পদ্মরাগ পর্ব- ১২

0
277

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী

১২
তাহলে ব্যান্ডেজ করছিস কেন? আমি রক্ত পড়তে পড়তে রক্ত শূন্য হয়ে মরে গেলেই বা তোর কি?
পরীর মন এ কথা শুনে অজানা শঙ্কায় ঢক করে ওঠে। ইজ্বার মুখে হাত দিয়ে পরী বলে, একথা আর কখনো বলবে না ইজ্বা ভাইয়া।

ইজ্বা হাত খানা সরিয়ে বলে,
ইজ্বা- কেন বলব না?

পরী- এত কিছু বলতে পারব না।

ইজ্বা- এখন আর তোর রনির জন্যে আফসোস সেই। দিব্যি তো আমার হাতে ব্যান্ডেজ করছিস।

পরী- আগে আগে দেখো এনাকন্ডা কেয়া হুগাইয়া।

ইজ্বা- মানে?

পরী- প্রতিশোধ

ইজ্বা- হুঁ। আমার উপর প্রতিশোধ না নিলেতো তোর পেটের ভাত হজম হবে না।

পরী- কার্রেট বলেছো।

সেদিন রাতের ডিনার খেতে পরি আসেনি। রুশেন আরা ডেকতে গিয়েছিলেন পরী বলেছে তার খিদে নেই। রুশেন আরার আজ মন মেজাজ ভালো নেই। রনির মা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন পরীর সঙ্গে রনির কিছুতেই বিয়ে দিবেন না। কিন্তু কি কারণে দেবেন না সেটা রুশেন আরাকে রনির মা বলেন নি। রুশেন আরা ধরেই নিয়েছেন তার মেয়ে নিশ্চয় রনির সঙ্গে শয়তানি করেছে।
ওদিকে পরী ইজ্বার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে বিকেল থেকে এখন পযর্ন্ত ভেবে একটা ফন্দি এঁটেছে যাতে ইজ্বা তার যথাযোগ্য শাস্তি পায়।
পরী ডিনারে আসেনি কারণ প্ল্যান সাকসেসফুল করার জন্যে।
পরী ইজ্বার ঘরে গিয়ে ইজ্বার ফোন ঘেটে জারার নাম্বার খুঁজে কিন্তু জারা নামে কোনো নাম্বারই সেইভ নেই তবে একটা নাম্বার আছে যার সঙ্গে ইজ্বার প্রতিদিন অনেক সময় ধরে কথা হয়। পরী ভাবে এটাই হয়তো জারার নাম্বার সে নিজের ফোনে সেইভ করে গটগট করে ঘর থেকে বের হচ্ছে।করিডোরে ইজ্বা পরী ডিনারে না আসার কারণ উদ্ঘাটনের ভাবনায় ডুবে হাঁটছিল আর পরীও অন্যমনা হয়ে দৌড়ে আসছিল, তো দুজনের ঢাক্কা লাগে ইজ্বা মেঝেতে পড়ে যায়। পরী নিজেকে খুব কষ্ট করে টাল সামলায়।
ইজ্বা রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,

ইজ্বা- উফফফফ, চোখে কি তোর কাটের চশমা লাগানো? পা টা গেল বুঝি।

পরী- আমার ডায়ালগ বেশ কপি করতে শিখেছো দেখছি। গুড বয়। হা হা হা

ইজ্বা- আবার দাঁত বের করে হাসছিস

পরী- উঠো হাতটা ধরে।

ইজ্বা- বয়েই গেছে তোর হাত ধরে উঠতে।

পরী- ও উপকারীর ঘাড়ে লাথি।

ইজ্বা- উপকারী না ছাই।

একথা বলে ইজ্বা উঠে দাড়িয়ে পরীর মাথায় গাট্টা দিবে বলে হাত বাড়ায়। তখনি পরী মাথা নিচু করে পালিয়ে যায়। ইজ্বা ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলে,

ইজ্বা-পাগলি একটা। কিন্তু আমার রুমে এসেছিল কেন? নিশ্চয়ই আবার কোনো বাজে মতলব এঁটেছে।

পরী রুমে গিয়ে জারার নাম্বারটা ওয়াটস এফে এড করে নেয়। মনে মনে বিলিয়েন হাসি দিয়ে কল দেয়। প্রথম কল রিং হয়ে কেটে যায় কেউ ধরেনি। পরী আবার কল দেয়,

পরী-হ্যালো জারা বলছেন?

ইজ্বার মায়ের নাম সুমিতা আরা হলেও ওনার কলেজ ফ্রেন্ডরা ওনাকে আরা বাদে জারা ডাকতেন, বহুদিন পর ওনাকে আবার কেউ জারা বলছে ওনি কিছুটা চমকে উঠে বলেন

সুমিতা আরা -হুঁ, জারা বলছি, কিন্তু আপনি কে? আপনি কি আমার কোনো কলেজ ফ্রেননন

পরী নিজের আন্টির কন্ঠ বুঝতে না পেরে ওনার কথা থামিয়ে বলে

পরী- আমি প…… আমি মিথিলা।

সুমিতা আরা- হো আর মিথিলা?

পরী- আমি ইজ্বার গার্লফ্রেন্ড মিথিলা।

সুমিতা আরা- হোয়াট?

পরী- জ্বী আপু। আমি ইজ্বার গার্লফ্রেন্ড।
জানি আপনার একথাগুলো শুনলে খুব কষ্ট লাগবে কিন্তু কি করার বলুন সবই আমাদের কপাল, । আমি ইজ্বাকে খুব বিশ্বাস আর ভালোবাসতাম। কিন্তু কাল হঠাৎ ইজ্বার ফোন ঘেটে দেখি আপনার এসএমএস গুলো। তখন যাস্ট আমার পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি ইজ্বা আমি থাকা শর্তেও আপনার সঙ্গে কামিটমেন্ট করেছে।

প্রথমে সুমিতা আরা অনেক শকড হন এসব কথা শুনে। কিন্তু পরোক্ষণে পরীর কন্ঠস্বর ওনি অনুধাবন করতে পারেন। সুমিতা আরা নিজেও চাইতেন ইজ্বার বিয়ে ওনার বোনের পরীর সঙ্গে হোক। পরীকে খুব ভালোবাসেন তিনি কিন্তু বান্ধবীকে বিশ বছর আগের দেওয়া ওয়াদার কথা ভেবে ওনি পর মূহুর্তে পিছিয়ে যেতেন। কিন্তু আজ তিনি পরীর এসব কথা শোনে ভাবেন পরী ইজ্বাকে ভালোবাসে তাই এসব করছে ও বলছে।

সুমিতা আরা- পরী !

পরী- আন্ননননটি আআআআআআআপনি!
পরী বুঝতে পারে ওটা আসলে ওর আন্টি, ফোনটা কেটে পরী ভয়ে কাঁপতে থাকে,

পরী-আন্টি যদি মাকে বলে দেন, ওনারাতো ভাববেন আমি ইজ্বা ভাইয়াকে ভালোবাসি!

তখনই সুমিতা আরা ইজ্বাকে ফোন দেন। সুমিতা আরা ইজ্বার কাছ থেকে সবকিছু জানতে চাইলে ইজ্বা থতমতিয়ে উঠে।

সুমিতা আরা- ইজ্বা, পরীকে তুমি ভালোবাস কি না বলো?

ইজ্বা- আমি এসবের কিচ্ছু জানিনা মা

সুমিতা আরা- আমি যা বলেছি তার উত্তর দাও?

ইজ্বা- বিলিভ মি মা!

সুমিতা আরা- সত্যি বলবি নাকি, তোর বাবাকে জানাবো? রাগী কন্ঠে)

ইজ্বা- বাবাকে কিছু বলবে না বলো?

সুমিতা আরা- হুম।

ইজ্বা- মা আমি পরীকে অনেক ভালোবেসে পেলেছি। ওকে ছাড়া আমি আর অন্যকাউকে লাইফ পাটনার করতে পারব না।

সুমিতা আরা- জারার কি হবে? আমার ওয়াদার কি হবে?
ইজ্বা চুপ হয়ে যায় কোনো উত্তর দিতে পারেনা। কিন্তু ওপর পাশ থেকে সুমিতা আরার হাসি শুনে ইজ্বা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,

সুমিতা আরা – পাগল ছেলে একটা। এর জন্যই বুঝি বাংলাদেশের প্রতি তোর এত টান এত ভালোবাসা। জানিস,
পরীকে না আমারও খুব ভালো লাগে। কিন্তু পরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই যে আমি আমার বান্ধবীকে কথা দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেই পরী আমাকে জারা ভেবে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে তোর আর জারার বিয়েটা ভাঙ্গতে চাইল তখনই আমি বুঝতে পেরেছি তোরা দুটিতে প্রেমে পড়েছিস। তাই এবার ভাবলাম হান্নাকে বুঝিয়ে বললে ঠিক ও বুঝবে। আমার বান্ধবী তো। আমরা শিগগির বাংলাদেশে আসছি তোদের বিয়ে দিতে।

ইজ্বা মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। কি হচ্ছে এসব সে কি স্বপ্ন দেখছে? নাকি কোনো ম্যাজিক?
ইজ্বা গুটিগুটি পায়ে পরীর রুমে এসে দেখে পরী বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে। ভয়ের চাপ চোখমুখে।
ইজ্বা পরীকে পিছন দিক থেকে খপ করে ধরে বলে,

ইজ্বা- কিরে এত মন খারাপ কিসের?

পরী- ছাড়ো আমায়

ইজ্বা- রনির সঙ্গে বিয়ে ভাঙ্গার শোকে বুঝি মন খারাপ।

পরী- আমাকে ছাড়ো।

ইজ্বা- তুই পারলি একটা নারী হয়ে আরেকটা নারীর সংসার ভাঙ্গতে?

পরি- আমি সংসার ভেঙ্গেছি কার কবে?

ইজ্বা- কেন, জারা আর আমার।

পরী এতক্ষণ যা ভাবছিল তাই হল। পরী রিনরিন কন্ঠে বলল,
পরী- আমি! আমি কেন তোমাদের সংসার ভাঙ্গতে যাব?

ইজ্বা- বাবাহ, নিজেকে খুব সাধু সাজানো হচ্ছে।
এই বলে ইজ্বা পরীকে হেঁচকা টান দিয়ে পেছন দিক সামনে ঘুরিয়ে বাহুডোরে আগলে বলে,

ইজ্বা- সত্যি করে বল তুই কেন আমার আর পরীর বিয়েটা ভাঙ্গতে চেয়েছিলি?
পরী কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।
ইজ্বা মুখে একটা হাসির ভাব এনে বলে,

ইজ্বা- তাহলে কি ধরে নেব তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমাকে অন্যকারোর সঙ্গে সহ্য করতে পারবি না বলে এই কান্ড করেছিস?

পরী- মোটেও তা নয়। তুমি আমার বিয়ে ভেঙ্গেছো তাই আমি তোমার বিয়ে ভেঙ্গেছি।

ইজ্বা-আর কোনো কারণ নেই?

পরী- না

ইজ্বা-তাহলে তুই আমাকে ভালোবাসিস না?

পরী- না। কেন তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?

ইজ্বা- তুই বুঝিস না?

পরী- তোমার তো জারা আপুর সঙ্গে বিয়ে ঠিক।

ইজ্বা- তাতো তুই ভেঙ্গে দিয়েছিস।

পরী- আবার ঠিক হবে।

ইজ্বা- তাহলে এটাই তোর ফাইনাল ডিশিসন তুই আমাকে ভালোবাসিস না?

পরী- এক কথা কতবার বলব?
ইজ্বা পরীকে ছেড়ে দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে তার রুমে চলে যায়
পরীর মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে নিজেও জানেনা ইজ্বাকে পরী কি ভালোবাসে নাকি বাসে না? শুধু মনের মধ্যে একটা ঝড় চলছে তার সে এটাই জানে। কিন্তু এই ঝড় কিসের জন্যে তা জানেনা !

চলবে……
লেইট হওয়ার জন্য সরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here