পদ্মরাগ পর্ব- ০৩

0
365

পর্ব- ০৩
পদ্মরাগ
আনু ইসলাম রেনী

জারা হোহোহো করে কেঁদে উঠে,
বলে

জারা- আমি তোমার থেকে একটা সত্যি হাইড করেছি।

ফারাবি- আর তুমি কাঁদছো কেন? আর আমার থেকে কি লুকিয়েছো?

জারা- ফারাবি মম আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন উনার ফ্রেন্ডের ছেলের সঙ্গে।

ফারাবি- কি বলছো? কবে? কখন?

জারা- অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন বাট আমি এতটাও সিরিয়াসলি নেইনি।

ফারাবি যতটা হতাশ হওয়ার কথা ছিল তাকে তার চেয়েও বেশি হতাশ লাগছে। কিন্তু কেন?

জারা- হ্যালো, ফারাবি হ্যালো, আছো?

ফারাবি- হুম আছি। কি বলব আমি বুঝতে পারছিনা।

জারা- এতটা ভেঙ্গে পড়ো না দেখবে তোমার আমার ভালোবাসা যদি রিয়েল হয় অবশ্যই আমরা একে অপরকে পাব।

ফারাবি আবার চুপ হয়ে যায়। অন্যদিকে
রুশেন আরা পরী আর ইজ্বার ঝগড়া শুনে এসে বলেন,
রুশেন আরা- পরী ঝগড়া করছিস কেন? আমিই বলেছি ইজ্বাকে তোর ঘরে থাকতে। তুই রীতুর সঙ্গে শুয়ে পড়। কেমন?

পরী কপট রাগ দেখিয়ে বলে, মা আমি কেন রীতুর সঙ্গে শুতে যাব? তোমার আহ্লাদের ইজ্বাক
কে বলো গেস্ট রুমে শুতে।

রুশেন আরা- কি বলেছি শুনিস নি? গেস্ট রুম কি আর গেস্ট রুম আছে, সে তো এখন চিলেকোঠা হয়েগেছে।

পরী গটগট করে হেঁটে চলে গেল রীতুর ঘরে। রীতু নীতুর ছোট বোন। দুইবোন সাড়াদিন খুনসুটি আর দুষ্টুমিতে মেতে থাকে। পরীর দুষ্টুমিগুলো ছোট্ট রীতু খুব ইনজয় করে তাই সে সবসময় পরীর আশেপাশেই থাকে।

রীতুকে পরী বিলেন হাসি দিয়ে বলে,
পরী- রীতু আমার মাথায় একটা প্ল্যানন এসেছে আমার ঘর থেকে ওই এনাকন্ডাটাকে বিদেয় করার। তুই আর আমি কাল প্ল্যান সাকসেসফুল করব কেমন?

রিতু- ঠিক আছে আপু। ভীষণ মজা হবে তাইনা। রাগী ভাইয়া শায়েস্তা হবে, তোর ঘরে থাকার দূরসাহস দেখানোর শাস্তি পাবে। তুই আমাকেই তোর ঘরে এলাও করিস না আর রাগী ভাইয়া!

এই বলে রীতু ফিক করে হেসে দিল।
তারপর দুবোন ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল।
আজ শুক্রবার তাই রীতুকেও স্কুলে যেতে হলো না, আর পরীকেও না। ইজ্বাও আজ বাড়িতে। কিন্তু এই কয়দিনে বিচিত্র ঘটনা ঘটেগেছে ইজ্বাকে দুইজন ব্যক্তি প্রতিদিন ফলো করছে। সেটা ইজ্বা এখনো বুঝতে পারেনি। কিন্তু এই দুইজন ইজ্বাকে ফলো করছে কেউ জানে না।
সকালের নাস্তা শেষে করিডরে দাড়িয়ে পরী গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছিল। ইজ্বা রুম থেকে পরীকে ডাকে।

পরী- না,আমি আসতে পারব।

ইজ্বা-আসবি না?

পরী- না, এসে কি হবে?

ইজ্বা-এসেই দেখে যা, একটা সারপ্রাইজ।

সারপ্রাইজের কথা শুনে পরী আর নিজেকে সামলাতে পারল না। চট করে চলে এল ইজ্বার ঘরে।
ইজ্বা কোথাও বের হওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে। নিজের হাতে ঘড়ি লাগাতে লাগাতে বলে,
ইজ্বা- এতক্ষণ ডাকছিলাম আসলি না আর সারপ্রাইজের কথা শুনেই এসে গেলি। গুড ভেরি গুড।

পরী- সেরকম মোটেও না। আপনি আমার বড় আপনার কথা কি অমান্য করতে পারি?

ইজ্বা- ভূতের মুখে…… যাইহোক। সারপ্রাইজ হচ্ছে আজকে বিকেলে আমি তোদের রমনা পার্কে নিয়ে যাব।
পরী খুশি হয়ে লাফাতে যাবে , তখনই তার মনে পড়ে গেল বিকেলে তো ইজ্বাকে শায়েস্তা করার ব্যবস্থা করার কথা।

পরী- না আমি যেতে পারব না। আর রীতুও পারবে না। আমার আর রীতুর একটা পার্সনাল কাজ আছে।

ইজ্বা- স্টুপিডগুলোর আবার কি কাজ রে?

পরী- স্টুপিড আমরা না আপনার চচচচচৌদ আচ্ছা থাক। কাজটা কি বলা যাবে না সিকরেট। এই বলে পরী ভীড়ভীড় করে বলে, মিস্টার এনাকন্ডা রাতে বুঝবেন পরীকে ক্লাস থেকে বের করার শাস্তি কি?
বিকেলে পরী আর রীতু সারা শহরময় খুঁজে বিছুটি পাতা এনেছে। তারপর তা ব্ল্যান্ডার দিয়ে ভালো করে মিহি করে রাতে ইজ্বা যখন ওয়াশ রুমে গেল,তখন দুইবোন চুপিচুপি গিয়ে বিছুটি পাতার গুড়ো বিছানায় ভালো করে ছড়িয়ে এসেছে। আর এই বিছুটি পাতার গুড়ো এতই মিহি করেছে যে খালি চোখে কিছুই দেখা যাবে না। দেখতে হলে অণুবীক্ষণ যন্ত্র লাগবে।
ইজ্বা হঠাৎ এসে পড়ে।

ইজ্বা-তোমরা আমার রুমে?
ইজ্বাকে দেখে রিতু ছুটে পালিয়ে যায়। পরী হাতে কাগজে মুড়ানো বিছুটি পাতার গুড়ো। পিছন দিকে হাত নিয়ে, সরোষ দৃষ্টিতে ইজ্বার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে, আপনার রুম মানে? এটা আমার রুম। দুইদিন দয়া করে থাকতে দিয়েছি তাই বলে নিজের রুম ভেবে নিয়েছেন?

ইজ্বা-আমি এ রুম ছাড়ছি না বুঝলি। মণিমাকে বলেছিলাম হোটেলে থাকব কিন্তু উনি বলেছেন পৃথিবী উল্টে গেলেও হোটেলে যেতে দিবেন না আমায়। আর,

পরী- আর কি?

ইজ্বা- আর আমি যতদিন তোদের এখানে থাকব তোর রুমেই থাকব। এ রুম আমি ছাড়ছি না।

পরী- আজকেই ছাড়বে আমার ঘর মিস্টার এনাকন্ডা। (গুনগুনিয়ে বলবে)

ইজ্বা- কি রে হাসছিস কেন? হাসলে তো তোকে পেতনী লাগেনা।

পরী-কি লাগে?

ইজ্বা- ওইসব তোর না শুনলেও চলবে।
এই বলে ইজ্বা পরীকে এক হাত দিয়ে টেনে নিজের বুকের কাছে এনে নিতুর এলোমেলো চুল গুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

ইজ্বা- তুই আমাকে ভয় পাস কেন? আমি কি বাঘ ভাল্লুক তোকে খেয়ে ফেলব? ওহ আই এম সরি আমি তো এনাকন্ডা ভয়ংকর এনাকন্ডা।
পরী নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত।
কোন উত্তর না পেয়ে ইজ্বা আবার বলল,
ইজ্বা- তুই নিজেই তো বলিস আমি এখন এনাকন্ডা হয়েগেছি।তো নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই কি পারবি? তাও আবার একহাত দিয়ে। ওই হাত পিছনে কেন রে? কি আছে ওতে?

পরী – ককককিছছছছছু না। আমমমমমমমাকে ছাড়ো, উফফফফ

ইজ্বা- আগে হাতটা দেখা।

পরী- না দেখাব না।

পরী হাত থেকে বিছুটি পাতার গুড়োর কাগজটা ঢিল মেরে করিডোরে পেলে দেয়। কারণ জানে ইজ্বার শক্তির সঙ্গে ও পারবে না। ইজ্বা যেভাবেই হোক হাতটা দেখবে।
তাই হলো ইজ্বা পরীরর হাতটা পিছন থেকে এনে দেখে কিছুই নেই।
ইজ্বা বিষ্ময় দৃষ্টিতে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,

ইজ্বা-কিছুতো একটা ছিল কোথায় পেলেছিস বল।

পরী- বলব না।

ইজ্বা- তাহলে আমিও ছাড়ব না।

পরী- ওই দেখ মা আসছেন।

ইজ্বা তক্ষুণি ইতস্তত বোধকরে পরীকে নিজের হাত থেকে ছেড়ে দেয়।
কে ভীতু এখন বুঝা গেল? এই বলে পরী ভেংচি কেটে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে কাগজটা খুঁজে কিন্তু পায়নি।

চলবে….

ভালো লাগলে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল ? এই পেইজে দেওয়া হবে। ভালো থাকবেন, আপন জনদের ভালো রাখবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here