প্রতিদান পর্ব ১২

0
1376

#প্রতিদান

পর্ব:12
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

সব এই বুঝলাম কিন্ত তুমি আগে এইটা বল তোমার লাইফ রিক্স নিয়ে হোস্টেল যাওয়ার কি দরকার ছিল?(আসফি)

আমি আসফির পাশে বসা ছিলাম হঠাৎই ও আমাকে এক হাত দিয়ে টেনে ওর সাথে জড়িয়ে ধরল।আমি একটু শকড হলাম।
ওর হঠাৎই কাছে আসাতে মনের মধ্যেই শিহরণ বয়ে গেল।মন চাইল ওকে জড়িয়ে ধরি।ওর বুকে মাথা রেখে ওকে মন ভরে দেখি।
কিন্ত ও আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওর প্রশ্ন আমার উপর চাপিয়ে কেন দিল?
আগে বলো তোমার চাচার বিরুদ্ধে জিটি কেন করছ?(মুনতাহা)

আসলে আমি ভেবেছিলাম আব্বুর সাথে ঝগড়া ও রাজনৈতিক শত্রুতা এর কারণে চাচা আমার ফেমেলির সবাই কে এক্সিডেনট করিয়েছে।কারণ আব্বুর মৃত্যুর পর নাকি চাচা আব্বুর রাজনৈতিক পদে আছেন।আর সেইজন্য জিটি টা করছিলাম। এখন এসব কথা বাদ ।আগে বলো তোমার এত্ত সাহস আসে কোথার থেকে?(আসফি)

কেন আমি আবার কি করলাম?(মুনতাহা)

আমার বউ হয়েও সব লুকিয়ে রাখছ!আবার যাতে ঐ তিহান আমার ক্ষতি করতে না পারে সেই জন্য হোস্টেল এ উঠেছ!খুব বেশি সাহস তাইনা!(আসফি)

আরে কি আর করত মেরে ফেলত।তাইনা তোমার জন্য তো ভালোই হতো আমাকে তো তোমার সহ্য হয় না ।আমি জদি মারা যেতাম তখন সুন্দর _
আর বলতে পারলাম না আমাকে ওর থেকে ধাক্কা মেরে খাটের মধ্যেই ফেলে দিল। তারপর হঠাৎই খাটের সাথে চেপে ধরল।তারপর রাগ নিয়ে জোরে একটা চিৎকার করল যাতে কানের বারোটা বেজে গেল। কানে হাত দিব তার ও উপায় নেই ও আমার উপর বসে হাত চেপে ধরছে।(মুনতাহা)

তোর মরার খুব শখ না!তোকে ভালোবাসার অধিকার যেমন আমি রাখি তেমনি মেরে ফেলার অধিকার ও আমার এই।তোকে আল্লাহ আমার জন্য বানাইছে। তোকে ভালোবাসি বলে তোর দেমাগ অনেক না।বাজে কথা বলিস বারবার। তোর কাছে বিয়েটা প্রতিদান এর হলেও আমি এখন তোকে ভালোবাসি।আর তাই ঐ তিহান কেন আল্লাহ ব্যতীত কোন মানুষের এত্ত বড় সাহস নেই যে আমার থেকে তোকে কেড়ে নিবে।আমি মরার আগ পর্যন্ত তোকে যেমন করেই হোক কোন ক্ষতি হতে দিবনা।আর খবরদার তোর মুখে জদি মৃত্যুর খবর শুনি তোকে আমি নিজেই খুন করব।
বলেই ওর উপর থেকে উঠে বারান্দার মধ্যে চলে গেলাম। ও বুঝেনা কেন আমি ওকে কত্তটা ভালোবাসি।হঠাৎই ওর মৃত্যুর কথা শুনে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি।আমি বারান্দার মধ্যে এসে চেয়ারে বসে মাত্র সিগারেট টা ধরালাম।হঠাৎই মুনতাহা এসে সিগারেট টা নিয়ে বন্ধ করে ফেলে দিল।আমি ওর দিকে রাগি লুক দিলেও ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হঠাৎই আমার কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরল। তারপর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে আমার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েই থাকল। তারপর আবার হঠাৎই কপালে চুমু খেয়ে আমার বুকে মাথা দিল।এইবার আমি ওকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতেই ও আমাকে ওর সব শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরল তারপর কানের কাছে খুব স্লো ভয়েস এ এমন একটা কথা বলল আমি শকড।(আসফি)

আমি তোমাকে ভালোবাসি আসফি, তুমি জদি সারাজীবন পাগল থাকতে তাহলেও ভালোবাসতাম,তবে তোমার অবহেলা গুলো খুব কষ্ট দিয়েছিল তাই ঐভাবে বলেছি।নাহলে বিশ্বাস করো আমার স্বামীর ভাগ আমি মরার পরেও কাউকে দিতে রাজীনা।জদি তোমার কাছে আমাদের বিয়ের ব্যাপার অজানা থেকেই ইষানি আপুর কাছে যাওয়ার পর ওর প্রতি তুমি আবার ভালোবাসা দেখাতে,জদি আপুর বিয়ে না হত তুমি ওকে বিয়ে করার কথা ভাবছিলে আমি জানি।যদি তুমি বিয়ের কথা বলতে আমি ভেবেই রেখে ছিলাম তোমাকে সব জানিয়ে দিব।আমি কেন আমার স্বামীর ভাগ তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে শেয়ার করব।জীবনে ও করবনা।দরকার হয় তোমার হাত পা বেধে আমার কাছে রাখতাম আর নাহলে আবার মাথায় বাড়ি দিয়ে পাগল বানায় আমার কাছ রাখলাম।দেখ আসফি আমি কিন্ত সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি।আচ্ছা আসফি একটা সত্যিই কথা বলবে প্লিজ?(মুনতাহা)

আমি যানি কি জিজ্ঞেস করবা।তাও বলো আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই?(আসফি)

ইষানির বিয়ে না হলে তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারতে?আর ওকে বিয়ে না করে আমার সাথে থাকতে?(মুনতাহা)

না পারতাম না।কারণ ও আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিল ওকে ভুলে তোমার সাথে থাকতে পারতাম না।কিন্ত ও আমাকে তোমার মত ভালোবাসতেই পারেনি কোনদিন। কেন জানো?(আসফি)

না জানিনা?(মুনতাহা)

কারণ আমার পুতুল বউ টা আমার দুঃখের সময় আমাকে সামলেছে,আমি পাগল যেনেও তার সবটা উজার করে আমাকে ভালোবাসা ও যত্ন দিয়েছে। আর অন্য দিকে ইষানি আমার খারাপ সময়ে আমাকে একা করেই চলে গেছে ওর বাবার কথা রাখতে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে সংসার ও করছে।তাই জদি তুমি আমাকে আগেই বলতে তুমি আমার বিয়ে করা বউ তাহলে আমি ইষানির কাছে যেতাম এইনা।আর জানতো যে বিপদের সময় ভালোবাসার মানুষটিকে একা রেখে চলে যায় সে কোনদিন ভালোবাসতেই পারেনা।আর সেই জায়গায় তুমি আমার বিপদের কথা ভেবে হোস্টেল সিফট করলে,রাগ তো আমার ও হওয়ার কথা তাইনা।(আসফি)

আসফি একটা কথা বলি রাখবে?(মুনতাহা)

হুম বল। (আসফি)

চলো না আমরা এই দেশ থেকে দূরে কোথাও চলে যাই। আমার না আর এই পালিয়ে বাচাঁর ইচ্ছে নেই।জানো আমার খুবই শখ আমার হাজবেন্ড আর আমি খুব সুখে সংসার করব।চলোনা আমরা এই দেশ ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই।(মুনতাহা)

আমরা কেন পালাবতো বলতো! আমরা তিহান এর ঠিক একটা ব্যাবস্থা করব তুমি চিন্তা করোনা।(আসফি)

শোন আসফি ও একজন রাজনৈতিক লিডার ওকে পুলিশে দিলেও ও ছাড়া পেয়ে যাবে।তারপর আবার আমাদের ক্ষতি করবে।আর তুমি তো কোন সিনেমার নায়ক না যে একাই ওর লোকদের মারতে পারবে।আর মারলেও পুলিশ তোমাকে ছেড়ে দিবে।এমনেই তোমার এক্সিডেনট এর পর পাগল হওয়া ও আবার এক্সিডেনট এ ঠিক হওয়া নিয়ে কিছুই মানুষ এই গল্প কে যা তা বলছে।বেচারি লেখিকা আমাদের রোমান্স ও আমার মায়ের প্রক্রিয়ার বিষয় তুলে ধরার কারণে এই গল্প কে ফালতু গল্পের ও বস্তা পচা গল্পের ক্ষেতাব পেয়ে বসে আছে।বুঝছ এখন প্লিজ আমাদের দূরে যাওয়ার ব্যাবস্থা কর। (মুনতাহা)

আচ্ছা আমরা দূরে চলে যাব।(আসফি)

*******************(চলবে)***************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here