প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ২০+২১

0
231

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২০

“মা, পার্টিতে কি যেতেই হবে? না গেলে কি নয়?”

“কেন বলো তো? না যেতে চাওয়ার কারণ কি? এমনি রাতে যেসব ক্লাবে পার্টি হয় সেখানে গিয়ে তো জেগে পার্টি করে ছাইপাঁশ গিলে আসতে পারো। আর এঙ্গেজমেন্ট পার্টিতে যেতে কি সমস্যা হচ্ছে তোমার?”

দৃঢ় কন্ঠে ঐশ্বর্যের কথার জবাব দিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল মাধুর্য। ঐশ্বর্য মাধুর্যের কথার কর্ণপাত না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। কেমন যেন ক্ষীণ দৃষ্টি তার। চোখ-মুখের লাবণ্য কোথাও ঢাকা পড়েছে হঠাৎ! চোখ বন্ধ করে ঐশ্বর্য জবাব দিল,
“আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। ব্যাস… তুমি আর বাবা যাও। আমি বাড়িতেই থাকব। পাক্কা প্রমিস! কোথাও যাব না।”

মাধুর্য আরো চটে গেল।
“না না না। তোমাকে বাড়িতে একা থাকতে দিতে পারব না। চলো তো বাহিরে যাবে আমাদের সাথে। বাড়িতে একা রাখা যাবেনা।”

শেষের কথাগুলো মাধুর্য যেন বেশ চিন্তিত কন্ঠেই বলল। ঐশ্বর্য চোখ মেলে ভ্রু কুঁচকালো। আর বলল,
“কেন? বাড়িতে একা রাখলে কি এমন হবে? বাড়ি থেকে কি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়ার চান্স আছে কারোর?”

“উফফ… বড্ড বাড়তি কথা বলো তুমি ঐশ্বর্য। উঠে পড়ো আর রেডি হও। তোমাকে আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। বলা যায় না সেদিনের মতো কোথাও গিয়ে এক্সিডেন্ট করে বসতে পারো!”

ঐশ্বর্যের সবরকম কথা উপেক্ষা করে একপ্রকার জোর করেই ঐশ্বর্যকে রাজি করালো মাধুর্য। আজ প্রেমের এঙ্গেজমেন্ট রোজের সাথে। অবশেষে ঐশ্বর্যের কথায় ডিল টা ফাইনাল হয়েছে। সেই কারণেই প্রেমের এঙ্গেজমেন্টে ঐশ্বর্যের পুরো ফ্যামিলি ইনভাইটেশন পেয়েছে। আর সেখানেই যাওয়ার তোড়জোড় চলছে।

একটা বেগুনি রঙের লং গাউন গায়ে জড়িয়ে এসে ধপ করে আয়নার সামনে বসে পড়ল ঐশ্বর্য। নিজের ডাগরডাগর চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল নিজেকে। ঘাড় এদিকওদিক ঘুরিয়ে দেখল। এলোমেলো কোঁকড়ানো চুল ঘাড়ে ছড়িয়ে আছে। নেড়েচেড়ে চুল ঠিক করার বদলে আরো ঘেঁটে দিল চুলগুলো ঐশ্বর্য।
“মা, তুমি যদি বুঝতে তোমার মেয়ে ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে আগুনে গিয়ে দগ্ধ হওয়ার মতো যন্ত্রণা উপভোগ করবে। তাহলে হয়ত তুমি কখনোই ওখানে জোর করে নিয়ে যেতে চাইতে না।”

বলে একটা মুচকি হাসি দিল ঐশ্বর্য। তবে তার হাসিতে সেই জৌলুস নেই। হেঁসে আবারও নিজের অগোছালো চুলগুলো ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ঐশ্বর্য। চুলে চিরুনি চালিয়ে বলল,
“চলো, যখন অনুষ্ঠানে যাচ্ছিই তখন অনুষ্ঠানটাকে মাতিয়ে দিয়ে আসি। আজকে নিজেকে এমনভাবে তৈরি করব যে মি. আনস্মাইলিং নিজের উডবি ওয়াইফকে না দেখে আমার দিকেই আঁড়চোখে তাকাবে। অনুষ্ঠানের সকলের নজর আমার দিকে থাকবে। আই নো, মি. আনস্মাইলিং এর সৌন্দর্যের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। যদি থাকতো তাহলে তো কবেই উনি আমাকে ভালোবেসে ফেলতেন। অবশ্য সেটাকে ভালোবাসা বলে আখ্যায়িত করা যায় না। আর এমন ভালোবাসা ঐশ্বর্যের চাই না।”

কথাগুলো অনায়াসে বলতে বলতে নিজের চুলগুলো বেঁধে একদিকে বেণী করে ছেড়ে দিল ঐশ্বর্য। কানের নিচে চুলের বেণীর ফাঁকে গুঁজে দিল একটা সাদা রঙের ফুল। সাথে ঠোঁট রাঙিয়ে দিল গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিকে। কানে লম্বা দুল পড়ে নিল যা ছুঁয়েছে ঘাড় অবধি। গলায় দিল চিকন একটা নেকলেস। আলো পড়তেই চকচক করে উঠল তা। হাতে রকমারি আংটি সেই সাথে ব্যাচলেট। সব মিলিয়ে নেওয়ার পর নিজেকে আয়নায় দেখলো ঐশ্বর্য। খারাপ লাগছে না! ভালোই লাগছে। নিজের নীল চোখের দৃষ্টি তাকে আরো আর্ষণীয় করে তুলছে। আয়নায় খানিকটা ঝুঁকে বলে,
“আমার সামনে রোজকে রিং পড়াতে আপনার হাত কাঁপবে না তো মি. আনস্মাইলিং?”

চারিদিকে তোড়জোড় চলছে। রাজমহলের ন্যায় বাড়ি আজ খুশিতে গমগম করছে। বাড়ির সাজসজ্জায় কোনো কমতি নেই। এরই মাঝে করিডোরের এক প্রান্তে সোফায় বসে হাতে একটা কালো রঙের ফাইল নিয়ে বেশ মনোযোগের সহিত দেখে চলেছে প্রেম রেলিংয়ের ওপর রাখা কফির কাপ থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেই কফির কাপ হাতে নিয়ে বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে চুমুক দিতেই কোথা থেকে যেন মিসেস. পরিণীতা হনহনিয়ে এসে প্রেমের সামনে দাঁড়ালেন। ফাইল থেকে চোখ উঠিয়ে মায়ের দিকে তাকালো প্রেম। মায়ের কড়া দৃষ্টির কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। ধরতে না পেরে জিজ্ঞেস করতে উদ্যত হতেই মিসেস. পরিণীতা বলে উঠলেন,
“প্রেম, তুমি কি ভুলে যাচ্ছো? আজ তোমার এঙ্গেজমেন্ট?”

“নো, অফকোর্স ভুলি নি।”

“কিন্তু তোমাকে দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না। আজকেও দিনেও তুমি ফাইলস্ আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত! তোমার এঙ্গেজমেন্ট এটা। একটু তো এটেনশান দাও!”

প্রেম ফাইল রেখে কিছুটা ভার গলায় জবাব দিল,
“কি মা, এটেনশান দেওয়ার কি আছে? এঙ্গেজমেন্টই তো। এখন তো ফ্রি আছে। কিছু করে অন্তত টাইম পাস করতে হবে তাই না? সে কারণেই তো ফাইল নিয়ে বসেছিলাম।”

“গেস্ট আসতে শুরু করেছে। তোমার ঘরে স্যুট রাখা আছে। রেডি হয়ে নাও চটপট যাও।”

তাড়া দিয়ে বললেন মিসেস. পরিণীতা। প্রেম বড় শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়াল। ফাইল হাতে নিয়ে ঘরে যেতে নিতেই ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
“মা, বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি হওয়া টা কি জরুরি?”

অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে প্রেমের দিকে তাকালেন মিসেস. পরিণীতা। হতভম্ব হয়ে বললেন,
“কি বলছো এসব? এটা কিভাবে তাড়াতাড়ি হয় প্রেম? সব ঠিকঠাক এগোচ্ছে। আর তোমাকে এভাবে বিয়ে না দিলে মনে হয় না জীবনে কখনো বিয়ে করবে বলে! তোমার উপর সব ছেড়ে দিলে জীবনে বৌমার মুখ দেখতে পাব না। আর তুমি ভুলে যাচ্ছো যে তোমার বাবা আর আমার এনিভার্সারি গিফট হিসেবে তুমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে!”

“বাট মা, আই এম নট রেডি ফর ম্যারেজ। আই নিড টাইম!”

“বিয়ের জন্য খুব একটা প্রস্তুতি নিতে হয় না প্রেম। আর এক্ষেত্রে তোমার বাবার আরেকটা ডিলও বিয়ের সম্পর্কে জুড়ে রয়েছে। এই সময় এসে সময় চেয়ো না।”

প্রেম আর প্রতিত্তোরে কিছুই বলল না। নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো সে।

চারিদিকে সরগম। ওপরে চলছে রঙবেরঙের লাইট। আর স্পটলাইট চারিদিকে ঘুরছে। সকলে গল্প নিয়ে ব্যস্ত। কেউ কেউ হাসিতামাশায় মেতে উঠেছে। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছে আসল অনুষ্ঠানের। এঙ্গেজমেন্ট মিসেস. পরিণীতা বড়ই সাধ করে নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠান ঠিক করেছেন। নয়ত এটা সাধারণত মেয়ের বাড়িতে হয়। হঠাৎ প্রেমকে দেখা যায় সিঁড়ির ওপর থেকে নামতে। স্পটলাইট পড়ে তার দিকে। সেই সবসময়ের মতো হাসি বিহীন গম্ভীর রাজ্যের অধিকারী ব্যক্তিটিকে সাদা রঙের শেরওয়ানিতে অন্যরকম স্নিগ্ধ লাগছে। সিঁড়ি থেকে যখন নামছে যে অনবরত চুল ঢেউ খেলছে। নিচে নামলেও স্পটলাইট তার দিকেই থাকল। হলরুমের এক সাইডে রয়েছে একটা স্টেজ। যেখানে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে জুবায়ের। প্রেমকে দেখা মাত্র সে বলতে শুরু করে দিল,
“হ্যালো, লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান! আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ আপনাদের সকলের সামনে। পুরো হ্যান্ডসাম লুকে ধরা দিয়েছে প্রেম ভাই!”

কথাটা বলা মাত্র জুবায়ের এর দিকে চোখ গরম করে তাকালো প্রেম। জুবায়ের দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলল,
“ওহ হো ব্রাদার, আজকের দিনেও এমন চোখ গরম করতে নেই। আজকে যাই বলো না কেন ভয় পাবো না। এনিওয়ে গাইজ খবর এসে গেছে বাহির থেকে গাড়ির হর্নের সাউন্ড পাচ্ছে। আর সবাই সিউর এটা আরেকটি প্রধান আকর্ষণের আগমন হতে চলেছে। সো প্লিজ, ওয়েলকাম দ্যা লাকি গার্ল!”

সবাই উৎসুক হয়ে চাইলো সদর দরজার দিকে। আশেপাশে প্রেমের মেয়ে কাজিন গুলো অপেক্ষা করছে তাদের ভাবির দেখা মেলার। তাদের হাতে একটা করে প্লেট। প্লেটে রয়েছে অনেক গোলাপের পাপড়ি। যা দিয়ে স্বাগত জানানো হবে মেয়েপক্ষ এবং মেয়েকে। এরই মাঝে জুবায়ের তার ভাই ইফানকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“বুঝেশুনে স্পটলাইট ফেলবি। ভাবির ওপরেই যেন পড়ে। নয়ত পাবলিকের হাতে ক্যালানি মাস্ট!”

ইফান এক গাল হেঁসে বলল,
“ইফান এই কাজে ভুল করতেই পারে না ভাই! নো টেনশন। জাস্ট দেখো কি দুর্দান্ত হয় আমাদের ওয়ান অ্যান্ড অনলি অপ্রেম থুক্কু প্রেম ভাইয়ের হবু বউয়ের আগমন!”

সদর দরজায় কে যেন পা রাখলো। মাথা নিচু করল নিজের লং গাউন সামলাতে ব্যস্ত সে। চোখেমুখে প্রচন্ড বিরক্তি ছেয়ে আছে। হঠাৎ করেই তার খেয়াল হলো তার ওপর স্পটলাইট পড়েছে। বিরক্তি ছেড়ে আশেপাশে নির্বাক হয়ে দৃষ্টিপাত করল। স্পটলাইট তার দিকে তার আশেপাশের সকলে হা করে তাকে দেখছে। নিজের প্রতি অস্বস্তি লাগা শুরু করল ঐশ্বর্যের। যার ওপর স্পটলাইট পড়েছে সে হচ্ছে ঐশ্বর্য। আচমকাই তার ওপর ফুলের পাপড়ি বর্ষিত হলে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল ঐশ্বর্য। সবই হঠাৎ করেই হয়ে গেল। ঐশ্বর্য নিজেই হতভম্ব। ঐশ্বর্যের পেছনে এসে দাঁড়াল অনুভব এবং মাধুর্য।

সবদিকে নিরবতা। পরিস্থিতি সামলাতে প্রেমের বাবা এগিয়ে এলেন অনুভবকে ওয়েলকাম জানাতে।
“ওয়েলকাম মি. সিনহা! ওয়েলকাম ওয়েলকাম!”

অনুভব ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো। ঐশ্বর্য এখনো হতভম্ব। কি হলো তার সাথে?

জুবায়ের এসব দেখে ইফানকে সাইডে নিয়ে এসে বলল,
“এই ব্যাটা, সব নাকি ঠিকঠাক করিস? এটা কি করলি?”

ইফান লাজুক লাজুক হয়ে বলল,
“আমার কি দোষ? ওই মেয়েটাই এতো সুন্দর ছিল যে স্পটলাইট আপনাআপনি ওর দিকে চলে গেছে।”

“হপ! সব ঘেঁটে দিলি।”

“ধুর রাখো তো এসব। আগে গিয়ে ওই মেয়েটার খোঁজ লাগাবো। সিঙ্গেল হলে প্রেম ভাইয়ের পর আমার পালা আসবে।”
দাঁত কেলিয়ে বলল ইফান।

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২১

বাড়িতে রোজ ও তার পরিবারের আগমন হয়েছে। তবে রোজের আগমনে যেমন স্বাগত জানাতে চেয়েছিল সেভাবে হয়নি আর। ঐশ্বর্যকে আগমন করেই সকলে হকচকিয়ে গেছে পুরোপুরি। অথচ ঐশ্বর্য তার কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না করে হলরুমের এক কর্ণারে থাকা বারের সামনে পায়ে পা তুলে বসে আছে। নীল রঙের ঘোলাটে আলো পড়ছে তার ওপর। সব কিছু নীল নীল লাগছে। লোকজন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঐশ্বর্যের প্রতিটা পদক্ষেপ লক্ষ্য করছে। এমন এক সুন্দর রমনীর আবির্ভাব হয়েছে এখানে। সেখানে তো লোকজনের নজর থাকবেই। তবে অনেকে ঐশ্বর্যের বারের সামনে বসে থাকা নিয়ে ভ্রু কুঁচকাচ্ছে। মেয়েকে বারের সামনে মানায় না। তাও হরেক রকম ড্রিংকসের সামনে। ড্রিংকস সার্ভ করা একটা বয় এলো তার সামনে। ফোনে চোখ লাগিয়ে রাখা ঐশ্বর্য মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে বলল,
“ওয়ান গ্লাস!”

ড্রিংকস সার্ভ বয় মাথা নাড়িয়ে অন্যদিকে গিয়ে গ্লাস এনে এগিয়ে দিল ঐশ্বর্যের দিকে। অতঃপর গ্লাসটা হাতে নিয়ে আশেপাশে তাকালো ঐশ্বর্য। আসার পর থেকে প্রেমকে সে কোথাও দেখেনি। রোজ এখানেই উপস্থিত। তবে তার উডবি হাজবেন্ড কোথায়? এসব ভাবনা বাদ দিয়ে ঐশ্বর্য গ্লাসে চুমুক দিতেই হুট করে কোথা থেকে যেন একটা ছেলে এসে টুল টেনে বসল ঐশ্বর্যের পাশে। ঐশ্বর্য কিছুটা চকিতে তাকালো ছেলেটার দিকে। পরনে নেভি ব্লু শেরওয়ানি, হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। অনেক বড় বড় চুল অগোছালো হয়ে রয়েছে। আর মুখে বোকা বোকা হাসি। ঐশ্বর্যের কাছে কেন জানি না হাসিটা বোকা বোকায় মনে হলো। কিন্তু মুখে কিছু না বলে হাতের গ্লাসটা শক্ত করে ধরতেই ছেলেটা বলে ওঠে,
“মেয়ে হয়ে ড্রিংকস করো? কুল! ”

“এক্সকিউজ মি! এটা কোথায় লিখা আছে যে ড্রিংকস শুধু ছেলেরা করতে পারবে? মেয়েরা পারবে না? আর যদি এখানে মেয়েরা ড্রিংকস করতেই না পারতো তাহলে স্পেশালি সাইনবোর্ড টানাতে পারতেন যে অনলি ফর ম্যানস!”

ঐশ্বর্যের এমন উত্তর শুনে যে বেশ থতমত খেয়ে গেছে ছেলেটা সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তার মুখটার থেকে সেই বোকা হাসি গায়েব হয়ে থমথমে হয়ে গিয়েছে। ঐশ্বর্য আর কথা না বাড়িয়ে গ্লাসে চুমুক দিল। গ্লাসে স্কচ রয়েছে। ঐশ্বর্যের পছন্দ না হলেও সেটাতে চুমুক দিল। অনেকদিন হলো এসব সে ছাইপাঁশের আশেপাশে সে যায় না। প্রেমের প্রেমে নিজের আগের জীবনটাকে ভুলতে বসেছিল সে। তাই হঠাৎ করে ড্রিংকস নেওয়ায় কেমন জানি বিদঘুটে লাগছে বটে! ছেলেটা এবার তার প্রতিত্তোরে বলল,
“না না আপনি ভুল ভাবছেন আমি সেটা বলিনি। অবশ্যই এটা সবার জন্য। বাট আপনাকে দেখে মনে হয়নি আপনি এসব খেতে পারেন বলে! তাছাড়া আজকালকার মেয়েরা সফট ড্রিংকস পছন্দ করে সো…”

ছেলেটাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে ঐশ্বর্য বলে ওঠে,
“সো আপনি এক্সপেক্ট করেছিলেন আমিও হালকা কিছু পছন্দ করব? আপনি ভুল ভেবেছিলেন। আর অন্যকেউ যা ভাবতে পারে না ঐশ্বর্য সেটা ভাবতে পারে। কারো ভাবনার ঊর্ধ্বে ঐশ্বর্য। আর আমার গায়ে বা ড্রেসে কোথাও লিখা আছে নাকি যে আমি হার্ড ড্রিংকস পছন্দ করি না?”

“নো নো। আই এম কিডিং। সো আপনার নাম ঐশ্বর্য রাইট? হাই আমি ইফান। যার এঙ্গেজমেন্ট হচ্ছে আই মিন প্রেম ভাইয়ের কাজিন।”

ঐশ্বর্য ফোনেই তাকিয়ে ছিল। ইফানের কথা যেন কিছুক্ষণের জন্য ওর কান অবধিই পৌঁছায়নি! কিছুক্ষণ পর চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
“সো হোয়াট?”

এবার ইফান বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ভ্যাবাচেকা খেয়ে ঢক গিলে বলল,
“আমাকে ডাকছে। এক্সকিউজ মি!”

বলে আর এক মূহুর্ত সেখানে বসে রইল না। লজ্জায় মাথা নিচু করে উঠে স্থান ত্যাগ করল। মেহমানদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিল জুবায়ের। সেই সময় মুখ কাঁচুমাচু করে এসে পাশে দাঁড়াল ইফান। ইফানের মুখ দেখে তার বুঝতে দেরি হলো না যে সে কিছু ঘটিয়ে এসেছে। তাই দুজন একটু আলাদা এসে জুবায়ের জিজ্ঞেস করল,
“ব্যাপার কি? এমন চুপসানো মুখ নিয়ে কি করছিস? মনে হচ্ছে কেউ তোর বেলুন ফাটিয়ে দিয়েছে। বেলুনের সাথে তুইও চুপসে গেছিস।”

“জীবন থাকতে আর কারো লগে ফ্লার্ট করার ট্রাই করব না। মাফ চাই দোয়াও চাই! লাইফে ফার্স্ট টাইম এক লারকি মেরে দিলকো ছু দিয়া। পার উসকা এডিটিটিউ ফায়ার হায় ফায়ার!”

জুবায়ের ভ্রু কুঁচকালো। ইফানের কথার বোঝার চেষ্টা করল। অতঃপর তার কিছু একটা মনে হতেই চোখ বড় বড় করে বলে উঠল,
“ওয়েট ওয়েট! তুই কি ওই মেয়েটার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলি নাকি?”

“হু! পাত্তা দিল না। জীবনটা বেদনা!”

“কে পাত্তা দিল না?”

জুবায়ের কিছু বলার আগেই পেছন থেকে প্রেমের গম্ভীর কন্ঠস্বর পেয়ে কেঁপে উঠল দুজনেই। প্রেম তাদের কথা শুনতে এগিয়ে এলো। ইফানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
“কি হয়েছে?”

“কিছু না ভাই। তোমার তো রোজের থুক্কু ভাবির সাথে থাকার কথা। এখন আমাদের কথায় কান দিও না।”

ইফানের কথা শেষ হতে না হতে জুবায়ের হেঁসে কুটি কুটি হয়ে বলে,
“আর বলিয়ো না ভাই! ছেলেটা শখ করে গিয়েছিল ফ্লার্ট করতে। কিন্তু পাত্তা না পেয়ে এসে কাঁদছে।”

“সিরিয়াসলি? কোন মেয়ে ইফানকে পাত্তা দিল না?”

ইফান কাঁদো কাঁদো হয়ে বারের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিল। প্রেম মাথা উঠিয়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতেই তার পুরো চোখজোড়া ধাঁধিয়ে গেল। নরম হয়ে এলো দৃষ্টি। শিরায় শিরায় ঠান্ডা হয়ে এলো। প্রেমের মনের ফাঁকে একটা প্রশ্ন উঁকি দিল, ‘এই রমনী আজ এতো সুন্দর হয়ে এসেছে কেন? পারতো না একটু অগোছালো হয়ে আসতে? সে না আসলেও তো পারতো। কেন এসেছে? এই সৌন্দর্যময়ী কি জানে না? সে থাকলে হয়ত এই এঙ্গেজমেন্ট তার পক্ষে করাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। তার হৃদয় কাঁপবে। ছুটবে। আর্তনাদ করবে?’

ইফানের কথায় নিজ হুঁশে এলো প্রেম। ঢক গিলে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল,
“ওই মেয়ে তোদের পাত্তা দেবে না। ওর দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করিস না।”

ইফান আর জুবায়ের চোখ গোল গোল করে তাকালো। উৎসুক হয়ে জানতে চাইল,
“কেন কেন কেন? কি হয়েছে? নজর দেওয়া যাবে না কেন?”

“ব্যা…ব্যাস এমনিই। ও তোদের পাত্তা দিবে না তাই।”

“তো কাকে দিবে তোমাকে?”
দাঁত কেলিয়ে বলল ইফান। প্রেম ভড়কে গেল। তবে নিজেকে সামলে বলল,
“তা কেন হবে? তোরা যা তো। বাড়িতে এতো গেস্ট আর ফাইজলামি শুরু করেছিস।”

বলেই সেখান থেকে এলোমেলো পায়ের ধাপ ফেলে চলে আসে প্রেম। খুব ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সে বারের দিকে। সেখানে বসে থাকা ঐশ্বর্যের দিকে। এমনভাবে এগোচ্ছে যেন ঐশ্বর্য টের না পায়। ঐশ্বর্যের পেছনে দাঁড়িয়ে আচানক ঐশ্বর্যের হাত থেকে গ্লাস এক টানে নিজের হাতে নিয়ে ফেলে সে। একধ্যানে ফোন নিয়েই বসে ছিল ঐশ্বর্য। কোনো আগন্তুকের এমন ব্যবহারে প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হয়ে পিছু ফিরে চিল্লিয়ে উঠল…
“হোয়াট দ্যা…”

পুরো কথা সম্পূর্ণ না করতেই যখন ঐশ্বর্যের সেই অক্ষিকোটরে বন্দি হলো প্রেম নামক ব্যক্তিটি তখনই থামলো সে। এক মুহূর্তের জন্য যেন থেমে গেল ঐশ্বর্যের দুনিয়া। মানুষটি আগন্তুক নয়। মানুষটি তার চেনা। তারই প্রিয়! নিজেকে সামলাতে সময় লাগলেও বেশ হেঁসে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওপপস… মি. পাত্র, আপনি? তো নিজের উডবিকে রেখে আমার গ্লাস নিয়ে টানাটানি করছেন কেন?”

“ইটস অ্যা এঙ্গেজমেন্ট পার্টি ঐশ্বর্য। তোমার ছাইপাঁশ খাওয়ার জায়গা নয়।”

“তো বার দিয়ে রেখেছেন কেন? আশ্চর্য!”

প্রেম চোখ গরম করে তাকায় এবার। হাতের গ্লাস জোরে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“রেখেছি। বাট তোমার জন্য নয়। তোমার মা দেখলে কি ভাববে? আর বাকিরা সবাই ভালো চোখে দেখছে ভেবেছো?”

ঐশ্বর্য নির্বিকার সুরে উত্তর দিল,
“তো আমি কি সবার কাছে গিয়ে হাতজোড় করে বলেছি? যে আমাকে ভালো ভাবো, আমাকে ভালো ভাবো? না তো! আমাকে কে খারাপ ভাবলো আর কে কি ভাবলো তা নিয়ে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না।”

বলে আবারও বারের সামনে বসতে নিল ঐশ্বর্য। কিন্তু প্রেম এবার হাতটা টেনে ধরল ঐশ্বর্যের। ক্ষোভের সাথে বলল,
“আমি মাথা ঘামাচ্ছি কারণ তোমাকে মানুষ কি বলল না বলল তাতে তুমি না ভাবলেও ভাবনাটা আমার আসে।”

“আমাকে বসতে দিন!”

ঐশ্বর্যের এমন দায়সারা কথায় চোটে গেল প্রেম। তার হাত ধরে টানতে টানতে অন্যদিকে নিয়ে চলে গেল।

এসব কিছু বেশ মনোযোগের সহিত দেখল জুবায়ের আর ইফান। দুজনেই দুজনের দিকে তাকালো। মাথা নাড়ালো। তারপর জুবায়ের প্রশ্ন করল,
“কিছু বুঝলি?”

ইফান একটু ভেবে বলে,
“বুঝিনি। বাট এতটুকু বুঝেছি ডাল মে কুছ কালা হায়।”

“এই কালা ডাল আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।”

ঐশ্বর্যকে প্রেম টানতে টানতে করিডোরের কাছে নিয়ে এসে বলে,
“এখানেই থাকবে। নয়ত নিচে সব গেস্টদের সাথে। বারের ধারের কাছেও যাবেনা।”

“আমি যাব তো আপনার কি?”

“তুমি বেশি প্রশ্ন করো ঐশ্বর্য!”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না ফোঁস করে তাকালো। তখনি একজন এসে প্রেমকে বলল,
“আপনাকে নিচে ডাকছে। অনুষ্ঠান শুরু হবে।”

প্রেম সম্মতি জানিয়ে বলে,
“আমি আসছি। আমাকে একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।”

তারপর প্রেম ঐশ্বর্যকে চোখ রাঙিয়ে বলল,
“লিসেন! এখানেই থাকবে। বলে দিলাম!”

বলেই করিডোরের অন্যপাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করে প্রেম। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকলেও হঠাৎ তার খেয়াল হয় রোজের দিকে। রোজ প্রেমের পিছু পিছু যাচ্ছে। তাও যেন তেড়ে যাচ্ছে। করিডোরে তেমন কেউ নেই। সবাই নিচে। প্রেমের খেয়াল নেই। ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল। এগোতে এগোতে ঐশ্বর্যের চোখে পড়ল রোজের অপ্রত্যাশিত রূপ। রোজের চোখের রঙ বদলিয়ে ক্রমাগত লাল হয়ে যাচ্ছে। চেহারা হয়ে উঠছে হিং’স্র। রোজ প্রেমের পিছু যাচ্ছে। এমন সময় কেউ তার মুখ চেপে ধরে আর হাওয়ার বেগে তাৎক্ষণিক ছাঁদে আবিষ্কার করে সে। রোজকে ছেড়ে ধাক্কা দেওয়া হয়। রোজ রেগেমেগে পেছন ঘুরতেই দেখে স্বয়ং ঐশ্বর্যকে। তৎক্ষনাৎ নিজেকে স্বাভাবিক করে রোজ। চোখের রঙ বদলে স্বাভাবিক হতে থাকে। এমন সময় ঐশ্বর্য রাগে ফুঁসে উঠে বলে,
“ইনাফ! নিজের রঙ বদলানোর দরকার নেই। আমি দেখে ফেলেছি তোমার আসল রূপ। নিজের আসল রূপে এসো।”

রোজ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তার নিরবতা ঐশ্বর্যকে আরো রাগিয়ে তোলে। তার চোখে ভাসতে থাকে প্রেমের দিকে তেড়ে মারতে যাওয়ার দৃশ্য। চিৎকার দিয়ে উঠে নিজের আসল রুপে আসে ঐশ্বর্য। নখ অস্বাভাবিকভাবে ধারালো আর লম্বা হয়। শরীরের প্রতিটা রগ ফুলে সবুজ হয়ে ওঠে। চোখের রঙ নীল বদলে লাল টকটকে হয়ে ওঠে সেই সাথে ঠোঁটের দুই ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে ধারালো দাঁত।
“সাহস একটু বেশি করে ফেলেছো। আমার প্রিয় মানুষকে আ’ঘাত করতে গিয়েছো। তাকে আ’ঘাত করার কথা ভেবেছো। আমি মানুষ হলে হয়ত ছাড় পেতে। আমি যে মানুষ নয় রোজ।”

“আমিও তো মানুষ নই। কথায় বলে রতনে রতন চেনে। আর শয়’তান শয়’তানকে চেনে।”

রোজ এবার মুখ খুলে কথাগুলো বলে। নিজের আসল রূপে আসে সে। কি হবে আর এই খোলস রেখে? ঐশ্বর্য কিছুটা হতবাক হয়।
“কে তুমি? কি তোমার পরিচয়?”

“ডেভিল। আপনার জন্য এই মানুষের জগতে এসেছি আমি। আজ পর্যন্ত যা যা করেছি সব আপনার জন্য করেছি। আপনার আদেশ শিরোধার্য ডেভিল কুইন!”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]
লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here