প্রতিদান পর্ব ১১

0
1432

#প্রতিদান

পর্ব:11
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

হোস্টেল এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর দুপুর এর খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম।এমন ঘুম দিলাম উঠে দেখি সন্ধা সাতটা বাজে।মোবাইল হাতে নিতেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্হা। মরিয়ম এর নাম্বার থেকে প্রায় 56টা কল মিসকল হয়ে আছে।আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম তারপর তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলাম।
হ্যালো মরিয়ম কিরে এত্ত গুলা কল দিলি তোর ছোট সাহেব ঠিক আছে তো?ওর কিছু হয়নিতো?(মুনতাহা)

আফা আপনে জলদি বাসায় আসেন।অনেক বড় সর্বনাশ হোইয়া গেছে।স্যারের অবস্হা ভালা না মারামারি কোইরা আইছে।গালে আর হাত পায়ে মাইর এর দাগ আর ঠোঁটে রক্ত ও দেখছি।আইসা রুমে চোইলা গেছে।এর কিছুক্ষণ পর হের চাচা আইছে।উনি ও রাগ নিয়া বোইসা রোইছে।আমি হের চাচারে পানি দিছিলাম হেই পানির গ্লাস ফিককা মারছে।আফা জলদি আসেন সেই বিকাল থেকে আপনারে কল করতাছি।(মরিয়ম)

আচ্ছা আমি আধা ঘন্টার মধ্যেই আসছি।তুই দেখ আসফি যেন ঘর থেকে এখন বের না হয়।বের হলে কেলেঙ্কারি কান্ড বেধে যাবে।(মুনতাহা)

আচ্ছা আফা।(মরিয়ম)

মরিয়ম এর সাথে কথা বলেই আমি প্লাবন কে কল করলাম।
হ্যালো প্লাবন দোস্ত তোর বড় দাদা কোথায় রে?(মুনতাহা)

ডিউটি তে আছে।হঠাৎই দাদার খবর কেন নিচ্ছিস তাকে কি প্রয়োজন?(প্লাবন)

আমি একটা জিটি করতে চাই রাইট নাও।তুই একটু তোর দাদার অফিসে যাবি প্লিজ। তোকে দিয়েই জিটি করাবো আমি সব বলে দিব ফোনে ।তুই অফিস গিয়ে কল দিয়ে তোর দাদাকে ধরিয়ে দিবি প্লিজ। (মুনতাহা)

হঠাৎই কি হল এমন?(প্লাবন)

খুব বেশি জরুরী প্লিজ দোস্ত যাবি প্লিজ। আমার একটু অন্য কাজে যেতে হবে প্লিজ না করিস না।(মুনতাহা)

ওকে আমি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে কল করছি।এখন রাখি বাই।(প্লাবন)

ওকে।
প্লাবন আমার ফ্রেন্ড। ও হিন্দু ধর্মের ওর বড় দাদা মানে বড় ভাই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আছে।আসফির উপর ওরা যে এত্ত তাড়াতাড়ি এটাক করবে বুঝতে পারিনি।আমিতো ভাবলাম আমার উপর আগে এটাক করবে।তাইতো আসফির বাড়ি ছেড়ে হোস্টেল এ উঠলাম। নাহলে আমার বরটাকে রেখে আমি আলাদা থাকতে পারি।যাইহোক এখন জলদি আসফির বাড়ি যেতে হবে।গিয়ে দেখি আমার পাগলটার কি অবস্হা। তিহান এর বাচ্চা তরে পাইলে আমি কুচিকুচি করব।আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিল। আচ্ছা ওর চাচা আজকেই আসল কেন ও আবার ওর চাচার বিরুদ্ধে কেস করে নিতো।সর্বনাশ হয়ে যাবে যে।এই ব্যাটা আসফি না বুঝে উল্টা পাল্টা কিছু করে না বসে।যাই আগে দেখি কি অবস্হা!!
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলাম। তারপর রিক্সা নিয়ে ওয়ারি চলে গেলাম। বাড়িতে প্রবেশ করতেই চাচার সাথে দেখা।দূর ছাই এখন আবার এর সামনে কেন যে পড়লাম!(মুনতাহা)

এই মেয়ে শোন তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি ?খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় দেখেছি বল শুনি?(চাচা)

আমাকে কথায় আবার দেখবেন।আমিতো ডাক্তার মাত্র আসলাম আসফির চিকিৎসার জন্য। (মুনতাহা)

কেন তার আবার কি হলো?এই যে আমি দুই ঘন্টা যাবত বসে আছি সে তো রুম থেকে বের এই হচ্ছে না।কত্ত বড় সাহস আমার নামে জিটি করছে।আমি নাকি ওরে খুন করতেই চাইছি?আমার একমাত্র পোলাটা মোইরা গেছে।এই আসফি ছাড়া বংশের আর কে আছে?আমি কেন ওরে মারতে যামু। পাগল হোইয়া দুইবছর পড়ে আছিল।এখন ভাল হতে না হতেই আমার পিছন বাশঁ নিয়া ঘুরতাছে।কেনরে আমি তোর কোন পাকা ধানে মৌ দিছি?(চাচা)

দূর ছাই এই লোকটা দেখি রাজনীতি করতে করতে বাচাল হয়ে গেছে। থামার কোন নাম এই নিচ্ছে না।
চাচা শুনুন আসফির কোথাও ভুল হয়েছে।আমি গিয়ে কথা বলছি আপনি রাগ করিয়েন না।(মুনতাহা)

তুমি ডাক্তার মানুষ ওর সাথে কি কথা কোইবা?(চাচা)

আসলে আমি ওর বউ।এখন চুপচাপ এখানে বসুন আমি আপনার ভাইসতাকে দেখে আসি।এই মরিয়ম চাচা কে শরবত দে ।তারপর চা আর নাস্তা দে।আমার চাচা শশুর এত্তক্ষণ না খেয়ে বসে আছে এত্তক্ষণ কিছু দেস নাই কেন?(মুনতাহা)

চাচায় তো খাইতে_(মরিয়ম)

আচ্ছা বাদ দে এখন চাচাকে খাবার দে উনি খাবেন।আমি তোর ছোট সাহেব কে দেখে আসি।(মুনতাহা)

এইটা আসফির বউ?এত্ত সুন্দর মাইয়াডারে আব্বা পাগলটার সাথে বিয়া করায় আনছিল?(চাচা)

এখন তো ছোট সাহেব পাগল নাই। এখন সে সুস্থ আছে।ডাক্তারি ও শুরু করছে।(মরিয়ম)

তোরে কথা বলতে বলছি যা আমার জন্য চা নিয়ে আয়।(চাচা)

আচ্ছা। (মরিয়ম)

আসফির গেট বন্ধ করা।কয়েকবার নক করলাম কিন্ত ভেতর থেকে কোন শব্দ পেলাম না।তারপর আমি আবার নিচে এসে রুমের আরেকটা চাবি নিয়ে গিয়ে গেট খুললাম। অন্ধকার রুমে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।রাত আটটার মত বাজে রুমের লাইট বন্ধ বলে রুমটা পুরো অন্ধকার। সিগারেট এর গন্ধে রুমটা গুমোট বেধে আছে।বারান্দা ও জানালা বন্ধের কারনে রুমটা গরম হয়ে আছে।ছোট আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আমি রুমে ঢুকে লাইট ধরিয়ে দিলাম। (মুনতাহা)

হঠাৎই লাইটের আলোতে চোখ ধাদিয়ে গেল।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করেই চোখ খুলে দেখি মুনতাহা রুমের গেট বন্ধ করে বারান্দার গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বারান্দার গেট খুলে জানালা দুইটা খুলে দিল তারপর এসি বন্ধ করে ফেন চালিয়ে দিল।এত্তক্ষণ এ আমি উঠে বসলাম। হঠাৎই ওর আগমন এর কারণ আমার কাছে স্পষ্ট। নিশ্চিত মরিয়ম ওকে কল করছে।শুধু শুধু আমার শত্রু দের ঝামেলা ওর উপর দিতে চাচ্ছি না।তাই ওর হোস্টেল এ থাকাই শ্রেয়।
তোমার সাহস তো কমনা !এই তুমি কে কেন এসেছ আমার বাড়িতে পারমিশন ছাড়া আমার রুমে ঢুকলা কিভাবে?(আসফি)

সাহসের দেখছ কি এখন দেখবা সাহস কত্ত প্রকার কি কি?
ওর সামনে গিয়ে হঠাৎই ওর হাতের থেকে সিগারেটটা নিয়ে সাইটের বাটিতে ফেলে নিভিয়ে দিলাম। ও রেগে চিৎকার করে উঠল। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আলমারির দিকে অগ্রসর হলাম। ওর ঠোঁটের রক্ত শুকিয়ে আছে।ও ডাক্তার মানুষ নিজের এমন অযত্ন করলে চলবে।শার্টের মধ্যে মাটি ও লেগে আছে।তাই আলমারির থেকে গেঞ্জি টাওজার আর ঔষধ এর বক্স নামাতে গেলাম ।হঠাৎই আসফি এসে আমাকে আলমারির সাথে দুই হাত চেপে ধরল। ব্যাথা দেওয়ার চেষ্টা করছে।যাতে রাগ করে চলে যাই।আর বিপদ গুলো ও একাই ম্যানেজ করতে পারবে।
পুরান পদ্ধতি অবলম্বন করে লাভ নেই আমি আর যাবনা।আর বাই দা ওয়ে যারা তোমাকে বারবার মারতে চাইছে তারা তোমার চাচার লোক না সে এই সব এর কিছুই যানেনা।
এই কথা বলতেই ওর হাত হালকা হয়ে আসল।আমার দিকে কেমন প্রশ্ন বন্ধ চোখে তাকিয়েই আছে।আমি হাত ছাড়িয়ে আস্তে করে ওর গালে রাখলাম। হঠাৎই ও চোখ বন্ধ করে নিল।
আমার সকল বিপদ তোমার উপরে এসে পড়েছে।আমার এই ভুল হয়েছে তোমাকে সাবধান না করে সরে গেছিলাম। এই ভেবে তোমার থেকে দূরে থেকে যেন তোমাকে সকল বিপদ থেকে মুক্ত রাখা যাবে।আমি ভুল ছিলাম।আমার উচিত হয়নি।আর সেইজন্য এটাক টা ওরা করতে পারছে ।দেখ এখন আমি এসে গেছি ওকে আবার পুলিশে দিব।(মুনতাহা)

ও কি বলছে সব মাথার উপর দিয়ে গেল!ওর শত্রু আসে কোথা থেকে ?আর আমাকেই বা মারতে চাইবে কিভাবে!
বুঝায় বল কি বলছ?আমি বুঝি নাই!(আসফি)

হুম বলব তো।আগে ফ্রেস হবা দেন আমি তোমার ট্রিটমেন্ট করতে করতে বলব সব।এখন যাও ফ্রেস হয়ে আসো।(মুনতাহা)

ওকে।
তারপর আমি ফ্রেস হয়ে আসলাম এসে দেখি মুনতাহা বসে ফোনে কথা বলছে।জিটি করার কথা বলতেছে।প্রথমে বুঝলাম না কি বলছে।তাই ওর সামনে গিয়ে বসলাম (আসফি)

আচ্ছা প্লাবন আমি তোর দাদাকে বলছি এখন একটু তুই জলদি এর ব্যবস্থা করতেবল।এখন রাখি পরে কথা বলছি বাই।
কথা শেষ করে আসফির দিকে তাকালাম।চুল গড়িয়ে মুখে পানি পড়ছে না মুছে আমার পাশে বসে আছে।আমি দাড়িয়ে ওর সামনে গিয়ে চুল মুছতে লাগলাম। তারপর ঔষধ নিয়ে লাগাতে লাগলাম। ও এত্তক্ষণ চুপ এই আছে।(মুনতাহা)

মুনতাহা বললে নাতো কোন শত্রু কার পেছনে পড়েছে?(আসফি)

হুম বলছি।এর আগে বলতো দুপুর এ খেয়েছ কিনা?(মুনতাহা)

এখন প্লিজ বল।খাবার এর কথা না বললেই নয়।(আসফি)

তোমার খেতে হবে সাথে আমিও খাব ওয়েট।
এই মরিয়ম দুইকাপ চা দিয়ে যাতো।(মুনতাহা)

আচ্ছা আফা আসতাছি।(মরিয়ম

আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম ওর মুখে বিরক্তের ছাপ নিয়ে বসে আছে।মরিয়ম কিছুক্ষণ পর চা দিয়ে গেল। ও না চাইতেও চা টা খেল।আমি চা বিস্কুট খেয়ে নিলাম। (মুনতাহা)

এত্ত সিরিয়াস সময় এ তোমার এত্ত আস্তে খেতে হয়।জলদি খাও।আমাকে সবটা খুলে বল ।(আসফি)

হুম বলছি।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় দশবছর আগেই।আমার বাবাকে খুন করার পর আমার মা তার প্রাক্তন এর হাত ধরে আমাকে নিয়েই চলে আসে।তারা বিয়ে করে।লোকটা আমার মায়ের সব ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে পারত।আমাকেও ভালো স্কুল এ ভর্তি করানো হয়।সব ঠিক এই ছিল কিন্ত আমি বড় হতে শুরু করি আর এই দিকে দুই জন এর নজর আমার উপর পড়ে।একজন তোমার চাচাতো ভাই সে আমার সৎ বাবার রাজনৈতিক পার্টনার ছিল। আর অন্য জন সৎ বাবার ভাই পো।ওর বয়স তখন বিশ এ পড়েছে।এর মধ্যেই দুইটা রেপ কেস ঝুলছিল।নেশার জগতের সাথে পুরোপুরি আসক্ত হচ্ছিল ।আমার তখন পনের বছর এ পা দিল। তোমার ভাই রিফাত চারটা বিয়ে করার পর ও আমাকে বিয়ে করতে চায়।আমার সৎ বাবা রাজী হয়ে যায়।মা বাধা দিলে আমার সামনেই রাগের বশে উনি আমার মায়ের গলা চেপে ধরেন।আর আমার মায়ের মৃত্যু হয়ে যায়।আর দ্বিতীয় বাধা দেয় ওনার ভাইপো তিহান। কিন্ত উনি তিহান কে কয়েকটা থাপ্পর মেরে বলেন ওর জন্য রাজনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়না উনি।আর তাই আমাকে জোড় করে কাজি অফিস নিয়ে যাওয়া ধরেন ।কিন্ত তিহান ওর বন্ধুদের নিয়ে আমার চোখের সামনেই দুইজন কে মেরে ফেলে।তারপর আমাকে নিয়ে যায় বিয়ে করবে বলে।কিন্ত তুমি তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ওদের খুজেঁ বের কর আর ওদের ধরিয়ে দেও।আর আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা পাঠাতে সাহায্য কর।তুমি তখন ডাক্তারি পরে মাত্র আসছিলা বাংলাদেশে আমেরিকার থেকে।যাইহোক তারপর তোমার হসপিটাল জয়েন আর ইষানি আপুর সাথে প্রেম কিভাবে হলো এটা জানিনা।তবে তোমাদের বিয়ের দুইদিন আগেই তিহান কে ওর বাবা জামিন করিয়ে আনেন।বিয়ের দিন এক্সসিডেনটা
তিহান করিয়েছিল। তবে তুমি বেঁচে আছ এইটা ও জানতো না।কারণ দাদা সব বেচে ঢাকা চলে আসেন।আর তোমাকে ঘরেই রাখা হয়।তিহান আমার কথা ভুলেই গেছিল ওর রাজনৈতিক কাজের প্রেসার এ।আমাদের বিয়ের পর একদিন তোমাকে নিয়ে হসপিটাল গেছিলাম দাদা তখন চট্টগ্রাম এ।ঐদিন কিভাবে যেন ওর চেনা কেউ আমাদের দেখে ফেলে।আর ওর কাছে এই খবর যেতেই ও আবার আমাদের এক্সসিডেনট করায়।তবে ও আমাকে নিয়ে যেতে আসছিল কিন্ত অনেক লোক জড়ো হয়ে যাওয়ার কারণে ও ঐ অবস্হাতেই আমাদের রেখে চলে যায়।এরপর থেকে আমাদের পিছনে একজন কে লাগানো হয়েছিল। সব খবর রাখার জন্য। আমরা চট্টগ্রাম যাওয়ার পর তোমার থাপ্পর খেয়ে যখন আমি হোটেলে খেতে বসি একজন এসে আমাকে সাবধান করে।যাতে পালিয়ে যাই।তখন আমি হিজাব পরে বাইরে আসতেই দেখি একজন আমাকে ফলো করছে তাই দৌড়ে তোমার কাছে এসেছিলাম।তারপর ঢাকায় আসার পর ও ঐ লোককে বার কয়েক দেখেছি।কালকে রাতে অপারেশন এর পর ঐ লোককে ধরেছিলাম আমার ফ্রেন্ড সজল কে নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করিয়েছিলাম।মেরে হসপিটাল ভর্তি করিয়েছিলাম।আমি সকাল হতেই হোস্টেল এ যাই ।কিন্ত পরে গিয়ে জানতে পারি ও পালিয়েছে। আর আজকেই তোমার উপর ওহামলা করিয়েছে।তাই জিটি করালাম।কিন্ত তুমি চাচার নামে কেন কেস করলে?(মুনতাহা)

*******************(চলবে)**************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here