প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ৬

0
1024

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৬
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো। সেই ব্যক্তির গলার স্বর তার কাছে পরিচিত মনে হলো। সে আর সাবা পেছনে ঘুরতেই দেখল তাদের থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। তার আর বুঝতে বাকি রইল না তাকে রুদ্রই ডেকেছে। রুদ্রকে দেখে রাহিয়া আর সাবা দুজনের মুখেই বিরক্তি ফুটে উঠল। তাদের পেছনে ঘুরতে দেখে রুদ্র তাদের দিকে তাকিয়ে এলো। ওদের দুজনের সামনে আসতেই সে বলে উঠল,

— আরে রাহিয়া তুমি! তুমি এখানে কি করো? কোনো কাজে যাচ্ছো?

কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল,

— হ্যাঁ ভার্সিটিতে কিছু কাজ আছে। সেজন্য সেখানে যাচ্ছি। তোমারও নিশ্চয়ই কাজ আছে। তুমি তাহলে সেখানে যাও। আমাকে আর সাবাকে যেতে হবে। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

— আচ্ছা যাও। পরে কথা হবে তোমার সাথে।

— হুম আসি।

বলেই সে সাবাকে নিয়ে ওখান থেকে দ্রুত চলে গেল। আর রুদ্র তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা দুজন রুদ্রের চোখের আড়াল হয়ে গেল। তখন সে সামনের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেল। রাহিয়া আর সাবা কিছুটা এসে পেছনে ফিরে দেখল রুদ্র আছে কিনা। পেছনে রুদ্রকে না দেখে রাহিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সাবা তখন ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— এই ছেলেটার আসলেই লজ্জা নেই। ওই দিন তোকে এতো কথা বলেছিল। তারপর এখন আবার তোর পেছনেই ঘুরছে। যখন দেখেছে প্রেমিকা হাত ছাড়া হয়ে গেছে, তখন এবার তোর পেছনে পড়েছে। ও ভেবেছে তুই এখনো তাকে পছন্দ করিস।

সাবার কথা শুনে সে কিছুটা হাসল কিন্তু মুখে কিছু বলল না। সাবা এবার তার দুই কাঁধে হাত রেখে বলে উঠল,

— তুই কি সত্যিই এখনো তাকে পছন্দ করিস?

— সে যে শুধু আমাকে ওইদিন এতো কথা বলেছে সেটা না। সে তো আমার ওই দেশে যাওয়া দিনও ম্যাসেজে অনেক কথা লিখেছে। আমি কখনোই চাইবো না তাকে আমি ভালোবাসি। আমি সম্পূর্ণ চেষ্টা করব তাকে আমার জীবন থেকে ডিলিট করার।

— এটাই ভালো হবে। আমি তোর সাথে আছি সবসময়।

কথাটা শুনে রাহিয়া একটা মিষ্টি হাসি দিল। তারপর নিজের থেকে সাবার হাত সরিয়ে বলে উঠল,

— এখন চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।

— হুম।

বলেই ওরা দুজনের ওদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গেল। ভার্সিটির কাজ শেষে রাহিয়া ওর বাসায় ফিরে এলো। বিকালে রাহিয়া বসে কাজ করছিল। তখন ওর রুমে ওর মা মিসেস নাদিয়া এলেন। ওনাকে দেখে রাহিয়া চশমা ঠিক করতে করতে বলে উঠল,

— আম্মু কিছু বলবে?

মিসেস নাদিয়া গিয়ে ওর পাশে বসলেন।

— রাহিয়া তুই কি খুব ব্যস্ত?

— না আম্মু তেমন কিছুই না। তুমি কি কিছু বলবে? বলতে চাইলে বলো আমি শুনবো।

— আসলে রাহিয়া কালকে তোর বোনের বাসায় আমাদের সবাইকে যেতে হবে। তুইও চল আমাদের সাথে।

কথাটা শুনে রাহিয়া কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে উঠল,

— সরি আম্মু আমি যেতে পারব না। আমার কালকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তুমি তো জানোই এতোদিন পর দেশে ফিরেছি। তাই আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।

— তুই আমাদের উপর রাগ করে যেতে চাচ্ছিস না?

কথাটা শুনে রাহিয়া তার জিনিসপত্র একপাশে সরিয়ে দিল। তারপর তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— আম্মু আমি ওই বিষয় নিয়ে সত্যিই রাগ করে নেই। এই দুই বছরে আমার অনেক বিয়েতে যাওয়া হয়নি। তাই এই বিষয় নিয়ে আমার একটুও রাগ নেই। আসলে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। নাহলে আমি ঠিকই যেতাম।

— চল না রাহিয়া। তুই তো ওর শশুর বাড়ির কারো সাথেই পরিচিত হতে পারিসনি। তোকে কালকে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতাম। তুই না গেলে সবাই অনেক কথা বলবে। তার থেকে চল আমাদের সাথে।

— কেউ কিছু বললে তাতে আমার কি? আর ওনাদের সাথে আমি পরে পরিচিত হয়ে নেব। কিন্তু আমার কালকে কিছু কাজ আছে। আমাকে ওগুলো সব শেষ করতে হবে। তাই তোমরা গিয়ে ঘুরে আসো। আমি কালকে বাসাতেই থাকব।

— তুই একদম তোর বাবার মতো। কিন্তু বাসার সবাই কালকে ওখানে যাচ্ছে। কালকে কেউ বাসায় থাকবে না। তুই একা একা বাসায় কীভাবে থাকবি?

— কোনো সমস্যা নেই মা। আমার একা থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই তুমি চিন্তা করো না। আমি বাসায় একাই ঠিক ভাবে থাকতে পারব।

— বুঝেছি তোকে এখন আর বললে হবে না। তাহলে তুই কালকে বাসায় থাকিস।

বলেই মিসেস নাদিয়া ওখান থেকে উঠে গেলেন। দরজার কাছে গিয়ে তিনি একবার পেছনে ফিরলেন। পেছনে ফিরে তিনি দেখলেন রাহিয়া কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। তিনি একবার তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলেন,

— রাহিয়া কি নিরার উপর কোনো কারণে রাগ করে আছে এজন্য যাচ্ছে না? রায়ানের কথা কি সত্যি? আমরা বাইরে থেকে ওদের সম্পর্কটা যেভাবে দেখি ওদের সম্পর্কটা কি আসলেই ওই রকম? নাকি ভেতরের সম্পর্কটা সম্পূর্ণ আলাদা?

কথাটা ভাবতে ভাবতে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। পরদিন বিকালের একটু পর রাহিয়ার বাসায় সবাই নিরার বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যাওয়ার আগে মিসেস নাদিয়া মেয়ের কাছে এলেন। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেন। তখনই আবার ফিরে এসে বলে উঠলেন,

— রাহিয়া কোনো সমস্যা হলে আমাদের কল দিস। আর রাতে সময় মতো খেয়ে নিস। আমরা কখন ফিরব এটা ঠিক নেই?

কথাটা শুনে রাহিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। একটু পরে বাসার সবাই বেরিয়ে গেল। তখন রাহিয়া দরজা লাগিয়ে রুমে চলে এলো। সে বিছানায় বসে মনে মনে বলতে লাগল,

— ওখানে গেলে একদিক দিয়ে ভালোই হতো। কিন্তু আমার তো অনেক কাজ আছে। এই কাজ না থাকলে ঠিকই যেতাম। দেখে আসতাম নিরার কেমন পরিবারে বিয়ে হয়েছে। যতই হোক সে আমার ছোট বোন তো। এছাড়া আমি না যাওয়ায় অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে বিশেষ করে নিরা। ও ভাবছে আমি হয়তো ওর উপর মন খারাপ করে বা কষ্ট পেয়ে আসিনি। কিন্তু এসব ভাবলেও এটা সত্যি না। আমি তো অন্য কারণে যাচ্ছি না। যাইহোক, আমি আমার কাজ শুরু করে দেই।

বলেই সে কাজ করতে শুরু করল। সন্ধ্যা দিকে রাহিয়া কিছুক্ষণের জন্য বারান্দায় গেল। ফিরে এসে সে যখনই বিছানায় বসতে যাবে তখনই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

— এখন বাসায় কে এলো? ওদের তো এতো তাড়াতাড়ি আসার কথা না। তাহলে বাসায় কে এলো?

বলেই সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর সে এসে দরজা খুলে দিতেই সামনে থাকা লোকটা বলে উঠল,

— আপনার একটা পার্সেল এসেছে।

কথাটা শুনে রাহিয়া অবাক হয়ে বলে উঠল,

— আমার পার্সেল?

— হ্যাঁ।

বলেই লোকটা তার হাতে পার্সেলটা দিয়ে চলে গেল। সে তখন মনে মনে ভাবল,

— আমি তো দেশে এসেছিই দুই দিন হলো। আর আমি তো কিছু অর্ডারও করিনি। তার মানে এটা আমার পার্সেল না। হয়তো বাসার অন্য কারো হবে।

কথাটা বলেই সে ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর দরজা লাগিয়ে বক্সটা ওঠাত গেল তখনই তার চোখ গেল বক্সের উপরে থাকা কাগজটার দিকে। সেখানে তার নাম দেখতে পেয়ে সে অবাক হয়ে গেল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here