প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১৭

0
237

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৭

সকলে হতবিহ্বল হয়ে চাইলো ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্যের মাঝে নেই কোনো হেলদোল। সে আগের মতোই গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আছে। প্রেম বেশ কিছুক্ষণ পাথরের মতো চুপচাপ বসে ছিল। তার পায়ের নিচ থেকে যেন সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে করে। তিল তিল করে গড়ে তোলা তার বাবার এই কোম্পানি ঐশ্বর্যের এই না বলাতে ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে সেটা কি ঐশ্বর্য জানে না? টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে কাঁচের টেবিলে হাত দিয়ে বেশ জোরে আঘাত করে প্রেম চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“হোয়াট ডু ইউ মিন? ডিল করছেন না মানে?”

“দ্যাটস ভেরি সিম্পল মি. শেখ। আপনার প্রজেক্ট আমরা রিজেক্ট করছি। কারণ আপনার প্রজেক্ট আমার পছন্দ হয়নি।”

প্রেমে মন বিষিয়ে উঠল। রাগ তড়তড় করে বাড়তে থাকলো। হনহনিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে এসে আচমকা সকলের সামনে ঐশ্বর্যের হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো প্রেম। ঐশ্বর্য কিছুটা চমকে প্রেমের চোখে চোখ রাখলো। প্রেমের চোখে স্পষ্ট ভয় এবং রাগ। ক্ষোভে ভর্তি কন্ঠে বলল,
“শাট আপ! তুমি এটা ইচ্ছে করে করছো তাই না? তুমি তো বলেছিলে আমাকে একা ছেড়ে দেবে। তাহলে কেন এমন করছো? কেন আমার পেছনে পড়েছো? আমার কোম্পানির পেছনেও পড়েছো? হুয়াই? কেন করছো এসব?”

“এক্সকিউজ মি, মি. শেখ! বিহেব ইউর সেল্ফ। ডোন্ট ফরগোট দ্যাট, যেই ঐশ্বর্য আপনাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছে সেটা অন্য ঐশ্বর্য ছিল। আর আমি বিজনেস ডিল করতে এসেছি এখানে।”

নিজের হাত ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিয়ে ফুঁসে বলল ঐশ্বর্য। প্রেম তবুও নিজেকে শান্ত করতে পারল না। করতে পারার কথাও না। তার মস্তিষ্কের সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।
“তুমি খুব ভালো করে জানো যে এই প্রজেক্টে ঠিক কত টাকা আর কত শ্রম ব্যায় হয়েছে। সব জেনেশুনে করছো এমন। রিভেঞ্জ নিতে চাইছো?”

“আপনি কেন রিভেঞ্জ নিতে যাব তাও ছোটখাটো ব্যাপারে? আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।”

কথাটা বলে রেগে এগিয়ে এলো ঐশ্বর্য। আচমকা পা স্লিপ করল তার। প্রেমের সামনে পড়তে নিলে নিজেকে সামলাতে প্রেমের গলা জড়িয়ে ধরল সে। প্রেম নিজেও মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে পড়ল। ঐশ্বর্য নিজের মুখ প্রেমের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আপনার ধারণা ঠিকই রয়েছে। ইউ আর ভেরি ইন্টেলিজেন্ট পারসন। আমার কাছে যেমন সবথেকে প্রিয় আপনি ঠিক তেমনই আপনার কাছে সবথেকে প্রিয় আপনার কাজ। এবার বুঝবেন প্রিয় জিনিস হারালে কেমন লাগে!”

প্রেমের থেকে সরে দাঁড়াল ঐশ্বর্য। প্রেম হতবাক এবং বাকশূন্য হয়ে চেয়ে রয়েছে। কথা বলার মতো সামান্যতম শক্তিও নেই। ঐশ্বর্য প্রেমের দিকে কটাক্ষ করে তাকায়। আর বলে,
“আই এম সরি। অ্যান্ড এক্সকিউজ মি!”

ঐশ্বর্য দ্রুত বেরিয়ে এলো রুম থেকে। প্রেম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। চোখের পলক পড়ল না তার। নিজেকে তার কেমন যেন দিশেহারা লাগছে!

নিজের ঘরে বসে ভায়োলেনে সুর তোলার চেষ্টা করছিল ঐশ্বর্য। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছিল সে। বিকেল বেলা পর্দা টানিয়ে রাখা জানালা দিয়ে বেশ বাতাস আসছিল। পর্দাগুলো নিজের ইচ্ছেমতো উড়ছিল। সেই সাথে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল ঐশ্বর্যের মন। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে যখন ভায়োলেন রেখে জানালার দিকে তাকালো তখন কারো কন্ঠে বিস্ময়ের সঙ্গে তাকালো সে।
“আমি সুর তুলে দেব?”

ঐশ্বর্য হালকা হেঁসে বলে,
“বাবা তুমি? এসো না! তোমার ভায়োলেন। তুমিই তো সুর তুলবে!”

“বাবাহ, আজকাল আমার মেয়েটাকেও সুর তুলতে দেখি। হোয়াট হ্যাপেন? তার মনে কি কেউ প্রেমের সুর জাগিয়েছে?”

ঐশ্বর্য মাথা নিচু করে অনুভবের কথায়। অনুভব এসে তার মেয়ের পাশে আস্তে করে বসে। এগিয়ে নেয় নিজের হাতে ভায়োলেন। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ভায়োলেন বাজাতে শুরু করে বলে,
“মনোযোগ দিয়ে শোনো!”

অনুভবের তোলা সুর সত্যিই অন্যরকম মনোমুগ্ধকর। মনটাকে শান্ত করে ফেলে এই সুর। ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে ফেলে আবেশে।
“শেখ ইন্ডাস্ট্রির প্রজেক্ট হঠাৎ ক্যানসেল করেছো কেন?”

এবার চোখ মেলে তাকায় ঐশ্বর্য। অনুভব ঐশ্বর্যের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তবা প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করছে। ঐশ্বর্য আমতা আমতা করে বলে,
“প্রজেক্ট খুব একটা পছন্দের ছিল না বাবা।”

“মিথ্যা বলছো ঐশ্বর্য। কেন বলো মিথ্যে? ওই কোম্পানিটা এমনই যে তাদের প্রজেক্ট ফেলার সুযোগই কেউ পায় না। তুমি কেন রিজেক্ট করলে? সঠিক কারণ বলো!”

ঐশ্বর্য চুপ করে থাকে। তার নিরবতা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে অনুভব। ঐশ্বর্য সবসময় স্ট্রেটকাট কথা বলার মেয়ে। হঠাৎ তার চুপ থাকাটা যেন অদ্ভুত ঠেকছে অনুভবের কাছে। সে একটু শক্ত কন্ঠে বলে,
“দরকার হলে আমি আবার নিজে গিয়ে প্রেজেন্টেশন দেখব আর মিটিং করব। যদি তুমি কারণ না বলো তাহলে!”

“না বাবা প্লিজ! এই ডিলটা এখন করবে না তুমি। করতে চাইলে কয়েকদিন পর করবে প্লিজ! এখন নয়। কারণটা জানতে চেও না। এখন সেটা বলতে পারব না।”

অনুভব আর কিছু বলল না।
“এজ ইউর উইশ!”
ভায়োলেন রেখে উঠে চলে গেল সে। ঐশ্বর্য বসে রইল। তার মনে কোথাও থেকে অভিমান নাক অনুভূতিরও উপদ্রব হয়েছে। সেখান থেকেই আজ এই কাজটা করেছে ঐশ্বর্য। সে জানে প্রেমের অনেক বড় লস করিয়ে দিয়েছে সে। তবে সেটা কয়েকদিনের জন্যই। ঐশ্বর্য কিছু একটা ভেবে ক্ষীণ হাসে।
“এবার আমি আপনার কাছে যাব না শেখ আনন প্রেম। আপনি আমার কাছে আসবেন। বার বার আসতে বাধ্য হবেন।”

শীতল পরিবেশ। চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। বারান্দার থাই দরজা খোলা থাকায় বাতাস ঐশ্বর্যের ঘর অবধি আসছিল। বাড়িতে ভালো লাগছিল না ঐশ্বর্যের। তাই ভেবেছিল বাহিরে যাবে। তাই রেডি হচ্ছিল সে। ঠান্ডা বাতাস অনুভব করাতে বারান্দার দিকে তাকালো সে। দরজা বন্ধ করা প্রয়োজন। এই ভেবে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। দরজার কাছে গিয়ে বন্ধ করার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে দেখা গেল নিচে কারো অস্পষ্ট ছায়া। দৃষ্টি ভালো করে দিতেই স্পষ্ট হলো মানুষটা। প্রেম এসেছে। ঝড়ো হাওয়ার মাঝে নিচে দাঁড়িয়ে আছে সে। তবে তার নজর ঐশ্বর্যের রুমের দিকেই। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। ঐশ্বর্য মুচকি হাসলো।
“অবশেষে সেই সময় এসে গেল! আপনি আমার কাছে এসেছেন! হয়ত বাধ্য হয়ে এসেছেন। তবে এসেছেন তো!”
ঐশ্বর্য আর বিলম্ব না করে ছুটে গেল নিচের দিকে।

ঐশ্বর্য বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে আছে প্রেম। নিজেকে প্রস্তুত করছে সে। ঐশ্বর্যকে যেভাবেই হক এই ডিলে রাজি করাতে হবে। ভালো করে কথা বলতে হবে। তাও যদি সে রাজি হয়! কারণ প্রেম বাবাকে কখনো এ কথা বলতে পারবে না যে প্রজেক্ট ক্যানসেল হয়ে গেছে। এই মুখ নিয়ে বাড়িও ফিরতে পারবে না সে। তাই শেষবারের মতো ঐশ্বর্যের সাথে বোঝাপড়া করতে এসেছে।

“কি ব্যাপার? দ্যা গ্রেট শেখ আনন প্রেম আমার বাড়ির বাগানে চোরের মতো কি করছে?”

ঐশ্বর্যকে এই সময় এখানে আশা করেনি প্রেম। হকচকিয়ে পিছু ফিরে তাকায় সে।
“তু…তুমি?”

“কেন? আমার বাড়িতে আমি থাকব না তো কে থাকবে? আপনার উডবি রোজ?”

প্রেম রেগেমেগে বলে,
“কিপ ইউর মাউথ শাট! আমি তোমার সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি।”

“ও মাই গড! যে লোক আমার থেকে সবসময় পালাতে চাইতো। সেই লোক নিজের থেকে ছুটে এসেছে আমার সঙ্গে কথা বলতে! ভাবা যায়?”

“তুমি খুব ভালো করে জানো আমি কেন এখানে এসেছি। কেন রিভেঞ্জ নিচ্ছো? প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! এই ডিল আমার কোম্পানির জন্য অনেক জরুরি।”

ঐশ্বর্য দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। আর মলিন মুখে বলে,
“আপনি আমাকে বুঝেছেন? আপনি বুঝেছেন যে আপনি আমার জন্য কতটা জরুরি?”

চলবে…

[বি.দ্র. প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে গল্পটা দিলাম ছোট করে। ছোট বলে কেউ অভিযোগ করবেন না প্লিজ! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]
লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here