প্রেমানুরাগ পর্ব ১৪

0
443

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১৪

কাচের টেবিলে ঝুকে গালে হাত দিয়ে বসে আছে রবি। চুল গুলো তার উষ্কখুষ্ক। চেহারায় স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ। কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তার সামনে এক গাদা ফাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোর্শেদ। ঠোঁটে তার শয়’তা’নীর হাসি। বুঝা যাচ্ছে রবিকে এভাবে হ্যানস্তা হতে দেখে মোর্শেদ প্রচুর আনন্দ পাচ্ছে। রবি তার চিন্তার জাগতে ডুবে থেকে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘তুমি সিউর মামা?’

হাসিমাখা মুখখানি তে মুহূর্তেই আলো নিভে অন্ধকার নেমে এলো মোর্শেদের। ক্ষুন্ন মনে বলে উঠলো, ‘তুই এখনো আমাদের নিয়ে সন্দেহ করছিস?’

রবি বললো, ‘তো কি করবো? তুমি আর আম্মুর যদি নানার সন্তান হয়ে থাকো তাহলে দুজনের মাঝে এতো তফাৎ কেন? বুঝাও আমাকে।’

মোর্শেদ হাতের ফাইল গুলো টেবিলে স্বজোড়ে রাখলো। তারপর বললো, ‘সত্যি বলতে আমারো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। আপা এতো রাগি কেন? আব্বা তাকে কুড়িয়ে আনছে নাকি আমাকে?’

হেসে ফেললো রবি। মুখে হাসি রেখেই বলল, ‘যাই বলো মামা। তোমার বোন খুব চতুর মহিলা। নাহলে এমন শর্ত কেউ দেয়? কি বললো? শশীকে বাড়ির বউ করবে যদি আমি ট্রাভেল বাদ দেই আর ব্যবসা সামলাই। এটা কোনো কথা? ভাই ভ্রমণ করা নিয়ে এমন সমস্যা? তাকে এখানে টানার কি হলো?

মোর্শেদও হাসলো। বলল, ‘কি আর করবে। আপনি যে লুকিয়ে গায়েব হয়ে যান আমাদের তো প্রচুর টেনশন হয় নাকি? তাছাড়া এতো দিন যাকে ধরে বেধে অফিসে আনা গেলো না। তাকে বিয়ে দিবে কিন্তু শর্ত দিয়ে অফিসে বসালো। আপার বুদ্ধি আছে মাশাআল্লাহ।’

বিষন্ন হলো রবি। মুখে বিরক্ত এনে বললো, ‘আম্মু এমন শর্ত দিবে জানলে জীবনেও প্রেমে পরতাম না।’

মোর্শেদ উচ্চস্বরে হেসে ফেললো। রবি তার দিকে ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকালো। মনে মনে বললো তোমরা দুইজনই একি ধানের চাল। মায়ের এই শর্তের সম্পর্কে তুমি আগে থেকেই জানতে আমি জানি। ভাবলো না আর রবি। এক হাতে মাথা চুলকে কাজে মন দিলো। মোর্শেদ খুব সূক্ষ্মতার সব কাজ রবিকে বুঝিয়ে দিচ্ছে।

সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে প্রায়। গোধুলির আবিরে মেখে আছে আকাশ। পশ্চিম আকাশে উল্কাপিন্ড হলুদ আলো জ্বলে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। ভ্যাঁপসা গরম বিদ্যমান। অফিসে সারাটা দিন ব্যস্ততার সাথে কাটিয়ে বাড়ি ফিরলো রবি। রুমে গিয়ে লম্বা শাওয়াল নিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলো। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এসির শীতল হাওয়ার কারণে বাহিরের ভ্যাঁপসা গরম ধরতে পারলো না। রবি শুয়ে থেকেই মোবাইল হাতে নিলো। শশীর নাম্বারে ডায়াল করে কানে মোবাইল ঠেকিয়ে সিলিং’য়ের দিকে তাকিয়ে আছে। একবারে, দুইবার, তিনবার রিং হবার পরেও কল রিসিভ হলো না। রবি আবারো ট্রায় করলো। পরপর কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল রিসিভ হলো না। বিরক্তিতে উঠে বসলো। ক্ষুন্ন মনে মোবাইলটা পাশে ছুঁড়ে মারলো। বিষন্ন তার মন। আচ্ছা শশী কি আমাকে ভুল নাম্বার দিয়েছে? ভুল নাম্বার দিবে কেন। হয়তো আশেপাশে নেই। ধ্যাৎ!!!

বড় ছাদের এক পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার ব্যস্ত বনানীর শহর দেখছিল শশী। মোবাইল রুমে ফেলে এসেছে। যার ধরন সে রবির কল ধরতে পারেনি। দীর্ঘক্ষণ ছাদে সময় কাটিয়ে রুমে চলে আসলো শশী। মোবাইলের দিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। রুমে এসে চোখে মুখে পানির ছিটেফোঁটা দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর স্টাডি টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো পড়ার জন্য। বিষন্ন তার মন। ড্রয়ার থেকে ডাইরি বের করে গ্রিন কালার পেন দিয়ে লিখা শুরু করলো। পাহাড়ে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত শশী এই ডাইরীতে নোট করে রেখেছে। বর্তমানে রবির অনুপস্থিতিতে তার জন্য মনির কৌটরের আবেগ গুলো লিখে রাখছে। ডাইরী লিখা শশীর অভ্যেস। ছোট থেকেই যখন তার মায়ের কথা মনে পরতো তখন সে ডাইরী লিখতো। আর এখন শিশিরের পাশাপাশি রবির নামও ডাইরীর পাতায় স্থান পেয়েছে। নিজের অনুভূতি গুলো সুন্দর করে গুঁছিয়ে লিখছে শশী। লিখা শেষে ডাইরীটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো সে। তারপর খুব যত্নে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিল। চুল গুলো উঠিয়ে উঁচু করে খোঁপা করলো। বিছানায় বসে মোবাইল হাতে নিয়ে খেয়াল করে আননোন নাম্বার থেকে প্রায় ৪/৫ টা কল। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভেবে কল ব্যাক করলো সে। শশীর কল পেয়েই তড়িঘড়ি করে রিসিভ করে রবি। উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে, ‘এতোক্ষন কোথায় ছিলে? সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি তোমাকে।’

কলের বিপরীত পাশের ব্যক্তিটির কথা শুনে ভরকে যায় শশী। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে এক বার নাম্বার টা ভালো করে দেখে আবার কানে রাখে। গলার আওয়াজ নামিয়ে আস্তে করে উত্তর দিল, ‘ছাদে ছিলাম।’

রবি চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর মোলায়েম সুরে শুধাল, ‘কেমন আছো?’

‘ভালো। আপনি?’

‘ভালো।’ চুপ হয়ে গেল রবি। বলার মতো আপাতত কিছু খোঁজে পাচ্ছে না। শশীও নিরব থেকে রবির প্রতিত্তুর শুনার অপেক্ষায় আছে। নিরবতা নেমে এলো দুজনের মাঝে। শশীকে চুপ থাকতে দেখে রবি বললো, ‘কি ব্যাপার বলোতো শশী? তুমি এতো চুপচাপ কিভাবে?’

ভ্রুঁ কুঁচকালো শশী। বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো, ‘মানে?’

‘মানে জঙ্গলে তো প্যানপ্যান করে আমার কান জ্বালাপালা করে দিয়েছিলে। আজ এতো চুপচাপ? কিছুতো বলো?’

উত্তর দিলো না শশী। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিরব রইলো। মূলত তার এখন রবির সাথে ফোনে কথা বলতে ভীষণ রকমের লজ্জা লাগছে। রবি তার ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মনে হাসলো। কিন্তু মুখে দুষ্টু হাসি রেখে বললো, ‘কি বলোতো শশী তুমি লজ্জা পাচ্ছো? লজ্জা পাওয়ায় নিশ্চয় গাল লাল হয়ে আছে? লাইক রেড চেরি!’

আরো লজ্জায় মুখরিত হলো শশী। কান গরম হয়ে এলো তার। রবি বললো,

‘প্রেয়সী তোমার লজ্জা মাখা মুখশ্রী দেখার প্রবল ইচ্ছাপোষন করছে মন। কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে লজ্জাবতীর লজ্জা মাখা মুখখানি।’
_____________

রোজিনার রুমে কাচুমুচু হয়ে বসে আছে রবি। কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। দিব্যি পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে ফাইল দেখছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো রবি। শুধাল, ‘আম্মু? আমি কি তোমার আর ফাইলের মাঝে থার্ট পারসন হয়ে গেছি? পাত্তা দিচ্ছো না কেন?’

রোজিনা ঠোঁট চেপে হাসলো। ফাইল বন্ধ করে চোখের চশমা টা ঠিক করলো। তারপর রবির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘মাই প্রিন্স অলয়েজ মাই ফাস্ট প্রায়োরিটি। কাম হেয়ার!’

প্রফুল্লিত হলো রবি। এক গাল হেসে পাশের পাশে বসে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। এক হাত টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো। রোজিনা তার অপর হাত দিয়ে রবির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রবি উল্লাসিত কন্ঠে বললো, ‘তুমি পৃথিবীর সব চেয়ে বেষ্ট আম্মু।’

সন্তুষ্ট হলো রোজিনা। মনটা তার ভরে এলো ছেলের কথায়। কিছুটা ঝুকে রবির কপালে পরম স্নেহের চুমু একে দিলো। রবি ভাবলো এই সুযোগে আবদার করে ফেলা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। সে যে কথা বলতে এসেছিল তা বলেই ফেললো।

‘আম্মু! আমি তো বিসনেজ সামলাতে রাজি হয়েছি তাই না?’

রোজিনাও সাথে সাথে মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল, ‘হুম!’

রবি বললো, ‘অফিসে তো রেগুলার যাচ্ছি। ভালোমতো সব বুঝে নিচ্ছি। এখন তো আর অবাধ্য, অনিয়মিত হবো না। তাহলে মাঝে মাঝে ছোট একটা ট্রুর দিতেই পারি তাই না?’

ভয়ে রবির বুক ধুকধুক করছে। মেয়ের কোলে শুয়েই আছে সে। রেগে গিয়ে যদি দুই-চার ঘা লাগিয়ে দেয় তো? হায় হায় রাহিম! ইয়া মাবুদ! ইয়া খোদা! আল্লাহ রক্ষা করো আমায়। দুরুদ পরতে লাগলো রবি। কিন্তু রোজিনা খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল, ‘আমি তো তোমাকে এমনি এমনি ট্রুরে যেতে বারন করি না। আমার কথা শুনো তুমি? হুটহাট পাহাড়ে চলে যাও গার্ড ছাড়া। যদি কোনো বিপদ হয় তো? তুমি যেতে পারো। বান্দরবন, সিলেট, চট্টগ্রাম যেখানে ইচ্ছে। কিন্তু ভালো কোনো কর্ট্টেজে উঠো। পাহাড়ে উঠলো গাইড নিয়ে যাও। তুমি তা করো না। তাই আমার টেনশন হয়। এই জন্য তোমাকে নিষেধ দিয়েছি।’

ভ্রুঁ কুঁচকে রইলো রবি। কপালে তার সুরু ভাজ পরেছে। শুয়া থেকে উঠে বসে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘তুমি কিভাবে জানো আমি কোনো গাইড লাইন ছাড়া পাহাড়ে চড়ি?’

মৃদু ঠোঁট টেনে রহস্যময় হাসি দিল রোজিনা। বললো, ‘তুমি কি ভেবেছো আমি কিছু জানি না? অন্যান্য ট্রুরিস্টরা গাইডলাইন নিয়ে যায়।আর তুমি বাহাদুরি দেখিয়ে একা একা পাহাড়ে উঠো। আমার এতো টাকা থাকা শত্বেও তুমি সেখানে সাধারন ফল, খাবার খেয়ে দিন কাটাও। হুম! সেবার তুমি কাপতাই পাহাড়ে গিয়েছিলে তৃতীয় বারের মতো। তাও দুজন ফ্রেন্ডের সাথে। কোনো গাইডলাইন ছিল না।’

রবির মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে মানুষের কোনো প্বার্শ পতীক্রিয়া থাকে না। রবিরও তাই হয়েছে।

রবিকে অবাক হতে দেখে রোজিনা বললো, ‘এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমার একটা মাত্র ছেলে। তার কোনো ক্ষতি হোক আমি চাই না। সন্তানের বাবা হয়ে যাও তারপর পিতামাতার কষ্টটা বুঝতে তার আগে না।’

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ফুঁশ করে নিশ্বাস ফেললো। তারপর এগিয়ে রোজিনাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘আম্মু টেনশন করো কেন? আমি টেকিং করতে জানি। সব ধরনের টিপস আমার জানা আছে। তুমি টেনশন নিও না।’ রোজিনা কিছু বললো না। তার ছেলে এই জন্মে শুধরানোর নয়।

চলবে??

নোট : গল্পের রেসপন্স কমে গেছে কেন? ‘প্রেমানুরাগ’ গল্পটা কি আপনাদের ভালো লাগছে না? ইতি টেনে দিবো তাহলে? ওকে! হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here