পদ্মরাগ পর্ব- ১৩

0
264

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী

১৩
তাহলে কি ধরে নেব তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমাকে অন্যকারোর সঙ্গে সহ্য করতে পারবি না বলে এই কান্ড করেছিস?

পরী- মোটেও তা নয়। তুমি আমার বিয়ে ভেঙ্গেছো তাই আমি তোমার বিয়ে ভেঙ্গেছি।

ইজ্বা-আর কোনো কারণ নেই?

পরী- না

ইজ্বা-তাহলে তুই আমাকে ভালোবাসিস না?

পরী- না। কেন তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?

ইজ্বা- তুই বুঝিস না?

পরী- তোমার তো জারা আপুর সঙ্গে বিয়ে ঠিক।

ইজ্বা- তাতো তুই ভেঙ্গে দিয়েছিস।

পরী- আবার ঠিক হবে।

ইজ্বা- তাহলে এটাই তোর ফাইনাল ডিশিসন তুই আমাকে ভালোবাসিস না?

পরী- এক কথা কতবার বলব?

ইজ্বা পরীকে ছেড়ে দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে তার রুমে চলে যায়।
পরীর মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে নিজেও জানেনা ইজ্বাকে পরী কি ভালোবাসে নাকি বাসে না? শুধু মনের মধ্যে একটা ঝড় চলছে তার সে এটাই জানে। কিন্তু এই ঝড় কিসের জন্যে তা জানেনা !

পরী আজ ঘুম থেকে উঠতে অনেক লেইট করে ফেলেছে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্যে রেডি হয়ে ডায়িং টেবিলে বসে

পরী- মা তাড়াতাড়ি ব্রেক ফাস্ট দাও।

রুশেন আরা নিতুকে ব্রেকফাস্ট দিতে দিতে বললেন,

রুশেন আরা- এত লেইট হলো কেনরে ঘুম থেকে উঠতে। আমিও কতবার ডেকলাম উঠিস নি।

রুশেন আরা-জানিনা আজ কেন ঘুমের প্রেত আমার মাথায় ছেপেছিল। ওকে আর খাব না লেইট হয়েগেছে খুব। ইজ্বা ভাইয়া কোথায়? বের হতে হবেতো। এতক্ষণ নিশ্চয়ই চেঁচিয়েছে, লেইট হচ্ছে বলে? ও ইজ্বা ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসো।

রুশেন আরা বিষ্ময় দৃষ্টিতে পরীর দিকে তাকিয়ে বলেন,

রুপশেন আরা- কাকে ডাকছিস? ইজ্বা কোথায় থেকে আসবে?

পরী-মানে?

রুশেন আরা- ইজ্বা তো চলেগেছে।

পরী- আমাকে না নিয়েই কলেজ চলে গেলো?

রুশেন আরা- কলেজে নয়,

পরী-তাহলে?

রুশেন আরা-তাহলে আবার কি? ইজ্বা একবারে চলেগেছে। বলেছে, সিলেট শাহজালাল
ভার্সিটিতে ট্রান্সফার নিয়েছে।

একথা শোনে পরীর বুক ধ্ক করে উঠে। কিছু না বলে আনমনে বেড়িয়ে যায় কলেজের জন্য। কলেজে পরীর কিছুতেই মন বসছিল না। বারবার তার ইজ্বার কথা মনে পড়ছিল। ইজ্বারর দুষ্টুমি, রাগ- অভিমান, কথাগুলো পরীর স্মৃতিতে বারবার জীবন্ত হয়ে উঠছিল । প্রথম ক্লাস ইজ্বা করাতো, আজ রিনিতা ম্যাম এসেছেন।
ইজ্বার বদলে ম্যামকে দেখে পরীর মন আরো বিচলিত হয়ে উঠল। ক্লাস না করেই বেরিয়ে এল। ক্যানবাসে একা চুপ করে বসে খানিক ক্ষণ চলে এল বাসায়।
রুশেন আরা ডয়িং রুমে ছিলেন, পরীকে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে দেখে বলেন

রুশেন আরা- কিরে কি হলো? আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি?

পরী রুশেন আরার কথা না শোনার ভান করে চলে গেল তার রুমে (বর্তমান ইজ্বার ঘর)।
রুমে এসে পরি দেখে ইজ্বার প্যান্ট, শার্ট সবকিছুই সাজানো গুছানো আগের মতো আছে, পরী ভেবে নেয় ইজ্বা হয়তো পরে কোনো একদিন এসে সবকিছু নিয়ে যাবে। পরী ইজ্বার ব্ল্যাক শার্টটা হাতে নিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,

পরী- ইজ্বা ভাইয়া তুমি চলে গেলে কেন? আমি কাল তোমাকে ওরকম কথা বলেছি তাই? হ্যাঁ সেটাই তো আমার মনের কথা ছিল তখন। কিন্তু তুমি চলে যাওয়াতে আমার মন এখন কেন এতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কি হয়েছে আমার?

পরী হাতের দিয়ে নিজের চোখ মুছে, কিন্তু নিজেকে সামলাতে পারছিল না, আবার কেঁদে কেঁদে নিজের মনে আওড়াতে থাকে,

পরী- তাহলে কি আমিও ইজ্বা ভাইয়াকে ভালোবাসি। নইলে এত কষ্ট হওয়ার তো কথা না। কই ইজ্বা ভাইয়া চলে যাওয়াতে আম্মু, আব্বু, রীতু কারোরই এত কষ্ট হচ্ছে না।

পরী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে,

পরী- আই মিস ইউ ইজ্বা ভাইয়া, আই লাভ ইউ। একবার চলে এসো দেখবে আমি আর তোমাকে কোথাও যেতে দিব না। লাভ ইউ।

অনেকক্ষণ ফুঁপিয়ে কাঁদার পর পরী মেঝে থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,

পরী- আমাকে কাঁদানো তাইনা, চলেই যখন গেছো তাহলে এই শার্ট, প্যান্ট পরে আরেকদিন এসে কেন নিবে, আজকেই নিয়ে যেতে পারলে না। আমার ওপর রাগ দেখিয়ে চলে যাওয়া মাইফোট, বজ্জাত এনাকন্ডা।

এই বলে পরী ট্রি-শার্ট, প্যান্ট,কোর্ট একটা করে বের মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলে,

পরী- আজ সবগুলো কাপড় জ্বালাবো। আমাকে কাঁদিয়ে চলে যাওয়া।

এই বলে পরী লম্বা পা বাড়ায় কিচেন থেকে গ্যাসলাইট আনার জন্যে। কিন্তু বেচারি পরী আর কিচেনে যেতে পারল না ইজ্বা এসে পরীর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই দুজনে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় মেঝেতে। ভাগ্যিস মেঝেতে কাপড় ছড়ানো ছিল নইলে রক্ত গঙ্গা বয়ে যেত।

ইজ্বা আর পরী দুজনে এমতাবস্থায় অনেকক্ষণ দুজনে দুজনের চোখের গভীরতায় চলে গিয়েছিল। সেই গভীরতায় দুজনেই একটা ভালোবাসার ঘর দেখতে পেল, ঘরের চার দেয়ালে সেথায় শুধু প্রেমের ছোঁয়া । দুজনেই চোখের গভীরে হারিয়ে গেল। হঠাৎ পরী স্বজ্ঞানে ফিরে এসে ইজ্বাকে ধাক্কা মেরে।সমেঝে থেকে উঠতে উঠতে,

পরী- তুমি?

ইজ্বা – হ্যাঁ আমি।

পরী রাগী লুক নিয়ে ইজ্বার দিকে এক ফলক তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে,

পরী- উহুঁ মাথায় ভীষণ লেগেছে।

ইজ্বাফাস্ট এইড বক্স থেকে ব্যাথার মলম এনে পরীক লাগিয়ে দিতে লাগে।
পরী চুপচাপ । সে বুঝতে পারছে না ইজ্বা কখন এলো, কিভাবে এলো, কোথায় থেকে এলো, তাও আমার রুমের ভেতর থেকে?
ইজ্বার সঙ্গে দেখা হলে,সে তার মনের কথা বলবে ঠিক করেছিল কিন্তু এখন যেন সবকিছু এলোমেলো হয়েগেলো। পরী কনফিউজড।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here