#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী
৪
ইজ্বা বিষ্ময় দৃষ্টিতে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
কিছুতো একটা ছিল কোথায় পেলেছিস বল।
– বলব না।
– তাহলে আমিও ছাড়ব না।
– ওই দেখ মা আসছেন।
ইজ্বা তক্ষুণি ইতস্তত বোধকরে পরীকে নিজের হাত থেকে ছেড়ে দেয়।
-কে ভীতু এখন বুঝা গেল? এই বলে পরী ভেংচি কেটে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে কাগজটা খুঁজে কিন্তু পায়নি।
রিতু ঘুমিয়ে পড়েছে। পরী শুয়ে ছাদের দিকে এক দৃষ্টিতে ভাবে,
আমাকে কি ইজ্বা ভাইয়া পছন্দ করেন? আমাকে ভালোবাসেন? দূর আমাকে কেন ভালোবাসতে যাবেন, ওনারা কত ধনী। সব্বাই ইউ.কে. থাকেন। ইজ্বা ভাইয়া এদেশকে খুব ভালোবাসেন তাই আর রিটার্ন করেননি। উনার তো বিয়ে ঠিক হয়েগেছে। আর আমেরিকানি একটা মেয়ের সঙ্গে। তাকে বিয়ে করেই তো……………….., দূর পরী তোকে কেন ভালোবাসতে যাবেন ইজ্বা ভাইয়া। উনার তো বিয়ে ঠিক।
তবে ইজ্বা ভাইয়া কেন আমার দিকে এক নজরে বারবার তাকিয়ে থাকেন। বারবার আমায় কাছে টেনে নেন।
এসব ভাবতে ভাবতে পরী কখন জানি ঘুমিয়ে পড়ে তা নিজেও জানেননা।
সকালে যখন ইজ্বা বসার ঘরে আসে ইজ্বাকে দেখে সবাই অবাক। আবিরের গা-হাত-পা সব ফুলা। এলার্জি ফুটেছে গায়ে।
রুশেন আরা হন্তদন্ত হয়ে ইজ্বার গায়ে মলম লাগাতে লাগাতে বলেন কিভাবে এসব হলো ইজ্বা বাবা, চোখ-মুখের কি অবস্থা হয়েছে দেখ?
-জানিনা মণিমা কি করে হল? আমার মনে হচ্ছে বিছানায় কিছু একটা ছিল। উফফফফ কি চুলকানি। সারারাত ঘুমাতে পারিনি চুলকানির জন্যে।
রিতু আর পরী ব্রেকফাস্ট করছিল। দুজনে মুচকি মুচকি হাসছিল। হঠাৎ রিতু নিজের ব্যারেন্স জুড়ে হেসে দেয়।
রিতুর হাসি দেখে সবাই রিতুর দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকায়। পরী রিতুর দিকে চোখ বাঁকিয়ে তাকাতেই রিতু হাসি বন্ধ করে।
ইজ্বা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
ইজ্বা- কিরে রিতু আমার এই হাল দেখে তোর হাসি পাচ্ছে?
– না মানে হ্যাঁ ভাইয়া। আমার মনে হচ্ছে পরী আপুর ঘরে থাকার জন্যে এই দূরদশা হয়েছে তোমার।
– কি?
হুঁ।
রুশেন আরা- থাম রিতু, একই ছেলেটার এই অবস্থা। রাখ তোর বাজে কথা। ইজ্বা বাবা তোমার আর আজ কলেজে যেতে হবে না।
– না মণিমা আজ যে যেতেই হবে। একটা বিশেষ প্রয়োজন আছে কলেজে। এই বলে ইজ্বা পরীর দিকে তাকিয়ে বিলিয়েন হাসি দিয়ে নিজ মনে মনে বলে, আমি কিছু বুঝিনি মনে করেছো পরীরানী, দুইবোন এর জন্যই আমার রুমে গিয়েছিলে তাইনা। নো চিন্তা ডো ফূর্তি। কলেজে আমিও তোকে বুঝাব মজা। একবার আয় শুধু কলেজে।
ইজ্বা ওয়াশ রুমে যেতেই পরী টুস করে ঘরে ঢুকে কলেজের ড্রেসটা বের করে চলে যাবে তখনই মেঝেতে ছড়ানো ইজ্বার সু ছিল তাতে আচমকা ওষ্টা খেয়ে পরী টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিল প্রায়, তখনই ইজ্বা তাকে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে।
অনেক ক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল ।
পরী ইজ্বার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে বলে,
– আমাকে ছাড়ো।
– ছাড়ব?
:-হুঁ, ছাড়ো।
– আচ্ছা।
এই বলে ইজ্বা পরীকে ছেড়ে দেয়।যার ফলে পরী ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়।
-ওমা গো আমার কোমর চলে গেল। কি নির্হৃদ একটা ছেলে। আমাকে পারলেন এভাবে পেলে দিতে?
:-আমি পেলেছি কি নিজের ইচ্ছায়। তুই নিজেই তো বললি ছেড়ে দিতে। তাই আমি ছেড়ে দিয়েছি।
– ইসসসস, আপনার সঙ্গে আমি ঝগড়ায় পারব না। মনে হচ্ছে আপনি ইংরেজিতে পি এইস ডি পাস না করে ঝগড়া নিয়ে পি এইস ডি পাস করেছো।
‘-কি?
: পরী ইজ্বার রাগী লুক দেখে অন্যকিছু কিছু না বলে উঠে গটগট করে রিতুর রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্চ করে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হবে তখনই রুশেন আরা বলেন, কিরে পরী ট্যাক্সি করে যাবি?
-হ্যাঁ মা।
:- ইজ্বার সঙ্গে যাবি। দাড়া।
– না মা, আমি ওনার সঙ্গে যাব না।
– কেন? আর তুই ইজ্বাকে আপনি বলিস কেন?
– তোমার আহ্লাদের ইজ্বা সোনার মতো ফাজি ছেলের সঙ্গে আমি যাব না। আর আপনি বলব নাতো কি বলব? তুমি মানুষ তাকে বলে যাকে তার ভালো লাগে আপন মনে হয়। কিন্তু তোমার ওই ফাজি ছেলে আমার শত্রু।
– আমার ইজ্বা ফাজি না তুমি ফাজি তা আমার জানা আছে। এ কয়দিনের মধ্যেই ইজ্বা তোর শত্রু হয়ে গেল। কি যে করি তোকে নিয়ে। আচ্ছা যা বলেছি তাই কর। দাড়া।
ইজ্বা: ডাকছিলে মণিমা।
পরী ইজ্বাকে দেখে চোখ বাকিয়ে মুখ ভেংচি দিল।
রুশেন আরা পরীর মুখ ভেংচি দেখে ধমকের কন্ঠে বলেন,
তোর আর শয়তানি গেলনা না। ইজ্বা বাবা এই ফাজি মেয়েটাকে তোমার সঙ্গে আজ থেকে নিয়ে যাবে। মেয়ে আমার যা দুষ্টু, রাস্তায় একেক দিন একেক ঘটনা রটিয়ে আসে।
– চিন্তা করবেন না মণিমা, আমি ঠিক ওকে মানুষ করে দেব। ইজ্বা চোখ বাকিয়ে বলে
-কি আমি মানুষ না।
-না। ইজ্বা বলে
পরী- তাহলে কি আমি?
ইজ্বা-পেতনী।
অন্যদিকে জারা আর ফারাবী তাদের ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে ডুবে আছে।
– আচ্ছা বলোতো ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয়? জারা বলে
ফারাবী- ভালোবাসার অনুভূতি কি আমি জানি না। তবে তোমাকে ফোনের ওপাশ থেকেই আমি অনুভব করতে পারি। তোমার প্রতিটা নিশ্বাসই যেন আমার জন্য যথেষ্ট। তোমার নিশ্বাস শুনেই আমি বুঝতে পারি আমার জারু কতটা ভালো আছে। আমি এখান থেকে অনুভব করতে পারি তোমায়। এটাই যদি ভালোসার ছোঁয়া হয়………
ফারাবী আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জারা ফারাবীর কথার সাগরে ডুবে গিয়েছিল, ফারারীর কথাগুলো জারার মনে হয় বিস্ময়কর জাদুতে পুরা কথা। যার অথৈ গভীরে সে সারাজীবন ডুবতে চায়। কিন্তু ফারাবীর হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস শুনে জারা চমকে উঠে বলে
– কি হয়েছে? কোনো প্রবলেম ? বলনা?
– তোমাকে যদি কখনো হারিয়ে ফেলি তখন কি হবে আমার? আমি তোমার ভালোবাসা হীনতার সাগরে তখন ডুবে যাব, মরে যাব। চুপসে যাবে তোমার সাগরে আমার দেহ।
– চুপ কর, এসব কি বলছ। তুমি আমার আমারই থাকবে। ওল ওয়েজ।
ফারাবী- আমার খুব ভয় করে তোমাকে হারানোর।
জারা- এমন করে বলনা। আমি ঠিক কোনো ভাবে সব মেনেজ করে নেব দেখ। আর হ্যাঁ তোমাকে তো আমি ইজ্বার ছবি এন্ড ওর সম্পর্কে সব বলেছিলাম। কখনো যদি ওর সঙ্গে তোমার কুঅ্যাক্সিডেন্টলি দেখা হয়ে যায়। তুমি ওর সঙ্গে রুট ব্যবহার করবে না ও খুব ভালো আর ভদ্র ছেলে।
চলবে
সবাই কেমন লাগল বলবেন প্লিজ। আপনারা সাড়া না দিলে পরবর্তী পর্ব দিতে ইচ্ছে করে না।❤