#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১৫
কোলাহলপূর্ণ ক্যাফের একপাশে বসে আছে রবি আর শশী। বাহিরে মুষলধারের বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা ঘাট, গাছগাছালি ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা। পাখিরা নিজেদের বাসায় ঘামটি বেধে বসে। কেউ কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি বসাচ্ছে। রিক্সা ওয়ালারা পলিথিন মাথায় দিয়ে পা দিয়ে ঠেলে রিক্সা সামনে আগাচ্ছে। ক্যাফের ভিতরে বসে বাহিরের বর্ষন মুখরিত পরিবেশ স্পষ্ট ভাস্যমান। সেখানেই এক পাশে দুজন সামনা সামনি বসে আছে। বুকে হাত গুঁজে শশীর দিকে বিরক্তি মাখা চোখেমুখে তাকিয়ে আছে রবি। শশী কোনো রকমে ঠোঁট কামড়ে হাসি থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে। কিছুতেই হাসি কন্ট্রোল করতে পারছে না। এক পর্যায়ে সাধ্যের বাহিরে গিয়ে হুহা করে হেসে ফেললো শশী। ঠোঁটে স্পষ্ট বাকা দাত টা ভেসে উঠলো। রবি দাতে দাত পিষে কফির কাপ স্বজোড়ে টেবিলে রাখলো। কফির কাপের আওয়াজে শশী হাসি থামালো। হাসির আওয়াজ থেমে গেলেও তার মুখের হাসি থামেনি। রবি রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো, ‘সমস্যা কি তোমার? এখানে কি সার্কাস খোলে বসে আছি আমি? হাসছো কেন?’
শশী দুই হাতে খোলা চুল গুলো পিছে ঠেলে সোজা হয়ে বসলো। শুধাল, ‘আমার হাসি পাবার কথা না। আমার উচিত ছিল তোমার কষ্টের কারনে কষ্টিত হওয়া। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হলো আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে।’
বলেই আবারো হাসতে লাগলো শশী। হতাশ হয়ে ফুঁশ করে নিশ্বাস ফেললো রবি। এই মেয়ে এত্ত ফালতু প্যাঁচাল পারতে পারে। আফসোস আমার! কেন গেলাম রিলেশনে? ভ্রমণ করার নিষেধাজ্ঞা পেলাম। বিসনেজ সামলানোর দায়িত্ব পেলাম। ভ্যানভ্যানানি গার্লফ্রেন্ড পেলাম। আহঃ আর কি পাওয়ার বাকি আছে আমার? আর কি??
শশী বললো, ‘আন্টি অনেক ইন্টেলিজেন্ট মানতে হবে।’
রবি হুতাশ কন্ঠে বললো, ‘হ্যাঁ মাত্রারিক্ত ইন্টেলিজেন্ট বলেই আমার এই অবস্থা। ট্রাভেল নিয়ে আম্মুর কি সমস্যা আমার বুঝে আসে না। একবার বিয়ে টা হতে দাও। তারপর দেখো আমাকে সামলায় কে।’
চোখ ছোট ছোট করে তাকালো শশী। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটকাট গলায় বললো, ‘বিয়ের পর মানে? কি করবে তুমি?’
দাত কেলিয়ে হাসলো রবি। বললো, ‘এখন হয়তো বিয়ে দিবে না বলে ট্রাভেল বাদ দিল। বিয়ের পর কি বলবে? তখন তো বউ এমনিতেও আমার।’
শশী হাতে থাকা কাটা চামচ টেবিলে হাল্কা আওয়াজে ধপ করে রেখে বললো, ‘খবরদার বিয়ের পর পালিয়ে কোথায় যাবে না।’
বিস্মিত হলো রবি। অবাক কন্ঠে বললো, ‘আরেহ্ এখুনি দেখছি তুমি খবরদারি শুরু করছো। বিয়ের পর তো আমি অবশ্যই ট্রিপে যাবো। কেও জানবে না।’
রেগে গেলো শশী। বিয়ের পরও তাকে না জানিয়ে রবি চলে যাবে? কেন? বিয়ের পর এমন করবে কেন সে? তাহলে কি রবি বাধ্য হয়ে বিয়ে করছে? আমি বাধ্য করেছি তাকে বিয়ে করবে? আরো কিছু কথা মাথায় ধরল শশীর। ক্ষুন্ন হলো মন। বিষন্নতায় ছেঁয়ে এলো। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলো। রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ বিয়ের পর যাবে মানে? তাও আবার না জানিয়ে? আর কি খবরদারি করেছি আমি? আমি কি কিছু বলতেও পারবো না? এমন বিহেভ করছো যেন তুমি বাধ্য এই বিয়ে করতে। করলাম না তোমাকে বিয়ে। থাকো তুমি তোমার ট্রাভেল নিয়ে। গেলাম আমি।’
বলে পার্স হাতে নিয়ে টেবিল ছেড়ে সামনে হাটা ধরলো শশী। রবি আকর্স্মিক ঘটনায় হতবাক হয়ে গেল। সে তো এভাবে বলতে চায়নি। দাঁড়িয়ে শশীকে থামাতে চাইলে শশী তেজি গলায় শুধাল, ‘খবরদার আমার পিছে আসবে না।’ বেড়িয়ে গেলো কফি হাউজ থেকে। রবি তাকে ডাকতে ডাকতে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় ওয়েটার এসে আটকে ধরে।
‘ভাই বিল টা পে করে যা।’
তাড়াহুড়োর মাঝে আরেক বিপত্তি। ওইদিকে শশীও চলে যাচ্ছে। আবার বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। অস্থির হয়ে উঠলো রবি। পকেট থেকে টাকা বের করতে করতে বললো, ‘শালা আমার গার্লফ্রেন্ড চলে যাচ্ছে আর তুই আছোস বিল নিয়ে? এই নে টাকা।’
ওয়েটার ছেলেটা রবির সমবয়সী ছিল। এখানে রবি প্রায় সময় ফ্রেন্ডদের নিয়ে আসে। সেই সুবাধে তারা পরিচিত। ছেলেটি দাত কেলিয়ে হেসে বলল, ‘ভাই ব্রেক’আপ পার্টিটা আমাদের হাউজে দিস।’
রবি হাসলো। কাচের দরজা ঠেলে বের হতে হতে উত্তর দিল, ‘ব্রেকআপ না শা*লা প্যাচআপের পার্টি দিব।’
বাহিরের পরিবেশ শীতল! ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আঁচড়ে পরছে ধরনীতে। মৃদু বাতাসে গাছের পাতা নড়বড়ে। রাস্তা ঘাট ভিজে একাকার। পরিবেশ সিগ্ধ। রবি তড়িঘড়ি করে ক্যাফের বাহিরে এলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে শশীকে খোঁজতে লাগলো। রাস্তার ডান পাশ দিয়ে দৌড়ে গেলো। দেখলো শশী ভিতরের রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে হেটে এগোচ্ছে। স্বস্থির নিশ্বাস ছুঁড়লো রবি। চুপচাপ এগিয়ে শশীর পাশাপাশি হাটতে লাগলো। রবি কে পাশে দেখে শশী একবার চোখ তুলে তাকালো। তারপর চোখ ফিরিয়ে হাটতে লাগলো। কিছুসময় নিরবতা ছিল দুজনের মাঝে। সেই নিরবতা ধুচিয়ে রবি বলল, ‘সরি! আমি ওইরকম কিছু মিন করি নি। তুমি ভুল বুঝছো আমায়।’
প্রতিত্তুর করলো না শশী। চুপচাপ বুকে হাত গুঁজে সামনে এগোতে লাগলো। ভারি বর্ষন দুজনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। অল্প সময়ের মাঝে দুজন ভিজে প্রায় কাক ভেঁজা। শশীর নিরবতা রবি মানতে পারছে না। শশীর এক হাতের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো, ‘প্লিজ রেগে থেকো না। মাত্র কাল রাতে রাগ ভাঙ্গালাম। আবার আজকে রেগে গেলে। দুইটা দিন তো যেতে দাও। তারপর রাগ করো।’
ভ্রুঁ কুঁচকালো শশী। বললো, ‘হুয়াট ডু ইউ মিন বাই রাগ করো? আমি সব সময় রাগ করি? হুদাই রাগ দেখাই? আমাকে ঝগড়াটে বলছো তুমি?’
আহাম্মক হয়ে গেল রবি। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে বললো, ‘যা বাবা, আমি কখন বললাম?’
রাগে তরতম করে উঠলো শশী। ভারি নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। ‘বলো নি এটাই বুঝাতে চেয়েছো।’
আর নিতে পারলো না রবি। একটু দূরে সরে দুই হাত সামনে এনে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বললো, ‘মাফ চাই বোইন মাফ চাই। কথা আর প্যাচাইস না। এই আবলাটারে ছাইড়া দে এবারের মতো।’
চেঁচিয়ে উঠলো শশী, ‘কি? বোন কে? আমাকে বোন ডেকে কাকে বিয়ে করবে তুমি? আর কে কথা প্যাঁচাচ্ছে? আমাকে বলছো তুমি?’
হতাশ হলো রবি। চেহারায় তার অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো। কপাল চাপড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ইয়া আল্লাহ! আমারে উঠাই নেও। নারী জাতির মন বুঝার ক্ষমতা আমার নাই। উঠাও আমারে উঠাও।’
ফিক করে হেসে ফেললো শশী। হাসতে হাসতে রবির বাহু জড়িয়ে ধরে সামনে এগুতে লাগলো।রবি ঠোঁটে হাসি টেনে মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলো শশীকে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থেকে এবার মুষলধারের বৃষ্টি হতে লাগলো। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে পাশাপাশি হাটছে রবি শশী। বৃষ্টিতে দুজনই ভিজে গেছে। শশী রাস্তার দিকে দৃষ্টি ফেলে পানির সাথে তাল মিলিয়ে হেলেদুলে হাটছে। রবি পকেটে দুই হাত গুঁজে শশীর ছেলেমানুষি দেখছে। মনে মনে হাসলো সে। শশী রবির এক হাত ধরে সামনে এগুতে এগুতে বলছে, ‘ওই পাহাড়ে যাবে না আর?’
রবি তাকালো শশীর দিকে। কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে এতো বড় প্যাচ করেছে? নারী জাতির মন পড়ার ছেড়ে নাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। হাল্কা গলা ঝেড়ে বললো, ‘উহুম! এখন না। বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি ভিজে থাকে। ধসে পরার সম্ভাবনা অনেক। এখন যাওয়া রিস্কি হবে।’
ক্ষুন্ন হলো শশীর মন। ঠোঁট উল্টে তাকালো সে। রবি হাসলো। এক হাত তুলে শশীর মুখে লেপ্টে থাকা ভিজে চুল গুলো কানের পিছে গুঁজে বললো, ‘বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে হানিমুনে যাবো সেখানে। তারপর চুটিয়ে প্রেম করবো।’
শশী মুচকি হেসে রবির বুকে আস্তে করে কিল বসিয়ে বলল, ‘অসভ্য!’ রবিকে ঠেলে সরিয়ে সামনে হাটা ধরলো শশী। রবি পিছন থেকে বুকে বা পাশে হাত রেখে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, ‘ভালোবাসি শশী। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।’
চলবে…??