প্রতিদান পর্ব ১০

0
1503

#প্রতিদান

পর্ব:10
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

মেডিক্যাল যাওয়ার পর প্রফেসর এর সাথে গিয়ে ক্লাসে সবার সাথে পরিচিত হলাম। তারপর ক্লাস করিয়ে সবাই কে নিয়ে কিছু বেসিক বিষয়ে আলোচনা করলাম।মোট তিনটা ক্লাস করিয়ে অফিস রুমে চলে আসলাম।
সব ডাক্তার দের আলাদা চেম্বার আছে।তাও সব ডাক্তার ও প্রফেসর দের জন্য অফিস রুমের ব্যাবস্থা করা আছে।ডাক্তার জাকির এর সাথে কথা বলছিলাম। উনি আমার থেকে আট বছরের সিনিয়র ।ডাক্তার মালিহা ওনার ওয়াইফ। দুইজন কলেজ লাইফ থেকে একে ওপরের সাথে আছে।ডিউটির চাপ খুব থাকলে ভালোবাসার রং গুলো যেন মুরছে না যায় সেই জন্য মাঝেমধ্যেই ট্যুর দেন।কালকে এক সপ্তাহ এর জন্য ইন্ডিয়া যাবেন।সেই নিয়েই আলোচনা চলছিল।
হঠাৎই অফিস গেটের সামনে মুনতাহার উকি ঝুঁকি খেয়াল করলাম। আমি আছি বলে হয়তো আসছে না।
ডাক্তার জাকির আমার ক্লাস আছে এখন উঠি পড়ে জমিয়ে কথা বলব।(আসফি)

ওকে।(হ্যান্ড সেক করে জাকির)

আমি অফিস রুমে উকি দিয়ে দেখি আসফি জাকির স্যারের সাথে কথা বলছে।হঠাৎই আমাকে দেখতে পেয়ে দাড়িয়ে গেল তারপর স্যার এর সাথে হ্যান্ড সেক করে আমার সামনে দিয়ে বাইরে চলে গেল।
কত্ত ঢং দেখলাম হুম(মুনতাহা মুখ ভেংচি কেটে)

মুনতাহার কথা শুনে একবার ওর দিকে তাকাতেই ও দৌড়ে অফিস রুমে ঢুকে গেল।আমি ঢং করি তাইনা।পেছনে পড়ে থাকলে ভাল লাগেনা,ভালোবাসতে চাইলে ভাল লাগেনা আবার ইগনোর করলেও বলে ঢং করি।এই মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে সিওর। একে ডাক্তার দেখাতে হবে।এর সাথে অভিমান করে ও শান্তি পাচ্ছি না।দূর কোথায় যে যাই।এসব ভাবতে ভাবতেই হাটঁ ছিলাম ।হঠাৎই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে গেল।
সরি সরি আমি খেয়াল করিনি।আপনার কোথাও লাগে নিতো?(আসফি)

হুম (আগুন্তক)

বলছি আপনার কোথাও লাগেনিতো?(আসফি)

হ্যা লেগেছে এই খানে।আপনি কোথায় থাকেন,কি করেন,এখানে কি করছেন?(আগুন্তক)

পাগল নাকি আপনি?দূর সব পাগলের সাথেই কেন আমার দেখা হতে হবে?বিরক্ত !(আসফি)

স্যার ম্যাম এক সপ্তাহের জন্য ইন্ডিয়া যাবেন।ম্যাম এর পাচঁজন পেসেন্ট আছে।তাদের রিপোর্ট গুলো ডাক্তার নাসরিন কে দেওয়ার জন্য আমাকে ডাকলেন স্যার।ম্যাম আজকে আসেন নি স্যারের হাতেই ফাইল দিয়ে পাঠিয়েছেন। আমি ফাইল গুলো নিয়ে ম্যাম এর কাছে দিয়ে আসলাম। তারপর সব ফ্রেন্ড গুলো ক্লাসে গিয়ে বসলাম। আজকে ইন্টারনি করা হয়নি।ক্লাসে এসে বসতেই সিফা দৌড়ে আসল।এসেই আমাদের ধরে ধরে এক কথাই বলছে দোস্ত আমি শেষ।
কি হয়েছে বলবিতো কি তখন থেকে এক কথাই বলছিস?(চিৎকার করে মুনতাহা)

দোস্ত আমি শেষ।রিদ স্যারের পর এই দ্বিতীয় বারের মতো আমি কারো উপর ক্রাশ খাইলাম। কি যে হ্যান্ডসাম কি বলব।ছোট ছোট চুল হাল্কা ফর্সা গায়ের রঙ আর হালকা চাপ দাড়ি।উফফ দোস্ত প্লিজ তোরা আমাকে ঐ ছেলেটাকে এনে দে প্লিজ!(সিফা)

দূরে গিয়া মরতো। বিরক্ত কর অসভ্য মহিলা।আমাদের হুদাই ভয় দেখাইলি।আমি ভাবলাম কি না কি?তা ছেলেটা কে ,কোথায় পেলি?(বিরক্ত হয়ে মুনতাহা)

মেডিক্যাল এর নতুন প্রফেসর ডাক্তার আসফি শেখ।বুঝলি মুনতাহা এইবার ও আর ক্রাস খাওয়ার মানুষ পেলো না মেরিড পার্সোন এর উপর এই ও বারবার ক্রাস খায়।কেনরে বোইন আমাদের মত বেচেলাররা কি অপরাধ করছি বলতো?(হতাশ কন্ঠে সজল)

উনি ও মেরিড!দূর ছাই সব সুন্দর হ্যান্ডসাম পোলা গুলাই বিয়ে করে ফেলছে।আমার কপালে কি যে ঝুটে আল্লাহ মালুম!প্রায় কান্না করে সিফা)

থাক বোইন কান্না করিস না তোর জন্য আমাদের সকলের ফেভারিট হিরো আলম আছে।ওর সাথেই তোকে বিয়ে দিব।তাও প্লিজ পেনপেন করিস না।(সজল)

তোরে আমি কাচা চাবায় খাব সজল এর বাচ্চা। (সিফা চিৎকার করে)

দূর থামতো তোরা।এত্ত পেচাল কিভাবে পারোস দুই ভাই বোন মিলে যাতো সর আমি পড়তে বসব।চিৎকার করে(মুনতাহা)

হো পড়েন বিদ্যা নদী আফা।আমরা বরং যাই লক্ষিবাজার থেকে ঘুরে আসি।(প্লাবন)

সজল একটু পরে যাতো তোর সাথে কথা আছে।(মুনতাহা)

আচ্ছা তোরা এগিয়ে যা আমি আসছি।(সজল)

সবাই যেতেই সজল কে এত্ত গুলা থ্যাঙ্কস দিলাম আমার কথা রাখার জন্য। আসলে ও প্রথম দিন হসপিটাল এ আসফি কে আমার সাথে দেখে সন্দেহ করে জিজ্ঞেস করেছিল। তাই ওকে সবটাই বলতে হয়েছে। কিন্ত ও কথা দিয়েছিল কাউকে এই ব্যাপারে বলবেনা আমি না বলা পর্যন্ত। তাই বলে ওর কথা রাখতে ওর ফুফাতো বোন কেও বলেনি তাই এত্ত গুলো থ্যাঙ্কস দেওয়া।আমাদের ফ্রেন্ড গুলা সবাই খুব মিশুক ও উপকারী পরায়ন।ভবিষ্যত এর ডাক্তার হিসেবে সবাই পারফেক্ট। কারন পরোপকারী মনোভাব না থাকলে ডাক্তার হওয়া পসিবল না।আমি আবার সবার থেকে পড়ার ব্যাপারে খুতখুতে তাই আমার নাম দিয়েছে বিদ্যা নদী।কারণ সাগর তো ছেলেদের নাম তাই।এতে আমার কি আমি সর্বদাই টপ থাকতে চাই।গত দুই বছর এ আমি এই টপ করেছি।আশা করি আল্লাহর রহমতে পরের সব গুলো পরীক্ষায় টপ করবোই করব।কিন্ত জীবনের পরীক্ষার মধ্যেই ঝুলে ঝাপটে আছি কোন রকম। সজল চলে যেতেই পড়তে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর লাঞ্চ করতে বেরিয়ে আসলাম।শরীর টা একটু খারাপ লাগছে তাই ওদের ফোন করে জানালাম আমি হোস্টেল ব্যাক করব।ওরা যেন না খুঁজে। মেডিক্যাল এর গেটে আসতেই দেখি আসফি রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছে।খুব ট্রায়াড দেখাচ্ছে রাতে ঘুমায়নি নাকি কেমন যানি দেখাচ্ছে!শরীর খারাপ করল নাকি?হঠাৎই ওর হাতের দিকে খেয়াল করলাম সাথে সাথেই মেজাজ টা প্রচুর পরিমাণ এর গরম হয়ে গেল। ও সিগারেট ফুকছে।আমার দিকে ও এখন ও খেয়াল করেনি ওর থেকে পেছনে দাড়ানো তাই।আমি সাথে সাথেই ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। ও দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে রিক্সার অপেক্ষা করতে লাগল।দুপুর টাইমে খালি রিক্সা পাওয়া অনেক বেশি কষ্টের।
সিগারেট ধরেছ দেখছি?(মুনতাহা)

সরি আমাকে বলছেন?(আসফি)

না আমার অসভ্য ইতর মার্কা বরকে উদ্দেশ্য করে বলছি।প্লিজ আপনি তাকে বলে দিবেন।(মুনতাহা)

ও।
তারপর আর কোন কথা না বলেই রিক্সা তে উঠে আমি ওয়ারির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। মুনতাহা খুব ক্রোধ নিয়ে এই তাকিয়ে আছে।দেখ কেমন লাগে?খুব বেশি ভাব নিয়ে ছিলা না।এখন আমার ইগনোর গুলো ও সহ্য করতে হবে তোমার। (আসফি)

আমিও আর কি করব।তাই ভাবলাম হোস্টেল ব্যাক করি।তারপর আমি হোস্টেল চলে আসলাম।লাঞ্চ করে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়েই একটু রেস্ট নিতে লাগলাম। (মুনতাহা)

**************(চলবে)***********

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here