঠিক করেছে তাকে নোবেল দেওয়া উচিত। আসলেই লোকটা প্রেম। সব দিক থেকে প্রেম প্রেম ভাব আছে।”

“কিছু বললে?”

ঐশ্বর্য মাথা নাড়ায়। প্রেমও নিরব হয়ে যায়। ঐশ্বর্য এবার মনোযোগ দেয় প্রেমের মুখশ্রীর দিকে। লোকটার মধ্যে আলাদা কি আছে? যা রীতিমতো ঐশ্বর্যকে তার দিকে টানছে? আজ ঐশ্বর্য সবথেকে অবাক হয়েছে যখন সে সরি বলেছে প্রেমকে। ঐশ্বর্যের নিজের রক্ত যার জন্য ঝরেছে তাকে সরি বলা তো দূর কোনোদিন প্রাণে বাঁচতে দেয়নি সে। তার স্মৃতিতে এমন কেউ নেই যাকে সে সরি বলেছে। এই শব্দটা হুট করেই যেন তার জীবনের ডিকশিনারিতে উদ্ভব হলো। এ কেমন পরিবর্তন তার? প্রেম নামক ব্যক্তিটি কি ঐশ্বর্যের মনেও প্রেমের জোয়ার ডেকে আনছে?

ডক্টরের কাছ থেকে ড্রেসিং করে বের হলো প্রেম এবং ঐশ্বর্য। যদিও ঐশ্বর্যের মাথায় ব্যান্ডেজের কোনো প্রয়োজন ছিল না তবুও করতে হয়েছে প্রেমের জন্য। প্রেমের জন্য একটা স্বস্তির খবর হচ্ছে ক্লায়েন্ট যাদের আসার কথা ছিল তারা জ্যামে আঁটকে লেট করেছে ১ ঘন্টা মতো। ফলস্বরূপ সে এখন চিন্তামুক্ত।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। সবেমাত্র বেডে এসে ধপ করে শুয়ে পড়ল কৌশিক। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলল,
“পুরো একদিন পর জেল থেকে ছাড়িয়ে আনলো বাবা। ওই শেখ আনন প্রেম যদি এর পেছনে না থাকত অনেক আগেই আমি বেরিয়ে আসতে পারতাম। ওকে তো আমি ছাড়ব না। আমার প্রেস্টিজ সব শেষ করে দিয়েছে। ওর জন্য আমার বাড়ি ছেড়ে কয়েকদিনের জন্য বাংলোতে থাকতে হচ্ছে। নয়ত প্রেসের লোকেরা ঘিরে ধরবে। কিন্তু ওই মেয়েটা। ও যে মানুষ নয় সেটা আমি নিশ্চিত। ও ভ্যাম্পায়ার। আমাদের মাঝে ও কি করছে? ওর কোনো ব্যবস্থা কি করে করব?”

মাথার চুল টেনে ধরে কৌশিক। সে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। কাউকে ঐশ্বর্যের কথা বললে বিশ্বাসও করছে না। নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“আগে নিজে ফ্রেশ হই। ওর কথা পরে ভাববো।”

বেড থেকে উঠে হাতে টাওয়াল নিতেই তার মনে পড়ল লাগেজটা সে বারান্দায় ফেলে এসেছে। দেরি না করে ছুটল বারান্দার দিকে। বারান্দার দিকে আসতেই লাইট অফ দেখে কিছুটা অবাক হলো কৌশিক। সে নিজে লাইট জ্বালিয়ে ঘরে ঢুকেছিল। লাইট কি ফিউজ হয়ে গেল নাকি? কৌশিক সুইচবোর্ডের দিকে যেতেই একটা হার হিম করা কন্ঠ কানে বেজে ওঠে,
“লাইট ওফ আমি করেছি।”

কৌশিকের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে ওঠে। কাঁপাসুরে বলে,
“ক…কে?”

“মৃত্যু!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আর পড়াশোনার চাপে গল্প নিয়মিত দিতে পারছি না। চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here