প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৪

0
308

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪

নিজের ঘরে যাওয়ার সময় ঐশ্বর্যের গোঙানির শব্দে থমকে দাঁড়ায় মাধুর্য। ঐশ্বর্যের ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দেওয়া। সে নিজের ঘরে থাকে মানে ঘরের দরজা লক! অস্থিরতায় ছেয়ে গেল মাধুর্যের মন। হুড়মুড় করে দরজায় থাবা দিতে লাগল সে।
“ঐশ্বর্য? ঐশ্বর্য? কি হয়েছে তোমার? দরজা খোলো। ওপেন দ্যা ডোর।”

গোঙানি থেমে গেল। তবে দরজা খুলল না। মাধুর্য আরো জোরে থাবা দিতে থাকল। মিনিট দুয়েক পরেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ঐশ্বর্য। তার কপালে ও নাকে ঘাম। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। চোখেমুখে ক্লান্তি।
“এমন লাগছে কেন তোমাকে? কি হয়েছে তোমার? মনে হচ্ছিল তুমি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলে।”

“কীসের যন্ত্রণা? আমার কি হবে? কিছু হয়নি। জাস্ট ঘুমাচ্ছিলাম। মাঝরাতে এভাবে ডাকাডাকি পছন্দ করি না আমি। নিজের ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও যাও।”

ঐশ্বর্য মাধুর্যের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিতে নিলেও দরজা আঁটকে দেয় নিজের শক্তি দিয়ে মাধুর্য। ভিতরে ঢুকে ঐশ্বর্যের বাম হাতটা ধরে সেই চিহ্নটাকে দেখে সে। চিহ্নটা যেন লাল আলোতে জ্বলছে। ঐশ্বর্যের হাত কাঁপছে। এর কারণেই কি ঐশ্বর্য কাতরাচ্ছিল?
“আমার থেকে লুকাচ্ছিলে? দিনশেষে আমি তোমার মা। তোমার কষ্ট আমি বুঝি।”

“লেট ইট গো প্লিজ। লিভ মি মা।”

হাতটা ছাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় ঐশ্বর্য। আস্তেধীরে তার যন্ত্রণা কমে আসছে। সেই সাথে কমে আসছে চিহ্নটার জ্বলে ওঠা আলো। ঐশ্বর্য ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল চিহ্নটা। কেন এমন হলো? আগে তো হয়নি। হঠাৎ কেন এমন হচ্ছে?

মাধুর্য বিষাদ মুখটা নিয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে হলরুমে এলো। সবকিছু তার গোলমেলে লাগছে। এমনটা হওয়া উচিত নয়। কেন হচ্ছে এসব তার মেয়ের সাথেই? ঐশ্বর্য কি স্বাভাবিক হতে পারবে না তাদের মতো?

ভ্যাম্পায়ার রাজ্য…
এখানে দুপুর পেরিয়ে বিকেল। মাধু্র্য এসেছে পুরোনো বইয়ের কক্ষে। ঘুম আসছিল না তার। তাই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে চলে এসেছে সে। বইয়ের কক্ষে আসার কারণ হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার ইতিহাসের বই খুঁজে বের করে ঐশ্বর্যের হাতের ওই বিশেষ চিহ্ন দ্বারা কি বোঝাই সেটা দেখা। অনুভবকে বিরক্ত করতে চায়নি সে। এমনিতে মানুষটা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে এসে হাতে কিছুটা সময় পায়।

আশেপাশে বইয়ের তাকে ধুলো ময়লা জমেছে। নাক ধরে আছে মাধুর্য। মাঝেমাঝে কাশছে। কক্ষের শেষপ্রান্তে এক কোণে রাখা সোনালী রঙের বাক্সের দিকে চোখ গেল তার। এখানেই তো রয়েছে কাঙ্ক্ষিত বই।

দ্রুত এগিয়ে গিয়ে চাবি দিয়ে তালা খুলতেই সে লক্ষ্য করল এক বই। যেখানে ভ্যাম্পায়ারের ইতিহাস সম্পর্কে লিখা আছে। আজ পর্যন্ত ঐশ্বর্যের আগে ওমন চিহ্ন ধারী কোনো ভ্যাম্পায়ার ছিল কিনা সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

বেশ কয়েকটা পাতা ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা চিহ্নের দিকে চোখ গেল মাধুর্যের। এইতো সেই চিহ্ন। কিন্তু বইয়ের এই অংশের পাতা কালো কেন? ভাবনায় পড়ল মাধুর্য। তবে পাত্তা দিল না সেটা। ডাগরডোগর আঁখি তুলে মেলে ধরল বইয়ের সেই পাতা।

অনেক বছর আগের কথা এটা। আগে থেকেই ঘটে আসছে ভ্যাম্পায়ার আর ওয়ারওল্ফদের মাঝে শত্রুতা। ভ্যাম্পায়ার চায় শান্তি কিন্তু ওয়ারওল্ফ চায় যুদ্ধ এবং ভ্যাম্পায়াদের নিজের পায়ের নিচে রাখতে। তার ওপর দিয়ে আবার ছুরি ঘোরায় ডেভিল কিংডমের ডেভিলরা। ডেভিল কিংডম থেকে সাহায্য চেয়েই ওয়ারওল্ফ শয়তান সত্তা লাভ করে। তবে তখন ডেভিল কিংডমের রাজসিংহাসন ছিল খালি। যোগ্য কেউ ছিল না সিংহাসনে বসার মতো। সেই কিংডমে সবসময় মেয়েদের প্রধান্য দেওয়া হয় বলে মেয়েদের মাঝেই কাউকে ডেভিল কুইন হিসাবে নির্বাচন করা হয়। সেই সময় ডেভিল কুইনকে মেরে ফেলেছিল ভ্যাম্পায়ার কিং। তখন থেকে সিংহাসন খালি। সেই সিংহাসনে সে-ই বসবে যার হাতে ডেভিল ক্রাউন অর্থ্যাৎ রাজ্যের মুকুটের চিহ্ন থাকবে। ভবিষ্যতে একজন ভ্যাম্পায়ারের ডেভিল কুইন হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে।

হাত-পা কাঁপছে মাধুর্যের। আঁকা মুকুটের ছবিতে বারংবার চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে সে। এই চিহ্নটা ঐশ্বর্যের হাতে রয়েছে। মাথাটা ভনভন করে উঠল তার। এখন কি সে? ভয়ে চোখে পানি চলে এলো তার। তার মেয়ে ডেভিল কুইন হবে? ভাবতেই চিৎকার দিয়ে উঠল সে। চিৎকারে দৌড়ে এলো রাজমহলের বাকিরা।
“কি হয়েছে কুইন? কোনো বিপদ?”

মাধুর্য নিজেকে শান্ত করে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
“কিছু নয় আপনারা যান।”

সবাই মাথা নিচু করে চলে যায়। মাধুর্য শান্ত থাকতে চেয়েও পারছে না। এমনসময় কক্ষে প্রবেশ করে প্রলয় অর্থ্যাৎ অনুভবের বাবা। চিন্তিত কন্ঠে বলেন,
“কি হয়েছে মাধুর্য? চিৎকার শুনতে পেলাম তোমার। এনিথিং রং?”

“আমাদের ঐশ্বর্য ক্রমশ অন্ধকার জগতে তলিয়ে যাচ্ছে বাবা। এই বই হচ্ছে তার প্রমাণ।”
কাতর সুরে কথাটা বলে প্রলয়ের দিকে বইটা এগিয়ে দেয় মাধুর্য। প্রলয় বসে পড়েন এক চেয়ারে। মনোযোগ দেয় বইয়ে। পড়ে বলেন,
“এই চিহ্নটা চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন দেখেছি।”

“ঐশ্বর্যের হাতে। প্রথমে চিহ্নটা বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু ওর ২১ তম জন্মদিনের পর আস্তে আস্তে চিহ্নটা গাঢ় হয়ে গিয়েছে।”

হকচকিয়ে উঠেন প্রলয় মাধুর্যের কথা শুনে। বিস্ময়ের সুরে বলেন,
“এখন উপায়?”

মাধুর্য অসহায়ের সুরে বলে,
“সেটাই তো বুঝছি না।”

“আমি এখানে খুঁজে দেখছি।”
বইয়ের পাতা উল্টান প্রলয়। কিছুটা হাসির রেশ ফুটে ওঠে তার মাঝে। আর বলেন,
“এইতো উপায়। কিন্তু ঐশ্বর্য কি রাজি হবে?”

“কি উপায় দেখি।”
মাধুর্য হাতে বইটা নেয়। ভালো করে পড়তে থাকে।

“এর মানে ঐশ্বর্যকে ডেভিল কিংডমের কেউ খুঁজে পাওয়ার আগে তাকে এমন কারোর সাথে বিয়ে দিতে হবে যাকে কিনা ঐশ্বর্য এবং যার সাথে বিয়ে হবে সে একে ওপরকে ভালোবাসে। আর বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন আর ভালোবাসায় চিহ্নটা মিলিয়ে যাবে। স্বাভাবিক জীবনে মানে আমাদের মতো জীবনে ঐশ্বর্য ফিরে আসবে?”

“হ্যাঁ তাই তো লিখা আছে। কারণ ঘটনাটা একবার ঘটেছিল। তাই তার নিষ্ক্রিয় করার কথাটা লিখা রয়েছে। কিন্তু ঐশ্বর্য…!”

“ও যাই হোক না কেন ও একজন মেয়ে বাবা। ওকে ভালোবাসা সংস্পর্শে আসতে হবে। পবিত্র সম্পর্কে বাঁধাও পড়তে হবে। কোনো না কোনো পুরুষ তার জন্য নিশ্চয় রয়েছে। যে তাকে ধীরে ধীরে অন্য ঐশ্বর্য গড়ে তুলবে।”
মাধুর্য অকপট। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে ফেলেছে সে। যা করার তাকে দ্রুত করতে হবে। খুব দ্রুত!

সকাল হয়েছে। সূর্য মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে। গাড়িটা বেশ দ্রুত ড্রাইভিং করে যাচ্ছে প্রেম। ফর্মাল ড্রেসআপ তার। হাতে ঘড়ি মাঝেমধ্যে করে দেখছে। আর তাড়াহুড়ো করছে। আজকে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে তার। দেরি করে ওঠার কারণ কাল রাতে সাক্ষাৎ হওয়া মেয়েটা। কি জানি এখন সে কেমন আছে? এসব ভেবেও বা কি? লেট টা তো সে ওর জন্যই হয়েছে। ফর্সা চেহারার মাঝে হালকা গোলাপি ঠোঁটটা জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিল সে। মেয়েটাকে বেশ কয়েকবার বকল মনে মনে।

ফোনে রিং হতেই বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকালো সে। তার পিএ কল করছে। এই সময় কেন? ক্লায়েন্ট কি চলে এলো তবে? দ্রুত কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কানেক্ট করে কল ধরল সে। এক নিশ্বাসে বলে দিল,
“হ্যালো হৃদয়, লিসেন উনারা চলে এসেছে? তাহলে কোনোভাবে ম্যানেজ করো। ব্যস্ত রাখো। আমি রাস্তায় আছি আর ৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব।”

ওপাশ থেকে হৃদয় বলে উঠল,
“স্যার রিল্যাক্স। এখনো উনাদের আসতে আধঘন্টা মতো বাকি আছে। আমাদের জন্য একটা সুখবর আছে।”

“কি সুখবর?”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে প্রেম।

“স্যার, সিনহা কোম্পানি আমাদের সঙ্গে বিজনেস ডিল করতে রাজি হয়েছে। শুধু ফাইনাল প্রজেক্ট দেখাতে একটা মিটিং করতে হবে। সেটা কয়েকদিনের মাঝেই করবে বলে জানিয়েছে।”

প্রেমের মনে বয়ে গেল খুশির জোয়ার। পুলকিত হয়ে বলে উঠল,
“রিয়েলি? ইটস রিয়েলি অ্যা গুড নি…”

বাকিটুকু বলার আগেই কথা বন্ধ হয়ে গেল প্রেমের। সামনে একটা গাড়ি ধেয়ে আসছে তার দিকে। গাড়ির স্টেয়ারিং ঘোরানোর আগেই অতিরিক্ত বেগে ধেয়ে আসা গাড়িটা এসে সামনে বিঁধে প্রেমের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেল। সঙ্গে সঙ্গে স্ক্র্যাচ হলো আর প্রেমের মাথা গিয়ে লাগল স্টেয়ারিং এর সাথে। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে তার।

অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে হুঁশ ফিরল ঐশ্বর্যের। তার আঘাত লাগা জায়গায় আবার লেগেছে কিন্তু জ্ঞান হারায়নি। আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়েছে। কপালে হাত দিয়ে সে গাড়ি থেকে নামে। সে মনে করে দোষটা সামনের গাড়ির মালিকের। সে রেগে গাড়ি ড্রাইভ করছিল বলে কি সামনে ওই গাড়িটাকেই পড়তে হবে। রেগে গিয়ে হুড়োহুড়ি করে গাড়ির সামনের দরজাটা খুলল ঐশ্বর্য। চোখজোড়া সঙ্গে সঙ্গে কপালে উঠে গেল তার। মুখে হাত দিয়ে বলল,
“আপনি?”

চলবে….

[বি.দ্র. বলেছি নিয়মিত গল্প দেব কিন্তু গতকাল মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। লিখার আগ্রহ পাইনি কোনো তাই দিইনি গল্প। নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টায় আছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]
লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here