প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১৬

0
222

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৬

সকালে ব্রেকফাস্ট করতে বসে নিজের মেয়েকে না দেখতে পেয়ে কিছুটা ক্ষীণ দৃষ্টিতে মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“হোয়ার ইজ মাই প্রিন্সেস? আজকে খেতেও নামল না। ও বাড়িতে আছে তো?”

“আছে তো। আপনি তো একটু আগেই এলেন। আপনার মেয়ে সারারাত ধরে যে কান্ড করেছে তাই হয়ত আর এনার্জি নেই নিচে আসার মতো?”

ঝাঁঝালো কন্ঠে অনুভবের উদ্দেশ্যে কথাগুলো ছুঁড়ে দিল মাধুর্য। তার চোখেমুখ এখনো ভার। মুখে কঠোরতা বিরাজমান। অনুভবের বুঝতে সময় লাগল না যে ঐশ্বর্য নিশ্চয় আবারও কোনো কান্ড করেছে। অনুভব গলা খাঁকারি দিয়ে চেয়ার নিয়ে মাধুর্যের কাছে এসে বসে তার হাতের ওপর হাত রাখতেই চোখ রাঙিয়ে তাকালো মাধুর্য। অনুভব ভয় পাওয়ার ভাব ধরে বলল,
“এইভাবে তাকিয়ো না। আজকাল মেয়ের থেকে এই ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকানো শিখছো নাকি? আমি এমনিই তোমাকে ভয় পাই। বর বউকে ভয় পায় না এমন বর আর কয়টা আছে বলো?”

মাধুর্য কিছু বলল না। আগের মতোই অনুভবের প্লেটে স্যান্ডউইচ দিয়ে নিজে প্লেটেও খাবার তুলে নিল। অনুভব নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“কি করেছে আবার ঐশ্বর্য?”

“আপনার আর আপনার মেয়ের কাজ কি? সারাজীবন আমাকে জ্বালিয়ে যাওয়া! সেটাই করেছে। কাল ওই অবস্থায় রাতে বাহিরে লুকিয়ে বেরিয়ে গেছিল। প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হয়েছে সেখানে ভিজে একেবারে নিজের শরীর দুর্বল করে ফেলেছে।”

এবার খানিকটা চিন্তার ভাঁজ পড়ল অনুভবের কপালে।
“হোয়াট? এতো কিছু হয়েছে আমাকে জানাও নি কেন মাধুর্য? এখন কেমন আছে ঐশ্বর্য?”

“ভালো আছে। জ্বর কমেছে। আপনি ব্যস্ত ছিলেন। তাই ভাবলাম টেনশন দেওয়া উচিত হবেনা। তাই জানাই নি।”

খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়াল অনুভব। বিড়বিড় করে বলল,
“আগে মেয়েটাকে দেখে আসি।”

বড় ডাইনিং রুমের মাঝখান দিয়ে সিঁড়ি। মাঝখানে সিঁড়ি দুইভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। অনুভব ঐশ্বর্যের রুমের দিকে যেতে উদ্যত হতেই কারো উচ্ছ্বসিত কন্ঠ ভেসে এলো।
“তোমাকে কোথাও যেতে হবেনা বাবা। ইউর প্রিন্সেস ইজ হেয়ার!”

সিঁড়ির ওপরে তাকায় মাধুর্য ও অনুভব। ঐশ্বর্য নিজে এসে দাঁড়িয়েছে। চোখমুখ অসুস্থতার কারণে শুকনো লাগলেও মুখে হাসি বজায় রেখেছে সে। চোখের পলকে নিজের শক্তি দ্বারা খাবারের টেবিলের সামনে উপস্থিত হলো ঐশ্বর্য। অনুভবের মুখে প্রসারিত হাসি ফোটে মেয়েকে এখন সুস্থ দেখে।
“এইতো! আমার মেয়ে একদম ফিট অ্যান্ড ফাইন। এম আই রাইট?”

“ইয়াপ। ভ্যাম্পায়ার কিং অনুভবের একমাত্র মেয়ে আমি। ফিট না হয়ে কি করে থাকি?”

খাবারের টেবিলে হাত রেখে স্টাইলে দাঁড়িয়ে বলল ঐশ্বর্য। অনুভব এবার খাবার টেবিলের সামনে বসে পড়ল। সাথে বসল ঐশ্বর্য। মাধুর্য আগের মতোই ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ ভালো হওয়ার সাথেই এখন লাফালাফি শুরু করবে। এটাই তো তোমার কাজ। একটা কথা শুনে রাখো। যখন তখন বাহিরে যেতে আমি দেব না।”

ঐশ্বর্য শুধু মাধুর্যের কথায় দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। মাধুর্য ঐশ্বর্যকে খাবার এগিয়ে দেয়। অনুভব তাড়াহুড়ো করে স্যান্ডউইচ মুখে দিয়ে বলে,
“আই এম লেট! আজকে অনেক বড় ডিল রয়েছে। সময়মতো সেখানে পৌঁছাতে হবে মিটিং এর জন্য। টাইম মেইনটেইন করতে হবে। আফটার অল ‘দ্যা শেখ ইন্ডাস্ট্রি’ এর সাথে ডিল বলে কথা। সেটা ফুলফিল করা প্রয়োজন।”

মুখে জুসের গ্লাস নিয়ে বসে ছিল ঐশ্বর্য। অনুভবের কথাতে এতো কাজ না দিলেও আচমকা গ্লাস ঠাস করে টেবিলে রেখে প্রচন্ড আগ্রহ সহিত বলল,
“হোয়াট? বাবা তুমি ইন্ডাস্ট্রির নাম কি বললে?”

“দ্যা শেখ ইন্ডাস্ট্রি! যার প্রজেক্ট এর নমুনা দেখতে যাচ্ছি আজকে। প্রেজেন্টেশন ভালো লাগলে ডিল ফাইনাল করা হবে। আই থিংক এটা বেস্ট প্রজেক্ট হবে। কারণ এটার পেছনে তারা অনেক টাকা ইনভেস্ট করেছে। আর ডিল ক্যানসেল করার সুযোগ ওরা দেবে না। কারণ ডিল ক্যানসেল হলে তারা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।”

গভীর ভাবনায় পড়ল ঐশ্বর্য। টেবিলের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে থেকে যেন গভীর ধ্যানে বসেছে সে। মাধুর্য তা খেয়াল করে বলল,
“কি হলো? খাওয়া বাদ দিয়ে কি ভাবতে শুরু করেছো?”

ঐশ্বর্য এবার মাথা ঝাঁকায়। হাতে জুসের গ্লাসটা নিয়ে অনুভবকে বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,
“বাবা, তোমার যদি কোনো প্রবলেম না থাকে তাহলে এই ডিলটা আমি করতে পারি?”

ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকায় অনুভব। সঙ্গে মাধুর্যও! তাদের দুজনের এমন চাহনি দেখে ঐশ্বর্য নিজেও অবাক হয়ে বলে,
“কি হয়েছে? এভাবে দেখছো কেন আমাকে? আমি জাস্ট ডিল করতে যেতে চেয়েছি। বাবা সারাদিন এতো বিজি থাকে যে নিজের রেস্ট নেওয়ার সময় পায় না। আর বাড়িতে ভালো লাগছে না একদম। আই ওয়ান্ট গো! প্লিজ বাবা!”

মাধুর্য মানা করবার আগেই অনুভব কিছু ভেবে বলল,
“জীবনে প্রথম তুমি আমার কাজে হেল্প করতে চাইলে আর আমি না কিভাবে করতে পারি? অভিয়েসলি তুমি যাবে আমার বদলে! তাহলে সিনহা কোম্পানির বর্তমান বস হচ্ছে ঐশ্বর্য সিনহা!”
ঐশ্বর্য হাসে। সেই হাসিটা অন্যরকম ছিল! সেই হাসির পেছনের কারণ কারোর জানা ছিল না!

অফিসে বারংবার নিজের প্রেজেন্টেশন দেখে চলেছে প্রেম। মনে কাজ করছে ভীষণ অস্থিরতা। এতো বড় ডিল এই প্রথম সে করছে। এতোদিন তার বাবা করে এসেছে। আজকে একটা বিগ ডিল ফাইনাল হবে। সেটা করতে পারতে কোটি কোটি টাকা লাভ আর ফাইনাল হলে কোটি কোটি টাকা লস। প্রেমের পিএ হৃদয় প্রেমের এমন অস্থিরতা দেখে শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,
“স্যার, আপনি কেন এতো টেনশন করছেন? জাস্ট রিল্যাক্স। আপনি প্রজেক্ট করেছেন আর সেটা রিজেক্ট করেছে এমন কেউ আছে? এবারও সিনহা কোম্পানির বস রিজেক্ট করার সুযোগই পাবে না।”

“আই ডোন্ট নো এনিথিং! স্যার অনুভব সিনহার কথা শুনেছিলাম আমি। উনি নাকি বেস্ট টা চয়েস করেন। জহুরির চোখ নাকি উনার। যদি উনি আসতেন তাহলে সব ঠিক ছিল। কারণ আমি জানি আমদের কোম্পানি বেস্ট টাই দেবে। বাট কিছুক্ষণ আগে ওই কোম্পানির বসের পিএ কল করে বলেছে উনি আসবেন না আজকে। উনার একমাত্র মেয়ে আসছেন ডিল ফাইনাল করতে। আমি তো উনার মেয়ের নাম অবধি জানি না।”

হৃদয় তবুও বলল,
“নো প্রবলেম। আমরা কোনো ত্রুটি রাখব না। আর ডিলটা ফাইনাল হবে!”

“আই থিংক সো, হৃদয়!”

অফিসের প্রজেক্টর রুমে বসে আছে সকলে। প্রেম অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছে ক্লায়েন্টের। সকাল ১০ টায় মিটিং শুরু হওয়ার কথা। ৯ টা বেজে ৫৫ মিনিট এখন। তবুও তাদের আসবার নাম গন্ধও নেই। প্রেম বিরক্ত। সে ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছে। মনে হয় না টাইমলি এই সিনহা কোম্পানির বস আসতে পারবে! বিরক্তির সাথে ‘চ’ এর ন্যায় শব্দ করতেই গাড়ির হর্ন বাজলো। চমকে উঠে হৃদয়ের দিকে তাকালো প্রেম। হৃদয় ছুটল তাদের রিসিভ করতে।

৯ টা বেজে ৫৯ মিনিট। প্রজেক্টর রুমের দরজা খুলল হৃদয়। আর বলল,
“ওয়েলকাম টু আওয়ার অফিস ম্যাম!”

প্রেম প্রজেক্টরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে ছিল। হৃদয়ের কন্ঠে চেয়ার ঘুরিয়ে উঠে দাঁড়াল সে ক্লায়েন্টকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে। রুমে প্রবেশ করল এক নারী। চিরচেনা মুখটা দেখে ফ্যাকাশে হয়ে এলো প্রেমের চেহারা। ফ্যাকাশে প্রলেপ ছড়িয়ে পড়ল মুখে। সে যত কাছে আসতে থাকল গলা শুঁকিয়ে এলো প্রেমের। হাই হিল সাথে ফর্মাল ড্রেসআপ তার। খোলা চুল স্ট্রেইট করা। কানে বড় রিং আর হাতে চেইনের ঘড়ি। গায়ে কোট জড়ানোর। ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক! আর সে যে অসম্ভব রূপবতী সেটা প্রেমের জানা। কোনোরকমে ঢক গিলে বলল,
“তুমি?”

“ইয়েস মি. শেখ আনন প্রেম। হাই আই এম ঐশ্বর্য সিনহা। দ্যা ডটার ওফ অনুভব সিনহা। অ্যান্ড আই থিংক আমি একদম সঠিক টাইমে এসেছি?”

বলেই ফর্মাল ভাবে হাত বাড়িয়ে দিল ঐশ্বর্য। সাথে রয়েছে তার বাঁকা হাসি। প্রেম হতভম্ব। ঘড়ি দেখে নেয় সে। রাইট ১০ টা বাজে। কাঁপা কাঁপা হাতে ঐশ্বর্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলে,
“তুমি ডিল করতে এসেছো?”

“হোয়াই নট? আমি ডিল করতে পারি না ভেবেছেন নাকি? অ্যান্ড ইট অ্যা অফিশিয়াল প্লেস। সো প্লিজ বিহেব লাইক অ্যা ডিলার।”

ঐশ্বর্যের কথায় সামলে নেয় প্রেম নিজেকে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
“ইয়েস। আই এম সরি। প্লিজ সিট।”

ঐশ্বর্য নির্ধারিত সিটে বসে পড়ে পায়ে পা তুলে। কিন্তু প্রেম ঠিক কমফোর্ট ফিল করছে না। উশখুশ করছে। এই মেয়ে এখানে আসবে তার ধারণার বাহিরে ছিল! না জানি এখন সে ডিল ফাইনাল করবে কিনা! সবকিছু মিলিয়ে মিটিং শুরু হয়। প্রেম নিজের বেস্ট টা দেখায়। প্রেজেন্টেশন দেখায়। সবকিছু ছিল মুগ্ধ করার মতো। ঐশ্বর্যের পিএ থেকে শুরু করে কারোর কোনো কমপ্লেন করার সুযোগ দেয়নি প্রেম। সকলের প্রশংসা শুনেছে কিন্তু ঐশ্বর্য ছিল নির্বিকার! চুপচাপ সিটে বসে ছিল সে আর কাজের সময় কথা বলেছে। কাজের কথা বলাই আরো হতবাক প্রেম। ঐশ্বর্য খুব একটা ভার্সিটি না গেলে ব্যবসা বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে মোটামুটি ধারণা এসেছে তার। তাছাড়া তার বাবার সাথে বেশ কয়েকবার মিটিং এ গেছে সে। সব মিলিয়ে ধারণা নিয়ে সে আজ মিটিং করেছে।

অবশেষে মিটিং শেষ। সবার মুখে খুশি। সিনহা কোম্পানি থেকে সকলে মুগ্ধ। সবার ধারণা ডিল ফাইনাল। সকলের নজর ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্যের নজর টেবিলের দিকে। টেবিল থেকে ফাইল তুলে ঐশ্বর্য একটা বড় শ্বাস ফেলে বলে,
“সরি মি. শেখ, আমি এই ডিল আপনার সঙ্গে করছি না।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অবশ্যই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সাথে বাস্তবের কোনো ভিত্তি নেই।]
লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here