প্রতিদান পর্ব ৯

0
1518

#প্রতিদান

পর্ব:9
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

আমার হাত ধরে এক প্রকার টেনেই আসফি আমাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য নিয়ে গেল।
আসফি আমাকে ছাড় আমি চলে যাব।(মুনতাহা)

খাও তারপর তোমাকে নিয়ে হোস্টেল যাব তোমার জিনিস পত্র আনতে।(আসফি)

দেখ আসফি সবকিছুর একটা লিমিট থাকা দরকার। আর সেই লিমিট তুমি ক্রোস করছো বারবার। আমার আর ভালো লাগেনা এইসব অত্যাচার। তুমি কেন সবসময় জোর কর?তুমি কেন বুঝোনা আমি আর নিতে পারছিনা এইসব।প্লিজ আমাকে যেতে দেও।চিৎকার করে।(মুনতাহা)

খেতে বস।
মুনতাহার হাত ধরে বসিয়ে দিলাম।
মরিয়ম খাবার দেও। খাবার টা খাও তারপর দেখা যাবে।(আসফি)

আমি খাবনা ।আমি এখন এই মুহুর্তে হোস্টেল ফিরতে চাই।আমার বিকালেও মেডিক্যাল এ যেতে হবে।হাত ছাড় আসফি আমি যাব।(মুনতাহা)

ওকে ফাইন যাও আমার এত্ত ঠেকা লাগে নাই তোমার পিছনে পরে থাকব।এই আসফি কারো কাছ থেকে এত্ত অপমানিত কোন দিন হয়নি।একমাত্র তুমি আমার বিয়ে করা বউ আর নেহাত ভালোবেসে ফেলেছিলাম বলে এত্ত রাগ এত্ত অপমান সহ্য করছি।অনেক হয়েছে আরনা।আসফির অত্যাচার দেখছ,ভালোবাসাও দেখছ,বেহায়া পনা ও দেখছ এইবার থেকে দেখবা অবহেলা।এই আমি আসফি বলছি তুমি নিজে থেকে আমার কাছে আসবা।বারবার বারবার বলছ প্রতিদান এর বিয়ে আমার অত্যাচার সহ্য করতে পারছ না তুমি ঠিক আছে যাও তোমার সামনে না পাড়তে আমি আসবনা।আর হ্যা যাচ্ছ যাও তবে এটা মনে রেখ তুমি আসফির বউ। আর আমার মৃত্যুর আগে তোমার আমার থেকে কোন মুক্তি তুমি পাবেনা।
চিৎকার করে এই কথা গুলো বলে ওর হাত ছেড়ে দাড়িয়ে গেলাম। তারপর গিয়ে গেটের তালা খুলে ওর দিকে একবার তাকিয়ে বাইরে চলে আসলাম। খাওয়ার আর কোন মন মানসিকতা নেই।তাই ভাবলাম বাইরে থেকে ঘুরে আসলে একটু ভাল লাগবে।একটা রিক্সা নিয়ে শাপলা চত্বর চলে গেলাম।খুব বেশি বেহায়া হয়ে গেছিলাম। আমি আসফি কোনদিন কারো কাছে মাথা নত করিনি ।আর সেই আমি ওকে আমার কাছে রাখার জন্য পাগলামি করছি।এখন থেকে আমাকে শক্ত হতে হবে।ওকে একবার বাঁচিয়ে ছিলাম ও আমাকে প্রতিদান সরূপ বিয়ে করছে।এইটা বারবার ওর বলতে কেন হবে?অনেক রাগ না তোমার এখন থেকে আসফির রাগের সাথে পরিচিত হবে তুমি মুনতাহা ওরফে আমার একমাত্র পুতুল বউ। (আসফি)

আসফি বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর এই আমিও বেরিয়ে হোস্টেল এর উদ্দেশ্য রওনা হই।একটা রিক্সা নিয়ে ওয়ারি থেকে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের সামনে চলে আসি।তারপর হোস্টেল গিয়ে গোসল করে আবার রেডি হয়ে হসপিটাল এর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম। হসপিটাল গিয়ে ম্যাম এর সাথে ইন্টারনি করতে যাই।আজকে রাতে ম্যাম এর চারটা অপারেশন করাবেন।উনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন পেসেন্ট যেন নরমাল ডেলেবারি করাতে পারেন।কিন্ত এখন দেখা যায় একশো জনের মধ্যে নব্বই জনের সিজারিয়ান বেবি হয়।এতে করে একটা মেয়ের লাইফ এর অর্ধেক এই পঙ্গু হয়ে যায়।ভারি কাজ করতে পারেনা,বেশিক্ষণ কাজ করলে সারারাত দিন শরীর ব্যাথা করে,ক্লান্তি কর কোন কাজ করলে অল্পতেই শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।তাও আমাদের কিছু করার থাকেনা।আমরা না পারতে কোনদিন রিক্স নেইনা।যাইহোক ম্যাম এর সাথে আজকে আরেক জন ডাক্তার শালেহা ম্যাম থাকবেন।আর সাথে আমাদের টিম এর চারজন করে চারটা অপারেশন এই অংশ গ্রহণ করবে।ভাগে ভাগে মোট ষোল জনের আজকে ম্যাম এর সাথে রাখবেন।আমার সময় পড়ল রাত একটার সময় এর অপারেশন এর টাইমে।আমার যেহেতু সামনেই হোস্টেল তাই ম্যাম বলল রাতেরটায় তুমি থাকবে।কিন্ত হোস্টেল এ রাত দশটার পর যাওয়া নিষেধ।আচ্ছা সমস্যা নেই হসপিটাল এই থাকব। এখন বাজে রাত আটটার কাছাকাছি অনেকক্ষন যাবত ক্ষুদা লাগছে।পেটের মধ্যেই ইঁদুর বিড়াল গুলো মারামারি করছে।তাই হসপিটাল থেকে বাইরে চলে আসলাম। লক্ষিবাজার এ গিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খেতে বসলাম। হঠাৎই আসফির কথা মনে পড়ল। ও দুপুর এর খাবার না খেয়েই বেরিয়ে গেছিল। এখন ও বাসায় আসেনি নাকি?খাবার খেয়েছিল নাকি না খেয়েই বসে আছে?তাই মরিয়ম কে কল করলাম। ও জানালো আসফি সন্ধা সাতটা নাগাদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে চলে গেছে।কথা বলেই আমি খাবার খেতে শুরু করলাম। বড্ড রাগ করেছে মনে হয়!কি আর করার!খাওয়ার পর লক্ষিবাজার থেকে সোজা গেলাম হসপিটাল। অপারেশন শেষ হতে রাত তিনটা বেজে গেল তাই আর হোস্টেল ব্যাক করলাম না হসপিটাল রাতে থাকা খুব বিরক্তিকর। এত্ত সুনসান থাকে যে ভয় লাগে খুব। তাও আমার একটা ফ্রেন্ড নিয়ে হসপিটাল সিটে গিয়ে বসে থাকলাম আর গল্প করলাম। কথা বলতে বলতে দেখি বাইরে আলো ফুটে উঠছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পাচঁটা বেজে গেছে।আর এক ঘন্টা পর হোস্টেল যেতে পারব।এত্তক্ষণ আরো গল্প করলাম দুইজন। তারপর ছয়টা বাজতেই বেরিয়ে পড়লাম। ও রিক্সা নিয়ে চলে গেল কদমতলী।আর আমি হেটেই হোস্টেল ব্যাক করলাম। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কলা রুটি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আজকে আর ক্লাস করবনা।একেবারে বিকাল বেলা যাব।ঘুমানোর আগে হঠাৎই আসফির কথা মনে পড়ল। ফোনের লক খুলেই ওর আর আমার একটা ছবি ভেসে উঠল।আসফি কে নিয়ে আমি মজা করে অনেক ছবি তুলতাম। একদিন মরিয়ম কে দিয়ে ছবি তুলিয়ে ছিলাম।আমি শাড়ি পরে আসফিকে পাঞ্জাবি পড়িয়ে জবা গাছের নিচে দাড়িয়ে কয়েকটা ছবি তোলার পর দেখলাম একটা ছবি অনেক সুন্দর হয়েছে। আমি সামনে তাকানো আসফি একটা ফুল তুলে আমার চুলে গুজে দেওয়ার চেষ্টা করছে।আরেকটার মধ্যেই অনেক ফুল কুরিয়ে আমার উপর ফিকে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে ছিল।দুইটাকে একসাথে করে আমার ফোনের ওয়াল পেপার বানিয়ে রাখছি।ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম। (মুনতাহা)

কালকে আসার পর ফ্রেস হয়ে খাওয়ার পর রুমে এসে অনেকক্ষন যাবত বারান্দার মধ্যেই বসে টিগারেট টেনেছি।যদিও এজ এ ডাক্তার আমার এটা করা উচিত নয়।সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যেনেও সবাই কম বেশি মদ্যপান ও ধুমপান করেই থাকে।রাত তিনটার দিকে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল সাতটার দিকে উঠে শাওয়ার নিয়ে রেডি হলাম আজকে থেকে ক্লাস করাতে হবে।ব্রেকফাস্ট করতে এসে দেখি এখন ও খাবার রেডি হয়নি।তাই ভাবলাম বাইরে গিয়েই খাবার খাব।তাই বাইরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম (আসফি)

ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল এগারোটার কাছাকাছি।আমি উঠে শাওয়ার নিলাম তারপর রেডি হয়ে হসপিটাল এ চললাম।ক্লাস আজকে আর করানো হবেনা।সবাই ইন্টারনি করছে।আমিও ইন্টারনি করতে যাব তার আগে অফিস রুমে যেতে হবে।ডাক্তার জাকির এর সাথে দেখা করতে হবে।অফিস রুমে যেতেই আসফির সাথে দেখা ও আমাকে দেখে আস্তে করে বেড়িয়ে গেল কোন কথা ছাড়াই। (মুনতাহা)

*********************(চলবে)******************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here