প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ৪+৫

0
1312

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৪ ও ৫
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া কিছুটা পেছাতে গেলেই কারো সাথে ধাক্কা খেল। সে সাথে সাথে সরি বলে পেছনে ঘুরল। পেছনে ঘুরতেই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে সে কিছুটা চমকে গেল। সে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— রুদ্র তুমি! তুমি এখন এখানে কি করছ? তোমার তো আজকে বিয়ে থাকার কথা। তাহলে কি নিরার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে না?

কথাটা শুনে রুদ্র মলিন হেসে বলল,

— না। নিরার বিয়ে আমার সাথে হচ্ছে না।

— তুমি আর নিরা না একে অপরকে ভালোবাসতে। তাহলে বিয়েটা তোমার সাথে না হয়ে কার সাথে হচ্ছে? বাবা কি নিরাকে জো*র করে বিয়ে দিচ্ছে? নিরা কি এই বিয়েতে রাজি…

কথাটা পুরোটা বলার আগেই রাহিয়া থেমে গেল। তার হঠাৎ মনে পড়ল তার মায়ের কথা। তিনি বলেছিলেন ছেলে ভালো আর নিরা বিয়েতে রাজি বলেই বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি হচ্ছে। কথাটা মনে পড়তেই সে রুদ্রের দিকে তাকালো।

— তোমাদের মধ্যে কি কোনো ঝামেলা হয়েছিল? নাহলে নিরা তোমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করছে কেন? ও তো তোমাকে ভালোবাসে।

কথাটা শুনে রুদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

— হুহ ভালোবাসা! ওসব কিছুই ছিল না। ভালোবাসলে আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করত না।

— কিন্তু এসব হলো কীভাবে? তোমরা দুজন তো একে অপরকে অনেক ভালোবাসতে। হয়তো কোনো ভুল বোঝা হয়েছে। আমাকে বলবে কি হয়েছিল? তোমার যদি আমার কথায় খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমি দুঃখিত।

— সমস্যা নেই। আমার খারাপ লাগেনি। আর আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলাই হয়নি। সবই স্বাভাবিক ছিল। ও শুধুমাত্র আমার থেকে ভালো কাউকে পেয়ে গেছে বলেই আমাকে ছেড়ে তাকে বিয়ে করছে। এছাড়া আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি যে ও আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে।

— ওহ বুঝলাম।

রুদ্রের এসব কথা শুনে রাহিয়া মনে মনে ভাবতে লাগল,

— তার মানে নিরার বিয়ে রুদ্রের সাথে হচ্ছে না। ওদের সম্পর্কটা ভেঙে গেছে। আমি ভেবেছিলাম যে রুদ্রের সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে। তারপর কালকে বড়ো মামিকেও দেখিনি। এতে আরও আমি ভেবেছিলাম ওর সাথেই নিরার বিয়ে। কিন্তু বড়ো মামি বিয়েতে আসেননি কেন?

— আচ্ছা বড়ো মামিকে দেখছি না? উনি বিয়েতে আসেননি?

— না আসলে আম্মু একটু অসুস্থ। তাই আমি একাই এসেছি বিয়েতে।

— ভালোই তো প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ডের বিয়েতে এসেছো।

কথাটা শুনে রুদ্র কিছুটা অপ্রস্তুতভাবে হাসল। কারণ রাহিয়ার কথাটা তার তেমন পছন্দ হয়নি। রাহিয়া মনে মনে ওদের দুজনকে নিয়ে অনেক কথা ভাবছিল। তখনই পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল,

— রাহিয়া তুমি কি এখনো আগের সিমটাই চালাও? না মানে দেশে আসার পর কি তুমি সিম বদলেছো?

রুদ্রের কথা শুনে সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— না বদলাইনি। আমি এখনো আগের সিমই চালাই। আচ্ছা রুদ্র আমি এখন আসি। আমাকে অন্য দিকে যেতে হবে।

বলেই সে যেতে নিল। আর রুদ্র তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— আচ্ছা যাও। পরে কথা হবে।

কথাটা বলে সে আরও কিছু বলতো তার আগেই রাহিয়া ওখান থেকে চলে গেল। আর রুদ্র তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রাহিয়া ওখান থেকে ওর মায়ের কাছে গেল। মিসেস নাদিয়া মেয়েকে দেখে বলে উঠলেন,

— কিরে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি তুই? আমি তোকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে খুঁজছিলাম। কিন্তু তেমন কোথাও দেখতেই পেলাম না।

— আসলে রুদ্রের সাথে দেখা হয়ে গেল। অনেক দিন পর দেখা হলো তাই একটু কথা বললাম। আর মামির কথাও জিজ্ঞাসা করছিলাম।

— ওহ। আসলে ভাবি অসুস্থ তাই বিয়েতে আসেননি।

— হ্যাঁ আমি মাত্র শুনলাম রুদ্রের থেকে। আচ্ছা আম্মু একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল।

— হ্যাঁ বল।

— আচ্ছা আম্মু নিরার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে? ছেলে কি অনেক ভালো কেউ? না মানে এতো তাড়াতাড়ি দিয়ে দিচ্ছো? নিরা বিয়েতে রাজি ছিল তো?

— হ্যাঁ ছিল তো। আসলে এতো তাড়াতাড়ি ওকে বিয়ে দেওয়ার পক্ষে আমরা কেউ ছিলাম না। বাড়ির বড়ো মেয়ের বিয়ে না দিয়ে ছোখ মেয়ের বিয়েটা কেমন যেন দেখায়। কিন্তু তোর বাবাই তো বিয়ে দেওয়ার জন্য সবাইকে জোর করলেন। পরে যখন নিরা নিজেই রাজি হয়ে গেল। তখন কেউ আর না করতে পারল না।

কথাটা শুনে রাহিয়া মনে মনে বলল,

— হুম সব বুঝলাম। তার মানে নিরা রুদ্রকে কখনো ভালোই বাসেনি। এখন বুঝতে পারছি রুদ্র ঠিকই বলেছিল।

— ওহ। আচ্ছা আম্মু এখন একটু আসি।

বলেই সে ওখান থেকে বেরিয়ে নিরার কাছে গেল। যখন চারপাশ একটু ফাঁকা হলো রাহিয়া গিয়ে নিরার পাশে বসে পড়ল। ওকে দেখে নিরা রেগে বলে উঠল,

— ওখান থেকে ফেরার আর সময় পেলি না? আমার বিয়ের সময়েই তোকে ফিরতে হলো? কোনো ঝামেলা করার চিন্তাভাবনা নিয়ে এসেছিস তাই না? আমার বিয়েতে কোনো সমস্যা করলে তোর জন্য সেটা ভালো হবে না।

— তোর বিয়েতে সমস্যা করার কোনো ইচ্ছা নেই আমার। আর আমি তো জানতামই না আজকে তোর বিয়ে। তাহলে কালকে কখনোই আসতাম না। আরও কিছু দিন দেরি করে আসতাম।

কথাটা শুনে নিরা মুখ ঘুরালো।

— আচ্ছা তুই না রুদ্রকে ভালোবাসিস? তাহলে এখন অন্য কাউকে বিয়ে কেন করছিস? তুই অন্য কাউকে বিয়ে করলে ওর কি হবে?

— আমি এখন আর ওকে ভালোবাসি না। তাই তো অন্য কাউকে বিয়ে করছি। আচ্ছা আমি রুদ্রকে তোকে দিয়ে দিলাম। তুই এখন ওর সাথে সম্পর্কে যেতে পারিস।

কথাটা শুনে রাহিয়া হালকা হেসে বলল,

— ছোটবেলা থেকে তো তোর সবসময় আমার জিনিস পছন্দ হতো। তোর সবসময় আমার জিনিসের দিকে নজর থাকত। আমার পছন্দের জিনিস তুই নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতি। তারপর সেটা পেয়ে গেলে তুই আমাকে দোষ দিতি যে আমি তোর থেকে সবকিছু নিয়ে নেই। কিন্তু সত্যি তো এটাই যে তোর আমার জিনিসের প্রতি নজর, আমার তোর জিনিসের প্রতি নয়।

বলেই সে নিরার দিকে একটা চোখ টিপ দিয়ে ওখান থেকে উঠে চলে গেল। আর নিরা তার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। কারণ রাহিয়া কখনো তার সাথে এমনভাবে কথা বলেনি। বাইরে থেকে ফিরে সে অনেক বদলে গেছে। তাই তার এসব কথা নিরাকে খুবই অবাক করে দিচ্ছে। সে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নিরা সেদিকেই চোখ রেখে মনে মনে বলতে লাগল,

— এর আবার কি হলো? এ তো এমন ছিল না? হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলো কীভাবে? কেমন ভাবে কথা বলছিল আমার সাথে! আর সব কথার সাথে সাথেই উত্তর দিচ্ছিল। অন্য দেশে পড়ালেখা করতে গিয়ে দেখি মুখে ভালোই কথাটা ফুটেছে। যাইহোক, তাতে আমার কি?

বলেই সে একটা ভেঙ্চি দিল। দেখতে দেখতে নিরার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। সন্ধ্যার একটু আগে নিরাকে বিদায় দেওয়া হলো। যাওয়ার সময় সে অভিনয় করে রাহিয়াকে জড়িয়ে ধরেও কান্না করল। সে যে অভিনয় করছে সেটা রাহিয়া ভালো করেই বুঝেছে। সে রাহিয়াকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় তার কানে কানে বলল,

— তোকে আমি কখনোই ভালো থাকতে দেব না।

কিন্তু রাহিয়া তার কথায় কোনো পাত্তা দিল। রাতে ফিরে সে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে নিল। সে তার বিছানায় বসে কিছু কাজ করছিল। তখনই তার ফোনে একটা কল এলো। সে ফোন তুলতেই দেখল অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৫
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া ফোন হাতে তুলতেই দেখল অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে। সে ফোনটা ধরে কানে দিয়ে বলে উঠল,

— কে বলছেন?

তখনই অপর পাশের ব্যক্তি বলে উঠল,

— রাহিয়া আমাকে তুমি চিনতে পারছ না? এই নম্বরে তো আমি তোমাকে আগেও কল দিয়েছি। তোমার ফোনে তো আমার নম্বর থাকার কথা। তাহলে আমাকে চিনতে পারছ না কেন?

কথাটা শুনে রাহিয়া বুঝতে পারল এটা রুদ্র। এছাড়া সে রুদ্রের গলার স্বরটা খুব ভালো করেই চেনে।

— আসলে আমার ফোনে থাকা সব নম্বর মুছে গিয়ে ছিল। তাই তোমার নম্বর ফোনে ছিল না। তারপর আর তোমার নম্বর ফোনে নেওয়া হয়নি। এজন্যই হয়তো চিনতে পারিনি।

— ওহ এবার বুঝেছি। তাহলে এখন এই নম্বরটা সেভ করে রাখো।

— আচ্ছা। কিন্তু তুমি কি কিছু বলার জন্য কল দিয়েছ? না মানে হঠাৎ কল দিলে তো তাই জিজ্ঞাসা করলাম যে কোনো দরকার কিনা।

— না তেমন কিছু না। এই একটু তোমার সাথে বলতে ইচ্ছা করছিল।

কথাটা শুনে রাহিয়ার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠল। সে তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র আবারও বলে উঠল,

— রাহিয়া তুমি দেশে কবে ফিরেছো? তুমি যে এসেছো সেটা তো আমি জানতামই না। আজকে সকালে দেখা হওয়ায় বুঝতে পারলাম যে তুমি এসেছো?

— কালকে এসেছি।

— ওহ। তা এখানে কি নিরার বিয়ের জন্য এসেছিলে? তুমি কি একবারে চলে এসেছো এখানে? নাকি আবার ওখানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে?

কথাটা শুনে রাহিয়া একরাশ বিরক্তি নিয়ে মনে মনে বলল,

— আরে এই ছেলেটা তো কথা থামাতেই চাচ্ছে না। ফোন ধরার পর থেকে বলেই যাচ্ছে আর বলেই যাচ্ছে। আমাকে কল কা*টার সুযোগই দিচ্ছে না। এদিকে হঠাৎ করে কথা না বলে কল কেটে দিলে ভাববে আমি তাতে এখনো পছন্দ করি। তাই রাগ করে তার সাথে কথা বলছি না। না আমাকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকতে হবে?

তারপর সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলতে শুরু করল,

— না এখন থেকে আমি এখানেই থাকব। আর ওখানে কাজ শেষ বলেই আমি এখানে ফিরে এসেছি, নিরার বিয়ের জন্য নয়। আসলে আমি তো জানতামই না আজকে নিরার বিয়ে ছিল। এখানে এসে জানতে পারলার।

— ওহ।

কথাটা বলে রুদ্র আরও কিছু বলতে যেত। কিন্তু তার আগেই ওকে বলতে না দিয়ে রাহিয়া বলে উঠল,

— আচ্ছা রুদ্র শোনো আমি না খুবই ব্যস্ত। তোমার যেহেতু তেমন প্রয়োজনীয় কোনো কথা নেই তাহলে আর এখন রাখি। আমার বেশ কিছু কাজ আছে আর আম্মুও আমাকে ডাকছেন।

— আচ্ছা। পরে কথা…

রুদ্র বাকি কথা বলার আগেই সে কল কেটে দিল। রুদ্র মন খারাপ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। রাহিয়া ফোন হাতে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর সে সেদিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

— একে আমি ভালো ভাবতাম। কিন্তু এ তো দেখছি নিরার থেকে একটু বেশিই খারাপ। কেমন অভদ্রের মতো ব্যবহার করছে! এসব দেখলে আমার নিজের উপরই রাগ হয়। আমি কিনা এই রকম একটা ছেলেকে পছন্দ করতাম! ছিঃ! আমার পছন্দ এতো খারাপ ভাবতেই আমার অসহ্য লাগছে।

বলেই সে ফোনটা রেখে দিয়ে কাজে মন দিল। দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বিছানায় বসে আছেন রাহিয়ার বাবা রায়ান। তখনই ওখানে ওনার স্ত্রী মিসেস নাদিয়া এলেন। মিসেস নাদিয়া এসে ওনার কাধে হাত রাখলেন। ওনাকে দেখে রায়ান সোজা হয়ে বসলেন। তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— কিছু বলবে?

— মেয়ের জন্য যখন এতোই চিন্তা, তাহলে ওকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলে কেন?

ওনার কথা শুনে রায়ান কিছু বললেন না শুধু চুপ করে শুনতে লাগলেন। মিসেস নাদিয়া আবারও বলে উঠলেন,

— কি হলো? কিছু বলছো না যে? সত্যি বলতে বড়ো মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এটা নিয়ে অনেক মানুষ অনেক কথা বলছে।

কথাটা শুনে তিনি ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি এনে বললেন,

— বলুক। ওদের যত ইচ্ছা বলতে দাও। ওদের বলায় আমাদের কিছুই হবে।

— কিন্তু এর জন্য সবাই রাহিয়াকে উল্টাপাল্টা কথা বলছে। তুমি বরং রাহিয়ার বিয়ের পর ওর বিয়ে দিতে। ছেলেটা এমন কিছুই নয়। একটু রাহিয়ার বিয়ে হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই পারতে। তার উপর খুবই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলে। এতো তাড়াতাড়ি ঠিক করলে যে রাহিয়াকেও বলার সময় পাইনি। এভাবে না দিয়ে একটু সময় নিয়ে দিলেও পারতে।

— না পারতাম না। যেহেতু ভালো ছেলে পেয়েছিলাম তাই ভাবলাম আগে আগেই দিয়ে দেই। আর আমি তো চাচ্ছিলাম রাহিয়া ফেরার আগেই বিয়েটা দিয়ে দিতে। যদিও রাহিয়া বিয়ের আগের দিন ফিরেছে তবে এতে কোনো সমস্যা হয়নি।

কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া অবাক হয়ে বলে উঠলেন,

— কিন্তু কেন? রাহিয়া বিয়েতে থাকলে কি সমস্যা হতো?

— রাহিয়া বিয়েতে থাকলে কি সমস্যা?

— রাহিয়া বিয়েতে থাকলে কোনো সমস্যা নেই। আমি শুধু রাহিয়া আসার আগে নিরাকে বিয়ে দিতে চেয়েছি।

মিসেস নিরা এবার কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন,

— আমি তো সেটাই তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি? কেন? কেন তুমি রাহিয়া আসার আগেই বিয়েটা দিতে চাচ্ছিলে?

— কারণ আমি চাই না নিরা আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করুক। তাই ও ফেরার আগেই আমি নিরা বাসা থেকে অন্য কোথাও পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করছিলাম। তখন ভালো ছেলে পেয়ে যাওয়ায় বিয়ে দিয়ে দেই।

— এসব তুমি কি বলছো? নিরা কেন রাহিয়ার ক্ষতি করবে? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

— না আমার কোনো ভুল হচ্ছে না। নিরা সবসময় আমার মেয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। ছোট থেকেই সে রাহিয়ার সবকিছুতে ভাগ নেওয়ার চেষ্টা করে। আর রাহিয়া আমার অনেক আদরের মেয়ে। নিরাকে আমি ভালোবাসলেও সে আমার মেয়ের ক্ষতি করুক সেটা আমি কখনোই মেনে নেব না। তাই তো এই বিয়েটা আমি নিরার হাত থেকে রাহিয়াকে রক্ষা করার জন্য দিয়েছি।

কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া ছলছল চোখে বলে উঠলেন,

— তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে? নিরা এমন মেয়ে না। ও ওর বোনের কোনো ক্ষতি করতেই পারেনা। আর তুমি যেসব বলছো ওগুলো বোনদের মধ্যে হয়েই থাকে। তাই বলে তুমি এমন বলতে পারো না?
নিরাও তো তোমার মেয়েই হয় তাই না?

— হ্যাঁ। কিন্তু তাই বলে সে তার বড়ো বোনের ক্ষতি করবে সেটা আমি কখনোই চাইবো না? আমি রাহিয়াকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি। তাই তার ক্ষতি করলে আমি কাউকেই ছাড়ব না। আর আমি খুব ভালো করেই জানি নিরা এসব হিং*সার জন্য করে।

— তোমার এমন কেন মনে হয়?

— কারণ আমি নিরার চোখে রাহিয়ার জন্য হিংসা দেখেছি। আমি সবসময় এই বিষয়টা খেয়াল করেছি যেটা তুমি করোনি।

— তুমি তো ভুলও হতে পারো।

— না আমি ভুল না।

কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে গেলেন। আর রায়ান ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। পরদিন সকালে রাহিয়া সাবাকে নিয়ে কিছু কাজের জন্য ভার্সিটিতে গেল। যাওয়ার সময় সে সাবাকে গতকালের ঘটে যাওয়া সব কথা খুলে বলল। সব শুনে সাবা বলে উঠল,

— যেহেতু রুদ্র এখন সিঙ্গেল, তুই কি এখন তার কাছে ফিরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছিস? দেখ আমি কিন্তু এতে তোকে সমর্থন করবো না।

কথাটা শুনে রাহিয়া হালকা হেসে বলে উঠল,

— তোর কি আমাকে এমন মনে হয়?

— তুই একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। এজন্যই তো তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। কাউকে ভালোবাসা অপরাধ না। কিন্তু ও তো শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি। সাথে তোকে আরও অনেক কথা বলেছে। তাই তোর উচিত ওকে আর পাত্তা না দেওয়া।

কথাটা শুনে রাহিয়া কিছু বলতে যাবে। তার আগেই তাকে পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here