প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৩

0
355

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩

“লেট ইট গো মা। আমার যদি কিছু হয়ও তাহলে এটার জন্য বাবা দায়ি। বাবাকে কে বলেছিল আমার জন্য সব ক্লাব ব্যান করতে? আমাকে ক্লাবে ঢুকতেই দিল না কি সাহস! ইচ্ছে করছিল ওখানে সব কয়টাকে মেরে দিই। বাট আই ওয়াজ হেল্পলেস। আমার ঘুম পাচ্ছে আর প্লিজ আমাকে যেতে দাও।”

ঐশ্বর্যের এমন গা-ছাড়া স্বভাবে রাগ লাগছে মাধুর্যের। মেয়েটা এমন কেন? মাধুর্য চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“তুমি ভুলে যাও কিভাবে ঐশ্বর্য? তুমি ভ্যাম্পায়ার! ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। তোমার এমন কাজকর্মে সবাই লজ্জিত হয়। এমন উশৃংখল জীবনযাপন করা আমাদের কাম্য নয়।”

“ভ্যাম্পায়ার, ভ্যাম্পায়ার, ভ্যাম্পায়ার! ভ্যাম্পায়ার হয়েছি বলে কি নিজের ইচ্ছেমতো চলতে পারব না? তুমি তো ইচ্ছেমতো কাউকে মারতে অবধি দাও না। কেন দাও না? কারণ আমাদের অধিকার নাকি নেই তাদের প্রাণ নেওয়ার। মানুষ মারা আমাদের নেশা, তাদের রক্ত খাওয়া আমাদের নেশা তবে তাদের মারা যাবে না। এটা কেমন নিয়ম? তাদের মেরে সবকিছু শেষ করে জিততে পারি তো আমরা?”

মাধুর্য হতভম্ব ঐশ্বর্যের কথায়। তার মেয়ে হয়ে ঐশ্বর্য এসব কথা কি করে বলতে পারে? যেখানে রাজ্যের নীতি শান্তি বজায় রাখা সেখানে ঐশ্বর্য একজন ভ্যাম্পায়ার হয়ে এমন কথা কি করে বলতে পারে? মাধুর্য এবার ধমক দিয়ে উঠল,
“ঐশ্বর্য! মুখ সামলাও তোমার। হয়ত রক্ত পান আমাদের নেশা কিন্তু যাকে তাকে খুব সহজে মেরে ফেলা আমাদের অধিকার বা নেশা কোনোটাই নয়।”

“তাহলে এতোসব শক্তি পেয়ে আমাদের লাভ কোথায় মা?”

মাধুর্য হতাশ মেয়ের এসব কথায়। চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। এমন মেয়েকে সে নিজে চিনতে পারছে না।
“তুমি ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য। তোমার বিয়ের পর তোমার অভিষেক হবে। তোমার মুখে এসব কথা মানায় না। আজকে আমি তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ব্যর্থ হয়েছি। জন্মের পর থেকে একটা দিনও আমাকে শান্তিতে কাটাতে দাওনি তুমি। কেন এতো অদ্ভুত তুমি? ভ্যাম্পায়ার হয়েও কেন তুমি আলাদা?”

“এতো প্রশ্ন, এতো জ্ঞান অসহ্য লাগে মা। প্লিজ জ্ঞান দিও না। আমাকে আমার মতো চলতে দাও। আর ওসব অভিষেকের দরকার নেই আমার।”

আর কোনো প্রকার কথা শুনতে রাজি নয় ঐশ্বর্য। এসব প্রসঙ্গ উঠলে তার বিরক্ত ও রাগ লাগে ভীষণ। মাধুর্যের পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি দিয়ে হনহনিয়ে উঠে গেল ঐশ্বর্য। মাধুর্য পেছন থেকে ডাকল বেশ কয়েকবার। কিন্তু মেয়েটা কথা শোনার নয়। উদ্বিগ্ন হয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল মাধুর্য।

রাতটা গভীর হয়েছে বেশ। আজ অমাবস্যার রাত। চারিদিক অন্ধকার। চাঁদকে গ্রাস করে ফেলেছে অন্ধকার। এমন সময় গাড়ি এসে থামে সিনহা প্যালেসের সামনে। গাড়ির দরজা খুলে বেশ তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নামে অনুভব। হাতের ঘড়ি দেখল সে। অন্ধকারে দেখতে তার কোনো সমস্যা হলো না। তার কাছে সব স্পষ্ট। রাত ১ টা বেজে ১৫ মিনিট। নিশ্চয় মাধুর্য তার জন্য না খেয়ে বসে রয়েছে প্রতিদিনের মতো। তাকে নিয়ে আর পারা যায় না। কয়েকদিন অফিসে ঝামেলা চলছে খুব। তাই আসতে আসতে অনেক রাত হয়। বাড়ির মেইন গেট থেকে চট করেই নিজের হাওয়ার বেগে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় অনুভব। ঐশ্বর্য কি আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল? বের হলেও কোনো লাভ হওয়ার কথা নয়। শহরের সব ক্লাবে বলা হয়েছে ঐশ্বর্যকে যেন ঢুকতে না দেওয়া হয়। বাবা হওয়ার কারণে তার চিন্তা যেন দ্বিগুণ মেয়েটাকে নিয়ে।

সদর দরজা খোলা। দরজা পেরিয়ে সামনে আসতেই হলরুমে বড় ল্যাম্প এবং ওপরের ঝাড়বাতির অল্প আলোতে বেশ ভালোভাবে নজর পেল তার প্রেয়সী এবং তার স্ত্রীর। তার তৃষ্ণার্ত চোখ যেন একেবারে জুড়িয়ে গেল। কিন্তু মাধুর্যের চিন্তিত চেহারা নজর এড়ালো তার। কয়েকটা ধাপ পেরোতেই মাধুর্য থমথমে কন্ঠে বলে ওঠে,
“আসার সময় হলো আপনার?”

“কি করব বলো? আমি যে নিরুপায়। তবে আমি আমার প্রেয়সীকে ছাড়াও নিরুপায়।”

“আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করলেন? একদম পাল্টালেন না আপনি।”

অনুভব মুচকি হাসে। তার হাসিতে এখনো ঘায়েল করার ক্ষমতা যেন রয়েই গেছে। চশমার ফাঁক দিয়ে নীল চোখজোড়া ছোট ছোট হয়ে আসছে। অনুভব মাধুর্যের হাত ধরে তাকে ঘুরিয়ে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি কি পাল্টেছো? আগের মতোই তো মুগ্ধময়ী রয়ে গেছো। তোমার চুল থেকে এখনো সেই সুভাস পাওয়া যায়। তোমার বড় বড় চোখজোড়া এখনো আমাকে ঘোরে এনে নেয়। তোমার হাসিতে এখনো আমি খুন হয়ে যেতে পারি। বদলেছো কোথায়?”

“সে তো আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাই। বদলে যান নি তো আপনিও। আজও তো দেখি অফিসে অনেক নতুন লেডি স্টাফ কাজ করতে লাগলে আপনার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। চশমা দিয়ে নিজের বয়স বাড়াতে চাইলেই বাড়বে?”

বলেই ফিক করে হেঁসে ওঠে মাধুর্য। তার হাসিতে অনুভবেরও হাসি চলে আসে। অতঃপর সে বলে,
“সো মাই কুইন, টেল মি দ্যাট! কি হয়েছে? আপসেট ছিলে কেন? ঐশ্বর্য আবার কিছু করেছে?”

হাসি মুখটা আবার কালো হলো মাধুর্যের।
“আপনার মেয়েকে তো আপনি চেনেন। আমি মাঝেমধ্যে অবাক হই ও আমাদের মেয়ে। একেবারে বেপরোয়া, অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। দিন যাচ্ছে আরো বিগড়ে যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি ওকে আমাদের মতো করতে কি করব? আমাদের ভ্যাম্পায়ার কিংডমের সব থেকে অভিজ্ঞ এবং বয়স্ক মানুষ যখন ও হয়েছিল তখন বলেছিলেন ও আমাদের মতো হবে না। ওর মাঝে কিছু শয়তানি শক্তি আছে। যেটা আপনার মাধ্যমে প্রবেশ করেছে। কারণ আপনারও অংশ। আপনি পুরোপুরি শয়তানি শক্তি মুক্ত হলেও সেটা গিয়ে প্রবেশ করেছে ঐশ্বর্যের মাঝে। কিন্তু শুনেছিলাম বড় হওয়ার পর ওকে ধীরে ধীরে খারাপ জগত থেকে যদি আড়াল করতে পারি তাহলে সেই শক্তি কাটবে। কিন্তু পারছি কোথায়? সব উল্টো হচ্ছে।”

অনুভবের মুখটাও থমথমে হয়ে যায়। প্রশ্ন করে,
“আবার কি করেছে সে?”

“ওর মাথায় দেখলাম আঘাত লেগেছে। ও নিশ্চয় কিছু করে এসেছে। আমাকে তো বললই না। উল্টে অদ্ভুত ব্যবহার করে চলে গেল। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না আর।”

“সব ঠিক হয়ে যাবে। ঐশ্বর্যকে ব্যস্ত রাখতে হবে। ওকে আমাদের রাজ্যে যত তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে পারব তত তাড়াতাড়ি ও আমাদের মতো হবে। তখন ও আমাদের সাথে মিশে যাবে। হতে পারে ও আমার অংশ। আমার মাঝে যা খারাপ শক্তি ছিল সেটা ওর মধ্যে বিরাজমান কিন্তু এটাও তো ঠিক যে ও তোমারও অংশ। তুমি আমার কাছে একটা সতেজ ফুল। আর ফুলে কখনো ভুল থাকে না।”

অনুভবের স্পর্শে এবং কথায় মাধুর্যের মনটা শান্ত হলো। তবুও রয়ে গেল চিন্তা। কপালের থেকে চিন্তার ভাঁজ কমলো না।

নিজের রুমে টেবিলে হাত রেখে পায়ে পা তুলে বসে আছে ঐশ্বর্য। ধারালো চোখে কল্পনায় কারো মৃত্যুর ছবি আঁকছে সে। টেবিলে থাকা ফল কাটার ছুরি হাতে তুলে তীক্ষ্ণ চোখজোড়া দৃষ্টি রাখলো তাতে। নিজের শক্তি দিয়ে ছুরিটা ফলের বাটিতে অ্যাপেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল ঐশ্বর্য। রাগে দপদপ করছে কপালের রগ।
“ওই কৌশিক! ওকে ছাড়ব না আমি। শেষ করে দেব। ওকে বাঁচিয়ে রাখলে ও মরার আগ পর্যন্ত যাকে পাবে তাকে বলবে আমি ভ্যাম্পায়ার। এতো রিস্ক ঐশ্বর্য নেয় না। আজকে যদি ওই লোকটা না আসতো তাহলে…”

ঐশ্বর্য থামে। প্রেমের চেহারা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তৎক্ষনাৎ সে অনুভব করল তাকে কল্পনা করতেই কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করছে। যা অন্য কাউকে ভাবলে করে না। ঐশ্বর্য তো কাউকে নিয়ে ভাবেই না তবে? সে বেডে বসে। গালে হাত দিয়ে অজানা ভাবনায় আনমনে বলে,
“শেখ আনন প্রেম! এই প্রেম নামটা যেন উনার জন্যই তৈরি। দিস নেম ইজ পারফেক্ট ফর হিম। কিন্তু আমি ভাবছি কেন উনার ব্যাপারে?”

দরজার টোকা পড়তেই মেজাজ তিক্ত হলো এলিনার। খিটমিট করে বলল,
“কাম এলিনা!”

এলিনা দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করে। হাতে খাবারের ট্রে।
“ইউ নো হোয়াট এলিনা? এতো রাতে কাউকে নিজের ঘরে দেখলে বিরক্ত লাগে। কেন আসো তাও খাবার নিয়ে?”

“আমাদের ভ্যাম্পায়ার কুইনের আদেশ। অমান্য করার সাধ্য নেই যে। এমনি আপনাকে দেখে রাখতে পারি না। আঁটকে রাখতে পারি না। এরজন্য খুব খারাপ লাগে।”

“আমাকে আঁটকে রাখার সাধ্য আমার মায়েরও নেই। হোয়াটএভার এখন তুমি যেতে পারো।”

এলিনা শুধু হাসে। ঐশ্বর্যের এমন আচরণে সে অভ্যস্ত। দরজার দিকে যেতেই পিছু ডাকে ঐশ্বর্য।
“হেই লিসেন। আই হ্যাভ এ কুয়েশ্চন।”

“ইয়েস প্রিন্সেস?”

“আচ্ছা কাউকে কখন সবসময় কল্পনা-জল্পনা আঁকতে ভালো লাগে? কেন ভালো লাগে?”

এলিনা বুঝতে পারে না ঐশ্বর্যের কথা।
“ঠিক বুঝলাম না?”

“উফফ… জাস্ট ইমাজিন রাস্তায় তোমার সাথে একজন অচেনা কারোর দেখা হলো। তাকে তুমি আগে কোনোদিন দেখনি। কিন্তু তার সঙ্গ তোমাকে মাতাল করে তুলল। তাকে তুমি কল্পনায় আঁকতে লাগলে। সেটাকে কি বলে?”

এলিনা কিছুটা ভাবল। তারপর বলে,
“ইটস কলড ফার্স্ট লাভ এট সাইট!”

ঐশ্বর্য হতবাক হয়ে উঠে তাকায়। উচ্চস্বরে বলে ওঠে,
“হোয়াট?”

“বাট হুয়াই প্রিন্সেস? হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

ঐশ্বর্য তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠে,
“ওতো জানতে হবেনা। তুমি যাও তো!”

এলিনা হেঁসে বেরিয়ে যায়। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রেমের গম্ভীর চোখেমুখে থাকা চেহারা মনে পড়তেই আনমনে বলে,
“লাভ? মানে বাংলাতে যাকে বলে ভালোবাসা? ভালোবাসা এভাবে হয় কখনো? তাও মানুষের সাথে?”

রাত প্রায় তিনটা! ঐশ্বর্য বেডে শুয়ে এদিক-ওদিক করছে। ঘুম আসছে না। অমাবস্যার রাত আসলেই এমন হয় তার। শান্তি পায় না কোথায়। উঠে বসে পড়ে এক পর্যায়ে সে। মুখ দিয়ে বিরক্তির ‘চ’ এর শব্দ করে বড় নড় শ্বাস ফেলে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তার মধ্যে আচমকা অনুভূত হয় তার বাম হাতের এক অংশ জ্বলছে। হাত উঠিয়ে দেখে বাম হাতে থাকা একটি বিশেষ চিহ্ন সেটা জ্বলজ্বল করছে। যেন আগুন বের হচ্ছে সেখান থেকে। অসহ্য রকম জ্বলছে তার। এই চিহ্ন তার জন্ম থেকেই ছিল। বয়সের সাথে সাথে চিহ্নটা স্পষ্ট হয়েছে। একটা মুকুটের মতো চিহ্নটা। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চোখ খিঁচে বন্ধ করে সে।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এতোদিন গল্প দিই নি বাড়িতে রিলেটিভের জন্য। এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন। গল্পটা অবশ্যই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে মেলাবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here