প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১১

0
249

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১১

আচানক ঐশ্বর্যকে এখানে দেখে বাকরুদ্ধ প্রেম। কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না সে। একবার ঐশ্বর্যের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রোজের দিকে। ঐশ্বর্যকে এতোদিনে যা চিনেছে তাতে প্রেমের বুঝতে সময় লাগেনি যে মেয়েটা বড় রকমের সিনক্রিয়েট করতে বাঁধবে না। তাছাড়া তার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে একবার চোখ দিয়ে ভস্ম করে দেবে রোজকে। তার সেই আগুন দৃষ্টি সত্যিই ভয়ানক বটে। এতো রাগ নিয়ে চলে এই মেয়ে? রেস্টুরেন্টের সবাই স্তব্ধ। অন্যদিকে রেস্টুরেন্টের মালিক ছুটে এলো তড়িঘড়ি করে। একপ্রকার ঐশ্বর্যের সামনে কিছুটা কড়া কন্ঠে বলল,
“একি ম্যাম! কি করলেন আপনি? আমাদের টেবিল ভেঙে ফেললেন? এমনটা করা উচিত হয়নি। আপনাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রেস্টুরেন্টে কি সিনক্রিয়েট করার জন্য আসেন?”

অগ্নি দৃষ্টি এবার নিক্ষেপ করে ঐশ্বর্য রেস্টুরেন্টের মালিকের দিকে। মাথায় এমনি দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সারা শরীরের রগ চিনচিন করছে। এবার নিজের দৃষ্টির সাথে নিজের দুহাত বাড়িয়ে তেড়ে আক্রমণ করতে এলো ঐশ্বর্য। রেস্টুরেন্ট ওনারের কোটের কলার চেপে ধরে রাগে গজরাতে গজরাতে বলল,
“এই রেস্টুরেন্টের ওনার! তোর সাহস হয় কি করে আমার সঙ্গে জোর গলায় কথা বলার? তোর রেস্টুরেন্টের টেবিল তো দূরে থাক। আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলার মাশুল তোকে দিতে হবে। এই রেস্টুরেন্ট বন্ধ করিয়ে দেব আমি। ধ্বংস করব তোকে।”

কলার ছেড়ে অন্য হাত দিয়ে ওনারের গলা চেপে ধরল ঐশ্বর্য। নিজের রাগ দমন হচ্ছেনা আজ। সকলে এই অবস্থা দেখে বিস্ময়ে হতভম্ব। কারো হুঁশ বা সাহস কোনোটাই কুলচ্ছে না এগিয়ে আসার জন্য। মেয়েটার রূপ স্নিগ্ধময়ীর ন্যায় হলেও তার এই ধ্বংসাত্মক ক্রোধে সব বিনাস করতে সক্ষম।

আর উপায়ন্তর না পেয়ে দ্রুত এগিয়ে এলো প্রেম। ঐশ্বর্যকে ধরে জোর করে ছাড়িয়ে নিল তাকে। ছাড়িয়ে নেওয়া সময় একটু ধাক্কা লাগল ঐশ্বর্যের। কিছু ছিটকে পড়তে গিয়েও সামলে নিল নিজেকে। সেই মারাত্মক ক্রোধের সাথেই প্রেমের দিকে তাকালো সে। ‘প্রেম’ মানুষটা যেন আস্ত রাগ, ঘৃণা, হিংসা গলিয়ে দেওয়ার ঔষধ। তার চেখ এক মস্ত বড় সাগর যেখানে তাকালে তো ক্রোধ বিলীন হয়ে যায়। উধাও হতে থাকলো ঐশ্বর্যের ক্রোধ। ভয়ানক দৃষ্টি পাল্টে মায়াময়ী হলো তার দৃষ্টি। তখনই হুঁশ ফিরল প্রেমের কন্ঠে,
“আর ইউ টোটালি ম্যাড? ওহ গড, আমি কার পাল্লায় পড়েছি? কি ভাবো তুমি নিজেকে। আর একটু ওই লোকটা মারা যেতো। তোমাকে কি ভাষায় বললে তোমাকে বর্ণনা করা যাবে আমি জানি না। কিন্তু তোমাকে একটা সুস্থ মানুষ বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। জানি না কোন ভাগ্য নিয়ে তোমার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। প্লিজ, এগুলো পাগলামি বন্ধ করো। আর নিজের মাথার চিকিৎসা করাও।”

ঐশ্বর্য শুধু হা হয়ে শুনল। মাথা নিচু করল সে। এই প্রথম কারো কথায় তার বুকে গিয়ে তীরের মতো বিঁধল। ছারখার হয়ে গেল ভেতরটা। আবার মুখ তুলে চাইলো সে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
“আপনার মতে আমি পাগল। আমার ভালোবাসা আপনার কাছে শুধুমাত্র একটা পাগলামি। তাহলে কে সুস্থ? কার ভালোবাসা আপনার কাছে আসল ভালোবাসা? আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটা?”

রোজের দিকে কটাক্ষ করে বলল ঐশ্বর্য। প্রেম একবার রোজের দিকে তাকালো। মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে ঐশ্বর্যের দিকে চেয়ে রয়েছে। সে নিজেও হয়ত এসব ঘটনায় আঁতকে উঠেছে। প্রেম ভাবছে অন্য কথা। যদি রোজের কথা বলে তাহলে কি ঐশ্বর্য ফিরে যাবে? তাহলে কি ঐশ্বর্য নিজের এই পাগলামি থামাবে? এসব ভাবনায় মত্ত হতে হতে ঐশ্বর্য আবার উত্তর চেয়ে বসল।
“কি হলো বলুন? আমি জানতে চাই। আপনার পছন্দ কি ওই মেয়ে? আর এটাও বলুন যে ওই মেয়ের পছন্দ যদি আপনি হন তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। কারণ ও আপনাকে পছন্দ করেছে। আপনি ওকে না।”

প্রেম আরো কিছুক্ষণ ভাবলো। এমনিতে মায়ের পছন্দও যখন রোজ। তার ওপর এখন রোজকে বাঁচাতে হলেও এই কথাটা বলা প্রয়োজন। ঐশ্বর্য মেয়েটা যে নিজের সীমা অতিক্রম করে রোজের ক্ষতি করে ফেলতে পারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আর বিলম্ব না করেই প্রেম বলে উঠল,
“হ্যাঁ। আমার পছন্দ রোজ। ওর সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা চলছে। ফাইনাল কথা খুব দ্রুত হয়েও যাবে।”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না। কিছুক্ষণ চুপ করে পলক না ফেলে প্রেমের দিকে এক নয়নে চেয়ে রইল। অতঃপর বলে উঠল,
“ওকে। ইনায়া আর সানিয়া চলো। আমি বাহিরে যাচ্ছি। অ্যান্ড ইউ…”
রেস্টুরেন্টের ওনারের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বলল ঐশ্বর্য।
“আপনার ক্যাশ কাউন্টারে আপনার ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাচ্ছি। নেক্সট টাইম আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস করবেন না। ঐশ্বর্য সিনহা আমার নাম।”

ঝড়ের গতিতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল ঐশ্বর্য। দেখা পাওয়া গেল না তার। তার জন্য হম্বিতম্বি করে পিছু পিছু সানিয়া আর ইনায়াও ছুটল। প্রিন্সেস ডাকতে চেয়ে ডাকলো না তারা। এবার সত্যি সত্যি ঘাড় থেকে মাথা নামিয়ে দেবে ঐশ্বর্য।

প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে রেস্টুরেন্টের বাহিরে ঐশ্বর্য। মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে তাকাচ্ছে সে। পার্কিং প্লেসে নিজের গাড়িতে ভর দিয়ে একটু পর পর তার হাতে থাকা কাঁচের বোতলের দিকে তাকাচ্ছে। অন্যদিকে সানিয়া আর ইনায়া পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে দুজন দুজনের হাত ধরে ঐশ্বর্যের দিকে ভীরু চোখে তাকাচ্ছে। ঐশ্বর্যের মতলব তারা ধরতে পারছে না। কি করতে চাইছে সে আবার? তারা ভয়ে ঐশ্বর্যকে প্রশ্নও করতে পারছে না।

রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে প্রেম আর রোজ বের হলো। যা নজর এড়ালো না ঐশ্বর্যের। উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। কাঁচের বোতল ঘুরাতে ঘুরাতে এসে ইনায়া আর সানিয়ার সামনে দাঁড়াল। ভয়ে একাকার তারা দুজনেই। ঐশ্বর্যের দৃষ্টি তাদের কাছে একটা কন্ট্রোললেস গুলির মতো। যা যেকোনো সময় ছুটে বেরিয়ে আসলে তাদের জান বেরিয়ে যাবে। ঐশ্বর্য কাঁচের বোতল তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“যার বেশি সাহস আছে সে এটা নাও।”

ইনায়া আর সানিয়া দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করে কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাতে বোতলটা ধরল ইনায়া। অতঃপর ঐশ্বর্যের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ঐশ্বর্য বলল,
“এখন এই কাঁচের বোতল আমার মাথায় সজোরে আঘাত করো।”

ভয়ে তৎক্ষনাৎ আঁতকে উঠল ওরা দুজন। চোখ কপালে উঠে গেল একদম। সানিয়া নিচু কন্ঠে বলল,
“কি বলছো প্রিন্সেস? আমরা এমন কেন করব? এটা করতে পারব না!”

“ইনায়া, তুমি ধরেছো বোতলটা। তার মানে তোমার সাহস আছে। হিট মি!”

“প্রিন্সেস…!”

ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে ওঠে এবার।
“হিট মি ইনায়া। ডু ওর ডাই। হয় তোমাকে করতে হবে নয়ত মরতে হবে। মারো আমাকে।”

ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে বলতেই কেঁপে উঠে ভয়ের চোটে মাথায় কাঁচের বোতল জোরেশোরে মেরে দেয় ইনায়া। কাঁচ ভাঙার শব্দ হয়। আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে কাঁচ। দূরে ছিটকে যায় ঐশ্বর্য। মাথা দিয়ে রক্তের ফিনকি বেরিয়ে পড়ে। গাল বেয়ে টপটপ করে নিচে পড়ে একেকটা তাজা রক্তের ফোঁটা। ধপ করে বসে পড়ল সে। অন্যদিকে ভয়ে জান যায় অবস্থা সানিয়া আর ইনায়ার। তারা ডাকতে থাকে ঐশ্বর্যকে। ঐশ্বর্য ঘোলা চোখে দেখে প্রেমকে আসতে। হঠাৎ প্রেম ছুটেই আসছে। তা দেখে এই অবস্থাতেও মুচকি হাসি বেরিয়েই আসে ঐশ্বর্যের। এটাই তো চেয়েছিল সে।

রোজকে নিয়ে পার্কিং প্লেসে গাড়ির জন্য আসছিল প্রেম। ফোনে কথা বলছিল অফিসের লোকের সাথে। তখনি হঠাৎ তার চোখ যায় ঐশ্বর্যের দিকে। অবস্থা বড্ড খারাপ। মেয়েটা পড়ে যাচ্ছে তার সামনে। মাথা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তা দেখে হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় তার। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। আর কোনো কিছু না ভেবে ছুট লাগায় ঐশ্বর্যের দিকে। অন্য কেউ থাকতে তার কেন এতো অস্থিরতা সে জানে না! হয়ত সে ঐশ্বর্যকে চেনে বলে! আর একটা মেয়েকে এই অবস্থায় ফেলে চলে যাওয়া তো কোনো মানুষের কাম্য নয়। তার তো একদমই নয়।

ঐশ্বর্যের কাছে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে প্রেম। তার মাথা চেপে ধরে তুলে বলে,
“এই মেয়ে রাগ দেখাতে দেখাতে এই কি হলো তোমার?”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। চেষ্টায় আছি নিয়মিত হওয়ার। হয়েও যাব ইনশাআল্লাহ। আপনার কি ভালো লাগছে না গল্পটা? অনেকে দেখি মেয়ের পাগলামি পছন্দ করেন না। কেন পাগলামি ছেলেরা করতে পারে? গল্পটা কিন্তু এজন্যই ভিন্নধর্মী। মেয়েও যে ভালোবাসার জন্য কতটা ডেস্পারেট হতে পারে সেটা আরো সামনে গেলে দেখতে পাবেন। অবশ্যই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here