প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১৯

0
244

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৯

মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া এসে পৌঁছে যাচ্ছে ঐশ্বর্যের খোলামেলা ঘরে। শিউরে উঠছে সে মাঝে মাঝে। হৃদয়স্পন্দন তীব্র থেকে তীব্র বেগে ছুটে চলেছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে মাঝে মাঝে গর্জে ওঠা আকাশটা কোনো অজানা আশঙ্কার ইঙ্গিত করছে যেন। চাঁদ মেঘের আড়ালে নিজেকে মুড়িয়ে ফেলেছে।

একটা নিস্তব্ধ ও শান্ত ঘর। ঘরের সব জিনিস যেন অন্যরকম দৃষ্টি পেয়েছে। প্রাণহীন বস্তুও যেন মনোযোগ দিয়ে দেখে চলেছে এক অসম্ভাবনীয় সুন্দরী রমনীকে। যার রুপে আর শক্তিতে কমতি পাওয়া অসম্ভব বলা চলে। সেই মেয়ে একটা সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরিয়া! ঐশ্বর্যের শান্ত দৃষ্টি শুধু অবচেতন মনুষ্যের দিকেই স্থির। দৃষ্টি সরালে যেন হারিয়ে যাবে এই নিপুণ মানুষটি। ঐশ্বর্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রেম নামক এই মানুষটির খুঁত বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মানুষটার চোখে কোনোপ্রকার খুঁত নেই। একেবারে ঘন চোখের পাপড়িতে আবৃত চোখ! গম্ভীর চাহনি যেন তার জন্য আবিস্কৃত। চাপা দাড়িতে আবৃত গালের মাঝে একটা ছোট্ট তিল। দাড়ির কারণে বোঝা না গেলেও খুব কাছ থেকে দেখলে বেশ বোঝা যায়। সুদীর্ঘ কপালে হালকা ভেজা চুলগুলো নেতিয়ে পড়ে আছে। ঐশ্বর্য সেগুলো সরিয়ে দিল। দিতেই হঠাৎ চোখে পড়ল একটা অস্পষ্ট দাগের। সেলাইয়ের দাগ মনে হচ্ছে। কপালে লেগেছিল তার মানে তার! চুল দিয়ে ঢাকা থাকায় ঐশ্বর্যের চোখে পড়েনি কখনো। কিন্তু এই খুঁতটা কেমন জানি সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে! আশ্চর্য! ঐশ্বর্য আবারও চুল দিয়ে ঢেকে দিল কপালের সে জায়গা। ঐশ্বর্য আপনমনে বলে উঠল,
“আচ্ছা, আপনি তো আমাকে এমনিতেও দুচোখে দেখতে পারেন না। যখন জানবেন আমি আদেও মানুষই নই তখন আপনার রিয়েকশন কি হবে? নিশ্চয় আমার ছায়া অবধি ঘৃণা করবেন? আপনি আমাকে ঘৃণা করেন না আমি জানি। আবার ভালোও বাসেন না সেটাও জানি। ভালো না বাসুন তবে ঘৃণা করবেন এটা আমার কাছে অসহনীয় যন্ত্রণাদায়ক হবে। তাই কখনো জানবেন না আমি মানুষ না।”

উঠে দাঁড়ায় ঐশ্বর্য। গুটি গুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় খোলা বারান্দায়। বৃষ্টির ঝাঁপটা চোখেমুখে এসে পড়ছে তার। চোখ মাঝে মাঝে খিঁচে বন্ধ করে নিজের কোঁকড়ানো চুল হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিতেই তার চোখে পড়ল অনুভবের ভায়োলেন। পানির ঝাঁপটাতে ফোঁটা ফোঁটা পানি চুইয়ে পড়ছে সেখান থেকে। ঐশ্বর্য একটু হেলে ভায়োলেন হাতে তুলে নেয়। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় বিছানায় শুয়ে থাকা প্রেম ব্যক্তিটার দিকে। তাকে নিয়ে হঠাৎই গান গাইতে ইচ্ছে করল তার। যেমন কথা তেমন কাজ। পিছন দিকে ফিরে রেলিংয়ের ওপর বসে প্রেমের দিকে চোখ রাখল ঐশ্বর্য। ঝাপসা ড্রিমলাইটের আলোতে বেশ সুন্দর মতো লাগছে তাকে। ভায়োলেনে সুর তুলে চোখ বুঁজে নেয় সে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চিকন সুরে গাইতে থাকে।
“Dil kho geya ho geya kisi ka!
aab rasta mil gaya
khusi ka akkhon main hai khouabsa!
kisi ka! Aab rasta mil gaya
khusi ka! Rista neya rabba,
dil chu raha hai
khiche mujhe koi dor, teri or!”

সকালটা হয়েছে অনেকক্ষণ। একঝাঁক পাখি আনন্দের সঙ্গে ডানা মেলেছে আকাশে। নতুন সকাল! নতুন প্রেরণা! বাতাসে যখন ঘরের পর্দা উড়ে ওঠে তখন দিনের আলো প্রবেশ করে ঐশ্বর্যের ঘরে। ছুঁইয়ে দেয় সেই আলো ঐশ্বর্যকে। ঘুমন্ত ঐশ্বর্য নিজের গালে বেশ জ্বলুনি অনুভব করে। বেশ বিরক্ত ও তিক্ত মেজাজে চোখ না মেলেই নিজের গালে হাত রাখে সে। তারপর একটু একটু করে চোখ মেলে তাকায়। চোখ বন্ধ করে তড়িঘড়ি করে সরে আসে রোদ থেকে। রোদ থেকে বেঁচে বড় হাফ ছেড়ে বাঁচে সে। তারপর হঠাৎ করে কিছু একটা মনে হতেই রোদের দিকে তাকায় সে। এগিয়ে যায় আস্তে করে রোদের দিকে। হাতটা রোদের কাছে রাখতেই হাত পুড়ে যাবার উপক্রম হয় তার। ঢক গিলে সরিয়ে নেয় হাত। বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“এটা কি হচ্ছে? রোদে আমার ভ্যাম্পায়ারের সমস্যা হলেও আমার তো আহামরি রোদের এতো সমস্যা ছিল না? আমি তো রোদে ঠিকই চলাফেরা করতে পারতাম। আজ এমন জ্বলে যাচ্ছে কেন আমার স্কিন?”

কথাগুলো বলতেই তার মস্তিষ্ক জানান দিল তার রুমে সে একা নেই। আরেকটা মানুষ রয়েছে। সেই মূহুর্তেই আঁখি বড় বড় হলো তার। হকচকিয়ে তাকালো পেছনে। তাকিয়ে আরো বিস্ময়ে ভাসতে লাগল। আশেপাশে দৃঢ় দৃষ্টি দিয়ে খুঁজতে থাকলো কাঙ্খিত মানুষটাকে। কিন্তু না পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো সে। প্রেম কোথায়? ঘুম কি এখনো তার চোখ থেকে যায়নি? দুচোখ ডলে আবারও আশেপাশে তাকালো সে। কিন্তু কেউ নেই। হঠাৎ তার ফোনের মেসেজের টোন বাজতেই চকিতে তাকালো ফোনের দিকে। ধীর পায়ে এগিয়ে টেবিল থেকে ফোনটা হাতড়ে নিল সে। ফোনের স্ক্রিন অন করতেই সুন্দর করে ওপরে লিখা ভেসে উঠেছে, ‘মি. আনস্মাইলিং’। মূহুর্তের জন্য যেন হৃৎস্পন্দনের থেমে গেল। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অন করতেই ভাসতে থাকল লিখাগুলো।
“মিস. ইরিটেটিং, সকালে উঠে নিশ্চয় আমাকে খুঁজছ? লাভ হবে না। কারণ আমি চলে এসেছি নিজের জ্ঞান ফিরতেই। হয়ত তোমার ঘুম ভাঙা অবধি অপেক্ষা করা উচিত ছিল কিন্তু পারলাম না সেটা। আর তোমার প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ যে তুমি সারারাত আমার কেয়ার নিয়েছো। সো মিস. ইরিটেটিং, তোমার যদি ফিউচারে কোনো প্রবলেম হয় তাহলে অবশ্যই আমাকে পাশে পাবে। আই প্রমিস। তুমি আমাকে নিয়ে সারাজীবন থাকার কল্পনা জল্পনা করেছো। তোমার মন ভেঙেছি আমি। তুমি কি জানো, তোমাকে যতটা বিরক্তিকর ভেবেছিলাম তুমি ততটাও নও। তোমার মধ্যে সুপ্ত নমনীয়তা লুকিয়ে রয়েছে। তোমাকে অবহেলা করা যায় না। তবুও হয়ত জিজ্ঞেস করতে পারো, কেন তোমার নাম ইরিটেটিং রাখলাম? কারণ তোমাকে নামটা স্যুট করে। আই উইশ তোমার জীবন খুশিতে ভরে যাক। আমি বলব, আমার সাথে যা করেছো ঠিক করেছো। আমি কখনো কিছুর যোগ্য ছিলাম না হয়ত।

ইউর মি. আনস্মাইলিং!”

ঐশ্বর্য থম মেরে বসে রইল মেসেজটা পড়ে। কেমন রিয়েকশন দেওয়া উচিত সে বুঝলোই না। সে বাকরুদ্ধ। তার হয়ত আর কিছু বলা উচিত না।

দেখতে দেখতে সময়ের স্রোতের সাথে পাঁচটা দিন অনায়াসে কেটে গেল। ভ্যাম্পায়ার কিংডমে গোপন কক্ষ আজ হঠাৎ করেই খোলা। কক্ষের ভেতরে দুজন নারী আর একজন পুরুষ। দুটো নারী হচ্ছে শার্লি আর মৌবনী। পুরুষটি হচ্ছে ইলহান। এরা তিনজন ভ্যাম্পায়ার প্রাসাদেরই সদস্য। সবসময় কুইন এবং কিং এর খেয়াল রেখে আসছে। তাদের হয়ে কাজ করে আসছে। এই কিংডম যেন তাদের প্রাণ। তাকে বাঁচাতে ওরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। তবে আজ আকস্মিকভাবে একটা ঘটনা ঘটেছে তাদের সাথে। আচমকায় ঐশ্বর্যের আসল পরিচয় ফাঁস হয়েছে তাদের মাঝে। আর এই বিষয় নিয়ে তারা চিন্তিত। তিনজনের চোখেমুখে রয়েছে চিন্তার রেশ। নিরবতা ভেঙে শার্লি বলল,
“এতো বড় একটা সত্যি সেটা কুইন মাধুর্য বা কিং অনুভব কেউ আমাদের জানালো না?”

“নিজের মেয়ের খবর আর কি জানাবে শার্লি?”

প্রতিত্তোরে বলল ইলহান। শার্লি উত্তেজিত হয়ে বলছে,
“যার পরিচয় কিনা একজন ফিউচার ডেভিল কুইন মানে আমাদের চিরশত্রুর রানী তাকে কিনা আমাদের রাজ্যের ভবিষ্যতে রানী বানানোর চেষ্টা চলছে? এটা তো আমাদের রাজ্যের সাথে অন্যায়!”

“সেটা জানি। তবে এতে আমরা কি করতে পারি? নিয়ম অনুযায়ী সেই যুগ থেকে কিং এর মেয়ে বা ছেলেই আমাদের এই কিংডমকে সামলাবে। এতে আমরা কি করতে পারি?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ কন্ঠে বলে মৌবনী। তবে শার্লি ছাড়ল না বিষয়টা।
“কি করতে পারি মানে? আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের রাজ্যের জন্য আমরা প্রাণও দিতে পারি। আর তাছাড়া কিং আর কুইন এতো ভুল চিন্তাভাবনা করছে কি করে? একটা ডেভিলকে আমাদের রাজ্য সামলানোর দায়িত্ব দেবে? প্রিন্সেস ঐশ্বর্য তবে আমাদের রাজ্যে ধ্বং*সলীলা চালাবে। সে ধ্বংসের রানী। সে কখনো এই রাজ্যের রানী হতে পারে না। আমি এক্ষুনি কুইন মাধুর্যের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর চাইব।”

বলেই হম্বিতম্বি করে কক্ষ থেকে বের হতে নেয় শার্লি। বাঁধা দেয় মৌবনী।
“পাগলামি করো না শার্লি। কুইন এটা স্বীকার করবে না। কারণ হতে পারে উনি এর সমাধান খুঁজে চলেছেন!”

“উনার সমাধান খুঁজতে খুঁজতে আমাদের রাজ্য হয়ত মৃ*ত্যুপুরীতে পরিণত হবে মৌবনী! তুমি কি সেটা চাও?”

“সেটা চাই না কিন্তু কি করব?”

শার্লি চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর মৌবনী আর ইলহানের দিকে তাকালো। তাদের কটাক্ষ করে বলল,
“তোমরা বলো, তোমরা কি এই রাজ্যকে ভালোবাসো? এই রাজ্যকে বাঁচাতে চাও?”

“হ্যাঁ চাই। প্রাণের বিনিময়ে হলেও চাই।”
একসাথে বলে উঠল ইলহান ও মৌবনী। শার্লি এবার শক্ত গলায় বলল,
“প্রাণ দিয়ে নয়। প্রাণ নিয়ে রাজ্য বাঁচাতে হবে এবার। যে রাজ্যের জন্য ক্ষ*তিকর তাকেই শেষ করে ফেলব আমরা। সে হক অন্যকেউ বা আমাদের প্রিন্সেস!”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সাথে বাস্তবের কোনো ভিত্তি নেই। কালকে একটা চমক আছে আপনাদের জন্য।]

লেখিকার গ্রুপ: আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here