প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১৪

0
208

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৪

“আমি দেখেছি উনাকে। উনার পাগলামি দেখেছি। উনার ক্রোধ দেখি। উনার রাগ, জেদ, চোখের চাহনি, কোনো কিছুর পরোয়া না করা সবটা দেখেছি। আর এমন অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী যেন কোনো র*ক্তের সমুদ্রে স্নান করা কোনো নারী! উনার চোখের চাহনি সামনের যে কাউকে ঘ্রাস করে দিতে সক্ষম। উনার ক্রোধের আগুনে সব ছারখার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সত্যিই ডেভিল কুইন হিসেবে যোগ্য উনি তা প্রমাণ করেছেন প্রথম সাক্ষাতেই।”

রোজির কথাটা শেষ হওয়ামাত্র সকলের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেল। এবার মিলেছে তাদের রাজ্যের রানীর দেখা। সকলে স্বস্তি অনুভব করল। এরিক খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি কুইনের হাতে ওই চিহ্নটা পেয়েছো?”

“হ্যাঁ। আমাদের ডেভিল ক্রাউনের চিহ্ন আমি দেখে নিয়েছিলাম কৌশলেই। আর ডেভিল কুইনকে সেদিন হসপিটালে বাঁচিয়ে নিয়েছিলাম আমি। নয়ত ডক্টর যদি একবার র*ক্ত পরীক্ষা করত। তাহলে প্রমাণ হয়ে যেতো যে উনি মানুষ নন। এই খবরটা ছড়িয়ে গেলে বিপদ হয়ে যেতো। তাই তো ডক্টরের হাতে র*ক্তের স্যাম্পল দেখার সাথেই আমিও ডক্টরের পিছু নিই আর উনাকে মে*রে ফেলি। কাজটা আমি এমনভাবে করেছি যেন কেউ বুঝতে না পারে।”

“ওয়েল ডান রোজি।”

রোজি হাসে। আর প্রতিত্তোরে কাঠ কাঠ গলায় বলে,
“এটা আমার কাজ। আমার কর্তব্য। ডেভিল কুইনকে আমাদের সিংহাসনে বসানো আমার দায়িত্ব। আর উনার পর ওই সিংহাসন তো আমিই পাব। উনার শক্তি আমি পাব। সো আমাকে এর জন্য ওয়েল ডান দেওয়ার কোনো দরকার নেই এরিক।”

এরিকের রাগ হলো। তবে ডেভিল মানে শয়*তান। এর মানে হচ্ছে দুনিয়ার সবথেকে বেশি স্বার্থপর, হিংসা, মিথ্যা, ছলনা থাকবে এই সত্ত্বার মাঝে। এরিক নিজেও এমন। এমনকি এই পুরো ডেভিল কিংডম শুধু এবং শুধু স্বার্থ, মিথ্যা, ছলনা ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা বোঝে শুধু ধ্বংস! তাই নিজের রাগ নিবারণ করে এরিক বলল,
“যেহেতু খোঁজ পাওয়া গেছে সেহেতু এখন আমাদের গিয়ে কুইনকে নিয়ে আসা উচিত? কি বলো?”

“না উচিত নয়।”
কক্ষে প্রবেশ করে রোজির বাবা। যিনি রাজ্যের দেখাশোনা করছেন। তিনি বলেন,
“তোমরা হয়ত ভুলে যাচ্ছো যাকে আমরা ডেভিল কুইনে রুপান্তর করতে যাচ্ছি সে একজন ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। কুইন মাধুর্য এবং কিং অনুভবের মেয়ে। অনুভবের ভুলে ঐশ্বর্যের জন্মই এভাবে হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাল্টাইনি এখনো। ঐশ্বর্যকে আমরা কুইন বানাতে চেয়েছি। কিন্তু সে ডেভিল কুইন নয়। শুধু তার মধ্যে ডেভিল কুইন হওয়ার ক্ষমতা আছে, সেই শক্তি ওর মাঝে বিরাজমান। তবে তার মাঝে সেই সত্ত্বা রয়েছে যা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে। এখনো ঐশ্বর্যকে সাধারণ ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস বানানোর সেই শঙ্কা রয়েছে। আর রোজি, তুমি কি ঐশ্বর্যের মাঝে এমন কিছু দেখেছো? যেটা দেখে মনে হয়েছে যে এমনটা শুধু মানুষ বা ভ্যাম্পায়ার করতে পারে? বা এমন কোনো অনুভূতি কি ওর মাঝে রয়েছে যা আমাদের মতো ডেভিলের মাঝে থাকা উচিত না?”

রোজি থমকে গেল। কিছু একটা ভেবে উত্তরে বলল,
“হ্যাঁ আমি দেখেছি। বর্তমানে আমি একটা পরিবারের সাথে থাকছি। যেই পরিবারের মানুষজনকে আমি নিজের কন্ট্রোলে করে নিয়েছে। তারা সম্মোহন হয়ে আছে। আর কাকতালীয় ভাবে ওরা যাদের সাথে তাদের মেয়ে মানে রোজ বর্তমানে যেটা আমি! আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক করছে ঠিক তাকেই আমাদের ডেভিল কুইন ভালোবাসে। আর ওই প্রেম নামের লোকটার প্রতি পাগলামি দেখে আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেছি। এই ভালোবাসা, এই পাগলামি, এই অনুভূতি আমাদের জন্য নয়। কিন্তু আমাদের ডেভিল কুইনের মাঝে সেই অনুভূতি কাজ করে!”

রোজির বাবা এবার টেবিলে থাবা দিয়ে বললেন,
“ইয়েস! দ্যাটস দ্যা পয়েন্ট! তার মানে ঐশ্বর্যের মাঝে এখনো সেই শঙ্কা আছে। আর সেটা প্রগাঢ় হচ্ছে। একবার যদি ডেভিল কুইনের বিয়ে হয় মানুষ বা ভ্যাম্পায়ারের সাথে তখন আমাদের হাতে কিছু থাকবে না।”

“সেটা আমি হতে দেব না বাবা। ডেভিল কুইনকে এই রাজ্যের সিংহাসনে বসতে হবে। আর তার জন্য আমাকে যদি ওই প্রেমের সাথে বিয়েতে রাজি হতে হয় তাহলে আমি সেটাই হবো।”

নিঝুম রাত। আকাশে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বিদ্যুতের ঝলকানিতে মাঝেমধ্যে আলোকিত হচ্ছে পরিবেশ। প্রেমের অফিস গার্ডেনের ঠিক মাঝখানে কংক্রিটের রাস্তায় বসে আছে ঐশ্বর্য। উথাল-পাতাল হাওয়া বইছে চারিদিকে। সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। সেই হাওয়ার সাথে দুলছে ঐশ্বর্যের চুল। এলোমেলো চুল নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই ঐশ্বর্যের। মুখটা আকাশের দিকে করে তাকিয়ে দেখে বিদ্যুৎ চমকানো দেখতে ব্যস্ত সে। মুখটা ভার তার।
“মি. আনস্মাইলিং! জীবনে প্রথমবার কারোর জন্য অনুভব করেছি। তাকে পাওয়ার জন্য নিজের পাগলামির সীমানা অতিক্রম করেছি। তারপরেও কি আপনাকে পাব না?”

ভার গলায় কথাগুলো বলে থামলো ঐশ্বর্য। হঠাৎ করেই জোরেসোরে আকাশ ডেকে উঠল। হেলদোল হলো না ঐশ্বর্যের। চোখ বন্ধ করলো সে। কারো কন্ঠে আবারও চোখ মেলে তাকালো।
“ম্যাম, আপনার এতো রাতে বাহিরে থাকা ঠিক নয়। আর স্যার বলেছে আপনাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে। রাত প্রায় একটা বেজে যাচ্ছে। আর বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। আমি আপনার জন্য গাড়ি ডাকি?”

“কোনো দরকার নেই। আমি এখানেই থাকব। আপনার স্যারকে দেখাতে হবে আমি যা বলি সেটাই করি।”

“কিন্তু অনেক বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। আপনি অন্তত গ্যারেজে যান।”

ঐশ্বর্যের মেজাজ চটে গেল এবার। কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিক্ষিপ্তভাবে বলল,
“যাব না আমি। এখানেই থাকব। আসুক বৃষ্টি। সারারাত হক বৃষ্টিতে। তাও আমি এখান থেকে কোথাও যাব না।”

ঐশ্বর্যের দৃষ্টি বরাবরই ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো। আর ওর কথার ধরণ শুনলে যে কারো হৃদয় কেঁপে উঠবে। ওয়াচম্যান কিছু বলল না আর। সাহস পেল না। বরং ঢক গিলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। ওয়াচম্যান যাওয়ার সাথে সাথে নিজের হাঁটু উঁচু করে হাঁটুতে হাত রেখে মাথা লাগিয়ে নিয়ে নিচু হয়ে বসে থাকল ঐশ্বর্য। সে প্রতিজ্ঞা করে রেখেছে কোথাও যাবেনা আজ!

হাতে পৃষ্ঠে পানির ফোঁটা পড়তেই হুঁশ এলো ঐশ্বর্যের। মাথা উঠিয়ে তাকালো সে আকাশের দিকে। সাথে সাথে তার মুখে এসে পড়ল বৃষ্টির পানি। ঐশ্বর্য শান্ত হয়ে বসে রইল। ধীরে ধীরে বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি! ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে রইল। বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটাই ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। পুরোপুরি ভিজে যাচ্ছে সে। হঠাৎ একসময় সে অনুভব করল তাকে আর বৃষ্টি ছুঁতে পারছে না। ধীরে ধীরে চক্ষুদ্বয় মেলে তাকালো ঐশ্বর্য। তার মাথায় ওপরে ইয়া বড় একটা ছাতা। ছাতার মালিক কে? দেখার জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু তাকালো সে। অতঃপর বাকহারা হয়ে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল ব্যক্তিটির দিকে।

“এই হার হিম করা শীতের মাঝে রাতের বেলা বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালো লাগছে তোমার?”

ঐশ্বর্যের ধ্যান ভাঙ্গে। তার সামনে স্বয়ং প্রেম দাঁড়িয়ে। কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল সে। আসলেই অনেক ঠান্ডা। ঐশ্বর্য কাক ভেজা হয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। সাধারণত ঠান্ডা ভ্যাম্পায়াদের প্রিয় হয়। তবে ঐশ্বর্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। তার ঠান্ডা লাগলে জ্বর আছে। তাও প্রচন্ড জ্বর। কারণ সে র*ক্ত পান করতে পছন্দ করে না। র*ক্তের প্রতি আগ্রহ কম তার। ঐশ্বর্য গরম আর আগুন জিনিসটা বড্ড ভালোবাসে। কেন সে জানে না! কাঁপতে কাঁপতে ঐশ্বর্য বলে,
“আ…আপনি না বাড়িতে চ…চলে গিয়েছিলেন?”

“বাড়িতে গিয়ে শান্তি দিলে কোথায় তুমি? তোমাকে রেখে যেতে মন চাইছিল না। তাও যখন গেলাম। তখন শান্তিতে নিজের বেডে অবধি বসতে পারিনি। তাই আবারও আসতে। এসে অবাক হয়েছি তুমি এখনো এখানে। তাও বৃষ্টিতে? তুমি কি পাগল?”

“সারাদিন তো পাগল বলেই সম্মোধন করেন। এখন আবার জানতে চাইছেন আমি পাগল কিনা? আপনিই বলুন আমি কি?”

“চলো তোমায় বাড়িতে রেখে আসব!”

ঐশ্বর্য এবারও নারাজ। মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে বলে,
“যতক্ষণ না আপনি আমার কথা শুনছেন আমি আপনার কথা শুনছি না। আপনি চলে যান না বাড়িতে! আমার জন্য ভাবতে হবেনা আপনাকে।”

“জেদ করার কোনো মানে হয় না। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! তোমার ঠান্ডা লাগবে। অলরেডি লেগেছে! তুমি যে হারে কাঁপছো!”

ঐশ্বর্য কিছু বলার ক্ষমতা পাচ্ছে না। ঠান্ডায় তার হাত-পা অসার হয়ে আসছে। তবুও নিজের ওপর জোর খাটিয়ে বলল,
“আ…আমি কিছু বুঝতে চাই…”

পুরোটা বলতে পারল না ঐশ্বর্য। ঢলে পড়ল প্রেমের বুকে। শক্তি নেই আর তার মাঝে। চোখ দুটোও বুঁজে আসছে তার। তাই জোর করে চোখ মেলে রাখলো না আর। চোখ বুঁজে শান্ত হয়ে পড়ল সে।

“তোমাদের বলেছিলাম আমি ঐশ্বর্যের ওপর নজর রাখতে। ও কখন কি করে কাউকে কিচ্ছু বলেনা না। তোমরা নজর রাখা সত্ত্বেও কি করে বেরিয়ে গেল মেয়েটা?”

ধমকে উঠে কথাগুলো ইনায়া আর সানিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠে চিন্তিত হয়ে পড়ল মাধুর্য। তার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ঐশ্বর্যকে পাওয়া যাচ্ছে না। একা একা বাড়ি থেকে লুকিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে চিন্তিত মাধুর্য। অন্যদিকে অনুভব ভ্যাম্পায়ার কিংডমে রয়েছে। তাই মাধুর্য তাকেও খবর দিতে পারছে না। সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মেয়ের খোঁজ না পেয়ে। এবার সে বিড়বিড় করে বলল,
“বাহিরে এতো জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানি না মেয়েটা কোথায়! ফোনটাও রেখে গিয়েছে। ওর শরীর ঠিক নেই আর বাহিরে চলে গিয়েছে। আর কত চিন্তায় ফেলবে মেয়েটা জানি না!”

মাধুর্য দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলতেই তাদের সদর দরজায় কলিংবেল বাজলো। মাধুর্য তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াল। দ্রুত এগিয়ে গেল। তার ধারণা ঐশ্বর্য এসেছে। দরজা খুলেই ঐশ্বর্যকে ঝাড়বে বলে ঠিক করল সে। সেই অনুযায়ী দরজা খুলে কিছু বলতেই হতভম্ব হয়ে রইল সে। তার সামনে একটা যুবক। তার কোলে ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্যের কোনো হুঁশ নেই, জ্ঞান নেই। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল মাধুর্য। তাড়াহুড়ো করে ঐশ্বর্যের কাছে এগিয়ে যেতেই প্রেম বলে উঠল,
“ওর ঠান্ডা লেগেছে। বৃষ্টিতে ভিজেছে অনেকক্ষণ।”

“ওকে ভেতরে নিয়ে এসো। ওর ঘরে। তাড়াতাড়ি!”

প্রেম আর কথা বাড়ালো না। দ্রুত ঐশ্বর্যকে তার ঘরে নিয়ে এলো। মাধুর্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল ঐশ্বর্যকে নিয়ে।

চোখ আধো আধো খুলে তাকানোর চেষ্টা করল ঐশ্বর্য। আশেপাশে ড্রিম লাইটের আলোয় ঝাপসা লাগছে সব। কষ্ট করে পাশ ফিরতেই অনুভূত হলো এক ব্যক্তিত্বের। তার হাতের সাথে কারো হাত লাগতেই মাথা উঠিয়ে তাকানোর চেষ্টা করে ঐশ্বর্য। তারপর ব্যক্তিটির পরিচয় বুঝে মুচকি হাসল। প্রেম বসে ছিল পাশেই। ঐশ্বর্যের হাসি চোখ এড়ালো না তার। চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
“তোমার জ্ঞান ফিরেছে? তাহলে আমি যাচ্ছি!”

উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয় না প্রেম। ঐশ্বর্য যে সযত্নে ধরে রেখেছে তার হাত। ঐশ্বর্য মিনমিন করে মিনতি করে বলল,
“একটু কাছে বসে থাকুন না প্লিজ!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর বাস্তবে কোনো ভিত্তি নেই। সকলে রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here