পানপাতার ঘর? পর্ব ৩+৪

0
1083

পানপাতার ঘর??
পর্বঃ০৩+৪
লেখা – Mahfuza_Monira

বকর মোল্লার সামনে বসে আছে আনিস। একা একা এভাবে পাত্রী দেখতে আসা বোধহয় ঠিক হয়নি! বাবা বা মা বা কোনো গুরুজন কে নিয়ে আসা উচিত ছিল। কথাগুলো যতবার ভাবছে ততবারই নিজেই নিজের হাত কচলাচ্ছে শুধু। বিষয় টা বকর মোল্লা খেয়াল করেন। তিনি সোজা সাপ্টা প্রশ্ন করে বসেন।

– তোমার কি হাত কচলানোর বাতিক আছে বাবা!

হুট করে এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আনিস। আমতা আমতা করে বলে-
– জ্বি হ্যাঁ। না মানে না, ওমন কোনো অভ্যাস নেই আমার।

আনিস মিথ্যে বলছে। সে যখন অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে পড়ে সে হাত কচলায়। এটা তার একটা অভ্যাস না,কঠিন অভ্যাস।

বকর মোল্লা বুঝতে পারেন বিষয় টা। সে একটা জিনিস জীবনে খুব অপছন্দ করেন আর তা হলো মিথ্যা কথা। অথচ আনিস সামান্য একটা বিষয় নিয়েও মিথ্যা বলতে দ্বিধাবোধ করলো না। না জানি,সংসার জীবনে কত মিথ্যা বলে বলে বেড়াবে সে। আর যে সংসারে মিথ্যার গুঞ্জন, সেখানে আর যাইহোক সুখ পাখি আসে না। এরকম একটা ছেলের সাথে নিজের মেয়েকে ঠেলে দিতে পারেন না বকর মোল্লা।
.
.
– আপনি কি কিছু ভাবছেন!?

আনিসের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে বকর মোল্লা। মাথা দুলিয়ে বলেন-
– না না কিছু না। নাও না,চা নাস্তা খাও!

আনিস যেন অপেক্ষায় ছিল কখন খেতে বলা হবে। বকর মোল্লা বলার সাথে সাথেই সে চায়ের কাপ তুলে নেয়। একটার পর একটা বিস্কুট খেয়ে চলে।

বকর মোল্লার মনে পড়ে যায় নতুবাকে দেখতে যাওয়ার দিনের কথা….
.
সেদিন আষাঢ় এর তৃতীয় দিন। আকাশে মেঘ গুড়গুড় করছে সকাল থেকেই। সেরকম একটা দিনে বকর মোল্লা ও তার বাবা রওনা হয় নতুবাকে দেখতে যাওয়ার জন্য। হবু শশুরবাড়িতে প্রায় ৭-৮ পদের নাস্তা দেওয়া ছিল। নতুবার বাবা হাজার বার সেধেও বকর মোল্লা কে কিছু খাওয়াতে পারেন নি। এমনকি বিয়ে হওয়ার দেড় মাস অব্দি যতবার বকর মোল্লা শশুরবাড়ি গেছেন,শশুরের সাথে একসাথে বসে দুটো খেতে পারেনি লজ্জায়। আর এদিকে আনিস!!
বকর মোল্লা কড়া করে সিদ্ধান্ত নিয়েই নেন,আর যাইহোক এই ছেলের সাথে তিনি মিশিকে বিয়ে দেবেন না। কিছুতেই না।
.
.
বকর মোল্লা উঠে দাঁড়ান। হাসিব কে উদ্দেশ্য করে বলে-
– হাসিব,গাড়ি ঠিক করে দিও আনিস কে। সে যেন ঠিকঠাক ভাবে চলে যেতে পারে।

কথাটা শুনে আনিসের আর সাত নং বিস্কুট টা চায়ে ডুবানো হলো না। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে বকর মোল্লার দিকে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে-
– বিয়ের কথাবার্তা….!

বকর মোল্লা আনিস কে থামিয়ে দিয়ে বলে-
– অন্য জায়গায় মেয়ে দেখে নিও বাবা। আমাদের মেয়ে কেন,আমরাই তোমাকে পছন্দ করলাম না।
.
.
.
বেলা ১২ টা। মাত্র স্কুল ছুটি হয়েছে মিশিদের। স্কুল গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে এপাশ ওপাশ দেখছে মিশি। কোথাও খুজে পাচ্ছে না উদয় কে। মাত্রই তো স্কুল ছুটি হলো,মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কোথায় চলে গেলো ছেলেটা….!

মিশি কে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায় লিমা।

– কিরে,এখানে দাঁড়িয়ে আছিস এভাবে! কাউকে খুঁজছিস?

মিশি মাথা দুলায়।
– হু। উদয় কে। কই গেলো বাদর টা!

জলপাই এর আচারের প্যাকেট থেকে একটু আচার মুখে দিতে দিতে লিমা বলে-
– বুঝিনা তোদের ব্যাপার স্যাপার! এই দুজনে সারাদিন লেগে থাকিস,আবার একজন অন্যজন কে ছাড়া বাচিস না!

মিশি মুখ ভেংচিয়ে বলে-
– বাল! আমিই বাঁচি না। আর সে তো আমায় পাত্তাই দেয় না!
– কচু। সে যদি তোকে পাত্তা না দিতো তবে কেন তোর জন্য এই আচার পাঠাতো!?

লিমার কথা শুনে মিশি চোখ বড় বড় করে বলে-
– উদয় আমার জন্য আচার পাঠিয়েছে!
– হ্যাঁ। নে ধর। আমি যাই,বড্ড দেড়ি হয়ে যাচ্ছে রে।

আচারের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে মিশি। তিনবছর হলো সে উদয় কে চিনে। এই তিনবছরে আজ পর্যন্ত উদয় তার জন্য এক টাকার একটা চকলেট কিনলো না! আর আজ কিনা দশ টাকার আচার…..!
সামান্য দশ টাকার জিনিস হলেও মিশির কাছে এই ই ঢের….
মিশি পরম আবেশে আচারের প্যাকেট খানা বুকে চেঁপে ধরে। মনে মনে ভাবে -‘ উদয়ের মনে তবে আমার জন্য কোনো ফিলিংস সৃষ্টি হলো না তো….!’
.
.
.
বিকেল ৩ টা। মিশি অস্থির ভাবে পায়চারি করছে উঠোনে। সেই কখন হাসিব চাচা কে পাঠিয়েছে উদয় কে ডেকে আনার জন্য! অথচ এখনো উদয় এলো না,হাসিব চাচাও এলো না।

মিশি বারবার রাস্তার দিকে দেখছে।

মিনিট পাচেক পর,হাসিব চাচাকে এগিয়ে আসতে দেখে মিশি দৌড়ে যায় তার কাছে। তাকে দৌড়ে আসতে দেখে হাসিব বলে-
– আস্তে মা,আস্তে। পড়ে গেলে ভীষণ ব্যথা পাবে!
– রাখো পড়ে যাওয়া। আগে বলো উদয় কই? আসলো না কেন?
– সে আসবে না মা আজ। সে নতুন কোচিং ধরেছে। বলে দিলো,সে আর কখনো তোমায় অংক শেখাতে আসবে না নাকি!

মিশির মাথায় যেন ঠাডা পড়ে। সে হাসিব চাচার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে-
– মজা করছো না তো চাচা?

হাসিব চাচার ও মনে ব্যথা লাগে। সে মিশির মাথায় হাত রেখে বলে-
– উঁহু। মজা কেন করবো? সে সত্যিই এটা বলেছে।

মিশি আর কিছু বলে না। ধিমি পায়ে হেটে হেটে ভেতরে চলে যায়।

.
.

মিশির ঘর থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে থেমে দাঁড়ায় বকর মোল্লা। মিশির ঘরে ঢুকে সজোড়ে ডাকে
– মিশি….মিশি মা…

মিশি চোখ মুছে ফেলে। ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়।

– কিছু বলবে বাবা!?

বকর মোল্লা স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে মিশি কাঁদছিল। মিশির ফোলা চোখ দেখে বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠে তার। একটা মাত্র মেয়ে! কি এমন হলো তার…..
.
মিশিকে জিজ্ঞেস করতেই সে হুহু করে কেঁদে ফেলে। কেঁদে কেঁদে বলে-
– আমি সজীব স্যারের কোচিং করতে চাই বাবা। সে খুব ভালো ম্যাথ করায় জানো? আমি আর চাইনা কেউ আমায় ফেলটুশ বলুক। প্লিজ বাবা,আমায় ওখানে ভর্তি করাও। প্লিজ।

বকর মোল্লার মন গলে। মেয়েটা হয়তো এবার সত্যিই ঘুরে দাড়াতে চায়।
বকর মোল্লা সেদিনই মিশির কোচিং করার সব আয়োজন করে দেন।
প্রতিদিন ৪ টা থেকে ৬ টা ক্লাস টাইম।
মিশি চোখ মুছে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে ধুতে ভাবে-
– যাক,চোখের পানি বৃথা গেলো না। আমি আসছি উদয়,তোকে আমি এবার সত্যিই সিগারেট এর শলা দিয় ছ্যাঁকা দিবো।
.
.
ক্লাস এখনো শুরু হয়নি। উদয় প্রথম সাড়ির একটা বেঞ্চে বসে আছে। ভীষণ শান্তি লাগছে তার। অবশেষে মিশি নামক চুন্নিটার থেকে রক্ষা পেলো।

কিন্তু হয়তো নিয়তিই চায় না উদয় কে রক্ষা দিতে। তাই তো সজীব স্যারের সাথে সাথে মিশি ও ক্লাসে ঢুকে। তাকে দেখে উদয়ের চোখ কপালে উঠে যায়। এই বান্দরনি এখানে কেন!!!

মিশি ব্যাগ নিয়ে বসতে বসতে সিগারেট দেখায় উদয় কে। উদয়ের বুকের ভিতর টা ধক করে উঠে। আজ বুঝি সত্যিই সিগারেটের ছ্যাঁকা খাওয়া লাগবে তার….!

চলবে…

[বোনাস পার্ট]

পানপাতার ঘর??
পর্বঃ০৪
লেখা – Mahfuza_Monira

সজীব স্যার মিশিকে ডেকে উঠলে মিশি বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সবাইকে উদ্দেশ্য করে সজীব স্যার বলেন-
– ও হলো মিশি। তোমাদের নতুন ফ্রেন্ড। আই হোপ এখানে এডজাস্ট করতে সবাই ওকে সাহায্য করবে।

সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলে –
– ইয়েস স্যার।

এরপর উদয় কে দাঁড়া করিয়ে সজীব স্যার বলেন-
– ও উদয়। এও নতুন ফ্রেন্ড তোমাদের। ওকেও সাহায্য করবে কিন্তু…

এরপর মিশির দিকে ফিরে বলেন-
– মিশি,তুমি আর উদয় তো একই স্কুলে পড়ো। আই থিংক তোমরা একে অপরকে জানো!

মিশি সটাশ করে বলে-
– জ্বি না। আমি ওকে চিনি না। আমার এত সময় কই সবাইকে পাত্তা দেওয়ার!!

উদয় মিশির কথা শুনে যারপরনাই চমকায়। মিশির সাথে ৩ বছরের পরিচয় তার! আর সে কিনা বলছে সে তাকে চেনেই না…
কিন্তু কেন?

সজীব স্যার একবার মিশিকে দেখছেন, আরেকবার উদয় কে। মিশির চোখে স্পষ্ট রাগ,আর উদয়ের চোখে বিষ্ময়। তিনি নিশ্চিত এই দুইজনের মধ্যে কোনো না কোনো কানেকশন তো নিশ্চয়ই আছে…কিন্তু সেটা কী?!
.
.
পুরো ক্লাসে একবারো মিশি উদয়ের দিকে তাকায় না। ওদিকে উদয় যেন মিশির সাথে চোখাচোখি হওয়ার জন্য পাগল প্রায়। হঠাৎ হলো কী মেয়েটার! যে কিনা উদয় উদয় করে মরতো,সে আজ উদয় কে চিনছেই না…!
.
.
পুরো ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারেনা উদয়। সে অপেক্ষা করতে থাকে ক্লাস শেষ হওয়ার। ক্লাস শেষ হতেই মিশি সবার আগে ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়। উদয় দৌড়ে গিয়ে মিশির হাত ধরে।
উদয় কে আরো অবাক করে দিয়ে মিশি উদয় কে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসে।
উদয় গালে হাত দিয়ে বলে-
– আরো মার,বাট বল তো কি হলো হঠাৎ! আমাকে কি করে ভুলে গেলি রে….

মিশি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– আমি সেই উদয় কে চিনতাম যে আমার মাইর গুতা খেয়েও আমি ডাকতেই চলে আসতো। প্রতিদিন অংক করাতো আমি বুঝি বা না বুঝি। তোকে চিনি না। তুই আমার সেই উদয় না। তুই তো নতুন মেয়ে পেয়েছিস এখানে রে..

উদয় বাজখাঁই গলায় বলে-
– কি তোর উদয়, তোর উদয় করছিস! আমি কি তোর প্রেমিক নাকি!

মিশি নিচু গলায় বলে-
– তাই তো! তুই তো প্রেমিক না রে। আসলে তুই আমার কেউই না। কেউ না।

মিশি ছুট লাগায়। এক ছুটে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। একটি বারের জন্যেও সে ফিরে তাকায় না উদয়ের দিকে। হয়তো নিজের চোখের পানি লুকাতে চাচ্ছে সে….
.
.
পরেরদিন থেকে মিশির ভেতর আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। উদয়ের থেকে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শিখে গেছে যেন।

উদয় গায়ে পড়ে কথা না বলতে আসলে মিশিও বলে না। এমনকি তার দিকে তাকায় না পর্যন্ত।
উদয় বেশ বোঝে মিশির এই পরিবর্তন গুলো কিন্তু নিজেও নিজেকে বুঝায়,ভালোই তো হয়েছে। সে তো চেয়েছিলই মিশি নামক আপদ টা বিদেয় করতে! নিজে থেকেই তো বিদেয় হয়েছে এখন। তার কি ঠেকেছে মিশির সাথে সেধে গিয়ে কথা বলতে!
মিশি যদি কথা না বলে থাকতে পারে,তবে সেও পারবে। বেশ পারবে।
.
.
টিফিন পিরিয়ডে মিশি সবসময় উদয় কে খোচাতে ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু আজ একা। চুপচাপ বসে পাউরুটি খাচ্ছে। লিমা বেশ অবাক হয়।
সে মিশির পাশে বসে বলে-
– তুই ঠিক আছিস মিশি!? তোর আর উদয়ের মাঝে কিছু হয়েছে?
মিশি খাবার মুখে নিয়েই বলে-
– আমাদের মধ্যে কিছু ছিলই বা কখন! যে আবার কিছু হবে?

লিমা সিউর হয় যে সত্যিই মিশি আর উদয়ের মাঝের সম্পর্ক ঠিক নেই। কেননা আর কেউ না জানুক,লিমা জানে,মিশি উদয় কে কতটা ভালোবাসে। আচ্ছা মিশি কি নিজেও জানে যে সে উদয় কে ভালোবাসে! পাগলের মতো ভালোবাসে…!

লিমা সাতপাঁচ ভেবে মিশি কে প্রশ্ন করে।
– তোকে একটা কথা বলবো?
মিশির নির্লিপ্ত জবাব-
– বল।
কাচুমাচু করে লিমা বলে-
– তুই কি উদয় কে ভালোবাসিস!?

হঠাৎ যেন প্রশ্ন টা শুনে থমকে যায় মিশি। সেও আসলে এটা কখনো ভেবে দেখেনি! শুধু উদয়ের সাথে থাকতে,তার সাথে কথা বলতে, মিশির ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে। এখন এটা কি ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা…সেটা তো মিশিও জানে না।

মিশি কে চুপ থাকতে দেখে লিমা বলে-
– কি হলো। বলছিস না কেন?

মিশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে-
– আমিও জানিনা লিমু। কিন্তু এটুকু জানি, যেদিন ঘরে একটা ভালো খাবার তৈরি হয়,সেটা আমি উদয় কে না দিয়ে খেতে পারিনা। উদয় কে একদিন না মারলে,আমার রাতে ঘুম হয়না। উদয় কে একদিন না দেখলে আমার দিন টা খালি খালি কাটে যেন। উদয় কে সারাক্ষণ দেখলেও আমার চোখ ক্লান্ত হয়না। ওর সাথে সারাদিন কথা বললেও আমার মুখ জিরোয় না। ওকে অন্যকোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলে আমার হিংসে হয়। ভীষণ হিংসে হয়।
এসব কী ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু আমি জানিনা রে লিমু।

মিশির চোখ ভেঙে কান্না পাচ্ছে। সে চায়না উদয় কে মনে করতে। মিশি সত্যিই বুঝে গেছে যে উদয়ের মনে তার জন্য কোনো জায়গা নেই আসলে। উদয় শুধু না পেরে তার সাথে কথা বলতো,না পেরে তাকে অংক শেখাতো আসতো। উদয় কে সে মুক্তি দিয়েছে না চাইতেও।

লিমা মিশির কাধে হাত রেখে বলে-
– এটাই ভালোবাসা রে। এটাই ভালোবাসা।
আমি জানি। আমি জানি রে….

মিশি আলগোছে চোখ মুছে নেয় তার। লিমার দিকে তাকিয়ে বলে-
– কে সে!?
লিমা মৃদু হেসে বলে-
– নাম তার মেঘ। মেঘের মতোই শুভ্র সে,নরম তার ভিতরের দিক। মেঘের মতোই উড়ে উড়ে সে আমার ছোট্ট মনে জায়গা করে নিয়েছিল। ৩ মাস…শুধু ৩ মাসের সম্পর্ক ছিল আমাদের।

লিমার বুক চিড়ে একহাজার কিলোমিটার সমান বড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

মিশি উৎসুক চোখে বলে-
– কেন সম্পর্ক শেষ হলো? তার কোনো ভুল…?
– না, তার কোনো ভুল ছিল না।
– তাহলে তোর…?
– না রে। আমারো না। শুধু ভুল ছিল নিয়তির। নিয়তিই চায়নি আমাদের দুজনকে এক করতে। আর তাইতো,পরিবারের জন্য আলাদা হয়ে গেলাম দুজনে। তার পরিবার যে ভীষণ আলিশান পরিবার। সে পরিবারে আমার জায়গা হবে কী!

কথাটা শুনে মিশির মেজাজ চটে যায়।
– শুধু ফ্যামিলির স্টাটাসের কারনে দুজন দুজন কে ভালোবেসেও আলাদা হয়ে গেলি! এটা বোকামী না?

লিমা শুকনো হাসি হেসে বলে-
– ভালোবাসা মানে দুটো মনেরই মিলন না,দুটো পরিবারের মিলন। আমার বাবার হয়তো ওত অর্থ সম্পদ নেই,কিন্তু সে তার কথায় অনড়। তাকে আমি চিনি, সে কোনোদিন ওরকম সম্পর্ক মেনে নিতো না। কিশোরী বয়সের আবেগ ভেবে উড়িয়ে দিতো। কিন্তু আমি তো জানি,আমার মন তো জানে,মেঘ আমার আবেগ নয়,আমার ভালোবাসা….

মিশি নির্বাক হয়ে পড়ে। তার কাছে তার কষ্টটাই এতক্ষণ বেশি ভারি লাগছিল। কিন্তু লিমার হাসি খুশি চেহারার আড়ালে যে এত বড় কষ্টের বোঝা আছে,তা না শুনলে সে কোনো দিনও বুঝতে পারতো না।

জীবনের ২০% সুখ,বাকি ৮০% ই কষ্ট। সেই কষ্ট গুলো যে হাসি মুখে বিদেয় দিতে পারে,সেই জীবনে সুখী হয়।

মিশি লিমার কাধে হাত চাপড়ে বলে-
– ক্লাস শুরু হবে তো,ক্লাসে যাবি চল।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here